পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের মধ্যে ছালাতের ফযীলত সংক্রান্ত অনেক বর্ণনা রয়েছে। যার মাধ্যমে আল্লাহর বান্দা ছালাতের প্রতি মনোযোগী হতে পারে এবং বিশুদ্ধতা ও একাগ্রতার সাথে একনিষ্ঠচিত্তে ছালাত সম্পাদন করতে পারে। এক কথায় ছালাতের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য পবিত্র কুরআন ও ছহীহ সুন্নাহর অমীয় বাণীই যথেষ্ট। কিন্তু বর্তমানে সেই অভ্রান্ত বাণী ছেড়ে যঈফ ও জাল হাদীছ, মিথ্যা, উদ্ভট ও কাল্পনিক কাহিনী শুনিয়ে উৎসাহিত করা হচ্ছে। বই-পুস্তক লিখে ও বক্তব্যের মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। এগুলো মানুষের হৃদয়ে কোন প্রভাব ফেলে না। আমরা এই অধ্যায়ে সেগুলো উল্লেখ করার পাশাপাশি ছহীহ দলীলগুলোও উল্লেখ করার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।
ছালাত জান্নাতের চাবি :
কথাটি সমাজে বহুল প্রচলিত। অনেকে বুখারীতে আছে বলেও চালিয়ে দেয়। অথচ এর সনদ ত্রুটিপূর্ণ।
(১) عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ مِفْتَاحُ الْجَنَّةِ الصَّلاَةُ وَمِفْتَاحُ الصَّلاَةِ الطُّهُوْرُ.
(১) জাবের ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, জান্নাতের চাবি হল ছালাত। আর ছালাতের চাবি হল পবিত্রতা।[1]
তাহক্বীক্ব : হাদীছটির প্রথম অংশ যঈফ।[2] আর দ্বিতীয় অংশ পৃথক সনদে ছহীহ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে।[3]
প্রথম অংশ যঈফ হওয়ার কারণ হল- উক্ত সনদে দু’জন দুর্বল রাবী আছে। (ক) সুলায়মান বিন করম ও (খ) আবু ইয়াহইয়া আল-ক্বাত্তাত।[4]
জ্ঞাতব্য : জান্নাতের চাবি সম্পর্কে ইমাম বুখারী (রহঃ) একটি অনুচ্ছেদের বিষয়বস্ত্ত আলোচনা করতে গিয়ে ওহাব ইবনু মুনাবিবহ (রহঃ) থেকে যে বর্ণনা উদ্ধৃত করেছেন। তাঁকে একদিন জিজ্ঞেস করা হল-
أَلَيْسَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ مِفْتَاحُ الْجَنَّةِ قَالَ بَلَى وَلَكِنْ لَيْسَ مِفْتَاحٌ إِلاَّ لَهُ أَسْنَانٌ فَإِنْ جِئْتَ بِمِفْتَاحٍ لَهُ أَسْنَانٌ فُتِحَ لَكَ وَإِلاَّ لَمْ يُفْتَحْ لَكَ.
‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’ কি জান্নাতের চাবি নয়? তখন তিনি বললেন, হ্যাঁ। তবে প্রত্যেক চাবির দাঁত রয়েছে। তুমি যদি এমন চাবি নিয়ে আস যার দাঁত রয়েছে, তাহলে তোমার জন্য জান্নাত খোলা হবে। অন্যথা খোলা হবে না’।[5] এছাড়াও আরো অন্যান্য হাদীছ দ্বারাও এটা প্রমাণিত হয়।[6] বুঝা যাচ্ছে যে ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু’ জান্নাতের চাবি আর শরী‘আতের অন্যান্য আমল-আহকাম অর্থাৎ ছালাত, ছিয়াম, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি ঐ চাবির দাঁত।
[2]. যঈফুল জামে‘ হা/৫২৬৫; সিলসিলা যঈফাহ হা/৩৬০৯; যঈফ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/২১২।
[3]. আবুদাঊদ হা/৬১, ১/৯ পৃঃ; তিরমিযী হা/৩; মিশকাত হা/৩১২, পৃঃ ৪০; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/২৯১, ১/৫১।
[4]. سنده ضعيف فيه سليمن بن قرم عن أبى يحيى القتات وهما ضعيفان لسوء حفظهما -আলবানী, মিশকাত হা/২৯৪-এর টীকা দ্রঃ ১/৯৭ পৃঃ; শু‘আইব আরনাঊত্ব, তাহক্বীক্ব মুসনাদে আহমাদ হা/১৪৭০৩-এর আলোচনা দ্রঃ।
[5]. ছহীহ বুখারী ১/১৬৫ পৃঃ; হা/১২৩৭-এর পূর্বের আলোচনা দ্রঃ, (ইফাবা হা/১১৬৫-এর পূর্বের আলোচনা, ২/৩৫৫ পৃঃ), ‘জানাযা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১।
[6]. ছহীহ বুখারী হা/৫৮২৭, ২/৮৬৭ পৃঃ, ‘পোষাক’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-২৩; ছহীহ মুসলিম হা/২৮৩, ১/৬৬ পৃঃ, ‘ঈমান’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৪২; মিশকাত হা/২৬; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/২৪, ১ম খন্ড, পৃঃ ২৯; ছহীহ মুসলিম হা/১৫৬, ১/৪৫ পৃঃ, ‘ঈমান’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১২; মিশকাত হা/৩৯; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৩৫।
(2) قَالَ النَّبِىُّ مَنَ تَرَكَ صَلاَةً حَتىَّ مَضَى وَقْتُهَا ثُمَّ قَضَى عُذِّبَ فِى النَّارِ حُقْبًا وَالْحُقْبُ ثَمَانُوْنَ سَنَةً كُلُّ سَنَةٍ ثَلاَثمائة وَسِتُّوْنَ يَوْمًا كُلُّ يَوْمٍ اَلْفُ سَنَةٍ مِمَّا تَعُدُّوْنَ.
(২) নবী (ছাঃ) বলেন, যদি কোন ব্যক্তি এক ওয়াক্ত ছালাত ছেড়ে দেয় আর ইতিমধ্যে ঐ ছালাতের ওয়াক্ত পার হয়ে যায় এবং ছালাত আদায় করে নেয়, তবুও তাকে এক হুকবা জাহান্নামে শাস্তি দেওয়া হবে। এক হুকবা হল, ৮০ বছর। আর প্রত্যেক বছর ৩৬০ তিন। আর প্রত্যেক দিন এক হাযার বছরের সমান, যেভাবে তোমরা গণনা কর। উল্লেখ্য, উক্ত হিসাব অনুযায়ী সর্বমোট দুই কোটি অষ্টাশি লক্ষ বছর হয়।[1]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি মিথ্যা ও বানোয়াট। উক্ত বক্তব্য তাবলীগ জামা‘আতের অনুসরণীয় গ্রন্থ ফাযায়েলে আমল-এর ফাযায়েলে নামায অংশে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু সেখানে কোন প্রমাণ পেশ করা হয়নি। বরং বলা হয়েছে, كَذَا فِىْ مَجَالِسِ الْأَبْرَارِ قُلْتُ لَمْ أَجِدْهُ فِيْمَا عِنْدِىْ مِنْ كُتُبِ الْحَدِيْثِ ‘এভাবেই ‘মাজালিসুল আবরারে’ উল্লেখ করা হয়েছে। তবে আমার নিকটে হাদীছের যে সমস্ত গ্রন্থ রয়েছে, তার মধ্যে আমি উহা পাইনি’।[2] লেখক নিজেই যেহেতু স্বীকার করেছেন, সেহেতু আর মন্তব্যের প্রয়োজন নেই। তবে দুঃখজনক হল, স্পষ্ট হওয়ার পর কেন তা রাসূল (ছাঃ)-এর নামে বর্ণনা করতে হবে? এটা নিঃসন্দেহে তাঁর নামে মিথ্যাচারের শামিল।
জ্ঞাতব্য : ছহীহ হাদীছের দৃষ্টিকোণ থেকেও কথাটি সঠিক নয়। কারণ রাসূল (ছাঃ) বলেন, ঘুম বা ভুলের কারণে যে ব্যক্তির ছালাত ছুটে যাবে, তার কাফ্ফারা হল যখন স্মরণ হবে তখন তা পড়ে নেয়া’।[3] এছাড়া রাসূল (ছাঃ) এবং ছাহাবায়ে কেরাম খন্দকের যুদ্ধের দিন সূর্য ডুবার পর আছরের ছালাত আদায় করেন। অতঃপর মাগরিবের ছালাত আদায় করেন।[4] তাছাড়া ফজর ছালাতও একদিন তাঁরা সূর্যের তাপ বাড়ার পরে পড়েছেন।[5] তাহলে তাঁদের শাস্তি কত বছর হবে? (নাঊযুবিল্লাহ)।
[2]. ফাযায়েলে আমল (উর্দূ), পৃঃ ৩৯; বাংলা, পৃঃ ১১৬।
[3]. ছহীহ বুখারী হা/৫৯৭, ১/৮৪ পৃঃ, (ইফাবা হা/৫৭০, ২/৩৫ পৃঃ), ‘ছালাতের ওয়াক্ত সমূহ’ অধ্যায়, ‘যে ব্যক্তি ছালাত ভুল করে’ অনুচ্ছেদ-৩৭; ছহীহ মুসলিম হা/১৫৯২, ১৫৯৮, ১৬০০, ১/২৩৮, (ইফাবা হা/১৪৩১ ও ১৪৩৬), ‘মসজিদ সমূহ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৫৬; মিশকাত হা/৬০৩, পৃঃ ৬১ এবং হা/৬৮৪, পৃঃ ৬৬-৬৭; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৬৩৩, ২/২০৮ পৃঃ।
[4]. ছহীহ বুখারী হা/৫৯৬ ও ৫৯৮, ১/৮৪ পৃঃ, (ইফাবা হা/৫৬৯, ২/৩৫ পৃঃ), ‘ছালাতের সময়’ অধ্যায়, ‘ওয়াক্ত পার হয়ে যাওয়ার পর রাসূল (ছাঃ) জামা‘আতের সাথে ছালাত আদায় করেছেন’ অনুচ্ছেদ-৩৬; ছহীহ মুসলিম হা/১৪৬২, ১/২২৭, (ইফাবা হা/১৩০৩), ‘মসজিদ সমূহ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৩৭।
[5]. ছহীহ মুসলিম হা/১৫৯২, ১/২৩৮ পৃঃ, (ইফাবা হা/১৪৩১), ‘মসজিদ সমূহ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৫৬; মিশকাত হা/৬৮৪, পৃঃ ৬৬-৬৭; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৬৩৩, ২/২০৮ পৃঃ।
(3) عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ عَنِ النَّبِيِّ أَنَّهُ ذَكَرَ الصَّلَاةَ يَوْمًا فَقَالَ مَنْ حَافَظَ عَلَيْهَا كَانَتْ لَهُ نُوْرًا وَبُرْهَانًا وَنَجَاةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَمَنْ لَمْ يُحَافِظْ عَلَيْهَا لَمْ تَكُنْ لَهُ نُوْرٌ وَلَا بُرْهَانٌ وَلَا نَجَاةٌ وَكَانَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَعَ قَارُوْنَ وَفِرْعَوْنَ وَهَامَانَ وَأُبَيِّ بْنِ خَلَفٍ.
(৩) আব্দুল্লাহ্ ইবনু ‘আমর ইবনুল ‘আছ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) একদিন ছালাতের প্রসঙ্গ উত্থাপন করে বলেন, যে ব্যক্তি ছালাতের সংরক্ষণ করবে ক্বিয়ামতের দিন তা তার জন্য জ্যোতি, প্রমাণ ও মুক্তির উপায় হবে। আর যে তার হেফাযত করবে না তার জন্য তা জ্যোতি, প্রমাণ ও মুক্তির উপায় হবে না। ক্বিয়ামতের দিন সে কারূণ, ফেরআউন, হামান ও উবাই ইবনু খালাফের সাথী হবে।[1]
তাহক্বীক্ব : হাদীছটি যঈফ।[2] এর সনদে ঈসা ইবনু হেলাল ছাদাফী নামক একজন দুর্বল রাবী আছে।[3] উল্লেখ্য, উক্ত হাদীছকে তাহক্বীক্বে মিশকাতে ছহীহ বলা হলেও চূড়ান্ত তাহক্বীক্বে আলবানী (রহঃ) যঈফ বলেছেন।[4]
(4) عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ مَنَ تَرَكَ الصَّلاَةَ مُتَعَمِّدًا فَقَدْ كَفَرَ جِهَارًا.
