পরিচ্ছেদঃ ইবাদতে মধ্যমপন্থা অবলম্বন
আল্লাহ তা’আলা বলেন,
طه مَا أَنْزَلْنَا عَلَيْكَ الْقُرْآنَ لِتَشْقَى
অর্থাৎ, ত্বা-হা-। তোমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য আমি তোমার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ করিনি। (সূরা ত্বাহা ১-২ আয়াত) তিনি আরো বলেন,
يُرِيدُ اللهُ بِكُمُ الْيُسْرَ وَلا يُرِيدُ بِكُمُ الْعُسْرَ
অর্থাৎ, আল্লাহ তা’আলা তোমাদের জন্য সহজ করতে চান, তোমাদের জন্য কঠিনতা তাঁর কাম্য নয়। (সূরা বাক্বারাহ ১৮৫ আয়াত)
(৩৯৪) আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর নিকট গেলেন, তখন এক মহিলা তাঁর কাছে (বসে) ছিল। তিনি বললেন, এটি কে? আয়েশা (রাঃ) বললেন, অমুক মহিলা, যে প্রচুর নামায পড়ে। তিনি বললেন, থামো! তোমরা সাধ্যমত আমল কর। আল্লাহর কসম! আল্লাহ ক্লান্ত হন না, যতক্ষণ না তোমরা ক্লান্ত হয়ে পড়। আর সেই আমল তাঁর নিকট প্রিয়তম ছিল, যেটা তার আমলকারী লাগাতার করে থাকে।
[’আল্লাহ ক্লান্ত হন না’ এ কথার অর্থ এই যে, তিনি সওয়াব দিতে ক্লান্ত হন না। অর্থাৎ, তিনি তোমাদেরকে সওয়াব ও তোমাদের আমলের প্রতিদান দেওয়া বন্ধ করেন না এবং তোমাদের সাথে ক্লান্তের মত ব্যবহার করেন না; যে পর্যন্ত না তোমরা নিজেরাই ক্লান্ত হয়ে আমল ত্যাগ করে বস। সুতরাং তোমাদের উচিত, তোমরা সেই আমল গ্রহণ করবে, যা একটানা করে যেতে সক্ষম হবে। যাতে তাঁর সওয়াব ও তাঁর অনুগ্রহ তোমাদের জন্য নিরবচ্ছিন্ন থাকে।]
وعَن عائشة رضي الله عَنها : أنَّ النَّبيّ ﷺ دخل عَلَيْهَا وعَندها امرأةٌ قَالَ مَنْ هذِهِ ؟ قَالَتْ : هذِهِ فُلاَنَةٌ تَذْكُرُ مِنْ صَلاتِهَا قَالَ مَهْ عَلَيْكُمْ بِمَا تُطِيقُونَ فَواللهِ لاَ يَمَلُّ اللهُ حَتَّى تَمَلُّوا وكَانَ أَحَبُّ الدِّينِ إِلَيْهِ مَا دَاوَمَ صَاحِبُهُ عَلَيهِ مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
পরিচ্ছেদঃ ইবাদতে মধ্যমপন্থা অবলম্বন
(৩৯৫) আনাস (রাঃ) বলেন যে, তিন ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রীদের বাসায় এলেন। তাঁরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইবাদত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। অতঃপর যখন তাঁদেরকে এর সংবাদ দেওয়া হল তখন তাঁরা যেন তা অল্প মনে করলেন এবং বললেন, আমাদের সঙ্গে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর তুলনা কোথায়? তাঁর তো আগের ও পরের সমস্ত গোনাহ মোচন ক’রে দেওয়া হয়েছে। (সেহেতু আমাদের তাঁর চেয়ে বেশী ইবাদত করা প্রয়োজন)।
সুতরাং তাঁদের মধ্যে একজন বললেন, আমি সারা জীবন রাতভর নামায পড়ব। দ্বিতীয়জন বললেন, আমি সারা জীবন রোযা রাখব, কখনো রোযা ছাড়ব না। তৃতীয়জন বললেন, আমি নারী থেকে দূরে থাকব, জীবনভর বিয়েই করব না।
অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের নিকট এলেন এবং বললেন, তোমরা এই এই কথা বলেছ? শোনো! আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের চেয়ে বেশী আল্লাহকে ভয় করি, তার ভয় অন্তরে তোমাদের চেয়ে বেশী রাখি। কিন্তু আমি (নফল) রোযা রাখি এবং রোযা ছেড়েও দিই, নামায পড়ি এবং নিদ্রাও যাই। আর নারীদের বিয়েও করি। সুতরাং যে আমার সুন্নত হতে মুখ ফিরিয়ে নিবে, সে আমার দলভুক্ত নয়।
وَعَن أَنَسٍ قَالَ : جَاءَ ثَلاثَةُ رَهْطٍ إِلَى بُيُوتِ أزْوَاجِ النَّبيّ ﷺ يَسْأَلُونَ عَن عِبَادَةِ النَّبيّ ﷺ فَلَمَّا أُخْبِروا كَأَنَّهُمْ تَقَالُّوهَا وَقَالُوْا : أَيْنَ نَحْنُ مِنَ النَّبيِّ ﷺ وَقدْ غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ وَمَا تَأخَّرَ قَالَ أحدُهُم : أمَّا أنا فَأُصَلِّي اللَّيلَ أبداً وَقالَ الآخَرُ : وَأَنَا أصُومُ الدَّهْرَ أَبَداً وَلا أُفْطِرُ وَقالَ الآخَر : وَأَنا أعْتَزِلُ النِّسَاءَ فَلاَ أتَزَوَّجُ أبَداً فَجَاءَ رَسُولُ الله ﷺ إلَيهِم فَقَالَ أنْتُمُ الَّذِينَ قُلْتُمْ كَذَا وَكَذَا ؟ أَمَا واللهِ إنِّي لأخْشَاكُمْ للهِ وَأَتْقَاكُمْ لَهُ لَكِنِّي أصُومُ وَأُفْطِرُ وأُصَلِّي وَأَرْقُدُ وَأَتَزَوَّجُ النِّساءَ فَمَنْ رَغِبَ عَن سُنَّتِي فَلَيْسَ مِنِّي مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
