পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর নুবুওয়্যাতপ্রাপ্তি ও ওয়াহীর সূচনা
৫৮৪৭-[১১] আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’উদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (সা.) কা’বার কাছে সালাত আদায় করছিলেন। এ সময় কুরায়শদের একদল লোক সেখানে বসা ছিল। তখন তাদের মধ্য হতে একজন বলল, তোমাদের মধ্যে এমন কে আছে যে অমুক গোত্রের উটের নাড়িভুড়ি এনে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করবে, অতঃপর এ লোক [রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর দিকে ইঙ্গিত করে বলল] যখন সিজদায় যাবে তখন তা তার দুই কাঁধের মাঝখানে রেখে দেবে। অতঃপর তাদের মধ্য হতে সর্বাপেক্ষা বড় পাপিষ্ঠটি উঠে গেল। যখন নবী (সা.) সিজদায় গেলেন তখন সে তা তাঁর দুই কাঁধের মাঝখানে রেখে দিল। এমতাবস্থায় নবী (সা.) সিজদারত রইলেন। সেই পাপিষ্ঠরা খুব হাসাহাসি করতে লাগল, এমনকি হাসতে হাসতে একজন আরেকজনের উপর ঢলে পড়ল। এমন সময় জনৈক ব্যক্তি [ইবনু মাসউদ (রাঃ)] ফাতিমাহ’র নিকট গিয়ে বললেন, তিনি দৌড়িয়ে আসলেন। অথচ নবী (সা.) তখনো পূর্ববৎ সিজদায় রয়েছিলেন। ফাতিমাহ (রাঃ) নাড়িভুঁড়িটি নবী (সা.) -এর ওপর হতে সরিয়ে ফেললেন এবং ঐ সকল পাপিষ্ঠ কাফিরদের লক্ষ্য করে গালমন্দ করলেন। বর্ণনাকারী ইবনু মাউদ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) সালাত শেষ করে তিনবার বললেন, “হে আল্লাহ! তুমি কুরায়শদেরকে ধরাশয়ী কর। আর রাসূল (সা.) -এর নিয়ম ছিল, তিনি যখন কোন বিষয়ে দু’আ বা বদদু’আ করতেন কিংবা আল্লাহর কাছে চাইতেন, তখন তিন তিনবার বাক্যগুলো উচ্চারণ করতেন। অতঃপর তিনি (সা.) (কাফিরদের নাম ধরে) বললেন, হে আল্লাহ! তুমি ১. ’আমর ইবনু হিশাম (আবূ জাহল), ২. ’উতবাহ্ ইবনু রবী’আহ্, ৩, শায়বাহ্ ইবনু রবী’আহ, ৪. ওয়ালীদ ইবনু ’উতবাহ, ৫. উমাইয়্যাহ ইবনু খালফ, ৬. ’উকবাহ্ ইবনু আবূ মু’আয়ত্ব এবং ৭. ’উমারাহ্ ইবনুল ওয়ালীদেরকে পাকড়াও কর।
বর্ণনাকারী আবদুল্লাহ ইবনু মাস’উদ (রাঃ) বলেন, আল্লাহর শপথ! তিনি (সা.) যে সকল লোকের নাম নিয়ে বদদু’আ করেছিলেন, আমি বদরের যুদ্ধে তাদের লাশ মাটিতে পড়ে থাকতে দেখেছি। অতঃপর তাদেরকে টেনে বদরের একটি অনাবাদ কূপের মধ্যে নিক্ষেপ করা হয়েছে। এরপর রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: ঐ কূপে যাদেরকে নিক্ষেপ করা হলো, তাদের ওপর লা’নাতের পর লা’নাত রয়েছে। (বুখারী ও মুসলিম)
الفصل الاول (بَاب المبعث وبدء الْوَحْي )
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: بَيْنَمَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي عِنْدَ الْكَعْبَةِ وَجُمِعَ قُرَيْشٌ فِي مَجَالِسِهِمْ إِذْ قَالَ قَائِلٌ: أَيُّكُمْ يَقُومُ إِلَى جَزُورِ آلِ فُلَانٍ فَيَعْمِدُ إِلَى فَرْثِهَا وَدَمِهَا وَسَلَاهَا ثُمَّ يُمْهِلُهُ حَتَّى إِذَا سَجَدَ وَضَعَهُ بَيْنَ كَتِفَيْهِ وَثَبَتَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَاجِدًا فَضَحِكُوا حَتَّى مَالَ بَعْضُهُمْ عَلَى بَعْضٍ مِنَ الضَّحِكِ فَانْطَلَقَ مُنْطَلِقٌ إِلَى فَاطِمَةَ فَأَقْبَلَتْ تَسْعَى وَثَبَتَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَاجِدًا حَتَّى أَلْقَتْهُ عَنْهُ وَأَقْبَلَتْ عَلَيْهِمْ تَسُبُّهُمْ فَلَمَّا قَضَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الصَّلَاةَ قَالَ: «اللَّهُمَّ عَلَيْكَ بِقُرَيْشٍ» ثَلَاثًا - وَكَانَ إِذَا دَعَا دَعَا ثَلَاثًا وَإِذَا سَأَلَ سَأَلَ ثَلَاثًا -: «اللَّهُمَّ عَلَيْكَ بِعَمْرِو بْنِ هِشَام وَشَيْبَةَ بْنِ رَبِيعَةَ وَالْوَلِيدِ بْنِ عُتْبَةَ وَأُمَيَّةَ بْنِ خَلَفٍ وَعُقْبَةَ بْنِ أَبِي مُعَيْطٍ وَعُمَارَةَ بن الْوَلِيد» . قَالَ عبد الله: فو الله لَقَدْ رَأَيْتُهُمْ صَرْعَى يَوْمَ بَدْرٍ ثُمَّ سُحِبُوا إِلَى الْقَلِيبِ قَلِيبِ بَدْرٍ ثُمَّ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «وَأُتْبِعَ أَصْحَابُ القليب لعنة» . مُتَّفق عَلَيْهِ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (520) و مسلم (107 / 1794)، (4649) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: হাদীসে ঐ ব্যক্তির নাম ছিল আবূ জাহল যে নবী (সা.) -এর ওপর উটের নাড়ি-ভুড়ি চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল। আর তাদের সবচেয়ে নিকৃষ্ট লোক বলতে বুঝানো হয়েছে আবূ জাহল অথবা ‘উবাহ্ ইবনু আবূ মু'আয়ত্ব-কে।
ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, সে হলো ‘উকবাহ্ ইবনু আবূ মু'আয়ত্ব যেটা অন্য বর্ণনা দ্বারা বুঝা যায়। তারপর যখন নবী (সা.) সালাতে সিজদায় রবের সন্তুষ্টি অর্জনে সচেষ্ট ছিলেন তখন সে এসে নবী (সা.) - এর মাথায় উটের ভূড়িটি চাপিয়ে দিয়ে আনন্দোল্লাস করছিল। তারপর ফাতিমাহ্ (রাঃ) ছুটে চলে আসেন, কারণ তখন তার বয়স কম ছিল। যখন নবী (সা.) -এর বয়স ৪১ বছর তখন ফাত্বিমাহ্ (রাঃ) জন্মলাভ করেন। তারপর নবী (সা.) -এর ওপর থেকে সে ভুঁড়িটা সরিয়ে তাদের দিকে এগিয়ে তাদেরকে বকতে ও অভিশাপ দিতে লাগলেন। আর তারা চুপ করে তা শুনতে লাগল, কারণ তখনও ফাত্বিমাহ্ (রাঃ) ছোট ছিলেন। আর তারা হয়তো তার প্রতিবাদ করেনি, কারণ তারা নিজেদের দু' গোত্রের মাঝে লড়াইয়ের ভয় করছিল। তারপর নবী (সা.) সালাত শেষ করে তাদেরকে বদ দু'আ দিলেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
এখানে একটি প্রশ্ন আছে, তা হলো- নবী (সা.) এ অপবিত্র জিনিস নিয়ে কেন সালাত আদায় করলেন? এর জবাবে কাযী ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এটা অপবিত্র ছিল না। কারণ গোবর ও পেটের তাজা জিনিস এ দুটিই পবিত্র, অপবিত্র হলো রক্ত। এটা হলো মালিকী ও তাদের মতো যারা মত পোষণ করেন তাদের মাযহাব যে, যে সকল প্রাণীর গোশত খাওয়া যায় তাদের গোবর পবিত্র। তবে এটা হানাফী মাযহাবে অপবিত্র। হানাফীদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, নবী (সা.) ও তার পিঠে কি আছে তা তিনি জানতে পেরেছিলেন। কারণ অপবিত্র অবস্থায় সালাত হয় না। আর এটা যদি অপবিত্র হত তবে নবী (সা.) -কে জানিয়ে দিতেন। আর এর সঠিক জবাব হলো।
শারহুস্ সুন্নাহ্ কিতাবে এসেছে- বলা হয়ে থাকে যে, এ ঘটনাটি ছিল গোবর, রক্ত ও মুশরিকদের যাবাহ করা কোন জিনিস হারাম হওয়ার পূর্বে। আর তখন হারাম হত না এসব জিনিসে। আর সালাতও বাতিল হত না যেমন- মদ। তারা মদ পান করে তা কাপড়ে লাগলে তারা সে অবস্থায় সালাত আদায় করত। (মিরকাতুল মাফাতীহ)।