পরিচ্ছেদঃ দুনিয়াদারি ত্যাগ করার মাহাত্ম্য, দুনিয়া কামানো কম করার প্রতি উৎসাহ প্রদান এবং দারিদ্রের ফযীলত
আল্লাহ তা’আলা বলেন,
إِنَّمَا مَثَلُ الحَيَاةِ الدُّنْيَا كَمَاءٍ أَنْزَلْنَاهُ مِنَ السَّمَاءِ فَاخْتَلَطَ بِهِ نَبَاتُ الأَرْضِ مِمَّا يَأْكُلُ النَّاسُ والأَنْعَامُ حَتَّى إِذَا أَخَذَتِ الأَرْضُ زُخْرُفَهَا وَازَّيَّنَتْ وَظَنَّ أَهْلُهَا أَنَّهُمْ قَادِرُونَ عَلَيهَا أتَاهَا أمْرُنَا لَيْلاً أَوْ نَهَاراً فَجَعَلْنَاهَا حَصِيداً كَأنْ لَمْ تَغْنَ بِالأَمْسِ كَذلِكَ نُفَصِّلُ الآياتِ لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ
অর্থাৎ, বস্তুতঃ পার্থিব জীবনের দৃষ্টান্ত তো বৃষ্টির মত, যা আমি আসমান হতে বর্ষণ করি। অতঃপর তার দ্বারা উৎপন্ন হয় ভূপৃষ্ঠের উদ্ভিদগুলো অতিশয় ঘন হয়ে, যা হতে মানুষ ও পশুরা ভক্ষণ করে। অতঃপর যখন ভূমি তার শোভা ধারণ করে ও নয়নাভিরাম হয়ে ওঠে এবং তার মালিকরা মনে করে যে, তারা এখন তার পূর্ণ অধিকারী, তখন দিনে অথবা রাতে তার উপর আমার (আযাবের) আদেশ এসে পড়ে, সুতরাং আমি তা এমনভাবে নিশ্চিহ্ন করে দিই, যেন গতকাল তার অস্তিত্বই ছিল না। এরূপেই আয়াতগুলোকে আমি চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য বিশদরূপে বর্ণনা করে থাকি। (সূরা ইউনুস ২৪) তিনি আরো বলেন,
وَاضْرِبْ لَهُمْ مَثَلَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا كَمَاءٍ أَنْزَلْنَاهُ مِنَ السَّمَاءِ فَاخْتَلَطَ بهِ نَبَاتُ الأَرْضِ فَأصْبَحَ هَشِيماً تَذْرُوهُ الرِّيَاحُ وَكَانَ اللهُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ مُقْتَدِراً المَالُ وَالْبَنُونَ زِينَةُ الحَيَاةِ الْدُّنْيَا وَالبَاقِيَاتُ الصَّالِحَاتُ خَيْرٌ عَندَ رَبِّكَ ثَوَاباً وَخَيْرٌ أَمَلاً
অর্থাৎ, তাদের কাছে পেশ কর উপমা পার্থিব জীবনের; এটা পানির ন্যায় যা আমি বর্ষণ করি আকাশ হতে, যার দ্বারা ভূমির উদ্ভিদ ঘন সন্নিবিষ্ট হয়ে উদ্গত হয়। অতঃপর তা বিশুষ্ক হয়ে এমন চূর্ণ-বিচূর্ণ হয় যে, বাতাস ওকে উড়িয়ে নিয়ে যায়। আর আল্লাহ সর্ব বিষয়ে শক্তিমান। ধনৈশ্বর্য ও সন্তান-সন্ততি পার্থিব জীবনের শোভা। আর সৎকার্য, যার ফল স্থায়ী ওটা তোমার প্রতিপালকের নিকট পুরস্কার প্রাপ্তির জন্য শ্রেষ্ঠ এবং আশা প্রাপ্তির ব্যাপারেও উৎকৃষ্ট। (সূরা কাহফ ৪৫-৪৬)। আরো অন্য জায়গায় তিনি বলেছেন,
اعْلَمُوا أَنَّمَا الحَياةُ الدُّنْيَا لَعِبٌ وَلَهوٌ وَزِينَةٌ وَتَفَاخُرٌ بَيْنَكُمْ وَتَكَاثُرٌ في الأَمْوَالِ وَالأَوْلاَدِ كَمَثَلِ غَيْثٍ أعْجَبَ الْكُفّارَ نَبَاتُهُ ثُمَّ يَهِيجُ فَتَرَاهُ مُصْفَرّاً ثُمَّ يَكُوْنُ حُطَاماً وَفِي الآخِرَةِ عَذابٌ شَديدٌ وَمَغْفِرَةٌ مِنَ الله ورِضْوَانٌ وَمَا الحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلاَّ مَتَاعُ الغُرُورِ
অর্থাৎ, তোমরা জেনে রেখো যে, পার্থিব জীবন তো ক্রীড়া-কৌতুক, জাঁকজমক, পারস্পরিক অহংকার প্রকাশ, ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে প্রাচুর্য লাভের প্রতিযোগিতা ব্যতীত আর কিছুই নয়। এর উপমা বৃষ্টি; যার দ্বারা উৎপন্ন ফসল কৃষকদেরকে চমৎকৃত করে, অতঃপর তা শুকিয়ে যায়, ফলে তুমি তা পীতবর্ণ দেখতে পাও, অবশেষে তা টুকরা-টুকরা (খড়-কুটায়) পরিণত হয় এবং পরকালে রয়েছে কঠিন শাস্তি এবং আল্লাহর ক্ষমা ও সন্তুষ্টি। আর পার্থিব জীবন ছলনাময় ভোগ ব্যতীত কিছুই নয়। (সূরা হাদীদ ২০) অন্যত্র আল্লাহ তা’আলা বলেন,
زُيِّنَ لِلْنَّاسِ حُبُّ الشَّهَوَاتِ مِنَ النِّسَاءِ وَالبَنِينَ وَالقَنَاطِيرِ المُقَنْطَرَةِ مِنَ الذَّهَبِ وَالفِضَّةِ وَالْخَيْلِ المُسَوَّمَةِ وَالأَنْعَامِ وَالْحَرْثِ ذَلِكَ مَتَاعُ الحَياةِ الْدُّنْيَا وَاللهُ عَندَهُ حُسْنُ المآبِ
