লগইন করুন
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর নুবুওয়্যাতপ্রাপ্তি ও ওয়াহীর সূচনা
৫৮৪৮-[১২] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদিন তিনি প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! উহুদের দিন অপেক্ষা অধিক কষ্টের কোন দিন আপনার জীবনে এসেছিল কি? তিনি (সা.) বললেন, হ্যা, তোমার সম্প্রদায় হতে যে আচরণ পেয়েছি তা এটা হতেও অধিক কষ্টদায়ক ছিল। তাদের কাছ হতে সর্বাধিক বেদনাদায়ক যা আমি পেয়েছি তা হলো ’আকাবার দিনের আঘাত’ যেদিন আমি (তায়িফের বানী সাকীফ নেতা) ইবনু আবদ ইয়ালীল ইবনু কুলাল-এর কাছে (ইসলামের দাওয়াত নিয়ে) স্বয়ং উপস্থিত হয়েছিলাম। আমি যা নিয়ে তার সামনে উপস্থিত হয়েছিলাম সে তাতে কোন সাড়া দেয়নি। তখন আমি অতি ভারাক্রান্ত অবস্থায় (নিরুদ্দেশ) সম্মুখপানে চলতে লাগলাম, “কারনুস সা’আলিব” নামক স্থানে পৌঁছার পর আমি কিছুটা স্বস্তি হলাম। তখন আমি উপরের দিকে মাথা তুলে দেখতে পেলাম, একখণ্ড মেঘ আমাকে ছায়া করে রেখেছে। পুনরায় লক্ষ্য করলে তাতে জিবরীল আলায়হিস সালাম-কে দেখলাম। তখন তিনি আমাকে আহ্বান করে বললেন, আপনি আপনার গোত্রের কাছে যে কথা বলেছেন এবং তার উত্তরে তারা আপনাকে যা বলেছে, এসব কথা আল্লাহ তা’আলা শুনেছে। এখন তিনি পাহাড় পর্বত তদারককারী মালাক (ফেরেশতা)-কে আপনার কাছে পাঠিয়েছেন। অতএব ঐ সমস্ত লোকেদের সম্পর্কে আপনার যা ইচ্ছা তাকে নির্দেশ দিতে পারেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, অতঃপর ’মালাকুল জিবাল’ আমার নাম নিয়ে আমাকে সালাম করে বললেন, হে মুহাম্মাদ! আল্লাহ তা’আলা আপনার কওমের উক্তিসমূহ শুনেছেন। আমি (পাহাড়-পর্বত নিয়ন্ত্রণকারী ফেরেশতা) আপনার প্রভু আমাকে আপনার কাছে পাঠিয়েছেন। অতএব আপনার যা ইচ্ছা আমাকে নির্দেশ করতে পারেন, আপনি ইচ্ছা করলে এ পাহাড় দুটি তাদের ওপর চাপিয়ে দেব। উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, বরং আশা করি আল্লাহ তা’আলা তাদের ঔরসে এমন বংশধরের জন্ম দেবেন যারা এক আল্লাহর ’ইবাদত করবে, তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবে না। (বুখারী ও মুসলিম)
الفصل الاول (بَاب المبعث وبدء الْوَحْي )
وَعَن عَائِشَة أَنَّهَا قَالَت: هَلْ أَتَى عَلَيْكَ يَوْمٌ كَانَ أَشَدَّ مِنْ يَوْمِ أُحُدٍ؟ فَقَالَ: لَقَدْ لَقِيتُ مِنْ قَوْمِكِ فَكَانَ أَشَدَّ مَا لَقِيتُ مِنْهُمْ يَوْمَ الْعَقَبَةِ إِذْ عرضتُ نَفسِي على ابْن عبد يَا لِيل بْنِ كُلَالٍ فَلَمْ يُجِبْنِي إِلَى مَا أَرَدْتُ فَانْطَلَقْتُ - وَأَنا مهموم - على وَجْهي فَلم أفق إِلَّا فِي قرن الثَّعَالِبِ فَرَفَعْتُ رَأْسِي فَإِذَا أَنَا بِسَحَابَةٍ قَدْ أَظَلَّتْنِي فَنَظَرْتُ فَإِذَا