লগইন করুন
ছোট শির্ক আবার দু’ প্রকার। যা নিম্নরূপ:
ক. প্রকাশ্য শির্ক:
প্রকাশ্য শিরক বলতে সে সকল কথা ও কাজকে বুঝানো হয় যা সবাই চোখে দেখতে পায় অথবা কানে শুনতে পায় অথবা অনুভব করতে পারে। তা আবার কয়েক প্রকার:
সুতা বা রিং পরার শির্ক:
সুতা বা রিং পরার শির্ক বলতে কোন বালা-মুসীবত দূরীকরণ বা প্রতিরোধের জন্য দম করে গেরো দেয়া সুতা বা রিং পরিধান করাকে বুঝানো হয়।
এটি ছোট শির্ক হিসেবে গণ্য করা হবে ততক্ষণ, যতক্ষণ পর্যন্ত ব্যবহারকারী এ রূপ বিশ্বাস করে যে, আল্লাহ্ তা’আলা এর মাধ্যমেই আমার আসন্ন বালা-মুসীবত দূরীভূত করবেন। এটি এককভাবে আমার কোন লাভ বা ক্ষতি করতে পারেনা। আর যখন এ বিশ্বাস করা হয় যে, এটি এককভাবেই আমার বিপদাপদ দূরীকরণে সক্ষম তখন তা বড় শির্কে রূপান্তরিত হবে।
আমাদের জানার বিষয় এইযে, কোন বস্ত্ত তা যাই হোকনা কেন তা কারোর কোন লাভ বা ক্ষতি করতে পারেনা।
আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:
« قُلْ أَفَرَأَيْتُمْ مَّا تَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ إِنْ أَرَادَنِيَ اللهُ بِضُرٍّ هَلْ هُنَّ كَاشِفَاتُ ضُرِّهِ أَوْ أَرَادَنِيْ بِرَحْمَةٍ هَلْ هُنَّ مُمْسِكَاتُ رَحْمَتِهِ، قُلْ حَسْبِيَ اللهُ عَلَيْهِ يَتَوَكَّلُ الْـمُتَوَكِّلُوْنَ »
‘‘আপনি ওদেরকে বলুন: তোমরা কি কখনো ভেবে দেখেছো যে, আল্লাহ্ তা’আলা আমার কোন অনিষ্ট করতে চাইলে তোমরা আল্লাহ্ তা’আলার পরিবর্তে যাদেরকে ডাকো তারা কি সেই অনিষ্ট দূর করতে পারবে? অথবা আল্লাহ্ তা’আলা আমার প্রতি কোন অনুগ্রহ করতে চাইলে তারা কি সে অনুগ্রহ রোধ করতে পারবে? আপনি বলুন: আমার জন্য আল্লাহ্ তা’আলাই যথেষ্ট। নির্ভরকারীদের তাঁর উপরেই নির্ভর করতে হবে’’। (যুমার : ৩৮)
আল্লাহ্ তা’আলা আরো বলেন:
« مَا يَفْتَحِ اللهُ لِلنَّاسِ مِنْ رَّحْمَةٍ فَلاَ مُمْسِكَ لَهَا، وَمَا يُمْسِكْ فَلاَ مُرْسِلَ لَهُ مِنْ بَعْدِهِ، وَهُوَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ »
‘‘আল্লাহ্ তা’আলা মানুষের প্রতি কোন অনুগ্রহ অবারিত করলে কেউ তা নিবারণ করতে পারেনা। আর তিনি কিছু নিবারণ করলে তিনি ছাড়া আর কেউ তা পুনরায় অবারিত করতে পারে না। তিনি পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়’’। (ফাতির : ২)
আসন্ন বিপদাপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কেউ নিজের শরীরের সাথে কোন জিনিস ঝুলিয়ে রাখলে তা তাকে কোনভাবেই বিপদাপদ থেকে রক্ষা করতে পারেনা। বরং আল্লাহ্ তা’আলা তখন তাকে ওজিনিসের প্রতি সোপর্দ করে দেন। এতে করে তখন যা হবার তাই হয়ে যায়।