অর্থাৎ, নারী, সন্তান-সন্ততি, জমাকৃত সোনা-রূপার ভাণ্ডার, পছন্দসই (চিহ্নিত) ঘোড়া, চতুষ্পদ জন্তুও ক্ষেত-খামারের প্রতি আসক্তি মানুষের নিকট লোভনীয় করা হয়েছে। এ সব ইহজীবনের ভোগ্য বস্তু। আর আল্লাহর নিকটেই উত্তম আশ্রয়স্থল রয়েছে। (আলে ইমরান ১৪) তিনি আরো বলেন,
يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّ وَعْدَ اللهِ حَقٌّ فَلاَ تَغُرَّنَّكُمُ الحَياةُ الْدُّنْيَا وَلاَ يَغُرَّنَّكُمْ بِاللهِ الغَرُورُ
অর্থাৎ, হে মানুষ! আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য; সুতরাং পার্থিব জীবন যেন কিছুতেই তোমাদেরকে প্রতারিত না করে এবং কোন প্রবঞ্চক যেন কিছুতেই আল্লাহ সম্পর্কে তোমাদেরকে প্রবঞ্চিত না করে। (সূরা ফাত্বির ৫ আয়াত) আল্লাহ তা’আলা অন্য জায়গায় বলেন,
ألْهَاكُمُ التَّكَاثُرُ حَتَّى زُرْتُمُ المَقَابِرَ كَلاَّ سَوْفَ تَعْلَمُونَ ثُمَّ كَلاَّ سَوْفَ تَعْلَمُونَ كَلاَّ لَوْ تَعْلَمُونَ عِلْمَ الْيَقِينِ
অর্থাৎ, প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতা তোমাদেরকে মোহাচ্ছন্ন করে রেখেছে। যতক্ষণ না তোমরা (মরে) কবরে উপস্থিত হও। কখনও নয়, তোমরা শীঘ্রই জানতে পারবে। আবার বলি, কখনও নয়, তোমরা শীঘ্রই জানতে পারবে। সত্যিই, তোমাদের নিশ্চিত জ্ঞান থাকলে অবশ্যই তোমরা জানতে (ঐ প্রতিযোগিতার পরিণাম)। (সূরা তাকাসুর ১-৫) তিনি আরো বলেন,
وَمَا هذِهِ الحَياةُ الدُّنْيَا إِلاَّ لَهْوٌ وَلَعِبٌ وَإِنَّ الدَّارَ الآخِرَةَ لَهِيَ الْحَيَوَانُ لَوْ كَانُوا يَعْلَمُونَ
অর্থাৎ, এ পার্থিব জীবন তো খেল-তামাশা ছাড়া কিছুই নয়। আর পারলৌকিক জীবনই তো প্রকৃত জীবন; যদি ওরা জানত। (সূরা আনকাবূত ৬৪)
(এ মর্মে প্রচুর আয়াত রয়েছে এবং হাদীসও অগণিত। তার মধ্যে কয়েকটি হাদীস বর্ণনা করছি)
(২৫৩) আমর ইবনে আউফ আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার আবূ উবাইদাহ ইবনে জাররাহকে জিযিয়া (ট্যাক্স) আদায় করার জন্য বাহরাইন পাঠালেন। অতঃপর তিনি বাহরাইন থেকে (প্রচুর) মাল নিয়ে এলেন। আনসারগণ তাঁর আগমনের সংবাদ শুনে ফজরের নামাযে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে শরীক হলেন। যখন তিনি নামায পড়ে (নিজ বাড়ি) ফিরে যেতে লাগলেন, তখন তারা তাঁর সামনে এলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে দেখে হেসে বললেন, আমার মনে হয়, তোমরা আবূ উবাইদাহ বাহরাইন থেকে কিছু (মাল) নিয়ে এসেছে, তা শুনেছ। তারা বলল, জী হ্যাঁ।
তিনি বললেন, সুসংবাদ গ্রহণ কর এবং তোমরা সেই আশা রাখ, যা তোমাদেরকে আনন্দিত করবে। তবে আল্লাহর কসম! তোমাদের উপর দারিদ্র্য আসবে আমি এ আশংকা করছি না বরং আশংকা করছি যে, তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতের ন্যায় তোমাদেরও পার্থিব জীবনে প্রশস্ততা আসবে। আর তাতে তোমরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে, যেমন তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। অতঃপর তা তোমাদেরকে ধ্বংস করে দেবে, যেমন তাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছিল।
عَن عَمرِو بنِ عَوفٍ الأنصَارِي أنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ بَعَثَ أَبَا عُبَيدَةَ بنَ الجَرَّاحِ إِلَى الْبَحْرَيْنِ يَأتِي بِجِزْيَتِهَا فَقَدِمَ بمَالٍ مِنَ الْبَحْرَيْنِ فَسَمِعَتِ الأَنْصَارُ بقُدُومِ أَبي عُبيْدَةَ فَوَافَوْا صَلاَةَ الفَجْرِ مَعَ رَسُولِ اللهِ ﷺ فَلَمَّا صَلَّى رَسُولُ اللهِ ﷺ انْصَرفَ فَتَعَرَّضُوا لَهُ فَتَبَسَّمَ رَسُولُ اللهِ ﷺ حِيْنَ رَآهُمْ ثُمَّ قَالَ أظُنُّكُمْ سَمعتُمْ أنَّ أَبَا عُبَيْدَةَ قَدِمَ بِشَيْءٍ مِنَ الْبَحْرَيْنِ ؟ فَقَالُوْا : أَجَل يَا رَسُولَ اللهِ فَقَالَ أبْشِرُوا وَأَمِّلُوا مَا يَسُرُّكُمْ فَوَالله مَا الفَقْرَ أخْشَى عَلَيْكُمْ وَلَكِنِّي أخْشَى أنْ تُبْسَط الدُّنْيَا عَلَيْكُمْ كَمَا بُسِطَتْ عَلَى مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ فَتَنَافَسُوهَا كَمَا تَنَافَسُوهَا فَتُهْلِكَكُمْ كَمَا أهْلَكَتْهُمْ متفقٌ عَلَيْهِ
