ছালাত পরিত্যাগকারীর জন্য ভয়াবহ শাস্তি অপেক্ষা করছে। কারণ আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইবাদত করার জন্য (যারিয়াত ৫৬)। আর শ্রেষ্ঠ ও প্রধান ইবাদত হল ছালাত। ছালাত পরিত্যাগকারীর জন্য মহান আল্লাহ ও রাসূল (ছাঃ) কঠোর হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেছেন। আল্লাহ বলেন, فَإِنْ تَابُوْا وَأَقَامُوا الصَّلاَةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ فَإِخْوَانُكُمْ فِي الدِّيْنِ ‘সুতরাং তারা যদি তওবা করে, ছালাত কায়েম করে এবং যাকাত আদায় করে তবেই তারা তোমাদের দ্বীনী ভাই’ (তওবা ১১)। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
فَخَلَفَ مِنْ بَعْدِهِمْ خَلْفٌ أَضَاعُوا الصَّلاَةَ وَاتَّبَعُوا الشَّهَوَاتِ فَسَوْفَ يَلْقَوْنَ غَيًّا.
‘তাদের পর আসল অপদার্থ পরবর্তীরা। তারা ছালাত নষ্ট করল এবং কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করল। সুতরাং তারা অচিরেই ধ্বংসে (জাহান্নামের গভীরে) পতিত হবে’ (মারইয়াম ৫৯)। অন্যত্র আল্লাহ বলেন, ‘অপরাধীদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে, তোমাদের কিসে সাক্বার নামক জাহান্নামে নিক্ষেপ করেছে? তারা বলবে, আমরা ছালাত আদায়কারী ছিলাম না’ (মুদ্দাছ্ছির ৪১-৪৩)।
উক্ত আলোচনা প্রমাণ করে ছালাত পরিত্যাগকারী ব্যক্তি মুসলিম ভাই হতে পারে না। রাসূল (ছাঃ) বলেন, مَنْ سَرَّهُ أَنْ يَلْقَى اللَّهَ غَدًا مُسْلِمًا فَلْيُحَافِظْ على هَؤُلَاءِ الصَّلَوَاتِ الْخَمْسِ حَيْثُ يُنَادَى بِهِنَّ ‘যে ব্যক্তি মুসলিম হিসাবে আগামী কাল আল্লাহর সাথে মুলাক্বাত করে আনন্দিত হতে চায় সে যেন পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত যথাযথভাবে আদায় করে। যেখানেই উক্ত ছালাতের আযান দেয়া হোক’।[1] অন্য বর্ণনায় এসেছে, মিহজান নামক এক ছাহাবী রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে বৈঠকে বসে ছিলেন। অতঃপর আযান হলে রাসূল (ছাঃ) ছালাত আদায় করেন এবং মজলিসে ফিরে আসেন। তখন উক্ত মিহজান বসেছিলেন। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন,مَا مَنَعَكَ أَنْ تُصَلِّيَ مَعَ النَّاسِ؟ أَلَسْتَ بِرَجُلٍ مُسْلِمٍ؟ ‘তোমাকে কিসে মুছল্লীদের সাথে ছালাত আদায় করতে বাধা দিল? তুমি কি একজন মুসলিম ব্যক্তি নও’? ছাহাবী বললেন, আমি বাড়ীতে ছালাত আদায় করেছি।[2]
অতএব উক্ত হাদীছদ্বয় প্রমাণ করে- ছালাত আদায় করা মুসলিম ব্যক্তির মূল পরিচয়। অন্য হাদীছে আরো কঠিন বক্তব্য এসেছে,
عَنْ جَابِرٍ قَالَ سَمِعْتُ النَّبِىَّ يَقُوْلُ إِنَّ بَيْنَ الرَّجُلِ وَبَيْنَ الشِّرْكِ وَالْكُفْرِ تَرْكَ الصَّلاَةِ.
জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল (ছা)-কে বলতে শুনেছি, ‘নিশ্চয়ই কোন ব্যক্তি আর মুশরিক ও কাফেরের মাঝে পার্থক্য হল, ছালাত পরিত্যাগ করা’।[3]
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ بُرَيْدَةَ عَنْ أَبِيْهِ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ اَلْعَهْدُ الَّذِيْ بَيْنَنَا وَبَيْنَهُمْ الصَّلاَةُ فَمَنْ تَرَكَهَا فَقَدْ كَفَرَ.
আব্দুল্লাহ ইবনু বুরায়দা (রাঃ) তার পিতা হতে বর্ণনা করেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘আমাদের ও তাদের (কাফের, মুশরিক ও মুনাফিক) মধ্যে যে অঙ্গীকার রয়েছে, তা হল ছালাত। সুতরাং যে ব্যক্তি ছালাত ছেড়ে দিবে, সে কুফুরী করবে’।[4] অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘যে ব্যক্তি ছালাত ছেড়ে দিবে সে শিরক করবে’।[5]
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ شَقِيْقِ الْعُقَيْلِيِّ قَالَ كَانَ أَصْحَابُ مُحَمَّدٍ لاَ يَرَوْنَ شَيْئًا مِنَ الْأَعْمَالِ تَرْكَهُ كُفْرٌ غَيْرَ الصَّلاَةِ.
আব্দুল্লাহ ইবনু শাক্বীক্ব উকায়লী (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ)-এর ছাহাবীগণ আমল সমূহের মধ্যে কোন আমল ছেড়ে দেওয়াকে কুফুরী বলতেন না, ছালাত ব্যতীত।[6]
অতএব যে ব্যক্তি ছালাত আদায় করবে না, সে নিঃসন্দেহে কুফুরী করবে। অলসতা ও অবহেলায় কোন মুসলিম নামধারী যদি ছালাত আদায় না করে তাহলে উক্ত অপরাধের কারণে জাহান্নামে যাবে। শাস্তি ভোগ করার পর আল্লাহর দয়ায় কালেমা ত্বাইয়েবার বরকতে মুক্তি পাবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করবে।[7] কিন্তু কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে ছালাত ছেড়ে দিলে বা অস্বীকার করলে সে ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে এবং চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবে।[8]
[2]. নাসাঈ হা/৮৫৭, ১/৯৮ পৃঃ; মালেক মুওয়াত্ত্বা হা/৪৩৫; মিশকাত হা/১১৫৩, পৃঃ ১০৩; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১০৮৫, ৩/৮৭ পৃঃ, ‘এক ছালাত দুইবার আদায় করা’ অনুচ্ছেদ।
[3]. ছহীহ মুসলিম হা/২৫৬ ও ২৫৭, ১/৬১ পৃঃ, (ইফাবা হা/১৪৯ ও ১৫০), ‘ঈমান’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৩৭; মিশকাত হা/৫৬৯।
[4]. তিরমিযী হা/২৬২১, ২/৯০ পৃঃ, ‘ঈমান’ অধ্যায়, ‘ছালাত ত্যাগ করা’ অনুচ্ছেদ; নাসাঈ হা/৪৬৩; ইবনু মাজাহ হা/১০৭৯; মিশকাত হা/৫৭৪; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫২৭, ২/১৬২ পৃঃ, সনদ ছহীহ।
[5]. ইবনু মাজাহ হা/১০৮০, পৃঃ ৭৫, ‘ছালাত কায়েম করা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৭৭, সনদ ছহীহ।
[6]. তিরমিযী হা/২৬২২, ২/৯০ পৃঃ, ‘ঈমান’ অধ্যায়, ‘ছালাত’ পরিত্যাগ করা’ অনুচ্ছেদ; মিশকাত হা/৫৭৯, পৃঃ ৫৯; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৩২, ২/১৬৪ পৃঃ, সনদ ছহীহ।
[7]. ইবনু মাজাহ হা/৬০, পৃঃ ৭, সনদ ছহীহ।
[8]. দেখুন: শায়খ আলবানী, হুকমু তারিকিছ ছালাহ, পৃঃ ৬।