হাদিসটি ইমেইলে পাঠাতে অনুগ্রহ করে নিচের ফর্মটি পুরন করুন
security code
৫২৮৭

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ইবাদতের জন্য হায়াত ও দৌলতের আকাঙ্ক্ষা করা

৫২৮৭-[৪] আবূ কাবশাহ্ আল আনমারী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে বলতে শুনেছেন, [রাসূল (স.) বলেছেন] এমন তিনটি বিষয় আছে যার (সত্যতার) উপর আমি শপথ করতে পারি এবং আমি তোমাদের সম্মুখে অপর একটি হাদীস বর্ণনা করব, তাকেও ভালোভাবে স্মরণ রাখবে। আর যে ব্যাপারে আমি শপথ করছি তা হলোঃ-
(ক) দান-খয়রাতের কারণে কোন বান্দার সম্পদে হ্রাস হয় না, (খ) যে নির্যাতিত বান্দা নির্যাতনের শিকার হয়ে ধৈর্যধারণ করে, আল্লাহ তা’আলা তার মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন, (গ) আর যে বান্দা ভিক্ষার দরজা উন্মুক্ত করে, আল্লাহ তা’আলা তার অভাব ও নিঃস্বতার দরজা খুলে দেন। অতঃপর তিনি (সা.) বললেন : আমি যে হাদীসটি তোমাদেরকে বলব, তাকে খুব ভালোভাবে সংরক্ষণ করো। তা হলো প্রকৃতপক্ষে পার্থিব জীবন হলো চার শ্রেণির লোকের জন্য।

যথা-
১. এমন বান্দা- আল্লাহ যাকে সম্পদ ও বিদ্যা উভয়টি দান করেছেন, তবে সে তা খরচ করতে আপন প্রভুকে ভয় করে (হারাম পথে ব্যয় করে না); আত্মীয়-স্বজনের সাথে ভালো ব্যবহার করে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য সম্পদের হক মোতাবেক ’আমল করে (খরচ করে)। এ ব্যক্তির মর্যাদা সর্বোত্তম।

২. এমন বান্দা- যাকে আল্লাহ বিদ্যা দান করেছেন, কিন্তু তাকে সম্পদ দান করেননি। তবে সে এ সত্য এবং সঠিক নিয়্যাতে বলে, যদি আমার ধন-সম্পদ থাকত তাহলে আমি অমুকের মতো পুণ্যের পথে খরচ করতাম। এ দু’ ব্যক্তির সাওয়াব একই সমান।

৩. এমন বান্দা- যাকে আল্লাহ ধন-সম্পদ দিয়েছেন, কিন্তু বিদ্যা দান করেননি। তার বিদ্যা না থাকার কারণে সে নিজের সম্পদের ব্যাপারে স্বেচ্ছাচারিতায় লিপ্ত হয়ে পড়ে, এতে সে আল্লাহকে ভয় করে না। আত্মীয়স্বজনদের সাথে আর্থিক সদাচরণ করে না এবং নিজ সম্পদ হক পথে খরচ করে না। এ ব্যক্তি হলো সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট পর্যায়ের।

৪. এমন বান্দা- যার কাছে সম্পদও নেই বিদ্যাও নেই। সে আকাঙ্ক্ষা করে বলে, যদি আমার কাছে সম্পদ থাকত, তাহলে আমি তা অমুক ব্যক্তির মতো খরচ করতাম। এ বান্দাও তার এ মন্দ নিয়্যাতের কারণে গুনাহের মধ্যে তৃতীয় ব্যক্তির সমান। [ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) হাদীসটি বর্ণনা। করেছেন এবং তিনি বলেছেন : এ হাদীসটি সহীহ]

اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَابُ اسْتِحْبَابِ الْمَالِ وَالْعُمُرِ لِلطَّاعَةِ)

