পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - ভীতি প্রদর্শন ও সতর্কীকরণ
৫৩৭১-[১] ’ইয়ায ইবনু হিমার আল মুজাশি’ঈ (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদিন রাসূলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর ভাষণে বললেন, জেনে রাখ! আল্লাহ তা’আলা আমাকে আদেশ করেছেন যে, আমি তোমাদেরকে ঐ কথাটি অবহিত করি যা তোমরা জান না। আল্লাহ তা’আলা আজ আমাকে যে সমস্ত বিষয়ে অবগত করেছেন, (আল্লাহ বলেন, আমি আমার বান্দাকে যে সমস্ত সম্পদ দান করেছি, তা হালাল। আল্লাহ তা’আলা আরো বলেছেন, আমি আমার বান্দাদেরকে ন্যায় ও সত্যের উপরে সৃজন করেছি। অতঃপর তাদের নিকট শয়তান এসে তাদেরকে দীন হতে ঘুরিয়ে দেয়, আর আমি তাদের জন্য যা হালাল করেছিলাম শয়তান তাকে তাদের জন্য হারাম করে দেয় এবং শয়তান তাদেরকে এ আদেশ করে যে, তারা যেন আমার সাথে ঐ জিনিসকে শরীক করে নেয় যার সম্পর্কে কোন দলীল বা প্রমাণ অবতীর্ণ করা হয়নি।
আর আল্লাহ জমিনবাসীদের প্রতি দৃষ্টি দিলেন, তখন (তাদের চরম গোমরাহির কারণে) কতিপয় আহলে কিতাব ছাড়া আরবী, আজমী সকলের ওপর খুবই ক্ষুব্ধ হলেন। আল্লাহ তা’আলা আরো বলেছেন, আমি তোমাকে [হে মুহাম্মাদ (সা.)] এজন্যই নবী বানিয়ে পাঠিয়েছি যে, তোমাকে পরীক্ষা করব আর তোমার সাথে তোমার উম্মতেরও পরীক্ষা করব আমি তোমার ওপর একটি কিতাব অবতীর্ণ করেছি যাকে পানিতে ধুতে পারবে না (তা অন্তরে সংরক্ষিত, কাজেই কেউ মেটাতে পারবে না)। তুমি তা ঘুমন্ত ও জাগ্রত অবস্থায় পাঠ করবে। আর আল্লাহ আমাকে এটাও নির্দেশ করেছেন- আমি যেন কুরায়শদেরকে জ্বালিয়ে (ধ্বংস করে) ফেলি আমি বললাম, এতে কুরায়শগণ তো আমার মস্তক পিষে রুটির মতো চ্যাপ্টা করে ফেলবে। (সংখ্যাগরিষ্ঠতার দরুন) তখন আল্লাহ তা’আলা বললেন, তারা তোমাকে যেভাবে (মক্কা হতে) বের করে দিয়েছে, সেভাবে আমিও তাদেরকে (বাড়িঘর হতে) বের করে দেব। তুমি তাদের সাথে যুদ্ধ কর, আমি তোমার যুদ্ধের সরঞ্জাম প্রস্তুত করে দেব। তুমি আল্লাহর রাস্তায় খরচ কর। আমি শীঘ্রই তোমার খরচের ব্যবস্থা করে দেব। তুমি তাদের (কুরায়শদের) বিরুদ্ধে সেনাদল প্রেরণ করবে, আমি শত্ৰু-শক্তির পাঁচ গুণ বেশি সৈন্য আর তোমার অনুসরণ করে তাদের সঙ্গে নিয়ে ঐ সমস্ত লোকেদের বিরুদ্ধে লড়াই কর, যারা তোমার নাফরমানি করে। (মুসলিম)
الفصل الاول ( بَاب الْإِنْذَار والتحذير)
