লগইন করুন
(3) عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ عَنِ النَّبِيِّ أَنَّهُ ذَكَرَ الصَّلَاةَ يَوْمًا فَقَالَ مَنْ حَافَظَ عَلَيْهَا كَانَتْ لَهُ نُوْرًا وَبُرْهَانًا وَنَجَاةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَمَنْ لَمْ يُحَافِظْ عَلَيْهَا لَمْ تَكُنْ لَهُ نُوْرٌ وَلَا بُرْهَانٌ وَلَا نَجَاةٌ وَكَانَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَعَ قَارُوْنَ وَفِرْعَوْنَ وَهَامَانَ وَأُبَيِّ بْنِ خَلَفٍ.
(৩) আব্দুল্লাহ্ ইবনু ‘আমর ইবনুল ‘আছ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) একদিন ছালাতের প্রসঙ্গ উত্থাপন করে বলেন, যে ব্যক্তি ছালাতের সংরক্ষণ করবে ক্বিয়ামতের দিন তা তার জন্য জ্যোতি, প্রমাণ ও মুক্তির উপায় হবে। আর যে তার হেফাযত করবে না তার জন্য তা জ্যোতি, প্রমাণ ও মুক্তির উপায় হবে না। ক্বিয়ামতের দিন সে কারূণ, ফেরআউন, হামান ও উবাই ইবনু খালাফের সাথী হবে।[1]
তাহক্বীক্ব : হাদীছটি যঈফ।[2] এর সনদে ঈসা ইবনু হেলাল ছাদাফী নামক একজন দুর্বল রাবী আছে।[3] উল্লেখ্য, উক্ত হাদীছকে তাহক্বীক্বে মিশকাতে ছহীহ বলা হলেও চূড়ান্ত তাহক্বীক্বে আলবানী (রহঃ) যঈফ বলেছেন।[4]
(4) عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ مَنَ تَرَكَ الصَّلاَةَ مُتَعَمِّدًا فَقَدْ كَفَرَ جِهَارًا.
(৪) আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে ছালাত ছেড়ে দিল সে যেন প্রকাশ্য কুফুরী করল।[5]
তাহক্বীক্ব : হাদীছটি যঈফ।[6] ইমাম ত্বাবারাণী হাদীছটি যঈফ হওয়ার প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, আবু জাফর রাযী থেকে হাশেম বিন কাসেম ছাড়া কেউ হাদীছটি বর্ণনা করেননি। মুহাম্মাদ ইবনু আবুদাঊদ তার থেকে এককভাবে বর্ণনা করেছে।[7]
(5) الصَّلاَةُ عِمَادُ الدِّيْنِ فَمَنْ أَقَامَهَا فَقَدْ أَقَامَ الدِّيْنَ وَمَنْ هَدَمَهَا فَقَدْ هَدَمَ الدِّيْنَ.
(৫) ‘ছালাত হল দ্বীনের খুঁটি। সুতরাং যে ব্যক্তি ছালাত কায়েম করল সে দ্বীন প্রতিষ্ঠা করল। আর যে ব্যক্তি ছালাত ছেড়ে দিল সে দ্বীনকে ধ্বংস করল’।[8]
তাহক্বীক্ব : সমাজে হাদীছটি সমধিক প্রচলিত থাকলেও ছহীহ কোন ভিত্তি নেই। ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, এটি বাতিল ও মুনকার।[9]
(6) قَالَ عَلَيْهِ السَّلاَمُ الصَّلاَةُ مِعْرَاجُ الْمُؤْمِنِ.
(৬) ‘রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ছালাত মুমিনের মি‘রাজ’।[10]
তাহক্বীক্ব : উক্ত বর্ণনার কোন সনদ নেই। এটি ভিত্তিহীন ও বানোয়াট।
(7) عَنْ أَنَسٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ الصَّلاَةُ نُوْرُ الْمُؤْمِنِ.
(৭) আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘ছালাত মুমিনের নূর’।[11]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি যঈফ। মুহাদ্দিছ হুসাইন সালীম আসাদ বলেন, উক্ত হাদীছের সনদ অত্যন্ত দুর্বল।[12] উক্ত সনদে ঈসা ইবনু মায়সারা নামে একজন দুর্বল রাবী আছে।[13] উল্লেখ্য, ছালাত নূর এবং ছাদাক্বা দলীল মর্মে ছহীহ মুসলিমে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে তা ছহীহ।[14]
(8) مَنْ صَلَّى صَلاَةَ الصُّبْحِ فِي الْجَمَاعَةِ فَكَأَنَّمَا حَجَّ مَعَ آدَمَ عَلَيْهِ السَّلاَمُ خَمْسِيْنَ حَجَّةً وَمَنْ صَلَّى صَلاَةَ الظُّهْرِ فِي الْجَمَاعَةِ فَكَأَنَّمَا حَجَّ مَعَ نُوْحٍ عَلَيْهِ السَّلاَمُ أَرْبَعِيْنَ حَجَّةً أَوْ ثَلاَثِيْنَ إِلَى آخِرِهِ.
