বরকতের শির্ক বলতে শরীয়ত অসমর্থিত কোন ব্যক্তি, বস্ত্ত বা সময়কে অবলম্বন করে ধর্ম বা বিষয়গত কোন প্রয়োজন নিবারণ অথবা অধিক কল্যাণ ও পুণ্যের আশা করাকে বুঝানো হয়।
সহজ ভাষায় বলতে হয়, কোর’আন ও হাদীসের দৃষ্টিতে আল্লাহ্ তা’আলা যে ব্যক্তি, বস্ত্ত বা সময়ের মধ্যে বরকত রাখেননি সেগুলোর মাধ্যমে বরকত কামনা করাকে বুঝানো হয়।
তাবাররুকের প্রকারভেদ:
তাবাররুক বা বরকত কামনা সর্ব সাকুল্যে দু’ ধরনের হয়ে থাকে। যা নিম্নরূপ:
বৈধ তাবাররুক:
বৈধ তাবাররুক বলতে যে ধরনের ব্যক্তি বা বস্ত্তর মাধ্যমে বরকত কামনা করা ইসলামী শরীয়তে জায়িয সে গুলোর মাধ্যমে বরকত কামনা করাকে বুঝানো হয়। তা আবার চার প্রকার:
১. নবী সত্তা বা তাঁর নিদর্শনসমূহ কর্তৃক বরকত গ্রহণ:
এ জাতীয় তাবার্রুক শরীয়ত কর্তৃক প্রমাণিত। কারণ, আল্লাহ্ তা’আলা নবী সত্তা ও তদীয় নিদর্শনসমূহে এমন বিশেষ বরকত রেখেছেন যা অন্য কারোর সত্তা বা নিদর্শনসমূহে রাখেননি।
’আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আন্হা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:
كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا مَرِضَ أَحَدٌ مِّنْ أَهْلِهِ نَفَثَ عَلَيْهِ بِالْـمُعَوِّذَاتِ، فَلَمَّا مَرِضَ مَرَضَهُ الَّذِيْ مَاتَ فِيْهِ جَعَلْتُ أَنْفُثُ عَلَيْهِ وَأَمْسَحُهُ بِيَدِ نَفْسِهِ، لِأَنَّهَا كَانَتْ أَعْظَمَ بَرَكَةً مِنْ يَدِيْ
‘‘আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সা.) এর নিজ পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে তিনি তার উপর সূরা ফালাক্ব, নাস্ ইত্যাদি পড়ে দম করতেন। অতঃপর তিনি যখন শেষ বারের মতো অসুস্থ হয়ে পড়লেন যাতে তাঁর ইন্তিকাল হয়ে যায় তখন আমিই তাঁর উপর সূরা ফালাক্ব, নাস্ ইত্যাদি পড়ে দম করতাম এবং তাঁর নিজ হাত দিয়েই আমি তাঁর শরীর বুলিয়ে দিতাম। কারণ, তাঁর হাত আমার হাতের চাইতে অধিক বরকতময়’’। (বুখারী, হাদীস ৪৪৩৯, ৫০১৬, ৫৭৩৫, ৫৭৫১ মুসলিম, হাদীস ২১৯২)
আনাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:
كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا صَلَّى الْغَدَاةَ جَاءَ خَدَمُ الْـمَدِيْنَةِ بِآنِيَتِهِمْ فِيْهَا الْـمَاءُ، فَمَا يُؤْتَى بِإِنَاءٍ إِلاَّ غَمَسَ يَدَهُ فِيْهِ، فَرُبَّمَا جَاؤُوْهُ فِيْ الْغَدَاةِ الْبَارِدَةِ، فَيَغْمِسُ يَدَهُ فِيْهِ
’’রাসূল (সা.) ফজরের নামায শেষ করলেই মদীনার গোলাম ও খাদিমরা পানি ভর্তি পাত্র নিয়ে তাঁর নিকট উপস্থিত হতো। যে কোন পাত্রই তাঁর নিকট উপস্থিত করা হতো তাতেই তিনি নিজ হস্ত মুবারাক ঢুকিয়ে দিতেন। এমনকি অনেক সময় শীতের ভোর সকালে তাঁর নিকট পানি ভর্তি পাত্র নিয়ে আসা হতো। অতঃপর তিনি তাতেও নিজ হস্ত মুবারাক ঢুকিয়ে দিতেন’’। (মুসলিম, হাদীস ২৩২৪)
আনাস্ (রা.) থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন:
