পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ইবাদতের জন্য হায়াত ও দৌলতের আকাঙ্ক্ষা করা
৫২৮৫-[২] আবূ বকরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। এক ব্যক্তি প্রশ্ন করল : হে আল্লাহর রসূল! মানুষের মধ্যে উত্তম কে? তিনি (সা.) বললেন : যার জীবন দীর্ঘ হয় এবং আমল ভালো হয়। সে আবার প্রশ্ন করল, মন্দ ব্যক্তি কে? তিনি (সা.) বললেন : যার বয়স দীর্ঘ হয়, কিন্তু আমল মন্দ হয়। (আহমাদ, তিরমিযী ও দারিমী)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَابُ اسْتِحْبَابِ الْمَالِ وَالْعُمُرِ لِلطَّاعَةِ)
عَن أبي بكرةَ أَنَّ رَجُلًا قَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَيُّ النَّاسِ خيرٌ؟ قَالَ: «مَن طالَ عمُرُه وحسُنَ عَمَلُهُ» . قَالَ: فَأَيُّ النَّاسِ شَرٌّ؟ قَالَ: «مَنْ طَالَ عُمُرُهُ وَسَاءَ عَمَلُهُ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ والدارمي
سندہ ضعیف ، رواہ احمد (5 / 40 ح 20686) و الترمذی (2330 وقال : حسن صحیح) و الدارمی (2 / 308 ح 2745 ۔ 2746) * علی بن زید بن جدعان ضعیف و حدیث الترمذی (2329) یغنی عنہ ۔
ব্যাখ্যা : (أَيُّ النَّاسِ خيرٌ) কোন লোকটি উত্তম তথা কোন প্রকার লোক সর্বোত্তম।
(قَالَ: «مَن طالَ عمُرُه وحسُنَ عَمَلُهُ) এ প্রসঙ্গে আল্লামাহ্ ক্বারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, আরো দুই প্রকার লোকের বিবরণ অবশিষ্ট রয়েছে যাদের ভালো ও মন্দ কর্মসমূহ উভয়ই সমান সমান। তারা হলো যার বয়স কম তবে ‘আমল অনেক ভালো অথবা ‘আমল খারাপ। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৬/২৩৩০)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ইবাদতের জন্য হায়াত ও দৌলতের আকাঙ্ক্ষা করা
৫২৮৬-[৩] ’উবায়দ ইবনু খালিদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নাবী (সা.) দু’ লোকের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করলেন। তাদের একজন আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হয়ে গেল। অতঃপর দ্বিতীয়জন তার এক সপ্তাহ অথবা এর কাছাকাছি সময়ে (আপন বাড়ি ঘরে) মারা গেল। লোকেরা এ ব্যক্তির জানাযাহ্ আদায় করে অবসর হলে নাবী (সা.) প্রশ্ন করলেন: তোমরা (এ মৃত ব্যক্তির জানাযায়) কি দুআ পাঠ করেছ? তারা বলল, আমরা আল্লাহর নিকট এ দু’আ করেছি তিনি যেন তাকে ক্ষমা করে দেন, তার প্রতি দয়া করেন এবং তাকে তার (শহীদ) বন্ধুর সাথে মিলিত করেন। তখন নাবী (সা.) বললেন: এ ব্যক্তির সালাত এবং অন্যান্য ভালো ’আমল কোথায় গেল যা সে তার (শহীদ) ভাইয়ের মৃত্যুর পরে (এক সপ্তাহ জীবিত থাকাকালীন সময়ে) আদায় করেছিল? অথবা তিনি বলেছেন : শহীদ ভাইয়ের সিয়ামের পরে এ ব্যক্তি যে কয়দিন আপন সিয়াম রেখেছিল? বস্তুত (জান্নাতে) তাদের উভয়ের মর্যাদার ব্যবধান আসমান ও জমিনের মধ্যকার দূরত্বের সমপরিমাণ। (আবু দাউদ
