পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর স্বভাব-চরিত্রের বর্ণনা
৫৮৩১-[৩১] ’আমর ইবনু সা’ঈদ (রহিমাহুল্লাহ) আনাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, সন্তান-সন্ততির প্রতি অত্যধিক স্নেহ-মমতা পোষণকারী রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর চেয়ে বেশি আমি আর কাউকে দেখেনি। তাঁর পুত্র ইবরাহীম (রাঃ) মদীনার উঁচু প্রান্তে (এক মহল্লায়) ধাত্রী মায়ের কাছে দুধপান করত। তিনি প্রায়শ সেথায় গমন করতেন এবং আমরাও তাঁর সাথে যেতাম। তিনি (সা.) উক্ত গৃহে প্রবেশ করতেন, অথচ সে গৃহটি ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে থাকত। কারণ ইবরাহীম (রাঃ)-এর ধাত্রী মায়ের স্বামী ছিল একজন কামার। রাসূল (সা.) ইবরাহীমকে কোলে তুলে নিতেন এবং আদর করে চুমু দিতেন, এরপর চলে আসতেন। বর্ণনাকারী ’আমর বলেন, যখন ইবরাহীম (রাঃ) -এর মৃত্যু হয়ে গেল, তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, ইবরাহীম আমার পুত্র। সে দুগ্ধ (পানের) বয়সে মৃত্যুবরণ করেছে। অতএব জান্নাতে তার জন্য দু’জন ধাত্রী রয়েছে, যারা তাকে দুগ্ধ পানের মুদ্দাত জান্নাতে পূর্ণ করবে। (মুসলিম)
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَابٌ فِي أَخْلَاقِهِ وَشَمَائِلِهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم)
عَنْ عَمْرِو بْنِ سَعِيدٍ عَنْ أَنَسٍ قَالَ: مَا رَأَيْتُ أَحَدًا كَانَ أَرْحَمَ بِالْعِيَالِ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ إِبْرَاهِيمُ ابْنُهُ مُسْتَرْضَعًا فِي عَوَالِي الْمَدِينَةِ فَكَانَ يَنْطَلِقُ وَنَحْنُ مَعَهُ فَيَدْخُلُ الْبَيْتَ وَإِنَّهُ لَيُدَّخَنُ وَكَانَ ظِئْرُهُ قَيْنًا فَيَأْخُذُهُ فَيُقَبِّلُهُ ثُمَّ يَرْجِعُ. قَالَ عَمْرٌو: فَلَمَّا تُوُفِّيَ إِبْرَاهِيمُ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ إِبْرَاهِيمَ ابْنِي وَإِنَّهُ مَاتَ فِي الثَّدْيِ وَإِنَّ لَهُ لَظِئْرَيْنِ تُكْمِلَانِ رَضَاعَهُ فِي الْجَنَّةِ» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ
رواہ مسلم (63 / 2316)، (6026) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: (إِنَّ إِبْرَاهِيمَ ابْنِي) অর্থাৎ মিসর ও ইসকানদারিয়্যাহ্-এর রাজা মুকাউকিস মারিয়াহ্ কিবতী বংশীয়া একটি দাসীকে নবী (সা.) -কে হাদিয়াহ্ বা উপহার দেন। ইবরাহীম-এর মা ছিলেন সেই মারিয়াহ। তাই রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, ইবরাহীম আমার পুত্র। ইবরাহীম ৮ম হিজরীর যিলহজ্জ মাসে জন্মলাভ করেন। সে দুধপান করা অবস্থায় ১৬ বা ১৭ মাস বয়সে মারা যায়। তখনো তার দুধ ছাড়ার বয়স হয়নি। তাই নবী (সা.) বললেন, তাকে জান্নাতে দু'জন ধাত্রী দুধ পান করাবেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর স্বভাব-চরিত্রের বর্ণনা