(৪) আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে ছালাত ছেড়ে দিল সে যেন প্রকাশ্য কুফুরী করল।[5]
তাহক্বীক্ব : হাদীছটি যঈফ।[6] ইমাম ত্বাবারাণী হাদীছটি যঈফ হওয়ার প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, আবু জাফর রাযী থেকে হাশেম বিন কাসেম ছাড়া কেউ হাদীছটি বর্ণনা করেননি। মুহাম্মাদ ইবনু আবুদাঊদ তার থেকে এককভাবে বর্ণনা করেছে।[7]
(5) الصَّلاَةُ عِمَادُ الدِّيْنِ فَمَنْ أَقَامَهَا فَقَدْ أَقَامَ الدِّيْنَ وَمَنْ هَدَمَهَا فَقَدْ هَدَمَ الدِّيْنَ.
(৫) ‘ছালাত হল দ্বীনের খুঁটি। সুতরাং যে ব্যক্তি ছালাত কায়েম করল সে দ্বীন প্রতিষ্ঠা করল। আর যে ব্যক্তি ছালাত ছেড়ে দিল সে দ্বীনকে ধ্বংস করল’।[8]
তাহক্বীক্ব : সমাজে হাদীছটি সমধিক প্রচলিত থাকলেও ছহীহ কোন ভিত্তি নেই। ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, এটি বাতিল ও মুনকার।[9]
(6) قَالَ عَلَيْهِ السَّلاَمُ الصَّلاَةُ مِعْرَاجُ الْمُؤْمِنِ.
(৬) ‘রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ছালাত মুমিনের মি‘রাজ’।[10]
তাহক্বীক্ব : উক্ত বর্ণনার কোন সনদ নেই। এটি ভিত্তিহীন ও বানোয়াট।
(7) عَنْ أَنَسٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ الصَّلاَةُ نُوْرُ الْمُؤْمِنِ.
(৭) আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘ছালাত মুমিনের নূর’।[11]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি যঈফ। মুহাদ্দিছ হুসাইন সালীম আসাদ বলেন, উক্ত হাদীছের সনদ অত্যন্ত দুর্বল।[12] উক্ত সনদে ঈসা ইবনু মায়সারা নামে একজন দুর্বল রাবী আছে।[13] উল্লেখ্য, ছালাত নূর এবং ছাদাক্বা দলীল মর্মে ছহীহ মুসলিমে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে তা ছহীহ।[14]
(8) مَنْ صَلَّى صَلاَةَ الصُّبْحِ فِي الْجَمَاعَةِ فَكَأَنَّمَا حَجَّ مَعَ آدَمَ عَلَيْهِ السَّلاَمُ خَمْسِيْنَ حَجَّةً وَمَنْ صَلَّى صَلاَةَ الظُّهْرِ فِي الْجَمَاعَةِ فَكَأَنَّمَا حَجَّ مَعَ نُوْحٍ عَلَيْهِ السَّلاَمُ أَرْبَعِيْنَ حَجَّةً أَوْ ثَلاَثِيْنَ إِلَى آخِرِهِ.
(৮) ‘যে ব্যক্তি জামা‘আতের সাথে ফজরের ছালাত আদায় করে সে যেন আদম (আঃ)-এর সাথে ৫০ বার হজ্জ করে এবং যে ব্যক্তি যোহরের ছালাত জামা‘আতের সাথে পড়ে সে যেন নূহ (আঃ)-এর সাথে ৪০ কিংবা ৩০ বার হজ্জ করে। এভাবেই অন্যান্য ওয়াক্ত সে আদায় করে’।[15]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি জাল বা মিথ্যা।[16]
(9) عَنْ سَلْمَانَ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ يَقُولُ مَنْ غَدَا إِلَى صَلَاةِ الصُّبْحِ غَدَا بِرَايَةِ الْإِيْمَانِ وَمَنْ غَدَا إِلَى السُّوْقِ غَدَا بِرَايَةِ إِبْلِيْسَ.
(৯) সালমান ফারেসী (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি ভোরে ফজরের ছালাতের দিকে গেল, সে ঈমানের পতাকা নিয়ে গেল। আর যে ভোরে (ছালাত আদায় না করে) বাজারের দিকে গেল, সে শয়তানের পতাকা নিয়ে গেল।[17]
তাহক্বীক্ব : উক্ত হাদীছের সনদ অত্যন্ত দুর্বল।[18] এর সনদে উবাইস ইবনু মাইমুন নামক রাবী রয়েছে। ইমাম বুখারীসহ অন্যান্য মুহাদ্দিছও তাকে মুনকার বলে অভিযোগ করেছেন। ইবনু হিববান বলেন, সে নির্ভরযোগ্য ব্যক্তির নাম দিয়ে ধারণা পূর্বক বহু জাল হাদীছ বর্ণনা করেছে।[19]
(10) عَنْ عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ قَالَ سُئِلَ النَّبِيُّ عَنْ قَوْلِ اللهِ إِنَّ الصَّلاةَ تَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَرِ قال مَنْ لَمْ تَنْهَهُ صَلاَتُهُ عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَرِ فَلاَ صَلاَةَ لَهُ.
(১০) ইমরান ইবনু হুছাইন (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ)-কে একদা জিজ্ঞেস করা হল আল্লাহর এই বাণী সম্পর্কে- ‘নিশ্চয়ই ছালাত অশ্লীলতা ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে’। তখন তিনি বললেন, যাকে তার ছালাত অশ্লীলতা ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে না, তার ছালাত হয় না।[20]
তাহক্বীক্ব : হাদীছটি যঈফ। উক্ত বর্ণনার সনদে ইবনু জুনাইদ নামে একজন মিথ্যুক রাবী রয়েছে। মুহাদ্দিছগণ বর্ণনাটিকে মুনকার বলেছেন।[21]
[2]. যঈফ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/৩১২; তারাজুউল আলবানী হা/২৯।
[3]. মিশকাত হা/৫৭৮, ১/১৮৩ পৃঃ।
[4]. তারাজুউল আলবানী হা/২৯।
[5]. ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল আওসাত হা/৩৩৪৮।
[6]. সিলসিলা যঈফাহ হা/২৫০৮ ও ৫১৮০; যঈফুল জামে‘ হা/৫৫২১; যঈফ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/৩০৪।
[7].لم يروه عن أبي جعفر الرازي إلا هاشم بن القاسم تفرد به محمد بن أبي داود-আল-মু‘জামুল আওসাত হা/৩৩৪৮; সিলসিলা যঈফাহ হা/২৫০৮।
[8]. কাশফুল খাফা ২/৩২ পৃঃ; তাযকিরাতুল মাওযূ‘আত, পৃঃ ৩৮; ফাযায়েলে আমল, পৃঃ ২৯।
[9]. কাশফুল খাফা ২/৩১ পৃঃ।
[10]. তাফসীরে রাযী ১/২১৪ পৃঃ; তাফসীরে হাক্কী ৮/৪৫৩ পৃঃ; মিরক্বাতুল মাফাতীহ ১/১৩৪ পৃঃ, ‘ঈমান’ অধ্যায়।
[11]. মুসনাদে আবী ইয়ালা হা/৩৬৫৫; ফাযায়েলে আমল, পৃঃ ২৯।
[12]. তাহক্বীক্ব মুসনাদে আবী ইয়ালা হা/৩৬৫৫।
[13]. সিলসিলা যঈফাহ হা/১৬৬০।
[14]. ছহীহ মুসলিম হা/৫৫৬, ১/১১৮ পৃঃ; মিশকাত হা/২৮১, পৃঃ ৩৮; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/২৬২, ২/৩৭ পৃঃ।
[15]. হাসান ইবনু মুহাম্মাদ আছ-ছাগানী, আল-মাওযূ‘আত হা/৪৮, পৃঃ ৪২।
[16]. আল-মাওযূ‘আত হা/৪৮, পৃঃ ৪২।
[17]. ইবনু মাজাহ হা/২২৩৪, পৃঃ ১৬১, ‘ব্যবসা’ অধ্যায়, ‘বাজার সমূহ’ অনুচ্ছেদ; মিশকাত হা/৬৪০, পৃঃ ৬৩; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৮৯, ২/১৮৯ পৃঃ।
[18]. যঈফ ইবনে মাজাহ হা/২২৩৪।
[19]. মিশকাত হা/৬৪০-এর টীকা দ্রঃ।
[20]. তাফসীরে ইবনে কাছীর; সিলসিলা যঈফাহ হা/৯৮৫; ফাযায়েলে আমল, পৃঃ ১৭২।
[21]. সিলসিলা যঈফাহ হা/৯৮৫।
(11) عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِي اللهُ تَعَالَى عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ مَنْ لَمْ تَنْهَهُ صَلاَتُهُ عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَرِ لَمْ يَزِدْ مِنَ اللهِ إِلاَ بُعْدًا.
(১১) ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যার ছালাত তাকে অশ্লীলতা ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে না, তাকে উহা ইসলাম থেকে দূরে সরে দেওয়া ছাড়া আর কিছুই বৃদ্ধি করে না।[1]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি বাতিল বা মিথ্যা। এর সনদে লাইছ ইবনু আবী সালীম নামক ত্রুটিপূর্ণ রাবী রয়েছে।[2]
জ্ঞাতব্য : উক্ত বর্ণনাগুলো প্রমাণ করে ত্রুটিপূর্ণ কোন ব্যক্তি ছালাত আদায় করলে ছালাত কবুল হয় না। সুতরাং ছালাত আদায় করে কোন লাভ নেই। কিন্তু উক্ত ধারণা সঠিক নয়। বরং ছালাত আদায়ের মাধ্যমে এক সময় সে আল্লাহর অনুগ্রহে পাপ কাজ ছেড়ে দিবে। ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে,
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ فَقَالَ إِنَّ فُلاَنًا يُصَلِّي بِاللَّيْلِ فَإِذَا أَصْبَحَ سَرَقَ قَالَ إِنَّهُ سَيَنْهَاهُ مَا يَقُوْلُ.
আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, জনৈক ব্যক্তি রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে এসে বললেন, অমুক ব্যক্তি রাত্রিতে ছালাত আদায় করে আর সকাল হলে চুরি করে। তিনি উত্তরে বললেন, ছালাত তাকে অচিরেই তা থেকে বিরত রাখবে।[3]
(12) عَنْ أُمِّ رُوْمَانَ قَالَتْ رَآنِيْ أَبُوْ بَكْرٍ أَتَمَيَّلُ فِي الصَّلاَةِ فَزَجَرَنِيْ زَجْرَةً كِدْتُ أَنْصَرِفُ مِنْ صَلاَتِيْ ثُمَّ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ يَقُوْلُ إِذَا قَامَ أَحَدُكُمْ فِي الصَّلاَةَ فَلْيَسْكُنْ أَطْرَافَهُ وَلاَ يَتَمَيَّلْ تَمَيُّلَ الْيَهُوْدِ فَإِنَّ تَسْكِيْنَ الأَطْرَافِ مِنْ تَمَامِ الصَّلاَةِ.
(১২) উম্মু রূমান বলেন, আবুবকর (রাঃ) আমাকে একদা ছালাতে ঝুঁকতে দেখে অত্যন্ত জোরে ধমক দিলেন। ফলে আমি ছালাত ছেড়ে দেওয়ার উপক্রম হলাম। তারপর তিনি বললেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, যখন তোমাদের কোন ব্যক্তি ছালাতে দাঁড়ায়, তখন সে যেন তার শরীরকে স্থির রাখে। ইহুদীদের মত যেন না ঝুঁকায়। কারণ ছালাতের মধ্যে শরীরে সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ স্থির রাখা ছালাত পরিপূর্ণ হওয়ার অংশ।[4]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি জাল।[5] এর সনদে হাকাম ইবনু আব্দুল্লাহ নামে একজন মিথ্যুক রাবী আছে। ইমাম আহমাদ (রহঃ) বলেন, এর সমস্ত হাদীছই জাল।[6]
(13) عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ مَنْ صَلَّى الصَّلاَةَ لِوَقْتِهَا وَأَسْبَغَ لَهَا وُضُوْءَهَا وَأَتَمَّ لَهَا قِيَامَهَا وَخُشُوْعَهَا وُرُكُوْعَهَا وَسُجُوْدَهَا خَرَجَتْ وَهِيَ بَيْضَاءُ مُسْفِرَةٌ تَقُوْلُ حَفِظَكَ اللهُ كَمَا حَفِظْتَنِيْ وَمَنْ صَلَّى الصَّلاَةَ لِغَيْرِ وَقْتِهَا فَلَمْ يُسْبِغْ لَهَا وُضُوْءَهَا وَلَمْ يُتِمَّ لَهَا خُشُوْعَهَا وُرُكُوْعَهَا وَسُجُوْدَهَا خَرَجَتْ وَهِيَ سَوْدَاءُ مُظْلِمَةٌ تَقُوْلُ ضَيَّعَكَ اللهُ كَمَا ضَيّعْتَْنِيْ حَتىَّ إِذَا كَانَتْ حَيْثُ شَاءَ اللهُ لُفَّتْ كَمَا يُلَفُّ الثَّوْبُ الْخَلَقُ ثُمَّ ضُرِبَ بِهَا وَجْهُهُ.