لَقَدْ رَأَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَالْـحَلاَّقُ يَحْلِقُهُ، وَأَطَافَ بِهِ أَصْحَابُهُ، فَمَا يُرِيْدُوْنَ أَنْ تَقَعَ شَعْرَةٌ إِلاَّ فِيْ يَدِ رَجُلٍ
‘‘আমি রাসূল (সা.) কে দেখতাম, নাপিত তাঁর মাথা মুন্ডাচ্ছে। আর এ দিকে সাহাবারা তাঁকে বেষ্টন করে আছে। কোন একটি চুল পড়লেই তা পড়তো যে কোন এক ব্যক্তির হাতে। তারা তা কখনোই মাটিতে পড়তে দিতোনা’’। (মুসলিম, হাদীস ২৩২৫)
মিস্ওয়ার্ বিন্ মাখ্রামা ও মার্ওয়ান (রা.) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন:
ثُمَّ إِنَّ عُرْوَةَ جَعَلَ يَرْمُقُ أَصْحَابَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم بِعَيْنَيْهِ، قَالَ: فَوَاللهِ مَا تَنَخَّمَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم نُخَامَةً إِلاَّ وَقَعَتْ فِيْ كَفِّ رَجُلٍ مِّنْهُمْ، فَدَلَكَ بِهَا وَجْهَهُ وَجِلْدَهُ، وَإِذَا أَمَرَهُمْ ابْتَدَرُوْا أَمْرَهُ، وَإِذَا تَوَضَّأَ كَادُوْا يَقْتَتِلُوْنَ عَلَى وَضُوْئِهِ
‘‘অতঃপর ’উর্ওয়া নবী কারীম (সা.) এর সাহাবাদেরকে স্বচক্ষে পর্যবেক্ষণ করছিলো। সে আশ্চর্য হয়ে বললো: আল্লাহ্ তা’আলার কসম! রাসূল (সা.) কখনো এতটুকু কফ ফেলেননি যা তাদের কোন এক জনের হাতে না পড়ে মাটিতে পড়েছে। অতঃপর সে তা দিয়ে নিজ মুখমণ্ডল ও শরীর মলে নেয়নি। নবী (সা.) তাদেরকে কোন কাজের আদেশ করতেই তারা তা করার জন্য দৌড়ে যেতো। আর তিনি ওযু করলে তাঁর ওযুর পানি সংগ্রহের জন্য তারা উঠে পড়ে লাগতো’’। (বুখারী, হাদীস ২৭৩১, ২৭৩২)
উক্ত হাদীস এবং এ সংক্রান্ত আরো অন্যান্য বিশুদ্ধ হাদীস এটিই প্রমাণ করে যে, রাসূল সত্তা এবং তাঁর শরীর থেকে নির্গত ঘাম, কফ, থুতু ইত্যাদি এবং তাঁর চুল ও ব্যবহৃত পোশাক পরিচ্ছদ, থালা বাসন ইত্যাদিতে আল্লাহ্ তা’আলা বিশেষভাবে এমন কিছু বরকত রেখেছেন যা তিনি অন্য কোথাও রাখেননি।
তবে দুনিয়ার কোথাও এ জাতীয় কোন কিছু পাওয়া গেলে সর্ব প্রথম সঠিক বর্ণনাসূত্রে আমাদেরকে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হতে হবে যে, তা একমাত্র রাসূল (সা.) এর। অন্য কারোর নয়। কারণ, এ জাতীয় কোন কিছু কারোর সংগ্রহে থেকে থাকলে একান্ত বরকত হাসিলের উদ্দেশ্যে সে মৃত্যুর সময় তার কবরে তার সঙ্গে তা দাফন করার জন্য অবশ্যই অসিয়ত করে যাবে। বোকামি করে সে তা কখনো কারোর জন্য রেখে যাবেনা। তবে ঘটনাক্রমে তা থেকেও যেতে পারে। এ জন্য আমাদেরকে অবশ্যই এ ব্যাপারে নিশ্চিত হতে হবে।
২. আল্লাহ্’র যিকির ও নেককারদের সাথে বসে বরকত হাসিল করা:
এটিও বহু বিশুদ্ধ হাদীস কর্তৃক প্রমাণিত।
আবু হুরাইরাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:
إِنَّ لِلَّهِ مَلائِكَةً يَطُوْفُوْنَ فِيْ الطُّرُقِ يَلْتَمِسُوْنَ أَهْلَ الذِّكْرِ، فَإِذَا وَجَدُوْا قَوْمًا يَذْكُرُوْنَ اللهَ تَنَادَوْا: هَلُمُّوْا إِلَى حَاجَتِكُمْ، قَالَ: فَيَحُفُّوْنَهُمْ بِأَجْنِحَتِهِمْ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا، قَالَ: فَيَسْأَلُهُمْ رَبُّهُمْ، وَهُوَ أَعْلَمُ مِنْهُمْ، مَا يَقُوْلُ عِبَادِيْ؟ قَالَ: تَقُوْلُ: يُسَبِّحُوْنَكَ وَيُكَبِّرُوْنَكَ وَيَحْمَدُوْنَكَ وَيُمَجِّدُوْنَكَ، قَالَ: فَيَقُوْلُ: هَلْ رَأَوْنِيْ؟ قَالَ: فَيَقُوْلُوْنَ: لاَ وَاللهِ مَا رَأَوْكَ، قَالَ: فَيَقُوْلُ: وَكَيْفَ لَوْ رَأَوْنِيْ؟ قَالَ: يَقُوْلُوْنَ: لَوْ رَأَوْكَ كَانُوْا أَشَدَّ لَكَ عِبَادَةً، وَأَشَدَّ لَكَ تَمْجِيْدًا وَتَحْمِيْدًا وَأَكْثَرَ لَكَ تَسْبِيْحًا، قَالَ: يَقُوْلَُ: فَمَا يَسْأَلُوْنِيْ؟ قَالَ: يَقُوْلُوْنَ: يَسْأَلُوْنَكَ الْـجَنَّةَ، قَالَ: يَقُوْلُ: وَهَلْ رَأَوْهَا؟ قَالَ: يَقُوْلُوْنَ: لاَ وَاللهِ يَا رَبِّ مَا رَأَوْهَا، قَالَ: يَقُوْلُ: فَكَيْفَ لَوْ أَنَّهُمْ رَأَوْهَا؟ قَالَ: يَقُوْلُوْنَ: لَوْ أَنَّهُمْ رَأَوْهَا كَانُوْا أَشَدَّ عَلَيْهَا حِرْصًا، وَأَشَدَّ لَهَا طَلَبًا، وَأَعْظَمَ فِيْهَا رَغْبَةً، قَالَ: فَمِمَّ يَتَعَوَّذُوْنَ؟ قَالَ: يَقُوْلُوْنَ: مِنَ النَّارِ، قَالَ: يَقُوْلُ: وَهَلْ رَأَوْهَا؟ قَالَ: يَقُوْلُوْنَ: لاَ وَاللهِ يَا رَبِّ مَا رَأَوْهَا، قَالَ: يَقُوْلُ: فَكَيْفَ لَوْ رَأَوْهَا؟ قَالَ: يَقُوْلُوْنَ: لَوْ رَأَوْهَا كَانُوْا أَشَدَّ مِنْهَا فِرَارًا، وَأَشَدَّ لَهَا مَخَافَةً، قَالَ: فَيَقُوْلُ: فَأُشْهِدُكُمْ أَنِّيْ قَدْ غَفَرْتُ لَهُمْ، قَالَ: يَقُوْلُ مَلَكٌ مِنَ الْـمَلاَئِكَةِ: فِيْهِمْ فُلاَنٌ لَيْسَ مِنْهُمْ، إِنَّمَا جَاءَ لِحَاجَةٍ، قَالَ: هُمُ الْـجُلَسَاءُ لاَ يَشْقَى بِهِمْ جَلِيْسُهُمْ
‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা’আলার এমন অনেকগুলো ফিরিশ্তা রয়েছেন যারা পথে পথে ঘুরে বেড়ান এবং যিকিরকারীদের অনুসন্ধান করেন। যখন তারা কোন জন সমষ্টিকে যিকির করতে দেখেন তখন তারা পরস্পরকে এ বলে ডাকতে থাকেন যে, আসো! তোমাদের কাজ মিলে গেলো। অতঃপর তারা নিজ পাখাগুলো দিয়ে দুনিয়ার আকাশ পর্যন্ত তাদেরকে বেষ্টন করে রাখেন। এরপর আল্লাহ্ তা’আলা তাদেরকে জিজ্ঞাসা করেন, অথচ তিনি এ ব্যাপারে তাদের চাইতেও বেশি জানেন, আমার বান্দাহ্রা কি বলে? ফিরিশতারা বলেন: তারা আপনার পবিত্রতা, বড়ত্ব, প্রশংসা ও শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করে। আল্লাহ্ তা’আলা বলেন: তারা কি আমাকে দেখেছে? ফিরিশ্তারা বলেন: না, আল্লাহ্’র কসম! তারা আপনাকে দেখেনি। আল্লাহ্ তা’আলা বলেন: তারা আমাকে দেখতে পেলে কি করতো? ফিরিশ্তারা বলেন: তারা আপনাকে দেখতে পেলে আরো বেশি ইবাদাত করতো। আরো অধিক আপনার সম্মান, প্রশংসা ও পবিত্রতা বর্ণনা করতো। আল্লাহ্ তা’আলা বলেন: তারা