وَعَن أبي كبشةَ الأنماريِّ أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «ثَلَاثٌ أُقْسِمُ عَلَيْهِنَّ وَأُحَدِّثُكُمْ حَدِيثًا فَاحْفَظُوهُ فَأَمَّا الَّذِي أُقْسِمُ عَلَيْهِنَّ فَإِنَّهُ مَا نَقَصَ مَالُ عَبْدٍ مِنْ صَدَقَةٍ وَلَا ظُلِمَ عَبْدٌ مَظْلِمَةً صَبَرَ عَلَيْهَا إِلَّا زَادَهُ اللَّهُ بِهَا عِزًّا وَلَا فَتَحَ عَبْدٌ بَابَ مَسْأَلَةٍ إِلَّا فَتَحَ اللَّهُ عَلَيْهِ بَابَ فَقْرٍ وَأَمَّا الَّذِي أُحَدِّثُكُمْ فَاحْفَظُوهُ» فَقَالَ: إِنَّمَا الدُّنْيَا لِأَرْبَعَةِ نفرٍ: عبدٌ رزقَه اللَّهُ مَالا وعلماً فهوَ يَتَّقِي فِيهِ رَبَّهُ وَيَصِلُ رَحِمَهُ وَيَعْمَلُ لِلَّهِ فِيهِ بِحَقِّهِ فَهَذَا بِأَفْضَلِ الْمَنَازِلِ. وَعَبْدٍ رَزَقَهُ اللَّهُ عِلْمًا وَلَمْ يَرْزُقْهُ مَالًا فَهُوَ صَادِقُ النيَّةِ وَيَقُول: لَوْ أَنَّ لِي مَالًا لَعَمِلْتُ بِعَمَلِ فُلَانٍ فأجرُهما سواءٌ. وعبدٌ رزَقه اللَّهُ مَالا وَلم يَرْزُقْهُ عِلْمًا فَهُوَ يَتَخَبَّطُ فِي مَالِهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ لَا يَتَّقِي فِيهِ رَبَّهُ وَلَا يَصِلُ فِيهِ رَحِمَهُ وَلَا يَعْمَلُ فِيهِ بِحَقٍّ فَهَذَا بأخبثِ المنازلِ وعبدٌ لم يرزُقْه اللَّهُ مَالا وَلَا عِلْمًا فَهُوَ يَقُولُ: لَوْ أَنَّ لِي مَالًا لَعَمِلْتُ فِيهِ بِعَمَلِ فُلَانٍ فَهُوَ نِيَّتُهُ وَوِزْرُهُمَا سَوَاءٌ . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ صَحِيح سندہ ضعیف ، رواہ الترمذی (2325) * یونس بن خباب ضعیف رافضی و للحدیث طریق آخر معلول (ضعیف) عند احمد (4 / 230 ح 1802) بمتن آخر ۔

ব্যাখ্যা : (ثَلَاثٌ أُقْسِمُ عَلَيْهِنَّ وَأُحَدِّثُكُمْ) অর্থাৎ আমি তোমাদেরকে তিনটি বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে সংবাদ দিচ্ছি এবং সেগুলোকে শক্তিশালীর জন্য কসম করছি এবং এ প্রসঙ্গে হাদীস বলছি তোমরা মুখস্থ করে রাখ।
(مَا نَقَصَ مَالُ عَبْدٍ مِنْ صَدَقَةٍ) সদাক্বাহ্ বা দান করাতে বান্দার সম্পদে কোন ঘাটতি হয় না বা বরকত কমে যায় না। বরং দুনিয়া ও আখিরাতে তার বিনিময় তাকে দেয়া হয়ে থাকে। আল্লাহ তা'আলা বলেন, (.. وَ مَاۤ اَنۡفَقۡتُمۡ مِّنۡ شَیۡءٍ فَهُوَ یُخۡلِفُهٗ ۚ  ..) তোমরা যা কিছু দান করে থাক তা তোমাদের পশ্চাতে রয়ে যায়।” (সূরাহ্ সাবা ৩৪ : ৩৯)
(وَلَا ظُلِمَ عَبْدٌ مَظْلِمَةً صَبَرَ عَلَيْهَا إِلَّا زَادَهُ اللَّهُ بِهَا عِزًّا) বান্দাকে কোন ধরনের যুলুম করা হলে সে তার উপর ধৈর্যধারণ করার দরুন আল্লাহ তা'আলা তার বিনিময়ে সম্মান বৃদ্ধি করে দেন। আবার কখনো অত্যাচারী ব্যক্তি ঐ মাযলুম ব্যক্তির লাঞ্ছনার স্বীকার হয়ে থাকে কর্মের যথাযথ প্রতিদান স্বরূপ।
(وَلَا فَتَحَ عَبْدٌ بَابَ مَسْأَلَةٍ إِلَّا فَتَحَ اللَّهُ عَلَيْهِ بَابَ فَقْرٍ) বান্দা যদি বিনা প্রয়োজনে সম্পদ বৃদ্ধির লোভে মানুষের নিকট হাত পাতে তাহলে আল্লাহ তা’আলা তার ওপর একের পর এক অভাবের দরজা খুলে দেন। অথবা তার নিকট থেকে নি'আমত তুলে নেন, ফলে সে শাস্তিতে পতিত হয়। তার জ্বলন্ত উদাহরণ ঐ কুকুরের ন্যায় যে মুখে এক খণ্ড হাড় নিয়ে পানির উপর দিয়ে অতিক্রম করার সময় স্বচ্ছ পানিতে হাড়ের প্রতিচ্ছবি দেখে লোভ করে তা নেয়ার জন্য হা করার সাথে সাথে তার মুখের হাড্ডিটিও পানিতে পড়ে যায়। অতএব লোভ নিন্দনীয় এবং লোভী সর্বদা বঞ্চিত হয়।