পরিচ্ছেদঃ দুনিয়াদারি ত্যাগ করার মাহাত্ম্য, দুনিয়া কামানো কম করার প্রতি উৎসাহ প্রদান এবং দারিদ্রের ফযীলত
(২৫৪) আবূ সাইদ খুদরী (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বরে বসলেন এবং আমরা তাঁর আশেপাশে বসলাম। অতঃপর তিনি বললেন, আমি আমার পরে তোমাদের উপর যে জিনিসের আশঙ্কা করছি তা হলো, দুনিয়ার চাকচিক্য ও শোভা-সৌন্দর্য যা তোমাদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। তখন একজন সাহাবী বলে উঠলেন, ’হে আল্লাহর রাসূল! কল্যাণ কি কখনো অকল্যাণ নিয়ে আসে?’ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চুপ থাকলেন। ঐ লোকটিকে তখন বলা হলো, ’কি ব্যাপার তোমার, তুমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে কথা বলছো, কিন্তু তিনি তো তোমার সাথে কথা বলছেন না?’ অতঃপর আমরা দেখলাম যে, তাঁর (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর) উপর অহী অবতীর্ণ হচ্ছে।
(অহী নাযিল শেষ হলে) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) স্বীয় (মুখমণ্ডল হতে) ঘাম মুছে বললেন, প্রশ্নকারী কোথায়? তিনি যেন তার প্রশংসাই করলেন। তারপর বললেন, কল্যাণ কখনো অকল্যাণ নিয়ে আসে না। তবে নদী-নালা যেসব (উদ্ভিদ) উৎপন্ন করে, তা (অপরিমিত ভোজনে পশুর) মৃত্যু ঘটায় অথবা মৃত্যুর কাছাকাছি পৌঁছে দেয়। পক্ষান্তরে যে তৃণভোজী পশু তা ভক্ষণ করে এবং উদর পূর্ণ হলে সূর্যের দিকে মুখ করে (জাবর কাটে আর) মলমূত্র ত্যাগ করে এবং পুনরায় চরতে শুরু করে (তার ক্ষতি করে না)। এ দুনিয়ার ধন-সম্পদ আকর্ষণীয় ও সুমিষ্ট এবং ঐ ধন মুসলিমের কতই উত্তম সাথী, যা থেকে সে দরিদ্র, অনাথ এবং পথচারীকে দান করে।
عَن أَبِى سَعِيدٍ الْخُدْرِىِّ قَالَ جَلَسَ رَسُولُ اللهِ ﷺ عَلَى الْمِنْبَرِ وَجَلَسْنَا حَوْلَهُ فَقَالَ إِنَّ مِمَّا أَخَافُ عَلَيْكُمْ بَعْدِى مَا يُفْتَحُ عَلَيْكُمْ مِنْ زَهْرَةِ الدُّنْيَا وَزِينَتِهَا فَقَالَ رَجُلٌ أَوَيَأْتِى الْخَيْرُ بِالشَّرِّ يَا رَسُولَ اللهِ قَالَ فَسَكَتَ عَنهُ رَسُولُ اللهِ ﷺ فَقِيلَ لَهُ مَا شَأْنُكَ تُكَلِّمُ رَسُولَ اللهِ ﷺ وَلاَ يُكَلِّمُكَ قَالَ وَرُئِينَا أَنَّهُ يُنْزَلُ عَلَيْهِ فَأَفَاقَ يَمْسَحُ عَنهُ الرُّحَضَاءَ وَقَالَ إِنَّ هَذَا السَّائِلَ - وَكَأَنَّهُ حَمِدَهُ فَقَالَ - إِنَّهُ لاَ يَأْتِى الْخَيْرُ بِالشَّرِّ وَإِنَّ مِمَّا يُنْبِتُ الرَّبِيعُ يَقْتُلُ أَوْ يُلِمُّ إِلاَّ آكِلَةَ الْخَضِرِ فَإِنَّهَا أَكَلَتْ حَتَّى إِذَا امْتَلأَتْ خَاصِرَتَاهَا اسْتَقْبَلَتْ عَيْنَ الشَّمْسِ فَثَلَطَتْ وَبَالَتْ ثُمَّ رَتَعَتْ وَإِنَّ هَذَا الْمَالَ خَضِرٌ حُلْوٌ وَنِعْمَ صَاحِبُ الْمُسْلِمِ هُوَ لِمَنْ أَعْطَى مِنْهُ الْمِسْكِينَ وَالْيَتِيمَ وَابْنَ السَّبِيلِ
পরিচ্ছেদঃ দুনিয়াদারি ত্যাগ করার মাহাত্ম্য, দুনিয়া কামানো কম করার প্রতি উৎসাহ প্রদান এবং দারিদ্রের ফযীলত
(২৫৫) আবূ সাইদ খুদরী (রাঃ) থেকেই বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, দুনিয়া হচ্ছে সুমিষ্ট ও সবুজ শ্যামল এবং আল্লাহ তা’আলা তোমাদেরকে তাতে প্রতিনিধি করেছেন। অতঃপর তিনি দেখবেন যে, তোমরা কিভাবে কাজ কর। অতএব তোমরা দুনিয়ার ব্যাপারে সাবধান হও এবং সাবধান হও নারীজাতির ব্যাপারে।