৫৮৩২-[৩২] ’আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। অমুক পাদ্রি নামে ইয়াহূদীর রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর ওপর কিছু দীনার (স্বর্ণমুদ্রা) ঋণ ছিল। একদিন সে নবী (সা.) -এর কাছে এসে তা চেয়ে বসল। উত্তরে রাসূল (সা.) তাকে বললেন, হে ইয়াহুদী! তোমাকে দেয়ার মতো আমার কাছে কিছুই নেই। ইয়াহুদী বলল, যে অবধি তুমি হে মুহাম্মাদ! আমার ঋণ পরিশোধ করবে না, ততক্ষণ আমিও তোমাকে ছেড়ে যাব না। এবার রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, আচ্ছা আমিও তোমার কাছে বসে থাকব। তিনি (সা.) এই বলে তার কাছে বসে পড়লেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা.) সেই একই স্থানে যুহর, আসর, মাগরিব, ইশা এবং পরদিন ফজরের সালাত আদায় করলেন। এদিকে রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর সাহাবীগণ ইয়াহুদী লোকটিকে ধমকাচ্ছিলেন এবং ভয় দেখাচ্ছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) সাহাবীদের গতিবিধি বুঝতে পারলেন। (তিনি তাদেরকে ইয়াহূদীর সাথে কোন প্রকারের অসদাচরণ করতে নিষেধ করলেন) তখন সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! একজন ইয়াহুদী কি আপনাকে আটকে রাখবে? তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, আমার প্রভু আমাকে কোন জিম্মি ইত্যাদির উপর নির্যাতন করতে নিষেধ করেছেন। অতঃপর যখন দিনের বেলা বেড়ে গেল, তখন ইয়াহূদী বলল, “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া আর যোগ্য কোন প্রভু নেই এবং এটাও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি নিশ্চয় আল্লাহর রাসূল।” আমি আমার ধন-সম্পদের অর্ধেক আল্লাহর পথে দান করলাম। মূলত আমি আপনার সাথে যে আচরণ করেছি, তা এ উদ্দেশে করেছি যে, দেখতে পাই তাওরাত কিতাবে আপনার স্বভাব-চরিত্র সম্পর্কে যে সকল গুণাবলির কথা উল্লেখ রয়েছে, তা আপনার মধ্যে পাওয়া যায় কিনা? আপনার সম্পর্কে লেখা আছে মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ, তিনি মক্কায় জন্মগ্রহণ করবেন ও মদীনায়ে তাইয়িবায় হিজরত করবেন। তাঁর রাজত্ব হবে সিরিয়া পর্যন্ত। তিনি (সা.) অশ্লীলভাষী ও কঠোরমনা হবেন না। হাঁটে-বাজারে চিৎকার করবেন না এবং অশালীনরূপ ধারণ করবেন না। তিনি (সা.) অশোভন উক্তি করবেন না (আমি এ সমস্ত কিছু যথাযথভাবে আপনার মধ্যে বিদ্যমান পেয়েছি)। আমি দৃঢ় প্রত্যয়ে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, “আল্লাহ ছাড়া ’ইবাদত পাওয়ার যোগ্য কেউ নেই এবং আপনি নিশ্চয় আল্লাহর রাসূল।” আর এই আমার ধন, আল্লাহর সন্তুষ্টিচিত্তে আপনি যেখানে ইচ্ছা তা খরচ করতে পারেন। বর্ণনাকারী বলেন, উক্ত ইয়াহূদী লোকটি ছিল বহু ধন-সম্পদের মালিক। [ইমাম বায়হাক্কী (রহিমাহুল্লাহ) তাঁর “দালায়িলুন নুবুওয়্যাহ্” গ্রন্থে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন]