(১৩) আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি ওয়াক্ত মোতাবেক ছালাত আদায় করে, ভালভাবে ওযূ করে, পূর্ণ ক্বিয়াম, রুকূ, সিজদা করে ও নম্রতা অবলম্বন করে তার ছালাত আলোকোজ্জ্বল হয়ে বের হয় এবং বলে, আল্লাহ তোমাকে হেফাযত করুন যেভাবে তুমি আমাকে হেফাযত করলে। আর যে ব্যক্তি ওয়াক্ত মত ছালাত আদায় করবে না, সুন্দরভাবে ওযূ করবে না, রুকূ-সিজদা করবে না তার ছালাত কালো কুৎসিত হয়ে বের হবে এবং বলবে, আল্লাহ তোমাকে ধ্বংস করুন যেভাবে তুমি আমাকে ধ্বংস করেছ। অতঃপর সেই ছালাতকে পুরান কাপড়ের মত জড়িয়ে তার মুখে মারা হবে।[7]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি অত্যন্ত দুর্বল।[8] উক্ত বর্ণনার সনদে আব্দুর রহমান ও আবু উবায়দাহ নামে দু’জন ত্রুটিপূর্ণ রাবী রয়েছে।[9]
(14) عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ سَلاَمٍ قَالَ كَانَ النَّبِيُّ إِذَا نَزَلَ بِأَهْلِهِ الضَّيْقُ أَمَرَهُمْ بِالصَّلاَةَ ثُمَّ قَرَأَ وَأْمُرْ أَهْلَكَ بِالصَّلَاةِ وَاصْطَبِرْ عَلَيْهَا الآية.
(১৪) আব্দুল্লাহ ইবনু সালাম বলেন, যখন নবী করীম (ছাঃ)-এর পরিবারে অভাব-অনটন দেখা দিত, তখন তিনি তাদেরকে ছালাত আদায় করার নির্দেশ করতেন। অতঃপর পড়তেন, ‘আর আপনি আপনার পরিবারকে ছালাতের নির্দেশ দিন এবং আপনিও তার প্রতি অটল থাকুন (সূরা ত্বো-হা ১২৩)।[10]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি যঈফ।[11] ইমাম ত্বাবারাণী বলেন, আব্দুল্লাহ বিন সালাম ছাড়া এই হাদীছ আর কেউ বর্ণনা করেননি। মা‘মার এককভাবে এটা বর্ণনা করেছে।[12]
(15) عَنْ مُجَاهِدٍ َسُئِلَ ابْنُ عَبَّاسٍ عَنْ رَجُلٍ يَصُوْمُ النَّهَارَ وَيَقُوْمُ اللَّيْلَ وَلاَ يَشْهَدُ جُمُعَةً وَلاَ جَمَاعَةً قَالَ هُوَ فِي النَّارِ.
(১৫) মুজাহিদ বলেন, ইবনু আব্বাস (রাঃ)-কে জনৈক ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হল, যে ব্যক্তি দিনে ছিয়াম পালন করে এবং রাত্রে তাহাজ্জুদ পড়ে কিন্তু জামা‘আতে এবং জুম‘আর ছালাতে শরীক হয় না তার কী হবে? তিনি উত্তরে বললেন, সে জাহান্নামী।[13]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি যঈফ।[14] উক্ত হাদীছের সনদে লাইছ ইবনু আবী সুলাইম নামে একজন দুর্বল রাবী আছে।[15]
(16) عَنْ سَهْلِ بن مُعَاذِ بن أَنَسٍ عَنْ أَبِيْهِ عَن ِالنَّبِيِّ قَالَ اَلْجَفَاءُ كُلُّ الْجَفَاءِ وَالْكُفْرُ وَالنِّفَاقُ مَنْ سَمِعَ مُنَادِيَ اللهِ يُنَادِي بِالصَّلاةِ وَيَدْعُو إِلَى الْفَلاَحِ فَلا يُجِيْبُهُ.
(১৬) সাহল ইবনু মু‘আয (রাঃ) তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ঐ লোকের কাজ অত্যন্ত যুলুম, কুফর ও শঠতাপূর্ণ যে ছালাত ও কল্যাণের দিকে আহবানকারীর ডাক শুনল কিন্তু মসজিদে উপস্থিত হল না।[16]
তাহক্বীক্ব : হাদীছটি যঈফ।[17] উক্ত হাদীছের সনদে ইবনু লাহিয়া ও যুবান ইবনু ফায়েদ নামে দু’জন দুর্বল রাবী আছে।[18]
(17) عَنْ مُسْلِمٍ قَالَ دَخَلْتُ عَلَى أَبِي أُمَامَةَ وَهُوَ يَتَفَلَّى فِي الْمَسْجِدِ وَيَدْفِنُ الْقَمْلَ فِي الْحَصَى فَقُلْتُ لَهُ يَا أَبَا أُمَامَةَ إِنَّ رَجُلًا حَدَّثَنِىْ عَنْكَ أَنَّكَ قُلْتَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ يَقُوْلُ مَنْ تَوَضَّأَ فَأَسْبَغَ الْوُضُوْءَ فَغَسَلَ يَدَيْهِ وَوَجْهَهُ وَمَسَحَ عَلَى رَأْسِهِ وَأُذُنَيْهِ ثُمَّ قَامَ إِلَى الصَّلَاةِ الْمَفْرُوْضَةِ غَفَرَ اللهُ لَهُ فِىْ ذَلِكَ الْيَوْمِ مَا مَشَتْ إِلَيْهِ رِجْلُهُ وَقَبَضَتْ عَلَيْهِ يَدَاهُ وَسَمِعَتْ إِلَيْهِ أُذُنَاهُ وَنَظَرَتْ إِلَيْهِ عَيْنَاهُ وَحَدَّثَ بِهِ نَفْسَهُ مِنْ سُوْءٍ قَالَ وَاللهِ لَقَدْ سَمِعْتُهُ مِنْ نَبِيِّ اللهِ مَا لَا أُحْصِيْهِ.
(১৭) আবু মুসলিম বলেন, আমি আবু উমামা (রাঃ)-এর নিকট গেলাম। তখন তিনি মসজিদের পোকা-মাকড় দূর করছিলেন এবং আবর্জনা ফেলে দিচ্ছিলেন। আমি বললাম, আপনার নিকট থেকে আমার কাছে এক ব্যক্তি এই হাদীছ বর্ণনা করেছে যে, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি ভালভাবে ওযূ করে, দুই হাত ও মুখ ধৌত করে, মাথা ও কান মাসাহ করে অতঃপর ফরয ছালাতে দাঁড়ায়, আল্লাহ তা‘আলা তার ঐ দিনের সমস্ত পাপ ক্ষমা করে দেন। যা সে হাত, কান, চোখ, চলাফেরা এবং অন্তরের কল্পনার মাধ্যমে করেছে। অতঃপর আবু উমামা বলেন, আল্লাহর কসম! আমি রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট থেকে অসংখ্য বার এই হাদীছ শুনেছি।[19]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি যঈফ। এর সনদে আবু মুসলিম নামে মিথ্যুক বর্ণনাকারী রয়েছে।[20]
(18) عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ عَنِ النَّبِيِّ قَالَ مَنْ جَمَعَ بَيْنَ صَلاتَيْنِ مِنْ غَيْرِ عُذْرٍ فَقَدْ أَتَى بَابًا مِنْ أَبْوَابِ الْكَبَائِرِ.
(১৮) ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেন, কোন ওযর ছাড়াই যদি কেউ দুই ছালাত একত্রিত করে পড়ে, তাহলে সে কাবীরা গোনাহের যে সমস্ত দরজা রয়েছে, তার একটিতে উপনীত হল।[21]
তাহক্বীক্ব : হাদীছটি অত্যন্ত দুর্বল।[22] ইমাম তিরমিযী বলেন, এর সনদে হানাশ নামে একজন রাবী আছে। ইমাম আহমাদ সহ অন্যান্য মুহাদ্দিছগণ তাকে যঈফ বলেছেন।[23]
(19) عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ لاَ سَهْمَ فِي الْإِسْلاَمِ لِمَنْ لاَ صَلاَةَ لَهُ وَلاَ صَلاَةَ لِمَنْ لاَ وُضُوْءَ لَهُ.
(১৯) আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, যার ছালাত নেই ইসলামে তার কোন অংশ নেই এবং যার ওযূ হয় না তার ছালাত হয় না।[24]
তাহক্বীক্ব : হাদীছটি অত্যন্ত যঈফ।[25] উক্ত হাদীছের সনদে আব্দুল্লাহ ইবনু সাঈদ ইবনু আবু সাঈদ নামে একজন রাবী আছে। সে সকল মুহাদ্দিছের ঐকমত্যে যঈফ।[26] উল্লেখ্য যে, যার ওযূ হয় না তার ছালাত হয় না মর্মে অংশটুকু ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত।[27]
[2]. সিলসিলা যঈফাহ হা/২, ১/৫৪ পৃঃ।
[3]. আহমাদ হা/৯৭৭৭; মিশকাত হা/১২৩৭, পৃঃ ১১০, সনদ ছহীহ; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১১৬৮, ৩/১২১ পৃঃ।
[4]. হিলইয়াতুল আওলিয়া; ফাযায়েলে আমল, পৃঃ ১৭০।
[5]. সিলসিলা যঈফাহ হা/২৬৯১।
[6]. সিলসিলা যঈফাহ ৬/২১৪ পৃঃ।
[7]. ত্বাবারাণী, আল-আওসাত্ব হা/৩০৯৫; ফাযায়েলে আমল, পৃঃ ১৬২-১৬৩।
[8]. যঈফ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/২২১।
[9]. لم يروه عن حميد عن أنس إلا عباد تفرد به عبد الرحمن وأبو عبيدة هو حميد الطويل -ত্বাবারাণী, আল-আওসাত্ব হা/৩০৯৫।
[10]. ত্বাবারাণী, আল-আওসাত্ব হা/৮৮৬।
[11]. ফাযায়েলে আমল, পৃঃ ১৫১।
[12].لا يروى هذا الحديث عن عبد الله بن سلام إلا بهذا الإسناد تفرد به معمر ত্বাবারাণী আল-আওসাত্ব হা/৮৮৬।
[13]. তিরমিযী হা/২১৮, ১/৫২ পৃঃ; ফাযায়েলে আমল, পৃঃ ১৪০।
[14]. যঈফ তিরমিযী হা/২১৮; যঈফ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/২৩৬ ও ৪৪৬।
[15]. তাহক্বীক্ব জামেউল উছূল হা/৩৮১১ -এর টীকা দ্রঃ; আত-তুয়ূরুইয়াত ৫/২১ পৃঃ।
[16]. মুসনাদে আহমাদ হা/১৫৬৬৫; ত্বাবারাণী হা/১৬৮০৪; ফাযায়েলে আমল, পৃঃ ১৩৮।
[17]. যঈফ আত-তাগীব ওয়াত তারহীব হা/২৩৩; যঈফুল জামে‘ হা/২৬৫০।
[18]. তাহক্বীক্ব মাজমাউয যাওয়ায়েদ হা/২১৫৯, ২/৫৪ পৃঃ; তামামুল মিন্নাহ, পৃঃ ১৫২।
[19]. মুসনাদে আহমাদ হা/২২৩২৬; ফাযায়েলে আমল, পৃঃ ৭৭।
[20]. সিলসিলা যঈফাহ হা/৬৭১১, ১৪/৪৬৫ পৃঃ; যঈফ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/১৩৪।
[21]. তিরমিযী হা/১৮৮, ১/৪৮ পৃঃ, ‘ছালাত’ অধ্যায়; ত্বাবারাণী হা/১১৩৭৫; বায়হাক্বী সুনানুল কুবরা হা/৫৭৭১; হাকেম হা/১০২০; ফাযায়েলে আমল, পৃঃ ১০০।
[22]. সিলসিলা যঈফাহ হা/৪৫৮১।
[23].حنش هذا هو أبو على الرحبي وهو حسين بن قيس وهو ضعيف عند أهل الحديث ضعفه أحمد وغيره -তিরমিযী হা/১৮৮, ১/৪৮ পৃঃ।
[24]. মুসনাদে বাযযার হা/৮৫৩৯; ফাযায়েলে আমল, পৃঃ ১১৮।
[25]. যঈফ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/৩০১।
[26]. মাজমাউয যাওয়ায়েদ ১/৩৬৪ পৃঃ, হা/১৬১২।
[27]. আবুদাঊদ হা/১০১।
(20) عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ لا إِيمَانَ لِمَنْ لا أَمَانَةَ لَهُ وَلاَ صَلاَةَ لِمَنْ لا طُهُوْرَ لَهُ وَلاَ دِيْنَ لِمَنْ لا صَلاَةَ لَهُ إِنَّمَا مَوْضِعُ الصَّلاَةِ مِنَ الدِّيْنِ كَمَوْضِعِ الرَّأْسِ مِنَ الْجَسَدِ.