وَعَنْهُ : أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ قَالَ إنَّ الدُّنْيَا حُلْوَةٌ خَضِرَةٌ وَإنَّ الله تَعَالَى مُسْتَخْلِفُكُمْ فِيهَا فَيَنْظُرُ كَيْفَ تَعْمَلُونَ فَاتَّقُوا الدُّنْيَا وَاتَّقُوا النِّسَاءَ رواه مسلم
পরিচ্ছেদঃ দুনিয়াদারি ত্যাগ করার মাহাত্ম্য, দুনিয়া কামানো কম করার প্রতি উৎসাহ প্রদান এবং দারিদ্রের ফযীলত
(২৫৬) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হে আল্লাহ! আখেরাতের জীবনই প্রকৃত জীবন।
وَعَن أَنَسٍ أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ قَالَ اَللّٰهُمَّ لاَ عَيْشَ إِلاَّ عَيْشَ الآخِرَةِ متفقٌ عَلَيْهِ
পরিচ্ছেদঃ দুনিয়াদারি ত্যাগ করার মাহাত্ম্য, দুনিয়া কামানো কম করার প্রতি উৎসাহ প্রদান এবং দারিদ্রের ফযীলত
(২৫৭) সাহল ইবনে সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা খন্দক খননের কাজ করছিলাম এবং ঘাড়ে করে মাটি বহন করছিলাম এমন সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট এসে বলতে লাগলেন, হে আল্লাহ! আখেরাতের জীবন ছাড়া প্রকৃত কোন জীবন নেই। অতএব, তুমি মুহাজির ও আনসার সাহাবীদের ক্ষমা করে দাও।
عَن سَهْلٍ قَالَ جَاءَنَا رَسُولُ اللهِ ﷺ وَنَحْنُ نَحْفِرُ الْخَنْدَقَ وَنَنْقُلُ التُّرَابَ عَلَى أَكْتَادِنَا فَقَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ اَللّٰهُمَّ لَا عَيْشَ إِلَّا عَيْشُ الْآخِرَهْ فَاغْفِرْ لِلْمُهَاجِرِينَ وَالْأَنْصَارِ
পরিচ্ছেদঃ দুনিয়াদারি ত্যাগ করার মাহাত্ম্য, দুনিয়া কামানো কম করার প্রতি উৎসাহ প্রদান এবং দারিদ্রের ফযীলত
(২৫৮) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তিনটি জিনিস মৃত ব্যক্তির অনুসরণ করে (সঙ্গে যায়)। দাফনের পর দু’টি ফিরে আসে, আর একটি তার সাথেই থেকে যায়। সে তিনটি হল তার পরিবারবর্গ, তার মাল ও তার আমল। দাফনের পর তার পরিবারবর্গ ও মাল ফিরে আসে। আর তার আমল তার সাথেই থেকে যায়।
وَعَن أنس بن مالك عَن رَسُولِ اللهِ ﷺ قَالَ : يَتْبَعُ الْمَيِّتَ ثَلاَثَةٌ : أهْلُهُ وَمَالُهُ وَعَمَلُهُ : فَيَرْجِعُ اثْنَانِ وَيَبْقَى وَاحِدٌ : يَرْجِعُ أهْلُهُ وَمَالُهُ وَيبْقَى عَمَلُهُ متفقٌ عَلَيْهِ
পরিচ্ছেদঃ দুনিয়াদারি ত্যাগ করার মাহাত্ম্য, দুনিয়া কামানো কম করার প্রতি উৎসাহ প্রদান এবং দারিদ্রের ফযীলত
(২৫৯) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কিয়ামতের দিন জাহান্নামীদের মধ্য হতে এমন এক ব্যক্তিকে নিয়ে আসা হবে, যে দুনিয়ার সবচেয়ে সুখী ও বিলাসী ছিল। অতঃপর তাকে জাহান্নামে একবার (মাত্র) চুবানো হবে, তারপর তাকে বলা হবে, ’হে আদম সন্তান! তুমি কি কখনো ভাল জিনিস দেখেছ? তোমার নিকটে কি কখনো সুখ-সামগ্রী এসেছে?’ সে বলবে, ’না। আল্লাহর কসম! হে প্রভু!’ আর জান্নাতীদের মধ্য হতে এমন এক ব্যক্তিকে নিয়ে আসা হবে, যে দুনিয়ার সবচেয়ে দুঃখী ও অভাবী ছিল। তাকে জান্নাতে (মাত্র একবার) চুবানোর পর বলা হবে, ’হে আদম সন্তান! তুমি কি (দুনিয়াতে) কখনো কষ্ট দেখছ? তোমার উপরে কি কখনো বিপদ গেছে?’ সে বলবে, ’না। আল্লাহর কসম! আমার উপর কোনদিন কষ্ট আসেনি এবং আমি কখনো কোন বিপদও দেখিনি।
وَعَنْهُ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ يُؤْتَى بِأنْعَمِ أهْلِ الدُّنْيَا مِنْ أهْلِ النَّارِ يَوْمَ القِيَامَةِ فَيُصْبَغُ فِي النَّارِ صَبْغَةً ثُمَّ يُقَالُ : يَا ابْنَ آدَمَ هَلْ رَأيْتَ خَيْراً قَطُّ ؟ هَلْ مَرَّ بِكَ نَعِيمٌ قَطُّ ؟ فَيَقُولُ : لاَ وَاللهِ يَا رَبِّ وَيُؤْتَى بِأشَدِّ النَّاسِ بُؤسَاً في الدُّنْيَا مِنْ أهْلِ الجَنَّةِ فَيُصْبَغُ صَبْغَةً في الجَنَّةِ فَيُقَالُ لَهُ : يَا ابْنَ آدَمَ هَلْ رَأيْتَ بُؤساً قَطُّ ؟ هَلْ مَرَّ بِكَ شِدَّةٌ قَطُّ ؟ فيَقُولُ : لاَ وَاللهِ مَا مَرَّ بِي بُؤْسٌ قَطُّ وَلاَ رَأيْتُ شِدَّةً قَطُّ رواه مسلم
