পরিচ্ছেদঃ মুজাহাদাহ বা দ্বীনের জন্য এবং আত্মা, শয়তান ও দ্বীনের শত্রুদের বিরুদ্ধে নিরলস চেষ্টা, টানা পরিশ্রম ও আজীবন সংগ্রাম করার গুরুত্ব
আল্লাহ তা’আলা বলেন,
وَالَّذِينَ جَاهَدُوا فِينَا لَنَهْدِينَّهُمْ سُبُلَنَا وَإِنَّ اللهَ لَمَعَ الْمُحْسِنِينَ
অর্থাৎ, যারা আমার উদ্দেশ্যে সংগ্রাম করে আমি অবশ্যই তাদেরকে আমার পথসমূহে পরিচালিত করব। আর আল্লাহ অবশ্যই সৎকর্মপরায়ণদের সঙ্গেই থাকেন। (সূরা আনকাবূত ৬৯ আয়াত)। তিনি অন্যত্রে বলেন,
وَاعْبُدْ رَبَّكَ حَتَّى يَأْتِيَكَ الْيَقِينُ
অর্থাৎ, আর তোমার মৃত্যু উপস্থিত হওয়া পর্যন্ত তুমি তোমার প্রতিপালকের ইবাদত কর। (সূরা হিজর ৯৯)। তিনি আরো বলেন,
وَاذْكُرِ اسْمَ رَبِّكَ وَتَبَتَّلْ إِلَيْهِ تَبْتِيلاً
অর্থাৎ, সুতরাং তুমি তোমার প্রতিপালকের নাম স্মরণ কর এবং একনিষ্ঠভাবে তাতে মগণ হও। (সূরা মুযযাম্মিল ৮ আয়াত)। তিনি অন্য জায়গায় বলেছেন,
فَمَنْ يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْراً يَرَهُ
অর্থাৎ, সুতরাং কেউ অণু পরিমাণ ভালো কাজ করলে সে তা দেখতে পাবে। (সূরা যিলযাল ৭ আয়াত)
তিনি আরো বলেছেন,
وَمَا تُقَدِّمُوا لأَنْفُسِكُمْ مِنْ خَيْرٍ تَجِدُوهُ عَندَ اللهِ هُوَ خَيْراً وَأَعْظَمَ أَجْراً
অর্থাৎ, তোমরা তোমাদের আত্মার মঙ্গলের জন্য ভাল যা কিছু অগ্রিম প্রেরণ করবে তোমরা তা আল্লাহর নিকট উৎকৃষ্টতর এবং পুরস্কার হিসাবে মহত্তর পাবে। (সূরা মুযযাম্মিল ২০ আয়াত)
তিনি আরো বলেছেন,
وَمَا تُنْفِقُوا مِنْ خَيْرٍ فَإِنَّ اللهَ بِهِ عَلِيمٌ
অর্থাৎ, আর তোমরা যা কিছু ধন-সম্পদ দান কর, আল্লাহ তা সবিশেষ অবহিত। (সূরা বাক্বারাহ ২৭৩ আয়াত)
(এ বিষয়ে সুবিদিত আয়াত অনেক রয়েছে। উক্ত মর্মের হাদীসসমূহ নিম্নরূপ)
(৪০৯) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা বলেন, যে ব্যক্তি আমার কোন বন্ধুর সাথে শত্রুতা করবে, তার বিরুদ্ধে আমার যুদ্ধের ঘোষণা রইল। আমার বান্দা যে সমস্ত জিনিস দ্বারা আমার নৈকট্য লাভ করে, তার মধ্যে আমার নিকট প্রিয়তম জিনিস হল তা—যা আমি তার উপর ফরয করেছি। (অর্থাৎ ফরয ইবাদত দ্বারা আমার নৈকট্য লাভ করা আমার নিকটে বেশী পছন্দনীয়।) আর আমার বান্দা নফল ইবাদতের মাধ্যমে আমার নৈকট্য লাভ করতে থাকে, পরিশেষে আমি তাকে ভালবাসতে লাগি। অতঃপর যখন আমি তাকে ভালবাসি, তখন আমি তার ঐ কান হয়ে যাই, যার দ্বারা সে শোনে, তার ঐ চোখ হয়ে যাই, যার দ্বারা সে দেখে, তার ঐ হাত হয়ে যাই, যার দ্বারা সে ধরে এবং তার ঐ পা হয়ে যাই, যার দ্বারা সে চলে! আর সে যদি আমার কাছে কিছু চায়, তাহলে আমি তাকে দিই এবং সে যদি আমার আশ্রয় চায় তাহলে আমি অবশ্যই তাকে আশ্রয় দিই।
(’আমি তার কান হয়ে যাই----।’ অর্থাৎ, আমার সন্তুষ্টি মোতাবেক সে শোনে, দেখে, ধরে ও চলে।)
عَنْ أَبيْ هُرَيْرَةَ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ إنَّ الله تَعَالَى قَالَ : مَنْ عَادَى لِي وَلِيّاً فَقَدْ آذَنْتُهُ بالحَرْبِ وَمَا تَقَرَّبَ إِلَيَّ عَبْدِي بشَيءٍ أَحَبَّ إلَيَّ مِمَّا افْتَرَضْتُ عَلَيهِ وَمَا يَزَالُ عَبْدِي يَتَقرَّبُ إلَيَّ بالنَّوافِلِ حَتَّى أُحِبَّهُ فَإذَا أَحبَبتُهُ كُنْتُ سَمعَهُ الَّذِي يَسْمَعُ بِهِ وَبَصَرَهُ الَّذِي يُبْصِرُ بِهِ ويَدَهُ الَّتي يَبْطِشُ بِهَا وَرِجْلَهُ الَّتِي يَمْشي بِهَا وَإنْ سَأَلَني أعْطَيْتُهُ وَلَئِنِ اسْتَعَاذَنِي لأُعِيذَنَّهُ رواه البخاري
পরিচ্ছেদঃ মুজাহাদাহ বা দ্বীনের জন্য এবং আত্মা, শয়তান ও দ্বীনের শত্রুদের বিরুদ্ধে নিরলস চেষ্টা, টানা পরিশ্রম ও আজীবন সংগ্রাম করার গুরুত্ব
