পরিচ্ছেদঃ আল্লাহভীতি ও সংযমশীলতা
মহান আল্লাহ বলেছেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللهَ حَقَّ تُقَاتِهِ
অর্থাৎ, হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আল্লাহকে যথার্থভাবে ভয় কর। (সূরা আলে ইমরান ১০২ আয়াত)
উক্ত আয়াতে যথার্থভাবে ভয় করার ব্যাখ্যা রয়েছে এই আয়াতে; তিনি বলেন,
فَاتَّقُوا الله مَا اسْتَطَعْتُمْ
অর্থাৎ, তোমরা আল্লাহকে যথাসাধ্য ভয় কর। (সূরা তাগাবুন ১৬) তিনি আরো বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَقُولُوا قَوْلاً سَدِيداً
অর্থাৎ, হে বিশ্বাসীগণ আল্লাহকে ভয় কর এবং সঠিক কথা বল। (সূরা আহযাব ৭০)
তিনি অন্যত্র বলেন,
وَمَنْ يَتَّقِ اللهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجاً وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لا يَحْتَسِبُ
অর্থাৎ, আর যে কেউ আল্লাহকে ভয় করবে আল্লাহ তার নিষ্কৃতির পথ করে দিবেন এবং তাকে তার ধারণাতীত উৎস হতে রুযী দান করবেন। (সূরা ত্বালাক্ব ২-৩ আয়াত) তিনি আরো বলেন,
إِنْ تَتَّقُوا اللهَ يَجْعَلْ لَكُمْ فُرْقَاناً وَيُكَفِّرْ عَنكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ وَاللهُ ذُو الْفَضْلِ الْعَظِيم
অর্থাৎ, যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তাহলে তিনি তোমাদেরকে ন্যায়-অন্যায় পার্থক্যকারী শক্তি দেবেন, তোমাদের পাপ মোচন করবেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। আর আল্লাহ অতিশয় অনুগ্রহশীল। (সূরা আনফাল ২৯ আয়াত)
(আল্লাহভীতি, সংযমশীলতা ও তাক্বওয়া-পরহেযগারীর গুরুত্ব সম্বন্ধে আরো অনেক আয়াত রয়েছে। এ বিষয়ে উল্লেখযোগ্য হাদীসসমূহ নিম্নরূপ)
(১৮৭) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) বলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে প্রশ্ন করা হল যে, হে আল্লাহর রসূল! মানুষের মধ্যে সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তি কে? তিনি বললেন, তাদের মধ্যে যে সবচেয়ে আল্লাহ-ভীরু। অতঃপর তাঁরা (সাহাবীরা) বললেন, এ ব্যাপারে আমরা আপনাকে জিজ্ঞাসা করছি না। তিনি বললেন, তাহলে ইউসুফ (সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তি), যিনি স্বয়ং আল্লাহর নবী, তাঁর পিতা নবী, পিতামহও নবী এবং প্রপিতামহও নবী ও আল্লাহর বন্ধু। তাঁরা বললেন, এটাও আমাদের প্রশ্ন নয়। তিনি বললেন, তাহলে তোমরা কি আমাকে আরবের বংশাবলী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করছ? (তবে শোনো!) তাদের মধ্যে যারা জাহেলী যুগে ভাল, তারা ইসলামেও ভাল; যদি দ্বীনী জ্ঞান রাখে।
عَنْ أَبيْ هُرَيْرَةَ قَالَ : قِيلَ: يَا رَسُولَ الله مَنْ أكرمُ النَّاس؟ قَالَ أَتْقَاهُمْ فَقَالُوْا: لَيْسَ عَن هَذَا نَسألُكَ قَالَ فَيُوسُفُ نَبِيُّ اللهِ ابنُ نَبِيِّ اللهِ ابنِ نَبيِّ اللهِ ابنِ خليلِ اللهِ قَالُوْا : لَيْسَ عَن هَذَا نسألُكَ قَالَ فَعَن مَعَادِنِ العَرَبِ تَسْأَلُوني؟ خِيَارُهُمْ في الجَاهِليَّةِ خِيَارُهُمْ في الإِسْلامِ إِذَا فَقُهُوا مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
পরিচ্ছেদঃ আল্লাহভীতি ও সংযমশীলতা
(১৮৮) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, নিশ্চয় দুনিয়া মধুর ও সবুজ (সুন্দর আকর্ষণীয়)। আর নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে এর প্রতিনিধি নিয়োজিত করে দেখবেন যে, তোমরা কিভাবে কাজ করছ? অতএব তোমরা (যদি সফলকাম হতে চাও তাহলে) দুনিয়ার ধোঁকা থেকে বাঁচ এবং নারীর (ফিতনা থেকে) বাঁচ। কারণ, বানী ঈসরাইলের সর্বপ্রথম ফিতনা নারীকে কেন্দ্র করেই হয়েছিল।