(২০) ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যার আমানত নেই তার ঈমান নেই, যার ওযূ হয় না তার ছালাত হয় না, যে ছালাত আদায় করে না তার দ্বীন নেই। মূলতঃ দ্বীনের মধ্যে ছালাতের স্থান অনুরূপ যেমন শরীরের মধ্যে মাথার স্থান।[1]
তাহক্বীক্ব : হাদীছটি যঈফ। ইমাম ত্বাবারাণী বলেন, মিনদিল ছাড়া উবায়দুল্লাহ বিন ওমর থেকে এই হাদীছ কেউ বর্ণনা করেনি। আর হাসান তার থেকে এককভাবে বর্ণনা করেছে।[2] উল্লেখ্য যে, যার আমানত নেই তার ঈমান নেই মর্মে অন্যত্র ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে।[3]
(21) عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ مَنْ تَرَكَ صَلاةً لَقِيَ اللهَ وَهُوَ عَلَيْهِ غَضْبَانُ.
(২১) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি কোন এক ওয়াক্ত ছালাত ছেড়ে দিল সে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে যখন তিনি ঐ ব্যক্তির উপর রাগান্বিত থাকবেন।[4]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি যঈফ। এর সনদে সিমাক ও সাহল ইবনু মাহমূদ নামে দু’জন দুর্বল রাবী আছে।[5]
(22) عَنْ عَبْدِ اللهِ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ثَلاثَةٌ لا يَهُوْلُهُمُ الْفَزَعُ الْأَكْبَرُ وَلاَ يَنَالُهُمُ الْحِسَابُ هُمْ عَلَى كَثِيْبٍ مِنْ مِسْكٍ حَتَّى يَفْرُغَ مِنْ حِسَابِ الْخَلاَئِقِ رَجُلٌ قَرَأَ الْقُرْآنَ ابْتِغَاءَ وَجْهِ اللهِ وَأَمَّ بِهِ قَوْمًا وَهُمْ يَرْضَوْنَ بِهِ وَدَاعٍ يَدْعُو إِلَى الصَّلَوَاتِ الْخَمْسِ ابْتِغَاءَ وَجْهِ اللهِ وَعَبْدٌ أَحْسَنَ فِيْمَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ رَبِّهِ وَفِيْمَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ مَوَالِيْهِ.
(২২) আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেন, এমন তিন ব্যক্তি আছে, যাদের জন্য ক্বিয়ামতের কঠিন কষ্টের ভয় নেই। অন্যান্য মাখলূকের হিসাব না হওয়া পর্যন্ত তাদের হিসাব দিতে হবে না। এর পূর্বে তারা মেশকের টিলায় ভ্রমণ করবে। এক- যে আল্লাহর জন্য কুরআন তেলাওয়াত করেছে, এমনভাবে ইমামতি করেছে যে মুক্তাদীরা তার উপর সন্তুষ্ট। দুই- ঐ ব্যক্তি, যে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মানুষকে ছালাতের দিকে আহবান করে। তিন- ঐ ব্যক্তি, যে তার মনীবের সাথে ও আয়ত্বাধীন লোকদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখে।[6]
তাহক্বীক্ব : হাদীছটি যঈফ। এর সনদে উছমান ইবনু ক্বায়েস আবুল ইয়াকযান ও বাশীর ইবনু আছেম নামে দু’জন দুর্বল রাবী রয়েছে।[7]
(২৩) عَنْ عُبَيْدِ اللهِ بْنِ سَلْمَانَ أَنَّ رَجُلاً مِنْ أَصْحَابِ النَّبِىِّ حَدَّثَهُ قَالَ لَمَّا فَتَحْنَا خَيْبَرَ أَخْرَجُوْا غَنَائِمَهُمْ مِنَ الْمَتَاعِ وَالسَّبْىِ فَجَعَلَ النَّاسُ يَتَبَايَعُوْنَ غَنَائِمَهُمْ فَجَاءَ رَجُلٌ حِيْنَ صَلَّى رَسُوْلُ اللهِ فَقَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ لَقَدْ رَبِحْتُ رِبْحًا مَا رَبِحَ الْيَوْمَ مِثْلَهُ أَحَدٌ مِنْ أَهْلِ هَذَا الْوَادِى قَالَ وَيْحَكَ وَمَا رَبِحْتَ قَالَ مَا زِلْتُ أَبِيْعُ وَأَبْتَاعُ حَتَّى رَبِحْتُ ثَلاَثَمِائَةِ أُوقِيَّةٍ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ أَنَا أُنَبِّئُكَ بِخَيْرِ رَجُلٍ رَبِحَ قَالَ مَا هُوَ يَا رَسُوْلَ اللهِ قَالَ رَكْعَتَيْنِ بَعْدَ الصَّلاَةِ.
(২৩) উবায়দুল্লাহ ইবনু সালমান থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ)-এর জনৈক ছাহাবী তার নিকট হাদীছ বর্ণনা করেছে যে, আমরা যখন খায়বার বিজয় করলাম, তখন তারা তাদের গণীমত সমূহ বের করে দিল। যার মধ্যে বিভিন্ন রকমের সম্পদ ও যুদ্ধবন্দী ছিল। লোকেরা তাদের নিকট থেকে গণীমত ক্রয় করতে লাগল। তখন এক ব্যক্তি রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট এসে বলল, এই ব্যবসায় আমার যা লাভ হয়েছে অন্য কারো এত লাভ হয়নি। রাসূল (ছাঃ) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কত লাভ হয়েছে? সে বলল, আমি সমানে ক্রয়-বিক্রয় করছিলাম তাতে ৩০০ উকিয়া লাভ হয়েছে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, আমি কি তোমাদের এর চেয়ে অধিক লাভবান হওয়া যায় এমন কথা বলব? সে বলল, সেটা কী হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! তিনি বললেন, ফরয ছালাতের পর দুই রাক‘আত ছালাত।[8]
তাহক্বীক্ব : হাদীছটি যঈফ। উক্ত হাদীছের সনদে উবায়দুল্লাহ ইবনু সালমান নামে একজন অপরিচিত রাবী আছে।[9]
(24) عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ أَوْصَانِىْ خَلِيْلِىْ رَسُوْلُ اللهِ بِسَبْعِ خِصَالٍ فَقَالَ لاَ تُشْرِكُوْا بِاللهِ شَيْئًا وَإِنْ قُطِعْتُمْ أَوْ حُرِّقْتُمْ أَوْ صُلِّبْتُمْ وَلاَ تَتْرُكُوا الصَّلاَةَ مُتَعَمِّدِيْنَ فَمَنْ تَرَكَهَا مُتَعَمِّدًا فَقَدْ خَرَجَ مِنَ الْمِلَّةِ وَلاَ تَرْكَبُوْا الْمَعْصِيَةَ فَإِنَّهَا سَخَطُ اللهِ وَلاَ تَشْرَبُوا الْخَمْرَ فَإِنَّهَا رَأْسُ الْخَطَايَا كُلِّهَا وَلاَ تَفِرُّوْا مِنَ الْمَوْتِ أَوِ الْقَتْلِ وَإِنْ كُنْتُمْ فِيْهِ وَلاَ تَعْصَ وَالِدَيْكَ وَإِنْ أَمَرَاكَ أَنْ تَخْرُجَ مِنَ الدُّنْيَا كُلِّهَا فَاخْرُجْ وَلاَ تَضَعْ عَصَاكَ عَنْ أَهْلِكَ وَأَنْصِفْهِمْ مِنْ نَفْسِكَ.
(২৪) উবাদা ইবনু ছামেত (রাঃ) বলেন, আমার বন্ধু রাসূল (ছাঃ) আমাকে সাতটি বিষয়ে অছিয়ত করেছেন। তিনি বলেন, (১) তোমরা শিরক করবে না যদিও তোমাদেরকে টুকরো টুকরো করে হত্যা করা হয় অথবা আগুনে পোড়ানো হয় অথবা শূলীতে চড়িয়ে হত্যা করা হয় (২) তোমরা ইচ্ছাকৃতভাবে ছালাত ছেড়ে দিও না। কারণ যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত ছালাত ছেড়ে দিবে সে ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে। (৩) অবাধ্যতার নিকটবর্তী হয়ো না। কারণ এটা আল্লাহর অসন্তুষ্টির কারণ। (৪) মদ্যপান করো না। কারণ উহা প্রত্যেক পাপের উৎস (৫) মৃত্যু কিংবা জিহাদ থেকে পলায়ন করো না, যদি তার মধ্যে পড়ে যাও (৬) পিতা-মাতার অবাধ্য হয়ো না। যদি তারা তোমাকে দুনিয়ার সমস্ত কাজ থেকে বিরত থাকতে বলে তবুও তুমি তা থেকে বিরত থাক (৭) তুমি তোমার পরিবার থেকে আদর্শের লাঠি তুলে নিও না এবং তোমার পক্ষ থেকে তাদের উপর ইনছাফ করো।[10]
তাহক্বীক্ব : হাদীছটি যঈফ। উক্ত হাদীছের সনদে সালামাহ ইবনু শুরাইহ ও ইয়াযীদ ইবনু ক্বাওযুর নামে দু’জন অপরিচিত রাবী আছে। ইমাম বুখারী ও যাহাবী তাদের অপরিচিত বলেছেন।[11] উল্লেখ্য যে, রাসূল (ছাঃ) তাকে দশটি নছীহত করেছিলেন বলে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে তার সনদ ছহীহ।[12]
(25) عَنْ أَنَسٍ قَالَ كُنَّا عِنْدَ رَسُوْلِ اللهِ حَيْثُ حَضَرَتْهُ الْوَفَاةُ قَالَ فَقَالَ لَنَا اِتَّقُوا اللهَ فِى الصَّلاَةِ اِتَّقُوا اللهَ فِى الصَّلاةِ ثَلاَثًا اِتَّقُوا اللهَ فِيْمَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ اِتَّقُوا اللهَ فِى الضَّعِيْفَيْنِ الْمَرْأَةِ الْأَرْمَلَةِ وَ الصَّبِىِّ الْيَتِيْمِ اِتَّقُوا اللهَ فِى الصَّلاَةِ فَجَعَلَ يُرَدِّدُهَا وَ هُوَ يَقُوْلُ الصَّلاَةُ وَ هُوَ يُغَرْغِرُ حَتَّى فَاضَتْ نَفْسُهُ.