عَن عِيَاض بن حمَار الْمُجَاشِعِي أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ ذَاتَ يَوْمٍ فِي خُطْبَتِهِ: أَلَا إِنَّ رَبِّي أَمَرَنِي أَنْ أُعَلِّمَكُمْ مَا جَهِلْتُمْ مِمَّا عَلَّمَنِي يَوْمِي هَذَا: كُلُّ مَالٍ نَحَلْتُهُ عَبْدًا حلالٌ وإِني خلقت عبَادي حنفَاء كلهم وَإنَّهُ أَتَتْهُمُ الشَّيَاطِينُ فَاجْتَالَتْهُمْ عَنْ دِينِهِمْ وَحَرَّمَتْ عَلَيْهِمْ مَا أَحْلَلْتُ لَهُمْ وَأَمَرَتْهُمْ أَنْ يُشْرِكُوا بِي مَا لَمْ أُنْزِلْ بِهِ سُلْطَانًا وَإِنَّ اللَّهَ نَظَرَ إِلَى أَهْلِ الْأَرْضِ فَمَقَتَهُمْ عَرَبَهُمْ وَعَجَمَهُمْ إِلَّا بَقَايَا مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ وَقَالَ: إِنَّمَا بَعَثْتُكَ لِأَبْتَلِيَكَ وَأَبْتَلِيَ بِكَ وَأَنْزَلَتُ عَلَيْكَ كِتَابًا لَا يَغْسِلُهُ الْمَاءُ تَقْرَؤُهُ نَائِمًا وَيَقْظَانَ وَإِنَّ الله أَمرنِي أَن أحرقَ قُريْشًا فَقلت: يَا رَبِّ إِذًا يَثْلَغُوا رَأْسِي فَيَدَعُوهُ خُبْزَةً قَالَ: اسْتَخْرِجْهُمْ كَمَا أَخْرَجُوكَ وَاغْزُهُمْ نُغْزِكَ وَأَنْفِقْ فَسَنُنْفِقُ عَلَيْكَ وَابْعَثْ جَيْشًا نَبْعَثْ خَمْسَةً مِثْلَهُ وَقَاتِلْ بِمن أطاعك من عصاك . رَوَاهُ مُسلم
رواہ مسلم (62 / 2865)، (7207) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা : (كُلُّ مَالٍ نَحَلْتُهُ عَبْدًا حلالٌ) আমি আমার বান্দাদের যে সম্পদ দান করেছি তা সম্পূর্ণ হালাল, তাতে কোন প্রকার হারাম নেই এবং কোন বান্দা নিজের পক্ষ থেকে তাকে হারাম করতে পারবে না।
(وإِني خلقت عبَادي حنفَاء كلهم) আর আমি আমার সকল বান্দাকে বাতিল পরিহার করে সত্য গ্রহণ করার যোগ্য করে সৃষ্টি করেছি। তাই তো নবী (সা.) বলেন, (كُلُّ مَوْلُودٍ يُولَدُ عَلَى الْفِطْرَةِ،) প্রত্যেক আদম সন্তান সঠিক স্বভাব তথা তাওহীদের উপর জন্মগ্রহণ করে। (সহীহ মুসলিম ২৬৫৮)।
(وَإِنَّ اللَّهَ نَظَرَ إِلَى أَهْلِ الْأَرْضِ فَمَقَتَهُمْ) এবং আল্লাহ তা'আলা পৃথিবীবাসীর প্রতি লক্ষ্য করেন এবং ‘আরব ও অনারব সকলের প্রতি ঘৃণা পোষণ করেন, রাগান্বিত হন তাদের মন্দ কাজের তথা শির্ক ও কুফরীর উপর সবাই ঐকমত্য পোষণ করার জন্য। তবে ইয়াহূদী খ্রীষ্টানদের কিছু সংখ্যক লোকের প্রতি নয়, যারা সঠিক ধর্মের উপর তথা ‘ঈসা আলায়হিস সালাম-এর শরীরের উপর অবশিষ্ট ছিল, এমনকি নবী (সা.) -এর প্রতি ঈমানও এনেছিল।
(إِنَّمَا بَعَثْتُكَ لِأَبْتَلِيَكَ) আমি আপনাকে এজন্য পাঠিয়েছি যাতে আপনাকে পরীক্ষা করতে পারি কিভাবে আপনি আপনার সম্প্রদায়ের কষ্টের উপর ধৈর্যধারণ করেন।