পরিচ্ছেদঃ দুনিয়াদারি ত্যাগ করার মাহাত্ম্য, দুনিয়া কামানো কম করার প্রতি উৎসাহ প্রদান এবং দারিদ্রের ফযীলত
(২৬০) মুস্তাওরিদ ইবনে শাদ্দাদ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আখেরাতের মুকাবেলায় দুনিয়ার দৃষ্টান্ত ঐরূপ, যেমন তোমাদের কেউ সমুদ্রে আঙ্গুল ডুবায় এবং (তা বের করে) দেখে যে, আঙ্গুলটি সমুদ্রের কতটুকু পানি নিয়ে ফিরছে।
وَعَن المُسْتَوْرِدِ بنِ شَدَّادٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺمَا الدُّنْيَا في الآخِرَةِ إِلاَّ مِثْلُ مَا يَجْعَلُ أَحَدُكُمْ أُصْبُعَهُ في اليَمِّ فَلْيَنْظُرْ بِمَ يَرْجِعُ رواه مسلم
পরিচ্ছেদঃ দুনিয়াদারি ত্যাগ করার মাহাত্ম্য, দুনিয়া কামানো কম করার প্রতি উৎসাহ প্রদান এবং দারিদ্রের ফযীলত
(২৬১) জাবের (রাঃ) হতে বর্ণিত, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাজারের পাশ দিয়ে গেলেন। এমতাবস্থায় যে, তাঁর দুই পাশে লোকজন ছিল। অতঃপর তিনি ছোট কানবিশিষ্ট একটি মৃত ছাগল ছানার পাশ দিয়ে গেলেন। তিনি তার কান ধরে বললেন, তোমাদের কেউ কি এক দিরহামের পরিবর্তে এটাকে নেওয়া পছন্দ করবে? তাঁরা বললেন, ’আমরা কোন জিনিসের বিনিময়ে এটা নেওয়া পছন্দ করব না এবং আমরা এটা নিয়ে করবই বা কি?’ তিনি বললেন, তোমরা কি পছন্দ কর যে, (বিনামূল্যে) এটা তোমাদের হোক? তাঁরা বললেন, ’আল্লাহর কসম! যদি এটা জীবিত থাকত তবুও সে ছোট কানের কারণে দোষযুক্ত ছিল। এখন তো সে মৃত (সেহেতু একে কে নেবে)?’ তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! তোমাদের নিকট এই মৃত ছাগল ছানাটা যতটা নিকৃষ্ট, দুনিয়া আল্লাহর নিকট তার চেয়ে বেশি নিকৃষ্ট।
وَعَن جَابِرٍ أنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ مَرَّ بِالسُّوقِ وَالنَّاسُ كَنَفَتَيْهِ فَمَرَّ بِجَدْيٍ أَسَكَّ مَيِّتٍ فَتَنَاوَلَهُ فَأَخَذَ بِأُذُنِهِ ثُمَّ قَالَ أَيُّكُم يُحِبُّ أنْ يَكُونَ هَذَا لَهُ بِدرْهَم ؟ فَقَالُوْا : مَا نُحِبُّ أنَّهُ لَنَا بِشَيْءٍ وَمَا نَصْنَعُ بِهِ ؟ ثُمَّ قَالَ أَتُحِبُّونَ أَنَّهُ لَكُمْ ؟ قَالُوْا : وَاللهِ لَوْ كَانَ حَيّاً كَانَ عَيْباً إنَّهُ أسَكُّ فَكَيْفَ وَهُوَ ميِّتٌ فَقَالَ فوَاللهِ للدُّنْيَا أهْوَنُ عَلَى اللهِ مِنْ هَذَا عَلَيْكُمْ رواه مسلم
পরিচ্ছেদঃ দুনিয়াদারি ত্যাগ করার মাহাত্ম্য, দুনিয়া কামানো কম করার প্রতি উৎসাহ প্রদান এবং দারিদ্রের ফযীলত
(২৬২) আবূ যার্র (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি (একবার) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে মদীনার কালো পাথুরে যমীনে হাঁটছিলাম। উহুদ পাহাড় আমাদের সামনে পড়ল। তিনি বললেন, হে আবূ যার্র! এতে আমি খুশী নই যে, আমার নিকট এই উহুদ পাহাড় সমান স্বর্ণ থাকবে, এ অবস্থায় তিনদিন অতিবাহিত হবে অথচ তার মধ্য হতে একটি দীনারও আমার কাছে অবশিষ্ট থাকবে। অবশ্য তা থাকবে যা আমি ঋণ আদায়ের জন্য বাকী রাখব অথবা আল্লাহর বান্দাদের মাঝে এইভাবে এইভাবে এইভাবে ডানে, বামে ও পিছনে খরচ করব।
অতঃপর (কিছু আগে) চলে তিনি বললেন, প্রাচুর্যের অধিকারীরাই কিয়ামতের দিন নিঃস্ব হবে। অবশ্য সে নয় যে সম্পদকে (ফোয়ারার মত) এইভাবে এইভাবে এইভাবে ডানে, বামে ও পিছনে ব্যয় করে। কিন্তু এ রকম লোকের সংখ্যা নেহাতই কম।
তারপর তিনি আমাকে বললেন, তুমি এখানে বসে থাক, যতক্ষণ না আমি তোমার কাছে (ফিরে) এসেছি। এরপর তিনি রাতের অন্ধকারে চলতে লাগলেন, এমনকি শেষ পর্যন্ত তিনি অদৃশ্য হয়ে গেলেন। হঠাৎ আমি এক জোর শব্দ শুনলাম। আমি ভয় পেলাম যে, কোন শত্রু হয়তো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে পড়েছে। সুতরাং আমি তাঁর নিকট যাওয়ার ইচ্ছা করলাম, কিন্তু তাঁর কথা আমার স্মরণ হল, তুমি এখানে বসে থাক, যতক্ষণ না আমি তোমার কাছে (ফিরে) এসেছি।
