পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর নুবুওয়্যাতপ্রাপ্তি ও ওয়াহীর সূচনা
৫৮৩৭-[১] ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে চল্লিশ বছর বয়সে নুবুওয়্যাত প্রদান করা হয়েছে। এরপর তিনি (সা.) মক্কায় তেরো বছর অবস্থান করেছেন এবং তার কাছে ওয়াহী আসতে থাকে। অতঃপর তাঁকে হিজরতের নির্দেশ দেয়া হয়। (মদীনায় হিজরত করে তিনি (সা.) দশ বছর বেঁচে ছিলেন, অবশেষে তেষট্টি বছর বয়সে ইন্তিকাল করেছেন। (বুখারী ও মুসলিম)
الفصل الاول (بَاب المبعث وبدء الْوَحْي )
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: بَعَثَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِأَرْبَعِينَ سَنَةً فَمَكَثَ بِمَكَّةَ ثلاثَ عَشْرَةَ سَنَةً يُوحَى إِلَيْهِ ثُمَّ أُمِرَ بِالْهِجْرَةِ فهاجرَ عشر سِنِينَ وَمَاتَ وَهُوَ ابْنُ ثَلَاثٍ وَسِتِّينَ سَنَةً. مُتَّفق عَلَيْهِ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (3903 ، 3851) و مسلم (118 ، 117 / 2351)، (6096 و 6097) ۔
(مُتَّفق عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: (وَمَاتَ وَهُوَ ابْنُ ثَلَاثٍ وَسِتِّينَ سَنَةً) আর এ মতটিই সহীহ যে, নবী (সা.) ৬৩ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। বলা হয়ে থাকে যে, তিনি ৬৫ বছর বয়সে মারা যান। যেমন ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর বর্ণনায় সামনে আসতেছে যাতে তার জন্মের ও মৃত্যুর বছরকেও গণ্য করা হয়েছে। বলা হয়ে থাকে যে, তিনি (সা.) ৬০ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। যা আনাস (রাঃ)-এর বর্ণিত হাদীসে শীঘ্রই আসছে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর নুবুওয়্যাতপ্রাপ্তি ও ওয়াহীর সূচনা
৫৮৩৮-[২] উক্ত রাবী [ইবনু আব্বাস (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) (নুবুওয়্যাতের পর) মক্কায় পনের বছর অবস্থান করেছেন। সাত বছর অবধি মালাকের (ফেরেশতার) স্বর শুনতেন এবং আলো দেখতে পেতেন। এটা ছাড়া আর কিছুই দেখতেন না। আট বছর তাঁর কাছে ওয়াহী পাঠানো হয়ে থাকে। আর দশ বছর মদীনায় অবস্থানের পর পঁয়ষট্টি বছর বয়সে তিনি ইন্তিকাল করেন। (বুখারী ও মুসলিম)
الفصل الاول (بَاب المبعث وبدء الْوَحْي )
وَعَنْهُ قَالَ: أَقَامَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِمَكَّةَ خَمْسَ عَشْرَةَ سَنَةً يَسْمَعُ الصَّوْتَ وَيَرَى الضَّوْءَ سَبْعَ سِنِينَ وَلَا يَرَى شَيْئًا وَثَمَانِ سِنِينَ يُوحَى إِلَيْهِ وَأَقَامَ بِالْمَدِينَةِ عَشْرًا وَتُوُفِّيَ وَهُوَ ابْنُ خَمْسٍ وَسِتِّينَ. مُتَّفق عَلَيْهِ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (لم اجدہ) و مسلم (123 ، 122 / 2353)، (6102 و 6104) ۔
(مُتَّفق عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: (أَقَامَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِمَكَّةَ خَمْسَ عَشْرَةَ سَنَةً) অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ (সা.) যে বছর জন্মেছিলেন ও যে বছর তিনি মারা যান সে উভয় বছরসহ।
(سْمَعُ الصَّوْتَ) তিনি (সা.) জিবরীল (আঃ)-এর আওয়াজ শুনতে পেতেন।
(وَيَرَى الضَّوْءَ) আর তিনি অন্ধকার রাতে বিরাট আলো দেখতে পেতেন। তিনি (সা.) সাত বছর এ রকম আলো দেখতে পান নুবুওয়্যাতের নিদর্শন স্বরূপ। তিনি (সা.) এ সময়ে মালাক (ফেরেশতা) দেখতে পেতেন না। তিনি (সা.) মালাক না দেখে কেবল আলো দেখতেন, এতে করে যেন তার ভয় দূর হয়ে যায়। কারণ ভয় পেয়ে তিনি (সা.) হয়তো বেহুশ হয়ে যেতেন, যা তার জন্য ক্ষতিকর হত। ইবনুল মালিক (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এতে রহস্য হলো, মালাক আলো থেকে খালি নয়। কিন্তু তিনি যদি তাকে শুরুতেই দেখতেন তাহলে হয়তো মানুষ হিসেবে সহ্য করতে পারতেন না। এতে তার বেহুশ হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হত। এজন্য তাকে প্রথমে আলো তারপর মালাকের আকারে প্রকাশ করা হয়েছে। ওয়াহী নাযিলের পূর্বে প্রথমে আলো দ্বারা তার বক্ষকে খোলা হয়েছে। আর এ বক্ষ খোলাকে আলো হিসেবে নামকরণ করা হয়েছে। তার বয়স চল্লিশে পৌছার আগে তার বক্ষ পূর্ণভাবে খোলেনি। আর এ সময়ে আল্লাহ ও তার বান্দার মাঝে প্রস্তুতিস্বরূপ ছিল। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর নুবুওয়্যাতপ্রাপ্তি ও ওয়াহীর সূচনা
৫৮৩৯-[৩] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ তা’আলা রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে ষাট বছর বয়সে মৃত্যু দান করেছেন। (বুখারী ও মুসলিম)
الفصل الاول (بَاب المبعث وبدء الْوَحْي )
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: تَوَفَّاهُ اللَّهُ على رَأس سِتِّينَ سنة. مُتَّفق عَلَيْهِ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (5900) و مسلم (113 / 2347)، (6089) ۔
(مُتَّفق عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: ‘আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, ৬০ বছরের মাথায় মাজাজ অর্থাৎ ৬০ বছরের শেষে। যেমন আল্লাহ বলেন, আয়াতের মাথায় অর্থাৎ আয়াতের শেষে। কোন জিনিসের শেষকে মাথা বলা হয়। তার উদাহরণ হলো অন্য কোন আয়াতে অথবা অন্য কোন চুক্তিতে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর নুবুওয়্যাতপ্রাপ্তি ও ওয়াহীর সূচনা