عَنْ أَبيْ سَعِيدٍ الخُدْرِي عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ إنَّ الدُّنْيَا حُلْوَةٌ خَضِرةٌ وإنَّ اللهَ مُسْتَخْلِفُكُمْ فِيهَا فَيَنْظُرَ كَيفَ تَعْمَلُونَ فَاتَّقُوا الدُّنْيَا وَاتَّقُوا النِّسَاء فإنَّ أَوَّلَ فِتْنَةِ بَنِي إسرائيلَ كَانَتْ في النِّسَاءِ
পরিচ্ছেদঃ আল্লাহভীতি ও সংযমশীলতা
(১৮৯) ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দু’আ করতেন, আল্লাহুম্মা ইন্নী আসআলুকাল হুদা অত্তুক্বা, অলআফা-ফা অলগিনা। অর্থাৎ, হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকটে সৎপথ, সংযমশীলতা, চারিত্রিক পবিত্রতা ও অভাবশূন্যতা প্রার্থনা করছি।
عَنْ ابنِ مَسْعُوْدٍ أنَّ النَّبيّ ﷺ كَانَ يَقُولُ اَللّٰهُمَّ إنِّي أَسألُكَ الهُدَى وَالتُّقَى وَالعَفَافَ وَالغِنَى
পরিচ্ছেদঃ আল্লাহভীতি ও সংযমশীলতা
(১৯০) আবূ ত্বারীফ আদী ইবনে হাতেম ত্বাই (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে (এ কথা) বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি কোন বিষয়ের উপর কসম খাবে অতঃপর তার চেয়ে বেশী আল্লাহ-ভীতির বিষয় দেখবে, তার উচিত আল্লাহ-ভীতির বিষয় গ্রহণ করা।
عَنْ أَبيْ طَرِيفٍ عَدِيِّ بنِ حَاتِمٍ الطَّائيِّ قَالَ : سَمِعْتُ رسولَ الله ﷺ يَقُوْلُ مَنْ حَلَفَ عَلَى يَمِينٍ ثُمَّ رَأَى أتْقَى للهِ مِنْهَا فَليَأتِ التَّقْوَى رواه مسلم
পরিচ্ছেদঃ আল্লাহভীতি ও সংযমশীলতা
(১৯১) আবূ উমামাহ সুদাই বিন আজলান বাহেলী (রাঃ) বলেন যে, আমি বিদায় হজ্জের অবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ভাষণ দিতে শুনেছি, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তোমাদের পাঁচ ওয়াক্তের (ফরয) নামায পড়, তোমাদের রমযান মাসের রোযা রাখ, তোমাদের মালের যাকাত আদায় কর এবং তোমাদের নেতা ও শাসকগোষ্ঠীর আনুগত্য কর (যদি তাদের আদেশ শরীয়ত বিরোধী না হয়), তাহলে তোমরা তোমাদের প্রভুর জান্নাতে প্রবেশ করবে।
عَنْ أَبيْ أُمَامَةَ صُدَيّ بنِ عَجْلَانَ البَاهِلِيِّ قَالَ : سَمِعْتُ رَسُوْلَ الله ﷺ يَخْطُبُ في حجةِ الودَاعِ فَقَالَ اتَّقُوا الله وَصَلُّوا خَمْسَكُمْ وَصُومُوا شَهْرَكُمْ وَأَدُّوا زَكاةَ أَمْوَالِكُمْ وَأَطِيعُوا أُمَرَاءَكُمْ تَدْخُلُوا جَنَّةَ رَبِّكُمْ رواه الترمذي وَقالَ حديث حسن صحيح
পরিচ্ছেদঃ আল্লাহভীতি ও সংযমশীলতা
(১৯২) সা’দ বিন আবী অক্কাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সর্বশ্রেষ্ঠ দ্বীন হল পরহেযগারী।
عَنْ سَعْدٍ بْنِ أَبِيْ وَقَّاص قاَلَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ خَيْرُ دِينِكُمْ الوَرَعُ
পরিচ্ছেদঃ আল্লাহভীতি ও সংযমশীলতা
(১৯৩) মুআয বিন জাবাল (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয় আমার সবচেয়ে নিকটবর্তী মুত্তাক্বীনগণ; তারা যেই হোক, যেখানেই থাক।
عَن مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ إِنَّ أَوْلَى النَّاسِ بِي الْمُتَّقُونَ مَنْ كَانُوا وَحَيْثُ كَانُواِِِِ
পরিচ্ছেদঃ আল্লাহভীতি ও সংযমশীলতা
(১৯৪) উক্ত সাহাবী থেকেই বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমার পরিবারের লোক মনে করে, ওরা আমার বেশি ঘনিষ্ঠতম। অথচ আমার বেশি ঘনিষ্ঠ হল পরহেযগার লোকেরা, তারা যেই হোক, যেখানেই থাক।
وعَنه قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ ﷺ إِنَّ أَهْلَ بَيْتِي هَؤُلاءِ يَرَوْنَ أَنَّهُمْ أَوْلَى النَّاسِ وَلَيْسَ كَذَلِكَ إِنَّ أَوْلِيَائِيَ مِنْكُمُ الْمُتَّقُونَ
পরিচ্ছেদঃ আল্লাহভীতি ও সংযমশীলতা