(৪১০) আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মহান প্রভু হতে বর্ণনা করেন যে, আল্লাহ তা’আলা বলেন, যখন বান্দা আমার দিকে এক বিঘত অগ্রসর হয়, তখন আমি তার দিকে এক হাত অগ্রসর হই। যখন সে আমার দিকে এক হাত অগ্রসর হয় তখন আমি তার দিকে দু’হাত অগ্রসর হই। আর যখন সে আমার দিকে হেঁটে আসে তখন আমি তার দিকে দৌড়ে যাই।
عَن أَنَسٍ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ فيما يرويه عَن ربّه - عَزَّ وَجَلَّ - قَالَ إِذَا تَقَرَّبَ العَبْدُ إلَيَّ شِبْراً تَقَرَّبْتُ إِلَيْه ذِرَاعاً وَإِذَا تَقَرَّبَ إلَيَّ ذِرَاعاً تَقَربْتُ مِنهُ بَاعاً وِإذَا أتَانِي يَمشي أتَيْتُهُ هَرْوَلَةً رواه البخاري
পরিচ্ছেদঃ মুজাহাদাহ বা দ্বীনের জন্য এবং আত্মা, শয়তান ও দ্বীনের শত্রুদের বিরুদ্ধে নিরলস চেষ্টা, টানা পরিশ্রম ও আজীবন সংগ্রাম করার গুরুত্ব
(৪১১) ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ’’এমন দুটি নিয়ামত আছে, বহু মানুষ সে দু’টির ব্যাপারে ধোঁকায় আছে। (তা হল) সুস্থতা ও অবসর।
عَن ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ نِعْمَتَانِ مَغبونٌ فِيهِمَا كَثيرٌ مِنَ النَّاسِ : الصِّحَّةُ وَالفَرَاغُ رواه البخاري
পরিচ্ছেদঃ মুজাহাদাহ বা দ্বীনের জন্য এবং আত্মা, শয়তান ও দ্বীনের শত্রুদের বিরুদ্ধে নিরলস চেষ্টা, টানা পরিশ্রম ও আজীবন সংগ্রাম করার গুরুত্ব
(৪১২) ইবনে আব্বাস (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে উপদেশ দিয়ে বলেন, পাঁচটি বস্তুকে পাঁচটির পূর্বে গনীমত জেনে মূল্যায়ন করো; বার্ধক্যের পূর্বে তোমার যৌবনকে, অসুস্থতার পূর্বে তোমার সুস্থতাকে, দারিদ্রের পূর্বে তোমার ধনবত্তাকে, ব্যস্ততার পূর্বে তোমার অবসরকে এবং মরণের পূর্বে তোমার জীবনকে।
عَن ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ - صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - لِرَجُلٍ وَهُوَ يَعِظُهُ اغْتَنِمْ خَمْسًا قَبْلَ خَمْسٍ : شَبَابَكَ قَبْلَ هِرَمِكَ وَصِحَّتَكَ قَبْلَ سَقَمِكَ وَغِنَاءَكَ قَبْلَ فَقْرِكَ وَفَرَاغَكَ قَبْلَ شُغْلِكَ وَحَيَاتَكَ قَبْلَ مَوْتِكَ
পরিচ্ছেদঃ মুজাহাদাহ বা দ্বীনের জন্য এবং আত্মা, শয়তান ও দ্বীনের শত্রুদের বিরুদ্ধে নিরলস চেষ্টা, টানা পরিশ্রম ও আজীবন সংগ্রাম করার গুরুত্ব
(৪১৩) আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে (এত দীর্ঘ) কিয়াম করতেন যে, তাঁর পা দুখানি (ফুলে) ফেটে (দাগ পড়ে) যেত। একদা আমি তাঁকে বললাম, ’হে আল্লাহর রসূল! আপনি এরূপ কাজ কেন করছেন? আল্লাহ তো আপনার আগের ও পিছের সমস্ত পাপ মোচন ক’রে দিয়েছেন। তিনি বললেন, ’’আমি কি তাঁর কৃতজ্ঞ বান্দা হতে পছন্দ করব না?[১]
মুগীরাহ বিন শু’বাহ কর্তৃক বুখারী-মুসলিমে অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে।[২]
[২] বুখারী ১১৩০, মুসলিম ৭৩০২-৭৩০৩।
عَن عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا : أَنَّ النَّبيّ ﷺ كَانَ يقُومُ مِنَ اللَّيلِ حَتَّى تَتَفَطَّرَ قَدَمَاهُ فَقُلْتُ لَهُ : لِمَ تَصنَعُ هَذَا يَا رَسُولَ الله وَقدْ غَفَرَ الله لَكَ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِكَ وَمَا تَأَخَّرَ؟ قَالَ أَفَلاَ أُحِبُّ أنْ أكُونَ عَبْداً شَكُوراً؟ مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
পরিচ্ছেদঃ মুজাহাদাহ বা দ্বীনের জন্য এবং আত্মা, শয়তান ও দ্বীনের শত্রুদের বিরুদ্ধে নিরলস চেষ্টা, টানা পরিশ্রম ও আজীবন সংগ্রাম করার গুরুত্ব
