পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৫৩৯৬-[১৮] হুযায়ফাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একবার প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর রাসূল (সা.)! এখন আমরা যে ভালো যুগে (ইসলামে) অবস্থান করছি, এর পরে কি কোন খারাপ যুগ আসবে যেমন। এটার (ইসলামের) পূর্বে (জাহিলিয়্যাত) ছিল? তিনি (সা.) বললেন, হ্যা, আসবে। আমি প্রশ্ন করলাম, তা হতে বেঁচে থাকার উপায় কি? তিনি (সা.) বললেন, তলোয়ার (বাতিলের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে অস্ত্র ধারণ করতে হবে)।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, আচ্ছা সেই তলোয়ারী যুগের পরে কি মুসলিমের অস্তিত্ব থাকবে? তিনি (সা.) বললেন, হ্যা, থাকবে। তবে তখন প্রতিষ্ঠিত হবে রাজতন্ত্র। তার উৎপত্তি হবে মানুষের ঘৃণার উপর এবং সন্ধি-চুক্তি হবে ধোঁকার উপর। আমি জিজ্ঞেস করলাম, তারপর কি হবে? তিনি (সা.) বললেন, অতঃপর গোমরাহীর দিকে আহ্বানকারী লোকের আগমন ঘটবে। তখন যদি আল্লাহর এই জমিনে কোন শাসক থাকে এবং সে তোমার পৃষ্ঠে অন্যায়ভাবে চাবুক মারে এবং (জোরপূর্বক) তোমার মাল-সম্পদ ছিনিয়েও নেয়, তবুও তুমি তার আনুগত্য কর।
যদি কোন শাসক না থাকে তবে তোমার মৃত্যু যেন এই অবস্থায় হয় যে, তুমি (সকল সম্পর্ক ত্যাগ করে) কোন গাছের গোড়ায় আশ্রয় গ্রহণকারী হবে। (নির্জনে থাকবে) আমি প্রশ্ন করলাম, তারপর কি হবে? তিনি বললেন, অতঃপর দাজ্জালের আগমন ঘটবে। তার সঙ্গে থাকবে নদী ও আগুন। যে ব্যক্তি উক্ত অগ্নিকুণ্ডে পড়বে, (আল্লাহর নিকট) তার প্রতিদান সাব্যস্ত হয়ে যাবে এবং তার পূর্বের গুনাহসমূহ মাফ হয়ে যাবে। আর যে ব্যক্তি তার নহরে প্রবেশ করবে তার পাপ অবধারিত হয়ে যাবে এবং তার (নেক ’আমলের) প্রতিদান বাতিল হয়ে যাবে। হুযায়ফাহ্ (রাঃ) বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, তারপর কি হবে? তিনি (সা.) বললেন, ঘোড়ার বাচ্চা লাভ করা হবে, কিন্তু তা আরোহণের উপযুক্ত হওয়ার পূর্বেই কিয়ামত কায়িম হয়ে যাবে। অপর এক বর্ণনায় আছে, সেই ফিতনার সন্ধি চুক্তি হবে ধোঁকার উপর এবং জামা’আতবন্দি হবে ঘৃণার উপর। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল (সা.)! প্রতারণার চুক্তির অর্থ কী? তিনি (সা.) বলেলেন, লোকজনের অন্তর আগের অবস্থায় ফিরে আসবে না। আমি প্রশ্ন করলাম, সেই ভালোর পরেও কি কোন খারাপ আসবে? তিনি (সা.) বললেন, হ্যা, এরপরে এসে পড়বে অন্ধ ও বধির ফিতনাহ্ (তখন আর তা হতে বের হওয়ার কোন পথও থাকবে না)। সে সময় এক দল লোক জাহান্নামের দাঁড়িয়ে ফিতনার দিকে আহ্বানকারী হবে। হে হুযায়ফাহ! সেই সময় এ সকল আহ্বানকারীর কারো অনুসরণ করা। অপেক্ষা যদি তুমি গাছের শিকড় অবলম্বন করে মৃত্যুবরণ কর, তা হবে তোমার পক্ষে উত্তম। (আবূ দাউদ)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ
وَعَنْ حُذَيْفَةَ قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَيَكُونُ بَعْدَ هَذَا الْخَيْرِ شَرٌّ كَمَا كَانَ قَبْلَهُ شَرٌّ؟ قَالَ: «نَعَمْ» قُلْتُ: فَمَا الْعِصْمَةُ؟ قَالَ: «السَّيْفُ» قُلْتُ: وَهَلْ بَعْدَ السَّيْفِ بَقِيَّةٌ؟ قَالَ: «نعمْ تكونُ إِمارةٌ على أَقْذَاءٍ وَهُدْنَةٌ عَلَى دَخَنٍ» . قُلْتُ: ثُمَّ مَاذَا؟ قَالَ: «ثُمَّ يَنْشَأُ دُعَاةُ الضَّلَالِ فَإِنْ كَانَ لِلَّهِ فِي الْأَرْضِ خَلِيفَةٌ جَلَدَ ظَهْرَكَ وَأَخَذَ مَالَكَ فَأَطِعْهُ وَإِلَّا فَمُتْ وَأَنْتَ عَاضٌّ عَلَى جَذْلِ شَجَرَةٍ» . قُلْتُ: ثُمَّ مَاذَا؟ قَالَ: «ثُمَّ يَخْرُجُ الدَّجَّالُ بَعْدَ ذَلِكَ مَعَهُ نَهْرٌ وَنَارٌ فَمَنْ وَقَعَ فِي نَارِهِ وَجَبَ أَجْرُهُ وَحُطَّ وِزْرُهُ وَمَنْ وَقَعَ فِي نَهْرِهِ وَجَبَ وِزْرُهُ وحظ أَجْرُهُ» . قَالَ: قُلْتُ: ثُمَّ مَاذَا؟ قَالَ: «ثُمَّ يُنْتَجُ الْمُهْرُ فَلَا يُرْكَبُ حَتَّى تَقُومَ السَّاعَةُ» وَفِي رِوَايَة: «هُدْنَةٌ عَلَى دَخَنٍ وَجَمَاعَةٌ عَلَى أَقْذَاءٍ» . قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ الْهُدْنَةُ عَلَى الدَّخَنِ مَا هِيَ؟ قَالَ: «لَا ترجع قُلُوب أَقوام كَمَا كَانَتْ عَلَيْهِ» . قُلْتُ: بَعْدَ هَذَا الْخَيْرِ شَرٌّ؟ قَالَ: «فِتْنَةٌ عَمْيَاءُ صَمَّاءُ عَلَيْهَا دُعَاةٌ عَلَى أَبْوَابِ النَّارِ فَإِنْ مُتَّ يَا حُذَيْفَةُ وَأَنْتَ عَاضٌّ عَلَى جَذْلٍ خَيْرٌ لَكَ مِنْ أَنْ تتبع أحدا مِنْهُم» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
صحیح ، رواہ ابوداؤد (4244 ، صحیح ، 4247 ، حسن) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা : আলোচ্য হাদীসে এই উম্মাতের শেষ যামানায় যেসব ফিতনার আবির্ভাব হবে তার ধরণ উল্লেখ করা হয়েছে। হাদীসে বলা হয়েছে, ফিতনাহ হবে অন্ধ ও বধির। ফিতনাকে অন্ধ বলা হয়েছে এজন্য যে, এ সময়ে বিরাজমান মানুষজন সত্যপথ দেখতে ব্যর্থ হবে বা হক খুঁজে পেতে সক্ষম হবে না এবং সত্য কথা ও উপদেশ শুনবে না বা তা শুনতে অক্ষম হবে। তবে হাদীসের প্রথমাংশে যে তলোয়ারের কথা বলা হয়েছে, সেটিকে কতিপয় সাহাবায়ি কিরাম রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর ওফাতের পর আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ)-এর যুগে মুরতাদদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণের ইঙ্গিত রয়েছে। যা সূরা আল হুজুরাতের ৯ নং আয়াতে ঘোষণা করা হয়েছে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
ইমাম কাযী ‘ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ)-এর মতে এ সময় মানুষেরা ফিতনাহ থেকে বাঁচার কোন পথ পাবে না। সত্য কথা ও উপদেশ গ্রহণের ক্ষেত্রে মানুষেরা উপলব্ধি ও অনুধাবন শক্তি হারিয়ে ফেলবে। সে সময় কতক আহ্বানকারী/একদল দা'ঈর উদ্ভব হবে যারা মানুষকে জাহান্নামের দিকে দৃঢ়ভাবে আহ্বান করবে। অবস্থা এমন হবে যে, তারা যেন জাহান্নামের দরজায় দাঁড়িয়ে মানুষকে তাতে প্রবেশের আহ্বান জানাবে। সে সময়ে রাসূল (সা.) -এর নির্দেশনা হলো, এ সময় প্রয়োজনে গাছের গুড়ি আঁকড়ে থাকতে হবে। তবুও সেসব দা'ঈ/আহ্বানকারীর আহ্বানে সাড়া দেয়া যাবে না এবং ফিতনায় জড়ানো যাবে না।