সুতরাং আমি তাঁর ফিরে না আসা পর্যন্ত বসে থাকলাম। (তিনি ফিরে এলে) আমি বললাম, ’আমি এক জোর শব্দ শুনলাম, যাতে আমি ভয় পেলাম।’ সুতরাং যা শুনলাম আমি তা তাঁর কাছে উল্লেখ করলাম। তিনি বললেন, তুমি শব্দ শুনেছিলে? আমি বললাম, ’জী হ্যাঁ!’ তিনি বললেন, তিনি জিবরীল ছিলেন। তিনি আমার কাছে এসে বললেন, ’আপনার উম্মতের মধ্যে যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক না করে মরবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ আমি বললাম, ’যদিও সে ব্যভিচার করে ও চুরি করে তবুও কি? তিনি বললেন, ’যদিও সে ব্যভিচার করে ও চুরি করে।
وَعَنْ أَبيْ ذَرٍّ قَالَ : كُنْتُ أَمْشِي مَعَ النَّبي ﷺ فِي حَرَّةٍ بِالمَدِينَةِ فَاسْتَقْبَلَنَا أُحُدٌ فقَالَ يَا أَبَا ذَرٍّ قُلتُ : لَبَّيْكَ يَا رَسُولَ اللهِ فَقَالَ مَا يَسُرُّنِي أنَّ عَندِي مِثْلَ أُحُدٍ هَذَا ذَهَباً تَمْضِي عَلَيَّ ثَلاَثَةُ أيّامٍ وَعَندِي مِنْهُ دِينَارٌ إِلاَّ شَيْءٌ أرْصُدُهُ لِدَيْنٍ إِلاَّ أنْ أقُولَ بِهِ في عِبَادِ الله هَكَذَا وَهَكَذَا وَهكَذَا عَن يَمِينِهِ وَعَن شِمَالِهِ وَمِنْ خَلْفِهِ ثُمَّ سَارَ فَقَالَ إنَّ الأَكْثَرينَ هُمُ الأَقَلُّونَ يَوْمَ القِيَامَةِ إِلاَّ مَنْ قَالَ بالمَالِ هكَذَا وَهكَذَا وَهكَذَا عَن يَمِينِهِ وَعَن شِمَالِهِ وِمنْ خَلْفِهِ وَقَلِيلٌ مَاهُمُ ثُمَّ قَالَ لِي مَكَانَكَ لاَ تَبْرَحْ حَتَّى آتِيكَ ثُمَّ انْطَلَقَ في سَوادِ اللَّيْلِ حَتَّى تَوَارَى فَسَمِعْتُ صَوتاً قَدِ ارْتَفَع فَتَخَوَّفْتُ أنْ يَكُونَ أحَدٌ عَرَضَ لِلنَّبيِّ ﷺ فَأرَدْتُ أنْ آتِيهِ فَذَكَرتُ قَوْلَه لا تَبْرَحْ حَتَّى آتِيَكَ فَلَم أبْرَحْ حَتَّى أتَانِي فَقُلْتُ : لَقَدْ سَمِعْتُ صَوتاً تَخَوَّفْتُ مِنْهُ فَذَكَرْتُ لَهُ فَقَالَ وَهَلْ سَمِعْتَهُ ؟ قُلتُ : نَعَمْ قَالَ ذَاكَ جِبريلُ أتَانِي فَقَالَ : مَنْ مَاتَ مِنْ أُمَّتِكَ لاَ يُشْرِكُ بِاللهِ شَيْئاً دَخَلَ الْجَنَّةَ قلت : وَإنْ زَنَى وَإنْ سَرَقَ ؟ قَالَ وَإنْ زَنَى وَإنْ سَرَقَ متفقٌ عَلَيْهِ وهذا لفظ البخاري
পরিচ্ছেদঃ দুনিয়াদারি ত্যাগ করার মাহাত্ম্য, দুনিয়া কামানো কম করার প্রতি উৎসাহ প্রদান এবং দারিদ্রের ফযীলত
(২৬৩) আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যদি আমার নিকট উহুদ পাহাড় সমান সোনা থাকত, তাহলে আমি এতে আনন্দিত হতাম যে, ঋণ পরিশোধের জন্য পরিমাণ মত বাকী রেখে অবশিষ্ট সবটাই তিন দিন অতিবাহিত না হতেই আল্লাহর পথে খরচ করে ফেলি।
وَعَنْ أَبيْ هُرَيْرَةَ عَن رَسُولِ اللهِ ﷺ قَالَ لَوْ كَانَ لِي مِثْلُ أُحُدٍ ذَهَباً لَسَرَّنِي أنْ لاَ تَمُرَّ عَلَيَّ ثَلاَثُ لَيالٍ وَعَندِي مِنْهُ شَيْءٌ إِلاَّ شَيْءٌ أرْصُدُهُ لِدَيْنٍ متفقٌ عَلَيْهِ
পরিচ্ছেদঃ দুনিয়াদারি ত্যাগ করার মাহাত্ম্য, দুনিয়া কামানো কম করার প্রতি উৎসাহ প্রদান এবং দারিদ্রের ফযীলত
(২৬৪) উক্ত সাহাবী (রাঃ) থেকেই বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, (দুনিয়ার ধন-দৌলত ইত্যাদির দিক দিয়ে) তোমাদের মধ্যে যে নীচে তোমরা তার দিকে তাকাও এবং যে তোমাদের উপরে তার দিকে তাকায়ো না। যেহেতু সেটাই হবে উৎকৃষ্ট পন্থা যে, তোমাদের প্রতি যে আল্লাহর নিয়ামত রয়েছে তা তুচ্ছ মনে করবে না।[১]
বুখারীর বর্ণনায় আছে, তোমাদের কেউ যখন এমন ব্যক্তির দিকে তাকায়, যাকে সম্পদে ও দৈহিক গঠনে তার থেকে বেশি শ্রেষ্ঠত্ব দেওয়া হয়েছে, তখন সে যেন এমন ব্যক্তির দিকে তাকায়, যে এ বিষয়ে তার চেয়ে নিম্নস্তরের।[২]
[২] বুখারী ৬৪৯০।
