পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৫৩৯৩-[১৫] হুযায়ফাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর কসম! আমি বলতে পারি না যে, আমার বন্ধুগণ (সাহাবায়ি কিরামগণ) কি আসলেই ভুলে গিয়েছেন? নাকি না ভুলেও ভুলার ভান করে আছেন? আল্লাহর শপথ করে বলছি, রাসূলুল্লাহ (সা.) এমন কোন ফিতনাকারীর আলোচনা অবশিষ্ট রাখেননি, যা কিয়ামত পর্যন্ত আবির্ভূত হবে এবং তার সাথে উক্ত ফিতনাহ সৃষ্টিকারীদের সংখ্যা তিনশত বা তারও অধিক পর্যন্ত পৌছবে। বরং তিনি ঐ ব্যক্তির নাম, তার পিতার নাম এবং তার বংশ পরিচয়ও আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন। (আবূ দাউদ)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ
عَنْ حُذَيْفَةَ قَالَ: وَاللَّهِ مَا أَدْرِي أَنَسِيَ أَصْحَابِي أَمْ تَنَاسَوْا؟ وَاللَّهِ مَا تَرَكَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ قَائِدِ فِتْنَةٍ إِلَى أَنْ تَنْقَضِيَ الدُّنْيَا يَبْلُغُ مَنْ مَعَهُ ثَلَاثَمِائَةٍ فَصَاعِدًا إِلَّا قَدْ سَمَّاهُ لَنَا بِاسْمِهِ وَاسْمِ أَبِيهِ واسمِ قبيلتِه. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
اسنادہ حسن ، رواہ ابوداؤد (4243) ۔
(ضَعِيف)
ব্যাখ্যা : আলোচ্য হাদীসে রাসূল (সা.) তাঁর ওফাত পরবর্তী সময় হতে দুনিয়ার ধ্বংস হওয়া অবধি তিন শতাধিক মন্দ নেতা ও বিদআতী দা'ঈদের বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা সাহাবীদের জানিয়ে দিয়েছিলেন। যারা মানুষকে বিদ'আতের দিকে আহ্বান করবে ও যুদ্ধ-বিগ্রহের ইন্ধন যোগাবে এবং এতে নেতৃত্ব দিবে। তাদের নাম, পিতা ও গোত্রের নাম এবং অনুসারী সংখ্যাসহ উল্লেখ করেছেন। এটি নবী (সা.) -এর একটি মু'জিযাহূস্বরূপ। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৫৩৯৪-[১৬] সাওবান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আমি আমার উম্মাতের ব্যাপারে পথভ্রষ্টকারী নেতাদের খুব বেশি আশঙ্কা করছি। আর আমার উম্মতের ওপর যখন একবার তলোয়ার চালু হবে, তখন আর কিয়ামত অবধি তাদের হতে উঠবে না। (আবূ দাউদ ও তিরমিযী)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ
وَعَنْ ثَوْبَانَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّمَا أَخَافُ عَلَى أُمَّتِي الْأَئِمَّةَ الْمُضِلِّينَ وَإِذَا وُضِعَ السَّيْفُ فِي أُمَّتِي لَمْ يُرْفَعْ عَنْهُمْ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد والترمذيُّ
صحیح ، رواہ ابوداؤد (4252) و الترمذی (2229 وقال : صحیح) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা : উপর্যুক্ত হাদীস পথভ্রষ্টকারী নেতা দ্বারা পাপাচার ও সীমালঙ্নকারী উদ্দেশ্য। হাদীসের শেষাংশ আহলে হক দ্বারা জ্ঞানে ও ‘আমলে সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত জামা'আতকে বুঝানো হয়েছে। যারা সর্বদাই বাতিলের উপর বিজয়ী থাকবে।
(সহীহ মুসলিম ১৯২০, আবূ দাউদ ৪২৫২, ইবনু মাজাহ (ভূমিকা) ৩৯৫২, তিরমিযী ২১৭৬, ২২২০)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৫৩৯৫-[১৭] সাফীনাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী (সা.) -কে বলতে শুনেছি। [রাসূল (সা.) এ বলেছেন] খিলাফত ত্রিশ বছর অবশিষ্ট থাকবে। অতঃপর তা রাজতন্ত্রে পরিবর্তিত হয়ে যাবে। বর্ণনাকারী সাফীনাহ (রাঃ) বলেন, তা এরূপে বর্ণনা করে নাও- আবূ বা সিদ্দীক (রাঃ)-এর খিলাফতকাল দু বছর, ’উমার (রাঃ)-এর খিলাফতকাল দশ বছর, উসমান (রাঃ)-এর বারো বছর এবং ’আলী (রাঃ)-এর ছয় বছর। (আহমাদ, তিরমিযী ও আবূ দাউদ)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ
وَعَن سفينة قَالَ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «الْخِلَافَةُ ثَلَاثُونَ سَنَةً ثُمَّ تَكُونُ مُلْكًا» . ثُمَّ يَقُولُ سَفِينَةُ: أَمْسِكْ: خِلَافَةَ أَبِي بَكْرٍ سَنَتَيْنِ وَخِلَافَةَ عُمَرَ عَشْرَةً وَعُثْمَانَ اثْنَتَيْ عَشْرَةَ وَعَلِيٍّ سِتَّةً. رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ
اسنادہ حسن ، رواہ احمد (5 / 220 ۔ 221 ح 22264) و الترمذی (2226 وقال : حسن) و ابوداؤد (4646) ۔
(حسن)
ব্যাখ্যা : উপর্যুক্ত হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা.) ও নুবুওয়্যাতের পর খিলাফত কতদিন স্থায়ী হবে তার একটি মেয়াদ উল্লেখ করেছেন। তৎপরবর্তী সময়ে মুসলিম বিশ্বে রাষ্ট্র ব্যবস্থার ধরণ কিরূপ হবে তা প্রিয়নবী (সা.) উপস্থাপন করেছেন।
খিলাফাতে রাশিদার মেয়াদকাল ছিল ৩০ বছর। আবূ বাকর (রাঃ) ২ বছর ৩ মাস ১০ দিন, ‘উমার (রাঃ)- ১০ বছর ৬ মাস ৮ দিন, ‘উসমান (রাঃ) ১১ বছর ১১ মাস ৯ দিন, ‘আলী (রাঃ) ৪ বছর ৯ মাস ৭ দিন, হাসান (রাঃ) ৭ মাস।