(৪১৪) আয়েশা (রাঃ) বলেন, যখন (রমযানের শেষ) দশক শুরু হত, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাত জাগতেন, নিজ পরিবারকে জাগাতেন, (ইবাদতে) খুবই চেষ্টা করতেন এবং (এর জন্য) তিনি কোমর বেঁধে নিতেন।
عَن عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا أنَّها قَالَتْ : كَانَ رَسُولُ الله ﷺ إِذَا دَخَلَ العَشْرُ أَحْيَا اللَّيلَ وَأيْقَظَ أهْلَهُ وَجَدَّ وَشَدَّ المِئْزَر مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
পরিচ্ছেদঃ মুজাহাদাহ বা দ্বীনের জন্য এবং আত্মা, শয়তান ও দ্বীনের শত্রুদের বিরুদ্ধে নিরলস চেষ্টা, টানা পরিশ্রম ও আজীবন সংগ্রাম করার গুরুত্ব
(৪১৫) আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, (দেহমনে) সবল মু’মিন আল্লাহর নিকট দুর্বল মু’মিন অপেক্ষা বেশী প্রিয়। আর প্রত্যেকের মধ্যে কল্যাণ রয়েছে। তুমি ঐ জিনিসে যত্নবান হও, যাতে তোমার উপকার আছে এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা কর ও উৎসাহহীন হয়ো না। যদি তোমার কিছু ক্ষতি হয়, তাহলে এ কথা বলো না যে, ’যদি আমি এ রকম করতাম, তাহলে এ রকম হত। বরং বলো, আল্লাহর (লিখিত) ভাগ্য এবং তিনি যা চেয়েছেন তাই করেছেন। কারণ, ’যদি’ (শব্দ) শয়তানের কাজের দুয়ার খুলে দেয়।
عَنْ أَبيْ هُرَيْرَةَ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ المُؤْمِنُ القَوِيُّ خَيرٌ وَأَحَبُّ إِلَى اللهِ مِنَ المُؤْمِنِ الضَّعيفِ وَفي كُلٍّ خَيرٌ احْرِصْ عَلَى مَا يَنْفَعُكَ واسْتَعَن بِاللهِ وَلاَ تَعْجَزْ وَإنْ أَصَابَكَ شَيءٌ فَلاَ تَقُلْ لَوْ أنّي فَعَلْتُ كَانَ كَذَا وَكَذَا وَلَكِنْ قُلْ: قَدرُ اللّهِ وَمَا شَاءَ فَعلَ فإنَّ لَوْ تَفْتَحُ عَمَلَ الشَّيطَانِ رواه مسلم
পরিচ্ছেদঃ মুজাহাদাহ বা দ্বীনের জন্য এবং আত্মা, শয়তান ও দ্বীনের শত্রুদের বিরুদ্ধে নিরলস চেষ্টা, টানা পরিশ্রম ও আজীবন সংগ্রাম করার গুরুত্ব
(৪১৬) উক্ত রাবী (রাঃ) হতে এটিও বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জাহান্নামকে মনোলোভা জিনিসসমূহ দ্বারা ঘিরে দেওয়া হয়েছে এবং জান্নাতকে ঘিরে দেওয়া হয়েছে কষ্টসাধ্য কর্মসমূহ দ্বারা।
[’ঘিরে দেওয়া হয়েছে’ অর্থাৎ, ঐ জিনিস বা কর্ম জাহান্নাম বা জান্নাতের মাঝে পর্দা স্বরূপ, যখনই কেউ তা করবে, তখনই সে পর্দা ছিঁড়ে তাতে প্রবেশ করবে।]
عَنهُ: أنَّ رَسُول الله ﷺ قَالَ حُجِبَتِ النَّارُ بالشَّهَواتِ وَحُجِبَتِ الجَنَّةُ بِالمَكَارِهِ مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
পরিচ্ছেদঃ মুজাহাদাহ বা দ্বীনের জন্য এবং আত্মা, শয়তান ও দ্বীনের শত্রুদের বিরুদ্ধে নিরলস চেষ্টা, টানা পরিশ্রম ও আজীবন সংগ্রাম করার গুরুত্ব
(৪১৭) আবূ আব্দুল্লাহ হুযাইফা ইবনে ইয়ামান (রাঃ) বলেন যে, আমি এক রাত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে নামায পড়লাম। তিনি সূরা বাক্বারাহ পড়তে আরম্ভ করলেন। অতঃপর আমি (মনে মনে) বললাম যে, তিনি একশো আয়াত পড়ে রুকুতে যাবেন। কিন্তু তিনি (তা না করে) ক্বিরাআত করতে থাকলেন। তারপর আমি (মনে মনে) বললাম যে, তিনি এই সূরা এক রাকাআতে সম্পন্ন করবেন; এটি পড়ে রুকূ করবেন। কিন্তু তিনি (সূরা) নিসা আরম্ভ করলেন। তিনি তা সম্পূর্ণ পড়লেন। পুনরায় তিনি (সূরা) আলে ইমরান শুরু করলেন। সেটিও সম্পূর্ণ পড়লেন। (এত দীর্ঘ ক্বিরাআত সত্ত্বেও) তিনি ধীর শান্তভাবে থেমে থেমে পড়ছিলেন।