(৮) ‘যে ব্যক্তি জামা‘আতের সাথে ফজরের ছালাত আদায় করে সে যেন আদম (আঃ)-এর সাথে ৫০ বার হজ্জ করে এবং যে ব্যক্তি যোহরের ছালাত জামা‘আতের সাথে পড়ে সে যেন নূহ (আঃ)-এর সাথে ৪০ কিংবা ৩০ বার হজ্জ করে। এভাবেই অন্যান্য ওয়াক্ত সে আদায় করে’।[15]
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি জাল বা মিথ্যা।[16]
(9) عَنْ سَلْمَانَ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ يَقُولُ مَنْ غَدَا إِلَى صَلَاةِ الصُّبْحِ غَدَا بِرَايَةِ الْإِيْمَانِ وَمَنْ غَدَا إِلَى السُّوْقِ غَدَا بِرَايَةِ إِبْلِيْسَ.
(৯) সালমান ফারেসী (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি ভোরে ফজরের ছালাতের দিকে গেল, সে ঈমানের পতাকা নিয়ে গেল। আর যে ভোরে (ছালাত আদায় না করে) বাজারের দিকে গেল, সে শয়তানের পতাকা নিয়ে গেল।[17]
তাহক্বীক্ব : উক্ত হাদীছের সনদ অত্যন্ত দুর্বল।[18] এর সনদে উবাইস ইবনু মাইমুন নামক রাবী রয়েছে। ইমাম বুখারীসহ অন্যান্য মুহাদ্দিছও তাকে মুনকার বলে অভিযোগ করেছেন। ইবনু হিববান বলেন, সে নির্ভরযোগ্য ব্যক্তির নাম দিয়ে ধারণা পূর্বক বহু জাল হাদীছ বর্ণনা করেছে।[19]
(10) عَنْ عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ قَالَ سُئِلَ النَّبِيُّ عَنْ قَوْلِ اللهِ إِنَّ الصَّلاةَ تَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَرِ قال مَنْ لَمْ تَنْهَهُ صَلاَتُهُ عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَرِ فَلاَ صَلاَةَ لَهُ.
(১০) ইমরান ইবনু হুছাইন (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ)-কে একদা জিজ্ঞেস করা হল আল্লাহর এই বাণী সম্পর্কে- ‘নিশ্চয়ই ছালাত অশ্লীলতা ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে’। তখন তিনি বললেন, যাকে তার ছালাত অশ্লীলতা ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে না, তার ছালাত হয় না।[20]
তাহক্বীক্ব : হাদীছটি যঈফ। উক্ত বর্ণনার সনদে ইবনু জুনাইদ নামে একজন মিথ্যুক রাবী রয়েছে। মুহাদ্দিছগণ বর্ণনাটিকে মুনকার বলেছেন।[21]
[2]. যঈফ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/৩১২; তারাজুউল আলবানী হা/২৯।
[3]. মিশকাত হা/৫৭৮, ১/১৮৩ পৃঃ।
[4]. তারাজুউল আলবানী হা/২৯।
[5]. ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল আওসাত হা/৩৩৪৮।
[6]. সিলসিলা যঈফাহ হা/২৫০৮ ও ৫১৮০; যঈফুল জামে‘ হা/৫৫২১; যঈফ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/৩০৪।
[7].لم يروه عن أبي جعفر الرازي إلا هاشم بن القاسم تفرد به محمد بن أبي داود-আল-মু‘জামুল আওসাত হা/৩৩৪৮; সিলসিলা যঈফাহ হা/২৫০৮।
[8]. কাশফুল খাফা ২/৩২ পৃঃ; তাযকিরাতুল মাওযূ‘আত, পৃঃ ৩৮; ফাযায়েলে আমল, পৃঃ ২৯।
[9]. কাশফুল খাফা ২/৩১ পৃঃ।
[10]. তাফসীরে রাযী ১/২১৪ পৃঃ; তাফসীরে হাক্কী ৮/৪৫৩ পৃঃ; মিরক্বাতুল মাফাতীহ ১/১৩৪ পৃঃ, ‘ঈমান’ অধ্যায়।
[11]. মুসনাদে আবী ইয়ালা হা/৩৬৫৫; ফাযায়েলে আমল, পৃঃ ২৯।
[12]. তাহক্বীক্ব মুসনাদে আবী ইয়ালা হা/৩৬৫৫।
[13]. সিলসিলা যঈফাহ হা/১৬৬০।
[14]. ছহীহ মুসলিম হা/৫৫৬, ১/১১৮ পৃঃ; মিশকাত হা/২৮১, পৃঃ ৩৮; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/২৬২, ২/৩৭ পৃঃ।
[15]. হাসান ইবনু মুহাম্মাদ আছ-ছাগানী, আল-মাওযূ‘আত হা/৪৮, পৃঃ ৪২।
[16]. আল-মাওযূ‘আত হা/৪৮, পৃঃ ৪২।
[17]. ইবনু মাজাহ হা/২২৩৪, পৃঃ ১৬১, ‘ব্যবসা’ অধ্যায়, ‘বাজার সমূহ’ অনুচ্ছেদ; মিশকাত হা/৬৪০, পৃঃ ৬৩; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৮৯, ২/১৮৯ পৃঃ।
[18]. যঈফ ইবনে মাজাহ হা/২২৩৪।
[19]. মিশকাত হা/৬৪০-এর টীকা দ্রঃ।
[20]. তাফসীরে ইবনে কাছীর; সিলসিলা যঈফাহ হা/৯৮৫; ফাযায়েলে আমল, পৃঃ ১৭২।
[21]. সিলসিলা যঈফাহ হা/৯৮৫।