(১৯৫) জাবের বিন আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায়ী হজ্জের ভাষণে বলেছেন, হে লোক সকল! শোনো, তোমাদের প্রতিপালক এক, তোমাদের পিতা এক। শোনো, আরবীর উপর অনারবীর এবং অনারবীর উপর আরবীর, কৃষ্ণকায়ের উপর শ্বেতকায়ের এবং শ্বেতকায়ের উপর কৃষ্ণকায়ের কোন শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা নেই। শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা আছে তো কেবল ’তাক্বওয়ার’ কারণেই।
عَنْ جَابِرٍ بْنِ عَبْدِ اللهِ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ ﷺ يَا أَيُّهَا النَّاسُ أَلَا إِنَّ رَبَّكُمْ وَاحِدٌ وَإِنَّ أَبَاكُمْ وَاحِدٌ أَلَا لَا فَضْلَ لِعَرَبِيٍّ عَلَى عَجَمِيٍّ وَلَا لِعَجَمِيٍّ عَلَى عَرَبِيٍّ وَلَا لِأَحْمَرَ عَلَى أَسْوَدَ وَلَا أَسْوَدَ عَلَى أَحْمَرَ إِلَّا بِالتَّقْوَى
পরিচ্ছেদঃ দৃঢ়-প্রত্যয় ও (আল্লাহর প্রতি) ভরসা
মহান আল্লাহ বলেন,
وَلَمَّا رَأى الْمُؤْمِنُونَ الأَحْزَابَ قَالُوْا هَذَا مَا وَعَدَنَا اللهُ وَرَسُولُهُ وَصَدَقَ اللهُ وَرَسُولُهُ وَمَا زَادَهُمْ إِلاَّ إِيمَاناً وَتَسْلِيماً
অর্থাৎ, বিশ্বাসীরা যখন শত্রুবাহিনীকে দেখল তখন ওরা বলে উঠল, আল্লাহ ও তাঁর রসূল তো আমাদেরকে এই প্রতিশ্রুতিই দিয়েছেন এবং আল্লাহ ও তাঁর রসূল সত্যই বলেছিলেন। এতে তো তাদের বিশ্বাস ও আনুগত্যই বৃদ্ধি পেল। (সূরা আহযাব ২২ আয়াত) তিনি অন্যত্রে বলেন,
الَّذِينَ قَالَ لَهُمُ النَّاسُ إِنَّ النَّاسَ قَدْ جَمَعُوا لَكُمْ فَاخْشَوْهُمْ فَزَادَهُمْ إِيمَاناً وَقَالُوْا حَسْبُنَا اللهُ وَنِعْمَ الْوَكِيلُ فَانْقَلَبُوا بِنِعْمَةٍ مِنَ اللهِ وَفَضْلٍ لَمْ يَمْسَسْهُمْ سُوءٌ وَاتَّبَعُوا رِضْوَانَ اللهِ وَاللهُ ذُو فَضْلٍ عَظِيمٍ
অর্থাৎ, যাদেরকে লোকেরা বলেছিল যে, তোমাদের বিরুদ্ধে লোক জমায়েত হয়েছে। সুতরাং তোমরা তাদেরকে ভয় কর। কিন্তু এ (কথা) তাদের বিশ্বাস দৃঢ়তর করেছিল এবং তারা বলেছিল, আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং তিনি উত্তম কর্মবিধায়ক। তারপর তারা আল্লাহর নিয়ামত ও অনুগ্রহসহ ফিরে এসেছিল, কোন অনিষ্ট তাদেরকে স্পর্শ করেনি এবং আল্লাহ যাতে সন্তুষ্ট হয় তারা তারই অনুসরণ করেছিল। আর আল্লাহ মহা অনুগ্রহশীল। (সূরা আলে ইমরান ১৭৩-১৭৪ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
وَتَوَكَّلْ عَلَى الْحَيِّ الَّذِي لا يَمُوتُ
অর্থাৎ, তুমি তাঁর উপর নির্ভর কর যিনি চিরঞ্জীব, যাঁর মৃত্যু নেই। (সূরা ফুরক্বান ৫৮ আয়াত)
وَعَلَى اللهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُؤْمِنُونَ
অর্থাৎ, মু’মিনদের উচিত, কেবল আল্লাহর উপরই নির্ভর করা। (সূরা ইব্রাহীম ১১ আয়াত) তিনি আরো বলেন,
فَإِذَا عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ عَلَى الله
অর্থাৎ, তুমি কোন সংকল্প গ্রহণ করলে আল্লাহর প্রতি নির্ভর কর। (নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর উপর নির্ভরশীলদেরকে ভালবাসেন।) (সূরা আলে ইমরান ১৫৯ আয়াত)। তিনি আল্লাহ বলেন,
وَمَنْ يَتَوَكَّلْ عَلَى اللهِ فَهُوَ حَسْبُهُ
অর্থাৎ, যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর নির্ভর করবে তার জন্য তিনিই যথেষ্ট হবেন। (সূরা ত্বালাক ৩)
إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ إِذَا ذُكِرَ اللهُ وَجِلَتْ قُلُوبُهُمْ وَإِذَا تُلِيَتْ عَلَيْهِمْ آيَاتُهُ زَادَتْهُمْ إِيمَاناً وَعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ
অর্থাৎ, বিশ্বাসী (মু’মিন) তো তারাই যাদের হৃদয় আল্লাহকে স্মরণ করার সময় ভীত হয় এবং যখন তাঁর আয়াত তাদের নিকট পাঠ করা হয়, তখন তা তাদের বিশ্বাস (ঈমান) বৃদ্ধি করে এবং তারা তাদের প্রতিপালকের উপরই ভরসা রাখে।
(একীন (দৃঢ়প্রত্যয়) ও তাওয়াক্কুল (আল্লাহর উপর ভরসা)র গুরুত্ব সম্বন্ধে আরো অনেক আয়াত রয়েছে। এ মর্মের হাদীসসমূহ নিম্নরূপ)
