যাদুর শির্ক বলতে এমন কতোগুলো মন্ত্র বা অবোধগম্য শব্দসমষ্টিকে বুঝানো হয় যা যাদুকর নিজ মুখ দিয়ে উচ্চারণ করে থাকে। আবার কখনো কখনো বিভিন্ন ওষুধ, সুতায় গিরা বা ধুনা দিয়েও যাদু করা হয়।
এগুলো সব শয়তানের কাজ। তবে আল্লাহ্ তা’আলার ইচ্ছায় কখনো কখনো তা কারো কারোর অন্তরে বা শরীরে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। যদ্দরুন কেউ কেউ কখনো কখনো অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং কারো কারোকে এরই মাধ্যমে হত্যা করা হয়। আবার কখনো কখনো এরই কারণে স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে দ্বন্দ্ব-কলহ সৃষ্টি হয়। আরো কতো কি।
সর্ব সাকুল্য দু’টি কারণেই যাদু শির্কের অন্তর্ভুক্ত। কারণ দু’টি নিম্নরূপ:
১. এগুলো করতে গেলে জিনদের সহযোগিতা নেয়ার জন্য তাদের নামে মানত বা কোরবানি দিতে হয়। কিংবা যে কোনভাবে তাদের নৈকট্য লাভ করতে হয়। যা শির্কের অন্তর্গত।
২. জাদুকররা ইল্মুল্ গাইবের দাবি করে থাকে। তাও একটি মারাত্মক শির্ক বৈ কি?
উক্ত কারণেই রাসূল (সা.) যাদুর ব্যাপারটিকে শির্কের পাশাপাশি উল্লেখ করেছেন।
আবু হুরাইরাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:
اِجْتَنِبُوْا السَّبْعَ الْـمُوْبِقَاتِ، قَالُوْا: يَا رَسُوْلَ اللهِ! وَمَا هُنَّ؟ قَالَ: الشِّرْكُ بِاللهِ، وَالسِّحْرُ، وَقَتْلُ النَّفْسِ الَّتِيْ حَرَّمَ اللهُ إِلاَّ بِالْـحَقِّ، وَأَكْلُ الرِّبَا، وَأَكْلُ مَالِ الْيَتِيْمِ، وَالتَّوَلِّيْ يَوْمَ الزَّحْفِ، وَقَذْفُ الْـمُحْصَنَاتِ الْـمُؤْمِنَاتِ الْغَافِلاَتِ
‘‘তোমরা সর্বনাশা সাতটি গুনাহ্ থেকে বিরত থাকো। সাহাবারা বললেন: হে আল্লাহ্’র রাসূল! ওগুলো কি? তিনি বললেন: আল্লাহ্ তা’আলার সাথে কাউকে অংশীদার করা, যাদুর আদান-প্রদান, অবৈধভাবে কাউকে হত্যা করা, সুদ খাওয়া, ইয়াতীম-অনাথের সম্পদ ভক্ষণ, সম্মুখযুদ্ধ থেকে পলায়ন ও সতী-সাধ্বী মু’মিন মহিলাদের ব্যাপারে কুৎসা রটানো’’। (বুখারী, হাদীস ২৭৬৬, ৬৮৫৭ মুসলিম, হাদীস ৮৯)
যাদু বাস্তবিকপক্ষে একটি মহা ক্ষতিকর বস্ত্ত। যা বিশ্বাস না করে কোন উপায় নেই। তবে আল্লাহ্ তা’আলার একান্ত ইচ্ছা ছাড়া তা এককভাবে কারোর কোন ক্ষতি করতে পারে না।
আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) কেও যাদু করা হয়েছে এবং তা আল্লাহ্ তা’আলার একান্ত ইচ্ছায় তাঁর প্রচুর ক্ষতি সাধন করেছে।
’আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আন্হা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:
سُحِرَ النَّبِيُّ حَتَّى كَانَ يُخَيَّلُ إِلَيْهِ أَنَّهُ يَفْعَلُ الشَّيْءَ وَمَا يَفْعَلُهُ، حَتَّى كَانَ ذَاتَ يَوْمٍ دَعَا وَدَعَا، ثُمَّ قَالَ: أَشَعَرْتِ أَنَّ اللهَ أَفْتَانِيْ فِيْمَا فِيْهِ شِفَائِيْ، أَتَانِيْ رَجُلاَنِ فَقَعَدَ أَحَدُهُمَا عِنْدَ رَأْسِيْ وَالْآخَرُ عِنْدَ رِجْلَيَّ، فَقَالَ أَحَدُهُمَا لِلْآخَرِ: مَا وَجَعُ الرَّجُلِ؟ قَالَ: مَطْبُوْبٌ، قَالَ: وَمَنْ طَبَّهُ؟ قَالَ: لَبِيْدُ بْنُ الْأَعْصَمِ، قَالَ: فِيْمَا ذَا؟ قَالَ: فِيْ مُشْطٍ وَمُشَاطَةٍ فِيْ جُفِّ طَلْعَةِ ذَكَرٍ، قَالَ: فَأَيْنَ هُوَ؟ قَالَ: فِيْ بِئْـرِ ذَرْوَانَ، فَخَرَجَ إِلَيْهَا النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ثُمَّ رَجَعَ، فَقَالَ لِعَائِشَةَ حِيْنَ رَجَعَ: نَخْلُهَا كَأَنَّهُ رُؤُوْسُ الشَّيَاطِيْنَ، فَقُلْتُ: اسْتَخْرَجْتَهُ؟ فَقَالَ: لاَ، أَمَّا أَنَا فَقَدْ شَفَانِيَ اللهُ، وَخَشِيْتُ أَنْ يُثِيْرَ ذَلِكَ عَلَى النَّاسِ شَرًّا، ثُمَّ دُفِنَتِ الْبِئْرُ
‘‘নবী (সা.) কে যাদু করা হয়েছে। তখন এমন মনে হতো যে, তিনি কোন একটি কাজ করেছেন অথচ তিনি সে কাজটি আদৌ করেননি। একদা তিনি এ ব্যাপারে আল্লাহ্ তা’আলার নিকট করুণ প্রার্থনা করেন। অতঃপর তিনি আমাকে বললেন: তুমি জানো কি? আল্লাহ্ তা’আলা আমার চিকিৎসা বাতলে দিয়েছেন। আমার নিকট দু’জন ফিরিশ্তা আসলেন। তম্মধ্যে এক জন আমার মাথার নিকট আর অপর জন আমার পায়ের নিকট বসলেন। অতঃপর একে অপরকে জিজ্ঞাসা করলেন: লোকটির সমস্যা কি? অপর জন বললেন: তাঁকে যাদু করা হয়েছে। আবারো প্রথম জন জিজ্ঞাসা করলেন: কে যাদু করেছে? অপর জন বললেন: লাবীদ বিন্ আ’সাম্। আবারো প্রথম জন জিজ্ঞাসা করলেন: কি জিনিস দিয়ে সে যাদু করলো? অপর জন বললেন: চিরুনি, দাড়ি বা কেশ দিয়ে। যা রাখা হয়েছে নর খেজুরের মুকুলের আবরণে। আবারো প্রথম জন জিজ্ঞাসা করলেন: তা কোথায় ফেলানো হয়েছে? অপর জন বললেন: যার্ওয়ান কূপে। অতঃপর রাসূল (সা.) সে কুয়ায় গিয়ে পুনরায় ফিরে এসে ’আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আন্হা) কে বললেন: কুয়ো পাশের খেজুর গাছ গুলোকে শয়তানের মাথার ন্যায় মনে হয়। ’আয়েশা জিজ্ঞাসা করলেন: জিনিস গুলো উঠিয়ে ফেলেননি? রাসূল (সা.) বললেন: না, আল্লাহ্ তা’আলা আমাকে সুস্থ করে দিয়েছেন। তবে আমার ভয় হয়, ব্যাপারটি ভবিষ্যতে ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে। অতঃপর কুয়োটি ভরাট করে দেয়া হয়’’। (বুখারী, হাদীস ৩১৭৫, ৩২৬৮, ৫৭৬৩, ৫৭৬৫, ৫৭৬৬, ৬০৬৩, ৬৩৯১ মুসলিম, হাদীস ২১৮৯)