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَابٌ فِي أَخْلَاقِهِ وَشَمَائِلِهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم)
وَعَن عَليّ أَنَّ يهوديّاً يُقَالُ لَهُ: فُلَانٌ حَبْرٌ كَانَ لَهُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي دَنَانِيرُ فَتَقَاضَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ لَهُ: «يَا يَهُودِيُّ مَا عِنْدِي مَا أُعْطِيكَ» . قَالَ: فَإِنِّي لَا أُفَارِقُكَ يَا مُحَمَّدُ حَتَّى تُعْطِيَنِي. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذًا أَجْلِسُ مَعَكَ» فَجَلَسَ مَعَهُ فَصَلَّى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الظُّهْرَ وَالْعَصْرَ وَالْمَغْرِبَ وَالْعِشَاءَ الْآخِرَةَ وَالْغَدَاةَ وَكَانَ أَصْحَابِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَتَهَدَّدُونَهُ وَيَتَوَعَّدُونَهُ فَفَطِنَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا الَّذِي يَصْنَعُونَ بِهِ. فَقَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ يَهُودِيٌّ يَحْبِسُكَ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنَعَنِي رَبِّي أَنْ أَظْلِمَ مُعَاهِدًا وَغَيْرَهُ» فَلَمَّا تَرَجَّلَ النَّهَارُ قَالَ الْيَهُودِيُّ: أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّكَ رَسُولُ اللَّهِ وَشَطْرُ مَالِي فِي سبيلِ الله أَمَا وَاللَّهِ مَا فَعَلْتُ بِكَ الَّذِي فَعَلْتُ بِكَ إِلَّا لِأَنْظُرَ إِلَى نَعْتِكَ فِي التَّوْرَاةِ: مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ مَوْلِدُهُ بِمَكَّةَ وَمُهَاجَرُهُ بِطَيْبَةَ وَمُلْكُهُ بِالشَّامِ لَيْسَ بِفَظٍّ وَلَا غَلِيظٍ وَلَا سَخَّابٍ فِي الْأَسْوَاقِ وَلَا مُتَزَيٍّ بِالْفُحْشِ وَلَا قَوْلِ الْخَنَا أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّكَ رَسُولُ اللَّهِ وَهَذَا مَالِي فَاحْكُمْ فِيهِ بِمَا أَرَاكَ اللَّهُ وَكَانَ الْيَهُودِيُّ كَثِيرَ المالِ. رَوَاهُ الْبَيْهَقِيّ فِي «دَلَائِل النُّبُوَّة»
اسنادہ موضوع ، رواہ البیھقی فی دلائل النبوۃ (6 / 280) * فیہ محمد بن محمد بن الاشعث : کذاب ، وضع نسخۃ اھل البیت (انظر لسان المیزان 5 / 409 وغیرہ) و ھذا من وضعہ لانہ تفرد بہ ۔
(ضَعِيف)
ব্যাখ্যা: হাদীসে বর্ণিত এ ইয়াহুদী ব্যক্তিটি ছিলেন একজন ইয়াহূদী পণ্ডিত। তিনি যুহর, আসর, মাগরিব, ‘ইশা ও ফজরের সালাত মাসজিদে আদায় করেন। অথবা তার কোন স্ত্রীর ঘরে আদায় করেন। তবে মসজিদে সালাত আদায় করার সম্ভাবনা বেশি।