(وَأَبْتَلِيَ بِ) এবং আপনার মাধ্যমে আপনার সম্প্রদায়কে পরীক্ষা করতে পারি তারা আপনার প্রতি ঈমান আনয়ন করে, নাকি কুফরী করে।
(وَأَنْزَلَتُ عَلَيْكَ كِتَابًا لَا يَغْسِلُهُ الْمَاءُ) এবং আপনার প্রতি এমন এক মহান কিতাব অবতীর্ণ করেছি যা কখনো পানিতে ধুয়ে শেষ হয়ে যাবে না। বরং আমি উক্ত কিতাবকে মু'মিনদের অন্তরে সংরক্ষণ করে রেখেছি। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেন, (اِنَّا نَحۡنُ نَزَّلۡنَا الذِّکۡرَ وَ اِنَّا لَهٗ لَحٰفِظُوۡنَ ﴿۹﴾) “নিশ্চয় আমি কুরআন অবতীর্ণ করেছি এবং আমিই তার হিফাযাতকারী।” (সূরাহ আল হিজর ১৫ : ৯)
‘আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এটা এমন একটি কিতাব যা অন্তরে সুরক্ষিত রয়েছে, কাগজের পৃষ্ঠা ধুয়ে ফেললেও এটা মুছে যাবে না। অথবা, আসমান ও জমিন যতদিন বাকী থাকবে ততদিন এটা মানুষের মাঝে থাকবে। এর বিধান কোনদিন রহিত হবে না এবং এর পঠন কোন দিন বাদ যাবে না। আর এটাকেই রূপকভাবে বলা হয়েছে, এর পৃষ্ঠা পানিতে ধুয়ে মুছে যাবে না।
(تَقْرَؤُهُ نَائِمًا وَيَقْظَانَ) অর্থাৎ ঘুমন্ত ও জাগ্রত সর্বাবস্থায় আপনার মস্তিষ্কে এটা বিদ্যমান থাকবে আপনি কখনো তা থেকে উদাসীন থাকবেন না।
(أَنْفِقْ فَسَنُنْفِقُ عَلَيْكَ) আল্লাহর রাস্তায় সাধ্যানুযায়ী ব্যয় করুন, আমি আপনাকে দুনিয়া ও আখিরাতে এর বিনিময় প্রদান করব। আল্লাহ তা'আলা বলেন, (وَ مَاۤ اَنۡفَقۡتُمۡ مِّنۡ شَیۡءٍ فَهُوَ یُخۡلِفُهٗ ۚ وَ هُوَ خَیۡرُ الرّٰزِقِیۡنَ)“...তোমরা যা খরচ করবে তার বিনিময় ভবিষ্যতে প্রদান করা হবে, তিনি উত্তম রিযকদাতা”- (সূরাহ্ সাবা ৩৪ : ৩৯)। (শারহুন নাবাবী ১৭/২৮৬৫, মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - ভীতি প্রদর্শন ও সতর্কীকরণ
৫৩৭২-[২] ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন নাযিল হয় (وَ اَنۡذِرۡ عَشِیۡرَتَکَ الۡاَقۡرَبِیۡنَ) “(হে নবী!) তোমার নিকটাত্মীয়দেরকে সতর্ক করে দাও”- (সূরাহ আশ শু’আরা ২৬ : ২১৪); তখন নবী (সা.) সাফা পাহাড়ে উঠলেন এবং হে বনী ফিহর! হে বনী ’আদী! বলে কুরায়শদের বিভিন্ন গোত্রকে উচ্চৈঃস্বরে আহ্বান করলেন, এতে তারা সকলে জড়ো হয়ে গেল। অতঃপর তিনি (সা.) বললেন, বল তো আমি যদি এখন তোমাদেরকে বলি যে, এ পাহাড়ের উপত্যকায় একটি অশ্বারোহী সৈন্যবাহিনী তোমাদের ওপর হঠাৎ আক্রমণের জন্য প্রস্তুত রয়েছে, তবে কি তোমরা আমাকে বিশ্বাস করবে? সমবেত সকলে বলল, হ্যা, কারণ আমরা আপনাকে