যখন কোন এমন আয়াত এসে যেত, যাতে তাসবীহ (আল্লাহর পবিত্রতার বর্ণনা) আছে, তখন তিনি (ক্বিরাআত বন্ধ করে) তাসবীহ (অর্থাৎ সুবহানাল্লাহ) পড়তেন। আর যখন প্রার্থনা সম্বলিত আয়াত এসে যেত, তখন প্রার্থনা করতেন। যখন আশ্রয় চাওয়ার আয়াত আসত, তখন আশ্রয় চাইতেন। অতঃপর তিনি রুকূ করলেন; তাতে তিনি বলতে লাগলেন, সুবহানা রাব্বিয়াল আযীম। সুতরাং তাঁর রুকুও তাঁর কিয়ামের (দাঁড়ানোর) মত দীর্ঘ হয়ে গেল! অতঃপর তিনি ’সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বললেন ও (রুকু হতে উঠে) প্রায় রুকু সম দীর্ঘ কিয়াম করলেন। অতঃপর তিনি সিজদা করলেন এবং (সাজদায়) তিনি ’সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা’ (দীর্ঘ সময় ধরে) পড়লেন ফলে তাঁর সিজদা তাঁর কিয়ামের সমান হয়ে গেল।
عَنْ أَبيْ عبد الله حُذَيفَةَ بنِ اليمانِ رضي الله عَنهما قَالَ : صَلَّيْتُ مَعَ النَّبيّ ﷺ ذَاتَ لَيلَةٍ فَافْتَتَحَ البقَرَةَ فَقُلْتُ : يَرْكَعُ عَندَ المئَةِ ثُمَّ مَضَى فَقُلْتُ : يُصَلِّي بِهَا في ركعَة فَمَضَى فقُلْتُ : يَرْكَعُ بِهَا ثُمَّ افْتَتَحَ النِّسَاءَ فَقَرَأَهَا ثُمَّ افْتَتَحَ آلَ عِمْرَانَ فَقَرَأَهَا يَقرَأُ مُتَرَسِّلاً : إِذَا مَرَّ بآية فِيهَا تَسبيحٌ سَبَّحَ وَإذَا مَرَّ بسُؤَالٍ سَأَلَ وَإذَا مَرَّ بتَعَوُّذٍ تَعَوَّذَ ثُمَّ رَكَعَ فَجَعَلَ يَقُولُ سُبْحَانَ رَبِّيَ العَظِيمِ فَكَانَ رُكُوعُهُ نَحواً مِنْ قِيَامِهِ ثُمَّ قَالَ سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ رَبَّنَا لَكَ الحَمْدُ ثُمَّ قَامَ طَويلاً قَريباً مِمَّا رَكَعَ ثُمَّ سَجَدَ فَقَالَ سُبْحَانَ رَبِّيَ الأَعْلَى فَكَانَ سُجُودُهُ قَريباً مِنْ قِيَامِهِ رواه مسلم
পরিচ্ছেদঃ মুজাহাদাহ বা দ্বীনের জন্য এবং আত্মা, শয়তান ও দ্বীনের শত্রুদের বিরুদ্ধে নিরলস চেষ্টা, টানা পরিশ্রম ও আজীবন সংগ্রাম করার গুরুত্ব
(৪১৮) ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন যে, আমি এক রাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে নামায পড়লাম। অতঃপর তিনি দীর্ঘ কিয়াম করলেন। এমনকি শেষ পর্যন্ত আমি খারাপ কাজের ইচ্ছা করলাম। তাঁকে প্রশ্ন করা হল যে, আপনি কী ইচ্ছা করেছিলেন? তিনি বললেন, আমি ইচ্ছা করেছিলাম যে, আমি বসে যাই এবং (তাঁর অনুসরণ) ছেড়ে দিই।
عَن ابنِ مَسْعُوْدٍ قَالَ : صَلَّيْتُ مَعَ النَّبيّ ﷺ لَيلَةً فَأَطَالَ القِيامَ حَتَّى هَمَمْتُ بأمْرِ سُوءٍ قيل: وَمَا هَمَمْتَ بِهِ ؟ قَالَ : هَمَمْتُ أنْ أجْلِسَ وَأَدَعَهُ مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
পরিচ্ছেদঃ মুজাহাদাহ বা দ্বীনের জন্য এবং আত্মা, শয়তান ও দ্বীনের শত্রুদের বিরুদ্ধে নিরলস চেষ্টা, টানা পরিশ্রম ও আজীবন সংগ্রাম করার গুরুত্ব
(৪১৯) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তিনটি জিনিস মৃত ব্যক্তির সঙ্গে যায়ঃ তার আত্মীয়-স্বজন, তার মাল ও তার আমল। অতঃপর দু’টি জিনিস ফিরে আসে এবং একটি জিনিস রয়ে যায়। তার আত্মীয় স্বজন ও তার মাল ফিরে আসে এবং তার আমল (তার সঙ্গে) রয়ে যায়।
عَن أَنَسٍ عَن رَسُول الله ﷺ قَالَ يَتْبَعُ المَيتَ ثَلاَثَةٌ : أهْلُهُ وَمَالُهُ وَعَملُهُ فَيَرجِعُ اثنَانِ وَيَبْقَى وَاحِدٌ : يَرجِعُ أهْلُهُ وَمَالُهُ وَيَبقَى عَملُهُ مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
পরিচ্ছেদঃ মুজাহাদাহ বা দ্বীনের জন্য এবং আত্মা, শয়তান ও দ্বীনের শত্রুদের বিরুদ্ধে নিরলস চেষ্টা, টানা পরিশ্রম ও আজীবন সংগ্রাম করার গুরুত্ব
(৪২০) ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, জান্নাত তোমাদের জুতোর ফিতার চেয়েও অধিক নিকটবর্তী এবং জাহান্নামও তদ্রূপ।