(২৫) আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ)-এর মৃত্যুর সময় আমরা সেখানে উপস্থিত ছিলাম। তিনি আমাদের বললেন, তোমরা ছালাতের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর। এটা তিনবার বললেন। অতঃপর তোমাদের দাসীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর এবং দুই শ্রেণীর দুর্বল লোকের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর- বিধবা নারী ও ইয়াতীম বালক। তারপর তিনি বারবার বলতে থাকলেন, ছালাতের ব্যাপারে তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। আত্মা বের হওয়া পর্যন্ত তিনি এই ছালাতের কথা বলতেই থাকলেন।[13]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি অত্যন্ত যঈফ। উক্ত বর্ণনার সনদে আম্মার ইবনু যুরাবী নামে মাতরূক ও মিথ্যুক রাবী আছে।[14] উল্লেখ্য যে, রাসূল (ছাঃ)-এর শেষ কথা ছিল ছালাত ও নারী জাতি সম্পর্কে- উক্ত মর্মে যে হাদীছ ইবনু মাজাহতে এসেছে তা ছহীহ।[15]
[2]. لَمْ يَرْوِ هَذَا الْحَدِيثَ عَنْ عُبَيْدِ اللهِ بن عُمَرَ إِلا مِنْدَلٌ وَلا عَنْ مِنْدَلٍ إِلا حَسَنٌ تَفَرَّدَ بِهِ الْحُسَيْنُ بن الْحَكَمِ-যঈফ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/২১৩; যঈফুল জামে‘ হা/৬১৭৮।
[3]. আহমাদ হা/১২৪০৬; সনদ ছহীহ, ছহীহ তারগীব হা/৩০০৪; মিশকাত হা/৩৫।
[4]. ত্বাবারাণী কাবীর হা/১১৬১৭; মুন্তাখাব হাদীস, পৃঃ ১৯১।
[5]. সিলসিলা যঈফাহ হা/৪৫৭৩।
[6]. ত্বাবারাণী হা/১১১৬; মুন্তাখাব হাদীস, পৃঃ ১৯৫।
[7]. সিলসিলা যঈফাহ হা/৬৮১২; যঈফ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/৮৬৩।
[8]. আবুদাঊদ হা/২৭৮৫, ২/৩৮৫ পৃঃ; ফাযায়েলে আমল, পৃঃ ৮৫।
[9]. সিলসিলা যঈফাহ হা/২৯৪৮।
[10]. আল-আহাদীছিল মুখতারাহ হা/৩৫১; ফাযায়েলে আমল, পৃঃ ৯৬।
[11]. সিলসিলা যঈফাহ হা/৫৯৯১; যঈফ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/৩০০।
[12]. আহমাদ হা/২২১২৮; ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/৫৭০; সনদ হাসান, মিশকাত হা/৬১, পৃঃ ১৮।
[13]. বায়হাক্বী হা/১১০৫৩; ফাযায়েলে আমল, পৃঃ ৮৭।
[14]. সিলসিলা যঈফাহ হা/৩২১৬।
[15]. ইবনু মাজাহ হা/২৬৯৮, পৃঃ ১৯৩, ‘অছিয়ত’ অধ্যায়; আবুদাঊদ হা/৫১৫৬, ২/৭০১ পৃঃ।
জনগণকে ছালাতের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য ‘ফাযায়েলে আমলের’ মধ্যে এমন কিছু তথ্য ও কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট, আজগুবি ও অবাস্তব। নিম্নে কয়েকটি উল্লেখ করা হল :
(১) ‘যে ব্যক্তি ফরয ছালাত সমূহের যথাযথ হেফাযত করবে, আল্লাহ তা‘আলা তাকে পাঁচ দিক থেকে সম্মানিত করবেন। যেমন- (ক) সংসারের অভাব-অনটন দূর করবেন (খ) কবরের আযাব মাফ করবেন (গ) বিচারের দিন ডান হাতে আমলনামা দিবেন (ঘ) পুলছিরাতের উপর দিয়ে দ্রুত গতিতে পার হয়ে যাবে (ঙ) বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি ছালাতের ব্যাপারে অলসতা করবে তাকে পনের প্রকারের শাস্তি প্রদান করা হবে। তার মধ্যে পৃথিবীতে পাঁচ প্রকার, মৃত্যুর সময় তিন প্রকার, তিন প্রকার কবরে, কবর হতে উঠার পর তিন প্রকার। পৃথিবীতে পাঁচ প্রকার হল- (ক) তার জীবনে কোন কল্যাণ আসে না (খ) তার চেহারা হতে জ্যোতি দূর করা হয় (গ) তার সৎ আমলের কোন প্রতিদান দেওয়া হয় না (ঘ) তার দু‘আ কবুল হয় না (ঙ) সৎ ব্যক্তিদের দু‘আর মাঝে তার কোন অংশ থাকে না।
মৃত্যুর সময়ের তিন প্রকার শাস্তি হল- (ক) সে লাঞ্ছনার সাথে মৃত্যুবরণ করে (খ) ক্ষুধার্ত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে (গ) এমন তৃষ্ণার্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করে যে, সমুদ্র পরিমাণ পানি পান করলেও তার পিপাসা দূর হবে না। কবরে তিন প্রকার শাস্তি হল- (ক) তার জন্য কবর এমন সংকীর্ণ হবে যে, তার বুকের একদিকের হাড় অপরদিকে ঢুকে যাবে (খ) কবরে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হবে (গ) এমন একটি সাপ তার কবরে রাখা হবে যার চক্ষুগুলো আগুনের এবং নখগুলো লোহার। সাপটি এত বড় যে, একদিনের পথ চলার পর শেষ পর্যন্ত পৌঁছা যাবে। এর হুংকার বজ্রের মত। সাপটি বলবে, আমার প্রভু তোমার জন্য আমাকে নির্ধারণ করেছেন, যেন ফজরের ছালাত ত্যাগ করার কারণে সূর্যোদয় পর্যন্ত তোমাকে দংশন করতে পারি, যোহরের ছালাত না পড়ার কারণে যেন আছর পর্যন্ত এবং আছরের ছালাত না পড়ার কারণে সূর্যাস্ত পর্যন্ত দংশন করতে পারি। অনুরূপ মাগরিবের ছালাত না পড়ার কারণে এশা পর্যন্ত এবং এশার ছালাত নষ্ট করার কারণে সকাল পর্যন্ত দংশন করতে পারি। এই সাপ একবার দংশন করলে সত্তর হাত মাটির নীচে মুর্দা ঢুকে যাবে। এভাবে ক্বিয়ামত পর্যন্ত তার শাস্তি হতে থাকবে।
কবর হতে উঠার পর তাকে তিন প্রকারের শাস্তি দেওয়া হবে। (ক) কঠিনভাবে তার হিসাব নেওয়া হবে (খ) আল্লাহ তার উপর রাগান্বিত থাকবেন (গ) তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। পনের নম্বরটি পাওয়া যায় না। তবে অন্য বর্ণনায় রয়েছে, তার মুখমণ্ডলে তিনটি লাইন লেখা থাকবে : (ক) আল্লাহর হক বিনষ্টকারী (খ) ওহে আল্লাহর অভিশাপে অভিশপ্ত (গ) দুনিয়াতে যেমন আল্লাহর হক বিনষ্ট করেছ তেমনি আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়েছে’।[1]
পর্যালোচনা : পুরো বর্ণনাটি মিথ্যা ও বাতিল। কারণ এর কোন সনদ নেই, বর্ণনাকারীও নেই।[2] ফাযায়েলে আমলের মধ্যেই বর্ণনাটির পর্যালোচনায় এক জায়গায় বলা হয়েছে, ‘এই হাদীছ মিথ্যা’।[3]
(২) জামা‘আতের সাথে এক ওয়াক্ত ছালাত আদায় করলে তিন কোটি পঁয়ত্রিশ লক্ষ চুয়ান্ন হাযার চারশ‘ বত্রিশ গুণ নেকী হবে।[4]
পর্যালোচনা : হাদীছে বলা হয়েছে যে, জামা‘আতে ছালাত আদায় করলে একাকী পড়ার চেয়ে ২৫ গুণ বা ২৭ গুণ বেশী ছওয়াব পাওয়া যাবে।[5] অন্য হাদীছে রয়েছে, পঁচিশটি ছালাতের নেকী হবে।[6] উক্ত দুই হাদীছের ফযীলতের উদ্ভট ব্যাখ্যা দিয়ে কোটি কোটি বৃদ্ধি করা হয়েছে, যা বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।
(৩) সাঈদ ইবনু মুসাইয়িব (রহঃ) পঞ্চাশ বছর পর্যন্ত এশা ও ফজরের ছালাত একই ওযূ দ্বারা পড়েছেন।[7]
(৪) চল্লিশ জন তাবেঈ সম্পর্কে অসংখ্য সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, তারা এশা ও ফজর একই ওযূতে পড়তেন।[8]
(৫) ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) ত্রিশ বছর কিংবা চল্লিশ বছর কিংবা পঞ্চাশ বছর এশা ও ফজর ছালাত একই ওযূতে পড়েছেন।[9] তাঁর সম্পর্কে আরো বলা হয়েছে, ওযূর পানি ঝরার সময় তিনি বুঝতে পারতেন এর সাথে কোন্ পাপ ঝরে যাচ্ছে।[10]
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (কুষ্টিয়া)-এর অধীন ফাযিল স্নাতক প্রথম বর্ষের আল-আক্বাঈদ বইয়ে আবু হানীফা (রহঃ)-এর গুণাবলী সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘তিনি একাধারে ৩০ বছর রোযা রেখেছেন এবং ৪০ বছর যাবত রাতে ঘুমাননি। ইবাদত বন্দিগীতে রজনী কাটায়ে গিয়েছেন। প্রতি রামাযানে ৬১ বার কুরআন মাজীদ খতম করতেন। অনেক সময় এক রাক‘য়াতেই কুরআন মাজীদ এক খতম দিতেন। তিনি ৫৫ বার হজ্জ করেছেন। জীবনের শেষ হজ্জের সময় কা‘বা শরীফে দু’রাক‘য়াত নামায এভাবে পড়েন যে, প্রথম রাক‘য়াতে এক পা ওঠায়ে প্রথম অর্ধাংশ কুরআন মাজীদ পাঠ করেন। তারপর দ্বিতীয় রাক‘য়াতে অপর পা ওঠায়ে বাকি অর্ধাংশ কুরআন মাজীদ পাঠ করেন। যে স্থানে তাঁর ইন্তিকাল হয়েছে, সেখানে এক হাজার বার কুরআন মাজীদ খতম করেছেন। তিনি ৯৯ বার আল্লাহ তা‘য়ালাকে স্বপ্নে দেখেছেন’।[11]
(৬) ইমাম শাফেঈ (রহঃ) রামাযান মাসে ছালাতের মধ্যে পবিত্র কুরআন ৬০ বার খতম করতেন।[12]
(৭) ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহঃ) দৈনিক ৩০০ রাক‘আত ছালাত আদায় করতেন। ৮০ বছর বয়সে তিনি দৈনিক ১৫০ রাক‘আত ছালাত আদায় করতেন।[13]
(৮) সাঈদ ইবনু যুবাইর (রহঃ) এক রাক‘আতে পুরা কুরআন খতম করতেন।[14]
(৯) আবু আত্তার সুলামী (রহঃ) চল্লিশ বছর পর্যন্ত সারা রাত ক্রন্দন করে কাটাতেন এবং দিনে সর্বদা ছিয়াম পালন করতেন।[15]
(১০) বাকী ইবনু মুখাল্লাদ (রহঃ) দৈনিক তাহাজ্জুদ ও বিতর ছালাতের তের রাক‘আতে কুরআন খতম করতেন।[16]
(১১) মুহাম্মাদ ইবনু সালামা ইমাম আবু ইউসুফ ও মুহাম্মাদ (রহঃ)-এর ছাত্র ছিলেন । তিনি ১০৩ বছর বয়সে মারা যান। ঐ বয়সে তিনি প্রতিদিন ২০০ রাক‘আত করে ছালাত আদায় করতেন। দীর্ঘ চল্লিশ বছর তার একটানা তাকবীরে তাহরীমা ছুটেনি। মায়ের মৃত্যুর কারণে মাত্র একবার ছুটে গিয়েছিল। জামা‘আতে না পড়ার জন্য তিনি ঐ ছালাত ২৫ বার পড়েন।[17]
(১২) ওমর ইবনু আব্দুল আযীয (রহঃ) সারা রাত্রি ইবাদতে মশগুল থাকতেন। এমনকি খেলাফতের দায়িত্ব পাওয়ার পর তার ফরয গোসলের প্রয়োজন হয়নি।[18]
(১৩) জনৈক বুযুর্গ ব্যক্তির পায়ে ফোঁড়া হয়েছিল। ডাক্তারগণ পরামর্শ দিলেন, পা না কাটা হলে জীবনের হুমকি রয়েছে। তখন তার মা বললেন, যখন ছালাতে দাঁড়াবে, তখন কেটে নিতে হবে। অতঃপর তিনি যখন ছালাতে দাঁড়ালেন তখন তারা তার পা কেটে ফেললে তিনি মোটেও টের পেলেন না।[19]
উল্লেখ্য যে, আলী (রাঃ) সম্পর্কে এধরনের একটি কাহিনী প্রচার করা হয় যে, যুদ্ধে তার পায়ে তীর বিদ্ধ হয়েছিল। সেই তীর বের করা যাচ্ছিল না। অবশেষে তিনি ছালাতে দাঁড়ালে তার পা থেকে তীর বের করা হল, অথচ তিনি টের পেলেন না। এই কাহিনীও মিথ্যা।
পর্যালোচনা : সুধী পাঠক! উক্ত কাহিনীগুলো মুসলিম বিশ্বের বরেণ্য মনীষীদের সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রশ্ন হল, তারা কি আদৌ এভাবে তাদের ইবাদতী জীবন অতিবাহিত করেছেন? তাদের দ্বারা কি এ ধরনের বাড়াবাড়ি সম্ভব? যেমন- (ক) দীর্ঘ ৪০/৫০ বছর যাবৎ এশার ছালাতের ওযূ দ্বারা ফজরের ছালাত আদায় করা। বছরের পর বছর একটানা ছিয়াম পালন করা ইত্যাদি। মানবীয় কারণ উল্লেখ না করে যদি প্রশ্ন করা হয়- শরী‘আতে এভাবে সারা রাত ধরে ইবাদত করার অনুমোদন আছে কি? রাসূল (ছাঃ) ও তার ছাহাবীদের পক্ষ থেকে এরূপ কি কোন নযীর আছে? আল্লাহ তা‘আলা রাসূল (ছাঃ)-কে রাত্রের কিছু অংশ বাদ দিয়ে ইবাদত করতে বলেছেন (মুয্যাম্মিল ২-৪)। রাসূল (ছাঃ) ছাহাবী আব্দুল্লাহ বিন আমর ইবনু আছ (রাঃ)-কে লক্ষ্য করে বলেন, صُمْ وَأَفْطِرْ وَقُمْ وَنَمْ فَإِنَّ لِجَسَدِكَ عَلَيْكَ حَقًّا وَإِنَّ لِعَيْنِكَ عَلَيْكَ حَقًّا وَإِنَّ لِزَوْجِكَ عَلَيْكَ حَقًّا ‘তুমি ছিয়াম পালন কর আবার ছিয়াম ছেড়ে দাও, তুমি রাত্রে ইবাদত কর আবার ঘুমাও। কারণ তোমার উপর তোমার শরীরের হক আছে, তোমার উপর তোমার দুই চোখের হক আছে, অনুরূপ তোমার উপর তোমার স্ত্রীর হক আছে’।[20] রাসূল (ছাঃ) অন্য হাদীছে বলেন, ‘যে ব্যক্তি সর্বদা ছিয়াম পালন করে তার ছিয়ামের কোন মূল্য নেই। একথা তিনি দুইবার কিংবা তিনবার বলেন’।[21]
(খ) প্রতিদিন ৩০০, ২৫০ কিংবা ২০০ রাক‘আত ছালাত আদায় করা। রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরাম এ ধরনের কোন ইবাদত করেছেন মর্মে প্রমাণ নেই। জানা আবশ্যক যে, রাসূল (ছাঃ)-এর তরীক্বা ব্যতীত যেকোন ইবাদত প্রত্যাখ্যাত।[22] বরং শরী‘আতের বিধিবদ্ধ নিয়মকে অবজ্ঞা করে যে বেশী বেশী ইবাদত করবে নিঃসন্দেহে সে মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর উম্মত থেকে বহিষ্কৃত হবে। কারণ রাসূল (ছাঃ) ইবাদতের কথা জেনে তিন ব্যক্তি খুব কম মনে করেছিল এবং তারা বেশী বেশী ইবাদত করতে চেয়েছিল। এদের ব্যাপারে রাসূল (ছাঃ) বলে দিলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার সুন্নাত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল, সে আমার অন্তর্ভুক্ত নয়’।[23]
(গ) ছালাতে কুরআন খতম করা। এক রাক‘আতে পুরো কুরআন খতম করা এবং রামাযান মাসে শুধু তারাবীহর ছালাতে ৬০ বার খতম করা। এ হিসাবে প্রত্যেক রাতে দুইবার করে খতম করতে হয়েছে। এটা সম্ভব কি-না তা যাচাই করবেন পাঠকবৃন্দ। তবে স্বয়ং রাসূল (ছাঃ)ও এভাবে কুরআন তেলাওয়াত করে রাতের ছালাত আদায় করেননি। তিনি একবার এক রাক‘আতে সর্বোচ্চ সূরা বাক্বারাহ, নিসা ও আলে ইমরান পড়েছেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায়।[24] জনৈক ছাহাবী সাত দিনের কমে কুরআন খতম করতে চাইলে রাসূল (ছাঃ) তাকে অনুমতি দেননি।[25] তিনি তিন দিনের কমে কুরআন খতম করতে নিষেধ করেছেন।[26] তাছাড়া আয়েশা (রাঃ) বলেন,
وَلاَ أَعْلَمُ نَبِىَّ اللهِ قَرَأَ الْقُرْآنَ كُلَّهُ فِى لَيْلَةٍ وَلاَ صَلَّى لَيْلَةً إِلَى الصُّبْحِ وَلاَ صَامَ شَهْرًا كَامِلاً غَيْرَ رَمَضَانَ.
