লগইন করুন
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - ভীতি প্রদর্শন ও সতর্কীকরণ
৫৩৭২-[২] ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন নাযিল হয় (وَ اَنۡذِرۡ عَشِیۡرَتَکَ الۡاَقۡرَبِیۡنَ) “(হে নবী!) তোমার নিকটাত্মীয়দেরকে সতর্ক করে দাও”- (সূরাহ আশ শু’আরা ২৬ : ২১৪); তখন নবী (সা.) সাফা পাহাড়ে উঠলেন এবং হে বনী ফিহর! হে বনী ’আদী! বলে কুরায়শদের বিভিন্ন গোত্রকে উচ্চৈঃস্বরে আহ্বান করলেন, এতে তারা সকলে জড়ো হয়ে গেল। অতঃপর তিনি (সা.) বললেন, বল তো আমি যদি এখন তোমাদেরকে বলি যে, এ পাহাড়ের উপত্যকায় একটি অশ্বারোহী সৈন্যবাহিনী তোমাদের ওপর হঠাৎ আক্রমণের জন্য প্রস্তুত রয়েছে, তবে কি তোমরা আমাকে বিশ্বাস করবে? সমবেত সকলে বলল, হ্যা, কারণ আমরা আপনাকে সদা সত্যবাদীই পেয়েছি। তখন তিনি (সা.) বললেন, “আমি তোমাদের সম্মুখে একটি কঠিন শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করে দিচ্ছি।” এ কথা শুনে আবূ লাহাব বলল, সারাটা জীবন তোমার ধ্বংস হোক। তুমি কি এজন্যই আমাদেরকে একত্রিত করেছ? এমতাবস্থায় অবতীর্ণ হলো (تَبَّتۡ یَدَاۤ اَبِیۡ لَهَبٍ وَّ تَبَّ ؕ) “আবূ লাহাব-এর উভয় হাত ধ্বংস হোক এবং তার বিনাশ হোক”- (সূরাহ্ লাহাব ১১১:১)। (বুখারী ও মুসলিম)
অপর এক বর্ণনাতে আছে, নবী (সা.) ডাক দিলেন, হে আবদ মানাফ-এর বংশধর! মূলত আমার তোমাদের দৃষ্টান্ত হলো সেই ব্যক্তির ন্যায়, যে শত্রুসৈন্যকে দেখে স্বীয় গোত্রকে বাঁচানোর জন্য চলল, অতঃপর আশঙ্কা করল যে, শত্রু তাদের ওপর আগে এসে আক্রমণ করে বসতে পারে। তাই সে উচ্চস্বরে (يَا صَبَاحَاهٗ) “হে সকাল বেলার বিপদ!” বলে সতর্ক করতে লাগল। (বুখারী)
الفصل الاول ( بَاب الْإِنْذَار والتحذير)
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: لَمَّا نَزَلَتْ (وَأَنْذِرْ عشيرتك الْأَقْرَبين) صَعِدَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الصَّفَا فَجَعَلَ يُنَادِي: «يَا بَنِي فِهْرٍ يَا بَنِي عَدِيٍّ» لِبُطُونِ قُرَيْشٍ حَتَّى اجْتَمَعُوا فَقَالَ: «أَرَأَيْتَكُمْ لَوْ أَخْبَرْتُكُمْ أَنَّ خَيْلًا بِالْوَادِي تُرِيدُ أَنْ تُغِيرَ عَلَيْكُمْ أَكُنْتُمْ مُصَدِّقِيَّ؟ » قَالُوا: نَعَمْ مَا جَرَّبْنَا عَلَيْكَ إِلَّا صِدْقًا. قَالَ: «فَإِنِّي نَذِيرٌ لَكُمْ بَيْنَ يَدَيْ عَذَابٌ شَدِيدٌ» . فَقَالَ أَبُو لَهَبٍ: تَبًّا لَكَ سَائِرَ الْيَوْمَ أَلِهَذَا جَمَعْتَنَا؟ فَنَزَلَتْ: (تَبَّتْ يَدَا أَبِي لَهَبٍ وَتَبَّ) مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ. وَفِي رِوَايَةٍ نَادَى: «يَا بَنِي عَبْدِ مَنَافٍ إِنَّمَا مَثَلِي وَمَثَلُكُمْ كَمَثَلِ رَجُلٍ رَأَى الْعَدُوَّ فَانْطَلَقَ يَرْبَأُ أَهْلَهُ فَخَشِيَ أَنْ يسبقوه فَجعل يَهْتِف يَا صَبَاحَاه» متفق علیہ ، رواہ البخاری (4770) و مسلم (355 / 208 و 353 / 207)، (508 و 506) ۔ (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা : (أَرَأَ يْتَكُمْ لَوْ أَخْبَرْ تُكُمْ أَنَّ خَيْلًا بِالْوَادِىْ) তোমরা আমাকে সংবাদ দাও বা জানিয়ে দাও এই মর্মে যে, যদি আমি তোমাদেরকে বলি, শত্রুদল তোমাদের উপত্যকার পিছন থেকে আক্রমণ করার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে, তাহলে তোমরা কি আমাকে বিশ্বাস করবে? অর্থাৎ আমার কথাকে বিশ্বাস করবে? তারা বলল : হ্যাঁ, আমরা আপনাকে বিশ্বাস করব। আমরা আপনার কাছ থেকে সত্য ছাড়া কোন দিন মিথ্যা কথা শুনিনি। অতএব আপনার কথা সত্য কি মিথ্যা তা পরীক্ষা করে দেখতে চাই না।
(قَالَ: «فَإِنِّي نَذِيرٌ لَكُمْ بَيْنَ يَدَيْ عَذَابٌ شَدِيدٌ») আমি তোমাদেরকে কঠিন শাস্তি নাযিলের পূর্বেই সতর্ক করছি। অতএব তোমরা যদি আমার প্রতি ঈমান আনয়ন না কর, তাহলে অচিরেই তোমাদের ওপর শাস্তি অবতীর্ণ হবে।
(قَالَ أَبُو لَهَبٍ) আবূ লাহাব বলল! সে এ উপনামেই বেশি প্রসিদ্ধ ছিল। তার আসল নাম ‘আবদুল ‘উয্যা ইবনু মুত্ত্বালিব ইবনু হাশিম। নবী (সা.) -এর চাচা আবূ লাহাব উপনাম বা কুনিয়াত হওয়ার দুটি দিক রয়েছে। হয়তো সে অগ্নিশিখার মতো উজ্জ্বল ফর্সা ছিল নতুবা তার উভয় গাল উজ্জ্বল ফর্সা ছিল। আবূ লাহাব নামটি তার পরিণতি বিবেচনায় যথাযথ হয়েছে। যেহেতু পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, (سَیَصۡلٰی نَارًا ذَاتَ لَهَبٍ)- “অচিরেই সে প্রবেশ করবে লেলিহান শিখাযুক্ত আগুনে”- (সূরাহ্ আল লাহাব ১১১ : ৩)।
(تَبًّا لَكَ سَائِرَ الْيَوْمَ) সারাদিন বা এখন থেকে দিনের বাকী অংশ তোমার জন্য ধ্বংস হোক।
(أَلِهَذَا جَمَعْتَنَا؟) এ কথার সংবাদ দেয়ার জন্যই কি তুমি আমাদেরকে ডেকে একত্রিত করেছ? অতঃপর তখনই এ আয়াত অবতীর্ণ হয়, (تَبَّتۡ یَدَاۤ اَبِیۡ لَهَبٍ وَّ تَبَّ) “ধ্বংস হোক আবূ লাহাব-এর হস্তদ্বয় এবং ধ্বংস হোক যে নিজেও।” অথবা এর অর্থ হচ্ছে সে দুনিয়া ও আখিরাত উভয় স্থানেই ধ্বংস হোক।
অত্র আয়াতে আবূ লাহাব-এর আসল নাম উল্লেখ না করে কুনিয়াত বা উপনাম ব্যবহার করা হয়েছে। হয়তো এ নামে বেশি প্রসিদ্ধি লাভ করার জন্য অথবা তার নাম আবদুল উযযা হওয়ার কারণে অথবা সে জাহান্নামী হওয়ার জন্য উপনাম ব্যবহার করাই বেশি উপযুক্ত হয়েছে। যদিও আসল নামের মধ্যে সৌন্দর্য বেশি থাকে।
(তুহফাতুল আহওয়াযী ৮/৩৩৬৩, শারহুন নাবাবী কিতাবুল ঈমান’ ৩/২০৮, ফাতহুল বারী ‘কিতাবুত তাফসীর ৮/৪৭৭০, মিরক্বাতুল মাফাতীহ)