عَن ابنِ مَسْعُوْدٍ قَالَ : قَالَ النَّبِيُّ ﷺ الجَنَّةُ أَقْرَبُ إِلَى أَحَدِكُمْ مِنْ شِرَاكِ نَعْلِهِ وَالنَّارُ مِثلُ ذلِكَ رواه البخاري
পরিচ্ছেদঃ মুজাহাদাহ বা দ্বীনের জন্য এবং আত্মা, শয়তান ও দ্বীনের শত্রুদের বিরুদ্ধে নিরলস চেষ্টা, টানা পরিশ্রম ও আজীবন সংগ্রাম করার গুরুত্ব
(৪২১) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খাদেম ও আহলে সুফফার বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব আবূ ফিরাস রাবীআহ ইবনে কা’ব আসলামী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে রাত কাটাতাম। আমি তাঁর কাছে ওযূর পানি এবং প্রয়োজনীয় বস্তু এনে দিতাম। (একদিন তিনি খুশী হয়ে) বললেন, তুমি আমার কাছে কিছু চাও। আমি বললাম, আমি আপনার কাছে জান্নাতে আপনার সাহচর্য চাই। তিনি বললেন, এ ছাড়া আর কিছু? আমি বললাম, বাস্ ওটাই। তিনি বললেন, তাহলে তুমি, অধিকাধিক সিজদা করে (অর্থাৎ প্রচুর নফল নামায পড়ে) তোমার (এ আশা পূরণের) জন্য আমাকে সাহায্য কর।
عَنْ أَبيْ فِراسٍ رَبيعةَ بنِ كَعبٍ الأَسلَميِّ خَادِمِ رَسُولِ الله ﷺ وَمِن أَهلِ الصُّفَّةِ قَالَ : كُنْتُ أبِيتُ مَعَ رَسُولِ الله ﷺ فآتِيهِ بِوَضُوئِهِ وَحَاجَتِهِ فَقَالَ سَلْنِي فقُلْتُ : أَسْأَلُكَ مُرَافَقَتَكَ في الجَنَّةِ فَقَالَ أَوَ غَيرَ ذلِكَ ؟ قُلْتُ : هُوَ ذَاكَ قَالَ فَأَعَني عَلَى نَفْسِكَ بِكَثْرَةِ السُّجُودِ رواه مسلم
পরিচ্ছেদঃ মুজাহাদাহ বা দ্বীনের জন্য এবং আত্মা, শয়তান ও দ্বীনের শত্রুদের বিরুদ্ধে নিরলস চেষ্টা, টানা পরিশ্রম ও আজীবন সংগ্রাম করার গুরুত্ব
(৪২২) আবূ সাফওয়ান আব্দুল্লাহ ইবনে বুসর আসলামী (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সর্বোত্তম মানুষ সেই ব্যক্তি যার বয়স দীর্ঘ হয় এবং আমল সুন্দর হয়।
عَنْ أَبيْ صَفوَانَ عَبدِ اللهِ بنِ بُسْرٍ الأسلَمِي قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ خَيرُ النَّاسِ مَنْ طَالَ عُمُرهُ وَحَسُنَ عَمَلُهُ رواه الترمذي وَقالَ حديث حسن
পরিচ্ছেদঃ মুজাহাদাহ বা দ্বীনের জন্য এবং আত্মা, শয়তান ও দ্বীনের শত্রুদের বিরুদ্ধে নিরলস চেষ্টা, টানা পরিশ্রম ও আজীবন সংগ্রাম করার গুরুত্ব
(৪২৩) আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, আমার চাচা আনাস ইবনে নাযর বদরের যুদ্ধে অনুপস্থিত ছিলেন। (যার জন্য তিনি খুবই দুঃখিত হয়েছিলেন।) অতঃপর তিনি একবার বললেন, হে আল্লাহর রসূল! প্রথম যে যুদ্ধ আপনি মুশরিকদের বিরুদ্ধে করলেন তাতে আমি অনুপস্থিত থাকলাম। যদি (এরপর) আল্লাহ আমাকে মুশরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে হাজির হওয়ার সৌভাগ্য দান করেন, তাহলে আমি কী করব আল্লাহ তা অবশ্যই দেখাবেন (অথবা দেখবেন)। অতঃপর যখন উহুদের দিন এল, তখন মুসলিমরা (শুরুতে) ঘাঁটি ছেড়ে দেওয়ার কারণে পরাজিত হলেন। তিনি বললেন, হে আল্লাহ! এরা অর্থাৎ, সঙ্গীরা যা করল তার জন্য আমি তোমার নিকট ওযর পেশ করছি। আর ওরা অর্থাৎ, মুশরিকরা যা করল, তা থেকে আমি তোমার কাছে সম্পর্কহীনতা প্রকাশ করছি। অতঃপর তিনি আগে বাড়লেন এবং সামনে সা’দ ইবনে মুআযকে পেলেন।