ও নাসায়ী)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَابُ اسْتِحْبَابِ الْمَالِ وَالْعُمُرِ لِلطَّاعَةِ)
وَعَن عبيد بن خَالِد أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ آخَى بَيْنَ رَجُلَيْنِ فَقُتِلَ أَحَدُهُمَا ثُمَّ مَاتَ الْآخَرُ بَعْدَهُ بِجُمُعَةٍ أَوْ نَحْوِهَا فَصَلَّوْا عَلَيْهِ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا قُلْتُمْ؟» قَالُوا: دَعَوْنَا اللَّهَ أَنْ يَغْفِرَ لَهُ وَيَرْحَمَهُ وَيُلْحِقَهُ بِصَاحِبِهِ. فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «فَأَيْنَ صَلَاتُهُ بَعْدَ صَلَاتِهِ وَعَمَلُهُ بَعْدَ عَمَلِهِ؟» أَوْ قَالَ: «صِيَامُهُ بَعْدَ صِيَامِهِ لِمَا بَيْنَهُمَا أَبْعَدُ مِمَّا بَيْنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وَالنَّسَائِيّ
حسن ، رواہ ابوداؤد (2524) و النسائی (4 / 74 ح 1987) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা : (أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ آخَى بَيْنَ رَجُلَيْنِ) নাবী (সা.) তার সাহাবীদের থেকে দু'জন সাহাবীর মধ্যে ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করলেন। তারা দুনিয়াতে পরস্পর বন্ধুত্বের জীবনযাপন করছিল। কিন্তু তাদের একজন আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধে শহীদ হয়ে গেল। এর কিছু দিন পর (সপ্তাহ, মাস অথবা বছর) দ্বিতীয় বন্ধুও মারা গেল। তার কাফন দাফন শেষে নাবী (সা.) সাহাবীদেরকে জিজ্ঞেস করলেন। তার সম্পর্কে তোমরা কি বলছ? তারা বললেন, আল্লাহ তা'আলা তাকে ক্ষমা করুন এবং তার পূর্বের বন্ধুর সাথে পরকালে জান্নাত নসীব করুন।
ইবনু মাজার হাদীসে এসেছে, আবূ ত্বলহাহ্ স্বপ্নে দেখলেন ২য় বন্ধু প্রথম বন্ধুর পূর্বেই জান্নাতে প্রবেশ করেছে। এতে তিনি আশ্চর্য হন এবং অন্যান্য সাহাবীদেরকে বললে তারাও আশ্চর্য হয়। তখন নাবী (সা.) এ খবর শুনে বলেন, তোমরা তার ব্যাপারে আশ্চর্য হচ্ছে: তার অতিরিক্ত, সালাত, সিয়ামরত সাওয়াবগুলো কোথায় যাবে? তাদের দু'জনের মধ্যে আল্লাহর নিকট মর্যাদার দিক দিয়ে পার্থক্য হচ্ছে আসমান ও জমিনের পার্থক্যের ন্যায়। মিরকাত ভাষ্যকার বলেন, “এর কারণ হলো ২য় বন্ধুও আল্লাহর রাস্তায় সীমান্ত পাহারায় নিয়োজিত ছিল। তাই তিনি শহীদের মর্যাদা হুকুমগতভাবে পেয়ে গেছেন। সেই সাথে আরো অতিরিক্ত সলাত, সিয়াম ও ‘আমালযুক্ত হয়েছে তা না হলে আল্লাহর রাস্তায় শহীদের চেয়ে অধিক সাওয়াবের কাজ আর নেই।”(মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ইবাদতের জন্য হায়াত ও দৌলতের আকাঙ্ক্ষা করা