وَعَنْهُ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ انْظُرُوا إِلَى مَنْ هُوَ أسْفَلَ مِنْكُمْ وَلاَ تَنْظُرُوا إِلَى مَنْ هُوَ فَوْقَكُمْ فَهُوَ أجْدَرُ أنْ لاَ تَزْدَرُوا نِعْمَةَ الله عَلَيْكُمْ متفقٌ عَلَيْهِ وهذا لفظ مسلم - وَفِي رِوَايَةِ البُخَارِي إِذَا نَظَرَ أَحَدُكُمْ إِلَى مَنْ فُضِّلَ عَلَيْهِ في المَالِ وَالخَلْقِ فَلْيَنْظُرْ إِلَى مَنْ هُوَ أسْفَل مِنْهُ
পরিচ্ছেদঃ দুনিয়াদারি ত্যাগ করার মাহাত্ম্য, দুনিয়া কামানো কম করার প্রতি উৎসাহ প্রদান এবং দারিদ্রের ফযীলত
(২৬৫) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ধ্বংস হোক দীনারের গোলাম, দিরহামের গোলাম ও উত্তম পোশাকের গোলাম (দুনিয়াদার)! যদি তাকে দেওয়া হয়, তাহলে সে সন্তুষ্ট হয়। আর না দেওয়া হলে অসন্তুষ্ট হয়।
وَعَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ تَعِسَ عَبْدُ الدِّينَارِ وَالدِّرْهَمِ وَالقَطِيفَةِ وَالخَمِيصَةِ إنْ أُعْطِيَ رَضِيَ وَإنْ لَمْ يُعْطَ لَمْ يَرْضَ رواه البخاري
পরিচ্ছেদঃ দুনিয়াদারি ত্যাগ করার মাহাত্ম্য, দুনিয়া কামানো কম করার প্রতি উৎসাহ প্রদান এবং দারিদ্রের ফযীলত
(২৬৬) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ’আমি সত্তরজন (আহলে সুফ্ফাকে) এই অবস্থায় দেখেছি, তাদের কারো কাছে (গা ঢাকার) জন্য চাদর ছিল না, কারো কাছে লুঙ্গী ছিল এবং কারো কাছে চাদর, (এক সঙ্গে দু’টি বস্ত্রই কারো কাছে ছিল না) তারা তা গর্দানে বেঁধে নিতেন। অতঃপর সেই বস্ত্র কারো পায়ের অর্ধগোছা পর্যন্ত হত এবং কারো পায়ের গাঁট পর্যন্ত। সুতরাং তাঁরা তা হাত দিয়ে জমা ক’রে ধরে রাখতেন, যেন লজ্জাস্থান দেখা না যায়!’
وَعَنْهُ قَالَ : لَقَدْ رَأيْتُ سَبعِينَ مِنْ أهْلِ الصُّفَّةِ مَا مِنهُمْ رَجُلٌ عَلَيْهِ رِدَاءٌ : إمَّا إزارٌ وَإمَّا كِسَاءٌ قَدْ رَبَطُوا في أعَناقِهِمْ فَمِنْهَا مَا يَبْلُغُ نِصْفَ السَّاقَيْن وَمِنْهَا مَا يَبْلُغُ الكَعْبَيْنِ فَيَجْمَعُهُ بِيَدِهِ كَراهِيَةَ أنْ تُرَى عَوْرَتُهُ رواه البخاري
পরিচ্ছেদঃ দুনিয়াদারি ত্যাগ করার মাহাত্ম্য, দুনিয়া কামানো কম করার প্রতি উৎসাহ প্রদান এবং দারিদ্রের ফযীলত
(২৬৭) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, দুনিয়া মু’মিনের জন্য জেলখানা এবং কাফেরের জন্য জান্নাত।
وَعَنْهُ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ الدُّنْيَا سِجْنُ الْمُؤْمِنِ وَجَنَّةُ الكَافِرِ رواه مسلم
পরিচ্ছেদঃ দুনিয়াদারি ত্যাগ করার মাহাত্ম্য, দুনিয়া কামানো কম করার প্রতি উৎসাহ প্রদান এবং দারিদ্রের ফযীলত
(২৬৮) ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (একদা) আমার দুই কাঁধ ধরে বললেন, তুমি এ দুনিয়াতে একজন মুসাফির অথবা পথচারীর মত থাক। আর ইবনে উমার (রাঃ) বলতেন, তুমি সন্ধ্যায় উপনীত হলে আর ভোরের অপেক্ষা করো না এবং ভোরে উপনীত হলে সন্ধ্যার অপেক্ষা করো না। তোমরা সুস্থতার অবস্থায় তোমার পীড়িত অবস্থার জন্য কিছু সঞ্চয় কর এবং জীবিত অবস্থায় তোমার মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ কর।
-
(বুখারী ৬৪১৬, তিরমিযী, মিশকাত ১৬০৪)
وَ عَنْ اِبْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا قَالَ : أَخَذَ رَسُولُ اللهِ ﷺ بِمَنْكِبَيَّ فَقَالَ كُنْ في الدُّنْيَا كَأنَّكَ غَرِيبٌ أَو عَابِرُ سَبيلٍ وَكَانَ ابنُ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا يَقُولُ : إِذَا أمْسَيتَ فَلاَ تَنْتَظِرِ الصَّبَاحَ وَإِذَا أَصْبَحْتَ فَلاَ تَنْتَظِرِ المَسَاءَ وَخُذْ مِنْ صِحَّتِكَ لِمَرَضِكَ وَمِنْ حَيَاتِكَ لِمَوْتِكَ رواه البخاري
পরিচ্ছেদঃ দুনিয়াদারি ত্যাগ করার মাহাত্ম্য, দুনিয়া কামানো কম করার প্রতি উৎসাহ প্রদান এবং দারিদ্রের ফযীলত