আবু মা’বাদ জুহানী (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী (সা.) ইরশাদ করেন:
مَنْ تَعَلَّقَ شَيْئًا ؛ وُكِلَ إِلَيْهِ
‘‘কেউ কোন বস্ত্ত কোন উদ্দেশ্যে শরীর বা অন্য কোথাও ঝুলিয়ে রাখলে আল্লাহ্ তা’আলা ওকে উহার প্রতিই সোপর্দ করেন তথা তার উদ্দেশ্য পূর্ণ করা হয় না বরং যা হবার তাই হয়ে যায়’’। (তিরমিযী, হাদীস ২০৭২)
রুওয়াইফি’ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) আমাকে ডেকে বললেন:
يَا رُوَيْفِعُ! لَعَلَّ الْـحَيَاةَ تَطُوْلُ بِكَ، فَأَخْبِرِ النَّاسَ أَنَّ مَنْ عَقَدَ لِـحْيَتَهُ أَوْ تَقَلَّدَ وَتَرًا أَوْ اسْتَنْجَى بِرَجِيْعِ دَابَّةٍ أَوْ عَظْمٍ فَإِنَّ مُحَمَّدًا بَرِيْءٌ مِنْهُ
‘‘হে রুওয়াইফি’! হয়তো তুমি বেশি দিন বাঁচবে। তাই তুমি সকলকে এ সংবাদ পৌঁছিয়ে দিবে যে, নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি (নামাযরত অবস্থায়) দাড়ি পেঁচায়, গলায় তার ঝুলায় অথবা পশুর মল বা হাড্ডি দিয়ে ইস্তিঞ্জা করে মুহাম্মাদ (সা.) সে ব্যক্তি হতে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত’’। (আহমাদ : ৪/১০৮)
শুধু মানুষের শরীরেই কোন কিছু ঝুলানো নিষেধ যে তা সঠিক নয়। বরং আসন্ন বালা-মুসীবত বা কুদৃষ্টি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য উট, ঘোড়া, গরু, ছাগল ইত্যাদির গলায়ও তার বা এ জাতীয় কোন কিছু ঝুলানো নিষেধ।
আবু বাশীর আন্সারী (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি কোন এক সফরে রাসূল (সা.) এর সফরসঙ্গী ছিলাম। তখন সবাই ঘুমে বিভোর। এমতাবস্থায় রাসূল (সা.) এ মর্মে জনৈক প্রতিনিধি পাঠান যে,
لاَ يَبْقَيَنَّ فِيْ رَقَبَةِ بَعِيْرٍ قِلاَدَةٌ مِنْ وَتَرٍ أَوْ قِلاَدَةٌ إِلاَّ قُطِعَتْ
‘‘কোন উটের গলায় তার বা অন্য কিছু ঝুলানো থাকলে তা যেন কেটে ফেলা হয়’’। (বুখারী, হাদীস ৩০০৫ মুসলিম, হাদীস ২১১৫ আবু দাউদ, হাদীস ২৫৫২)
তবে শুধু বেঁধে রাখার উদ্দেশ্যে কোন পশুর গলায় কোন জিনিস লাগিয়ে রাখা নিষেধ নয়। বরং তা প্রয়োজনে করতে হয়। যাতে পশুটি পালিয়ে না যায়।
আবু ওহাব জুশামী (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:
اِرْتَبِطُوْا الْـخَيْلَ، وَامْسَحُوْا بِنَوَاصِيْهَا وَأَعْجَازِهَا أَوْ قَالَ: أَكْفَالِهَا وَقَلِّدُوْهَا، وَلاَ تُقَلِّدُوْهَا الْأَوْتَارَ
‘‘তোমরা ঘোড়া বেঁধে রাখো এবং ওর কপাল বা পাছায় হাত বুলিয়ে দাও। প্রয়োজনে ওর গলায় কিছু বেঁধে দিতে পারো। কিন্তু আসন্ন বালা-মুসীবত বা কুদৃষ্টি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তার বা অন্য কিছু ঝুলিয়ে দিওনা’’। (আবু দাউদ, হাদীস ২৫৫৩)