৫৮৪০-[৪] উক্ত রাবী [আনাস (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সা.) ৬৩ বছর বয়সে ইন্তিকাল করেছেন। (অনুরূপভাবে) উমার (রাঃ) -ও তেষট্টি বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন। (মুসলিম)
ইমাম মুহাম্মাদ ইবনু ইসমাঈল আল বুখারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, অধিকাংশ রিওয়ায়াতে রাসূল (সা.) -এর বয়সকাল ৬৩ বছর রয়েছে।
الفصل الاول (بَاب المبعث وبدء الْوَحْي )
وَعَنْهُ قَالَ: قُبِضَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ ابْنُ ثَلَاثٍ وَسِتِّينَ وَأَبُو بَكْرٍ وَهُوَ ابْنُ ثَلَاثٍ وَسِتِّينَ وَعُمَرُ وَهُوَ ابْنُ ثَلَاثٍ وَسِتِّينَ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ قَالَ مُحَمَّدُ بْنُ إِسْمَاعِيل البُخَارِيّ: ثَلَاث وَسِتِّينَ أَكثر
رواہ مسلم (114 / 2348)، (6091) وقال البخاری :’’ وھو ابن ثلاث و ستین و ھذا اصح ‘‘ (التاریخ الکبیر 3 / 255) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: নবী (সা.) যে ৬৩ বছর বয়সে ইনতিকাল করেছেন এটাই সবচেয়ে বিশুদ্ধ মত। আর এ মতটিই বেশি।
(وَأَبُو بَكْرٍ وَهُوَ ابْنُ ثَلَاثٍ وَسِتِّينَ) এতে কোন মতভেদ নেই। আর তাঁর খিলাফাত ছিল ২ বছর ৪ মাস।
(وَعُمَرُ وَهُوَ ابْنُ ثَلَاثٍ وَسِتِّينَ) ‘উমার (রাঃ)-এর বয়স নিয়ে মতভেদ আছে। বলা হয়ে থাকে যে, ৪৯ বছর বয়স ছিল উমার (রাঃ) এর। বলা হয়ে থাকে যে, ৫৮ বছর বয়স ছিল। বলা হয়ে থাকে, ৫৬ বছর বয়স হয়েছিল। বলা হয়ে থাকে, ৫১ বছর বয়স ছিল । তবে সঠিক মত অনুসারে তাঁর বয়সও ৬৩ বছর ছিল।
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর নুবুওয়্যাতপ্রাপ্তি ও ওয়াহীর সূচনা
৫৮৪১-[৫] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর প্রতি সর্বপ্রথম ওয়াহীর সূচনা হয় সত্য স্বপ্নের মাধ্যমে। তিনি (সা) যে স্বপ্নই দেখতেন তা প্রভাতের আলোর মতোই ফলত। এরপর তাঁর কাছে নির্জনতা পছন্দনীয় হতে লাগল। তাই তিনি (সা.) একাধারে কয়েকদিন পর্যন্ত নিজের পরিবার পরিজনদের কাছ হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে হেরা পর্বতের গুহায় নির্জন পরিবেশে আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন থাকতে লাগলেন। আর এ উদ্দেশে তিনি (সা.) কিছু খাবার সাথে নিয়ে যেতেন। তা শেষ হয় গেলে তিনি (সা.) খাদীজাহ (রাঃ) -এর কাছে ফিরে এসে আবার ঐ পরিমাণ কয়েক দিনের জন্য কিছু খাবার সাথে নিয়ে যেতেন। অবশেষে হেরা গুহায় থাকাকালে তাঁর কাছে সত্য (ওয়াহী) আসলো।
জিবরীল (আঃ) সেখানে এসে তাঁকে বললেন, ’পড়ুন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, আমি তো পড়তে পারি না। তিনি বলেন, মালাক (ফেরেশতা) তখন আমাকে ধরে এমন জোরে চাপ দিলেন যে, তাতে আমি প্রবল কষ্ট অনুভব করলাম। অতঃপর তিনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন, ’পড়ুন!’ আমি বললাম, আমি তো পড়তে পারি না। তখন দ্বিতীয়বার তিনি আমাকে ধরে আবারও খুব জোরে চাপলেন। এবারও ভীষণ কষ্ট আমি অনুভব করলাম। এরপর তিনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন, ’পড়ুন৷’ এবারও আমি বললাম, আমি পড়তে পারি না।
তিনি (সা.) বলেন, মালাক (ফেরেশতা) তৃতীয়বার আমাকে ধরে দৃঢ়ভাবে চেপে ধরলেন। এবারও আমি বিশেষভাবে কষ্ট পেলাম। অতঃপর তিনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন, (অর্থাৎ) “আপনার প্রভুর নামে পড়ুন। যিনি সৃষ্টি করেছেন। যিনি মানুষকে জমাট রক্ত হতে সৃষ্টি করেছেন। (পড়ুন!) আর আপনার প্রভু সর্বাপেক্ষা সম্মানিত। তিনিই কলম দ্বারা বিদ্যা শিখিয়েছেন। তিনি মানুষকে তাই শিখিয়েছেন যা সে জানত না - (সূরাহ্ আল ’আলাক ৯৬ : ১-৫)।
অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা.) উক্ত আয়াতগুলো আয়ত্ত করে ফিরে আসলেন। তখন তাঁর অন্তর কাঁপছিল। তিনি (সা.) খাদীজার কাছে এসে বললেন, চাদর দিয়ে আমাকে ঢেকে দাও। চাদর দিয়ে আমাকে ঢেকে দাও। তখন তিনি তাঁকে চাদর দিয়ে ঢেকে দিলেন। অবশেষে তাঁর ভয় কেটে গেলে তিনি (সা.) খাদীজার কাছে ঘটনা বর্ণনা করে বললেন, আমি আমার নিজের জীবন সম্পর্কে আশঙ্কাবোধ করছি। তখন খাদীজাহ্ (সান্ত্বনা দিয়ে দৃঢ়তার সাথে) বললেন, আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি: এরূপ কখনো হতে পারে না। আল্লাহ তা’আলা কখনোই আপনাকে অপমানিত করবেন না। কারণ, আপনি আত্মীয়স্বজনের সাথে ভালো আচরণ করেন, সর্বদা সত্য কথা বলেন, আপনি অক্ষমদের দায়িত্ব বহন করেন। নিঃস্বদেরকে উপার্জন করে সাহায্য করেন, অতিথিদের মেহমানদারি করেন এবং প্রকৃত বিপদগ্রস্তদেরকে সাহায্য করেন। এরপর খাদীজাহ্ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে সাথে নিয়ে আপন চাচাতো ভাই ওয়ারাকাহ্ ইবনু নাওফাল-এর কাছে চলে গেলেন। (পূর্ববর্তীতে ওয়ারাকাহ্ ’ঈসায়ী ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন)
খাদীজাহ (রাঃ) তাঁকে বললেন, হে চাচাতো ভাই। তোমার ভাতিজা কি বলে তা একটু শুন! তখন ওয়ারাকাহ্ তাঁকে বললেন, হে ভাতিজা! তুমি কী দেখেছ। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা.) যা দেখেছিলেন তা সবিস্তারে বর্ণনা করলেন। ঘটনা শুনে ওয়ারাকাহ্ তাকে বললেন, এ তো সেই রহস্যময় মালাক (জিবরীল আলায়হিস সালাম), যাকে আল্লাহ তা’আলা মূসা আলায়হিস সালাম-এর কাছে পাঠিয়েছিলেন। হায়! আমি যদি তোমার নুবুওয়্যাতকালে বলবান যুবক থাকতাম। হায়! আমি যদি সেই সময় জীবিত থাকতাম যখন তোমার সম্প্রদায় তোমাকে মক্কাহ থেকে বের করে দেবে। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, তারা কি সত্যই আমাকে বের করে দিবে? ওয়ারাকাহ বললেন, হ্যা, তুমি যা নিয়ে দুনিয়াতে এসেছ, অনুরূপ কোন কিছু নিয়ে যে লোকই এসেছ, তার সাথেই শত্রুতাই করা হয়েছে। আমি তোমার সে যুগ পেলে সর্বশক্তি দিয়ে তোমার সাহায্য করব। এর অব্যাহতির পর ওয়ারাকাহ্ মৃত্যুবরণ করলেন। এদিকে ওয়াহীর আগমনও বন্ধ হয়ে গেল। (বুখারী ও মুসলিম)