আমার কাছে কি চায়? ফিরিশতারা বলেন: তারা আপনার কাছে জান্নাত চায়। আল্লাহ্ তা’আলা বলেন: তারা কি জান্নাত দেখেছে? ফিরিশ্তারা বলেন: না, আল্লাহ্’র কসম! হে প্রভু! তারা জান্নাত দেখেনি। আল্লাহ্ তা’আলা বলেন: তারা জান্নাত দেখলে কি করতো? ফিরিশ্তারা বলেন: তারা জান্নাত দেখতে পেলে জান্নাতের প্রতি তাদের উৎসাহ ও লোভ আরো বেড়ে যেতো। আরো মরিয়া হয়ে জান্নাত কামনা করতো। আল্লাহ্ তা’আলা বলেন: তারা কি বস্ত্ত থেকে আমার আশ্রয় কামনা করে? ফিরিশতারা বলেন: জাহান্নাম থেকে। আল্লাহ্ তা’আলা বলেন: তারা কি জাহান্নাম দেখেছে? ফিরিশ্তারা বলেন: না, আল্লাহ্’র কসম! হে প্রভু! তারা জাহান্নাম দেখেনি। আল্লাহ্ তা’আলা বলেন: তারা জাহান্নাম দেখলে কি করতো? ফিরিশতারা বলেন: তারা জাহান্নাম দেখতে পেলে জাহান্নামকে আরো বেশি ভয় পেতো এবং জাহান্নাম থেকে আরো বেশি পলায়নপর হতো। আল্লাহ্ তা’আলা বলেন: আমি তোমাদেরকে সাক্ষী রেখে বলছি: আমি তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছি। জনৈক ফিরিশতা বলেন: তাদের মধ্যে এমন এক ব্যক্তি রয়েছে যে তাদের অন্তর্ভূত নয়। বরং সে কোন এক প্রয়োজনে তাদের কাছে এসেছে। আল্লাহ্ তা’আলা বলেন: তারা আমার উদ্দেশ্যেই বসেছে। সুতরাং তাদের সাথে যে বসেছে সেও আমার রহমত হতে বঞ্চিত হতে পারে না’’। (বুখারী, হাদীস ৬৪০৮ মুসলিম, হাদীস ২৬৮৯)
উক্ত হাদীসে যিকিরের মজলিশ বিশেষ বরকত ও মাগফিরাতের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে উল্লিখিত হয়েছে। এমনকি ইহার বরকত এমন ব্যক্তির ভাগ্যেও জুটবে যে তাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। বরং সে কোন এক প্রয়োজনে তাদের সাথে বসেছে।
৩. যে কোন মসজিদে নামায ও ইবাদাতের মাধ্যমে বরকত গ্রহণ:
যে কোন মসজিদে বিশেষভাবে তিনটি মসজিদে নামায ও অন্যান্য ইবাদাতের মাধ্যমে বরকত কামনা করা শরীয়ত সম্মত। সে তিনটি মসজিদ হলো: মসজিদে হারাম, মসজিদে নববী ও মসজিদে ’আকসা।
আবু হুরাইরাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী (সা.) ইরশাদ করেন:
صَلاَةٌ فِيْ مَسْجِدِيْ هَذَا خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ صَلاَةٍ فِيْمَا سِوَاهُ إِلاَّ الْـمَسْجِدَ الْـحَرَامَ
‘‘আমার মসজিদে এক ওয়াক্ত নামায পড়া অন্য মসজিদে হাজার ওয়াক্ত নামাযের চাইতেও উত্তম। তবে শুধু মসজিদে হারাম। তাতে নামায পড়ার সাওয়াব আরো অনেক বেশি’’। (বুখারী, হাদীস ১১৯০ মুসলিম, হাদীস ১৩৯৪ ইবনু মাজাহ্, হাদীস ১৪২৪, ১৪২৬)
জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:
صَلاَةٌ فِيْ مَسْجِدِيْ أَفْضَلُ مِنْ أَلْفِ صَلاَةٍ فِيْمَا سِوَاهُ، إِلاَّ الْـمَسْجِدَ الْـحَرَامَ، وَصَلاَةٌ فِيْ الْـمَسْجِدِ الْـحَرَامِ أَفْضَلُ مِنْ مِئَةِ أَلْفِ صَلاَةٍ فِيْمَا سِوَاهُ