পরিচ্ছেদঃ ইবাদতে মধ্যমপন্থা অবলম্বন
(৩৯৬) ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, দ্বীনের ব্যাপারে নিজের পক্ষ থেকে কঠোরতা অবলম্বনকারীরা ধ্বংস হয়ে গেল। (অথবা ধ্বংস হোক।) এ কথা তিনি তিনবার বললেন।
وَعَن ابنِ مَسْعُوْدٍ أنَّ النَّبيّ ﷺ قَالَ هَلَكَ المُتَنَطِّعُونَ قالها ثَلاثاً رواه مسلم
পরিচ্ছেদঃ ইবাদতে মধ্যমপন্থা অবলম্বন
(৩৯৭) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, নিশ্চয় দ্বীন সহজ। যে ব্যক্তি অহেতুক দ্বীনকে কঠিন বানাবে, তার উপর দ্বীন জয়ী হয়ে যাবে। (অর্থাৎ মানুষ পরাজিত হয়ে আমল ছেড়ে দিবে।) সুতরাং তোমরা সোজা পথে থাক এবং (ইবাদতে) মধ্যমপন্থা অবলম্বন কর। তোমরা সুসংবাদ নাও। আর সকাল-সন্ধ্যা ও রাতের কিছু অংশে ইবাদত করার মাধ্যমে সাহায্য নাও।
বুখারীর অন্য এক বর্ণনায় আছে, তোমরা সরল পথে থাকো, মধ্যমপন্থা অবলম্বন কর, সকাল-সন্ধ্যায় চল (ইবাদত কর) এবং রাতের কিছু অংশে। আর তোমরা মধ্যমপন্থা অবলম্বন কর, মধ্যমপন্থা অবলম্বন কর, তাহলেই গন্তব্যস্থলে পৌঁছে যাবে।
অর্থাৎ, অবসর সময়ে উদ্যমশীল মনে আল্লাহর ইবাদত কর; যে সময়ে ইবাদত করে তৃপ্তি পাওয়া যায় এবং তা মনে ভারী বা বিরক্তিকর না হয়। আর তাহলেই অভীষ্টলাভ করতে পারবে। যেমন বুদ্ধিমান মুসাফির উক্ত সময়ে সফর করে এবং যথাসময়ে সে ও তার সওয়ারী বিশ্রাম গ্রহণ করে। (না ধীরে চলে এবং না তাড়াহুড়া করে।) ফলে সে বিনা কষ্টে যথা সময়ে গন্তব্যস্থলে পৌঁছে যায়।
عَنْ أَبيْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ إنَّ الدِّينَ يُسْرٌ وَلَنْ يُشَادَّ الدِّيْنُ إلاَّ غَلَبَهُ فَسَدِّدُوا وَقَارِبُوا وَأبْشِرُوا وَاسْتَعِينُوا بِالغَدْوَةِ وَالرَّوْحَةِ وَشَيءٍ مِنَ الدُّلْجَةِ رواه البخاري
وفي رواية لَهُ سَدِّدُوا وَقَارِبُوا وَاغْدُوا وَرُوحُوا وَشَيءٌ مِنَ الدُّلْجَةِ القَصْدَ القَصْدَ تَبْلُغُوا
পরিচ্ছেদঃ ইবাদতে মধ্যমপন্থা অবলম্বন
(৩৯৮) আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে প্রবেশ করলেন। হঠাৎ দেখলেন যে, একটি দড়ি দুই স্তম্ভের মাঝে লম্বা করে বাঁধা রয়েছে। তারপর তিনি বললেন, এই দড়িটা কী (জন্য)? লোকেরা বলল, এটি যয়নাবের দড়ি। যখন তিনি (নামায পড়তে পড়তে) ক্লান্ত হয়ে পড়েন, তখন এটার সঙ্গে ঝুলে যান! নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এটিকে খুলে ফেল। তোমাদের মধ্যে (যে নামায পড়বে) তার উচিত, সে যেন মনে স্ফৃর্তি থাকাকালে নামায পড়ে। তারপর সে যখন ক্লান্ত হয়ে পড়বে, তখন সে যেন শুয়ে যায়।
وَعَن أَنَسٍ قَالَ : دَخَلَ النَّبيُّ ﷺ المَسْجِدَ فَإِذَا حَبْلٌ مَمْدُودٌ بَيْنَ السَّارِيَتَيْنِ فَقَالَ مَا هَذَا الحَبْلُ ؟ قَالُوْا : هَذَا حَبْلٌ لِزَيْنَبَ فَإِذَا فَتَرَتْ تَعَلَّقَتْ بِهِ فَقَالَ النَّبِيُّ ﷺ حُلُّوهُ لِيُصلِّ أَحَدُكُمْ نَشَاطَهُ فَإِذَا فَتَرَ فَلْيَرْقُدْ مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
পরিচ্ছেদঃ ইবাদতে মধ্যমপন্থা অবলম্বন
(৩৯৯) আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যখন নামায পড়া অবস্থায় তোমাদের কারো তন্দ্রা আসবে, তখন তাকে ঘুমিয়ে যাওয়া উচিত, যতক্ষণ না তার ঘুম চলে যাবে। কারণ, তোমাদের কেউ যদি তন্দ্রা অবস্থায় নামায পড়ে, তাহলে সে অনুভব করতে পারবে না যে, সম্ভবতঃ সে ক্ষমা প্রার্থনা করতে গিয়ে প্রকৃতপক্ষে নিজেকে গালি দিচ্ছে।
وَعَن عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا : أنَّ رَسُولَ الله ﷺ قَالَ إِذَا نَعَسَ أَحَدُكُمْ وَهُوَ يُصَلِّي فَلْيَرْقُدْ حَتَّى يَذْهَبَ عَنهُ النَّومُ فإِنَّ أحدكم إِذَا صَلَّى وَهُوَ نَاعِسٌ لا يَدْرِي لَعَلَّهُ يَذْهَبُ يَسْتَغْفِرُ فَيَسُبُّ نَفْسَهُ مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
পরিচ্ছেদঃ ইবাদতে মধ্যমপন্থা অবলম্বন