৫২৮৭-[৪] আবূ কাবশাহ্ আল আনমারী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে বলতে শুনেছেন, [রাসূল (স.) বলেছেন] এমন তিনটি বিষয় আছে যার (সত্যতার) উপর আমি শপথ করতে পারি এবং আমি তোমাদের সম্মুখে অপর একটি হাদীস বর্ণনা করব, তাকেও ভালোভাবে স্মরণ রাখবে। আর যে ব্যাপারে আমি শপথ করছি তা হলোঃ-
(ক) দান-খয়রাতের কারণে কোন বান্দার সম্পদে হ্রাস হয় না, (খ) যে নির্যাতিত বান্দা নির্যাতনের শিকার হয়ে ধৈর্যধারণ করে, আল্লাহ তা’আলা তার মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন, (গ) আর যে বান্দা ভিক্ষার দরজা উন্মুক্ত করে, আল্লাহ তা’আলা তার অভাব ও নিঃস্বতার দরজা খুলে দেন। অতঃপর তিনি (সা.) বললেন : আমি যে হাদীসটি তোমাদেরকে বলব, তাকে খুব ভালোভাবে সংরক্ষণ করো। তা হলো প্রকৃতপক্ষে পার্থিব জীবন হলো চার শ্রেণির লোকের জন্য।
যথা-
১. এমন বান্দা- আল্লাহ যাকে সম্পদ ও বিদ্যা উভয়টি দান করেছেন, তবে সে তা খরচ করতে আপন প্রভুকে ভয় করে (হারাম পথে ব্যয় করে না); আত্মীয়-স্বজনের সাথে ভালো ব্যবহার করে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য সম্পদের হক মোতাবেক ’আমল করে (খরচ করে)। এ ব্যক্তির মর্যাদা সর্বোত্তম।
২. এমন বান্দা- যাকে আল্লাহ বিদ্যা দান করেছেন, কিন্তু তাকে সম্পদ দান করেননি। তবে সে এ সত্য এবং সঠিক নিয়্যাতে বলে, যদি আমার ধন-সম্পদ থাকত তাহলে আমি অমুকের মতো পুণ্যের পথে খরচ করতাম। এ দু’ ব্যক্তির সাওয়াব একই সমান।
৩. এমন বান্দা- যাকে আল্লাহ ধন-সম্পদ দিয়েছেন, কিন্তু বিদ্যা দান করেননি। তার বিদ্যা না থাকার কারণে সে নিজের সম্পদের ব্যাপারে স্বেচ্ছাচারিতায় লিপ্ত হয়ে পড়ে, এতে সে আল্লাহকে ভয় করে না। আত্মীয়স্বজনদের সাথে আর্থিক সদাচরণ করে না এবং নিজ সম্পদ হক পথে খরচ করে না। এ ব্যক্তি হলো সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট পর্যায়ের।
৪. এমন বান্দা- যার কাছে সম্পদও নেই বিদ্যাও নেই। সে আকাঙ্ক্ষা করে বলে, যদি আমার কাছে সম্পদ থাকত, তাহলে আমি তা অমুক ব্যক্তির মতো খরচ করতাম। এ বান্দাও তার এ মন্দ নিয়্যাতের কারণে গুনাহের মধ্যে তৃতীয় ব্যক্তির সমান। [ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) হাদীসটি বর্ণনা। করেছেন এবং তিনি বলেছেন : এ হাদীসটি সহীহ]
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَابُ اسْتِحْبَابِ الْمَالِ وَالْعُمُرِ لِلطَّاعَةِ)
