৫৩৭১

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - ভীতি প্রদর্শন ও সতর্কীকরণ

৫৩৭১-[১] ’ইয়ায ইবনু হিমার আল মুজাশি’ঈ (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদিন রাসূলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর ভাষণে বললেন, জেনে রাখ! আল্লাহ তা’আলা আমাকে আদেশ করেছেন যে, আমি তোমাদেরকে ঐ কথাটি অবহিত করি যা তোমরা জান না। আল্লাহ তা’আলা আজ আমাকে যে সমস্ত বিষয়ে অবগত করেছেন, (আল্লাহ বলেন, আমি আমার বান্দাকে যে সমস্ত সম্পদ দান করেছি, তা হালাল। আল্লাহ তা’আলা আরো বলেছেন, আমি আমার বান্দাদেরকে ন্যায় ও সত্যের উপরে সৃজন করেছি। অতঃপর তাদের নিকট শয়তান এসে তাদেরকে দীন হতে ঘুরিয়ে দেয়, আর আমি তাদের জন্য যা হালাল করেছিলাম শয়তান তাকে তাদের জন্য হারাম করে দেয় এবং শয়তান তাদেরকে এ আদেশ করে যে, তারা যেন আমার সাথে ঐ জিনিসকে শরীক করে নেয় যার সম্পর্কে কোন দলীল বা প্রমাণ অবতীর্ণ করা হয়নি।
আর আল্লাহ জমিনবাসীদের প্রতি দৃষ্টি দিলেন, তখন (তাদের চরম গোমরাহির কারণে) কতিপয় আহলে কিতাব ছাড়া আরবী, আজমী সকলের ওপর খুবই ক্ষুব্ধ হলেন। আল্লাহ তা’আলা আরো বলেছেন, আমি তোমাকে [হে মুহাম্মাদ (সা.)] এজন্যই নবী বানিয়ে পাঠিয়েছি যে, তোমাকে পরীক্ষা করব আর তোমার সাথে তোমার উম্মতেরও পরীক্ষা করব আমি তোমার ওপর একটি কিতাব অবতীর্ণ করেছি যাকে পানিতে ধুতে পারবে না (তা অন্তরে সংরক্ষিত, কাজেই কেউ মেটাতে পারবে না)। তুমি তা ঘুমন্ত ও জাগ্রত অবস্থায় পাঠ করবে। আর আল্লাহ আমাকে এটাও নির্দেশ করেছেন- আমি যেন কুরায়শদেরকে জ্বালিয়ে (ধ্বংস করে) ফেলি আমি বললাম, এতে কুরায়শগণ তো আমার মস্তক পিষে রুটির মতো চ্যাপ্টা করে ফেলবে। (সংখ্যাগরিষ্ঠতার দরুন) তখন আল্লাহ তা’আলা বললেন, তারা তোমাকে যেভাবে (মক্কা হতে) বের করে দিয়েছে, সেভাবে আমিও তাদেরকে (বাড়িঘর হতে) বের করে দেব। তুমি তাদের সাথে যুদ্ধ কর, আমি তোমার যুদ্ধের সরঞ্জাম প্রস্তুত করে দেব। তুমি আল্লাহর রাস্তায় খরচ কর। আমি শীঘ্রই তোমার খরচের ব্যবস্থা করে দেব। তুমি তাদের (কুরায়শদের) বিরুদ্ধে সেনাদল প্রেরণ করবে, আমি শত্ৰু-শক্তির পাঁচ গুণ বেশি সৈন্য আর তোমার অনুসরণ করে তাদের সঙ্গে নিয়ে ঐ সমস্ত লোকেদের বিরুদ্ধে লড়াই কর, যারা তোমার নাফরমানি করে। (মুসলিম)

الفصل الاول ( بَاب الْإِنْذَار والتحذير)

عَن عِيَاض بن حمَار الْمُجَاشِعِي أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ ذَاتَ يَوْمٍ فِي خُطْبَتِهِ: أَلَا إِنَّ رَبِّي أَمَرَنِي أَنْ أُعَلِّمَكُمْ مَا جَهِلْتُمْ مِمَّا عَلَّمَنِي يَوْمِي هَذَا: كُلُّ مَالٍ نَحَلْتُهُ عَبْدًا حلالٌ وإِني خلقت عبَادي حنفَاء كلهم وَإنَّهُ أَتَتْهُمُ الشَّيَاطِينُ فَاجْتَالَتْهُمْ عَنْ دِينِهِمْ وَحَرَّمَتْ عَلَيْهِمْ مَا أَحْلَلْتُ لَهُمْ وَأَمَرَتْهُمْ أَنْ يُشْرِكُوا بِي مَا لَمْ أُنْزِلْ بِهِ سُلْطَانًا وَإِنَّ اللَّهَ نَظَرَ إِلَى أَهْلِ الْأَرْضِ فَمَقَتَهُمْ عَرَبَهُمْ وَعَجَمَهُمْ إِلَّا بَقَايَا مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ وَقَالَ: إِنَّمَا بَعَثْتُكَ لِأَبْتَلِيَكَ وَأَبْتَلِيَ بِكَ وَأَنْزَلَتُ عَلَيْكَ كِتَابًا لَا يَغْسِلُهُ الْمَاءُ تَقْرَؤُهُ نَائِمًا وَيَقْظَانَ وَإِنَّ الله أَمرنِي أَن أحرقَ قُريْشًا فَقلت: يَا رَبِّ إِذًا يَثْلَغُوا رَأْسِي فَيَدَعُوهُ خُبْزَةً قَالَ: اسْتَخْرِجْهُمْ كَمَا أَخْرَجُوكَ وَاغْزُهُمْ نُغْزِكَ وَأَنْفِقْ فَسَنُنْفِقُ عَلَيْكَ وَابْعَثْ جَيْشًا نَبْعَثْ خَمْسَةً مِثْلَهُ وَقَاتِلْ بِمن أطاعك من عصاك . رَوَاهُ مُسلم رواہ مسلم (62 / 2865)، (7207) ۔ (صَحِيح)