(১৯৬) ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমার কাছে সকল উম্মত পেশ করা হল। আমি দেখলাম, কোন নবীর সাথে কতিপয় (৩ থেকে ৭ জন অনুসারী) লোক রয়েছে। কোন নবীর সাথে এক অথবা দুইজন লোক রয়েছে। কোন নবীকে দেখলাম তাঁর সাথে কেউ নেই। ইতোমধ্যে বিরাট একটি জামাআত আমার সামনে পেশ করা হল। আমি মনে করলাম, এটিই আমার উম্মত। কিন্তু আমাকে বলা হল যে, ’এটি হল মূসা ও তাঁর উম্মতের জামাআত। কিন্তু আপনি অন্য দিগন্তে তাকান।’ অতঃপর তাকাতেই আরও একটি বিরাট জামাআত দেখতে পেলাম। আমাকে বলা হল যে, ’এটি হল আপনার উম্মত। আর তাদের সঙ্গে রয়েছে এমন ৭০ হাজার লোক, যারা হিসাব ও আযাব ছাড়াই জান্নাতে প্রবেশ করবে।
এ কথা বলে তিনি উঠে নিজ গৃহে প্রবেশ করলেন। এদিকে লোকেরা ঐ জান্নাতী লোকদের ব্যাপারে বিভিন্ন আলোচনা শুরু করে দিল, যারা বিনা হিসাব ও আযাবে জান্নাত প্রবেশ করবে। কেউ কেউ বলল, ’সম্ভবতঃ ঐ লোকেরা হল তারা, যারা আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবা।’ কিছু লোক বলল, ’বরং সম্ভবতঃ ওরা হল তারা, যারা ইসলামে জন্মগ্রহণ করেছে এবং আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করেনি।’ আরো অনেকে অনেক কিছু বলল। কিছু পরে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের নিকট বের হয়ে এসে বললেন, তোমরা কী ব্যাপারে আলোচনা করছ? তারা ব্যাপার খুলে বললে তিনি বললেন, ওরা হল তারা, যারা ঝাড়ফুঁক করে না, (একথাটি বুখারীতে নেই। তাছাড়া জিবরীল (আ.) ঝাড়ফুঁক করেছেন, ঝাড়ফুঁক করেছেন মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। পক্ষান্তরে অন্য বর্ণনায় উক্ত কথার স্থলে ’দাগায় না’ কথা এসেছে।) ঝাড়ফুঁক করায় না এবং কোন জিনিসকে অশুভ লক্ষণ মনে করে না, বরং তারা কেবল আল্লাহর প্রতি ভরসা রাখে।
এ কথা শুনে উক্কাশাহ ইবনে মিহসান উঠে দাঁড়ালেন এবং বললেন, ’(হে আল্লাহর রসূল!) আপনি আমার জন্য দু’আ করুন, যেন আল্লাহ আমাকে তাদের দলভুক্ত ক’রে দেন!’ তিনি বললেন, তুমি তাদের মধ্যে একজন। অতঃপর আর এক ব্যক্তি উঠে দাঁড়িয়ে বলল, ’আপনি আমার জন্যও দু’আ করুন, যেন আল্লাহ আমাকেও তাদের দলভুক্ত করে দেন।’ তিনি বললেন, উক্কাশাহ (এ ব্যাপারে) তোমার অগ্রগমন করেছে।
عَن ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ عُرِضَتْ عَلَيَّ الأُمَمُ فَرَأيْتُ النَّبيَّ ومَعَهُ الرُّهَيطُ وَالنَّبِيَّ وَمَعَهُ الرَّجُلُ وَالرَّجُلانِ وَالنبيَّ لَيْسَ مَعَهُ أَحَدٌ إِذْ رُفِعَ لي سَوَادٌ عَظيمٌ فَظَنَنْتُ أَنَّهُمْ أُمَّتِي فقيلَ لِي : هَذَا مُوسَى وَقَومُهُ ولكنِ انْظُرْ إِلَى الأُفُقِ فَنَظَرتُ فَإِذا سَوادٌ عَظِيمٌ فقيلَ لي : انْظُرْ إِلَى الأفُقِ الآخَرِ فَإِذَا سَوَادٌ عَظيمٌ فقيلَ لِي : هذِهِ أُمَّتُكَ وَمَعَهُمْ سَبْعُونَ ألفاً يَدْخُلُونَ الجَنَّةَ بِغَيرِ حِسَابٍ ولا عَذَابٍ ثُمَّ نَهَضَ فَدخَلَ مَنْزِلَهُ فَخَاضَ النَّاسُ في أُولئكَ الَّذِينَ يَدْخُلُونَ الجَنَّةَ بِغَيْرِ حِسَابٍ ولا عَذَابٍ فَقَالَ بَعْضُهُمْ : فَلَعَلَّهُمْ الَّذينَ صَحِبوا رسولَ الله ﷺ وَقالَ بعْضُهُمْ : فَلَعَلَّهُمْ الَّذِينَ وُلِدُوا في الإِسْلامِ فَلَمْ يُشْرِكُوا بِالله شَيئاً - وذَكَرُوا أشيَاءَ - فَخَرجَ عَلَيْهِمْ رَسُولُ الله ﷺ فَقَالَ مَا الَّذِي تَخُوضُونَ فِيهِ ؟ فَأَخْبَرُوهُ فقالَ هُمُ الَّذِينَ لاَ يَرْقُونَ وَلا يَسْتَرقُونَ وَلا يَتَطَيَّرُونَ وعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوكَّلُون فقامَ عُكَّاشَةُ ابنُ محصنٍ فَقَالَ : ادْعُ الله أنْ يَجْعَلني مِنْهُمْ فَقَالَ أنْتَ مِنْهُمْ ثُمَّ قَامَ رَجُلٌ آخَرُ فَقَالَ : ادْعُ اللهَ أنْ يَجْعَلنِي مِنْهُمْ فَقَالَ سَبَقَكَ بِهَا عُكَّاشَةُ مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