وَعَن أبي كبشةَ الأنماريِّ أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «ثَلَاثٌ أُقْسِمُ عَلَيْهِنَّ وَأُحَدِّثُكُمْ حَدِيثًا فَاحْفَظُوهُ فَأَمَّا الَّذِي أُقْسِمُ عَلَيْهِنَّ فَإِنَّهُ مَا نَقَصَ مَالُ عَبْدٍ مِنْ صَدَقَةٍ وَلَا ظُلِمَ عَبْدٌ مَظْلِمَةً صَبَرَ عَلَيْهَا إِلَّا زَادَهُ اللَّهُ بِهَا عِزًّا وَلَا فَتَحَ عَبْدٌ بَابَ مَسْأَلَةٍ إِلَّا فَتَحَ اللَّهُ عَلَيْهِ بَابَ فَقْرٍ وَأَمَّا الَّذِي أُحَدِّثُكُمْ فَاحْفَظُوهُ» فَقَالَ: إِنَّمَا الدُّنْيَا لِأَرْبَعَةِ نفرٍ: عبدٌ رزقَه اللَّهُ مَالا وعلماً فهوَ يَتَّقِي فِيهِ رَبَّهُ وَيَصِلُ رَحِمَهُ وَيَعْمَلُ لِلَّهِ فِيهِ بِحَقِّهِ فَهَذَا بِأَفْضَلِ الْمَنَازِلِ. وَعَبْدٍ رَزَقَهُ اللَّهُ عِلْمًا وَلَمْ يَرْزُقْهُ مَالًا فَهُوَ صَادِقُ النيَّةِ وَيَقُول: لَوْ أَنَّ لِي مَالًا لَعَمِلْتُ بِعَمَلِ فُلَانٍ فأجرُهما سواءٌ. وعبدٌ رزَقه اللَّهُ مَالا وَلم يَرْزُقْهُ عِلْمًا فَهُوَ يَتَخَبَّطُ فِي مَالِهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ لَا يَتَّقِي فِيهِ رَبَّهُ وَلَا يَصِلُ فِيهِ رَحِمَهُ وَلَا يَعْمَلُ فِيهِ بِحَقٍّ فَهَذَا بأخبثِ المنازلِ وعبدٌ لم يرزُقْه اللَّهُ مَالا وَلَا عِلْمًا فَهُوَ يَقُولُ: لَوْ أَنَّ لِي مَالًا لَعَمِلْتُ فِيهِ بِعَمَلِ فُلَانٍ فَهُوَ نِيَّتُهُ وَوِزْرُهُمَا سَوَاءٌ . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ صَحِيح
سندہ ضعیف ، رواہ الترمذی (2325) * یونس بن خباب ضعیف رافضی و للحدیث طریق آخر معلول (ضعیف) عند احمد (4 / 230 ح 1802) بمتن آخر ۔
ব্যাখ্যা : (ثَلَاثٌ أُقْسِمُ عَلَيْهِنَّ وَأُحَدِّثُكُمْ) অর্থাৎ আমি তোমাদেরকে তিনটি বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে সংবাদ দিচ্ছি এবং সেগুলোকে শক্তিশালীর জন্য কসম করছি এবং এ প্রসঙ্গে হাদীস বলছি তোমরা মুখস্থ করে রাখ।
(مَا نَقَصَ مَالُ عَبْدٍ مِنْ صَدَقَةٍ) সদাক্বাহ্ বা দান করাতে বান্দার সম্পদে কোন ঘাটতি হয় না বা বরকত কমে যায় না। বরং দুনিয়া ও আখিরাতে তার বিনিময় তাকে দেয়া হয়ে থাকে। আল্লাহ তা'আলা বলেন, (.. وَ مَاۤ اَنۡفَقۡتُمۡ مِّنۡ شَیۡءٍ فَهُوَ یُخۡلِفُهٗ ۚ ..) তোমরা যা কিছু দান করে থাক তা তোমাদের পশ্চাতে রয়ে যায়।” (সূরাহ্ সাবা ৩৪ : ৩৯)
(وَلَا ظُلِمَ عَبْدٌ مَظْلِمَةً صَبَرَ عَلَيْهَا إِلَّا زَادَهُ اللَّهُ بِهَا عِزًّا) বান্দাকে কোন ধরনের যুলুম করা হলে সে তার উপর ধৈর্যধারণ করার দরুন আল্লাহ তা'আলা তার বিনিময়ে সম্মান বৃদ্ধি করে দেন। আবার কখনো অত্যাচারী ব্যক্তি ঐ মাযলুম ব্যক্তির লাঞ্ছনার স্বীকার হয়ে থাকে কর্মের যথাযথ প্রতিদান স্বরূপ।