ব্যাখ্যা : (كُلُّ مَالٍ نَحَلْتُهُ عَبْدًا حلالٌ) আমি আমার বান্দাদের যে সম্পদ দান করেছি তা সম্পূর্ণ হালাল, তাতে কোন প্রকার হারাম নেই এবং কোন বান্দা নিজের পক্ষ থেকে তাকে হারাম করতে পারবে না।
(وإِني خلقت عبَادي حنفَاء كلهم) আর আমি আমার সকল বান্দাকে বাতিল পরিহার করে সত্য গ্রহণ করার যোগ্য করে সৃষ্টি করেছি। তাই তো নবী (সা.) বলেন, (كُلُّ مَوْلُودٍ يُولَدُ عَلَى الْفِطْرَةِ،) প্রত্যেক আদম সন্তান সঠিক স্বভাব তথা তাওহীদের উপর জন্মগ্রহণ করে। (সহীহ মুসলিম ২৬৫৮)।

(وَإِنَّ اللَّهَ نَظَرَ إِلَى أَهْلِ الْأَرْضِ فَمَقَتَهُمْ) এবং আল্লাহ তা'আলা পৃথিবীবাসীর প্রতি লক্ষ্য করেন এবং ‘আরব ও অনারব সকলের প্রতি ঘৃণা পোষণ করেন, রাগান্বিত হন তাদের মন্দ কাজের তথা শির্ক ও কুফরীর উপর সবাই ঐকমত্য পোষণ করার জন্য। তবে ইয়াহূদী খ্রীষ্টানদের কিছু সংখ্যক লোকের প্রতি নয়, যারা সঠিক ধর্মের উপর তথা ‘ঈসা আলায়হিস সালাম-এর শরীরের উপর অবশিষ্ট ছিল, এমনকি নবী (সা.) -এর প্রতি ঈমানও এনেছিল।

(إِنَّمَا بَعَثْتُكَ لِأَبْتَلِيَكَ) আমি আপনাকে এজন্য পাঠিয়েছি যাতে আপনাকে পরীক্ষা করতে পারি কিভাবে আপনি আপনার সম্প্রদায়ের কষ্টের উপর ধৈর্যধারণ করেন।
(وَأَبْتَلِيَ بِ) এবং আপনার মাধ্যমে আপনার সম্প্রদায়কে পরীক্ষা করতে পারি তারা আপনার প্রতি ঈমান আনয়ন করে, নাকি কুফরী করে।
(وَأَنْزَلَتُ عَلَيْكَ كِتَابًا لَا يَغْسِلُهُ الْمَاءُ) এবং আপনার প্রতি এমন এক মহান কিতাব অবতীর্ণ করেছি যা কখনো পানিতে ধুয়ে শেষ হয়ে যাবে না। বরং আমি উক্ত কিতাবকে মু'মিনদের অন্তরে সংরক্ষণ করে রেখেছি। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেন, (اِنَّا نَحۡنُ نَزَّلۡنَا الذِّکۡرَ وَ اِنَّا لَهٗ لَحٰفِظُوۡنَ ﴿۹﴾) “নিশ্চয় আমি কুরআন অবতীর্ণ করেছি এবং আমিই তার হিফাযাতকারী।” (সূরাহ আল হিজর ১৫ : ৯)

‘আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এটা এমন একটি কিতাব যা অন্তরে সুরক্ষিত রয়েছে, কাগজের পৃষ্ঠা ধুয়ে ফেললেও এটা মুছে যাবে না। অথবা, আসমান ও জমিন যতদিন বাকী থাকবে ততদিন এটা মানুষের মাঝে থাকবে। এর বিধান কোনদিন রহিত হবে না এবং এর পঠন কোন দিন বাদ যাবে না। আর এটাকেই রূপকভাবে বলা হয়েছে, এর পৃষ্ঠা পানিতে ধুয়ে মুছে যাবে না।

(تَقْرَؤُهُ نَائِمًا وَيَقْظَانَ) অর্থাৎ ঘুমন্ত ও জাগ্রত সর্বাবস্থায় আপনার মস্তিষ্কে এটা বিদ্যমান থাকবে আপনি কখনো তা থেকে উদাসীন থাকবেন না।
(أَنْفِقْ فَسَنُنْفِقُ عَلَيْكَ) আল্লাহর রাস্তায় সাধ্যানুযায়ী ব্যয় করুন, আমি আপনাকে দুনিয়া ও আখিরাতে এর বিনিময় প্রদান করব। আল্লাহ তা'আলা বলেন, (وَ مَاۤ اَنۡفَقۡتُمۡ مِّنۡ شَیۡءٍ فَهُوَ یُخۡلِفُهٗ ۚ وَ هُوَ خَیۡرُ الرّٰزِقِیۡنَ)“...তোমরা যা খরচ করবে তার বিনিময় ভবিষ্যতে প্রদান করা হবে, তিনি উত্তম রিযকদাতা”- (সূরাহ্ সাবা ৩৪ : ৩৯)। (শারহুন নাবাবী ১৭/২৮৬৫, মিরকাতুল মাফাতীহ)