মুসনাদে আহমাদে সাফীনাহ্ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে এসেছে, আমার উম্মতের খিলাফতকাল হবে ৩০ বছর। অতঃপর রাজা-বাদশাহদের রাজত্ব কায়িম হবে। ইমাম বায়হাক্বী তদীয় ‘আল মাদখাল’ গ্রন্থে সাফীনাহ্ কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে উল্লেখিত আছে- প্রথম রাজত্ব ছিল মু'আবিয়াহ্ (রাঃ)-এর অধীন। শারহুস্ সুন্নাহ গ্রন্থে রয়েছে, যারা খিলাফাতে রাশিদার আদলে সুন্নাতে রাসূল (সা.) -কে আঁকড়ে ধরে শাসনকার্য পরিচালনা করেছেন তারাই খলীফাহ্। পক্ষান্তরে যারা খিলাফাতে রাশিদার পরিপন্থী কাজ করেছেন তারা নিজেদেরকে খলীফাহ্ দাবী করলেও সেই দাবী যথার্থ নয়। বরং তারা রাজা হিসেবে গণ্য হবেন।
ইমাম বুখারী (রহিমাহুল্লাহ) তদীয় ‘তারীখ’ গ্রন্থে এবং ইমাম হাকিম তার মুসতাদরাক গ্রন্থে আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত, খিলাফত হবে মদীনায় এবং রাজতন্ত্র হবে শাম দেশে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৫৩৯৬-[১৮] হুযায়ফাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একবার প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর রাসূল (সা.)! এখন আমরা যে ভালো যুগে (ইসলামে) অবস্থান করছি, এর পরে কি কোন খারাপ যুগ আসবে যেমন। এটার (ইসলামের) পূর্বে (জাহিলিয়্যাত) ছিল? তিনি (সা.) বললেন, হ্যা, আসবে। আমি প্রশ্ন করলাম, তা হতে বেঁচে থাকার উপায় কি? তিনি (সা.) বললেন, তলোয়ার (বাতিলের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে অস্ত্র ধারণ করতে হবে)।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, আচ্ছা সেই তলোয়ারী যুগের পরে কি মুসলিমের অস্তিত্ব থাকবে? তিনি (সা.) বললেন, হ্যা, থাকবে। তবে তখন প্রতিষ্ঠিত হবে রাজতন্ত্র। তার উৎপত্তি হবে মানুষের ঘৃণার উপর এবং সন্ধি-চুক্তি হবে ধোঁকার উপর। আমি জিজ্ঞেস করলাম, তারপর কি হবে? তিনি (সা.) বললেন, অতঃপর গোমরাহীর দিকে আহ্বানকারী লোকের আগমন ঘটবে। তখন যদি আল্লাহর এই জমিনে কোন শাসক থাকে এবং সে তোমার পৃষ্ঠে অন্যায়ভাবে চাবুক মারে এবং (জোরপূর্বক) তোমার মাল-সম্পদ ছিনিয়েও নেয়, তবুও তুমি তার আনুগত্য কর।
যদি কোন শাসক না থাকে তবে তোমার মৃত্যু যেন এই অবস্থায় হয় যে, তুমি (সকল সম্পর্ক ত্যাগ করে) কোন গাছের গোড়ায় আশ্রয় গ্রহণকারী হবে। (নির্জনে থাকবে) আমি প্রশ্ন করলাম, তারপর কি হবে? তিনি বললেন, অতঃপর দাজ্জালের আগমন ঘটবে। তার সঙ্গে থাকবে নদী ও আগুন। যে ব্যক্তি উক্ত অগ্নিকুণ্ডে পড়বে, (আল্লাহর নিকট) তার প্রতিদান সাব্যস্ত হয়ে যাবে এবং তার পূর্বের গুনাহসমূহ মাফ হয়ে যাবে। আর যে ব্যক্তি তার নহরে প্রবেশ করবে তার পাপ অবধারিত হয়ে যাবে এবং তার (নেক ’আমলের) প্রতিদান বাতিল হয়ে যাবে। হুযায়ফাহ্ (রাঃ) বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, তারপর কি হবে? তিনি (সা.) বললেন, ঘোড়ার বাচ্চা লাভ করা হবে, কিন্তু তা আরোহণের উপযুক্ত হওয়ার পূর্বেই কিয়ামত কায়িম হয়ে যাবে। অপর এক বর্ণনায় আছে, সেই ফিতনার সন্ধি চুক্তি হবে ধোঁকার উপর এবং জামা’আতবন্দি হবে ঘৃণার উপর। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল (সা.)! প্রতারণার চুক্তির অর্থ কী? তিনি (সা.) বলেলেন, লোকজনের অন্তর আগের অবস্থায় ফিরে আসবে না। আমি প্রশ্ন করলাম, সেই ভালোর পরেও কি কোন খারাপ আসবে? তিনি (সা.) বললেন, হ্যা, এরপরে এসে পড়বে অন্ধ ও বধির ফিতনাহ্ (তখন আর তা হতে বের হওয়ার কোন পথও থাকবে না)। সে সময় এক দল লোক জাহান্নামের দাঁড়িয়ে ফিতনার দিকে আহ্বানকারী হবে। হে হুযায়ফাহ! সেই সময় এ সকল আহ্বানকারীর কারো অনুসরণ করা। অপেক্ষা যদি তুমি গাছের শিকড় অবলম্বন করে মৃত্যুবরণ কর, তা হবে তোমার পক্ষে উত্তম। (আবূ দাউদ)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ
وَعَنْ حُذَيْفَةَ قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَيَكُونُ بَعْدَ هَذَا الْخَيْرِ شَرٌّ كَمَا كَانَ قَبْلَهُ شَرٌّ؟ قَالَ: «نَعَمْ» قُلْتُ: فَمَا الْعِصْمَةُ؟ قَالَ: «السَّيْفُ» قُلْتُ: وَهَلْ بَعْدَ السَّيْفِ بَقِيَّةٌ؟ قَالَ: «نعمْ تكونُ إِمارةٌ على أَقْذَاءٍ وَهُدْنَةٌ عَلَى دَخَنٍ» . قُلْتُ: ثُمَّ مَاذَا؟ قَالَ: «ثُمَّ يَنْشَأُ دُعَاةُ الضَّلَالِ فَإِنْ كَانَ لِلَّهِ فِي الْأَرْضِ خَلِيفَةٌ جَلَدَ ظَهْرَكَ وَأَخَذَ مَالَكَ فَأَطِعْهُ وَإِلَّا فَمُتْ وَأَنْتَ عَاضٌّ عَلَى جَذْلِ شَجَرَةٍ» . قُلْتُ: ثُمَّ مَاذَا؟ قَالَ: «ثُمَّ يَخْرُجُ الدَّجَّالُ بَعْدَ ذَلِكَ مَعَهُ نَهْرٌ وَنَارٌ فَمَنْ وَقَعَ فِي نَارِهِ وَجَبَ أَجْرُهُ وَحُطَّ وِزْرُهُ وَمَنْ وَقَعَ فِي نَهْرِهِ وَجَبَ وِزْرُهُ وحظ أَجْرُهُ» . قَالَ: قُلْتُ: ثُمَّ مَاذَا؟ قَالَ: «ثُمَّ يُنْتَجُ الْمُهْرُ فَلَا يُرْكَبُ حَتَّى تَقُومَ السَّاعَةُ» وَفِي رِوَايَة: «هُدْنَةٌ عَلَى دَخَنٍ وَجَمَاعَةٌ عَلَى أَقْذَاءٍ» . قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ الْهُدْنَةُ عَلَى الدَّخَنِ مَا هِيَ؟ قَالَ: «لَا ترجع قُلُوب أَقوام كَمَا كَانَتْ عَلَيْهِ» . قُلْتُ: بَعْدَ هَذَا الْخَيْرِ شَرٌّ؟ قَالَ: «فِتْنَةٌ عَمْيَاءُ صَمَّاءُ عَلَيْهَا دُعَاةٌ عَلَى أَبْوَابِ النَّارِ فَإِنْ مُتَّ يَا حُذَيْفَةُ وَأَنْتَ عَاضٌّ عَلَى جَذْلٍ خَيْرٌ لَكَ مِنْ أَنْ تتبع أحدا مِنْهُم» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