রাসূল (ছাঃ) কোন এক রাত্রিতে পুরো কুরআন খতম করেছেন, কোন রাত্রে পুরো রাত ছালাত আদায় করেছেন এবং রামাযান মাস ছাড়া অন্য কোন মাসে সম্পূর্ণ মাস ছিয়াম পালন করেছেন মর্মে আমি জানি না’।[27] এই নিয়মতান্ত্রিক নির্ধারিত ইবাদত করার মাধ্যমেই তিনি হয়েছেন পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ তাক্বওয়াশীল।[28]
প্রশ্ন হল- যে সমস্ত মহা মনীষী সম্পর্কে উক্ত অলীক কাহিনী রচনা করা হয়েছে, তারা কি শরী‘আতের এই বিধানগুলো জানতেন না? তারা কি রাসূল (ছাঃ) ও জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত ছাহাবীদের চেয়ে বেশী পরহেযগার হতে চেয়েছিলেন? (নাঊযুবিল্লাহ)। বিশেষ করে ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) সম্পর্কে যে বাড়াবাড়ি করা হয়েছে তা আসলেই দুঃখজনক। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত বইয়ে কিভাবে তা সম্পৃক্ত হতে পারে? বলা যায় তাদেরকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্যই একশ্রেণীর স্বার্থান্বেষী মহল এ সমস্ত অলীক কাহিনী আবিষ্কার করেছে।
(১৪) ছাবেত আল-বুনানী (রহঃ) আল্লাহর সামনে অধিক ক্রন্দন করতেন আর বলতেন, হে আল্লাহ কবরে যদি কাউকে ছালাত আদায় করার অনুমতি দান করে থাকেন, তাহলে আমাকে অনুমতি দিন। আবু সিনান বলেন, আল্লাহর কসম! ছাবেতকে যারা দাফন করেছেন তাদের মধ্যে আমিও ছিলাম। দাফনের সময় কবরের একটি ইট পড়ে গেল। আমি দেখতে পেলাম তিনি দাঁড়িয়ে ছালাত আদায় করছেন। তার কন্যাকে জিজ্ঞেস করা হলে বলেন, আব্বা ৫০ বছর যাবৎ রাত্রি জাগরণ করেছেন এবং উক্ত দু‘আ করেছেন।[29]
(১৫) একজন স্ত্রীলোককে দাফন করা হল । তার ভাই দাফনের কাজে শরীক ছিল। এ সময় তার টাকার থলি কবরের মাঝে পড়ে যায়। পরে বুঝতে পেরে চুপে চুপে কবর খুলে বের করার চেষ্টা করে। যখন সে কবর খুলল তখন কবরটি আগুনে পরিপূর্ণ ছিল। সে কাঁদতে কাঁদতে মায়ের নিকট আসল এবং ঘটনা বর্ণনা করল। তখন তার মা উত্তরে বলল, সে ছালাতে অলসতা করত এবং ছালাত ক্বাযা করত।[30]
পর্যালোচনা : কবর জীবন মানুষের দুনিয়া ও আখেরাতের মধ্যবর্তী জীবন। এই জীবন মানুষের বাস্তব জীবনের বিপরীত। দুনিয়ার কোন মানুষ বারযাখী জীবন সম্পর্কে খবর রাখে না। কবরের শান্তি বা শাস্তি কোনকিছু কেউ টের পায় না। সেখানকার অবস্থা দেখা তো দূরের কথা, মানুষ ও জিনের পক্ষে কানে শুনাও সম্ভব নয়।[31]
(১৬) শায়খ আব্দুল ওয়াহিদ (রহঃ) ছিলেন বিখ্যাত বুযুর্গের একজন। তিনি বলেন, আমার একবার খুব ঘুমের চাপ হল। ফলে রাত্রের নিয়মিত তাসবীহগুলো পড়তে ছুটে গেল। তখন স্বপ্নে আমি সবুজ রেশমী পোশাক পরিহিতা এক অপূর্ব সুন্দরী যুবতীকে দেখলাম। তার পায়ের জুতাগুলো পর্যন্ত তাসবীহ পাঠ করছে। সে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলছে, তুমি আমাকে পাওয়ার চেষ্টা কর, আমি তোমাকে পাওয়ার চেষ্টা করছি। অতঃপর সে কয়েকটি প্রেমমূলক কবিতা পাঠ করল। এই স্বপ্ন দেখে আমি প্রতিজ্ঞা করলাম, রাত্রে আর কখনো ঘুমাব না। অতঃপর তিনি দীর্ঘ চল্লিশ বছর পর্যন্ত এশার ওযূ দিয়ে ফজরের ছালাত আদায় করেন।[32]
(১৭) জনৈক বুযুর্গ বলেন, এক রাত্রিতে গভীর ঘুমের কারণে আমি জেগে থাকতে পারলাম না। ঘুমিয়ে পড়লাম। স্বপ্নে এক অপূর্ব সুন্দরী মেয়েকে দেখলাম। এমন মেয়ে আমি কখনো জীবনে দেখিনি। তার দেহ থেকে তীব্র সুগন্ধি ছড়াচ্ছে। এমন সুগন্ধি আমি কখনো অনুভব করিনি। সে আমাকে একটি কাগজের টুকরা দিল। তাতে কবিতার তিনটি চরণ লেখা ছিল। যেমন- তুমি নিদ্রার স্বাদে বিভোর হয়ে জান্নাতের বালাখানা সমূহ ভুলে গেছ, যেখানে তোমাকে চির জীবন থাকতে হবে, যেখানে কখনো মৃত্যু আসবে না। তুমি ঘুম হতে উঠ, কুরআন তেলাওয়াত কর, তাহাজ্জুদ ছালাতে কুরআন তেলাওয়াত করা ঘুম হতে অনেক উত্তম। তিনি বলেন, এই ঘটনার পর হতে আমার কখনো ঘুম আসে না। কবিতাগুলো স্মরণ হয় আর ঘুম দূরিভূত হয়ে যায়।[33]
পর্যালোচনা : কী চমৎকার রোমাঞ্চকর উপন্যাস! সুন্দরী মেয়ের প্রলোভন দেখিয়ে মানুষকে আল্লাহর পথে নিয়ে আসার কী সুন্দর অভিনব কৌশল! আল্লাহর ভয় ও ইসলামী বিধানের আনুগত্যের কোনই প্রয়োজন নেই। শুধু সুন্দরী নর্তকীকে পাওয়ার জন্য সে ইবাদত করবে। এটা কি কোন ইসলামী সভ্যতা?
সুধী পাঠক! ফাযায়েলে আমলে এ ধরনের অসংখ্য মিথ্যা কাহিনী রয়েছে। এই মিথ্যা ফযীলতের ধোঁকা দিয়ে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষকে প্রতারণার জালে আবদ্ধ করা হচ্ছে। যে সমস্ত ভাইয়েরা ফাযায়েলে আমল পড়েন ও আমল করেন তারা কি একটিবার চিন্তা করবেন? আমরা সরলপ্রাণ মুমিন ভাইদেরকে উক্ত মরণ ফাঁদ থেকে বের হয়ে প্রমাণসহ ছহীহ দলীলের অনুসরণ করার জন্য উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি। আল্লাহ রাববুল আলামীন মুসলিম উম্মাহকে উক্ত মিথ্যা ও কাল্পনিক ধর্ম থেকে রক্ষা করুন-আমীন!!