“আমার রব আমাকে কোন জিম্মি অথবা অন্য কারো প্রতি যুলম করতে নিষেধ করেছেন। এখানে জিম্মির কথা আগে আনার কারণ হলো কথোপকথন হচ্ছে তার সাথে। আর কিয়ামতের দিন সবচেয়ে বড় ব্যাপার হবে ঝগড়ার ব্যাপারটি। এটা কঠিন হবে। কোন মুসলিম তাকে নেকি দিয়ে সন্তুষ্ট করতে পারবে না। অথবা তার পাপ নিয়েও কেউ সন্তুষ্ট হবে না। যেমন কোন চতুষ্পদ জন্তুর যুলুমের ক্ষেত্রে বিচার হবে। আর তার সাথিরাও কেউ এ ঋণ পরিশোধ করতে সক্ষম হবে না। আর না তিনি তাদের কেউ তার পক্ষ থেকে এই ঋণ পরিশোধ করে দিলেও তিনি সন্তুষ্ট হবেন না। কারণ দীন তাকে এ নির্দেশ দেয়নি। কারণ কেউ তার প্রতি এ ইহসান করলে হয়তো তার প্রতিদান কমে যেতে পারে। কারণ মহান আল্লাহ বলেন, “হে নবী! আপনি বলে দিন, দীন প্রচারের জন্য আমি তোমাদের নিকট কোন বিনিময় চাই না”- (সূরা আল আন'আম ৬: ৯০)। আর এ সুন্নাত নবীদের থেকে চলে আসা সুন্নাত। মহান আল্লাহ বলেন, “আমি তোমাদের নিকট এর কোন বিনিময় চাই না, এর বিনিময় কেবল রাব্বল আলামীনের কাছে"- (সূরা আশ শুআরা- ২৬: ১০৯)।
পরিশেষে ইয়াহুদী আল্লাহর রাসূল (সা.) -এর আচরণে মুগ্ধ হয়ে মুসলিম হয়ে যান। তিনি কালিমায়ে শাহাদাত পাঠ করে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর স্বভাব-চরিত্রের বর্ণনা
৫৮৩৩-[৩৩] ’আবদুল্লাহ ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বেশি বেশি আল্লাহর যিকর করতেন। অর্থহীন কথা খুব কমই বলতেন, সালাতকে দীর্ঘায়িত করতেন, কিন্তু খুত্ববাহ সংক্ষেপে দিতেন। তিনি (সা.) কোন বিধবা নারী বা গরীব-মিসকীনদের সাথে চলতে কোন রকম সংকোচবোধ করতেন না। এমনকি তাদের প্রয়োজন মিটাতেন। (নাসায়ী ও দারিমী)
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَابٌ فِي أَخْلَاقِهِ وَشَمَائِلِهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم)
وَعَنْ عَبْدُ اللَّهِ بْنِ أَبِي أَوْفَى قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُكْثِرُ الذِّكْرَ وَيُقِلُّ اللَّغْوَ وَيُطِيلُ الصَّلَاةَ وَيُقْصِرُ الْخُطْبَةَ وَلَا يَأْنَفُ أَنْ يَمْشِيَ مَعَ الْأَرْمَلَةِ والمسكين فَيَقْضِي الْحَاجة. رَوَاهُ النَّسَائِيّ والدارمي
اسنادہ حسن ، رواہ النسائی (3 / 108 ۔ 109 ح 1415) و الدارمی (1 / 35 ح 75) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: ‘যিকর’ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো মহান আল্লাহর যিকর বা স্মরণ এবং প্রত্যেক ঐ বস্তু যা মহান আল্লাহর যিকরের সাথে সম্পৃক্ত। আর বাস্তবিক কথা হলো, অধিকাংশ সময় কিংবা বিভিন্ন পদ্ধতিতে সর্বদা এবং প্রতি মুহূর্তে রাসূল আল্লাহ তা'আলার যিকরে লিপ্ত থাকতেন।
(اللَّغْوَ) অর্থ নিরর্থক কথা। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো প্রত্যেক ঐ কথা যা মহান আল্লাহর যিকরের পরিবর্তে পার্থিব বিষয়াদির সাথে সম্পৃক্ত। প্রকাশ থাকে যে, এমন পার্থিব বিষয়াদির স্মরণ যা কল্যাণ ও তাৎপর্যশূন্য নয় তাও যিকরে হাক্বীক্বী তথা আল্লাহ তা'আলার স্মরণের দিকে লক্ষ্য করে নিরর্থক কথা এর অন্তর্ভুক্ত। এজন্যই ইমাম গাযালী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, (ضيعت قطعة من العمر العزيرفي تأليف البسيط والوسيط والوجيز) অর্থাৎ আমি আমার মূল্যবান জীবনের অংশবিশেষ আমার বাসীত্ব, ওয়াসীত্ব ও ওয়াজীয গ্রন্থাদি প্রণয়নের ক্ষেত্রে বিনষ্ট করেছি।