صحیح ، رواہ ابوداؤد (4244 ، صحیح ، 4247 ، حسن) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা : আলোচ্য হাদীসে এই উম্মাতের শেষ যামানায় যেসব ফিতনার আবির্ভাব হবে তার ধরণ উল্লেখ করা হয়েছে। হাদীসে বলা হয়েছে, ফিতনাহ হবে অন্ধ ও বধির। ফিতনাকে অন্ধ বলা হয়েছে এজন্য যে, এ সময়ে বিরাজমান মানুষজন সত্যপথ দেখতে ব্যর্থ হবে বা হক খুঁজে পেতে সক্ষম হবে না এবং সত্য কথা ও উপদেশ শুনবে না বা তা শুনতে অক্ষম হবে। তবে হাদীসের প্রথমাংশে যে তলোয়ারের কথা বলা হয়েছে, সেটিকে কতিপয় সাহাবায়ি কিরাম রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর ওফাতের পর আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ)-এর যুগে মুরতাদদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণের ইঙ্গিত রয়েছে। যা সূরা আল হুজুরাতের ৯ নং আয়াতে ঘোষণা করা হয়েছে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
ইমাম কাযী ‘ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ)-এর মতে এ সময় মানুষেরা ফিতনাহ থেকে বাঁচার কোন পথ পাবে না। সত্য কথা ও উপদেশ গ্রহণের ক্ষেত্রে মানুষেরা উপলব্ধি ও অনুধাবন শক্তি হারিয়ে ফেলবে। সে সময় কতক আহ্বানকারী/একদল দা'ঈর উদ্ভব হবে যারা মানুষকে জাহান্নামের দিকে দৃঢ়ভাবে আহ্বান করবে। অবস্থা এমন হবে যে, তারা যেন জাহান্নামের দরজায় দাঁড়িয়ে মানুষকে তাতে প্রবেশের আহ্বান জানাবে। সে সময়ে রাসূল (সা.) -এর নির্দেশনা হলো, এ সময় প্রয়োজনে গাছের গুড়ি আঁকড়ে থাকতে হবে। তবুও সেসব দা'ঈ/আহ্বানকারীর আহ্বানে সাড়া দেয়া যাবে না এবং ফিতনায় জড়ানো যাবে না।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৫৩৯৭-[১৯] আবূ যার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর পিছনে একটি গাধার উপরে আরোহী ছিলাম। যখন আমরা মদীনার গ্রামাঞ্চল অতিক্রম করে বাহিরে গেলাম, তখন তিনি আমাকে বললেন, হে আবূ যার! তখন তোমার কি অবস্থা হবে যখন মদীনায় এমন দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে যে, ক্ষুধার তাড়নায় তুমি নিজ বিছানা হতে উঠে মসজিদ পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে না, এমনকি ক্ষুধা তোমাকে পেরেশানী করে ফেলবে। আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই বেশি জানেন। তিনি (সা.) বললেন, হে আবূ যার! তখন তুমি আত্মসংযম করবে (হারাম কিংবা সন্দেহযুক্ত মাল ভক্ষণ করো না)। তিনি (সা.) পুনরায় বললেন, হে আবূ যর! তখন তোমার অবস্থা কিরূপ হবে যখন মদীনায় এমন মহামারি দেখা দেবে যে, একটি ঘর একটি গোলামের মূল্যের সমপরিমাণে পৌছবে, এমনকি একটি কবরের স্থান একটি গোলামের বিনিময়ে বিক্রয় হবে। আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই অধিক জানেন। তিনি (সা.) বললেন, হে আবূ যার! তখন তোমার অবস্থা কি হবে যখন মদীনায় এমন এক হত্যাযজ্ঞের সূচনা হবে যার রক্ত ’আজারু যায়ত নামক স্থানকে ডুবিয়ে ফেলবে। আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই অধিক ভালো জানেন। তিনি (সা.) বললেন, তখন তুমি তার কাছেই চলে যাবে যার সাথে তুমি সম্পর্কিত (নিজের পরিবার অথবা নিজ ইমামের নিকট)। আমি বললাম, তবে কি আমি অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হব? তিনি (সা.) বললেন, যদি তুমি এরূপ কর তাহলে তুমিও সে দলের সাথে শামিল হয়ে যাবে। আমি বললাম, তাহলে আমি কি করব? হে আল্লাহর রসল। তখন তিনি (সা.) বললেন, যদি তুমি তলোয়ারের চাকচিক্যকে ভয় কর (তলোয়ারের সম্মুখে ভয় পাও), তাহলে পরিহিত কাপড়ের একাংশ স্বীয় মুখের উপরে স্থাপন করবে, যাতে সে তোমার ও নিজের পাপ বহন করে। (আবূ দাউদ)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ
وَعَن أبي ذَر قَالَ: كُنْتُ رَدِيفًا خَلْفَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمًا علىحمار فَلَمَّا جَاوَزْنَا بُيُوتَ الْمَدِينَةِ قَالَ: «كَيْفَ بِكَ يَا أَبَا ذَرٍّ إِذَا كَانَ بِالْمَدِينَةِ جُوعٌ تَقُومُ عَنْ فِرَاشِكَ وَلَا تَبْلُغُ مَسْجِدَكَ حَتَّى يُجْهِدَكَ الْجُوعُ؟» قَالَ: قُلْتُ: اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ. قَالَ: «تَعَفَّفْ يَا أَبَا ذَرٍّ» . قَالَ: «كَيْفَ بِكَ يَا أَبَا ذَرٍّ إِذَا كَانَ بِالْمَدِينَةِ مَوْتٌ يَبْلُغُ الْبَيْتَ الْعَبْدُ حَتَّى إِنَّهُ يُبَاعُ الْقَبْرُ بِالْعَبْدِ؟» . قَالَ: قُلْتُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ. قَالَ: «تَصْبِرُ يَا أَبَا ذَرٍّ» . قَالَ: «كَيْفَ بِكَ يَا أَبَا ذَرٍّ إِذَا كَانَ بِالْمَدِينَةِ قَتْلٌ تَغْمُرُ الدِّمَاءُ أَحْجَارَ الزَّيْتِ؟» قَالَ: قُلْتُ: اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ. قَالَ: «تَأْتِي مَنْ أَنْتَ مِنْهُ» . قَالَ: قُلْتُ: وَأَلْبَسُ السِّلَاحَ؟ قَالَ: «شَارَكْتَ الْقَوْمَ إِذًا» . قُلْتُ: فَكَيْفَ أَصْنَعُ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: «إِنْ خَشِيتَ أَنْ يَبْهَرَكَ شُعَاعُ السَّيْفِ فَأَلْقِ نَاحِيَةَ ثَوْبِكَ عَلَى وَجْهِكَ لِيَبُوءَ بإِثمك وإِثمه» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