(وَلَا فَتَحَ عَبْدٌ بَابَ مَسْأَلَةٍ إِلَّا فَتَحَ اللَّهُ عَلَيْهِ بَابَ فَقْرٍ) বান্দা যদি বিনা প্রয়োজনে সম্পদ বৃদ্ধির লোভে মানুষের নিকট হাত পাতে তাহলে আল্লাহ তা’আলা তার ওপর একের পর এক অভাবের দরজা খুলে দেন। অথবা তার নিকট থেকে নি'আমত তুলে নেন, ফলে সে শাস্তিতে পতিত হয়। তার জ্বলন্ত উদাহরণ ঐ কুকুরের ন্যায় যে মুখে এক খণ্ড হাড় নিয়ে পানির উপর দিয়ে অতিক্রম করার সময় স্বচ্ছ পানিতে হাড়ের প্রতিচ্ছবি দেখে লোভ করে তা নেয়ার জন্য হা করার সাথে সাথে তার মুখের হাড্ডিটিও পানিতে পড়ে যায়। অতএব লোভ নিন্দনীয় এবং লোভী সর্বদা বঞ্চিত হয়।
(إِنَّمَا الدُّنْيَا لِأَرْبَعَةِ نفرٍ) দুনিয়া চার শ্রেণির লোকের জন্য :
[এক] (عبدٌ رزقَه اللَّهُ مَالا وعلماً) আল্লাহ তা'আলা কোন বান্দাকে ধন-সম্পদ ও জ্ঞান উভয়টিই দিয়েছেন। আর সে উক্ত জ্ঞানের কারণে তার রবকে ভয় করে চলে এবং সম্পদের যথাযথ হক আদায় করে আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে ও আল্লাহর রাস্তায় তার হক অনুযায়ী ব্যয় করে। আর এই প্রকার ব্যক্তি দুনিয়া ও আখিরাতে সর্বোত্তম মর্যাদার অধিকারী।।
[দুই] (وَعَبْدٍ رَزَقَهُ اللَّهُ عِلْمًا وَلَمْ يَرْزُقْهُ مَالًا) ঐ ব্যক্তি আল্লাহ তা'আলা যাকে ‘ইলম দান করেছেন, কিন্তু তাকে সম্পদ দান করেননি। তবে সে যদি বিশুদ্ধ নিয়্যাতের অধিকারী হয়ে বলে, আমার যদি সম্পদ থাকত তাহলে আমিও প্রথম শ্রেণির লোকের মতো ‘আমল করতাম- এই দুই শ্রেণির লোকের প্রতিদান আল্লাহ তা'আলার নিকট এক সমান।
[তিন] (وعبدٌ رزَقه اللَّهُ مَالا وَلم يَرْزُقْهُ عِلْمًا) যাকে আল্লাহ তা'আলা সম্পদের মালিক বানিয়েছেন, কিন্তু তাকে শারঈ কোন জ্ঞান দান করেননি। ফলে সে যদি জ্ঞান না থাকার কারণে উক্ত সম্পদে গণ্ডগোল বাধিয়ে ফেলে। কখনো তা যথাযথ ব্যয় না করে জমা করে রেখে দেয় আবার কখনো লোক দেখানোর উদ্দেশে ব্যয় করে থাকে। সে ঐ সম্পদ খরচের ক্ষেত্রে রবের ভয় করে না, আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে না এবং তার হক অনুযায়ী আমলও করে না। আর এ প্রকার লোক সবচেয়ে নিকৃষ্ট।
[চার] (وعبدٌ لم يرزُقْه اللَّهُ مَالا وَلَا عِلْمًا) ঐ বান্দাকে আল্লাহ তা'আলা সম্পদ এবং জ্ঞান কোনটিই দান করেননি। সে এই আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করে যে, যদি তার নিকট সম্পদ থাকত তাহলে উপরোক্ত ব্যক্তির ন্যায় ‘আমল করত। সে তার নিয়্যাতের কারণে পূর্বের ব্যক্তির ন্যায় সমান গুনাহের অধিকারী। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ, ইবনু মাজাহ ৩/৪২২৮)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ইবাদতের জন্য হায়াত ও দৌলতের আকাঙ্ক্ষা করা