পরিচ্ছেদঃ দৃঢ়-প্রত্যয় ও (আল্লাহর প্রতি) ভরসা
(১৯৭) ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন, ’আল্লাহুম্মা লাকা আসলামতু অবিকা আ-মানতু অআলাইকা তাওয়াক্কালতু অইলাইকা আনাবতু অবিকা খা-স্বামতু। আল্লাহুম্মা আউযু বিইয্যাতিকা লা ইলা-হা ইল্লা আন্তা আন তুযিল্লানী, আন্তাল হাইয়্যুল্লাযী লা য়্যামূত, অলজিন্নু অলইন্সু য়্যামূতূন।’ অর্থাৎ, হে আল্লাহ! আমি নিজকে তোমার নিকট সমর্পণ করলাম, তোমার প্রতি ঈমান আনলাম, তোমারই উপর ভরসা করলাম। হে আল্লাহ! তোমারই দিকে প্রত্যাবর্তন করলাম, তোমারই ক্ষমতায় (শত্রুর বিরুদ্ধে) বিবাদ করলাম। হে আল্লাহ! তোমার ইযযতের অসীলায় আমি আশ্রয় চাচ্ছি—তুমি ছাড়া কেউ (সত্য) উপাস্য নেই—তুমি আমাকে পথভ্রষ্ট করো না। তুমি সেই চিরঞ্জীব, যে কখনো মরবে না এবং দানব ও মানবজাতি মৃত্যুবরণ করবে।
عَن ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا أيضاً : أنَّ رَسُولَ الله ﷺ كَانَ يَقُولُ اَللّٰهُمَّ لَكَ أَسْلَمْتُ وَبِكَ آمَنْتُ وَعَلَيْكَ تَوَكَّلْتُ وَإِلَيْكَ أنَبْتُ وَبِكَ خَاصَمْتُ اَللّٰهُمَّ أعُوذُ بعزَّتِكَ لاَ إلهَ إلاَّ أَنْتَ أنْ تُضِلَّنيأَنْتَ الحَيُّ الَّذِي لاَ يَمُوتُ وَالجِنُّ والإنْسُ يَمُوتُونَ مُتَّفَقٌ عَلَيهِ وهذا لفظ مسلم واختصره البخاري
পরিচ্ছেদঃ দৃঢ়-প্রত্যয় ও (আল্লাহর প্রতি) ভরসা
(১৯৮) ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতেই বর্ণিত, তিনি বলেন যে, ’হাসবুনাল্লাহু অনি’মাল অকীল’ কথাটি ইব্রাহীম (আঃ) তখন বলেছিলেন, যখন তাঁকে আগুনে নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটি তখন বলেছিলেন যখন লোকেরা বলেছিল যে, ’(কাফের) লোকেরা তোমাদের মুকাবিলার জন্য সমবেত হয়েছে; ফলে তোমরা তাদেরকে ভয় কর।’ কিন্তু এ কথা তাদের ঈমানকে বাড়িয়ে দিল এবং তারা বলল, হাসবুনাল্লাহ্ অনি’মাল অকীল। অর্থাৎ, আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং তিনিই উত্তম কর্মবিধায়ক।
অন্য এক বর্ণনায় ইবনে আব্বাস বলেন, আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার সময় ইব্রাহীম (আঃ) এর শেষ কথা ছিল, হাসবিয়াল্লাহ্ অনি’মাল অকীল।
عَن ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا أيضاً قَالَ : حَسْبُنَا اللهُ وَنِعْمَ الوَكِيلُ قَالَهَا إِبرَاهيمُ ﷺ حِينَ أُلقِيَ في النَّارِ وَقَالَها مُحَمَّدٌ ﷺ حِينَ قَالُوْا إنَّ النَّاسَ قَدْ جَمَعوا لَكُمْ فَاخْشَوْهُمْ فَزَادَهُمْ إيْماناً وَقَالُوْا : حَسْبُنَا اللهُ وَنعْمَ الوَكيلُ رواه البخاري وفي رواية لَهُ عَن ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ الله عَنهُما قَالَ : كَانَ آخِرَ قَولِ إبْرَاهِيمَ ﷺ حِينَ أُلْقِيَ في النَّارِ : حَسْبِي اللهُ وَنِعْمَ الوَكِيلُ
পরিচ্ছেদঃ দৃঢ়-প্রত্যয় ও (আল্লাহর প্রতি) ভরসা
(১৯৯) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, জান্নাতে এমন লোক প্রবেশ করবে, যাদের অন্তর হবে পাখীর অন্তরের মত।
(কারো নিকট এর অর্থ হল এই যে, তারা পাখীর মত আল্লাহর উপর নির্ভরশীল হবে। আর অনেকের নিকট এর অর্থ এই যে, (পাখীর অন্তরের মত) তাদের অন্তর নরম হবে।)
عَنْ أَبيْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ يَدْخُلُ الجَنَّةَ أَقْوامٌ أَفْئِدَتُهُمْ مِثلُ أَفْئِدَةِ الطَّيرِ رواه مسلم
পরিচ্ছেদঃ দৃঢ়-প্রত্যয় ও (আল্লাহর প্রতি) ভরসা