حسن ، رواہ ابوداؤد (4261) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা : আলোচ্য হাদীসে প্রিয় নবী (সা.) আবূ যার (রাঃ)-কে চরম ফিতনার সময় নিজেকে শংকামুক্ত রাখার জন্য হানাহানিতে লিপ্ত হতে কঠোরভাবে বারণ করেছেন। এমনকি কেউ যদি কাউকে তলোয়ার দিয়ে হত্যা করতে উদ্যত হয় তাকে প্রতিরোধ করতেও নিষেধ করেছেন। এমতাবস্থায় নিহত হলেও যুদ্ধে লিপ্ত হওয়া যাবে না। এ সময় কেউ যদি কোন মু'মিনকে হত্যা করতে উদ্যত হয় প্রতিরোধ করা যাবে না। নিহত হলে আদম আলাইহিস সালাম-এর পুত্র হাবিলের মতো নিজেকে মৃত্যুর জন্য সমর্পণ করতে হবে।
ইমাম নববী (রহিমাহুল্লাহ)-এর মতে তলোয়ার বা ধারালো অস্ত্র ভোঁতা করার মর্ম হচ্ছে বিশৃঙ্খলা ও হানাহানিতে শরীক হওয়ার পথরুদ্ধ করতে হবে। সে সময় মৃত্যুকে বরণ করার মাধ্যমে ধৈর্যধারণ করতে হবে। কেননা, বিশৃঙ্খলার মুহূর্তে আন্দোলনে শরীক হওয়ার চাইতে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করাই উত্তম। আন্দোলনে শরীক হলে ফিতনাহ্ আরো বৃদ্ধি পাবে। (ইবনু মাজাহ হা. ৩৯৫৭, আবূ দাউদ হা. ৪৩৩৪)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৫৩৯৮-[২০] ’আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদিন নবী (সা.) তাকে লক্ষ্য করে বললেন, (হে ’আবদুল্লাহ!) তখন তোমার কিরূপ হবে? যখন তুমি নিকৃষ্ট ও ইতর লোকদের মধ্যে যাবে, তাদের অস্বীকার ও আমানতের মাঝে ভেজাল এসে যাবে এবং পরস্পরে ঝগড়ায় লিপ্ত হয়ে পড়বে। তাদের অবস্থা হবে এরূপ এবং (এ কথা বলে) উভয় হাতের অঙ্গুলিসমূহকে পরস্পরের মধ্যে ঢুকালেন। ’আবদুল্লাহ আল বললেন, তখন আমার কর্তব্য কি হবে, আপনিই আমাকে নির্দেশ করুন। তখন তিনি (সা.) বললেন, যে কাজটি তুমি সত্য ও ভালো বলে জানো, কেবলমাত্র তাই করবে এবং যা অসত্য ও খারাপ বলে জানো তা দূরে সরিয়ে রাখবে। অপর এক বর্ণনায় আছে, নিজ ঘরে বসে থাকো, নিজের মুখ ও জবানকে নিজ আয়ত্তে রাখো আর যা ভালো মনে কর, শুধু তাই কর এবং খারাপকে বর্জন কর। শুধুমাত্র নিজের ব্যাপারে সচেতন থাকো এবং সর্বসাধারণ মানুষ সম্পর্কে চিন্তাভাবনা পরিহার কর। (ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং তিনি বলেন, হাদীসটি সহীহ)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «كَيْفَ بِكَ إِذَا أُبْقِيتَ فِي حُثَالَةٍ مِنَ النَّاسِ مَرَجَتْ عُهُودُهُمْ وَأَمَانَاتُهُمْ؟ وَاخْتَلَفُوا فَكَانُوا هَكَذَا؟» وَشَبَّكَ بَيْنَ أَصَابِعِهِ. قَالَ: فَبِمَ تَأْمُرُنِي؟ قَالَ: «عَلَيْكَ بِمَا تَعْرِفُ وَدَعْ مَا تُنْكِرُ وَعَلَيْكَ بِخَاصَّةِ نَفْسِكَ وَإِيَّاكَ وَعَوَامِّهِمْ» . وَفِي رِوَايَةٍ: «الْزَمْ بَيْتَكَ وَأَمْلِكْ عَلَيْكَ لِسَانَكَ وَخُذْ مَا تَعْرِفُ وَدَعْ مَا تُنْكِرُ وَعَلَيْكَ بِأَمْرِ خَاصَّةِ نَفْسِكَ ودع أَمر الْعَامَّة» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَصَححهُ
اسنادہ حسن ، رواہ الترمذی (لم اجدہ) و ابوداؤد (4342 ۔ 4343) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা : আলোচ্য হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ফিতনার যুগে মানুষকে চেনা কঠিন হয়ে যাবে। কেননা, প্রতিনিয়ত মানুষের চিন্তা-চেতনা, ‘আমাল-আখলাক, কাজকর্ম ও চলাফেরা পরিবর্তিত হবে। সে কারণেই মু'মিনদেরকে সতর্কতার সাথে জীবনযাপনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। (ইবনু মাজাহ হা. ৩৯৫৭, আবূ দাউদ হা. ৪৩৪২)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৫৩৯৯-[২১] আবূ মূসা (রাঃ) নবী (সা.) হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সা.) বলেছেন: কিয়ামত আসার আগে ঘোর অন্ধকার রাত্রির একাংশের মতো ফিতনাহ্ সংঘটিত হতে থাকবে তাতে কোন ব্যক্তি সকালে মু’মিন এবং বিকালে কাফির এবং বিকালে মু’মিন এবং সকালে কাফিরে পরিণত হতে থাকবে। তাতে বসা ব্যক্তি দণ্ডায়মান ব্যক্তির তুলনায় উত্তম হবে। আর চলমান ব্যক্তি দ্রুতগামী ব্যক্তি অপেক্ষা উত্তম হবে। তখন তোমরা তোমাদের ধনুকগুলো ভেঙ্গে ফেলবে এবং তার রশিগুলো কেটে দিবে। আর তোমাদের তলোয়ার পাথরে ঘষে তার ধার নষ্ট করে দেবে। এ সময় যদি কেউ আগ্রাসী হয়ে তোমাদের কাউকে আক্রমণ করে, তখন সে যেন আদাম (আঃ)-এর দুই ছেলের মধ্যে উত্তম ছেলের নীতি অনুসরণ করে। (আবূ দাউদ)
আবূ দাউদ-এর অপর এক বর্ণনায়, (خَيْرٌ مِّنَ السَّاعِىْ) “দ্রুতগামী অপেক্ষা উত্তম” পর্যন্ত বর্ণনা করা হয়েছে। অতঃপর সাহাবীগণ প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (সা.)! আমাদেরকে সে সময় কী করতে নির্দেশ দেন? তিনি (সা.) বললেন, সেই সময় তোমরা আপন ঘরের চট হয়ে যাও। (বিছানা যেমন ঘরে পড়ে থাকে, তেমন তোমরাও ঘরে বসে থাকবে, অর্থাৎ ফিতনায় জড়িত হবে না)।