(৪০০) আবূ আব্দুল্লাহ জাবের ইবনে সামুরাহ (রাঃ) বলেন যে, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে নামায পড়তাম। সুতরাং তাঁর নামাযও মধ্যম হত এবং তাঁর খুৎবাও মধ্যম হত।
وَعَنْ أَبيْ عَبدِ اللهِ جَابِرٍ بنِ سَمُرَةَ رَضِيَ الله عَنهُما قَالَ : كُنْتُ أصَلِّي مَعَ النَّبيِّ ﷺ الصَّلَوَاتِ فَكَانتْ صَلاتُهُ قَصْداً وَخُطْبَتُهُ قَصْداً رواه مسلم
পরিচ্ছেদঃ ইবাদতে মধ্যমপন্থা অবলম্বন
(৪০১) আবূ জুহাইফা অহব ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (হিজরতের পর মদীনায়) সালমান ও আবূ দারদার মাঝে ভ্রাতৃত্ব স্থাপন করলেন। অতঃপর সালমান (একদিন তাঁর দ্বীনী ভাই) আবূ দারদার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে (তাঁর বাড়ী) গেলেন। তিনি (আবূ দারদার স্ত্রী) উম্মে দারদাকে দেখলেন, তিনি মলিন কাপড় পরে আছেন। সুতরাং তিনি তাঁকে বললেন, তোমার এ অবস্থা কেন? তিনি বললেন, তোমার ভাই আবূ দারদার দুনিয়ার কোন প্রয়োজনই নেই। (ইতিমধ্যে) আবূ দারদাও এসে গেলেন এবং তিনি তাঁর জন্য খাবার তৈরী করলেন। অতঃপর তাঁকে বললেন, তুমি খাও। কেননা, আমি রোযা রেখেছি। তিনি বললেন, যতক্ষণ না তুমি খাবে, আমি খাব না। সুতরাং আবূ দারদাও (নফল রোযা ভেঙ্গে দিয়ে তাঁর সঙ্গে) খেলেন।
অতঃপর যখন রাত এল, তখন (শুরু রাতেই) আবূ দারদা নফল নামায পড়তে গেলেন। সালমান তাঁকে বললেন, (এখন) শুয়ে যাও। সুতরাং তিনি শুয়ে গেলেন। কিছুক্ষণ পর আবার তিনি (বিছানা থেকে) উঠে নফল নামায পড়তে গেলেন। আবার সালমান বললেন, শুয়ে যাও। অতঃপর যখন রাতের শেষাংশ এসে পৌঁছল, তখন তিনি বললেন, এবার উঠে নফল নামায পড়। সুতরাং তাঁরা দু’জনে একত্রে নামায পড়লেন। অতঃপর সালমান তাঁকে বললেন, নিশ্চয় তোমার উপর তোমার প্রভুর অধিকার রয়েছে। তোমার প্রতি তোমার আত্মারও অধিকার আছে এবং তোমার প্রতি তোমার পরিবারেরও অধিকার রয়েছে। অতএব তুমি প্রত্যেক অধিকারীকে তার অধিকার প্রদান কর। অতঃপর তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে তাঁকে সমস্ত ঘটনা শুনালেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সালমান ঠিকই বলেছে।
وعَنْ أَبيْ جُحَيْفَة وَهْب بنِ عَبدِ اللهِ قَالَ : آخَى النَّبيُّ ﷺ بَيْنَ سَلْمَانَ وَأَبي الدَّرْداءِ فَزارَ سَلْمَانُ أَبَا الدَّرداءِ فَرَأى أُمَّ الدَّرداءِ مُتَبَذِّلَةً فَقَالَ : مَا شَأنُكِ ؟ قَالَتْ : أخُوكَ أَبُو الدَّردَاءِ لَيْسَ لَهُ حَاجَةٌ في الدُّنْيَا فَجاءَ أَبُو الدَّرْدَاءِ فَصَنَعَ لَهُ طَعَاماً فَقَالَ لَهُ : كُلْ فَإِنِّي صَائِمٌ قَالَ : مَا أنا بِآكِلٍ حَتَّى تَأكُلَ فَأَكَلَ فَلَمَّا كَانَ اللَّيلُ ذَهَبَ أَبُو الدَّردَاءِ يَقُومُ فَقَالَ لَهُ : نَمْ فَنَامَ ثُمَّ ذَهَبَ يَقُومُ فَقَالَ لَهُ : نَمْ فَلَمَّا كَانَ مِن آخِر اللَّيلِ قَالَ سَلْمَانُ : قُمِ الآن فَصَلَّيَا جَمِيعاً فَقَالَ لَهُ سَلْمَانُ: إنَّ لِرَبِّكَ عَلَيْكَ حَقّاً وَإِنَّ لِنَفْسِكَ عَلَيكَ حَقّاً وَلأَهْلِكَ عَلَيكَ حَقّاً فَأعْطِ كُلَّ ذِي حَقٍّ حَقَّهُ فَأَتَى النَّبيَّ ﷺ فَذَكَرَ ذلِكَ لَهُ فَقَالَ النَّبِيُّ ﷺ صَدَقَ سَلْمَانُ رواه البخار
পরিচ্ছেদঃ ইবাদতে মধ্যমপন্থা অবলম্বন
(৪০২) আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আ’স (রাঃ) বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আমার ব্যাপারে সংবাদ দেওয়া হল যে, আমি বলছি, আল্লাহর কসম! আমি যতদিন বেঁচে থাকব ততদিন দিনে রোযা রাখব এবং রাতে নফল নামায পড়ব। সুতরাং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, তুমি এ কথা বলছ? আমি তাঁকে বললাম, হে আল্লাহর রসূল! নিঃসন্দেহে আমি এ কথা বলেছি, আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হোক। তিনি বললেন, তুমি এর সাধ্য রাখ না। অতএব তুমি রোযা রাখ এবং (কখনো) ছেড়েও দাও। অনুরূপ (রাতের কিছু অংশে) ঘুমাও এবং (কিছু অংশে) নফল নামায পড় ও মাসে তিন দিন রোযা রাখ। কারণ, নেকীর প্রতিদান দশগুণ রয়েছে। তোমার এই রোযা জীবনভর রোযা রাখার মত হয়ে যাবে। আমি বললাম, আমি এর অধিক করার শক্তি রাখি। তিনি বললেন, তাহলে তুমি একদিন রোযা রাখ, আর দু’দিন রোযা ত্যাগ কর। আমি বললাম, আমি এর বেশী করার শক্তি রাখি। তিনি বললেন, তাহলে একদিন রোযা রাখ, আর একদিন রোযা ছাড়। এ হল দাঊদ (আঃ)-এর রোযা। আর এ হল ভারসাম্যপূর্ণ রোযা।