(২০০) জাবের (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে নাজ্দের (বর্তমানে রিয়ায অঞ্চল) দিকে জিহাদে রওনা হলেন। যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (বাড়ী) ফিরতে লাগলেন, তখন তিনিও তাঁর সঙ্গে ফিরলেন। (রাস্তায়) প্রচুর কাঁটাগাছ ভরা এক উপত্যকায় তাঁদের দুপুরের বিশ্রাম নেওয়ার সময় হল। সুতরাং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (বিশ্রামের জন্য) নেমে পড়লেন এবং (সাহাবীগণও) গাছের ছায়ার খোঁজে তাঁরা বিক্ষিপ্ত হয়ে গেলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি বাবলার গাছের নীচে অবতরণ করলেন এবং তাতে স্বীয় তরবারি ঝুলিয়ে দিলেন, আর আমরা অল্পক্ষণের জন্য ঘুমিয়ে গেলাম।
অতঃপর হঠাৎ (আমরা শুনলাম যে,) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে ডাকছেন। সেখানে দেখলাম যে, একজন বেদুঈন তাঁর কাছে রয়েছে। তিনি বললেন, আমার ঘুমের অবস্থায় এই ব্যক্তি আমার তরবারি খুলে আমার উপর ধরে আছে। অতঃপর আমি যখন জাগলাম, তখন তরবারিখানি তার হাতে খুলা অবস্থায় দেখলাম। (তারপর) সে আমাকে বলল, ’আমা হতে তোমাকে (আজ) কে বাঁচাবে?’ আমি বললাম, ’আল্লাহ!’ এ কথা আমি তিনবার বললাম। তিনি তাকে কোন শাস্তি দিলেন না। অতঃপর তিনি বসে গেলেন। (অথবা সে বসে গেল।)
অন্য এক বর্ণনায় আছে জাবের (রাঃ) বলেন যে, আমরা ’যাতুর রিক্বা’তে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ছিলাম। অতঃপর (ফিরার সময়) যখন আমরা ঘন ছায়াবিশিষ্ট একটি গাছের কাছে এলাম, তখন তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য ছেড়ে দিলাম। (তিনি বিশ্রাম করতে লাগলেন।) ইতিমধ্যে একজন মুশরিক এল। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর তরবারি গাছে ঝুলানো ছিল। তারপর সে তা (খাপ থেকে) বের করে বলল, ’তুমি আমাকে ভয় করছ?’ তিনি বললেন, না। সে বলল, ’তোমাকে আমার হাত থেকে কে বাঁচাবে?’ তিনি বললেন, আল্লাহ।
আবূ বকর ইসমাঈলীর ’সহীহ’ গ্রন্থের বর্ণনায় আছে, সে বলল, ’আমার হাত থেকে তোমাকে কে বাঁচাবে?’ তিনি বললেন, আল্লাহ। বর্ণনাকারী বলেন, তারপর তার হাত থেকে তরবারিটি পড়ে গেল। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তরবারিখানি তুলে নিয়ে বললেন, (এবার) তোমাকে আমার হাত থেকে কে বাঁচাবে? সে বলল, ’তুমি উত্তম তরবারিধারক হয়ে যাও।’ অতঃপর তিনি বললেন, তুমি কি সাক্ষ্য দিচ্ছ যে, আল্লাহ ছাড়া কেউ (সত্য) উপাস্য নেই এবং আমি আল্লাহর রসূল? সে বলল, ’না। কিন্তু আমি তোমার কাছে অঙ্গীকার করছি যে, তোমার বিরুদ্ধে কখনো লড়বো না। আর আমি সেই সম্প্রদায়েরও সাথ দেবো না, যারা তোমার বিরুদ্ধে লড়বে।’ সুতরাং তিনি তার পথ ছেড়ে দিলেন। অতঃপর সে তার সঙ্গীদের নিকট এসে বলল, ’আমি তোমাদের নিকটে সর্বোত্তম মানুষের কাছ থেকে এলাম।’
عَن جَابِرٍ أَنَّهُ غَزَا مَعَ النَّبِيِّ ﷺ قِبلَ نَجْدٍ فَلَمَّا قَفَلَ رَسُولُ الله ﷺ قَفَلَ معَهُمْ فَأَدْرَكَتْهُمُ القَائِلَةُ في وَادٍ كثير العِضَاه فَنَزَلَ رَسُول الله ﷺ وَتَفَرَّقَ النَّاسُ يَسْتَظِلُّونَ بالشَّجَرِ وَنَزَلَ رَسُولُ اللهِ ﷺ تَحتَ سَمُرَة فَعَلَّقَ بِهَا سَيفَهُ وَنِمْنَا نَوْمَةً فَإِذَا رسولُ الله ﷺ يَدْعونَا وَإِذَا عَندَهُ أعْرَابِيٌّ فَقَالَ إنَّ هَذَا اخْتَرَطَ عَلَيَّ سَيفِي وَأنَا نَائمٌ فَاسْتَيقَظْتُ وَهُوَ في يَدِهِ صَلتاً قَالَ : مَنْ يَمْنَعُكَ مِنِّي ؟ قُلْتُ : الله - ثلاثاً وَلَمْ يُعاقِبْهُ وَجَلَسَ مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
وفي رواية قَالَ جَابِرٍ : كُنَّا مَعَ رَسُولِ الله ﷺ بذَاتِ الرِّقَاعِ فَإِذَا أَتَيْنَا عَلَى شَجَرَةٍ ظَلِيلَةٍ تَرَكْنَاهَا لِرَسُولِ الله ﷺ فجاء رَجُلٌ مِنَ المُشْركينَ وَسَيفُ رَسُول الله ﷺ معَلَّقٌ بالشَّجَرَةِ فَاخْتَرطَهُ فَقَالَ: تَخَافُنِي ؟ قَالَ لاَ فَقَالَ : فَمَنْ يَمْنَعُكَ مِنِّي ؟ قَالَ الله