الفصل الاول (بَاب المبعث وبدء الْوَحْي )
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: أَوَّلُ مَا بُدِئَ بِهِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنَ الْوَحْيِ الرُّؤْيَا الصَّادِقَةُ فِي النَّوْمِ فَكَانَ لَا يَرَى رُؤْيَا إِلَّا جَاءَتْ مِثْلَ فَلَقِ الصُّبْحِ ثُمَّ حُبِّبَ إليهِ الخَلاءُ وكانَ يَخْلُو بغارِ حِراءٍ فيتحنَّثُ فِيهِ - وَهُوَ التَّعَبُّدُ اللَّيَالِيَ ذَوَاتِ الْعَدَدِ - قَبْلَ أَنْ يَنْزِعَ إِلَى أَهْلِهِ وَيَتَزَوَّدَ لِذَلِكَ ثُمَّ يَرْجِعَ إِلَى خَدِيجَةَ فَيَتَزَوَّدَ لِمِثْلِهَا حَتَّى جَاءَهُ الْحَقُّ وَهُوَ فِي غَارِ حِرَاءٍ فَجَاءَهُ الْمَلَكُ فَقَالَ: اقْرَأْ. فَقَالَ: «مَا أَنَا بِقَارِئٍ» . قَالَ: فَأَخَذَنِي فَغَطَّنِي حَتَّى بَلَغَ مِنِّي الْجَهْدُ ثُمَّ أَرْسَلَنِي فَقَالَ: اقْرَأْ. فَقُلْتُ: مَا أَنَا بِقَارِئٍ فَأَخَذَنِي فَغَطَّنِي الثَّانِيَةَ حَتَّى بَلَغَ مِنِّي الْجَهْدَ ثُمَّ أَرْسَلَنِي فَقَالَ: اقْرَأْ. فَقُلْتُ: مَا أَنَا بِقَارِئٍ. فَأَخَذَنِي فَغَطَّنِي الثَّالِثَةَ حَتَّى بَلَغَ مِنِّي الْجهد ثمَّ أَرْسلنِي فَقَالَ: [اقرَأْ باسمِ ربِّكَ الَّذِي خَلَقَ. خَلَقَ الْإِنْسَانَ مِنْ عَلَقٍ. اقْرَأْ وَرَبُّكَ الْأَكْرَمُ. الَّذِي عَلَّمَ بِالْقَلَمِ. عَلَّمَ الْإِنْسَانَ مَا لم يعلم] . فَرجع بِهَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَرْجُفُ فُؤَادُهُ فَدَخَلَ عَلَى خَدِيجَةَ فَقَالَ: «زَمِّلُونِي زَمِّلُونِي» فَزَمَّلُوهُ حَتَّى ذَهَبَ عَنْهُ الرَّوْعُ فَقَالَ لخديجةَ وأخبرَها الخبرَ: «لَقَدْ خَشِيتُ عَلَى نَفْسِي» فَقَالَتْ خَدِيجَةُ: كَلَّا وَاللَّهِ لَا يُخْزِيكَ اللَّهُ أَبَدًا إِنَّكَ لَتَصِلُ الرَّحِمَ وَتَصْدُقُ الْحَدِيثَ وَتَحْمِلُ الْكَلَّ وَتَكْسِبُ الْمَعْدُومَ وتقْرِي الضيفَ وَتُعِينُ عَلَى نَوَائِبِ الْحَقِّ ثُمَّ انْطَلَقَتْ بِهِ خَدِيجَةُ إِلَى وَرَقَةَ بْنِ نَوْفَلٍ ابْنِ عَمِّ خَدِيجَةَ. فَقَالَتْ لَهُ: يَا ابْنَ عَمِّ اسْمَعْ مِنِ ابْنِ أَخِيكَ. فَقَالَ لَهُ وَرَقَةُ: يَا ابْنَ أَخِي مَاذَا تَرَى؟ فَأَخْبَرَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَبَرَ مَا رَأَى. فَقَالَ وَرَقَةُ: هَذَا هُوَ النَّامُوسُ الَّذِي أَنْزَلَ اللَّهُ عَلَى مُوسَى يَا لَيْتَنِي فِيهَا جَذَعًا يَا لَيْتَنِي أَكُونُ حَيًّا إِذْ يُخْرِجُكَ قَوْمُكَ. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَوَ مُخْرِجِيَّ هُمْ؟» قَالَ: نَعَمْ لَمْ يَأْتِ رَجُلٌ قَطُّ بِمِثْلِ مَا جِئْتَ بِهِ إِلَّا عُودِيَ وَإِنْ يُدْرِكْنِي يَوْمُكَ أَنْصُرُكَ نَصْرًا مُؤَزَّرًا. ثُمَّ لَمْ يَنْشَبْ وَرَقَةُ أَنْ تُوَفِّيَ وَفَتَرَ الوحيُ. مُتَّفق عَلَيْهِ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (3) و مسلم (253 / 160)، (403) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: ইমাম নবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এ হাদীসটি সাহাবীদের মুরসাল হাদীসের একটি। কারণ ‘আয়িশাহ (রাঃ) ঘটনা পাননি। তিনি হয়তো নবী (সা.) থেকে শুনেছেন, অথবা সাহাবী থেকে শুনেছেন। আর সাহাবীদের মুরসাল হাদীস সকল উলামাদের নিকট দলীল। তবে উস্তায আবূ ইসহাক আল ইসফিরায়িনী যা এককভাবে বর্ণনা করেছেন তা ব্যতীত।
‘আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, বাহ্যিকভাবে বুঝা যাচ্ছে, তিনি নবী (সা.) -এর কাছে শুনেছিলেন। তিনি বলেন, তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে চাপ দিলেন। তবে আমি বলছি, ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) যা বলেছেন তা দুর্বল মত। কারণ তিনি হাদীসের শুরুতে বলেননি যে, তিনি তার থেকে শুনেছেন। অতএব তা মুরসাল। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
অত্র হাদীসটিতে ওয়াহীর সূচনা কিভাবে হলো তা আলোচনা করা হয়েছে। কিভাবে ওয়াহীর বিস্তার হয়েছিল, তার ধারাবাহিকতা কি তা বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে হাদীসটিতে। (সম্পাদকীয়)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর নুবুওয়্যাতপ্রাপ্তি ও ওয়াহীর সূচনা
৫৮৪২-[৬] আর ইমাম বুখারী (রহিমাহুল্লাহ) অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন, এতে এটুকু আছে যে, ওয়াহী আসা স্থগিত হওয়ায় রাসূলুল্লাহ (সা.) খুবই চিন্তামগ্ন হয়ে পড়েন। এমনকি তিনি (সা.) কয়েকবার ভোরে এ উদ্দেশে পাহাড়ের চূড়ায় উঠেছিলেন যে, সেখান হতে নিজেকে নীচে নিক্ষেপ করবেন। যখনই তিনি (সা.) নিজেকে নিক্ষেপ করার উদ্দেশে পাহাড়ের চূড়ায় উঠতেন, তখনই জিবরীল আলায়হিস সালাম এসে তাঁর সামনে উপস্থিত হয়ে বলতেন, হে মুহাম্মাদ! আপনি সত্য সত্যই আল্লাহর রাসূল (ধৈর্যধারণ করুন, অস্থিরতার কিছুই নেই)। তখন জিবরীল আলায়হিস সালাম-এর আশ্বাস বাণীতে তার অস্থিরতা দূর হয়ে অন্তরে প্রশান্তি আসত।