‘‘আমার মসজিদে এক ওয়াক্ত নামায পড়া অন্য মসজিদে হাজার ওয়াক্ত নামাযের চাইতেও উত্তম। তবে শুধু মসজিদে হারাম। কারণ, তাতে এক ওয়াক্ত নামায পড়া অন্য মসজিদে লক্ষ ওয়াক্ত নামাযের চাইতেও উত্তম’’। (ইবনু মাজাহ্, হাদীস ১৪২৭ আহমাদ : ৩/৩৪৩, ৩৯৭)
আবু যর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:
صَلاَةٌ فِيْ مَسْجِدِيْ أَفْضَلُ مِنْ أَرْبَعِ صَلَوَاتٍ فِيْهِ يَعْنِيْ بَيْتَ الْـمَقْدِسِ وَلَنِعْمَ الْـمُصَلِّيْ هُوَ، وَلَيُوْشِكَنَّ أَنْ يَكُوْنَ لِلرَّجُلِ مِثْلُ شَطَنِ فَرَسِهِ مِنَ الْأَرْضِ حَيْثُ يَرَى مِنْهُ بَيْتَ الْمَقْدِسِ خَيْرٌ لَهُ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيْهَا
‘‘আমার মসজিদে এক ওয়াক্ত নামায পড়া বাইতুল মাক্বদিসে চার ওয়াক্ত নামাযের চাইতেও উত্তম। ভাগ্যবান সে মুসল্লী যে বাইতুল মাক্বদিসে নামায পড়েছে। অতি সন্নিকটে সে দিন যে দিন কারোর নিকট তার ঘোড়ার রশি পরিমাণ জায়গা থাকাও অধিক পছন্দনীয় হবে দুনিয়া ও দুনিয়ার সব কিছুর চাইতে। যে জায়গা থেকে সে বাইতুল মাক্বদিস দেখতে পাবে’’। (হাকিম্ : ৪/৫০৯ ইবনু ’আসাকির্ : ১/১৬৩-১৬৪ ত্বাহাবী/মুশকিলুল্ আসার্ : ১/২৪৮)
তবে এ সকল মসজিদে নামায বা যে কোন ইবাদাতে বরকত রয়েছে বলে এ মসজিদগুলোর দেয়াল, পিলার, দরোজা, চৌকাঠ ইত্যাদিতে এমন কোন বরকত নেই যা সেগুলো স্পর্শ করার মাধ্যমে পাওয়া যেতে পারে। কারণ, এ ব্যাপারে শরীয়তের কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না।
৪. শরীয়ত স্বীকৃত খাদ্য, পানীয় বা ওষুধ কর্তৃক বরকত গ্রহণ:
শরীয়তের দৃষ্টিতে যে যে খাদ্য, পানীয় বা ওষুধে বরকত রয়েছে যা কোর’আন বা হাদীস কর্তৃক প্রমাণিত তা নিম্নরূপ:
ক. যাইতুনের তেল কর্তৃক বরকত গ্রহণ:
এ তেল সম্পর্কে আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:
« يُوْقَدُ مِنْ شَجَرَةٍ مُّبَارَكَةٍ زَيْنُوْنَةٍ لاَ شَرْقِيَّةٍ وَّلاَ غَرْبِيَّةٍ، يَكَادُ زَيْتُهَا يُضِيْءُ وَلَوْ لَمْ تَمْسَسْهُ نَارٌ »
‘‘যা প্রজ্বলিত করা হয় পূত-পবিত্র যাইতুন বৃক্ষের তেল দিয়ে যা প্রাচ্যেরও নয়, প্রতিচ্যেরও নয়। অগ্নি স্পর্শ না করলেও সে তেল যেন উজ্জ্বল আলো দেয়’’। (নূর : ৩৫)
’উমর, আবু উসাইদ্ ও আবু হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:
كُلُوْا الزَّيْتَ وَادَّهِنُوْا بِهِ، فَإِنَّهُ مِنْ شَجَرَةٍ مُبَارَكَةٍ
‘‘তোমরা যাইতুনের তেল খাও এবং শরীরে মালিশ করো। কারণ, তা বরকতময় গাছ থেকে সংগৃহীত’’। (তিরমিযী, হাদীস ১৮৫১, ১৮৫২ ইবনু মাজাহ্, হাদীস ৩৩৮২ হাকিম্, হাদীস ৩৫০৪, ৩৫০৫ আহমাদ : ৩/৪৯৭)
খ. দুধ পান ও তাতে বরকত কামনা করা:
আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:
مَنْ أَطْعَمَهُ اللهُ طَعَامًا فَلْيَقُلْ: اللَّهُمَّ! بَارِكْ لَنَا فِيْهِ، وَارْزُقْنَا خَيْرًا مِّنْهُ ؛ وَمَنْ سَقَاهُ اللهُ لَبَنًا، فَلْيَقُلْ: اللَّهُمَّ! بَارِكْ لَنَا فِيْهِ، وَزِدْنَا مِنْهُ ؛ فَإِنِّيْ لاَ أَعْلَمُ مَا يُجْزِئُ مِنَ الطَّعَامِ وَالشَّرَابِ إِلاَّ اللَّبَنَ