যাদু কুফরও বটে। তেমনিভাবে তা ক্ষতিকরও। তবে তা আল্লাহ্ তা’আলার একান্ত ইচ্ছা ছাড়া কারোর কোন ক্ষতি সাধন করতে পারে না।
আল্লাহ তা’আলা বলেন:
«وَاتَّبَعُوْا مَا تَتْلُوْا الشَّيَاطِيْنُ عَلَى مُلْكِ سُلَيْمَانَ، وَمَا كَفَرَ سُلَيْمَاْنُ وَلَكِنَّ الشَّيَاْطِيْنَ كَفَرُوْا يُعَلِّمُوْنَ النَّاْسَ السِّحْرَ وَمَا أُنْزَلَ عَلَى الْمَلَكَيْنِ بِبَاْبِلَ هَاْرُوْتَ وَمَاْرُوْتَ، وَمَا يُعَلِّمَاْنِ مِنْ أَحَدٍ حَتَّى يَقُوْلاَ إِنَّمَا نَحْنُ فِتْنَةٌ فَلاَ تَكْفُرْ، فَيَتَعَلَّمُوْنَ مِنْهُمَا مَا يُفَرِّقُوْنَ بِهِ بَيْنَ الْـمَرْءِ وَزَوْجِهِ، وَمَا هُمْ بِضَآرِّيْنَ بِهِ مِنْ أَحَدٍ إِلاَّ بِإِذْنِ اللهِ، وَيَتَعَلَّمُوْنَ مَا يَضُرُّهُـمْ وَلاَ يَنْفَعُهُمْ، وَلَقَدْ عَلِمُوْا لَمَنِ اشْتَرَاهُ مَا لَهُ فِيْ الْآخِرَةِ مِنْ خَلاَقٍ، وَلَبِئْسَ مَا شَرَوْا بِهِ أَنْفُسَهُمْ لَوْ كَانُوْا يَعْلَمُوْنَ »
‘‘সুলাইমান (আ.) এর রাজত্বকালে শয়তানরা যাদুকরদেরকে যা শেখাতো ইহুদীরা তারই অনুসরণ করেছে। সুলাইমান (আ.) কখনো কুফুরি করেননি। বরং শয়তানরাই কুফুরি করেছে, তারা লোকদেরকে যাদু শেখাতো বাবেল শহরে বিশেষ করে হারূত-মারূত ব্যক্তিদ্বয়কে। (জিবরীল ও মীকাঈল) ফিরিশতাদ্বয়ের উপর কোন যাদু অবতীর্ণ করা হয়নি (যা ইহুদিরা ধারণা করতো)। তবে উক্ত ব্যক্তিদ্বয় কাউকে যাদু শিক্ষা দিতো না যতক্ষণ না তারা বলতো: আমরা পরীক্ষাসরূপ মাত্র। অতএব তোমরা (যাদু শিখে) কুফরী করো না। এতদ্সত্ত্বেও তারা ব্যক্তিদ্বয় থেকে তাই শিখতো যা দিয়ে তারা স্বামী স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছেদ ঘটাতো। তবে তারা আল্লাহ্ তা’আলার ইচ্ছা ছাড়া তা কর্তৃক কারোর ক্ষতি করতে পারতো না। তারা তাই শিখেছে যা তাদের একমাত্র ক্ষতিই সাধন করবে। সামান্যটুকুও উপকার করতে পারবে না। তারা নিশ্চিতভাবেই জানে যে, যে ব্যক্তি যাদু শিখেছে তার জন্য পরকালে কিছুই নেই। তারা যে যাদু ও কুফরীর বিনিময়ে নিজ সত্তাকে বিক্রি করে দিয়েছে তা সত্যিই নিকৃষ্ট, যদি তারা তা জানতো’’। (সূরা বাকারাহ : ১০২)
যাদুকরের শাস্তি হচ্ছে, কারো ব্যাপারে তা সত্যিকারভাবে প্রমাণিত হলে তাকে হত্যা করা। এ ব্যাপারে সাহাবাদের মধ্যে কোন মতানৈক্য নেই।
জুনদুব (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:
حَدُّ السَّاْحِرِ ضَرْبَةٌ بِالسَّيْفِ
‘‘যাদুকরের শাস্তি তলোয়ারের কোপ তথা শিরশ্ছেদ’’। (তিরমিযী, হাদীস ১৪৬০)
জুনদুব (রা.) শুধু এ কথা বলেই ক্ষান্ত হননি। বরং তিনি তা বাস্তবে কার্যকরী করেও দেখিয়েছেন।
আবু ’উসমান নাহ্দী (রাহিমাহুল্লাহ্) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:
كَانَ عِنْدَ الْوَلِيْدِ رَجُلٌ يَلْعَبُ، فَذَبَحَ إِنْسَانًا وَأَبَانَ رَأْسَهُ، فَعَجِبْنَا فَأَعَادَ رَأْسَهُ، فَجَاءَ جُنْدُبٌ الْأَزْدِيْ فَقَتَلَهُ
‘‘ইরাকে ওয়ালীদ্ বিন্ ’উক্ববার সম্মুখে জনৈক ব্যক্তি খেলা দেখাচ্ছিলো। সে আরেক ব্যক্তির মাথা কেটে শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেললো। এতে আমরা খুব বিস্মিত হলে লোকটি কর্তিত মাথা খানি যথাস্থানে ফিরিয়ে দিলো। ইতিমধ্যে হযরত জুনদুব (রা.) এসে তাকে হত্যা করলেন’’। (বুখারী/আততা’রীখুল্ কাবীর : ২/২২২ বায়হাক্বী : ৮/১৩৬)
তেমনিভাবে উম্মুল্ মু’মিনীন ’হাফ্সা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) ও নিজ ক্রীতদাসীকে জাদুকর প্রমাণিত হওয়ার পর হত্যা করে।
’আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:
سَحَرَتْ حَفْصَةَ بِنْتَ عُمَرَ ـ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا ـ جَارِيَةٌ لَهَا، فَأَقَرَّتْ بِالسِّحْرِ وَأَخْرَجَتْهُ، فَقَتَلَتْهَا، فَبَلَغَ ذَلِكَ عُثْمَانَ فَغَضِبَ، فَأَتَاهُ اِبْنُ عُمَرَ ـ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا ـ فَقَالَ: جَارِيَتُهَا سَحَرَتْهَا، أَقَرَّتْ بِالسِّحْرِ وَأَخْرَجَتْهُ، قَالَ: فَكَفَّ عُثْمَانُ قَالَ الرَّاوِيْ: وَكَأَنَّهُ إِنَّمَا كَانَ غَضَبُهُ لِقَتْلِهَا إِيَّاهَا بِغَيْرِ أَمْرِهِ
‘‘’হাফ্সা বিন্ত ’উমর (রাযিয়াল্লাহু আন্হা) কে তাঁর এক ক্রীতদাসী যাদু করে। এমনকি সে এ ব্যাপারটি স্বীকার করে এবং যাদুর বস্ত্তটি উঠিয়ে ফেলে দেয়। এতদ্ কারণে ’হাফ্সা ক্রীতদাসীকে হত্যা করে। সংবাদটি ’উসমান (রা.) এর নিকট পৌঁছুলে তিনি রাগান্বিত হন। অতঃপর আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) তাঁকে ব্যাপারটি বুঝিয়ে বললে তিনি এ ব্যাপারে চুপ হয়ে যান তথা তাঁর সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। বর্ণনাকারী বলেন: ’উসমান (রা.) এর অনুমতি না নিয়ে ক্রীতদাসীকে হত্যা করার কারণেই তিনি রাগান্বিত হন’’। (’আব্দুর রায্যাক, হাদীস ১৮৭৪৭ বায়হাক্বী : ৮/১৩৬)