فِيهَا جِبْرِيلُ فَنَادَانِي فَقَالَ: إِنَّ اللَّهَ قَدْ سَمِعَ قَوْلَ قَوْمِكَ وَمَا رَدُّوا عَلَيْكَ وَقَدْ بَعَثَ إِلَيْكَ مَلَكَ الْجِبَالِ لِتَأْمُرَهُ بِمَا شِئْتَ فِيهِمْ . قَالَ: فَنَادَانِي مَلَكُ الْجِبَالِ فَسَلَّمَ عَلَيَّ ثُمَّ قَالَ: يَا مُحَمَّدُ إِنَّ اللَّهَ قَدْ سَمِعَ قَوْلَ قَوْمِكَ وَأَنَا مَلَكُ الْجِبَالِ وَقَدْ بَعَثَنِي رَبُّكَ إِلَيْكَ لِتَأْمُرَنِي بِأَمْرك إِن شِئْت أطبق عَلَيْهِم الأخشبين فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «بَلْ أَرْجُو أَنْ يُخْرِجَ اللَّهُ مِنْ أَصْلَابِهِمْ مَنْ يَعْبُدُ اللَّهَ وَحْدَهُ وَلَا يُشْرِكُ بِهِ شَيْئا» . مُتَّفق عَلَيْهِ متفق علیہ ، رواہ البخاری (3231) و مسلم (111 / 1795)، (4653) ۔ (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: হাদীসে ‘আকাবার দিন বলতে বুঝানো হয়েছে- মিনায় অবস্থিত ‘আকাবাহ্ নামক জায়গাকে। নবী (সা.) উৎসবের সময় ‘আকাবায় অবস্থান করে আরবদের বিভিন্ন গোত্রদেরকে আল্লাহ ও ইসলামের দিকে আহ্বান করতে থাকেন।
(তিনি ইবনু আবদুল ইয়ালীল-কে দাওয়াত দিয়েছিলেন) ইবনু হাজার আল আসক্বালানী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, তার নামই তার উপনাম। আর আল মাগাযী গ্রন্থে এসেছে, নবী (সা.) স্বয়ং ‘আবদ ইয়ালীল-কেই দাওয়াত দিয়েছিলেন। বলা হয়ে থাকে, ‘আবদ ইয়ালীল ইবনু আমর ইবনু ‘আমর। বলা হয়ে থাকে, ইবনু 'আবদ ইয়ালীল এর নাম মাসউদ। ইবনু আবদ ইয়ালীল ছিলেন তায়িফের সাকীফ গোত্রের একজন বড় নেতা। আরো বলা হয়ে থাকে যে, তিনি নুবুওয়্যাতের দশম বছরে ত্বায়িফের প্রতিনিধি দলের সাথে ইসলাম কবুল করেন। ইবনু আবদুল বার (রহিমাহুল্লাহ) তাকে সাহাবীদের মধ্যে গণ্য করেছেন। তবে ওয়াক্বীদি যা উল্লেখ করেছেন তা থেকে বুঝা যায়, তিনি ইসলাম কবুল করেননি। আল্লাহ সবচেয়ে ভালো জানেন।
আমি যখন তাদেরকে দাওয়াত দিলাম তখন তারা আমার দাওয়াতে সাড়া না দিলে আমি খুব মনে কষ্ট পেলাম। আল্লামাহ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, অর্থাৎ আমি পেরেশান হয়ে এদিক ওদিক ছুটাছুটি করলাম। আর এ চিন্তা ছিল খুব কঠিন চিন্তা। আর আমার পেরেশানী দূর হলো “কারনুস সা'আলিব” নামক পাহাড় যা মক্কাহ্ ও ত্বায়িফের মাঝে অবস্থিত এখানে এসে। আমি আকাশের দিকে তাকালাম দু'আ করার উদ্দেশ্যে। তখন দেখলাম পাহাড়ের মালাক আমার কাছে আসছেন। তিনি এসে আমাকে সালাম করলেন। এ সালাম ছিল নবী (সা.) -এর সম্মানার্থে। নবী (সা.) ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও পাহাড়ের মালাককে তাদের ধ্বংসের জন্য ব্যবহার করেননি। তিনি তাদেরকে ক্ষমা করে দেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)