‘‘আল্লাহ্ তা’আলা যাকে কোন খাদ্য গ্রহণের সুযোগ দেন সে অবশ্যই বলবে: হে আল্লাহ্! আপনি আমাদের জন্য এতে বরকত দিন এবং আমাদেরকে এর চাইতেও আরো ভালো রিযিক দিন। আর যাকে আল্লাহ্ তা’আলা দুধ পানের সুযোগ দেন সে অবশ্যই বলবে: হে আল্লাহ্! আপনি আমাদের জন্য এতে বরকত দিন এবং আমাদেরকে তা আরো বাড়িয়ে দিন। কারণ, আমি দুধ ছাড়া এমন অন্য কোন বস্ত্ত দেখছিনা যা একইসঙ্গে খাদ্য ও পানীয়ের কাজ করে’’। (ইবনু মাজাহ্, হাদীস ৩৩৮৫)
গ. মধু পান ও তা কর্তৃক উপশম কামনা করা:
আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:
«يَخْرُجُ مِنْ بُطُوْنِهَا شَرَابٌ مُّخْتَلِفٌ أَلْوَانُهُ، فِيْهِ شِفَآءٌ لِّلنَّاسِ »
‘‘ওর (মৌমাছি) উদর থেকে নির্গত হয় বিবিধ বর্ণের পানীয় (মধু); যাতে রয়েছে মানুষের জন্য রোগমুক্তি’’। (নাহল্ : ৬৯)
আবু সাঈদ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:
جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ: أَخِيْ يَشْتَكِيْ بَطْنَهُ، فَقَالَ: اسْقِهِ عَسَلاً، ثُمَّ أَتَى الثَّانِيَةَ، فَقَالَ: اسْقِهِ عَسَلاً، ثُمَّ أَتَاهُ الثَّالِثَةَ، فَقَالَ: اسْقِهِ عَسَلاً، ثُمَّ أَتَاهُ فَقَالَ: قَدْ فَعَلْتُ؟ فَقَالَ: صَدَقَ اللهُ، وَكَذَبَ بَطْنُ أَخِيْكَ، اسْقِهِ عَسَلاً، فَسَقَاهُ فَبَرَأَ
‘‘জনৈক ব্যক্তি নবী (সা.) কে বললেন: আমার ভাইয়ের পেটের রোগ (কলেরা) দেখা দিয়েছে। তিনি বললেন: তাকে মধু পান করাও। সে আবারো এসে আপত্তি জানালো। রাসূল (সা.) আবারো বললেন: তাকে মধু পান করাও। সে আবারো এসে আপত্তি জানালে নবী (সা.) আবারো বললেন: তাকে মধু পান করাও। সে আবারো এসে বললো: আমি মধু পান করিয়েছি। কিন্তু কোন ফায়েদা হয়নি। তখন রাসূল (সা.) বললেন: আল্লাহ্ তা’আলা সত্যিই বলেছেন: মধুর মধ্যে রোগের উপশম রয়েছে। তবে তোমার ভাইয়ের পেঠ মিথ্যা বলছে। তাকে আবারো মধু পান করাও। অতঃপর সে আবারো মধু পান করালে তার ভাইয়ের পেটের রোগ ভালো হয়ে যায়’’। (বুখারী, হাদীস ৫৬৮৪, ৫৭১৬ মুসলিম, হাদীস ২২১৭)
ঘ. যমযমের পানি কর্তৃক বরকত গ্রহণ:
এর মধ্যেও প্রচুর বরকত রয়েছে।
আবু যর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: যখন রাসূল (সা.) আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, মক্কা নগরীতে এ ত্রিশ দিন পর্যন্ত তোমাকে কে খাইয়েছে? তখন আমি বললাম:
مَا كَانَ لِيْ طَعَامٌ إِلاَّ مَاءُ زَمْزَمَ، فَسَمِنْتُ حَتَّى تَكَسَّرَتْ عُكَنُ بَطْنِيْ، وَمَا أَجِدُ عَلَى كَبِدِيْ سُخْفَةَ جُوْعٍ، قَالَ: إِنَّهَا مُبَارَكَةٌ، إِنَّهَا طَعَامُ طُعْمٍ