সদা সত্যবাদীই পেয়েছি। তখন তিনি (সা.) বললেন, “আমি তোমাদের সম্মুখে একটি কঠিন শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করে দিচ্ছি।” এ কথা শুনে আবূ লাহাব বলল, সারাটা জীবন তোমার ধ্বংস হোক। তুমি কি এজন্যই আমাদেরকে একত্রিত করেছ? এমতাবস্থায় অবতীর্ণ হলো (تَبَّتۡ یَدَاۤ اَبِیۡ لَهَبٍ وَّ تَبَّ ؕ) “আবূ লাহাব-এর উভয় হাত ধ্বংস হোক এবং তার বিনাশ হোক”- (সূরাহ্ লাহাব ১১১:১)। (বুখারী ও মুসলিম)
অপর এক বর্ণনাতে আছে, নবী (সা.) ডাক দিলেন, হে আবদ মানাফ-এর বংশধর! মূলত আমার তোমাদের দৃষ্টান্ত হলো সেই ব্যক্তির ন্যায়, যে শত্রুসৈন্যকে দেখে স্বীয় গোত্রকে বাঁচানোর জন্য চলল, অতঃপর আশঙ্কা করল যে, শত্রু তাদের ওপর আগে এসে আক্রমণ করে বসতে পারে। তাই সে উচ্চস্বরে (يَا صَبَاحَاهٗ) “হে সকাল বেলার বিপদ!” বলে সতর্ক করতে লাগল। (বুখারী)
الفصل الاول ( بَاب الْإِنْذَار والتحذير)
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: لَمَّا نَزَلَتْ (وَأَنْذِرْ عشيرتك الْأَقْرَبين) صَعِدَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الصَّفَا فَجَعَلَ يُنَادِي: «يَا بَنِي فِهْرٍ يَا بَنِي عَدِيٍّ» لِبُطُونِ قُرَيْشٍ حَتَّى اجْتَمَعُوا فَقَالَ: «أَرَأَيْتَكُمْ لَوْ أَخْبَرْتُكُمْ أَنَّ خَيْلًا بِالْوَادِي تُرِيدُ أَنْ تُغِيرَ عَلَيْكُمْ أَكُنْتُمْ مُصَدِّقِيَّ؟ » قَالُوا: نَعَمْ مَا جَرَّبْنَا عَلَيْكَ إِلَّا صِدْقًا. قَالَ: «فَإِنِّي نَذِيرٌ لَكُمْ بَيْنَ يَدَيْ عَذَابٌ شَدِيدٌ» . فَقَالَ أَبُو لَهَبٍ: تَبًّا لَكَ سَائِرَ الْيَوْمَ أَلِهَذَا جَمَعْتَنَا؟ فَنَزَلَتْ: (تَبَّتْ يَدَا أَبِي لَهَبٍ وَتَبَّ) مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ. وَفِي رِوَايَةٍ نَادَى: «يَا بَنِي عَبْدِ مَنَافٍ إِنَّمَا مَثَلِي وَمَثَلُكُمْ كَمَثَلِ رَجُلٍ رَأَى الْعَدُوَّ فَانْطَلَقَ يَرْبَأُ أَهْلَهُ فَخَشِيَ أَنْ يسبقوه فَجعل يَهْتِف يَا صَبَاحَاه»
متفق علیہ ، رواہ البخاری (4770) و مسلم (355 / 208 و 353 / 207)، (508 و 506) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা : (أَرَأَ يْتَكُمْ لَوْ أَخْبَرْ تُكُمْ أَنَّ خَيْلًا بِالْوَادِىْ) তোমরা আমাকে সংবাদ দাও বা জানিয়ে দাও এই মর্মে যে, যদি আমি তোমাদেরকে বলি, শত্রুদল তোমাদের উপত্যকার পিছন থেকে আক্রমণ করার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে, তাহলে তোমরা কি আমাকে বিশ্বাস করবে? অর্থাৎ আমার কথাকে বিশ্বাস করবে? তারা বলল : হ্যাঁ, আমরা আপনাকে বিশ্বাস করব। আমরা আপনার কাছ থেকে সত্য ছাড়া কোন দিন মিথ্যা কথা শুনিনি। অতএব আপনার কথা সত্য কি মিথ্যা তা পরীক্ষা করে দেখতে চাই না।