অনুরূপভাবে ’উমর (রা.) ও তাঁর খিলাফতকালে সকল যাদুকর পুরুষ ও মহিলাকে হত্যা করার আদেশ জারি করেন।
বাজালা (রাহিমাহুল্লাহ্) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:
كَتَبَ عُمَرُ بْنُ الْـخَطَّابِ أَنِ اقْتُلُوْا كُلَّ سَاحِرٍ وَسَاحِرَةٍ، قَالَ الرَّاوِيْ: فَقَتَلْنَا ثَلاَثَ سَوَاحِرَ
‘‘’উমর (রা.) নিজ খিলাফতকালে এ আদেশ জারি করে চিঠি পাঠান যে, তোমরা সকল যাদুকর পুরুষ ও মহিলাকে হত্যা করো। বর্ণনাকারী বলেনঃ অতঃপর আমরা তিনজন মহিলা যাদুকরকে হত্যা করি’’।
(আবু দাউদ, হাদীস ৩০৪৩ বায়হাকী : ৮/১৩৬ ইবনু আবী শাইবাহ্, হাদীস ২৮৯৮২, ৩২৬৫২ আব্দুর রায্যাক, হাদীস ৯৯৭২ আহমাদ, হাদীস ১৬৫৭ আবু ইয়া’লা, হাদীস ৮৬০, ৮৬১)
’উমর (রা.) এর খিলাফতকালে উক্ত আদেশের ব্যাপারে কেউ কোন বিরোধিতা দেখাননি বিধায় উক্ত ব্যাপারে সবার ঐকমত্য রয়েছে বলে প্রমাণ করে।
যাদুকর কখনো সফলকাম হতে পারে না। দুনিয়াতেও নয়। আখিরাতেও নয়।
আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:
« وَلاَ يُفْلِحُ السَّاحِرُ حَيْثُ أَتَى »
‘‘যাদুকর কোথাও সফলকাম হতে পারে না’’। (ত্বা-হা : ৬৯)
যাদুগ্রস্ত ব্যক্তির চিকিৎসা:
যাদুগ্রস্ত ব্যক্তির চিকিৎসা দু’ ধরনের:
১. যাদুগ্রস্ত হওয়ার আগে। তা হচ্ছে রক্ষামূলক। আর তা হবে শরীয়ত সম্মত দো’আ ও যিকিরের মাধ্যমে। যেমন: সকাল-সন্ধ্যা ও প্রতি ফরয নামাযের পর আয়াতুল কুর্সী এক বার এবং সূরা ইখলাস, ফালাক্ব ও নাস তিন তিন বার পাঠ করা। প্রতি রাতে শোয়ার সময় সূরা বাক্বারাহ্’র শেষ দু’ আয়াত পাঠ করা এবং বেশি বেশি আল্লাহ্’র যিকির ও নিম্নোক্ত দো’আ দু’টো পাঠ করা।
أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ
بِسْمِ اللهِ الَّذِيْ لاَ يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِيْ الْأَرْضِ وَلاَ فِيْ السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ
২. যাদুগ্রস্ত হওয়ার পর। আর তা হচ্ছে, প্রথমতঃ আল্লাহ্ তা’আলার নিকট এ রোগ উপশমের জন্য সবিনয়ে আকুতি জানাতে হবে। দ্বিতীয়তঃ শরীয়ত সম্মত দো’আ ও যিকিরের আশ্রয় নিতে হবে। আর তা হচ্ছে নিম্নরূপ:
# সূরা ফাতিহা, কা’ফিরূন্, ইখ্লাস্, ফালাক্ব, নাস্ ও আয়াতুল্ কুরসী পাঠ করবে।
# নিম্নোক্ত যাদুর আয়াতসমূহ পাঠ করবে।
« وَأَوْحَيْنَا إِلَى مُوْسَى أَنْ أَلْقِ عَصَاكَ، فَإِذَا هِيَ تَلْقَفُ مَا يَأْفِكُوْنَ، فَوَقَعَ الْـحَقُّ وَبَطَلَ مَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ، فَغُلِبُوْا هُنَالِكَ وَانْقَلَبُوْا صَاغِـرِيْنَ، وَأُلْقِيَ السَّحَرَةُ سَاجِدِيْنَ، قَالُوْا آمَنَّا بِرَبِّ الْعَالَمِيْنَ، رَبِّ مُوْسَى وَهَارُوْنَ »