‘‘এতোদিন যমযমের পানি ছাড়া কোন খাদ্য আমার নিকট ছিলনা। তবুও আমি মোটা হয়ে গিয়েছি। এমনকি আমার পেটে ভাঁজ পড়ে গেছে এবং আমি খিদের কোন দুর্বলতা অনুভব করছিনে। রাসূল (সা.) বললেন: নিশ্চয়ই যমযমের পানি বরকতময়। নিশ্চয়ই তা খাদ্য বৈ কি?’’ (মুসলিম, হাদীস ২৪৭৩)
অবৈধ বা শির্ক জাতীয় তাবাররুক:
অবৈধ বা শির্ক জাতীয় তাবার্রুক বলতে যে ধরনের ব্যক্তি, বস্ত্ত বা সময়ের মাধ্যমে বরকত কামনা করা ইসলামী শরীয়তে নাজায়িয সে গুলোর মাধ্যমে বরকত কামনা করাকে বুঝানো হয়। তা আবার তিন প্রকার:
১. বরকতের নিয়্যাতে কোন ঐতিহাসিক জায়গা ভ্রমণ বা কোন বস্ত্ত স্পর্শ করণ:
যেমন: বরকতের নিয়্যাতে আরক্বাম্ বিন্ আরক্বাম্ সাহাবীর ঘর, হেরা ও সাউর গিরিগুহা যিয়ারাত এবং কোন কোন মসজিদ বা মাযারের দেয়াল, জানালা, চৌকাঠ বা দরোজা স্পর্শ বা চুমু দেয়া ইত্যাদি। এ সব বিদ্’আত, শির্ক ও না জায়িয কাজ। কারণ, বরকত গ্রহণ একটি ইবাদাত যা অবশ্যই শরীয়ত সম্মত হতে হবে। যদি এগুলোতে কোন বরকত থাকতো তা হলে অবশ্যই রাসূল (সা.) তা নিজ উম্মাতকে জানিয়ে দিতেন এবং সাহাবায়ে কিরামও অবশ্যই এ গুলোতে বরকত কামনা করতেন। কারণ, তাঁরা কোন পুণ্যময় কর্মে আমাদের চাইতে কোনভাবেই পিছিয়ে ছিলেন না। যখন তাঁরা এতে কোন বরকত দেখেননি তাহলে কি করে আমরা সেগুলোতে বরকত কামনা করতে যাবো। তা একেবারেই যুক্তি বহির্ভূত।
রাসূল (সা.) কোন বস্ত্ত কর্তৃক বরকত হাসিলকে মূর্তিপূজার সাথে তুলনা করেছেন।
আবু ওয়াক্বিদ্ লাইসী (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:
لَـمَّا خَرَجَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِلَى حُنَيْنٍ مَرَّ بِشَجَرَةٍ لِلْمُشْرِكِيْنَ ـ يُقَالُ لَهَا ذَاتُ أَنْوَاطٍ ـ يُعَلِّقُوْنَ عَلَيْهَا أَسْلِحَتَهُمْ، فَقَالُوْا: يَا رَسُوْلَ اللهِ! اِجْعَلْ لَنَا ذَاتَ أَنْوَاطٍ كَمَا لَـهُمْ ذَاتُ أَنْوَاطٍ، فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم: سُبْحَانَ اللهِ! هَذَا كَمَا قَالَ قَوْمُ مُوْسَى: « اِجْعَلْ لَنَا إِلَـهًا كَمَا لَـهُمْ آلِهَةٌ! » وَالَّذِيْ نَفْسِيْ بِيَدِهِ لَتَرْكَبُنَّ سُنَّةَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ
‘‘রাসূল (সা.) যখন ’হুনাইন্ অভিমুখে রওয়ানা করলেন তখন পথিমধ্যে তিনি মুশরিকদের ‘‘যাতু আন্ওয়াত’’ নামক একটি গাছের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। যার উপর তারা যুদ্ধের অস্ত্রসমূহ বরকতের আশায় টাঙ্গিয়ে রাখতো। তখন সাহাবারা বললেন: হে আল্লাহ্’র রাসূল! আপনি আমাদের জন্যও একটি গাছ ঠিক করে দিন যেমনিভাবে মুশরিকদের জন্য একটি গাছ রয়েছে। নবী (সা.) বললেন: আশ্চর্য! তোমরা সে দাবিই করছো যা মূসা (আ.) এর সম্প্রদায় তাঁর নিকট করেছিলো। তারা বলেছিলো: হে মূসা! আপনি আমাদের জন্যও একটি মূর্তি বা মা’বূদ ঠিক করে দিন যেমনিভাবে অন্যদের অনেকগুলো মূর্তি বা মা’বূদ রয়েছে। (আ’রাফ : ১৩৮)