নিরর্থক কথাবার্তা থেকে সাবধান করে মহান আল্লাহ মু'মিনদেরকে বলেন, “আর যারা নিরর্থক কথাবার্তা থেকে নিজেদেরকে হিফাযাত করে”- (সূরাহ্ আল মু'মিনূন ২৩ : ০৩)। অন্য একটি আয়াতে এসেছে, মহান আল্লাহ বলেন- “যখন তারা নিরর্থক কথা শোনে তখন তারা তা থেকে বিমুখ থাকে”- (সূরাহ আল কসাস ২৮ : ৫৫)। (মিরকাতুল মাফাতীহ)।
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর স্বভাব-চরিত্রের বর্ণনা
৫৮৩৪-[৩৪] ’আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদিন আবূ জাহল নবী (সা.) -কে বলল, আমরা তোমাকে মিথ্যাবাদী মনে করি না (বা বলি না), তবে আমরা তাকেই মিথ্যা মনে করি যা তুমি আমাদের কাছে (আল্লাহর ওয়াহী) নিয়ে এসেছ। তখন আল্লাহ তা’আলা সেই সকল বেঈমানদের প্রসঙ্গে অবতীর্ণ করলেন, (অর্থাৎ) ঐ সকল কাফির-বেঈমানরা আপনাকে মিথ্যাবাদী বলে আখ্যায়িত করেন না, কিন্তু সে সকল সীমালঙ্ঘনকারী অত্যাচারীর আল্লাহর আয়াতসমূহকে অস্বীকার করে।’ (তিরমিযী)
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَابٌ فِي أَخْلَاقِهِ وَشَمَائِلِهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم)
وَعَنْ عَلِيٍّ أَنَّ أَبَا جَهْلٍ قَالَ لِلنَّبِيِّ صلى الله عَلَيْهِ وَسلم: إنَّا لَا نُكذِّبكَ ولكنْ نكذِّبُ بِمَا جئتَ بِهِ فَأَنْزَلَ اللَّهُ تَعَالَى فِيهِمْ: [فَإِنَّهُمْ لَا يُكَذِّبُونَكَ ولكنَّ الظالمينَ بآياتِ اللَّهِ يَجْحَدونَ] رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
اسنادہ ضعیف ، رواہ الترمذی (3064) * ابو اسحاق مدلس و عنعن ۔
(ضَعِيف)
ব্যাখ্যা: (لَا نُكذِّبكَ) অর্থাৎ আমরা তোমাকে মিথ্যাবাদী মনে করি না। কারণ তুমি আমাদের মাঝে সত্যবাদী বলে প্রসিদ্ধ।
(ولكنْ نكذِّبُ بِمَا جئتَ بِهِ) অর্থাৎ আমরা তোমাকে মিথ্যাবাদী বলার কারণ হলো তুমি যে কুরআন, তাওহীদ আমাদের মাঝে নিয়ে এসেছ। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন, “আর আপনার সম্প্রদায় তাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে অথচ তা সত্য।" (সূরা আল আ'আম ৬ : ৬৬)।
‘আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, বর্ণিত আছে যে, আখনাস ইবনু শারীক আবূ জাহল-কে বলল: হে আবূল হাকাম! মুহাম্মাদ সম্পর্কে সংবাদ দিন সে কি সত্যবাদী নাকি মিথ্যবাদী? আমাদের কাছে তো অন্য কেউ নেই। সে তাকে বলল, আল্লাহর কসম, নিশ্চয় মুহাম্মাদ একজন সত্যবাদী, সে কখনও মিথ্যা বলেনি। কিন্তু যখন বানূ কুসায় পতাকা, হাজীদের পানি পান করানো, পর্দা ও নুবুওয়্যাত নিয়ে গেল তখন অন্যান্য কুরায়শদের আর কি বাকী থাকল? তাই তো সে বলল, তুমি যা নিয়ে এসেছ আমরা তাকে মিথ্যা মনে করি। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর স্বভাব-চরিত্রের বর্ণনা