الفصل الاول (بَاب المبعث وبدء الْوَحْي )
وَزَادَ الْبُخَارِيُّ: حَتَّى حَزِنَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - فِيمَا بَلَغَنَا - حُزْنًا غَدَا مِنْهُ مرَارًا كي يتردَّى منْ رؤوسِ شَوَاهِقِ الْجَبَلِ فَكُلَّمَا أَوْفَى بِذِرْوَةِ جَبَلٍ لِكَيْ يُلْقِيَ نَفْسَهُ مِنْهُ تَبَدَّى لَهُ جِبْرِيلُ فَقَالَ: يَا مُحَمَّدُ إِنَّكَ رَسُولُ اللَّهِ حَقًّا. فَيَسْكُنُ لذلكَ جأشُه وتقرُّ نفسُه
رواہ البخاری (6982) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: হাদীসটি থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, নবী (সা.) সত্য নবী ও রাসূল ছিলেন। কারণ জিবরীল আমীন নিজেই এ সাক্ষ্য দিয়েছেন, যা এ হাদীসের মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে। (সম্পাদকীয়)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর নুবুওয়্যাতপ্রাপ্তি ও ওয়াহীর সূচনা
৫৮৪৩-[৭] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি ওয়াহী স্থগিত হওয়া সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে বলতে শুনেছেন, একদিন আমি পথে চলছিলাম, এমন সময় আমি আকাশের দিক হতে একটি আওয়াজ শুনতে পেলাম। তখন আমি উপরে তাকিয়ে দেখি, হেরা গুহায় যিনি আমার কাছে এসেছিলেন, সেই মালাক (ফেরেশতা) আকাশ ও জমিনের মধ্যস্থলে একটি কুরসীতে বসে আছেন। তাঁকে দেখে আমি ভয়ে ঘাবড়ে গেলাম। এমনকি আমি মাটিতে লুটিয়ে পড়লাম, অতঃপর (উঠে) পরিবারের কাছে বাড়িতে ফিরে বললাম, আমাকে চাদর জড়াও! আমাকে চাদর জড়াও! এ সময় আল্লাহ তা’আলা অবতীর্ণ করলেন, (অর্থাৎ) “হে চাদর আবৃত ব্যক্তি। উঠ, আর সতর্ক কর। আর তোমার প্রভুর মাহাত্ম ঘোষণা কর। তোমার কাপড় পবিত্র কর। এবং অপবিত্রতা ত্যাগ কর।’ এরপর হতে ওয়াহী পুরোদমে একের পর এক অবতীর্ণ হতে লাগল। (বুখারী ও মুসলিম)
الفصل الاول (بَاب المبعث وبدء الْوَحْي )
وَعَنْ جَابِرٍ أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُحَدِّثُ عَنْ فَتْرَةِ الْوَحْيِ قَالَ: فَبَيْنَا أَنَا أَمْشِي سَمِعْتُ صَوْتًا مِنَ السَّمَاءِ فَرَفَعْتُ بَصَرِي فَإِذَا الْمَلَكُ الَّذِي جَاءَنِي بِحِرَاءٍ قَاعِدٌ عَلَى كُرْسِيٍّ بَيْنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ فَجُئِثْتُ مِنْهُ رُعْبًا حَتَّى هَوَيْتُ إِلَى الأرضِ فجئتُ أَهلِي فقلتُ: زَمِّلُونِي زَمِّلُونِي فَأنْزل اللَّهُ تَعَالَى: [يَا أيُّها الْمُدَّثِّرُ. قُمْ فَأَنْذِرْ وَرَبَّكَ فَكَبِّرْ. وَثِيَابَكَ فَطَهِّرْ. وَالرجز فاهجر] ثمَّ حمي الْوَحْي وتتابع . مُتَّفق عَلَيْهِ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (4) و مسلم (255 / 161)، (406) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: (یٰۤاَیُّهَا الۡمُدَّثِّرُ) অর্থাৎ হে নুবুওয়্যাতের চাদরে আবৃত ও আর রিসালাতের ভারী দায়িত্ব বহনকারী! (قُمۡ) অর্থাৎ আমাদের আদেশ পালন করুন অথবা আনুগত্যের সাথে দায়িত্বপালনের ওপর অটল থাকুন। অথবা রাতে দাঁড়িয়ে সালাত (তাহাজ্জুদের সালাত) আদায় করুন।
মহান আল্লাহ বলেন, (یٰۤاَیُّهَا الۡمُزَّمِّلُ ۙ﴿۱﴾ قُمِ الَّیۡلَ...) এ কারণে বলা হয়েছে, তিনি নির্দেশিত হয়েছিলেন নুবুওয়্যাত প্রতিষ্ঠিত করতে আর এটা এমন একটা নির্দেশ যা রিসালাতের প্রতিষ্ঠার নির্দেশ। এমনকি মহান আল্লাহ বলেন, (فَأَنْذِرْ) অর্থাৎ অতএব আপনি মানুষদেরকে সতর্ককরুন ‘আযাব হালকা করার ব্যাপারে আর মু'মিনদেরকে সুসংবাদ দিন বিভিন্ন প্রকারের সাওয়াবের। এখানে শুধু সতর্কতার কথা বলার কারণ হলো বেশির ভাগ লোক কাফির হওয়ার কারণে।
(وَرَبَّكَ فَكَبِّرْ) অর্থাৎ আপনি আপনার রবের বড়ত্ব ও মহত্বের গুণ বর্ণনা করুন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর নুবুওয়্যাতপ্রাপ্তি ও ওয়াহীর সূচনা
৫৮৪৪-[৮] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদিন হারিস ইবনু হিশাম (রাঃ), রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার কাছে কিভাবে ওয়াহী আসে? রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, ওয়াহী কোন সময় আমার কাছে ঘণ্টার আওয়াজের মতো আসে। আর তাই আমার পক্ষে এটা সর্বাপেক্ষা কঠিন প্রকৃতির ওয়াহী। তবে এ অবস্থায় মালাক (ফেরেশতা) যা বলে তা শেষ হতেই আমি তার কাছ হতে তা আয়ত্ত করে ফেলি। আবার কোন সময় মালাক (ফেরেশতা) আমার কাছে মানুষের আকৃতিতে এসে আমার সাথে কথা বলেন, তিনি যা বলেন আমি তা সাথে সাথেই আয়ত্ত করে ফেলি। আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, মূলত আমি প্রচণ্ড শীতের দিনেও তার ওপর ওয়াহী অবতীর্ণ হতে দেখেছি যখন তার অবসান হত তখন তাঁর কপাল হতে ঘাম ঝরে পড়ত। (বুখারী ও মুসলিম)।
الفصل الاول (بَاب المبعث وبدء الْوَحْي )