(আ’রাফ : ১১৭-১২২)
« وَقَالَ فِرْعَوْنُ ائْتُوْنِيْ بِكُلِّ سَاحِرٍ عَلِيْمٍ، فَلَمَّا جَآءَ السَّحَرَةُ قَالَ لَـهُمْ مُوْسَى أَلْقُوْا مَا أَنْتُمْ مُلْقُوْنَ، فَلَمَّا أَلْقَوْا ؛ قَالَ مُوْسَى: مَا جِئْتُمْ بِهِ السِّحْرُ، إِنَّ اللهَ سَيُبْطِلُهُ، إِنَّ اللهَ لاَ يُصْلِحُ عَمَلَ الْـمُفْسِدِيْنَ، وَيُحِقُّ اللهُ الْـحَقَّ بِكَلِمَاتِهِ، وَلَوْ كَرِهَ الْـمُجْرِمُوْنَ »
(ইউনুস্ : ৭৯-৮২)
« قَالُوْا يَا مُوْسَى إِمَّا أَنْ تُلْقِيَ وَإِمَّا أَنْ نَكُوْنَ أَوَّلَ مَنْ أَلْقَى، قَالَ بَلْ أَلْقُوْا فَإِذَا حِبَالُـهُمْ وَعِصِيُّهُمْ يُخَيُّلُ إِلَيْهِ مِنْ سِحْرِهِمْ أَنَّهَا تَسْعَى، فَأَوْجَسَ فِيْ نَفْسِهِ خِيْفَةً مُوْسَى، قُلْنَا لاَ تَخَفْ إِنَّكَ أَنْتَ الْأَعْلَى، وَأَلْقِ مَا فِيْ يَمِيْنِكَ تَلْقَفْ مَا صَنَعُوْا، إِنَّمَا صَنَعُوْا كَيْدُ سَاحِرٍ، وَلاَ يُفْلِحُ السَّاحِرُ حَيْثُ أَتَى » (ত্বা-হা : ৬৫-৬৯)
« قَالُوْا أَرْجِهْ وَأَخَاهُ وَابْعَثْ فِيْ الْـمَدآيِنِ حَاشِرِيْنَ، يَأْتُوْكَ بِكُلِّ سَحَّارٍ عَلِيْمٍ، فَجُمِعَ السَّحَرَةُ لِـمِيْقَاتِ يَوْمٍ مَعْلُوْمٍ، وَقِيْلَ لِلنَّاسِ هَلْ أَنْتُمْ مُجْتَمِعُوْنَ، لَعَلَّنَا نَتَّبِعُ السَّحَرَةَ إِنْ كَانُوْا هُمُ الْغَالِبِيْنَ، فَلَمَّا جَآءَ السَّحَرَةُ قَالُوْا لِفِرْعَوْنَ أَئِنَّ لَنَا لَأَجْرًا إِنْ كُنَّا نَحْنُ الْغَالِبِيْنَ، قَالَ نَعَمْ وَإِنَّكُمْ إِذًا لَمِنَ الْـمُقَرَّبِيْنَ، قَالَ لَـهُمْ مُوْسَى أَلْقُوْا مَا أَنْتُمْ مُلْقُوْنَ، فَأَلْقَوْا حِبَالَـهُمْ وَعِصِيَّهُمْ وَقَالُوْا بِعِزَّةِ فِرْعَوْنَ إِنَّا لَنَحْنُ الْغَالِبُوْنَ، فَأَلْقَى مُوْسَى عَصَاهُ فَإِذَا هِيَ تَلْقَفُ مَا يَأْفِكُوْنَ، فَأُلْقِيَ السَّحَرَةُ سَاجِدِيْنَ، قَالُوْا آمَنَّا بِرَبِّ الْعَالَمِيْنَ» (শু’আরা : ৩৬-৪৭)
# নিম্নোক্ত শিফার আয়াত ও দো’আসমূহ পাঠ করবে।
« يَا أَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَآءَتْكُمْ مَوْعِظَةٌ مِنْ رَبِّكُمْ وَشِفَآءٌ لـِمَا فِيْ الصُّدُوْرِ وَهُدًى وَرَحْمَةٌ لِلْمُؤْمِنِيْنَ » (ইউনুস্ : ৫৭)