(২৬৯) আবুল আব্বাস সাহল ইবনে সা’দ (রাঃ) বলেন, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বলল, ’হে আল্লাহর রসূল! আপনি আমাকে এমন কর্ম বলে দিন, আমি তা করলে যেন আল্লাহ আমাকে ভালবাসেন এবং লোকেরাও আমাকে ভালবাসে।’ তিনি বললেন, ’’দুনিয়ার প্রতি বিতৃষ্ণা আনো, তাহলে আল্লাহ তোমাকে ভালবাসবেন। আর লোকেদের ধন-সম্পদের প্রতি বিতৃষ্ণা আনো, তাহলে লোকেরা তোমাকে ভালবাসবে।’’ (ইবনে মাজাহ ৪১০২, প্রমুখ,, সিলসিলাহ সহীহাহ ৯৪৪)
وَعَنْ أَبيْ العَبَّاسِ سَهلِ بنِ سَعدٍ السَّاعِدِي قَالَ : جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ ﷺ فَقَالَ : يَا رَسُولَ الله دُلَّنِي عَلَى عَمَلٍ إِذَا عَمِلْتُهُ أحَبَّنِي اللهُ وَأحَبَّنِي النَّاسُ فَقَالَ ازْهَدْ في الدُّنْيَا يُحِبّك اللهُ وَازْهَدْ فِيمَا عَندَ النَّاسِ يُحِبّك النَّاسُ حديث حسن رواه ابن ماجه وغيره بأسانيد حسنة
পরিচ্ছেদঃ দুনিয়াদারি ত্যাগ করার মাহাত্ম্য, দুনিয়া কামানো কম করার প্রতি উৎসাহ প্রদান এবং দারিদ্রের ফযীলত
(২৭০) নু’মান ইবনে বাশীর (রাঃ) বলেন, উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) (পূর্বেকার তুলনায় বর্তমানে) লোকেরা যে দুনিয়ার (ধন-সম্পদ) অধিক জমা করে ফেলেছে সে কথা উল্লেখ করে বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখেছি, তিনি সারা দিন ক্ষুধায় থাকার ফলে পেটের উপর ঝুঁকে থাকতেন (যেন ক্ষুধার জ্বালা কম অনুভব হয়)। তিনি পেট ভরার জন্য নিকৃষ্ট মানের খুরমাও পেতেন না।
وَعَن النُّعمَانِ بنِ بَشِيرٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا قَالَ: ذَكَرَ عُمَرُ بْنُ الخَطَّابِ مَا أَصَابَ النَّاسُ مِنَ الدُّنْيَا فَقَالَ: لَقَدْ رَأيْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ يَظَلُّ الْيَوْمَ يَلْتَوِي مَا يَجِدُ مِنَ الدَّقَلِ مَا يَمْلأ بِهِ بَطْنَهُ رواه مسلم
পরিচ্ছেদঃ দুনিয়াদারি ত্যাগ করার মাহাত্ম্য, দুনিয়া কামানো কম করার প্রতি উৎসাহ প্রদান এবং দারিদ্রের ফযীলত
(২৭১) আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই অবস্থায় ইন্তেকাল করলেন যে, তখন একটা প্রাণীর খেয়ে বাঁচার মত কিছু খাদ্য আমার ঘরে ছিল না। তবে আমার তাকের মধ্যে যৎসামান্য যব ছিল। এ থেকে বেশ কিছুদিন আমি খেলাম। কিন্তু যখন একদিন মেপে নিলাম, সেদিনই তা শেষ হয়ে গেল।
وَعَن عَائِشَةَ رَضِيَ الله عَنهَا قَالَتْ : تُوُفِّي رَسُولُ اللهِ ﷺ وَمَا فِي بَيْتِي مِنْ شَيْءٍ يَأكُلُهُ ذُو كَبِدٍ إِلاَّ شَطْرُ شَعِيرٍ فِي رَفٍّ لِي فَأكَلْتُ مِنْهُ حَتَّى طَالَ عَلَيَّ فَكِلْتُهُ فَفَنِيَ متفقٌ عَلَيْهِ
পরিচ্ছেদঃ দুনিয়াদারি ত্যাগ করার মাহাত্ম্য, দুনিয়া কামানো কম করার প্রতি উৎসাহ প্রদান এবং দারিদ্রের ফযীলত
(২৭২) উম্মুল মু’মিনীন জুয়াইরিয়্যাহ বিনতে হারেসের ভাই আমর ইবনে হারেস (রাঃ) বলেন, ’রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মৃত্যুর সময় কোন দীনার, দিরহাম, ক্রীতদাস, ক্রীতদাসী এবং কোন জিনিসই ছেড়ে যাননি। তবে তিনি ঐ সাদা খচ্চরটি ছেড়ে গেছেন, যার উপর তিনি সওয়ার হতেন এবং তাঁর হাতিয়ার ও কিছু জমি; যা তিনি মুসাফিরদের জন্য সাদকাহ করে গেছেন।
وَعَن عَمرِو بنِ الحَارِثِ أَخِي جُوَيْرِيَّةَ بِنتِ الحَارِثِ أُمِّ المُؤْمِنِينَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا قَالَ : مَا تَرَكَ رَسُولُ اللهِ ﷺ عَندَ مَوْتِهِ دِينَاراً وَلاَ دِرْهَماً وَلاَ عَبْداً وَلاَ أَمَةً وَلاَ شَيْئاً إِلاَّ بَغْلَتَهُ الْبَيضَاءَ الَّتي كَانَ يَرْكَبُهَا وَسِلاَحَهُ وَأرْضاً جَعَلَهَا لاِبْنِ السَّبِيلِ صَدَقَةً رواه البخاري