وَعَنْ عَائِشَةَ أَنَّ الْحَارِثَ بْنَ هِشَامٍ سَأَلَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ كَيْفَ يَأْتِيكَ الْوَحْيُ؟ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَحْيَانًا يَأْتِينِي مِثْلَ صَلْصَلَةِ الْجَرَسِ وَهُوَ أَشَدُّهُ عَلَيَّ فَيَفْصِمُ عَنِّي وَقَدْ وَعَيْتُ عَنْهُ مَا قَالَ وَأَحْيَانًا يَتَمَثَّلُ لِي الْمَلَكُ رَجُلًا فَيُكَلِّمُنِي فَأَعِي مَا يَقُولُ» . قَالَتْ عَائِشَةُ: وَلَقَدْ رَأَيْتُهُ يَنْزِلُ عَلَيْهِ الْوَحْيُ فِي الْيَوْمِ الشَّدِيدِ الْبَرْدِ فَيَفْصِمُ عَنْهُ وَإِنَّ جَبِينَهُ لَيَتَفَصَّدُ عَرَقًا. مُتَّفق عَلَيْهِ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (2) و مسلم (87 ، 86 / 2333)، (6058 و 6059) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: ঐতিহাসিক সুহায়লী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, নবী (সা.) -এর ওপর ওয়াহী বিভিন্নভাবে নাযিল হত- ১. স্বপ্নযোগে ২. অন্তরের মধ্যে ফুঁকের দ্বারা ৩. ঘণ্টার আওয়াজের মতো। আর এটাই ছিল নবী (সা.) - এর জন্য খুবই কষ্টদায়ক। ৪. মালাক (ফেরেশতা) মানুষের আকৃতিতে এসে ওয়াহী দিয়ে যেতেন। ৫. জিবরীল আলায়হিস সালাম তাঁর ছয়শত পালকবিশিষ্ট আসল আকৃতিতে আগমন করতেন। ৬. আল্লাহ তা'আলা পর্দার আড়ালে থেকে কথাবার্তার মাধ্যমে ওয়াহী প্রদান করতেন ইত্যাদি। (সম্পাদকীয়)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর নুবুওয়্যাতপ্রাপ্তি ও ওয়াহীর সূচনা
৫৮৪৫-[৯] ’উবাদাহ্ ইবনুস্ সামিত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন নবী (সা.) -এর ওপর ওয়াহী অবতীর্ণ হত, তখন তিনি কষ্ট অনুভব করতেন বলে মনে হত এবং তার চেহারার রঙ পরিবর্তন হয়ে যেত।
অপর এক বর্ণনায় আছে, ওয়াহী নাযিল হওয়ার সময় তিনি মাথা ঝুকিয়ে ফেলতেন এবং তার সাথে উপস্থিত সাহাবীগণও (আদবের খাতিরে) আপন আপন মাথা নত করে নিতেন। ওয়াহী আসা শেষ হলে তিনি (সা.) স্বীয় মাথা উঠাতেন। (মুসলিম)
الفصل الاول (بَاب المبعث وبدء الْوَحْي )
وَعَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذا نزل عَلَيْهِ الْوَحْيُ كُرِبَ لِذَلِكَ وَتَرَبَّدَ وَجْهُهُ. وَفِي رِوَايَة: نكَّسَ رأسَه ونكَّسَ أصحابُه رؤوسَهم فَلَمَّا أُتْلِيَ عَنْهُ رَفَعَ رَأْسَهُ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
رواہ مسلم (88 / 2334 ، 89 / 2335)، (6060 و 6061) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: ‘আল্লামাহ্ তূরিবিশতী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, নবী (সা.) ওয়াহীর বিষয়ের প্রতি খুবই গুরুত্বারোপ করতেন। আর লোকেদের নিকট তার যথাযথ হক আদায় করতেন তা পৌঁছে দেয়ার মাধ্যমে। তিনি (সা.) এ নি'আমাতের যথাযথ শুকরিয়া আদায় করতেন। আর এ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন না করলে আল্লাহর পক্ষ থেকে লাঞ্ছনা, অপমান ও শাস্তির ভয় করতেন। অতএব তিনি (সা.) মনে মনে চিন্তা করতেন যা দেখে বুঝা যেত তার ওপর ওয়াহী নাযিল হয়েছে। এখান থেকে এটাও বুঝা যায় যে, এখানে উদ্দেশ্য হলো ওয়াহীর কষ্ট ও কঠিনতা। কারণ চিন্তার মূলই হলো কষ্ট। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর নুবুওয়্যাতপ্রাপ্তি ও ওয়াহীর সূচনা
৫৮৪৬-[১০] ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন (ভীতি প্রদর্শন সম্পর্কীয় আয়াত) “তুমি তোমার নিকটতম আত্মীয়দেরকে সতর্ক করে দাও”- (সূরাহ আশ শুআরা ২৬: ২১৪); অবতীর্ণ হলো, তখন নবী (সা.) সাফা পাহাড়ে আরোহণ করে- হে বানী ফিহর! হে বানী ’আদী! বলে কুরায়শদের গোত্রসমূহকে আহ্বান করেন। পরিশেষে সেখানে সকলে একত্রিত হলো। এমনকি যারা স্বয়ং উপস্থিত হতে পারেনি, তারা প্রতিনিধি পাঠিয়ে জানতে চাইল যে, ব্যাপার কি? বিশেষত আবূ লাহাব এবং কুরায়শের সর্বসাধারণ লোকেরাও আসলো।
তখন তিনি (সা.) বললেন, বল তো! আমি যদি তোমাদেরকে বলি যে, (শত্রুপক্ষের) একদল অশ্বারোহী এ পাহাড়ের অপর প্রান্ত হতে। অপর এক বর্ণনা মতে, একদল অশ্বারোহী উপত্যকার এক প্রান্ত হতে বের হয়ে হঠাৎ তোমাদের ওপর আক্রমণ করতে চায়, তোমরা কি আমার এ কথাটি বিশ্বাস করবে? তারা সকলে বলে উঠল; হ্যাঁ, নিশ্চয়। কেননা তোমাকে আমরা বিগত দিনে সত্যবাদীই পেয়েছি। তখন তিনি (সা.) বললেন, আমি তোমাদের সম্মুখে আগত এক কঠিন শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করেছি। এতদশ্রবণে আবূ লাহাব বলে উঠল, তোমার ধ্বংস হোক! এজন্যই কি তুমি আমাদেরকে একত্রিত করেছ? বর্ণনাকারী বলেন, তখনই আয়াত অবতীর্ণ হলো “আবূ লাহাব-এর উভয় হাত ধ্বংস হয়েছে"- (সূরাহ্ আল লাহাব ১১১ : ১)। (বুখারী ও মুসলিম)
الفصل الاول (بَاب المبعث وبدء الْوَحْي )
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: لَمَّا نَزَلَتْ [وَأَنْذِرْ عشيرتك الْأَقْرَبين] خَرَجَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى صَعِدَ الصَّفَا فَجَعَلَ يُنَادِي: «يَا بَنِي فِهْرٍ يَا بني عدي» لبطون قُرَيْش حَتَّى اجْتَمعُوا فَجَعَلَ الرَّجُلُ إِذَا لَمْ يَسْتَطِعْ أَنْ يَخْرُجَ أَرْسَلَ رَسُولًا لِيَنْظُرَ مَا هُوَ فَجَاءَ أَبُو لَهَبٍ وَقُرَيْشٌ فَقَالَ: أَرَأَيْتُمْ إِنْ أَخْبَرْتُكُمْ أَنَّ خيَلاً تخرجُ منْ سَفْحِ هَذَا الْجَبَلِ - وَفِي رِوَايَةٍ: أَنَّ خَيْلًا تَخْرُجُ بِالْوَادِي تُرِيدُ أَنْ تُغِيرَ عَلَيْكُمْ - أَكُنْتُمْ مُصَدِّقِيَّ؟ قَالُوا: نَعَمْ مَا جَرَّبْنَا عَلَيْكَ إِلَّا صِدْقًا. قَالَ: «فَإِنِّي نَذِيرٌ لَكُمْ بَيْنَ يَدَيْ عَذَابٌ شديدٍ» . قَالَ أَبُو لهبٍ: تبّاً لكَ أَلِهَذَا جَمَعْتَنَا؟ فَنَزَلَتْ: [تَبَّتْ يَدَا أَبِي لَهَبٍ وَتَبَّ] مُتَّفق عَلَيْهِ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (4971) و الروایۃ الاولی (4770) و مسلم (355 / 208)، (508) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: নবী (সা.) পাহাড়ের উপর দাঁড়িয়ে কুরায়শ জাতিকে লক্ষ্য করে তাদের আহ্বান করলে তারা তার ডাকে সাড়া দেয়। যারা সাড়া দিতে পারেনি তারা প্রতিনিধি পাঠিয়ে দেয়। তারা সমবেত হলে নবী (সা.) তাদেরকে আল্লাহর তাওহীদ ও আখিরাতের দাওয়াত দেন। যাতে তারা সরল-সঠিক পথে চলতে পারে এবং তাদের দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ হয়। আবূ লাহাব এ দাওয়াতের সম্মুখ বিরোধিতা করলে ও নবী (সা.) - কে অপমান করলে আল্লাহ নবী (সা.) -এর পক্ষ থেকে জবাব দিয়ে সূরাহ্ লাহাব নাযিল করেন। (সম্পাদকীয়)।