অন্য এক বর্ণনায় আছে যে, এটা সর্বোত্তম রোযা। কিন্তু আমি বললাম, আমি এর চেয়ে বেশী (রোযা) রাখার ক্ষমতা রাখি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এর চেয়ে উত্তম রোযা আর নেই। (আব্দুল্লাহ বলেন,) যদি আমি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নির্দেশ অনুযায়ী (প্রত্যেক মাসে) তিন দিন রোযা রাখার পদ্ধতি গ্রহণ করতাম, তাহলে তা আমার নিকট আমার পরিবার ও সম্পদ অপেক্ষা প্রিয় হত।
অন্য এক বর্ণনায় আছে, (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন,) আমি কি এই সংবাদ পাইনি যে, তুমি দিনে রোযা রাখছ এবং রাতে নফল নামায পড়ছ? আমি বললাম, সম্পূর্ণ সত্য, হে আল্লাহর রসূল! তিনি বললেন, পুনরায় এ কাজ করো না। তুমি রোযাও রাখ এবং (কখনো) ছেড়েও দাও। নিদ্রাও যাও এবং নামাযও পড়। কারণ তোমার উপর তোমার দেহের অধিকার আছে। তোমার উপর তোমার চক্ষুদ্বয়ের অধিকার আছে। তোমার উপর তোমার স্ত্রীর অধিকার আছে এবং তোমার উপর তোমার অতিথির অধিকার আছে। তোমার জন্য প্রত্যেক মাসে তিন দিন রোযা রাখা যথেষ্ট।
কেননা, প্রত্যেক নেকীর পরিবর্তে তোমার জন্য দশটি নেকী রয়েছে আর এটা জীবনভর রোযা রাখার মত। কিন্তু আমি কঠোরতা অবলম্বন করলাম। যার ফলে আমার উপর কঠিন করে দেওয়া হল। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমি সামর্থ্য রাখি। তিনি বললেন, তুমি আল্লাহর নবী দাউদ (আঃ)-এর রোযা রাখ এবং তার চেয়ে বেশী করো না। আমি বললাম, দাউদের রোযা কেমন ছিল? তিনি বললেন, অর্ধেক জীবন। অতঃপর আব্দুল্লাহ বৃদ্ধ হয়ে যাওয়ার পর বলতেন, হায়! যদি আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুমতি গ্রহণ করতাম (তাহলে কতই না ভাল হত)!
আর এক বর্ণনায় আছে, (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন,) আমি সংবাদ পেয়েছি যে, তুমি সর্বদা রোযা রাখছ এবং প্রত্যহ রাতে কুরআন (খতম) পড়ছ। আমি বললাম, (সংবাদ) সত্যই, হে আল্লাহর রসূল! কিন্তু এতে আমার উদ্দেশ্য ভাল ছাড়া অন্য কিছু নয়। তিনি বললেন, তুমি আল্লাহর নবী দাউদের রোযা রাখ। কারণ, তিনি লোকের মধ্যে সবচেয়ে বেশী ইবাদতগুযার ছিলেন। আর প্রত্যেক মাসে (একবার কুরআন খতম) পড়। আমি বললাম, হে আল্লাহর নবী! আমি এর অধিক করার শক্তি রাখি। তিনি বললেন, তাহলে তুমি কুড়ি দিনে (কুরআন খতম) পড়। আমি বললাম, হে আল্লাহর নবী! আমি এর থেকে বেশী করার সামর্থ্য রাখি। তিনি বললেন, তাহলে তুমি প্রত্যেক দশদিনে (কুরআন খতম) পড়। আমি বললাম, ’হে আল্লাহর নবী! আমি এর চেয়েও বেশী ক্ষমতা রাখি। তিনি বললেন, তাহলে তুমি প্রত্যেক সাতদিনে (খতম) পড় এবং এর বেশী করো না (অর্থাৎ, এর চাইতে কম সময়ে কুরআন খতম করো না।) কিন্তু আমি কঠোরতা অবলম্বন করলাম। যার ফলে আমার উপর কঠিন করে দেওয়া হল।
আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছিলেন, তুমি জান না, সম্ভবতঃ তোমার বয়স সুদীর্ঘ হবে। আব্দুল্লাহ বলেন, সুতরাং আমি ঐ বয়সে পৌঁছে গেলাম, যার কথা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছিলেন। অবশেষে আমি যখন বৃদ্ধ হয়ে গেলাম, তখন আমি আকাঙ্ক্ষা করলাম, হায়! যদি আমি আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুমতি গ্রহণ করে নিতাম।
অন্য এক বর্ণনায় আছে, (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন,) আর তোমার উপর তোমার সন্তানের অধিকার আছে---।
অন্য এক বর্ণনায় আছে, তার কোন রোযা নেই (অর্থাৎ, রোযা বিফল যাবে) সে সর্বদা রোযা রাখে। এ কথা তিনবার বললেন।