[2]. আরশীফ মুলতাক্বা আহলিল হাদীছ, ৪১/১১৬।
[3]. ফাযায়েলে আমল, (উর্দূ) পৃঃ ৩৪; বাংলা, পৃঃ ১০৬।
[4]. ফাযায়েলে আমল, পৃঃ ১২৫; (উর্দূ), ফাযায়েলে নামায অংশ, পৃঃ ৪৫।
[5]. ছহীহ বুখারী হা/৪৭৭, (ইফাবা হা/৪৬৩, ১/২৫৯ পৃঃ), ‘ছালাত’ অধ্যায়, ‘বাজারের মসজিদে ছালাত’ অনুচ্ছে এবং হা/৬৪৫, ‘আযান, অধ্যায়, ‘জামা‘আতে ছালাতের ফযীলত’ অনুচ্ছেদ; মিশকাত হা/১০৫২, পৃঃ ৯৫; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৯৮৫, ৩/৪৪ পৃঃ।
[6]. আবুদাঊদ হা/৫৬০, ১/৮৩ পৃঃ।
[7]. ফাযায়েলে আমল, পৃঃ ১৬০; (উর্দূ), পৃঃ ৬৮।
[8]. ফাযায়েলে আমল, পৃঃ ১৬০, (উর্দূ), পৃঃ ৬৮।
[9]. ফাযায়েলে আমল, পৃঃ ১৬০, (ঊর্দূ), পৃঃ ৬৮।
[10]. ফাযায়েলে আমল (বাংলা), পৃঃ ৭৮।
[11]. রচনা ও সম্পাদনা : মাওলানা মুহাম্মদ আবু ইউসুফ খান, আল-আকাইদ আল-ইসলামিয়্যাহ (ঢাকা : আল-বারাকা লাইব্রেরী, ৩৪, নর্থব্রূক হল রোড, বাংলাবাজার, ঢাকা ১১০০), পৃঃ ৪৫।
[12]. ফাযায়েলে আমল, পৃঃ ১৬১, (উর্দূ), পৃঃ ৬৮।
[13]. ফাযায়েলে আমল, পৃঃ ১৬১, ১৫৮, (উর্দূ), পৃঃ ৬৬ ও ৬৮।
[14]. ফাযায়েলে আমল, পৃঃ ১৫৮, (উর্দূ), পৃঃ ৬৬।
[15]. ফাযায়েলে আমল, পৃঃ ১৬১, (উর্দূ), পৃঃ ৬৮।
[16]. ফাযায়েলে আমল, পৃঃ ১৬০, (উর্দূ), পৃঃ ৬৭।
[17]. ফাযায়েলে আমল, পৃঃ ১২৫-১২৬, (উর্দূ), পৃঃ ৪৬।
[18]. ফাযায়েলে আমল, পৃঃ ১৫৭, (উর্দূ), পৃঃ ৬৫-৬৬।
[19]. ফাযায়েলে আমল, পৃঃ ১৫৬, (উর্দূ), পৃঃ ৬৫।
[20]. ছহীহ বুখারী হা/৫১৯৯, ২/৭৮৩ পৃঃ, (ইফাবা হা/৪৮২৪, ৮/৪৭৪ পৃঃ), ‘বিবাহ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ ৮৮; মিশকাত হা/২০৫৪, পৃঃ ১৭৯; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১৯৫৬, ৪/২৫৩ পৃঃ, ‘ছিয়াম’ অধ্যায়, ‘নফল ছিয়াম’ অনুচ্ছেদ।
[21]. ছহীহ বুখারী হা/১৯৭৭, ১/২৬৫ পৃঃ, (ইফাবা হা/১৮৫৩, ৩/২৭৭ পৃঃ), ‘ছিয়াম’ অধ্যায়, ‘ছিয়ামের ক্ষেত্রে পরিবারের হক’ অনুচ্ছেদ-৫৬- فَقَالَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لاَ صَامَ مَنْ صَامَ الأَبَدَ لاَ صَامَ مَنْ صَامَ الأَبَدَ لاَ صَامَ مَنْ صَامَ الأَبَدَ.।
[22]. ছহীহ মুসলিম হা/৪৫৯০, ২/৭৭, (ইফাবা হা/৪৩৪৪), ‘বিচার’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৮।
[23]. ছহীহ বুখারী হা/৫০৬৩, ২/৭৫৭ পৃঃ, (ইফাবা হা/৪৬৯৭, ৮/৩৮১ পৃঃ), ‘বিবাহ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১; ছহীহ মুসলিম হা/৩৪৬৯, ‘বিবাহ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১ এবং হা/২৫০০; মিশকাত হা/১৪৫, পৃঃ ২৭; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১৩৭, ১/১০৯ পৃঃ - أَمَا وَاللهِ إِنِّيْ لَأَخْشَاكُمْ لِلَّهِ وَأَتْقَاكُمْ لَهُ لَكِنِّيْ أَصُوْمُ وَأُفْطِرُ وَأُصَلِّيْ وَأَرْقُدُ وَأَتَزَوَّجُ النِّسَاءَ فَمَنْ رَغِبَ عَنْ سُنَّتِيْ فَلَيْسَ مِنِّي।
[24]. ছহীহ মুসলিম হা/১৮৫০, ১/২৬৪ পৃঃ, (ইফাবা হা/১৬৮৪), ‘মুসাফিরদের ছালাত’ অধ্যায়, ‘রাত্রির ছালাতে ক্বিরাআত লম্বা করা মুস্তাহাব’ অনুচ্ছেদ-২৭।
[25]. ইবনু মাজাহ হা/১৩৪৬, পৃঃ ৯৫ ও ৯৬, ‘ছালাত’ অধ্যায়, ‘কয় দিনে কুরআন খতম করা ভাল’ অনুচ্ছেদ-১৭৮।
[26]. তিরমিযী হা/২৯৪৯, ২/১২৩ পৃঃ, ‘ক্বিরাআত’ অধ্যায়ের শেষ হাদীছ; ইবনু মাজাহ হা/১৩৪৭; মিশকাত হা/২২০১, পৃঃ ১৯১, ‘ফাযায়েলুল কুরআন’ অধ্যায়, ‘কুরআন পাঠের আদব’ অনুচ্ছেদ; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/২০৯৭, ৫/৩৬ পৃঃ।
[27]. ছহীহ মুসলিম হা/১৭৭৩, ১/২৫৬ পৃঃ, (ইফাবা হা/১৬০৯), ‘মুসাফিরদের ছালাত’ অধ্যায়, ‘রাত্রির ছালাত ও যে ছালাত না পড়ে ঘুমে যায়’ অনুচ্ছেদ-১৮; মিশকাত হা/১৫২৭, পৃঃ ১১১, ‘বিতর’ অনুচ্ছেদ; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১১১৮, ৩/১৩১ পৃঃ।
[28]. ছহীহ বুখারী হা/৫০৬৩, ২/৭৫৭ পৃঃ, (ইফাবা হা/৪৬৯৭, ৮/৩৮১ পৃঃ), ‘বিবাহ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১; মিশকাত হা/১৪৫, পৃঃ ২৭; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১৩৭, ১/১০৯ পৃঃ।
[29]. ফাযায়েলে আমল, পৃঃ ১৫৯, (উর্দূ), পৃঃ ৬৭।
[30]. ফাযায়েলে আমল, পৃঃ ১১৮।
[31]. ছহীহ বুখারী হা/১৩৩৮, (ইফাবা হা/১২৫৭, ২/৪০২ পৃঃ), ‘জানাযা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৬৬ ও ১৩৭৪; মিশকাত হা/১২৬ ও ১৩১।
[32]. ফাযায়েলে আমল, পৃঃ ১৫২, (উর্দূ), পৃঃ ৬২।
[33]. ফাযায়েলে আমল, পৃঃ ১৫৩, (উর্দূ), পৃঃ ৬৩।
ছালাতের ফযীলত সংক্রান্ত কুরআন-সুন্নাহর কয়েকটি বাণী নিম্নে পেশ করা হল। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَأَقِمِ الصَّلَاةَ إِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَرِ وَلَذِكْرُ اللهِ أَكْبَرُ ‘আর আপনি ছালাত আদায় করুন। নিশ্চয় ছালাত অশ্লীল ও নির্লজ্জ কাজ থেকে বিরত রাখে। আর আল্লাহর স্মরণই সর্বশ্রেষ্ঠ’ (আনকাবূত ৪৫)। অন্যত্র আল্লাহ বলেন, وَأَقِمِ الصَّلَاةَ طَرَفَيِ النَّهَارِ وَزُلَفًا مِنَ اللَّيْلِ إِنَّ الْحَسَنَاتِ يُذْهِبْنَ السَّيِّئَاتِ ‘আপনি দিনের দুই প্রান্তে এবং রাত্রির কিছু অংশে ছালাত আদায় করুন। নিংসন্দেহে সৎকর্ম সমূহ মন্দ কর্মসমূহকে দূর করে দেয়’ (হূদ ১১৪)।
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ كَانَ يَقُوْلُ الصَّلَوَاتُ الْخَمْسُ وَالْجُمُعَةُ إِلَى الْجُمُعَةِ وَرَمَضَانُ إِلَى رَمَضَانَ مُكَفِّرَاتٌ مَا بَيْنَهُنَّ إِذَا اجْتَنَبَ الْكَبَائِرَ.
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলতেন, ‘পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত, এক জুম‘আ হতে পরবর্তী জুম‘আ, এক রামাযান হতে পরবর্তী রামাযান এর মধ্যকার যাবতীয় পাপের কাফফারা স্বরূপ। যদি সে কাবীরা গোনাহ সমূহ থেকে বিরত থাকে’ ।[1]
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ أَرَأَيْتُمْ لَوْ أَنَّ نَهْرًا بِبَابِ أَحَدِكُمْ يَغْتَسِلُ مِنْهُ كُلَّ يَوْمٍ خَمْسَ مَرَّاتٍ هَلْ يَبْقَى مِنْ دَرَنِهِ شَىْءٌ قَالُوْا لاَ يَبْقَى مِنْ دَرَنِهِ شَىْءٌ قَالَ فَذَلِكَ مَثَلُ الصَّلَوَاتِ الْخَمْسِ يَمْحُو اللهُ بِهِنَّ الْخَطَايَا.
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমাদের কারো বাড়ীর সামনের প্রবাহিত নদীতে দৈনিক পাঁচবার গোসল করলে তোমাদের দেহে কোন ময়লা বাকী থাকবে কি? তারা বললেন, না বাকী থাকবে না। তিনি বললেন, পাঁচ ওয়াক্ত ছালাতের তুলনা ঠিক অনুরূপ। আল্লাহ এর দ্বারা গোনাহ সমূহ বিদূরিত করেন’।[2]
عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ يَقُوْلُ يَعْجِبُ رَبُّكُمْ مِنْ رَاعِي غَنَمٍ فِي رَأْسِ شَظِيَّةٍ بِجَبَلٍ يُؤَذِّنُ بِالصَّلَاةِ وَيُصَلِّيْ فَيَقُوْلُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ انْظُرُوْا إِلَى عَبْدِيْ هَذَا يُؤَذِّنُ وَيُقِيْمُ الصَّلَاةَ يَخَافُ مِنِّيْ قَدْ غَفَرْتُ لِعَبْدِيْ وَأَدْخَلْتُهُ الْجَنَّةَ.
উক্ববা ইবনু আমের (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, ‘তোমাদের প্রভু অত্যন্ত খুশি হন ঐ ছাগলের রাখালের প্রতি যে পর্বতশিখরে দাঁড়িয়ে ছালাতের আযান দেয় এবং ছালাত আদায় করে। তখন মহান আল্লাহ ফেরেশতাগণকে বলেন, তোমরা লক্ষ্য করো- সে আযান দেয় এবং ছালাত কায়েম করে এবং আমাকে ভয় করে। আমি আমার বান্দাকে মাফ করে দিলাম এবং জান্নাতে প্রবেশ করালাম।[3]
عَنْ عَمْرِو بْنِ عَبَسَةَ...قَالَ فَقُلْتُ يَا نَبِىَّ اللهِ فَالْوُضُوْءُ حَدِّثْنِىْ عَنْهُ قَالَ مَا مِنْكُمْ رَجُلٌ يُقَرِّبُ وَضُوْءَهُ فَيَتَمَضْمَضُ وَيَسْتَنْشِقُ فَيَنْتَثِرُ إِلاَّ خَرَّتْ خَطَايَا وَجْهِهِ وَفِيهِ وَخَيَاشِيْمِهِ ثُمَّ إِذَا غَسَلَ وَجْهَهُ كَمَا أَمَرَهُ اللهُ إِلاَّ خَرَّتْ خَطَايَا وَجْهِهِ مِنْ أَطْرَافِ لِحْيَتِهِ مَعَ الْمَاءِ ثُمَّ يَغْسِلُ يَدَيْهِ إِلَى الْمِرْفَقَيْنِ إِلاَّ خَرَّتْ خَطَايَا يَدَيْهِ مِنْ أَنَامِلِهِ مَعَ الْمَاءِ ثُمَّ يَمْسَحُ رَأْسَهُ إِلاَّ خَرَّتْ خَطَايَا رَأْسِهِ مِنْ أَطْرَافِ شَعْرِهِ مَعَ الْمَاءِ ثُمَّ يَغْسِلُ قَدَمَيْهِ إِلَى الْكَعْبَيْنِ إِلاَّ خَرَّتْ خَطَايَا رِجْلَيْهِ مِنْ أَنَامِلِهِ مَعَ الْمَاءِ فَإِنْ هُوَ قَامَ فَصَلَّى فَحَمِدَ اللهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ وَمَجَّدَهُ بِالَّذِىْ هُوَ لَهُ أَهْلٌ وَفَرَّغَ قَلْبَهُ لِلَّهِ إِلاَّ انْصَرَفَ مِنْ خَطِيْئَتِهِ كَهَيْئَتِهِ يَوْمَ وَلَدَتْهُ أُمُّهُ.