রাসূল (সা.) বললেন: ঐ সত্তার কসম! যাঁর হাতে আমার জীবন। তোমরা নিশ্চয়ই তোমাদের পূর্ববর্তীদের হুবহু অনুসারী হবে। (তিরমিযী, হাদীস ২১৮০ ’হুমাইদী, হাদীস ৮৪৮ ত্বায়ালিসী, হাদীস ১৩৪৬ আব্দুর্ রায্যাক্ব, হাদীস ২০৭৬৩ ইবনু হিববান্/মাওয়ারিদ্, হাদীস ১৮৩৫ ত্বাবারানী/কাবীর, হাদীস ৩২৯০, ৩২৯৪)
২. শরীয়ত অসম্মত কোন সময় কর্তৃক বরকত কামনা করণ:
যেমন: নবী (সা.) এর জন্ম দিন, মি’রাজের রাত্রি এবং হিজরত, বদর যুদ্ধ ইত্যাদির দিনকে বরকতময় মনে করা।
যদি এ সময় গুলোতে কোন বরকত থাকতো তা হলে রাসূল (সা.) অবশ্যই তা নিজ উম্মাতকে শিখিয়ে যেতেন এবং সাহাবায়ে কিরামও তা অবশ্যই পালন করতেন। যখন তাঁরা তা করেননি তা হলে বুঝা গেলো এতে কোন বরকত নেই। বরং তা কর্তৃক বরকত গ্রহণ বিদ্’আত ও শির্ক।
৩. কোন বুযুর্গ ব্যক্তি বা তদীয় নিদর্শনসমূহ কর্তৃক বরকত গ্রহণ:
ইতিপূর্বে দলীল-প্রমাণসহ উল্লেখ করা হয়েছে যে, মানুষের মধ্যে শুধুমাত্র রাসূল (সা.) এবং তাঁর শরীর থেকে নির্গত ঘাম, কফ, থুতু ইত্যাদি এবং তাঁর চুল ও ব্যবহৃত পোশাক পরিচ্ছদ, থালা বাসন ইত্যাদিতে আল্লাহ্ তা’আলা বিশেষভাবে এমন কিছু বরকত রেখেছেন যা তিনি অন্য কোথাও রাখেননি।
কেউ কেউ ভাবতে পারেন যে, রাসূল (সা.) ও তদীয় নিদর্শনসমূহ কর্তৃক যখন বরকত হাসিল করা জায়িয তখন অবশ্যই ওলী-বুযুর্গ ও তদীয় নিদর্শনসমূহ কর্তৃক বরকত হাসিল করাও জায়িয হতে হবে। কারণ, তাঁরা নবীর ওয়ারিশ।
উত্তরে বলতে হবে যে, প্রবাদে বলে: কোথায় আব্দুল আর কোথায় খালকূল। কোথায় রাসূল (সা.) আর কোথায় আমাদের ধারণাকৃত বুযুর্গরা। আর যদি উভয়ের মধ্যে তুলনা করা সম্ভবই হতো তাহলে সাধারণ সাহাবায়ে কিরাম অবশ্যই আবু বকর, ’উমর, ’উস্মান, ’আলী ও জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত সাহাবায়ে কিরাম এর সত্তা ও নিদর্শনাবলী কর্তৃক বরকত হাসিল করতেন। যখন তাঁরা তা করতে যাননি। তাহলে বুঝা যায়, এ রকম তুলনা করা সত্যিই বোকামো।
অন্য দিকে আমরা কাউকে নিশ্চিতভাবে ওলী বা বুযুর্গ বলে ধারণা করতে পারি না। কারণ, বুযুর্গী বলতে সত্যিকারার্থে অন্তরের বুযুর্গীকেই বুঝানো হয়। আর এ ব্যাপারে কোর’আন ও হাদীসের মাধ্যম ছাড়া কেউ কারোর ব্যাপারে নিশ্চয়তা দিতে পারে না। শুধু আমরা কারোর সম্পর্কে এতটুকুই বলতে পারি যে, মনে হয় তিনি একজন আল্লাহ্’র ওলী। সুতরাং তাঁর ভালো পরিসমাপ্তির আশা করা যায়। নিশ্চয়তা নয়। এমনো তো হতে পারে যে, আমরা জনৈক কে বুযুর্গ মনে করছি। অথচ সে মৃত্যুর সময় ঈমান নিয়ে মরতে পারেনি।
আরেকটি বিশেষ কথা এই যে, আমাদের ধারণাকৃত কোন বুযুর্গের সাথে বরকত নেয়ার আচরণ দেখানো হলে তাতে তাঁর উপকার না হয়ে বেশিরভাগ অপকারই হবে। কারণ, এতে করে তাঁর মধ্যে গর্ব, আত্মম্ভরিতা ও নিজকে সর্বশ্রেষ্ঠ ভাবার রোগ জন্ম নেয়ার বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। আর তা কারোর সম্মুখবর্তী প্রশংসারই শামিল যা শরীয়তে নিষিদ্ধ।