৫৮৩৫-[৩৫] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে ’আয়িশাহ্! যদি আমি চাইতাম তাহলে স্বর্ণের পাহাড় আমার সাথে সাথে চলত। একদিন আমার কাছে একজন মালাক (ফেরেশতা) আসলেন, তার কোমর ছিল কাবাহ্ ঘরের সমপরিমাণ। তিনি এসে বললেন, আপনার প্রভু আপনাকে সালাম জানিয়ে বলেছেন, আপনি যদি ইচ্ছা করেন, তাহলে ’নবী এবং বান্দা হওয়া’ গ্রহণ করতে পারেন কিংবা যদি ইচ্ছা করেন, তাহলে ’নবী এবং বাদশাহ হওয়া’ গ্রহণ করতে পারেন। তিনি (সা.) বলেন, যখন আমি জিবরীল (আঃ)-এর দিকে দৃষ্টি দিলাম, তখন তিনি আমার দিকে ইঙ্গিত করলেন, নিজেকে নিম্নস্তরে রাখ।
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَابٌ فِي أَخْلَاقِهِ وَشَمَائِلِهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم)
وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يَا عَائِشَةُ لَوْ شِئْتُ لَسَارَتْ مَعِي جِبَالُ الذَّهَبِ جَاءَنِي مَلَكٌ وَإِنَّ حُجْزَتَهُ لَتُسَاوِي الْكَعْبَةَ فَقَالَ: إِنَّ رَبَّكَ يَقْرَأُ عَلَيْكَ السَّلَامَ وَيَقُولُ: إِنْ شِئْتَ نَبِيًّا عَبْدًا وَإِنْ شِئْتَ نَبِيًّا مَلِكًا فَنَظَرْتُ إِلَى جِبْرِيلَ عَلَيْهِ السَّلَامُ فَأَشَارَ إِلَيَّ أَنْ ضَعْ نَفْسَكَ
اسنادہ ضعیف ، رواہ البغوی فی شرح السنۃ (13 / 247 ۔ 248 ح 3683) * فیہ ابو معشر نجیح : ضعیف ، و لحدیثہ شواھد ضعیفۃ ۔
(ضَعِيف)
ব্যাখ্যা: (لَوْ شِئْتُ) অর্থাৎ আমি যদি দুনিয়ার সম্পদ চাইতাম ও তার দিকে ঝুকে পড়তাম।
(إِنْ شِئْتَ نَبِيًّا عَبْدً) অর্থাৎ যদি আপনি দাসের মতো নবী হতে চান। অর্থাৎ আপনার মাঝে নুবুওয়্যাতের গুণাবলি ও দাসত্বের গুণাবলি একত্রিত হবে তাহলে তাই হবে। অথবা আপনি পছন্দ করে নিন।
(وَإِنْ شِئْتَ نَبِيًّا مَلِكًا) অর্থাৎ আল্লাহ আপনাকে ইখতিয়ার দিচ্ছেন আপনি যা চান তাই পছন্দ করতে পারেন। আর এতে ইঙ্গিত আছে যে, বাদশাহী ও পূর্ণ দাসত্ব একত্রিত হতে পারে না।
জিবরীল আমীনের পরামর্শ অনুযায়ী নবী (সা.) দাসত্ব নবী হওয়াকে পছন্দ করলেন। কারণ আল্লাহ মানুষকে তার দাসত্ব করার জন্যই সৃষ্টি করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন, “আমি মানুষ ও জিনকে আমার ‘ইবাদত করার জন্যই সৃষ্টি করেছি।” (সূরাহ্ আ যা-রিয়া-ত ৫১ : ৫৬)
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর স্বভাব-চরিত্রের বর্ণনা
৫৮৩৬-[৩৬] অপর এক বর্ণনায় আছে, ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, উল্লিখিত কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সা.) জিবরীল (আঃ)-এর দিকে তাকালেন, যেন তিনি তাঁর কাছে পরামর্শ চাচ্ছেন। তখন জিবরীল (আঃ) হাতে ইশারা করলেন যে, আপনি বিনয় গ্রহণ করুন। কাজেই উত্তরে বললাম, আমি নবী এবং বান্দা হয়ে থাকতে চাই। আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, এরপর হতে রাসূলুল্লাহ (সা.)! আর কখনো হেলান দিয়ে খেতেন না; বরং তিনি বলতেন, আমি সেভাবে খানা খাব, যেভাবে একজন দাস খায় এবং সেভাবে বসব যেমনিভাবে একজন দাস বসে। (শারহুস সুন্নাহ্)