অন্য এক বর্ণনায় আছে, আল্লাহর নিকট প্রিয়তম রোযা হচ্ছে দাউদ (আঃ)-এর রোযা এবং আল্লাহর নিকট প্রিয়তম নামায হচ্ছে দাউদ (আঃ)-এর নামায। তিনি মধ্য রাতে শুতেন এবং তার তৃতীয় অংশে নামায পড়তেন এবং তার ষষ্ঠ অংশে ঘুমাতেন। তিনি একদিন রোযা রাখতেন ও একদিন রোযা ছাড়তেন। আর যখন শত্রুর সামনা-সামনি হতেন তখন (রণভূমি হতে) পলায়ন করতেন না।
আরোও এক বর্ণনায় আছে, (আব্দুল্লাহ বিন আমর) বলেন, আমার পিতা আমার বিবাহ এক উচ্চ বংশের মহিলার সঙ্গে দিয়েছিলেন। তিনি পুত্রবধুর প্রতি খুবই লক্ষ্য রাখতেন। তিনি তাকে তার স্বামী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতেন। সে বলত, এত ভালো লোক যে, সে কদাচ আমার বিছানায় পা রাখেনি এবং যখন থেকে আমি তার কাছে এসেছি, সে কোনদিন আবৃত জিনিস স্পর্শ করেনি (অর্থাৎ, মিলনের ইচ্ছাও ব্যক্ত করেনি।) যখন এই আচরণ অতি লম্বা হয়ে গেল, তখন তিনি (আব্দুল্লাহর পিতা) এ কথা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জানালেন।
অতঃপর তিনি বললেন, তাকে আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে বল। সুতরাং পরবর্তীতে আমি তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলাম। অতঃপর তিনি বললেন, তুমি কিভাবে রোযা রাখ? আমি বললাম, প্রত্যেক দিন। তিনি বললেন, কিভাবে কুরআন খতম কর? আমি বললাম, প্রত্যেক রাতে। অতঃপর তিনি ঐ কথাগুলি বর্ণনা করলেন, যা পূর্বে গত হয়েছে। তিনি (আব্দুল্লাহ ইবনে আমর) তাঁর পরিবারের কাউকে (কুরআনের) ঐ সপ্তম অংশ পড়ে শুনাতেন, যা তিনি (রাতের নফল নামাযে) পড়তেন। দিনের বেলায় তিনি তা পুনঃ পড়ে নিতেন, যেন তা (রাতে পড়া) তাঁর জন্য সহজ হয়ে যায়।
আর যখন তিনি (দৈহিক) শক্তি সঞ্চয় করার ইচ্ছা করতেন, তখন কিছুদিন রোযা রাখতেন না এবং গুনে রাখতেন ও পরে ততটাই রোযা রেখে নিতেন। কারণ, তিনি ঐ আমল পরিত্যাগ করা অপছন্দ করতেন, যার উপর তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে পৃথক হয়েছেন। এই বর্ণনাগুলি সবই বিশুদ্ধ। এগুলোর অধিকাংশ বুখারী ও মুসলিমে রয়েছে এবং যৎসামান্য এমন আছে যা এই দুটির মধ্যে একটিতে আছে।
وعَنْ أَبيْ محمد عبدِ اللهِ بنِ عَمْرو بن العَاصِ رَضي الله عَنهما قَالَ : أُخْبِرَ النَّبيُّ ﷺ أنِّي أقُولُ: وَاللهِ لأَصُومَنَّ النَّهَارَ وَلأَقُومَنَّ اللَّيلَ مَا عِشْتُ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ أنتَ الَّذِي تَقُولُ ذلِكَ؟ فَقُلْتُ لَهُ : قَدْ قُلْتُهُ بأبي أنْتَ وأمِّي يَا رسولَ الله قَالَ فَإِنَّكَ لاَ تَسْتَطِيعُ ذلِكَ فَصُمْ وَأَفْطِرْ وَنَمْ وَقُمْ وَصُمْ مِنَ الشَّهْرِ ثَلاثةَ أيَّامٍ فإنَّ الحَسَنَةَ بِعَشْرِ أمْثَالِهَا وَذَلكَ مِثلُ صِيامِ الدَّهْرِ قُلْتُ : فَإِنِّي أُطيقُ أَفْضَلَ مِنْ ذلِكَ قَالَ فَصُمْ يَوماً وَأَفْطِرْ يَوْمَيْنِ قُلْتُ : فَإنِّي أُطِيقُ أفضَلَ مِنْ ذلِكَ قَالَ فَصُمْ يَوماً وَأفْطِرْ يَوماً فَذلِكَ صِيَامُ دَاوُد ﷺ وَهُوَ أعْدَلُ الصيامِ
وفي رواية هُوَ أفْضَلُ الصِّيامِ فَقُلْتُ: فَإِنِّي أُطيقُ أفْضَلَ مِنْ ذلِكَ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ لاَ أفضَلَ مِنْ ذلِكَ وَلأنْ أكُونَ قَبِلْتُ الثَّلاثَةَ الأَيّامِ الَّتي قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ أحَبُّ إليَّ مِنْ أهْلي وَمَالي
وفي رواية أَلَمْ أُخْبَرْ أنَّكَ تَصُومُ النَّهَارَ وتَقُومُ اللَّيلَ ؟ قُلْتُ : بَلَى يَا رَسُول الله قَالَ فَلاَ تَفْعَلْ : صُمْ وَأَفْطِرْ وَنَمْ وَقُمْ فإنَّ لِجَسَدِكَ عَلَيْكَ حَقّاً وَإِنَّ لِعَيْنَيكَ عَلَيْكَ حَقّاً وَإِنَّ لِزَوْجِكَ عَلَيْكَ حَقّاً وَإِنَّ لِزَوْرِكَ عَلَيْكَ حَقّاً وَإنَّ بِحَسْبِكَ أنْ تَصُومَ في كُلِّ شَهْرٍ ثَلاثَةَ أيَّامٍ فإنَّ لَكَ بِكُلِّ حَسَنَةٍ عَشْرَ أمْثَالِهَا فَإِنَّ ذلِكَ صِيَامُ الدَّهْر فَشَدَّدْتُ فَشُدِّدَ عَلَيَّ قُلْتُ : يَا رَسُول الله إنِّي أجِدُ قُوَّةً قَالَ صُمْ صِيَامَ نَبيِّ الله دَاوُد وَلاَ تَزد عَلَيهِ قُلْتُ : وَمَا كَانَ صِيَامُ دَاوُد ؟ قَالَ نِصْفُ الدَّهْرِ فَكَانَ عَبدُ الله يقول بَعدَمَا كَبِرَ : يَا لَيتَنِي قَبِلْتُ رُخْصَة رَسُول الله ﷺ