(قَالَ: «فَإِنِّي نَذِيرٌ لَكُمْ بَيْنَ يَدَيْ عَذَابٌ شَدِيدٌ») আমি তোমাদেরকে কঠিন শাস্তি নাযিলের পূর্বেই সতর্ক করছি। অতএব তোমরা যদি আমার প্রতি ঈমান আনয়ন না কর, তাহলে অচিরেই তোমাদের ওপর শাস্তি অবতীর্ণ হবে।
(قَالَ أَبُو لَهَبٍ) আবূ লাহাব বলল! সে এ উপনামেই বেশি প্রসিদ্ধ ছিল। তার আসল নাম ‘আবদুল ‘উয্যা ইবনু মুত্ত্বালিব ইবনু হাশিম। নবী (সা.) -এর চাচা আবূ লাহাব উপনাম বা কুনিয়াত হওয়ার দুটি দিক রয়েছে। হয়তো সে অগ্নিশিখার মতো উজ্জ্বল ফর্সা ছিল নতুবা তার উভয় গাল উজ্জ্বল ফর্সা ছিল। আবূ লাহাব নামটি তার পরিণতি বিবেচনায় যথাযথ হয়েছে। যেহেতু পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, (سَیَصۡلٰی نَارًا ذَاتَ لَهَبٍ)- “অচিরেই সে প্রবেশ করবে লেলিহান শিখাযুক্ত আগুনে”- (সূরাহ্ আল লাহাব ১১১ : ৩)।
(تَبًّا لَكَ سَائِرَ الْيَوْمَ) সারাদিন বা এখন থেকে দিনের বাকী অংশ তোমার জন্য ধ্বংস হোক।
(أَلِهَذَا جَمَعْتَنَا؟) এ কথার সংবাদ দেয়ার জন্যই কি তুমি আমাদেরকে ডেকে একত্রিত করেছ? অতঃপর তখনই এ আয়াত অবতীর্ণ হয়, (تَبَّتۡ یَدَاۤ اَبِیۡ لَهَبٍ وَّ تَبَّ) “ধ্বংস হোক আবূ লাহাব-এর হস্তদ্বয় এবং ধ্বংস হোক যে নিজেও।” অথবা এর অর্থ হচ্ছে সে দুনিয়া ও আখিরাত উভয় স্থানেই ধ্বংস হোক।
অত্র আয়াতে আবূ লাহাব-এর আসল নাম উল্লেখ না করে কুনিয়াত বা উপনাম ব্যবহার করা হয়েছে। হয়তো এ নামে বেশি প্রসিদ্ধি লাভ করার জন্য অথবা তার নাম আবদুল উযযা হওয়ার কারণে অথবা সে জাহান্নামী হওয়ার জন্য উপনাম ব্যবহার করাই বেশি উপযুক্ত হয়েছে। যদিও আসল নামের মধ্যে সৌন্দর্য বেশি থাকে।
(তুহফাতুল আহওয়াযী ৮/৩৩৬৩, শারহুন নাবাবী কিতাবুল ঈমান’ ৩/২০৮, ফাতহুল বারী ‘কিতাবুত তাফসীর ৮/৪৭৭০, মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - ভীতি প্রদর্শন ও সতর্কীকরণ