وَفي رِوَايَةِ أبي بَكْرٍ الإسمَاعِيلِي في صَحِيحِه قَالَ : مَنْ يَمْنَعُكَ مِنِّي ؟ قَالَ اللهُ قَالَ : فَسَقَطَ السيفُ مِنْ يَدهِ فَأخَذَ رسولُ الله ﷺ السَّيْفَ فَقَالَ مَنْ يَمْنَعُكَ مني ؟ فَقَالَ : كُنْ خَيرَ آخِذٍ فَقَالَ تَشْهَدُ أنْ لا إلهَ إلاَّ الله وَأَنِّي رَسُول الله ؟ قَالَ : لاَ وَلَكنِّي أُعَاهِدُكَ أنْ لا أُقَاتِلَكَ وَلاَ أَكُونَ مَعَ قَومٍ يُقَاتِلُونَكَ فَخَلَّى سَبيلَهُ فَأَتَى أصْحَابَهُ فَقَالَ : جئتُكُمْ مِنْ عَند خَيْرِ النَّاسِ
পরিচ্ছেদঃ দৃঢ়-প্রত্যয় ও (আল্লাহর প্রতি) ভরসা
(২০১) উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি যথাযোগ্য ভরসা রাখ, তবে তিনি তোমাদেরকে সেই মত রুযী দান করবেন যেমন পাখীদেরকে দান করে থাকেন। তারা সকালে ক্ষুধার্ত হয়ে (বাসা থেকে) বের হয় এবং সন্ধ্যায় উদর পূর্ণ ক’রে (বাসায়) ফিরে।
عَن عُمَرَ قَالَ : سَمِعتُ رَسُولَ الله ﷺ يَقُولُ لَوْ أَنَّكُمْ تَتَوَكَّلُونَ عَلَى اللهِ حَقَّ تَوَكُّلِهِ لَرَزَقَكُمْ كَمَا يَرْزُقُ الطَّيْرَ تَغْدُو خِمَاصاً وَتَرُوحُ بِطَاناً رواه الترمذي وَقالَ حديث حسن
পরিচ্ছেদঃ দৃঢ়-প্রত্যয় ও (আল্লাহর প্রতি) ভরসা
(২০২) বারা ইবনে আযেব (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, হে অমুক! তুমি যখন বিছানায় শোবে, তখন (এই দু’আ) পড়, যার অর্থঃ
হে আল্লাহ! আমি আমার আত্মা তোমাকে সঁপে দিলাম, আমার চেহারা তোমার দিকে ফিরিয়ে দিলাম, আমার ব্যাপার তোমাকে সঁপে দিলাম এবং আমার পিঠ তোমার দিকে লাগিয়ে দিলাম; তোমার (জান্নাতের) আগ্রহে ও (জাহান্নামের) ভয়ে। তুমি ছাড়া কোন আশ্রয়স্থল ও পরিত্রাণস্থল নেই। আমি সেই কিতাবের প্রতি ঈমান আনলাম যেটি তুমি অবতীর্ণ করেছ এবং সেই রসূলের প্রতি যাঁকে তুমি পাঠিয়েছ।
(অবশেষে তিনি বলেন,) অতঃপর তুমি যদি সেই রাতে মৃত্যুবরণ কর, তাহলে তুমি ইসলামের উপর মৃত্যুবরণ করবে। আর যদি তুমি সকালে ওঠ তবে, তুমি (এর) উপকার পাবে।’’
বারা ইবনে আযেব থেকেই বুখারী ও মুসলিমের অন্য বর্ণনায় আছে, তিনি বলেন যে, আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যখন তুমি (রাতে শোবার জন্য) বিছানায় যাবে, তখন তুমি নামাযের মত ওযূ কর। তারপর ডানপাশে শুয়ে যাও এবং (উপরোক্ত দু’আ) পড়। পুনরায় তিনি বললেন, তুমি উপরোক্ত দু’আটি তোমার শেষ কথা কর। (অর্থাৎ, এই দু’আ পড়ার পর অন্য দু’আ পড়বে না বা কোন কথা বলবে না)।
عَنْ أَبيْ عُمَارَةَ البَرَاءِ بنِ عَازِبٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ يَا فُلانُ إِذَا أَوَيْتَ إِلَى فِرَاشِكَ فَقُل : اَللّٰهُمَّ أسْلَمتُ نَفْسي إلَيْكَ وَوَجَّهتُ وَجْهِي إلَيْكَ وَفَوَّضتُ أَمْري إلَيْكَ وَأَلجأْتُ ظَهري إلَيْكَ رَغبَةً وَرَهبَةً إلَيْكَ لا مَلْجَأ وَلاَ مَنْجَا مِنْكَ إلاَّ إلَيْكَ آمنْتُ بِكِتَابِكَ الَّذِي أنْزَلْتَ وَنَبِيِّكَ الَّذِي أَرْسَلْتَ فَإِنَّكَ إِنْ مِتَّ مِنْ لَيلَتِكَ مِتَّ عَلَى الفِطْرَةِ وَإِنْ أصْبَحْتَ أَصَبْتَ خَيراً مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
وفي رواية في الصحيحين عَن البراءِ قَالَ : قَالَ لِي رَسُول الله ﷺإِذَا أَتَيْتَ مَضْجِعَكَ فَتَوَضَّأْ وُضُوءَكَ للصَّلاةِ ثُمَّ اضْطَجعْ عَلَى شِقِّكَ الأَيمَنِ وَقُلْ وذَكَرَ نَحْوَهُ ثُمَّ قَالَ : وَاجْعَلْهُنَّ آخِرَ مَا تَقُولُ
পরিচ্ছেদঃ দৃঢ়-প্রত্যয় ও (আল্লাহর প্রতি) ভরসা
(২০৩) আবূ বকর (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি মুশরিকদের পায়ের দিকে তাকালাম যখন আমরা (সওর) গুহায় (লুকিয়ে) ছিলাম এবং তারা আমাদের মাথার উপরে ছিল। অতঃপর আমি বললাম, ’হে আল্লাহর রসূল! যদি তাদের মধ্যে কেউ তার পায়ের নীচে তাকায়, তবে সে আমাদেরকে দেখে ফেলবে।’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আবূ বকর! সে দু’জন সম্পর্কে তোমার কী ধারণা, যাদের তৃতীয়জন আল্লাহ।