আমর ইবনু আবাসা (রা) হতে বর্ণিত, ... আমি বললাম, হে আল্লাহর নবী (ছাঃ)! ওযূ সম্পর্কে বলুন। তিনি বলেন, তোমাদের কেউ যখন পানি সংগ্রহ করে কুলি করে এবং নাকে পানি দেয় অতঃপর নাক ঝাড়ে, নিশ্চয়ই তখন তার মুখমণ্ডল, মুখের ভিতরের ও নাকের ভিতরের গোনাহ সমূহ ঝরে যায়। অতঃপর সে যখন চেহারা ধৌত করে যেরূপ আল্লাহ নির্দেশ দান করেছেন, তখন তার মুখমণ্ডলের পানির সাথে পাপগুলো দাড়ির কিনারা দিয়ে ঝরে পড়ে। অতঃপর যখন সে দুই হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করে তখন তার দুই হাতের পাপ সমূহ আঙ্গুলের ধার দিয়ে পানির সাথে ঝরে যায়। অতঃপর যখন সে মাথা মাসাহ করে তখন তার মাথার পাপসমূহ চুলের পাশ দিয়ে ঝরে পড়ে। অবশেষে যখন সে দুই পা ধৌত করে দুই গিরা পর্যন্ত তখন তার গোনাহ সমূহ তার আঙ্গুল সমূহের কিনারা দিয়ে ঝরে পড়ে। অতঃপর সে যখন ছালাতের জন্য দাঁড়ায় এবং আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগান করে এবং তাঁর মর্যাদা বর্ণনা করে তিনি যেমন মর্যাদার অধিকারী। সেই সাথে নিজের অন্তরকে আল্লাহর জন্য নিবিষ্ট করে, তখন সে তার পাপ হতে অনুরূপ মুক্ত হয়ে যায় যেন তার মা তাকে সেদিন জন্ম দিয়েছে।[4]
عَنْ أَبِىْ قَتَادَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ قَالَ اللهُ تَعَالَى إِنِّيْ فَرَضْتُ عَلَى أُمَّتِكَ خَمْسَ صَلَوَاتٍ وَعَهِدْتُ عِنْدِىْ عَهْدًا أَنَّهُ مَنْ جَاءَ يُحَافِظُ عَلَيْهِنَّ لِوَقْتِهِنَّ أَدْخَلْتُهُ الْجَنَّةَ وَمَنْ لَمْ يُحَافِظْ عَلَيْهِنَّ فَلَا عَهْدَ لَهُ عِنْدِىْ.
আবু ক্বাতাদা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, নিশ্চয় আমি আপনার উম্মতের উপর পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত ফরয করেছি এবং আমার কাছে একটি অঙ্গীকার রেখেছি যে, যে ব্যক্তি ওয়াক্তমত সেই পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত আদায় করে ক্বিয়ামতের দিন উপস্থিত হবে, আমি তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করাব। আর যে ব্যক্তি সেগুলোর সংরক্ষণ করবে না তার জন্য আমার নিকট কোন অঙ্গীকার নেই’।[5]
عَنْ أَبِى سَعِيْدِ الْخُدْرِىِّ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ الصَّلاَةُ فِى جَمَاعَةٍ تَعْدِلُ خَمْسًا وَعِشْرِيْنَ صَلاَةً فَإِذَا صَلاَّهَا فِىْ فَلاَةٍ فَأَتَمَّ رُكُوْعَهَا وَسُجُوْدَهَا بَلَغَتْ خَمْسِيْنَ صَلاَةً.
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, জামা‘আতের সাথে ছালাত আদায় করা পঁচিশ ওয়াক্ত ছালাত আদায় করার ন্যায়। যখন উক্ত ছালাত কোন নির্জন ভূখন্ডে আদায় করে অতঃপর রুকূ ও সিজদা পূর্ণভাবে করে, তখন সেই ছালাত পঞ্চাশ ছালাতের সমপরিমাণ হয়।[6]
ছালাত সংক্রান্ত আরো অনেক ফযীলত ছহীহ হাদীছ সমূহে বর্ণিত হয়েছে। সেগুলোর প্রতি দৃষ্টি রেখেই আমাদেরকে আমল করতে হবে। যঈফ ও জাল হাদীছ এবং কাল্পনিক মিথ্যা কাহিনীর কোন প্রয়োজন নেই। আল্লাহ আমাদেরকে বিশুদ্ধভাবে ছালাত আদায় করার তাওফীক দান করুন- আমীন!!
[2]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, বুখারী হা/৫২৮, ১/৭৬ পৃঃ, (ইফাবা হা/৫০৩, ২/৭ পৃঃ), ‘ছালাতের ওয়াক্ত সমূহ’ অধ্যায়; মুসলিম হা/১৫৫৪, ১/২৩৫ পৃঃ, ‘মসজিদ সমূহ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৫২; মিশকাত হা/৫৬৫; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫১৯, ২/১৫৮ পৃঃ।
[3]. আবুদাঊদ হা/১২০৩, ১/১৭০ পৃঃ; নাসাঈ হা/৬৬৬; মিশকাত হা/৬৬৫, পৃঃ ৬৫, ‘আযানের ফযীলত’ অনুচ্ছেদ; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৬১৪, ২/২০২ পৃঃ।
[4]. ছহীহ মুসলিম হা/১৯৬৭, ১/২৭৬, (ইফাবা হা/১৮০০), ‘মুসাফিরের ছালাত’ অধ্যায়, ‘আমর ইবনু আবাসার ইসলাম গ্রহণ’ অনুচ্ছেদ-৫২; মিশকাত হা/১০৪২, পৃঃ ৯৪; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৯৭৫, ৩/৩৮ পৃঃ।
[5]. ছহীহ আবুদাঊদ হা/৪৩০, সনদ হাসান, ‘ছালাত’ অধ্যায়, ‘ওয়াক্ত হেফাযত করা’ অনুচ্ছেদ।
[6]. আবুদাঊদ হা/৫৬০, ১/৮৩ পৃঃ, সনদ ছহীহ।
ছালাত পরিত্যাগকারীর জন্য ভয়াবহ শাস্তি অপেক্ষা করছে। কারণ আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইবাদত করার জন্য (যারিয়াত ৫৬)। আর শ্রেষ্ঠ ও প্রধান ইবাদত হল ছালাত। ছালাত পরিত্যাগকারীর জন্য মহান আল্লাহ ও রাসূল (ছাঃ) কঠোর হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেছেন। আল্লাহ বলেন, فَإِنْ تَابُوْا وَأَقَامُوا الصَّلاَةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ فَإِخْوَانُكُمْ فِي الدِّيْنِ ‘সুতরাং তারা যদি তওবা করে, ছালাত কায়েম করে এবং যাকাত আদায় করে তবেই তারা তোমাদের দ্বীনী ভাই’ (তওবা ১১)। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
فَخَلَفَ مِنْ بَعْدِهِمْ خَلْفٌ أَضَاعُوا الصَّلاَةَ وَاتَّبَعُوا الشَّهَوَاتِ فَسَوْفَ يَلْقَوْنَ غَيًّا.
‘তাদের পর আসল অপদার্থ পরবর্তীরা। তারা ছালাত নষ্ট করল এবং কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করল। সুতরাং তারা অচিরেই ধ্বংসে (জাহান্নামের গভীরে) পতিত হবে’ (মারইয়াম ৫৯)। অন্যত্র আল্লাহ বলেন, ‘অপরাধীদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে, তোমাদের কিসে সাক্বার নামক জাহান্নামে নিক্ষেপ করেছে? তারা বলবে, আমরা ছালাত আদায়কারী ছিলাম না’ (মুদ্দাছ্ছির ৪১-৪৩)।
উক্ত আলোচনা প্রমাণ করে ছালাত পরিত্যাগকারী ব্যক্তি মুসলিম ভাই হতে পারে না। রাসূল (ছাঃ) বলেন, مَنْ سَرَّهُ أَنْ يَلْقَى اللَّهَ غَدًا مُسْلِمًا فَلْيُحَافِظْ على هَؤُلَاءِ الصَّلَوَاتِ الْخَمْسِ حَيْثُ يُنَادَى بِهِنَّ ‘যে ব্যক্তি মুসলিম হিসাবে আগামী কাল আল্লাহর সাথে মুলাক্বাত করে আনন্দিত হতে চায় সে যেন পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত যথাযথভাবে আদায় করে। যেখানেই উক্ত ছালাতের আযান দেয়া হোক’।[1] অন্য বর্ণনায় এসেছে, মিহজান নামক এক ছাহাবী রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে বৈঠকে বসে ছিলেন। অতঃপর আযান হলে রাসূল (ছাঃ) ছালাত আদায় করেন এবং মজলিসে ফিরে আসেন। তখন উক্ত মিহজান বসেছিলেন। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন,مَا مَنَعَكَ أَنْ تُصَلِّيَ مَعَ النَّاسِ؟ أَلَسْتَ بِرَجُلٍ مُسْلِمٍ؟ ‘তোমাকে কিসে মুছল্লীদের সাথে ছালাত আদায় করতে বাধা দিল? তুমি কি একজন মুসলিম ব্যক্তি নও’? ছাহাবী বললেন, আমি বাড়ীতে ছালাত আদায় করেছি।[2]
অতএব উক্ত হাদীছদ্বয় প্রমাণ করে- ছালাত আদায় করা মুসলিম ব্যক্তির মূল পরিচয়। অন্য হাদীছে আরো কঠিন বক্তব্য এসেছে,
عَنْ جَابِرٍ قَالَ سَمِعْتُ النَّبِىَّ يَقُوْلُ إِنَّ بَيْنَ الرَّجُلِ وَبَيْنَ الشِّرْكِ وَالْكُفْرِ تَرْكَ الصَّلاَةِ.
জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল (ছা)-কে বলতে শুনেছি, ‘নিশ্চয়ই কোন ব্যক্তি আর মুশরিক ও কাফেরের মাঝে পার্থক্য হল, ছালাত পরিত্যাগ করা’।[3]
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ بُرَيْدَةَ عَنْ أَبِيْهِ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ اَلْعَهْدُ الَّذِيْ بَيْنَنَا وَبَيْنَهُمْ الصَّلاَةُ فَمَنْ تَرَكَهَا فَقَدْ كَفَرَ.
আব্দুল্লাহ ইবনু বুরায়দা (রাঃ) তার পিতা হতে বর্ণনা করেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘আমাদের ও তাদের (কাফের, মুশরিক ও মুনাফিক) মধ্যে যে অঙ্গীকার রয়েছে, তা হল ছালাত। সুতরাং যে ব্যক্তি ছালাত ছেড়ে দিবে, সে কুফুরী করবে’।[4] অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘যে ব্যক্তি ছালাত ছেড়ে দিবে সে শিরক করবে’।[5]
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ شَقِيْقِ الْعُقَيْلِيِّ قَالَ كَانَ أَصْحَابُ مُحَمَّدٍ لاَ يَرَوْنَ شَيْئًا مِنَ الْأَعْمَالِ تَرْكَهُ كُفْرٌ غَيْرَ الصَّلاَةِ.
আব্দুল্লাহ ইবনু শাক্বীক্ব উকায়লী (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ)-এর ছাহাবীগণ আমল সমূহের মধ্যে কোন আমল ছেড়ে দেওয়াকে কুফুরী বলতেন না, ছালাত ব্যতীত।[6]
অতএব যে ব্যক্তি ছালাত আদায় করবে না, সে নিঃসন্দেহে কুফুরী করবে। অলসতা ও অবহেলায় কোন মুসলিম নামধারী যদি ছালাত আদায় না করে তাহলে উক্ত অপরাধের কারণে জাহান্নামে যাবে। শাস্তি ভোগ করার পর আল্লাহর দয়ায় কালেমা ত্বাইয়েবার বরকতে মুক্তি পাবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করবে।[7] কিন্তু কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে ছালাত ছেড়ে দিলে বা অস্বীকার করলে সে ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে এবং চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবে।[8]
[2]. নাসাঈ হা/৮৫৭, ১/৯৮ পৃঃ; মালেক মুওয়াত্ত্বা হা/৪৩৫; মিশকাত হা/১১৫৩, পৃঃ ১০৩; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১০৮৫, ৩/৮৭ পৃঃ, ‘এক ছালাত দুইবার আদায় করা’ অনুচ্ছেদ।
[3]. ছহীহ মুসলিম হা/২৫৬ ও ২৫৭, ১/৬১ পৃঃ, (ইফাবা হা/১৪৯ ও ১৫০), ‘ঈমান’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৩৭; মিশকাত হা/৫৬৯।
[4]. তিরমিযী হা/২৬২১, ২/৯০ পৃঃ, ‘ঈমান’ অধ্যায়, ‘ছালাত ত্যাগ করা’ অনুচ্ছেদ; নাসাঈ হা/৪৬৩; ইবনু মাজাহ হা/১০৭৯; মিশকাত হা/৫৭৪; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫২৭, ২/১৬২ পৃঃ, সনদ ছহীহ।
[5]. ইবনু মাজাহ হা/১০৮০, পৃঃ ৭৫, ‘ছালাত কায়েম করা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৭৭, সনদ ছহীহ।
[6]. তিরমিযী হা/২৬২২, ২/৯০ পৃঃ, ‘ঈমান’ অধ্যায়, ‘ছালাত’ পরিত্যাগ করা’ অনুচ্ছেদ; মিশকাত হা/৫৭৯, পৃঃ ৫৯; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৩২, ২/১৬৪ পৃঃ, সনদ ছহীহ।
[7]. ইবনু মাজাহ হা/৬০, পৃঃ ৭, সনদ ছহীহ।
[8]. দেখুন: শায়খ আলবানী, হুকমু তারিকিছ ছালাহ, পৃঃ ৬।