وفي رواية أَلَمْ أُخْبَرْ أَنَّكَ تَصُومُ الدَّهرَ وَتَقْرَأُ القُرآنَ كُلَّ لَيْلَة ؟ فقلت : بَلَى يَا رَسُول الله وَلَمْ أُرِدْ بذلِكَ إلاَّ الخَيرَ قَالَ فَصُمْ صَومَ نَبيِّ اللهِ دَاوُد فَإنَّهُ كَانَ أعْبَدَ النَّاسِ وَاقْرَأ القُرْآنَ في كُلِّ شَهْر قُلْتُ : يَا نَبيَّ اللهِ إنِّي أُطِيقُ أَفْضَلَ مِنْ ذلِكَ ؟ قَالَ فاقرأه في كل عشرين قُلْتُ : يَا نبي الله إني أطيق أفضل من ذلِكَ ؟ قَالَ فَاقْرَأهُ في كُلِّ عَشْر قُلْتُ : يَا نبي اللهِ إنِّي أُطيقُ أَفْضَلَ مِنْ ذلِكَ ؟ قَالَ فاقْرَأهُ في كُلِّ سَبْعٍ وَلاَ تَزِدْ عَلَى ذلِكَ فشدَّدْتُ فَشُدِّدَ عَلَيَّ وَقالَ لي النَّبيّ ﷺ إنَّكَ لا تَدرِي لَعَلَّكَ يَطُولُ بِكَ عُمُرٌ قَالَ : فَصِرْتُ إِلَى الَّذِي قَالَ لي النَّبيُّ ﷺ فَلَمَّا كَبِرْتُ وَدِدْتُ أنِّي كُنْتُ قَبِلتُ رُخْصَةَ نَبيِّ الله ﷺ
وفي رواية وَإِنَّ لِوَلَدِكَ عَلَيْكَ حَقّاً -وفي رواية لاَ صَامَ مَنْ صَامَ الأَبَدَ ثلاثاً
وفي رواية أَحَبُّ الصِيَامِ إِلَى اللهِ تَعَالَى صِيَامُ دَاوُد وَأَحَبُّ الصَّلاةِ إِلَى اللهِ تَعَالَى صَلاةُ دَاوُدَ: كَانَ يَنَامُ نِصفَ اللَّيلِ وَيَقُومُ ثُلُثَهُ وَيَنَامُ سُدُسَهُ وَكَانَ يَصُومُ يَوماً وَيُفطِرُ يَوماً وَلاَ يَفِرُّ إِذَا لاقَى
وفي رواية قال أنْكَحَني أَبي امرَأةً ذَاتَ حَسَبٍ وَكَانَ يَتَعَاهَدُ كنَّتَهُ - أي : امْرَأَةَ وَلَدِهِ - فَيَسْأَلُهَا عَن بَعْلِهَا فَتقُولُ لَهُ : نِعْمَ الرَّجُلُ مِنْ رَجُلٍ لَمْ يَطَأْ لَنَا فِرَاشاً وَلَمْ يُفَتِّشْ لَنَا كَنَفاً مُنْذُ أتَيْنَاهُ فَلَمَّا طَالَ ذلِكَ عَلَيهِ ذَكَرَ ذلك للنَّبيِّ ﷺ فَقَالَ القَنِي بِهِ فَلَقيتُهُ بَعد ذلك فَقَالَ كَيْفَ تَصُومُ ؟ قُلْتُ : كُلَّ يَومٍ قَالَ وَكَيْفَ تَخْتِمُ ؟ قُلْتُ : كُلَّ لَيْلَةٍ وَذَكَرَ نَحْوَ مَا سَبَقَ وَكَانَ يَقْرَأُ عَلَى بَعْضِ أهْلِهِ السُّبُعَ الَّذِي يَقْرَؤُهُ يَعْرِضُهُ مِنَ النَّهَارِ ليَكُونَ أخَفّ عَلَيهِ باللَّيلِ وَإِذَا أَرَادَ أنْ يَتَقَوَّى أفْطَرَ أيَّاماً وَأحْصَى وَصَامَ مِثْلَهُنَّ كرَاهِيَةَ أنْ يَترُكَ شَيئاً فَارَقَ عَلَيهِ النَّبيَّ ﷺ كُلّ هذِهِ الروَايَاتِ صَحِيحَةٌ مُعظمُها في الصَّحِيحَين وَقَلِيل مِنْهَا في أحدِهِما
পরিচ্ছেদঃ ইবাদতে মধ্যমপন্থা অবলম্বন
(৪০৩) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর একজন কেরানী আবূ রিবয়ী হানযালাহ বিন রাবী’ উসাইয়িদী (রাঃ) বলেন, একদা আবূ বকর (রাঃ) আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বললেন, হে হানযালাহ! তুমি কেমন আছ? আমি বললাম, হানযালাহ মুনাফিক হয়ে গেছে!’ তিনি (আশ্চর্য হয়ে) বললেন, ’সুবহানাল্লাহ! এ কী কথা বলছ?’ আমি বললাম, ’(কথা এই যে, যখন) আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকটে থাকি, তিনি আমাদের সামনে এমন ভঙ্গিমায় জান্নাত ও জাহান্নামের আলোচনা করেন, যেন আমরা তা স্বচক্ষে দেখছি। অতঃপর যখন আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট থেকে বের হয়ে আসি, তখন স্ত্রী সন্তান-সন্ততি ও অন্যান্য (পার্থিব) কারবারে ব্যস্ত হয়ে অনেক কিছু ভুলে যাই। আবূ বকর (রাঃ) বললেন, আল্লাহর কসম! আমাদেরও তো এই অবস্থা হয়। সুতরাং আমি ও আবূ বকর গিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খিদমতে হাজির হলাম।
অতঃপর আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! হানযালাহ মুনাফিক হয়ে গেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে কী কথা? আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমরা যখন আপনার নিকটে থাকি, তখন আপনি আমাদেরকে জান্নাত-জাহান্নামের কথা এমনভাবে শুনান; যেমন নাকি আমরা তা প্রত্যক্ষভাবে দেখছি। অতঃপর আমরা যখন আপনার নিকট থেকে বের হয়ে যাই এবং স্ত্রী সন্তান-সন্ততিও কারবারে ব্যস্ত হয়ে পড়ি, তখন অনেক কথা ভুলে যাই। (এ কথা শুনে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সেই সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ আছে! যদি তোমরা সর্বদা এই অবস্থায় থাকতে, যে অবস্থাতে তোমরা আমার নিকটে থাক এবং সর্বদা আল্লাহর স্মরণে মগ্ন থাকতে, তাহলে ফিরিশতাগণ তোমাদের বিছানায় ও তোমাদের পথে তোমাদের সঙ্গে মুসাফাহা করতেন। কিন্তু ওহে হানযালাহ! (সর্বদা মানুষের এক অবস্থা থাকে না।) কিছু সময় (ইবাদতের জন্য) ও কিছু সময় (সাংসারিক কাজের জন্য)। তিনি এ কথা তিনবার বললেন।