তিনি বললেন, হে সা’দ ইবনে মুআয! জান্নাত! কা’বার প্রভুর কসম! আমি উহুদ অপেক্ষা নিকটতর জায়গা হতে তার সুগন্ধ পাচ্ছি। (এই বলে তিনি শত্রুদের মাঝে ঝাঁপিয়ে পড়লেন এবং যুদ্ধ করতে করতে শাহাদত বরণ করলেন।) সা’দ বলেন, হে আল্লাহর রসূল! সে যা করল, আমি তা পারলাম না। আনাস (রাঃ) বলেন, আমরা তাঁর দেহে আশীর চেয়ে বেশি তরবারি, বর্শা বা তীরের আঘাত চিহ্ন পেলাম। আর আমরা তাকে এই অবস্থায় পেলাম যে, তাকে হত্যা করা হয়েছে এবং মুশরিকরা তাঁর নাক-কান কেটে নিয়েছে। ফলে কেউ তাঁকে চিনতে পারেনি। কেবল তাঁর বোন তাঁকে তাঁর আঙ্গুলের পাব দেখে চিনেছিল। আনাস (রাঃ) বলেন যে, আমরা ধারণা করতাম যে, (সূরা আহযাবের ২৩নং) এই আয়াত তাঁর ও তাঁর মত লোকদের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে। মু’মিনদের মধ্যে কিছু আল্লাহর সঙ্গে তাদের কৃত অঙ্গীকার পূরণ করেছে, ওদের কেউ কেউ নিজ কর্তব্য পূর্ণরূপে সমাধা করেছে এবং কেউ কেউ প্রতীক্ষায় রয়েছে। ওরা তাদের লক্ষ্য পরিবর্তন করেনি।
عَن أَنَسٍ قَالَ : غَابَ عَمِّي أَنَسُ بْنُ النَّضْرِ عَن قِتَالِ بَدْرٍ فَقَالَ : يَا رَسُولَ الله غِبْتُ عَن أَوَّلِ قِتال قَاتَلْتَ المُشْرِكِينَ لَئِن اللهُ أَشْهَدَنِي قِتَالَ المُشركِينَ لَيُرِيَنَّ اللهُ مَا أَصْنَعُ فَلَمَّا كَانَ يَومُ أُحُدٍ انْكَشَفَ المُسْلِمونَ فَقَالَ : اَللّٰهُمَّ أعْتَذِرُ إلَيْكَ مِمَّا صَنَعَ هؤُلاَءِ ـ يعَني : أصْحَابهُ ـ وَأبْرَأُ إلَيْكَ مِمَّا صَنَعَ هؤُلاَءِ ـ يَعَني : المُشركِينَ ـ ثُمَّ تَقَدَّمَ فَاسْتَقْبَلهُ سَعدُ بْنُ مُعاذٍ فَقَالَ : يَا سعدَ بنَ معاذٍ الجَنَّةُ وَرَبِّ الكعْبَةِ إنِّي أَجِدُ ريحَهَا مِنْ دُونِ أُحُدٍ قَالَ سعدٌ : فَمَا اسْتَطَعتُ يَا رسولَ الله مَا صَنَعَ قَالَ أنسٌ : فَوَجَدْنَا بِهِ بِضْعاً وَثَمانينَ ضَربَةً بالسَّيفِ أَوْ طَعَنةً بِرمْحٍ أَوْ رَمْيَةً بسَهْمٍ وَوَجَدْنَاهُ قَدْ قُتِلَ وَمَثَّلَ بِهِ المُشْرِكونَ فما عَرَفهُ أَحَدٌ إلاَّ أُخْتُهُ بِبَنَانِهِ قَالَ أنس : كُنَّا نَرَى أَوْ نَظُنُّ أَنَّ هَذِهِ الآيَة نَزَلَت فِيهِ وَفِي أشبَاهِه : مِنَ الْمُؤْمِنِينَ رِجَالٌ صَدَقُوا مَا عَاهَدُوا اللهَ عَلَيْهِ إِلَى آخِرها مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
পরিচ্ছেদঃ মুজাহাদাহ বা দ্বীনের জন্য এবং আত্মা, শয়তান ও দ্বীনের শত্রুদের বিরুদ্ধে নিরলস চেষ্টা, টানা পরিশ্রম ও আজীবন সংগ্রাম করার গুরুত্ব
(৪২৪) আবূ মাসউদ উক্ববাহ ইবনে আমর আনসারী বাদরী (রাঃ) বলেন, যখন সাদকার আয়াত অবতীর্ণ হল, তখন (সাদকা করার জন্য পারিশ্রমিকের বিনিময়ে) আমরা নিজের পিঠে বোঝা বহন করতাম (অর্থাৎ মুটে-মজুরের কাজ করতাম)। অতঃপর এক ব্যক্তি এল এবং প্রচুর জিনিস সাদকাহ করল। মুনাফিকরা বলল, এই ব্যক্তি রিয়াকার (লোককে দেখানোর জন্য দান করছে।) আর এক ব্যক্তি এল এবং সে এক সা’ (আড়াই কিলো) জিনিস দান করল। তারা বলল, এ (ক্ষুদ্র) এক সা’ দানের আল্লাহ মুখাপেক্ষী নন। অতঃপর এই আয়াত অবতীর্ণ হলঃ বিশ্বাসীদের মধ্যে স্বতঃস্ফূর্তভাবে যারা সাদকা দান করে এবং যারা নিজ পরিশ্রম ব্যতিরেকে কিছুই পায় না, তাদেরকে যারা দোষারোপ করে এবং উপহাস করে, আল্লাহ তাদেরকে উপহাস করেন এবং তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (সূরা তওবা ৭৯)।
عَنْ أَبيْ مَسعُودٍ عُقبَةَ بنِ عَمرٍو الأنصَارِي البَدرِي قَالَ : لَمَّا نَزَلَتْ آيةُ الصَّدَقَةِ كُنَّا نُحَامِلُ عَلَى ظُهُورِنَا فَجَاءَ رَجُلٌ فَتَصَدَّقَ بِشَيءٍ كَثيرٍ فَقَالُوْا : مُرَاءٍ وَجَاءَ رَجُلٌ آخَرُ فَتَصَدَّقَ بِصَاعٍ فقَالُوْا : إنَّ اللهَ لَغَنيٌّ عَن صَاعِ هَذَا فَنَزَلَتْ : الَّذِينَ يَلْمِزُونَ الْمُطَّوِّعِينَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ فِي الصَّدَقَاتِ وَالَّذِينَ لا يَجِدُونَ إِلاَّ جُهْدَهُمْ : مُتَّفَقٌ عَلَيهِ هذا لفظ البخاري
পরিচ্ছেদঃ মুজাহাদাহ বা দ্বীনের জন্য এবং আত্মা, শয়তান ও দ্বীনের শত্রুদের বিরুদ্ধে নিরলস চেষ্টা, টানা পরিশ্রম ও আজীবন সংগ্রাম করার গুরুত্ব