«وَلَوْ جَعَلْنَاهُ قُرْآنًا أَعْجَمِيًّا لَقَالُوْا لَوْلاَ فُصِّلَتْ آيَاتُهُ، أَأَعْجَمِيٌّ وَعَرَبِيٌّ، قُلْ هُوَ لِلَّذِيْنَ آمَنُوْا هُدًى وَشِفَآءٌ، وَالَّذِيْنَ لاَ يُؤْمِنُوْنَ فِيْ آذَانِهِمْ وَقْرٌ وَهُوَ عَلَيْهِمْ عَمًى، أُوْلآئِكَ يُنَادَوْنَ مِنْ مَّكَانٍ بَعِيْدٍ » (হা-মীম আসসাজদাহ্ : ৪৪)
اللَّهُمَّ رَبَّ النَّاسِ أَذْهِبِ الْبَأْسَ، وَاشْفِ أَنْتَ الشَّافِيْ لاَ شِفَاءَ إِلاَّ شِفَاؤُكَ شِفَاءً لاَ يُغَادِرُ سَقَمًا
بِسْمِ اللهِ أَرْقِيْكَ، مِنْ كُلِّ شَيْءٍ يُؤْذِيْكَ، وَمِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ، اللهُ يَشْفِيْكَ، بِسْمِ اللهِ أَرْقِيْكَ
যাদুর সর্বোত্তম চিকিৎসা পদ্ধতি হচ্ছে এই যে, যাদু কর্মটি কোথায় বা কি দিয়ে করা হয়েছে তা ভালোভাবে জেনে সে বস্ত্তটি সমূলে বিনষ্ট করে দেয়া।
অপর দিকে যাদুর চিকিৎসা যাদু দিয়ে করা যা আরবী ভাষায় নুশরাহ্ নামে পরিচিত তা সম্পূর্ণরূপে হারাম। কারণ, তা শয়তানের কাজ।
জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) কে নুশ্রাহ্ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন:
هُوَ مِنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ
‘‘তা (নুশরাহ্) শয়তানি কর্মসমূহের অন্নতম’’।
(আবু দাউদ, হাদীস ৩৮৬৮ আহমাদ : ৩/২৯৪ আব্দুর রাযযাক্ব : ১১/১৩)
শরীয়তের দৃষ্টিতে যাদুকরের নিকট যাওয়াই হারাম। বরং তা কুফরিও বটে। চাই তা চিকিৎসা গ্রহণের জন্যই হোক অথবা যে কোন উদ্দেশ্যেই হোকনা কেন।
’আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাসঊদ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:
مَنْ أَتَى كَاهِنًا أَوْ سَاحِرًا فَصَدَّقَهُ بِمَا يَقُوْلُ فَقَدْ كَفَرَ بِمَا أُنْزِلَ عَلَى مُحَمَّدٍ صلى الله عليه وسلم
‘‘যে ব্যক্তি কোন গণক বা যাদুকরের নিকট গেলো এবং তার কথা বিশ্বাস করলো তৎক্ষণাৎ সে কাফির হয়ে গেলো’’। (ত্বাবারানী/কাবীর খন্ড ১০ হাদীস ১০০০৫)
’ইমরান বিন্ ’হুসাইন ও ’আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:
لَيْسَ مِنَّا مَنْ تَطَيَّرَ أَوْ تُطُيِّرَ لَهُ، أَوْ تَكَهَّنَ أَوْ تُكُهِّنَ لَهُ، أَوْ سَحَرَ أَوْ سُحِرَ لَهُ
‘‘যে ব্যক্তি কোন কর্ম যাত্রার অশুভতা নির্ণয় করে অথবা যার জন্য তা করা হয় এবং যে ব্যক্তি ভবিষ্যদ্বাণী করে অথবা যার জন্য তা করা হয়। অনুরূপভাবে যে ব্যক্তি যাদু করে অথবা যার জন্য তা করা হয় এ সকল ব্যক্তি আমার উম্মত নয়’’। (বায্যার : ৩০৪৩, ৩০৪৪)