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَابٌ فِي أَخْلَاقِهِ وَشَمَائِلِهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم)
وَفِي رِوَايَة ابْن عبَّاسٍ: فَالْتَفَتَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى جِبْرِيلَ كَالْمُسْتَشِيرِ لَهُ فَأَشَارَ جِبْرِيلُ بِيَدِهِ أَنْ تَوَاضَعْ. فَقُلْتُ: «نَبِيًّا عَبْدًا» قَالَتْ: فَكَانَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَعْدُ ذَلِكَ لَا يَأْكُلُ متكأ يَقُولُ: «آكُلُ كَمَا يَأْكُلُ الْعَبْدُ وَأَجْلِسُ كَمَا يَجْلِسُ العبدُ» رَوَاهُ فِي «شرح السّنة»
اسنادہ ضعیف ، رواہ البغوی فی شرح السنۃ (13 / 248 ۔ 249 ح 3684) [و ابو الشیخ فی اخلاق النبی صلی اللہ علیہ و آلہ وسلم (ص 198)] * بقیۃ لم یصرح بالسماع و الزھری مدلس و عنعن و محمد بن علی بن عبداللہ بن عباس : لم یسمع من جدہ ۔
(ضَعِيف)
ব্যাখ্যা: রাসূলুল্লাহ (সা.) জিবরীল-কে লক্ষ্য করলে তিনি ইশারা করেন অর্থাৎ মাটির দিকে ইশারা করেন। তাতে নবী (সা.) বুঝে নেন যে, তিনি তাকে দাসত্বের প্রতি নির্দেশ করছেন। ফলে নবী (সা.) দারিদ্রতা ও দাসত্বকে বাছাই করেন। যাতে আল্লাহর নিকট তার মর্যাদা বেশি হয়। তিনি বাদশাহিত্ব ও ধন-সম্পদ চাননি কারণ এতে সীমালঙ্ঘন ও ভুলে যাওয়ার মতো অপরাধ ঘটে যেতে পারে। তাছাড়া অহংকার ও কুফরী (নি'আমাতের কুফরী) হয়ে যেতে পারে। তার তিনি এজন্যই দারিদ্রতাকে বেছে নিয়েছেন। আর এ কারণেই অধিকাংশ নবী, ওলী-আওলিয়া, ‘উলামা ও সৎব্যক্তিবর্গ নিজেদের জন্য দারিদ্র্যতাকে পছন্দ করেছিলেন। আল্লাহ আমাদেরকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করুন এবং তাদের সাথে পরকালে একত্রিত করুন।
(তিনি হেলান দিয়ে বসে খেতেন না) অর্থাৎ অধিকাংশ ব্যাখ্যাকারগণ ব্যাখ্যা করেছেন যে, হেলান দেয়া হলো কোন এক পাশে ভর দিয়ে হেলে বসা। কারণ এতে খেতে অসুবিধা হয়। এতে খাবার পেটে যেতে বাধা সৃষ্টি করে। কাযী ‘ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) এভাবে বর্ণনা করেছেন। আবার কেউ কেউ ব্যাখ্যা করেছেন, হেলান দিয়ে বসা হলো আসন পেতে বসা। কারণ এভাবে খেলে বেশি খাওয়া যায়।
(আমি দাসের মতো খাই) অর্থাৎ এতে খাবার বেশি করে চিবাতে সহজ হয়।
(আমি দাসের মতো বসি) অর্থাৎ দুই হাঁটুতে ভর করে সালাতে বসার মতো। আর এটাই উত্তম পদ্ধতি। অথবা খাওয়ার সময় এক হাঁটু উঁচু করে অথবা অন্যভাবে। অথবা দুই হাঁটু উঁচু করে ইহতিবার বসার মতো। সালাত ব্যতীত নবী (সা.) বেশির ভাগ সময়ে এভাবে বসতেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)