وعَنْ أَبيْ رِبعِي حَنظَلَةَ بنِ الربيعِ الأُسَيِّدِيِّ الكَاتِب أَحَدِ كُتَّابِ رَسُولِ الله ﷺ قَالَ : لَقِيَنِي أَبُو بَكر فَقَالَ : كَيْفَ أنْتَ يَا حنْظَلَةُ ؟ قُلْتُ : نَافَقَ حَنْظَلَةُ قَالَ : سُبْحَانَ الله مَا تَقُولُ قُلْتُ: نَكُونُ عَندَ رَسُولِ الله ﷺ يُذَكِّرُنَا بِالجَنَّةِ وَالنَّارِ كأنَّا رَأيَ عَيْنٍ فإِذَا خَرَجْنَا مِنْ عَندِ رَسُول الله ﷺ عَافَسْنَا الأَزْواجَ وَالأَوْلاَدَ وَالضَّيْعَاتِ نَسينَا كَثِيراً قَالَ أَبُو بكر فَوَالله إنَّا لَنَلْقَى مِثْلَ هَذَا فانْطَلَقْتُ أَنَا وأبُو بَكْر حَتَّى دَخَلْنَا عَلَى رَسُول الله ﷺ فقُلْتُ : نَافَقَ حَنْظَلَةُ يَا رَسُول اللهِ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ وَمَا ذَاكَ ؟ قُلْتُ : يَا رَسُول اللهِ نَكُونُ عَندَكَ تُذَكِّرُنَا بِالنَّارِ والجَنَّةِ كأنَّا رَأيَ العَيْن فإِذَا خَرَجْنَا مِنْ عَندِكَ عَافَسْنَا الأَزْواجَ وَالأَوْلاَدَ وَالضَّيْعَاتِ نَسينَا كَثِيراً فَقَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ وَالَّذِي نَفْسي بِيَدِهِ لَوْ تَدُومُونَ عَلَى مَا تَكُونونَ عَندِي وَفي الذِّكْر لصَافَحَتْكُمُ الملائِكَةُ عَلَى فُرُشِكُمْ وَفي طُرُقِكُمْ لَكِنْ يَا حَنْظَلَةُ سَاعَةً وسَاعَةً ثَلاَثَ مَرَات رواه مسلم
পরিচ্ছেদঃ ইবাদতে মধ্যমপন্থা অবলম্বন
(৪০৪) আনাস বিন মালিক (রাঃ) বলেন, একদা কিছু সাহাবা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকটে উপস্থিত হয়ে বললেন, হে আল্লাহর রসূল! কা’বার রবের কসম! আমরা ধ্বংস হয়ে যাব। তিনি বললেন, তা কেন? তাঁরা বললেন, মুনাফিকীর আশঙ্কা হয়, মুনাফিকীর! তিনি বললেন, তোমরা কি সাক্ষ্য দাও না যে, আল্লাহ ছাড়া কেউ সত্য উপাস্য নেই এবং আমি তাঁর রসূল? তাঁরা বললেন, অবশ্যই। তিনি বললেন, এটা মুনাফিকী নয়।
অতঃপর তাঁরা দ্বিতীয়বার তাঁকে একই কথা বললেন, হে আল্লাহর রসূল! কা’বার রবের কসম! আমরা ধ্বংস হয়ে যাব। তিনি বললেন, তা কেন? তাঁরা বললেন, মুনাফিকীর আশঙ্কা হয়, মুনাফিকীর! তিনি বললেন, তোমরা কি সাক্ষ্য দাও না যে, আল্লাহ ছাড়া কেউ সত্য উপাস্য নেই এবং আমি তাঁর রসূল? তাঁরা বললেন, অবশ্যই। তিনি বললেন, এটা মুনাফিকী নয়।
অতঃপর তাঁরা তৃতীয়বার তাঁকে একই কথা বললেন। তিনি বললেন, এটা মুনাফিকী নয়। তাঁরা বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমরা যখন আপনার কাছে থাকি, তখন এক অবস্থায় থাকি। আর যখন আপনার নিকট থেকে বের হয়ে যাই, তখন সংসার ও পরিবার আমাদেরকে ব্যস্ত করে তোলে। আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যখন তোমরা আমার নিকট থেকে বের হয়ে যাও, তখন যদি সেই অবস্থায় থাকতে, যে অবস্থাতে তোমরা আমার নিকটে থাক, তাহলে ফিরিশতাগণ মদীনার পথে তোমাদের সঙ্গে মুসাফাহ করতেন।
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ: غَدَا أَصْحَابُ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَاتَ يَوْمٍ فَقَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ هَلَكْنَا وَرَبِّ الْكَعْبَةِ فَقَالَ: «وَمَا ذَاكَ؟» قَالُوا: النِّفَاقُ النِّفَاقُ. قَالَ: «أَلَسْتُمْ تَشْهَدُونَ أَنْ لَا إِلٰهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ؟» قَالُوا: بَلَى. قَالَ: «لَيْسَ ذَاكَ النِّفَاقَ». قَالَ: ثُمَّ عَادُوا الثَّانِيَةَ فَقَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ هَلَكْنَا وَرَبِّ الْكَعْبَةِ. قَالَ: «وَمَا ذَاكَ؟» قَالُوا: النِّفَاقُ النِّفَاقُ. قَالَ: «أَلَسْتُمْ تَشْهَدُونَ أَنْ لَا إِلٰهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ؟» قَالُوا: بَلَى. قَالَ: «لَيْسَ ذَاكَ النِّفَاقَ». قَالَ: ثُمَّ عَادُوا الثَّالِثَةَ فَقَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ، هَلَكْنَا وَرَبِّ الْكَعْبَةِ، قَالَ: «وَمَا ذَاكَ؟». قَالُوا: النِّفَاقُ. قَالَ: «أَلَسْتُمْ تَشْهَدُونَ أَنْ لَا إِلٰهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ؟» قَالُوا: بَلَى. قَالَ: «لَيْسَ ذَاكَ النِّفَاقَ». قَالُوا: إِنَّا إِذَا كُنَّا عِنْدَكَ كُنَّا عَلَى حَالٍ، وَإِذَا خَرَجْنَا مِنْ عِنْدِكَ هَمَّتْنَا الدُّنْيَا وَأَهْلُونَا. قَالَ: «لَوْ أَنَّكُمْ إِذَا خَرَجْتُمْ مِنْ عِنْدِي تَكُونُونَ عَلَى الْحَالِ الَّذِي تَكُونُونَ عَلَيْهِ، لَصَافَحَتْكُمُ الْمَلَائِكَةُ بِطُرُقِ الْمَدِينَةِ» إسناده صحيح
পরিচ্ছেদঃ ইবাদতে মধ্যমপন্থা অবলম্বন
(৪০৫) ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, কোন এক সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবাহ দিচ্ছিলেন। হঠাৎ তিনি দেখলেন যে, একটি লোক (রোদে) দাঁড়িয়ে আছে। অতঃপর তিনি তাঁর সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলেন। লোকেরা বলল, ’আবূ ইসরাঈল। ও নযর মেনেছে যে, ও রোদে দাঁড়িয়ে থাকবে, বসবে না, ছায়া গ্রহণ করবে না, কথা বলবে না এবং রোযা রাখবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা ওকে আদেশ কর, ও যেন কথা বলে, ছায়া গ্রহণ করে, বসে এবং রোযা পুরা করে।
وَعَن ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا قَالَ : بَينَمَا النَّبيُّ ﷺ يَخطُبُ إِذَا هُوَ بِرَجُلٍ قَائِمٍ فَسَأَلَ عَنهُ فَقَالُوْا : أَبُو إسْرَائيلَ نَذَرَ أنْ يَقُومَ في الشَّمْسِ وَلاَ يَقْعُدَ وَلاَ يَسْتَظِل وَلاَ يَتَكَلَّمَ وَيَصُومَ فَقَالَ النَّبِيُّ ﷺ مُرُوهُ فَلْيَتَكَلَّمْ وَلْيَسْتَظِلَّ وَلْيَقْعُدْ وَلْيُتِمَّ صَوْمَهُ رواه البخاري
পরিচ্ছেদঃ ইবাদতে মধ্যমপন্থা অবলম্বন
(৪০৬) আবূ হুরাইরা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা ’সওমে বিসাল’ থেকে দূরে থাক। এ কথা তিনি ৩ বার পুনরাবৃত্তি করলেন। সাহাবাগণ বললেন, ’কিন্তু হে আল্লাহর রসূল! আপনি তো বিসাল করে থাকেন?’ তিনি বললেন, এ ব্যাপারে তোমরা আমার মত নও। কারণ, আমি রাত্রি যাপন করি, আর আমার প্রতিপালক আমাকে পানাহার করিয়ে থাকেন। সুতরাং তোমরা সেই আমল করতে উদ্বুদ্ধ হও, যা করতে তোমরা সক্ষম।
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ رضى الله عَنه َالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ إِيَّاكُمْ وَالْوِصَالَ قَالُوْا فَإِنَّكَ تُوَاصِلُ يَا رَسُولَ اللهِ قَالَ إِنَّكُمْ لَسْتُمْ فِى ذَلِكَ مِثْلِى إِنِّى أَبِيتُ يُطْعِمُنِى رَبِّى وَيَسْقِينِى فَاكْلَفُوا مِنَ الأَعْمَالِ مَا تُطِيقُونَ
পরিচ্ছেদঃ ইবাদতে মধ্যমপন্থা অবলম্বন
(৪০৭) আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, নিশ্চয় উত্তম আদর্শ, সুন্দর বেশভূষা এবং মধ্যমপন্থা নবুঅতের পঁচিশ ভাগের একটি ভাগ।
عَن عَبْدِ اللهِ بْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ نَبِىَّ اللهِ ﷺ قَالَ إِنَّ الْهَدْىَ الصَّالِحَ وَالسَّمْتَ الصَّالِحَ وَالاِقْتِصَادَ جُزْءٌ مِنْ خَمْسَةٍ وَعِشْرِينَ جُزْءًا مِنَ النُّبُوَّةِ
পরিচ্ছেদঃ ইবাদতে মধ্যমপন্থা অবলম্বন
(৪০৮) হাকাম বিন হাযন কুলাফী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হে মানব সকল! তোমাদেরকে যে সকল কর্মের আদেশ করা হয়, তার প্রত্যেকটাই পালন করতে তোমরা কক্ষনই সক্ষম হবে না। তবে তোমরা মধ্যমপন্থা অবলম্বন কর এবং সুসংবাদ নাও।
عَن الْحَكَمِ بْنِ حَزْنٍ الْكُلَفِىُّ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّكُمْ لَنْ تُطِيقُوا أَوْ لَنْ تَفْعَلُوا كُلَّ مَا أُمِرْتُمْ بِهِ وَلَكِنْ سَدِّدُوا وَأَبْشِرُوا