৫২৮৮-[৫] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নিশ্চয় নবী (সা.) বলেছেন : আল্লাহ তা’আলা যখন কোন বান্দার কল্যাণ কামনা করেন তখন তাকে ভালো কাজে নিয়োজিত করেন। প্রশ্ন করা হলো- হে আল্লাহর রসূল! কিরূপে তার দ্বারা ভালো কাজ করান? তিনি (সা.) বললেন : মৃত্যুর আগে তাকে ভালো কাজ করার তাওফীক দান করেন। (তিরমিযী)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَابُ اسْتِحْبَابِ الْمَالِ وَالْعُمُرِ لِلطَّاعَةِ)
وَعَنْ أَنَسٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِنَّ اللَّهَ تَعَالَى إِذَا أَرَادَ بِعَبْدٍ خَيْرًا اسْتَعْمَلَهُ» . فَقِيلَ: وَكَيْفَ يَسْتَعْمِلُهُ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: «يُوَفِّقُهُ لِعَمَلٍ صَالِحٍ قَبْلَ الموتِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
صحیح ، رواہ الترمذی (2142 وقال : صحیح) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা : (إِنَّ اللَّهَ تَعَالَى إِذَا أَرَادَ بِعَبْدٍ خَيْرًا اسْتَعْمَلَهُ) আল্লাহ তা'আলা কোন বান্দার পরকালীন কল্যাণ কামনা করলে তাকে দিয়ে আনুগত্যমূলক কাজ করিয়ে নেন। সহাবীগণ রসূল (সা.) -কে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি উত্তরে বলেন- এর অর্থ হচ্ছে আল্লাহ তা'আলা তাকে মৃত্যুর পূর্বে তাওবাহ্ করার সুযোগ করে দেন এবং সৎকাজ করতে করতে উত্তম ‘আমলের উপর মৃত্যু হয়। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ইবাদতের জন্য হায়াত ও দৌলতের আকাঙ্ক্ষা করা
৫২৮৯-[৬] শাদ্দাদ ইবনু আওস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: যে ব্যক্তি নিজের প্রবৃত্তিকে স্বীয় আয়ত্তাধীনে রেখেছেন এবং মৃত্যুর পরের জন্য নেকির পুঁজি সংগ্রহ করেছে, সে ব্যক্তিই প্রকৃত সবল ও বুদ্ধিমান। আর যে ব্যক্তি স্বীয় প্রবৃত্তির অনুসারী হয়ে আল্লাহর প্রতি ক্ষমার আশা পোষণ করে, মূলত সে-ই অক্ষম (নির্বোধ)। (তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَابُ اسْتِحْبَابِ الْمَالِ وَالْعُمُرِ لِلطَّاعَةِ)
وَعَنْ شَدَّادِ بْنِ أَوْسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : «الْكَيِّسُ مَنْ دَانَ نَفْسَهُ وَعَمِلَ لِمَا بَعْدَ الْمَوْتِ. وَالْعَاجِزُ مَنْ أَتْبَعَ نَفْسَهُ هَوَاهَا وَتَمَنَّى عَلَى اللَّهِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ
اسنادہ ضعیف ، رواہ الترمذی (2459) و ابن ماجہ (4260) * ابوبکر بن ابی مریم ضعیف مختلط ۔
(ضَعِيف)