(৪২৫) আবূ যার্র জুন্দুব বিন জুনাদাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সুমহান প্রভু হতে বর্ণনা করেছেন, তিনি (আল্লাহ) বলেন, হে আমার বান্দারা! আমি অত্যাচারকে আমার নিজের জন্য হারাম করে দিয়েছি এবং আমি তা তোমাদের মাঝেও হারাম করলাম। সুতরাং তোমরাও একে অপরের প্রতি অত্যাচার করো না। হে আমার বান্দারা! তোমরা সকলেই পথভ্রষ্ট; কিন্তু সে নয় যাকে আমি সঠিক পথ দেখিয়েছি। অতএব তোমরা আমার নিকট সঠিক পথ চাও আমি তোমাদেরকে সঠিক পথ দেখাব। হে আমার বান্দারা! তোমরা সকলেই ক্ষুধার্ত; কিন্তু সে নয় যাকে আমি খাবার দিই। সুতরাং তোমরা আমার কাছে খাবার চাও, আমি তোমাদেরকে খাবার দেব।
হে আমার বান্দারা! তোমরা সকলেই বস্ত্রহীন; কিন্তু সে নয় যাকে আমি বস্ত্র দান করেছি। সুতরাং তোমরা আমার কাছে বস্ত্র চাও, আমি তোমাদেরকে বস্ত্রদান করব। হে আমার বান্দারা! তোমরা দিন-রাত পাপ করে থাক, আর আমি সমস্ত পাপ ক্ষমা করে থাকি। সুতরাং তোমরা আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর, আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দেব। হে আমার বান্দারা! তোমরা কখনো আমার অপকার করতে পারবে না এবং কখনো আমার উপকারও করতে পারবে না। হে আমার বান্দারা! যদি তোমাদের প্রথম ও শেষ মানুষ ও জ্বিন সকলেই তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় একজন পরহেযগার ব্যক্তির হৃদয়ের মত হৃদয়বান হয়ে যায়, তাহলে এটা আমার রাজত্বের কোন কিছু বৃদ্ধি করতে পারবে না।
হে আমার বান্দারা! যদি তোমাদের প্রথম ও শেষ মানুষ ও জ্বিন সকলেই তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় একজন পাপীর হৃদয়ের মত হৃদয়ের অধিকারী হয়ে যায়, তাহলে এটা আমার রাজত্বের কোন কিছুই কমাতে পারবে না। হে আমার বান্দারা! যদি তোমাদের প্রথম ও শেষ তোমাদের মানুষ ও জ্বিন সকলেই একটি খোলা ময়দানে একত্রিত হয়ে আমার কাছে প্রার্থনা করে, আর আমি তাদের প্রত্যেককে তার প্রার্থিত জিনিস দান করি, তাহলে (এ দান) আমার কাছে যে ভাণ্ডার আছে, তা হতে ততটাই কম করতে পারবে, যতটা সুচ কোন সমুদ্রে ডুবালে তার পানি কমিয়ে থাকে। হে আমার বান্দারা! আমি তোমাদের কর্মসমূহ তোমাদের জন্য গুনে রাখছি। অতঃপর আমি তোমাদেরকে তার পূর্ণ বিনিময় দেব। সুতরাং যে কল্যাণ পাবে, সে আল্লাহর প্রশংসা করুক। আর যে ব্যক্তি অন্য কিছু (অর্থাৎ অকল্যাণ) পাবে, সে যেন নিজেকেই তিরস্কার করে। (হাদীসের একজন বর্ণনাকারী) সাঈদ বলেন, আবূ ইদরীস (এই হাদীসের অন্য একজন বর্ণনাকারী) যখন এই হাদীস বর্ণনা করতেন, তখন হাঁটু গেড়ে বসে যেতেন।
عَنْ أَبيْ ذَرٍّ جُندُبِ بنِ جُنَادَةَ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ فِيمَا يَروِي عَن اللهِ تَبَارَكَ وَتَعَالَى أنَّهُ قَالَ يَا عِبَادي إنِّي حَرَّمْتُ الظُلْمَ عَلَى نَفْسي وَجَعَلْتُهُ بيْنَكم مُحَرَّماً فَلا تَظَالَمُوا يَا عِبَادي كُلُّكُمْ ضَالّ إلاَّ مَنْ هَدَيْتُهُ فَاستَهدُوني أهْدِكُمْ يَا عِبَادي كُلُّكُمْ جَائِعٌ إلاَّ مَنْ أطْعَمْتُهُ فَاستَطعِمُوني أُطْعِمْكُمْ يَا عِبَادي كُلُّكُمْ عَارٍ إلاَّ مَنْ كَسَوْتُهُ فاسْتَكْسُونِي أكْسُكُمْ يَا عِبَادي إنَّكُمْ تُخْطِئُونَ باللَّيلِ وَالنَّهارِ وَأَنَا أغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعاً فَاسْتَغْفِرُوني أغْفِرْ لَكُمْ يَا عِبَادي! إنَّكُمْ لَنْ تَبْلُغُوا ضُرِّي فَتَضُرُّوني وَلَنْ تَبْلُغُوا نَفعِي فَتَنْفَعُوني يَا عِبَادي لَوْ أنَّ أوَّلَكُمْ وَآخِرَكُمْ وَإِنْسَكُمْ وَجِنَّكُمْ كَانُوا عَلَى أتْقَى قَلْبِ رَجُلٍ وَاحِدٍ مِنْكُمْ مَا زَادَ ذلِكَ في مُلكي شيئاً يَا عِبَادي! لَوْ أنَّ أوَّلَكُمْ وَآخِرَكُمْ وَإِنْسَكُمْ وَجِنَّكُمْ كَانُوا عَلَى أفْجَرِ قَلْبِ رَجُلٍ وَاحِدٍ مِنْكُمْ مَا نَقَصَ ذلِكَ من مُلكي شيئاً يَا عِبَادي! لَوْ أنَّ أوَّلَكُمْ وَآخِرَكُمْ وَإِنْسَكُمْ وَجِنَّكُمْ قَامُوا في صَعِيدٍ وَاحِدٍ فَسَألُوني فَأعْطَيتُ كُلَّ إنْسَانٍ مَسْألَتَهُ مَا نَقَصَ ذلِكَ مِمَّا عَندِي إلاَّ كَمَا يَنْقصُ المِخْيَطُ إِذَا أُدْخِلَ البَحْرَ يَا عِبَادِي! إِنَّمَا هِيَ أعْمَالُكُمْ أُحْصِيهَا لَكُمْ ثُمَّ أُوَفِّيكُمْ إِيَّاهَا فَمَنْ وَجَدَ خَيراً فَلْيَحْمَدِ الله وَمَنْ وَجَدَ غَيْرَ ذلِكَ فَلا يَلُومَنَّ إلاَّ نَفْسَهُ قَالَ سعيد : كَانَ أَبُو إدريس إِذَا حَدَّثَ بهذا الحديث جَثا عَلَى رُكبتيه رواه مسلم
পরিচ্ছেদঃ মুজাহাদাহ বা দ্বীনের জন্য এবং আত্মা, শয়তান ও দ্বীনের শত্রুদের বিরুদ্ধে নিরলস চেষ্টা, টানা পরিশ্রম ও আজীবন সংগ্রাম করার গুরুত্ব
(৪২৬) উতবাহ বিন আব্দ (রাঃ) বলেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যদি কোন ব্যক্তিকে আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে তার জন্মদিন থেকে নিয়ে বৃদ্ধ হয়ে মৃত্যুদিন পর্যন্ত মাটির উপর উবুড় করে টেনে নিয়ে বেড়ানো হয়, তবুও কিয়ামতের দিন সে তা তুচ্ছ মনে করবে।
عَن عُتْبَةَ بْنِ عَبْدٍ قَالَ إِنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ قَالَ لَوْ أَنَّ رَجُلًا يُجَرُّ عَلَى وَجْهِهِ مِنْ يَوْمِ وُلِدَ إِلَى يَوْمِ يَمُوتُ هَرَمًا فِي مَرْضَاةِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ لَحَقَّرَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
পরিচ্ছেদঃ মুজাহাদাহ বা দ্বীনের জন্য এবং আত্মা, শয়তান ও দ্বীনের শত্রুদের বিরুদ্ধে নিরলস চেষ্টা, টানা পরিশ্রম ও আজীবন সংগ্রাম করার গুরুত্ব
(৪২৭) আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেশি বেশি বলতেন, হে হৃদয়সমূহকে বিবর্তনকারী! তুমি আমার হৃদয়কে তোমার দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখো। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমরা আপনার প্রতি এবং আপনি যা আনয়ন করেছেন তার প্রতি ঈমান এনেছি, আপনি কি আমাদের ব্যাপারে ভয় করেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, হৃদয়সমূহ আল্লাহর আঙ্গুলসমূহের মধ্যে দু’টি আঙ্গুলের মাঝে আছে। তিনি তা ইচ্ছামত বিবর্তন ক’রে থাকেন।[১]
বাদশা হিরাকল আবূ সুফিয়ানকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, মুহাম্মাদের সঙ্গীদের মধ্যে কেউ কি মুরতাদ হয়ে (ইসলাম ত্যাগ করে) ফিরে যাচ্ছে? আবূ সুফিয়ান বলেছিলেন, ’না।’ বাদশা বলেছিলেন, ’ঈমান এই রকমই; যখন তা উন্মুক্ত হৃদয়ে প্রবিষ্ট হয়, তখন তার প্রতি বিরাগ সৃষ্টি হয় না, তার মিষ্টতা হৃদয় ছেড়ে বের হতে চায় না, বরং তার প্রতি আনন্দ ও মুগ্ধতা বৃদ্ধি পায়।
[২] বুখারী ৪৫৫৩ প্রমুখ।
عَن أَنَسٍ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُكْثِرُ أَنْ يَقُولَ يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوبِ ثَبِّتْ قَلْبِي عَلَى دِينِكَ فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ آمَنَّا بِكَ وَبِمَا جِئْتَ بِهِ فَهَلْ تَخَافُ عَلَيْنَا ؟ قَالَ نَعَمْ إِنَّ
الْقُلُوبَ بَيْنَ إِصْبَعَيْنِ مِنْ أَصَابِعِ اللهِ يُقَلِّبُهَا كَيْفَ يَشَاءُ