আর তিরমিযীর বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: ফিতনার সময় তোমরা নিজেদের ধনুক ভেঙ্গে ফেল এবং তার রশি কেটে ফেল। গৃহের ভিতরে আবদ্ধ থাক এবং আদাম (আঃ)-এর পুত্র (হাবিল)-এর নীতি অনুসরণ কর। ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, হাদীসটি সহীহ গরীব।
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ
وَعَنْ أَبِي مُوسَى عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ: «إِنَّ بَيْنَ يَدَيِ السَّاعَةِ فِتَنًا كَقِطَعِ اللَّيْلِ الْمُظْلِمِ يُصْبِحُ الرَّجُلُ مُؤْمِنًا وَيُمْسِي كَافِرًا وَيُمْسِي مُؤْمِنًا وَيُصْبِحُ كَافِرًا الْقَاعِد خير من الْقَائِم والماشي خَيْرٌ مِنَ السَّاعِي فَكَسِّرُوا فِيهَا قِسِيَّكُمْ وَقَطِّعُوا فِيهَا أَوْتَارَكُمْ وَاضْرِبُوا سُيُوفَكُمْ بِالْحِجَارَةِ فَإِنْ دُخِلَ عَلَى أَحَدٍ مِنْكُمْ فَلْيَكُنْ كَخَيْرِ ابْنَيْ آدَمَ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد. وَفِي رِوَايَة لَهُ (ضَعِيف) : «ذَكَرَ إِلَى قَوْلِهِ» خَيْرٌ مِنَ السَّاعِي ثُمَّ قَالُوا: فَمَا تَأْمُرُنَا؟ قَالَ: كُونُوا أَحْلَاسَ بُيُوتِكُمْ . وَفِي رِوَايَةِ التِّرْمِذِيِّ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ فِي الْفِتْنَةِ: «كَسِّرُوا فِيهَا قِسِيَّكُمْ وَقَطِّعُوا فِيهَا أَوْتَارَكُمْ وَالْزَمُوا فِيهَا أَجْوَافَ بُيُوتِكُمْ وَكُونُوا كَابْنِ آدَمَ» . وَقَالَ: هَذَا حديثٌ صحيحٌ غريبٌ
اسنادہ حسن ، رواہ ابوداؤد (4259 ، 4262) و الترمذی (2204) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা : কিয়ামাতের পূর্বে আবির্ভূত আলামাতসমূহের অন্যতম হলো মানুষের ব্যক্তিগত অবস্থা দ্রুত পরিবর্তন হবে। প্রভাতে কেউ মুসলিম থাকলে সন্ধ্যায় সে নানা কারণে কাফির হয়ে যাবে। সে কারণে নিজের ইসলাম ও ঈমান সুরক্ষায় সাধারণ মানুষের সংস্পর্শ হতে নিজেকে দূরে রাখতে হবে। সে সময়ের বিশাল পরিস্থিতি হতে মুক্ত থাকতে নিজস্ব ধারালো অস্ত্রপাতি ভোঁতা করে দিতে হবে। যেন মারামারি হানাহানিতে লিপ্ত হওয়ার কোন সুযোগ না থাকে। (ইবনু মাজাহ হা. ৩৯৬১, আবূ দাউদ হা. ৪২৫৯)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৫৪০০-[২২] উম্মু মালিক আল বাহিযিয়্যাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ (সা.) ফিতনার আলোচনা করলেন এবং তা খুবই কাছে বলেও বর্ণনা করলেন। তখন আমি প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর রাসূল (সা.)! সেই সময় উত্তম ব্যক্তি কে? তিনি (সা.) বললেন, যে ব্যক্তি নিজের গবাদি পশুর মধ্যে থেকে তার অধিকার (যাকাত ইত্যাদি) আদায় করবে এবং নিজ পারোয়ারদিগারের ’ইবাদতে ব্যস্ত থাকবে। আর যে ব্যক্তি নিজের ঘোড়ার উপর আরোহণ করে শত্রুদের মধ্যে ভয়ের সঞ্চার করবে এবং শত্রুরা তাকে ভয় দেখাবে। (তিরমিযী)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ
وَعَن أم مَالك البهزية قَالَتْ: ذَكَرَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِتْنَةً فَقَرَّبَهَا. قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ مَنْ خَيْرُ النَّاسِ فِيهَا؟ قَالَ: «رَجُلٌ فِي مَاشِيَتِهِ يُؤَدِّي حَقَّهَا وَيَعْبُدُ رَبَّهُ وَرَجُلٌ أَخَذَ برأسٍ فرأسه يخيف الْعَدو ويخوفونه» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
سندہ ضعیف ، رواہ الترمذی (2177 وقال : غریب) * الرجل مجھول او ھو لیث بن ابی سلیم ضعیف مشھور و روی الحاکم (4 / 446 ح 8380) عن ابن عباس قال قال رسول اللہ صلی اللہ علیہ و آلہ و سلم : ((خیر الناس فی الفتن رجل آخذ بعنان فرسہ)) او قال : ((برسن فرسہ خلف اعداء اللہ یخیفھم و یخیفونہ او رجل معتزل فی بادیتہ یؤدی حق اللہ تعالیٰ الذی علیہ۔)) و سندہ حسن
ব্যাখ্যা : আলোচ্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা.) ফিতনার যুগে উত্তম মানুষের গুণাবলি সম্পর্কে বর্ণনা দিয়েছেন। যারা নিজেকে ফিতনাহমুক্ত রাখতে চান তাদের কর্তব্য হচ্ছে নিজের পশুপাল নিয়ে নির্জনে অবস্থান ও আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন থাকা। সেই সাথে কাফির-মুশরিকদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম পরিচালনা করা ও মুসলিমদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা। (তুহফাতুল আহওয়াযী হা, ২১৭৭, মুসনাদে আহমাদ হা. ৬/৪১৯, তবারানী কাবীর হা. ২৫/১৫০, সহীহ আল জামি হা. ৩২৯২)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৫৪০১-[২৩] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: অদূর ভবিষ্যতে এমন ভয়াবহ ফিতনাহ দেখা দেবে, যা গোটা আরবভূমিকে গ্রাস করে ফেলবে। তাতে যারা নিহত হবে তারা জাহান্নামী। উক্ত হট্টগোলের সময় মুখের ভাষা হবে তলোয়ারের আঘাত অপেক্ষা অধিক ক্ষতিকর। (তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «سَتَكُونُ فِتْنَةٌ تَسْتَنْظِفُ الْعَرَبَ قَتْلَاهَا فِي النَّارِ اللِّسَانُ فِيهَا أَشَدُّ مِنْ وَقْعِ السَّيْفِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَابْن مَاجَه
