পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - আশা আকাঙ্ক্ষা ও উদ্বেগ প্রসঙ্গ
৫২৭৫-[৮] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদের নিকট দিয়ে এমন সময় অতিক্রম করলেন তখন আমি ও আমার মা কাদামাটি দ্বারা (ঘর) মেরামতের কিছু কাজ করছিলাম। তিনি (সা.) জিজ্ঞেস করলেন : হে ’আবদুল্লাহ! এটা কি করছ? বললাম: আমরা একটি অংশ মেরামত করছি। তিনি (সা.) বললেন : মৃত্যু তা অপেক্ষা অধিক দ্রুত আগমনকারী। [আহমাদ ও তিরমিযী; ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন : হাদীসটি গরীব]
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ ( بَاب الأمل والحرص)
عَن عبد الله بن عَمْرو قَالَ: مَرَّ بِنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَنَا وَأُمِّي نُطَيِّنُ شَيْئًا فَقَالَ: «مَا هَذَا يَا عَبْدَ اللَّهِ؟» قُلْتُ شَيْءٌ نُصْلِحُهُ. قَالَ: «الْأَمْرُ أَسْرَعُ مِنْ ذَلِكَ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ
صحیح ، رواہ احمد (2 / 161 ح 6502) و الترمذی (2335) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা : ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) তার বাড়ীর সংস্কার কাজ করছিলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) তা দেখে বললেন, বিষয়টি এর চেয়েও দ্রুত। অর্থাৎ তুমি বাড়ীর সংস্কার অথবা বর্ধিতকরণের কাজ করছ, ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার জন্য কিংবা শক্তিশালী নির্মাণ কাঠামো তৈরির জন্য অথচ এটা ধ্বংসের আগেই তোমার মৃত্যু হয়ে যাবে। মূলকথা বসবাস উপযোগী বাড়ীঘর পুনঃনির্মাণ বা সংস্কার এত জরুরী নয়। আমাদের দুনিয়ার জীবন তো পথিক মুসাফিরের ন্যায় অথবা কোন গাছের ছায়ায় আশ্রয় গ্রহণকারী সওয়ারীর ন্যায়। তুমি বাড়ী ঘর ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার জন্য সংস্কার করছ যাতে তোমার মৃত্যুর আগে তা ধ্বংস না হয়। কিন্তু হতে পারে তোমার বাড়ীঘর ধ্বংসের আগেই তোমার অস্তিত্বই বিলীন হয়ে যাবে। অতএব তোমার বাড়ী-ঘর সংস্কারের চেয়ে তোমার আমল সংস্কার করাই উত্তম। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; লু'আহ্ ৮ম খণ্ড, ৪৮৯ পৃ.)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - আশা আকাঙ্ক্ষা ও উদ্বেগ প্রসঙ্গ
৫২৭৬-[৯] ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) পেশাব করার পর মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করতেন। আমি বলতাম : হে আল্লাহর রসূল! পানি তো আপনার কাছেই। তিনি (সা.) বলতেন, আমি কিরূপে জানব যে, (মৃত্যু আসার পূর্বে) আমি সে পর্যন্ত পৌঁছতে পারব কিনা? (শারহুস্ সুন্নাহ্ ও ইবনু জাওযী-এর কিতাবুল ওয়াফা’)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ ( بَاب الأمل والحرص)
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يُهَرِيقُ الْمَاءَ فَيَتَيَمَّمُ بِالتُّرَابِ فَأَقُولُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ الْمَاءَ مِنْكَ قَرِيبٌ يَقُولُ: «مَا يُدْرِينِي لَعَلِّي لَا أَبْلُغُهُ» . رَوَاهُ فِي «شَرْحِ السُّنَّةِ» وَابْنُ الْجَوْزِيِّ فِي كتاب «الْوَفَاء»
اسنادہ ضعیف ، رواہ البغوی فی شرح السنۃ (14 / 232 ح 4031) [و احمد (1 / 288 و ابن المبارک فی الزھد : 292) و الطبرانی فی الکبیر (12 / 238 ح 12987 ، بلون آخر) * ابن لھیعۃ مدلس و عنعن ۔