৫৩৭৩-[৩] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন নাযিল হলো, (وَأَنْذِرْ عشيرتك الْأَقْرَبين)“হে নবী! তোমার নিকটাত্মীয়দেরকে সাবধান করে দাও”- (সূরা আশ শুআরা ২৬ : ২১৪); তখন নবী (সা.) কুরায়শদেরকে আহ্বান করলে তারা সমবেত হলো। তিনি (সা.) সতর্কবাণী শুনালেন। তিনি (সা.) বললেন, হে কা’ব ইবনু লুয়াই-এর বংশধর! হে মুররাহ্ ইবনু কা’ব-এর বংশধর! তোমরা নিজেদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা কর! হে ’আবদ শামস্-এর বংশধর! তোমরা নিজেদেরকে আগুন হতে বাঁচাও! হে ’আবদ মানাফ-এর বংশধর! তোমরা নিজেদেরকে আগুন থেকে মুক্ত কর! হে হাশিম-এর বংশধর! তোমরা নিজেদেরকে জাহান্নামের আগুন হতে রক্ষা কর! হে ’আবদুল মুত্ত্বালিব-এর বংশধর! তোমরা নিজেদেরকে জাহান্নামের আগুন হতে বাঁচাও! হে ফাতিমাহ্! তুমি তোমার দেহকে জাহান্নামের আগুন হতে বাঁচাও! কেননা, আল্লাহর শাস্তি থেকে রক্ষা করার ক্ষমতা আমার নেই। তবে তোমাদের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে, তা আমি (দুনিয়াতে) ভালো আচরণ দ্বারা সিক্ত করব। (মুসলিম)
বুখারী ও মুসলিম-এর যৌথ বর্ণনায় আছে, নবী (সা.) বললেন: হে কুরায়শ সম্প্রদায়! তোমাদের জানকে খরিদ করে নাও (অর্থাৎ- আমার ওপরে ঈমান এনে জাহান্নামের আগুন হতে আত্মরক্ষা কর)। আমি তোমাদের ওপর থেকে আল্লাহর শাস্তি কিছুই দূর করতে পারব না। হে আবদ মানাফ-এর বংশধর! আমি তোমাদের ওপর হতে আল্লাহর শাস্তি কিছুই দূর করতে পারব না। হে রাসূলুল্লাহর ফুফী সফিয়্যাহ! আমি তোমাকে আল্লাহর ’আযাব হতে বাঁচাতে পারব না। হে মুহাম্মাদ-এর মেয়ে ফাতিমাহ! আমার কাছে দুনিয়াবী ধন-সম্পদ হতে যা ইচ্ছা তা চাইতে পার, কিন্তু আমি তোমাকে আল্লাহর শাস্তি হতে রক্ষা করতে পারব না।
الفصل الاول ( بَاب الْإِنْذَار والتحذير)
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: لَمَّا نَزَلَتْ (وَأَنْذِرْ عشيرتك الْأَقْرَبين) دَعَا النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قُرَيْشًا فَاجْتَمَعُوا فَعَمَّ وَخَصَّ فَقَالَ: «يَا بَنِي كَعْبِ بْنِ لُؤَيٍّ أَنْقِذُوا أَنْفُسَكُمْ مِنَ النَّارِ يَا بَنِي مُرَّةَ بْنِ كَعْبٍ أَنْقِذُوا أَنْفُسَكُمْ مِنَ النَّارِ. يَا بَنِي عَبْدِ شَمْسٍ أَنْقِذُوا أَنْفُسَكُمْ من النَّار يَا بني عبد منَاف أَنْقِذُوا أَنفسكُم من النَّار. با بَنِي هَاشِمٍ أَنْقِذُوا أَنْفُسَكُمْ مِنَ النَّارِ. يَا بني عبد الْمطلب أَنْقِذُوا أَنفسكُم من النَّار. يَا فَاطِمَةُ أَنْقِذِي نَفْسَكِ مِنَ النَّارِ فَإِنِّي لَا أَمْلِكُ لَكُمْ مِنَ اللَّهِ شَيْئًا غَيْرَ أَنَّ لَكُمْ رَحِمًا سَأَبُلُّهَا بِبَلَالِهَا» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ وَفَى الْمُتَّفَقِ عَلَيْهِ قَالَ: «يَا مَعْشَرَ قُرَيْشٍ اشْتَرُوا أَنْفُسَكُمْ لَا أُغْنِي عَنْكُمْ مِنَ اللَّهِ شَيْئًا وَيَا صَفِيَّةُ عَمَّةَ رَسُولِ اللَّهِ لَا أُغْنِي عَنْكِ مِنَ اللَّهِ شَيْئًا. وَيَا فَاطِمَةُ بِنْتَ مُحَمَّدٍ سَلِينِي مَا شِئْتِ مِنْ مَالِي لَا أُغْنِي عَنْكِ مِنَ اللَّهِ شَيْئًا»