اسنادہ ضعیف ، رواہ الترمذی (2178 وقال : غریب) و ابن ماجہ (3967) [و ابوداؤد (4256)] * زیاد : مجھول الاحال و لیث بن ابی سلیم : ضعیف ۔
(ضَعِيف)
ব্যাখ্যা : অচিরেই তারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে, কেননা যে কাজের কারণে জাহান্নামে প্রবেশ করা আবশ্যক হয়ে যায় সে কাজগুলোতে তারা সরাসরি লিপ্ত ছিল। যেমন আল্লাহ তা'আলার বাণী : “নিশ্চয় পুন্যবানগণ থাকবে নি'আমাতপূর্ণ জান্নাতে এবং পাপিষ্ঠরা থাকবে জাহান্নামে।” (সূরাহ্ ইনফিত্বা-র ৮২ : ১৩-১৪)
আল ক্বাযী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন : হাদীসে উল্লেখিত ফিতনায় নিহতদের দ্বারা উদ্দেশ্য হলো নিশ্চয় তারা জাহান্নামের অধিবাসী, কেননা উক্ত যুদ্ধে তারা দীনকে সমুন্নত কিংবা অত্যাচারীদের প্রতিহত করা বা অত্যাচারিতদের সাহায্য করার উদ্দেশে করেনি বরং তারা সম্পদ ও নেতৃত্ব পাওয়ার লোভে সে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল, বিধায় তারা জাহান্নামী। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৬ষ্ঠ খণ্ড, ২৯ পৃষ্ঠা, হা, ২১৭৮)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৫৪০২-[২৪] আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: অদূর ভবিষ্যতে বোবা, বধির অন্ধ ফিতনাহ্ দেখা দেবে। যে ব্যক্তি তার দিকে দৃষ্টি দিবে উক্ত ফিতনাও তার দিকে দৃষ্টি দিবে, তাতে কথাবার্তায় অংশগ্রহণ করা তলোয়ারের আঘাতের মতো ক্ষতিকর হবে। (আবূ দাউদ)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «سَتَكُونُ فِتْنَةٌ صَمَّاءُ بكماء عمياءُ مَنْ أَشْرَفَ لَهَا اسْتَشْرَفَتْ لَهُ وَإِشْرَافُ اللِّسَانِ فِيهَا كوقوع السَّيْف» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
اسنادہ ضعیف ، رواہ ابوداؤد (4264) * عبد الرحمن بن البیلمانی : ضعیف ۔
(ضَعِيف)
ব্যাখ্যা : আলোচ্য হাদীসে নবী (সা.) -এর বাণী : “অচিরেই বোবা, বধির ও অন্ধের ফিতনার আত্মপ্রকাশ ঘটবে”। এর অর্থ হলো : তারা সত্য-মিথ্যার কোন পার্থক্য করবে না, তারা দীনের কোন নসীহত শুনবে না এবং তারা সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজে বাধা প্রদান করবে না। বরং যে সত্যের স্বপক্ষে কথা বলবে তাকে বিভিন্নভাবে কষ্ট দেয়া হবে এবং ফিতনাহ্ বিপর্যয়ের মধ্যে ফেলে দেয়া হবে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৫৪০৩-[২৫] ’আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমরা নবী (সা.) -এর নিকট বসা ছিলাম। তখন তিনি (সা.) নানাবিধ ফিতনাহ্ সম্পর্কে আলোচনা করলেন, এমনকি ’ফিতনায়ে আহলাস’-এরও উল্লেখ করলেন। জনৈক ব্যক্তি প্রশ্ন করল, ’ফিতনায়ে আহলাস’ কি? তিনি (সা.) বললেন, তাতে পলায়নপর হবে (পরস্পরের মধ্যে শত্রুতার দরুন একে অন্য থেকে পলায়ন করবে) এবং ছিনতাই হবে। অতঃপর দেখা দেবে ’ফিতনাতুস্ সারা’ (ধনের প্রাচুর্যের বিলাসিতায় লিপ্ত হয়ে হওয়ার ফিতনাহ্), উক্ত ফিতনার ধোঁয়া আমার পরিবারস্থ এক ব্যক্তির পায়ের নিচ হতে উৎপত্তি লাভ করবে। সে আমার বংশের লোক বলে দাবি করবে, অথচ প্রকৃতপক্ষে সে আমার আপনজনদের মধ্যে হবে না। মূলত পরহেজগার লোকই হলেন আমার বন্ধু। অতঃপর লোকেরা এমন ব্যক্তির ওপর ক্ষমতা হস্তান্তরে একমত হবে, যে পাঁজরের হাড়ের উপর নিতম্বের মতো হবে (অনভিজ্ঞ ও অযোগ্য ব্যক্তিই হবে তাদের অধিনায়ক)। তারপর শুরু হবে অন্ধকারাচ্ছন্ন ফিতনাহ্ তা কাউকেও ছাড়বে না, বরং প্রত্যেক ব্যক্তিকে এক একটি চপেটাঘাত লাগাবেই (অর্থাৎ ফিতনার শিকার হয়ে পড়বে)। আর যখন বলা হবে ফিতনার পরিসমাপ্তি ঘটেছে, তখন তা এত প্রসারিত হবে যে, মানুষ ভোরে ঈমানদার হয়ে উঠবে, কিন্তু সন্ধ্যায় সে কাফির হয়ে যাবে। পরিশেষে সকল মানুষ দুটি তাবুতে (দলে) বিভক্ত হয়ে যাবে। এক দল হবে ঈমানের, এখানে মুনাফিকী থাকবে না। আর অপর দল হবে মুনাফিক্বীর, যার মধ্যে ঈমান থাকবে না। যখন অবস্থা এ সীমায় পৌছবে, তখন তোমরা দাজ্জালের আগমনের প্রতীক্ষা কর, সে ঐ দিনই অথবা পরের দিন আবির্ভূত হবে। (আবূ দাউদ)।
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ قَالَ: كُنَّا قُعُودًا عِنْدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَذَكَرَ الْفِتَنَ فَأَكْثَرَ فِي ذِكْرِهَا حَتَّى ذَكَرَ فِتْنَةَ الْأَحْلَاسِ فَقَالَ قَائِلٌ: وَمَا فِتْنَةُ الْأَحْلَاسِ. قَالَ: هِيَ هَرَبٌ وَحَرَبٌ ثُمَّ فِتْنَةُ السَّرَّاءِ دَخَنُهَا مِنْ تَحْتِ قَدَمَيْ رَجُلٍ مِنْ أَهْلِ بَيْتِي يَزْعُمُ أَنَّهُ مِنِّي وَلَيْسَ مِنِّي إِنَّمَا أَوْلِيَائِي الْمُتَّقُونَ ثُمَّ يَصْطَلِحُ النَّاسُ عَلَى رَجُلٍ كورك على ضلع ثمَّ فتْنَة الدهماء لَا تَدَعُ أَحَدًا مِنْ هَذِهِ الْأُمَّةِ إِلَّا لَطْمَتْهُ لَطْمَةً فَإِذَا قِيلَ: انْقَضَتْ تَمَادَتْ يُصْبِحُ الرَّجُلُ فِيهَا مُؤْمِنًا وَيُمْسِي كَافِرًا حَتَّى يَصِيرَ النَّاسُ إِلَى فُسْطَاطَيْنِ: فُسْطَاطِ إِيمَانٍ لَا نِفَاقَ فِيهِ وَفُسْطَاطِ نِفَاقٍ لَا إِيمَانَ فِيهِ. فَإِذَا كَانَ ذَلِكَ فَانْتَظِرُوا الدَّجَّالَ مِنْ يَوْمِهِ أَوْ من غده . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
اسنادہ صحیح ، رواہ ابوداؤد (4242) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা : হাদীসে উল্লেখিত বাক্য (وَلَيْسَ مِنِّىْ) সে আমার আপনজনদের কেউ নয়। অর্থাৎ সে আমার বাধ্যগত নয় অথবা আমলের ক্ষেত্রে সে আমার পরিবারভুক্ত বা আমার দলভুক্ত নয়। কেননা সে যদি আমার অনুগত হত তবে ফিতনায় পতিত হত না। যেমন আল্লাহ তা'আলার বাণী: “নিশ্চয় সে আপনার পরিবারভুক্ত নয়। সে অবশ্যই অসৎকর্মপরায়ণ।” (সূরা হূদ ১১ : ৪৬)
অথবা সে আমার প্রকৃত বন্ধুদের অন্তর্ভুক্ত নয়। এ অর্থের সমর্থনে বাণী: “নিশ্চয় মুক্তাক্বীগণ আমার বন্ধুবর্গ।” ('আওনুল মা'বূদ ৭ম খণ্ড, ৩০৯ পৃ, হা, ৪২৩৮)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৫৪০৪-[২৬] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী (সা.) বলেছেন: দুর্ভাগ্য ’আরবদের জন্য যে, এক বিরাট ফিতনাহ্ তাদের কাছাকাছি। সে লোকই সাফল্যমণ্ডিত হবে, যে (তা হতে) নিজের হাতকে গুটিয়ে রাখবে। (আবূ দাউদ)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «وَيْلٌ لِلْعَرَبِ مِنْ شَرٍّ قَدِ اقْتَرَبَ أَفْلَحَ مَنْ كَفَّ يَدَهُ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
اسنادہ ضعیف ، رواہ ابوداؤد (4249) * الاعمش مدلس و عنعن و للحدیث شواھد معنویۃ عند الحاکم (4 / 439) وغیرہ ، غیر قولہ :’’ افلح من کف یدہ ‘‘
ব্যাখ্যা : ‘আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন: নবী (সা.) -এর দ্বারা উসমান (রাঃ)-এর শাসনামলে মুসলিমদের মাঝে সংঘটিত মতপার্থক্য বা দলাদলি উদ্দেশ্য করেছেন। অথবা ‘আলী (রাঃ) এবং মু'আবিরাহ (রাঃ)-এর মাঝে সংঘটিত দ্বন্দ্বকে বুঝিয়েছেন।
আল ক্বারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন: নবী (সা.) এটা দ্বারা ইয়াযীদ ও হুসায়ন (রাঃ)-এর মাঝের দ্বন্দ্বকে বুঝিয়েছেন এবং এটাই সর্বাধিক নিকটবর্তী অর্থ। কেননা ‘আরব ও অনারবদের সকলের মাঝে সে সময় সংঘটিত ফিতনাহ্ বা বিপর্যয় খুবই স্পষ্ট। আর সত্য ও মিথ্যার পার্থক্য স্পষ্ট না হওয়া পর্যন্ত যারা উক্ত যুদ্ধ থেকে দূরে থেকেছে তারাই সফলতা লাভ করেছে।
('আওনুল মা'বূদ ৭ম খণ্ড, ৩১৫ পৃ., হা. ৪২৪৪)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৫৪০৫-[২৭] মিকদাদ ইবনুল আসওয়াদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে বলতে শুনেছি সৌভাগ্যবান ঐ ব্যক্তি যাকে ফিতনাহ্ হতে পৃথক রাখা হয়েছে, সৌভাগ্যবান ঐ ব্যক্তি যাকে ফিতনাহ্ হতে পৃথক রাখা হয়েছে, সৌভাগ্যবান ঐ ব্যক্তি যাকে ফিতনাহ্ হতে পৃথক রাখা হয়েছে এবং সেই ব্যক্তিও সৌভাগ্যবান যে তাতে উপনীত হয়ে ধৈর্যধারণ করেছে। তার জন্য মুবারকবাদ। (আবূ দাউদ)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ
وَعَن الْمِقْدَاد بن الْأسود قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «إِنَّ السَّعِيدَ لَمَنْ جُنِّبَ الْفِتَنَ إِنَّ السَّعِيدَ لَمَنْ جُنِّبَ الْفِتَنَ إِنَّ السَّعِيدَ لَمَنْ جُنِّبَ الْفِتَنَ وَلَمَنِ ابْتُلِيَ فَصَبَرَ فَوَاهًا» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
اسنادہ صحیح ، رواہ ابوداؤد (4263) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা : সে সময় কেউ হক কথা শ্রবণ করবে না, হকের স্বপক্ষে কেউ কথা বলবে না এবং হক থেকে বাতিলকে আলাদা করে কেউ প্রকাশও করবে না। আল ক্বারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন : এর অর্থ হলো, তারা সত্য-মিথ্যার মাঝে পার্থক্য করবে না। তারা কোন নসীহত শ্রবণ করবে না। সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে বাধা প্রদান করবে না। বরং যারা হক প্রতিষ্ঠার লক্ষে হকের পক্ষে কথা বলবে তাদেরকে নানাবিধ কষ্ট দেয়াসহ বিভিন্ন ফিতনা-ফাসাদে নিপতিত করা হবে।
(আওনুল মা'বুদ ৭ম খণ্ড, ৩৩১ পৃ., হা, ৪২৫৮)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৫৪০৬-[২৮] সাওবান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আমার উম্মতের মধ্যে যখন একবার তলোয়ার চালিত হবে, তখন তা আর কিয়ামত পর্যন্ত বন্ধ করা হবে না। আর কিয়ামত সেই পর্যন্ত প্রতিষ্ঠিত হবে না যে পর্যন্ত না আমার উম্মতের কোন কোন সম্প্রদায় মুশরিকদের সাথে মিলিত হবে এবং যেই পর্যন্ত না আমার উম্মতের কোন গোত্র মূর্তিপূজা করবে। তিনি (সা.) আরো বলেছেন, অদূর ভবিষ্যতে আমার উম্মতের মাঝে ত্রিশজন মিথ্যাবাদীর আগমন ঘটবে এবং তারা প্রত্যেকেই আল্লাহর নবী হওয়ার দাবি করবে। অথচ সত্য কথা হলো, আমিই শেষ নবী, আমার পরে আর কোন নবী নেই। তিনি (সা.) আরো বলেছেন, আমার উম্মতের একটি দল সত্যের উপর অনড় থাকবে, যারা তাদের বিরোধিতা করবে, তারা কিয়ামত আসা পর্যন্ত তাদের কোনই ক্ষতিসাধন করতে পারবে না। (আবূ দাউদ ও তিরমিযী)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ
وَعَنْ ثَوْبَانَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا وُضِعَ السَّيْفُ فِي أُمَّتِي لَمْ يُرْفَعْ عَنْهَا إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَلَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى تَلْحَقَ قَبَائِلُ مِنْ أُمَّتِي بِالْمُشْرِكِينَ وَحَتَّى تَعْبُدَ قَبَائِلُ مِنْ أُمَّتِي الْأَوْثَانَ وَإِنَّهُ سَيَكُونُ فِي أُمَّتِي كَذَّابُونَ ثَلَاثُونَ كُلُّهُمْ يَزْعُمُ أَنَّهُ نَبِيُّ اللَّهِ وَأَنَا خَاتَمُ النَّبِيين لَا نَبِيَّ بِعْدِي وَلَا تَزَالُ طَائِفَةٌ مِنْ أُمَّتِي عَلَى الْحَقِّ ظَاهِرِينَ لَا يَضُرُّهُمْ مَنْ خَالَفَهُمْ حَتَّى يَأْتِيَ أَمْرُ اللَّهِ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ
صحیح ، رواہ ابوداؤد (4252) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা : এখানে উদ্দেশ্য হলো তরবারি কিংবা অন্যান্য যুদ্ধাস্ত্র; যেমন- বর্শা, তীর ও কামান ইত্যাদি দ্বারা যুদ্ধ সংঘটিত হবে। এখানে ‘আস্ সায়ফ' বা তরবারি কথাটি বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, কারণ যুদ্ধক্ষেত্রে তরবারির ব্যবহার তৎকালীন সময়ে সবচেয়ে বেশি হত। আর এ যুদ্ধ কিয়ামত পর্যন্ত চলমান থাকবে, কোন শহরে তরবারি বা যুদ্ধ সামগ্রীর প্রয়োজনীয়তা না থাকলেও অন্য কোন শহর বা অঞ্চলে তার প্রয়োজনীয়তা থাকবে। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৬ষ্ঠ খণ্ড, ৬২ পৃ., হা. ২২০২)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৫৪০৭-[২৯] ’আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) নবী (সা.)- হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সা.) বলেছেন: ইসলামের চাকা পঁয়ত্রিশ অথবা ছত্রিশ অথবা সাইত্রিশ বছর সঠিকভাবে ঘুরতে থাকবে। এটার পরে যদি লোকজন ধ্বংসের মুখোমুখী হয়, তবে তারা পূর্ববর্তী লোকেদের পথে চলার কারণেই ধ্বংস হবে। অতঃপর দীনের নেযাম যদি আবার প্রতিষ্ঠিত হয়, তবে তা তাদের মধ্যে সত্তর বছর পর্যন্ত অবশিষ্ট থাকবে। ইবনু মাস’ঊদ (রাঃ) বলেন, আমি প্রশ্ন করলাম, সেই সত্তর বছর কি উল্লিখিত (পঁয়ত্রিশ) বছরের পরে আসবে, নাকি আগের সেই বছরগুলোসহ? তিনি (সা.) বললেন, আগের বছরগুলোসহ। (আবূ দাউদ)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «تَدُورُ رَحَى الْإِسْلَامِ لِخَمْسٍ وَثَلَاثِينَ أَوْ سِتٍّ وَثَلَاثِينَ أَوْ سَبْعٍ وَثَلَاثِينَ فَإِنْ يَهْلِكُوا فَسَبِيلُ مَنْ هَلَكَ وَإِنْ يَقُمْ لَهُمْ دِينُهُمْ يَقُمْ لَهُمْ سَبْعِينَ عَامًا» . قُلْتُ: أَمِمَّا بَقِيَ أَوْ مِمَّا مَضَى؟ قَالَ: «مِمَّا مضى» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
اسنادہ حسن ، رواہ ابوداؤد (4254) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা : আলোচ্য হাদীসে উল্লেখিত বাক্য (فَسَبِيلُ مَنْ هَلَكَ) অর্থাৎ দীনের মধ্যে সংশয় পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করার কারণে তাদের পথ ধ্বংসের মধ্যে নিমজ্জিত হবে। যেমনিভাবে তাদের পূর্ববর্তীগণ দীনের মধ্যে সংশয়, পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করার কারণে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছিল। অন্যদিকে দীনের মধ্যে কোন ধরনের পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও সংশয় প্রবেশ না করিয়ে যদি দীনের উপর অবিচল থাকে তবে তাদের অবিচল থাকাটা ৭০ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হবে। আল্লামাহ্ খত্ত্বাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন : এখানে দীন দ্বারা বাদশাহী উদ্দেশ্য হতে পারে। তিনি বলেন : এর দ্বারা উমাইয়্যাহ্ বাদশাহী যুগ এবং তা ‘আব্বাসীয়দের হাতে স্থানান্তরিত হওয়া পর্যন্ত উদ্দেশ্য হতে পারে। আর খুরাসানে ‘আব্বাসীয় রাজত্বের আত্মপ্রকাশ হওয়া পর্যন্ত স্বীকৃত উমাইয়্যাহ্ রাজত্বকাল বা বাদশাহী ছিল।
আল্লামাহ্ তূরিবিশতী (রহিমাহুল্লাহ) তাঁর [খত্ত্বাবী (রহিমাহুল্লাহ) এর] কথা উল্লেখ করার পর বলেন: আল্লাহ তা'আলা আবূ সুলায়মান তথা খত্নাবী (রহিমাহুল্লাহ)-কে “দয়া করুন”। তিনি এটা তাঁর গবেষণা অনুযায়ী বলেছেন, তবে এটা অবশ্যই জানা উচিত যে, নবী (সা.) সমগ্র উম্মত ব্যতীত শুধু উমাইয়্যাহ বাদশাহীকে উদ্দেশ্য করে কোন কথা বলেননি। বরং সমগ্র উম্মতকে দীনী বিধি-বিধান, হুকুম-আহকামের উপর অবিচল থাকার কথা বুঝিয়েছেন। যার সূচনা হয়েছিল হিজরীর প্রথম পর্যায় থেকে। আর তিনি তাদেরকে এ মর্মে খবর দিয়েছেন যে, নিশ্চয় তারা দীনের উপর অবিচল থাকবে ৩৫, ৩৬, কিংবা ৩৭ বছর। অতঃপর তারা ঐক্যের লাঠি ভেঙ্গে ফেলবে এবং তারা বিভক্ত হয়ে পড়বে। এহেন অবস্থায় যদি তারা ধ্বংস হয় তাহলে তাদের পথটা তাদের পূর্ববর্তী ইয়াহূদ-নাসারাদের পথের ন্যায় হবে। আর যদি তারা ঐক্য ও আনুগত্যের উপর এবং সত্যের সাহায্যের উপর অটুট থাকে তবে এটা তাদের ৭০ বছর পর্যন্ত পূর্ণ থাকবে (আল্লাহ তা'আলাই অধিক জানেন)। ('আওনুল মা'বুদ ৭ম খণ্ড, ৩৭৮ পৃ., হা, ৪২৪৮)