(إِنَّمَا الدُّنْيَا لِأَرْبَعَةِ نفرٍ) দুনিয়া চার শ্রেণির লোকের জন্য :
[এক] (عبدٌ رزقَه اللَّهُ مَالا وعلماً) আল্লাহ তা'আলা কোন বান্দাকে ধন-সম্পদ ও জ্ঞান উভয়টিই দিয়েছেন। আর সে উক্ত জ্ঞানের কারণে তার রবকে ভয় করে চলে এবং সম্পদের যথাযথ হক আদায় করে আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে ও আল্লাহর রাস্তায় তার হক অনুযায়ী ব্যয় করে। আর এই প্রকার ব্যক্তি দুনিয়া ও আখিরাতে সর্বোত্তম মর্যাদার অধিকারী।।
[দুই] (وَعَبْدٍ رَزَقَهُ اللَّهُ عِلْمًا وَلَمْ يَرْزُقْهُ مَالًا) ঐ ব্যক্তি আল্লাহ তা'আলা যাকে ‘ইলম দান করেছেন, কিন্তু তাকে সম্পদ দান করেননি। তবে সে যদি বিশুদ্ধ নিয়্যাতের অধিকারী হয়ে বলে, আমার যদি সম্পদ থাকত তাহলে আমিও প্রথম শ্রেণির লোকের মতো ‘আমল করতাম- এই দুই শ্রেণির লোকের প্রতিদান আল্লাহ তা'আলার নিকট এক সমান।

[তিন] (وعبدٌ رزَقه اللَّهُ مَالا وَلم يَرْزُقْهُ عِلْمًا) যাকে আল্লাহ তা'আলা সম্পদের মালিক বানিয়েছেন, কিন্তু তাকে শারঈ কোন জ্ঞান দান করেননি। ফলে সে যদি জ্ঞান না থাকার কারণে উক্ত সম্পদে গণ্ডগোল বাধিয়ে ফেলে। কখনো তা যথাযথ ব্যয় না করে জমা করে রেখে দেয় আবার কখনো লোক দেখানোর উদ্দেশে ব্যয় করে থাকে। সে ঐ সম্পদ খরচের ক্ষেত্রে রবের ভয় করে না, আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে না এবং তার হক অনুযায়ী আমলও করে না। আর এ প্রকার লোক সবচেয়ে নিকৃষ্ট।

[চার] (وعبدٌ لم يرزُقْه اللَّهُ مَالا وَلَا عِلْمًا) ঐ বান্দাকে আল্লাহ তা'আলা সম্পদ এবং জ্ঞান কোনটিই দান করেননি। সে এই আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করে যে, যদি তার নিকট সম্পদ থাকত তাহলে উপরোক্ত ব্যক্তির ন্যায় ‘আমল করত। সে তার নিয়্যাতের কারণে পূর্বের ব্যক্তির ন্যায় সমান গুনাহের অধিকারী। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ, ইবনু মাজাহ ৩/৪২২৮)