رواہ مسلم (348 / 204)، (501) 0 و حدیث ’’ یا معشر قریش ‘‘ الخ متفق علیہ (البخاری : 2753 و مسلم :351 / 206)، (504) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা : (أَنْقِذُوا أَنْفُسَكُمْ مِنَ النَّارِ) তোমরা নিজেদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত কর।
(فَإِنِّي لَا أَمْلِكُ لَكُمْ مِنَ اللَّهِ شَيْئًا) তোমাদের কাউকে ব্যাপকভাবে অথবা নির্দিষ্ট করে আল্লাহর শাস্তি থেকে বাঁচাতে পারব না, অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলা যদি তোমাদেরকে শাস্তি দিতে চান তাহলে আমি তোমাদেরকে তার শাস্তি হতে রক্ষা করতে সক্ষম হব না। এ মর্মে পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করা হয়েছে,
(قُلۡ فَمَنۡ یَّمۡلِکُ لَکُمۡ مِّنَ اللّٰهِ شَیۡئًا اِنۡ اَرَادَ بِکُمۡ ضَرًّا اَوۡ اَرَادَ بِکُمۡ نَفۡعًا) “(তাদেরকে) বল, আল্লাহ তোমাদের কোন ক্ষতি বা কোন কল্যাণ করার ইচ্ছে করলে তার বিপক্ষে তোমাদের জন্য কিছু করার ক্ষমতা কার আছে?..." (সূরাহ্ আল ফাতহ ৪৮:১১)
এমনকি আল্লাহ তা'আলা আরো বলেন- (قُلۡ لَّاۤ اَمۡلِکُ لِنَفۡسِیۡ نَفۡعًا وَّ لَا ضَرًّا اِلَّا مَا شَآءَ اللّٰهُ)
“বল, আল্লাহ যা ইচ্ছে করেন তাছাড়া আমার নিজের ভালো বা মন্দ করার কোন ক্ষমতা আমার নেই...।” (সূরা আল আ'রাফ ৭: ১৮৮)।
মূলত এ বিধানটি এককভাবে কাউকে রক্ষা করার জন্য। যদিও নবী (সা.) -এর শাফা'আত মু'মিন বান্দাদের জন্য প্রযোজ্য হবে। তথাপি তিনি বলেছেন- আমি তোমাদের জন্য আল্লাহর কাছে কিছুই করতে পারব না। এটা এ কারণে যে, এর মাধ্যমে তাদেরকে ভীতি প্রদর্শন করা, যাতে তারা পরকালীন পাথেয় উপার্জন বাদ দিয়ে শুধুমাত্র আমার ওপর নির্ভর করে বসে না থাকে।
(غَيْرَ أَنَّ لَكُمْ رَحِمًا سَأَبُلُّهَا بِبَلَالِهَا) তবে তোমাদের সাথে আমার যে আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে তা দয়া, অনুগ্রহ, অন্যায়ের প্রতিবাদ ইত্যাদি ভালো আচরণের মাধ্যমে সর্বদা রক্ষা করে চলব।
(ফাতহুল বারী ‘কিতাবুত তাফসীর ৮/৪৭৭১, শারহুন নাবাবী কিতাবুল ঈমান ৩/৩৪৮, তুহফাতুল আহওয়াযী ৮/৩১৮৫, মিরকাতুল মাফাতীহ)