عَنْ أَبيْ بَكْرٍ الصِّدِّيقِ قَالَ : نَظَرتُ إِلَى أَقْدَامِ المُشْرِكينَ وَنَحنُ في الغَارِ وَهُمْ عَلَى رُؤُوسِنا فَقُلتُ : يَا رَسُولَ الله لَوْ أَنَّ أَحَدَهُمْ نَظَرَ تَحْتَ قَدَمَيهِ لأَبْصَرَنَا فَقَالَ مَا ظَنُّكَ يَا أَبا بَكرٍ بِاثنَيْنِ اللهُ ثَالِثُهُمَا مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
পরিচ্ছেদঃ দৃঢ়-প্রত্যয় ও (আল্লাহর প্রতি) ভরসা
(২০৪) উম্মে সালামা (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বাড়ি থেকে বের হতেন, তখন (এই দু’আ) বলতেন—যার অর্থ, আল্লাহর নাম নিয়ে (বের হলাম), আমি আল্লাহর উপর ভরসা করলাম। হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি, আমি ভ্রষ্ট হই বা আমাকে ভ্রষ্ট করা হয়, আমার পদস্খলন হয় বা পদস্খলন করানো হয়, আমি অত্যাচারী হই অথবা অত্যাচারিত হই অথবা আমি মূর্খামি করি অথবা আমার প্রতি মূর্খামি করা হয়—এসব থেকে।
عَن أمِّ سَلَمَةَ رَضِي الله عَنها : أَنَّ النَّبيّ ﷺ كَانَ إِذَا خَرَجَ مِنْ بَيتِهِ قَالَ بِسْمِ اللهِ تَوَكَّلتُ عَلَى اللهِ اَللّٰهُمَّ إِنِّي أعُوذُ بِكَ أنْ أضِلَّ أَوْ أُضَلَّ أَوْ أَزِلَّ أَوْ أُزَلَّ أَوْ أظْلِمَ أَوْ أُظْلَمَ أَوْ أجْهَلَ أَوْ يُجْهَلَ عَلَيَّ
পরিচ্ছেদঃ দৃঢ়-প্রত্যয় ও (আল্লাহর প্রতি) ভরসা
(২০৫) আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি স্বীয় গৃহ থেকে বের হওয়ার সময় বলে, ’বিসমিল্লাহি তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহ, অলা হাওলা অলা ক্বুউওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।’ (অর্থাৎ, আল্লাহর উপর ভরসা করলাম। আল্লাহর সাহায্য ছাড়া পাপ থেকে ফিরা এবং পুণ্য করা সম্ভব নয়।) তাকে বলা হয়, ’তোমাকে সঠিক পথ দেওয়া হল, তোমাকে যথেষ্টতা দান করা হল এবং তোমাকে বাঁচিয়ে নেওয়া হল।’ আর শয়তান তার নিকট থেকে দূরে সরে যায়।
তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। আবূ দাউদ এই শব্দগুলি বাড়তি বর্ণনা করেছেন, ’’ফলে শয়তান অন্য শয়তানকে বলে যে, ’ঐ ব্যক্তির উপর তোমার কিরূপে কর্তৃত্ব চলবে, যাকে সঠিক পথ প্রদর্শন করা হয়েছে, যাকে যথেষ্টতা দান করা হয়েছে এবং যাকে (সকল অমঙ্গল) থেকে বাঁচানো হয়েছে?’
عَن أنس قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ مَنْ قَالَ يَعَني : إِذَا خَرَجَ مِنْ بَيتِهِ : بِسمِ اللهِ تَوَكَّلْتُ عَلَى اللهِ وَلا حَولَ وَلا قُوَّةَ إلاَّ باللهِ يُقالُ لَهُ : هُدِيتَ وَكُفِيتَ وَوُقِيتَ وَتَنَحَّى عَنهُ الشَّيطَانُ رواه أبو داود والترمذي والنسائي وغيرهم وَقالَ الترمذي حديث حسن زاد أبو داود فَيَقُولُ يَعَني : اَلشَّيْطَانُ لِشَيْطَانٍ آخَر : كَيفَ لَكَ بِرجلٍ قَدْ هُدِيَ وَكُفِيَ وَوُقِيَ ؟
পরিচ্ছেদঃ দৃঢ়-প্রত্যয় ও (আল্লাহর প্রতি) ভরসা
(২০৬) আনাস (রাঃ) বলেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে দুই ভাই ছিল। তাদের মধ্যে একজন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে (দ্বীন শিক্ষার জন্য) আসত এবং আর একজন হাতের কোন কাজ করে উপার্জন করত। অতঃপর উপার্জনশীল (ভাইটা) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে তার (শিক্ষার্থী) ভাইয়ের (কাজ না করার) অভিযোগ করল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সম্ভবতঃ তোমাকে তার কারণেই রুযী দেওয়া হচ্ছে।
وَعَن أَنَسٍ قَالَ : كَانَ أَخَوانِ عَلَى عَهدِ النَّبيّ ﷺ وَكَانَ أحَدُهُمَا يَأتِي النَّبيَّ ﷺ وَالآخَرُ يَحْتَرِفُ فَشَكَا المُحْتَرِفُ أخَاهُ لِلنَّبي ﷺ فَقَالَ لَعَلَّكَ تُرْزَقُ بِهِ رواه الترمذي بإسناد صحيحٍ عَلَى شرطِ مسلم