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর নুবুওয়্যাতপ্রাপ্তি ও ওয়াহীর সূচনা
৫৮৪৭-[১১] আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’উদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (সা.) কা’বার কাছে সালাত আদায় করছিলেন। এ সময় কুরায়শদের একদল লোক সেখানে বসা ছিল। তখন তাদের মধ্য হতে একজন বলল, তোমাদের মধ্যে এমন কে আছে যে অমুক গোত্রের উটের নাড়িভুড়ি এনে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করবে, অতঃপর এ লোক [রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর দিকে ইঙ্গিত করে বলল] যখন সিজদায় যাবে তখন তা তার দুই কাঁধের মাঝখানে রেখে দেবে। অতঃপর তাদের মধ্য হতে সর্বাপেক্ষা বড় পাপিষ্ঠটি উঠে গেল। যখন নবী (সা.) সিজদায় গেলেন তখন সে তা তাঁর দুই কাঁধের মাঝখানে রেখে দিল। এমতাবস্থায় নবী (সা.) সিজদারত রইলেন। সেই পাপিষ্ঠরা খুব হাসাহাসি করতে লাগল, এমনকি হাসতে হাসতে একজন আরেকজনের উপর ঢলে পড়ল। এমন সময় জনৈক ব্যক্তি [ইবনু মাসউদ (রাঃ)] ফাতিমাহ’র নিকট গিয়ে বললেন, তিনি দৌড়িয়ে আসলেন। অথচ নবী (সা.) তখনো পূর্ববৎ সিজদায় রয়েছিলেন। ফাতিমাহ (রাঃ) নাড়িভুঁড়িটি নবী (সা.) -এর ওপর হতে সরিয়ে ফেললেন এবং ঐ সকল পাপিষ্ঠ কাফিরদের লক্ষ্য করে গালমন্দ করলেন। বর্ণনাকারী ইবনু মাউদ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) সালাত শেষ করে তিনবার বললেন, “হে আল্লাহ! তুমি কুরায়শদেরকে ধরাশয়ী কর। আর রাসূল (সা.) -এর নিয়ম ছিল, তিনি যখন কোন বিষয়ে দু’আ বা বদদু’আ করতেন কিংবা আল্লাহর কাছে চাইতেন, তখন তিন তিনবার বাক্যগুলো উচ্চারণ করতেন। অতঃপর তিনি (সা.) (কাফিরদের নাম ধরে) বললেন, হে আল্লাহ! তুমি ১. ’আমর ইবনু হিশাম (আবূ জাহল), ২. ’উতবাহ্ ইবনু রবী’আহ্, ৩, শায়বাহ্ ইবনু রবী’আহ, ৪. ওয়ালীদ ইবনু ’উতবাহ, ৫. উমাইয়্যাহ ইবনু খালফ, ৬. ’উকবাহ্ ইবনু আবূ মু’আয়ত্ব এবং ৭. ’উমারাহ্ ইবনুল ওয়ালীদেরকে পাকড়াও কর।
বর্ণনাকারী আবদুল্লাহ ইবনু মাস’উদ (রাঃ) বলেন, আল্লাহর শপথ! তিনি (সা.) যে সকল লোকের নাম নিয়ে বদদু’আ করেছিলেন, আমি বদরের যুদ্ধে তাদের লাশ মাটিতে পড়ে থাকতে দেখেছি। অতঃপর তাদেরকে টেনে বদরের একটি অনাবাদ কূপের মধ্যে নিক্ষেপ করা হয়েছে। এরপর রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: ঐ কূপে যাদেরকে নিক্ষেপ করা হলো, তাদের ওপর লা’নাতের পর লা’নাত রয়েছে। (বুখারী ও মুসলিম)
الفصل الاول (بَاب المبعث وبدء الْوَحْي )
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: بَيْنَمَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي عِنْدَ الْكَعْبَةِ وَجُمِعَ قُرَيْشٌ فِي مَجَالِسِهِمْ إِذْ قَالَ قَائِلٌ: أَيُّكُمْ يَقُومُ إِلَى جَزُورِ آلِ فُلَانٍ فَيَعْمِدُ إِلَى فَرْثِهَا وَدَمِهَا وَسَلَاهَا ثُمَّ يُمْهِلُهُ حَتَّى إِذَا سَجَدَ وَضَعَهُ بَيْنَ كَتِفَيْهِ وَثَبَتَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَاجِدًا فَضَحِكُوا حَتَّى مَالَ بَعْضُهُمْ عَلَى بَعْضٍ مِنَ الضَّحِكِ فَانْطَلَقَ مُنْطَلِقٌ إِلَى فَاطِمَةَ فَأَقْبَلَتْ تَسْعَى وَثَبَتَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَاجِدًا حَتَّى أَلْقَتْهُ عَنْهُ وَأَقْبَلَتْ عَلَيْهِمْ تَسُبُّهُمْ فَلَمَّا قَضَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الصَّلَاةَ قَالَ: «اللَّهُمَّ عَلَيْكَ بِقُرَيْشٍ» ثَلَاثًا - وَكَانَ إِذَا دَعَا دَعَا ثَلَاثًا وَإِذَا سَأَلَ سَأَلَ ثَلَاثًا -: «اللَّهُمَّ عَلَيْكَ بِعَمْرِو بْنِ هِشَام وَشَيْبَةَ بْنِ رَبِيعَةَ وَالْوَلِيدِ بْنِ عُتْبَةَ وَأُمَيَّةَ بْنِ خَلَفٍ وَعُقْبَةَ بْنِ أَبِي مُعَيْطٍ وَعُمَارَةَ بن الْوَلِيد» . قَالَ عبد الله: فو الله لَقَدْ رَأَيْتُهُمْ صَرْعَى يَوْمَ بَدْرٍ ثُمَّ سُحِبُوا إِلَى الْقَلِيبِ قَلِيبِ بَدْرٍ ثُمَّ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «وَأُتْبِعَ أَصْحَابُ القليب لعنة» . مُتَّفق عَلَيْهِ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (520) و مسلم (107 / 1794)، (4649) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: হাদীসে ঐ ব্যক্তির নাম ছিল আবূ জাহল যে নবী (সা.) -এর ওপর উটের নাড়ি-ভুড়ি চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল। আর তাদের সবচেয়ে নিকৃষ্ট লোক বলতে বুঝানো হয়েছে আবূ জাহল অথবা ‘উবাহ্ ইবনু আবূ মু'আয়ত্ব-কে।
ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, সে হলো ‘উকবাহ্ ইবনু আবূ মু'আয়ত্ব যেটা অন্য বর্ণনা দ্বারা বুঝা যায়। তারপর যখন নবী (সা.) সালাতে সিজদায় রবের সন্তুষ্টি অর্জনে সচেষ্ট ছিলেন তখন সে এসে নবী (সা.) - এর মাথায় উটের ভূড়িটি চাপিয়ে দিয়ে আনন্দোল্লাস করছিল। তারপর ফাতিমাহ্ (রাঃ) ছুটে চলে আসেন, কারণ তখন তার বয়স কম ছিল। যখন নবী (সা.) -এর বয়স ৪১ বছর তখন ফাত্বিমাহ্ (রাঃ) জন্মলাভ করেন। তারপর নবী (সা.) -এর ওপর থেকে সে ভুঁড়িটা সরিয়ে তাদের দিকে এগিয়ে তাদেরকে বকতে ও অভিশাপ দিতে লাগলেন। আর তারা চুপ করে তা শুনতে লাগল, কারণ তখনও ফাত্বিমাহ্ (রাঃ) ছোট ছিলেন। আর তারা হয়তো তার প্রতিবাদ করেনি, কারণ তারা নিজেদের দু' গোত্রের মাঝে লড়াইয়ের ভয় করছিল। তারপর নবী (সা.) সালাত শেষ করে তাদেরকে বদ দু'আ দিলেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
এখানে একটি প্রশ্ন আছে, তা হলো- নবী (সা.) এ অপবিত্র জিনিস নিয়ে কেন সালাত আদায় করলেন? এর জবাবে কাযী ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এটা অপবিত্র ছিল না। কারণ গোবর ও পেটের তাজা জিনিস এ দুটিই পবিত্র, অপবিত্র হলো রক্ত। এটা হলো মালিকী ও তাদের মতো যারা মত পোষণ করেন তাদের মাযহাব যে, যে সকল প্রাণীর গোশত খাওয়া যায় তাদের গোবর পবিত্র। তবে এটা হানাফী মাযহাবে অপবিত্র। হানাফীদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, নবী (সা.) ও তার পিঠে কি আছে তা তিনি জানতে পেরেছিলেন। কারণ অপবিত্র অবস্থায় সালাত হয় না। আর এটা যদি অপবিত্র হত তবে নবী (সা.) -কে জানিয়ে দিতেন। আর এর সঠিক জবাব হলো।
শারহুস্ সুন্নাহ্ কিতাবে এসেছে- বলা হয়ে থাকে যে, এ ঘটনাটি ছিল গোবর, রক্ত ও মুশরিকদের যাবাহ করা কোন জিনিস হারাম হওয়ার পূর্বে। আর তখন হারাম হত না এসব জিনিসে। আর সালাতও বাতিল হত না যেমন- মদ। তারা মদ পান করে তা কাপড়ে লাগলে তারা সে অবস্থায় সালাত আদায় করত। (মিরকাতুল মাফাতীহ)।
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর নুবুওয়্যাতপ্রাপ্তি ও ওয়াহীর সূচনা
৫৮৪৮-[১২] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদিন তিনি প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! উহুদের দিন অপেক্ষা অধিক কষ্টের কোন দিন আপনার জীবনে এসেছিল কি? তিনি (সা.) বললেন, হ্যা, তোমার সম্প্রদায় হতে যে আচরণ পেয়েছি তা এটা হতেও অধিক কষ্টদায়ক ছিল। তাদের কাছ হতে সর্বাধিক বেদনাদায়ক যা আমি পেয়েছি তা হলো ’আকাবার দিনের আঘাত’ যেদিন আমি (তায়িফের বানী সাকীফ নেতা) ইবনু আবদ ইয়ালীল ইবনু কুলাল-এর কাছে (ইসলামের দাওয়াত নিয়ে) স্বয়ং উপস্থিত হয়েছিলাম। আমি যা নিয়ে তার সামনে উপস্থিত হয়েছিলাম সে তাতে কোন সাড়া দেয়নি। তখন আমি অতি ভারাক্রান্ত অবস্থায় (নিরুদ্দেশ) সম্মুখপানে চলতে লাগলাম, “কারনুস সা’আলিব” নামক স্থানে পৌঁছার পর আমি কিছুটা স্বস্তি হলাম। তখন আমি উপরের দিকে মাথা তুলে দেখতে পেলাম, একখণ্ড মেঘ আমাকে ছায়া করে রেখেছে। পুনরায় লক্ষ্য করলে তাতে জিবরীল আলায়হিস সালাম-কে দেখলাম। তখন তিনি আমাকে আহ্বান করে বললেন, আপনি আপনার গোত্রের কাছে যে কথা বলেছেন এবং তার উত্তরে তারা আপনাকে যা বলেছে, এসব কথা আল্লাহ তা’আলা শুনেছে। এখন তিনি পাহাড় পর্বত তদারককারী মালাক (ফেরেশতা)-কে আপনার কাছে পাঠিয়েছেন। অতএব ঐ সমস্ত লোকেদের সম্পর্কে আপনার যা ইচ্ছা তাকে নির্দেশ দিতে পারেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, অতঃপর ’মালাকুল জিবাল’ আমার নাম নিয়ে আমাকে সালাম করে বললেন, হে মুহাম্মাদ! আল্লাহ তা’আলা আপনার কওমের উক্তিসমূহ শুনেছেন। আমি (পাহাড়-পর্বত নিয়ন্ত্রণকারী ফেরেশতা) আপনার প্রভু আমাকে আপনার কাছে পাঠিয়েছেন। অতএব আপনার যা ইচ্ছা আমাকে নির্দেশ করতে পারেন, আপনি ইচ্ছা করলে এ পাহাড় দুটি তাদের ওপর চাপিয়ে দেব। উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, বরং আশা করি আল্লাহ তা’আলা তাদের ঔরসে এমন বংশধরের জন্ম দেবেন যারা এক আল্লাহর ’ইবাদত করবে, তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবে না। (বুখারী ও মুসলিম)
الفصل الاول (بَاب المبعث وبدء الْوَحْي )
وَعَن عَائِشَة أَنَّهَا قَالَت: هَلْ أَتَى عَلَيْكَ يَوْمٌ كَانَ أَشَدَّ مِنْ يَوْمِ أُحُدٍ؟ فَقَالَ: لَقَدْ لَقِيتُ مِنْ قَوْمِكِ فَكَانَ أَشَدَّ مَا لَقِيتُ مِنْهُمْ يَوْمَ الْعَقَبَةِ إِذْ عرضتُ نَفسِي على ابْن عبد يَا لِيل بْنِ كُلَالٍ فَلَمْ يُجِبْنِي إِلَى مَا أَرَدْتُ فَانْطَلَقْتُ - وَأَنا مهموم - على وَجْهي فَلم أفق إِلَّا فِي قرن الثَّعَالِبِ فَرَفَعْتُ رَأْسِي فَإِذَا أَنَا بِسَحَابَةٍ قَدْ أَظَلَّتْنِي فَنَظَرْتُ فَإِذَا فِيهَا جِبْرِيلُ فَنَادَانِي فَقَالَ: إِنَّ اللَّهَ قَدْ سَمِعَ قَوْلَ قَوْمِكَ وَمَا رَدُّوا عَلَيْكَ وَقَدْ بَعَثَ إِلَيْكَ مَلَكَ الْجِبَالِ لِتَأْمُرَهُ بِمَا شِئْتَ فِيهِمْ . قَالَ: فَنَادَانِي مَلَكُ الْجِبَالِ فَسَلَّمَ عَلَيَّ ثُمَّ قَالَ: يَا مُحَمَّدُ إِنَّ اللَّهَ قَدْ سَمِعَ قَوْلَ قَوْمِكَ وَأَنَا مَلَكُ الْجِبَالِ وَقَدْ بَعَثَنِي رَبُّكَ إِلَيْكَ لِتَأْمُرَنِي بِأَمْرك إِن شِئْت أطبق عَلَيْهِم الأخشبين فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «بَلْ أَرْجُو أَنْ يُخْرِجَ اللَّهُ مِنْ أَصْلَابِهِمْ مَنْ يَعْبُدُ اللَّهَ وَحْدَهُ وَلَا يُشْرِكُ بِهِ شَيْئا» . مُتَّفق عَلَيْهِ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (3231) و مسلم (111 / 1795)، (4653) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: হাদীসে ‘আকাবার দিন বলতে বুঝানো হয়েছে- মিনায় অবস্থিত ‘আকাবাহ্ নামক জায়গাকে। নবী (সা.) উৎসবের সময় ‘আকাবায় অবস্থান করে আরবদের বিভিন্ন গোত্রদেরকে আল্লাহ ও ইসলামের দিকে আহ্বান করতে থাকেন।