ব্যাখ্যা : (الْكَيِّسُ مَنْ دَانَ نَفْسَهُ) বিচক্ষণ সেই ব্যক্তি যে নিজেকে আল্লাহর আনুগত্যে নিয়োজিত রাখে বা নিজের নফসের হিসাব নিজেই করে থাকে। হাদীসে (الْكَيِّسُ) শব্দের অর্থ হচ্ছে, যে কোন বিষয়ের পরিণতি সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান রাখে।
(مَنْ دَانَ نَفْسَهُ) এর অর্থ হচ্ছে যে নিজের নাফসে আল্লাহর বিধানের অনুগত করে রাখে। কেউ কেউ বলেন, যে নিজের নাফসের হিসাব নেয়। অর্থাৎ যে দুনিয়াতে তার কথা, ‘আমল ও অবস্থা হিসাব করে দেখে। যদি তা ভালো হয় তাহলে আল্লাহর প্রশংসা করে আর যদি মন্দ হয় তাহলে আল্লাহর নিকট তাওবাহ্ করে এবং ছুটে যাওয়া ‘আমলগুলো সম্পাদন করার চেষ্টা করে। যেমনটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, (حَاسِبُواأَنْفُسَكُمْ قَبْلَ أَنْ تُحَاسَبُوا) এবং আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন, (…وَ لۡتَنۡظُرۡ نَفۡسٌ مَّا قَدَّمَتۡ لِغَدٍ ...)“...প্রত্যেকেই চিন্তা করে দেখুক, আগামীকালের জন্য সে কী (পুণ্য কাজ) অগ্রিম পাঠিয়েছে...”- (সূরা আল হাশর ৫৯ : ১৮)। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)।
(وَعَمِلَ لِمَا بَعْدَ الْمَوْتِ) অর্থাৎ মৃত্যু আসার পূর্বেই ভালো কাজগুলো সম্পাদন করে যাতে পরকালে আল্লাহ প্রদত্ত নূর পেতে সক্ষম হয়। অতএব মৃত্যু হচ্ছে দুনিয়ার কাজগুলোর পুরস্কার প্রাপ্তির মাধ্যম, তাই পরিণতি ভেবে যে কাজ করে সেই জ্ঞানী।
(وَالْعَاجِزُ) অক্ষম হচ্ছে সেই ব্যক্তি যে জ্ঞানকে কাজে লাগাতে ব্যর্থ এবং কাজের পরিণতি সম্পর্কে অসচেতন বা অবহেলাকারী। মূলত বিচক্ষণ ব্যক্তি হলো শক্তিশালী ঈমানদার আর অক্ষম ব্যক্তি হলো দুর্বল ঈমানের অধিকারী।
(مَنْ أَتْبَعَ نَفْسَهُ هَوَاهَا) যে নিজেকে প্রবৃত্তির অনুসারী বানায় ফলে তাকে প্রবৃত্তির অনুসরণ করা থেকে বিরত রাখতে সক্ষম হয় না এবং হারাম কাজে জড়িত হওয়াকে বাধা দান করে না।
(وَتَمَنَّى عَلَى اللَّهِ) আর আল্লাহর নিকট এই আশা পোষণ করে যে, তিনি যেন তাকে ক্ষমা করে দেন, যদিও সে আল্লাহর আনুগত্য করা থেকে অবহেলা করে ও প্রবৃত্তির দাসত্ব করে, আর সে এ কথা বলে, (رَبِّي كَرِيمٌ رَحِيمٌ) আমার রব অতি দয়ালু মেহেরবান। অথচ আল্লাহ তা'আলা ঘোষণা করেছেন, (..مَا غَرَّکَ بِرَبِّکَ الۡکَرِیۡمِ) “...কিসে তোমাকে তোমার মহান প্রতিপালক সম্পর্কে ধোঁকায় ফেলে দিয়েছে?” (সূরা আল ইনফিত্বার ৮২: ৬); আর ঘোষণা করেন, (نَبِّیٴۡ عِبَادِیۡۤ اَنِّیۡۤ اَنَا الۡغَفُوۡرُ الرَّحِیۡمُ ﴿ۙ۴۹﴾ وَ اَنَّ عَذَابِیۡ هُوَ الۡعَذَابُ الۡاَلِیۡمُ ﴿۵۰﴾) “আমার বান্দাদেরকে সংবাদ দাও যে, আমি বড়ই ক্ষমাশীল, বড়ই দয়ালু। আর আমার শাস্তি- তা বড়ই ভয়াবহ শাস্তি”- (সূরাহ্ আল হিজর ১৫ : ৪৯-৫০)। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ, তুহফাতুল আহওয়াযী ৬/২৪৫৯)