(তিনি ইবনু আবদুল ইয়ালীল-কে দাওয়াত দিয়েছিলেন) ইবনু হাজার আল আসক্বালানী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, তার নামই তার উপনাম। আর আল মাগাযী গ্রন্থে এসেছে, নবী (সা.) স্বয়ং ‘আবদ ইয়ালীল-কেই দাওয়াত দিয়েছিলেন। বলা হয়ে থাকে, ‘আবদ ইয়ালীল ইবনু আমর ইবনু ‘আমর। বলা হয়ে থাকে, ইবনু 'আবদ ইয়ালীল এর নাম মাসউদ। ইবনু আবদ ইয়ালীল ছিলেন তায়িফের সাকীফ গোত্রের একজন বড় নেতা। আরো বলা হয়ে থাকে যে, তিনি নুবুওয়্যাতের দশম বছরে ত্বায়িফের প্রতিনিধি দলের সাথে ইসলাম কবুল করেন। ইবনু আবদুল বার (রহিমাহুল্লাহ) তাকে সাহাবীদের মধ্যে গণ্য করেছেন। তবে ওয়াক্বীদি যা উল্লেখ করেছেন তা থেকে বুঝা যায়, তিনি ইসলাম কবুল করেননি। আল্লাহ সবচেয়ে ভালো জানেন।
আমি যখন তাদেরকে দাওয়াত দিলাম তখন তারা আমার দাওয়াতে সাড়া না দিলে আমি খুব মনে কষ্ট পেলাম। আল্লামাহ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, অর্থাৎ আমি পেরেশান হয়ে এদিক ওদিক ছুটাছুটি করলাম। আর এ চিন্তা ছিল খুব কঠিন চিন্তা। আর আমার পেরেশানী দূর হলো “কারনুস সা'আলিব” নামক পাহাড় যা মক্কাহ্ ও ত্বায়িফের মাঝে অবস্থিত এখানে এসে। আমি আকাশের দিকে তাকালাম দু'আ করার উদ্দেশ্যে। তখন দেখলাম পাহাড়ের মালাক আমার কাছে আসছেন। তিনি এসে আমাকে সালাম করলেন। এ সালাম ছিল নবী (সা.) -এর সম্মানার্থে। নবী (সা.) ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও পাহাড়ের মালাককে তাদের ধ্বংসের জন্য ব্যবহার করেননি। তিনি তাদেরকে ক্ষমা করে দেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর নুবুওয়্যাতপ্রাপ্তি ও ওয়াহীর সূচনা
৫৮৪৯-[১৩] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। উহুদের যুদ্ধের দিন রাসূলুল্লাহ-এর সামনের পাশের একটি দাঁত ভেঙ্গে গিয়েছিল এবং তার মাথায় জখম হয়েছিল। এ সময় তিনি (সা.) স্বীয় রক্ত মুছতে মুছতে বললেন, সে জাতি কিভাবে সফলকাম হবে, যারা তাদের নবীর মাথায় জখম করল এবং তাঁর একটি দাঁত ভেঙ্গে ফেলল। (মুসলিম)
الفصل الاول (بَاب المبعث وبدء الْوَحْي )
وَعَنْ أَنَسٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كُسِرَتْ رَبَاعِيَتُهُ يَوْمَ أُحُدٍ وَشُجَّ رَأْسِهِ فَجَعَلَ يَسْلُتُ الدَّمَ عَنْهُ وَيَقُولُ: «كَيْفَ يُفْلِحُ قَوْمٌ شَجُّوا رَأْسَ نَبِيِّهِمْ وَكَسَرُوا رَبَاعِيَتَهُ» . رَوَاهُ مُسلم
رواہ مسلم (104 / 1791)، (4645) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: (رَبَاعِيَتَهُ) আরবীতে উপরের পাটির দুটি এবং নীচের পাটির দুটি- এমন চার দাঁতকে বুঝানো হয় যা সানাইয়া ও আইয়াব দাঁতের মাঝে অবস্থিত। অতএব নবী (সা.) -এর নীচের পাটির উক্ত দুই দাঁতের মধ্য হতে ডান দিকের একটি দাঁত ভেঙ্গে ছিল।
(كَيْفَ يُفْلِحُ قَوْمٌ شَجُّوا رَأْسَ نَبِيِّهِمْ وَكَسَرُوا رَبَاعِيَتَهُ) অর্থাৎ যুহরী থেকে বর্ণিত আছে যে, উহুদের যুদ্ধের দিন নবী (সা.)-এর চেহারায় তরবারি দিয়ে সত্তরটি আঘাত করা হয়েছিল। আল্লাহ তাকে প্রত্যেক ক্ষতি থেকে রক্ষা করেছিলেন। বুখারীর ব্যাখ্যায় ইমাম সুয়ূত্বী (রহিমাহুল্লাহ) উল্লেখ করেছেন, সম্ভবত তার চেহারা সত্তর জন শহীদের সাথে শরীক। তবে আল্লাহ তাকে রক্ষা করেছেন, কারণ মহান আল্লাহর বাণী- (وَ اللّٰهُ یَعۡصِمُکَ مِنَ النَّاسِ) “আর আল্লাহ আপনাকে মানুষের ক্ষতি থেকে রক্ষা করবেন”- (সূরাহ আল মায়িদাহ ৫ : ৬৭)। আর তার যে দাঁত ভাঙল ও মাথা আহত হলো এটাতে সাওয়াব অর্জিত হলো। আর এখান থেকে বুঝা গেল মানুষ যে দুর্বল, অক্ষম ও আল্লাহর বান্দা। সে কারণে মহান ক্ষমতাধর আল্লাহর ইবাদত করা চায়।
(মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর নুবুওয়্যাতপ্রাপ্তি ও ওয়াহীর সূচনা
৫৮৫০-[১৪] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁর ভাঙ্গা দাঁতের উদ্দেশে ইশারা করে বললেন, আল্লাহ তা’আলা সে সম্প্রদায়ের ওপর ভীষণ রাগান্বিত হন, যারা আল্লাহর নবীর সাথে এ দুর্ব্যবহার করেছে। তিনি (সা.) আরো বলেছেন, সে লোকও আল্লাহর ভীষণ রোষাণলে নিপতিত হয়েছে, যাকে আল্লাহর রাসূল আল্লাহর পথে (জিহাদের ময়দানে) হত্যা করেছেন। (বুখারী ও মুসলিম)
الفصل الاول (بَاب المبعث وبدء الْوَحْي )
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «اشْتَدَّ غَضَبُ اللَّهِ عَلَى قَوْمٍ فَعَلُوا بِنَبِيِّهِ» يُشِيرُ إِلَى رَبَاعِيَتِهِ «اشْتَدَّ غَضَبُ اللَّهِ عَلَى رَجُلٍ يَقْتُلُهُ رَسُولُ اللَّهِ فِي سَبِيلِ اللَّهِ» . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ وَهَذَا الْبَابُ خَالٍ عَنِ: الْفَصْلِ الثَّانِي
متفق علیہ ، رواہ البخاری (4073) و مسلم (106 / 1793)، (4648) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: এ হাদীসটি হতে গেল বুঝা গেল যে, যে ব্যক্তি নবী (সা.)-কে আঘাত করেছিল সে ছিল সবচেয়ে বড় হতভাগা। কারণ সে সারা পৃথিবীর জন্য রহমতের নবীকে আঘাত করেছে। আর নবী (সা.) যাকে যুদ্ধের ময়দানে আঘাত করে নিহত করেছে, সে ব্যক্তিও বড় হতভাগ্য। নবী (সা.) আঘাত করেছিলেন উবাই ইবনু খালফ-কে।
ইমাম নবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, শারী'আতের বিধান মতে শাস্তি বা কিসাস হিসেবে যাদেরকে নবী (সা.)-এর হাতে হত্যা করা হয় তারা এখানে উদ্দেশ্য নয়। (মিরকাতুল মাফাতীহ)