ব্যাখ্যা : হাদীসের বাক্য : (كَنَ يُهْرِيقُ الْمَاءَ) তিনি পানি ঢালতেন, এটা কিনায়া বা পরোক্ষ কথা; এর অর্থ তিনি পেশাব করতেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) পানি হাতের নাগালে অথবা নিকটতম কোন স্থানে না পেলে সাথে সাথে আপাতত তায়াম্মুম করে নিতেন; যাতে পরবর্তী পানি পাওয়া বা উযূর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত পবিত্র অবস্থায় থাকতে পারেন। মূলত তিনি জীবনের প্রতি এতটুকু নিশ্চয়তা মনে করতেন না যে, আগামী সালাত পর্যন্ত বা পানির নিকট পৌছা পর্যন্ত আমি বেঁচে থাকব। (মিরকাতুল মাফাতীহ; লুম্'আহ্ ৮ম খণ্ড, ৪৯০ পৃ.)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - আশা আকাঙ্ক্ষা ও উদ্বেগ প্রসঙ্গ
৫২৭৭-[১০] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নাবী (সা.) বলেছেন: এ হলো আদম সন্তান আর এটা হলো তার জীবন-সীমা (মৃত্যু)। এটা বলে তিনি (সা.) তার পিছনে হাত রাখলেন। অতঃপর হাত বিস্তৃত করে বললেন: এ স্থানে মানুষের আকাঙ্ক্ষা। (তিরমিযী)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ ( بَاب الأمل والحرص)
عَنْ أَنَسٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «هَذَا ابْنُ آدَمَ وَهَذَا أَجَلُهُ» وَوَضَعَ يَدَهُ عِنْدَ قَفَاهُ ثُمَّ بَسَطَ فَقَالَ: «وَثَمَّ أمله» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
اسنادہ صحیح ، رواہ الترمذی (2334 وقال : حسن صحیح) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা : রাসূলুল্লাহ (সা.) মানুষের দেহ অবয়বের দিকে ইশারা করে মানুষের প্রকৃত সত্তাকে বুঝিয়েছেন। আর তার গ্রীবাদেশে হাত রেখে হায়াতের সীমা বুঝিয়েছেন মানুষ এর বাহিরে নয়। আর তিনি হাত প্রসারিত করে তার আকাঙ্ক্ষার পরিধি বুঝিয়েছেন। অর্থাৎ মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা হায়াতের পরিধি অতিক্রম করে অনেকখানি দূরে চলে গেছে। ঘাড়ের পিছনে হাত রেখে এ কথা বলা যে, এটা তার হায়াত এর অর্থ এই যে, মৃত্যু তার পিছনে অর্থাৎ ঘাড়ের সাথেই লটকানো রয়েছে। আর আকাঙ্ক্ষার দূরত্বের চেয়ে মৃত্যুর দূরত্ব খুবই কম বা নিকটে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; লু'আহ্ ৮ম খণ্ড, ৪৯১ পৃ.)।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - আশা আকাঙ্ক্ষা ও উদ্বেগ প্রসঙ্গ
৫২৭৮-[১১] আবু সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদিন নাবী (সা.) নিজের সামনে (মাটিতে) একটি কাঠি গাড়লেন এবং তারই পার্শ্বে আরেকটি গাড়লেন। অতঃপর (তৃতীয়) আরেকটি গাড়লেন তা হতে বহু দূরে। তারপর উপস্থিত লোকেদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কি জানো এটা কি? তারা বলল, আল্লাহ ও তাঁর রসূল সর্বাধিক জ্ঞাত। তিনি (সা.) বললেন : (মনে করো) এ প্রথম কাঠিটি হলো মানুষ। আর দ্বিতীয়টি হলো তার মৃত্যু। রাবী (আবু সাঈদ আল খুদরী রাঃ) বলেন, দূরবর্তী তৃতীয় কাঠিটির প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি (সা.) বলেছেন : “তা হলো তার লালসা ও আকাঙ্ক্ষা”। এদিকে সে মোহের দরিয়াতে ডুবে থাকে, অপরদিকে তা পূর্ণ না হতে মৃত্যু তাকে পেয়ে বসে। (শারহুস্ সুন্নাহ)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ ( بَاب الأمل والحرص)
وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ غَرَزَ عُودًا بَيْنَ يَدَيْهِ وَآخَرَ إِلَى جَنْبِهِ وَآخَرَ أَبْعَدَ مِنْهُ. فَقَالَ: «أَتُدْرُونَ مَا هَذَا؟» قَالُوا: اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ. قَالَ: «هَذَا الْإِنْسَانُ وَهَذَا الْأَجَلُ» أُرَاهُ قَالَ: «وَهَذَا الْأَمَلُ فَيَتَعَاطَى الْأَمَلَ فَلَحِقَهُ الْأَجَلُ دُونَ الْأَمَلِ» . رَوَاهُ فِي «شَرْحِ السّنة»
اسنادہ حسن ، رواہ البغوی فی شرح السنۃ (14 / 285 ح 4091) [و احمد (3 / 18 ح 11149)] ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা : বর্ণিত এ জাতীয় হাদীস দ্বারা রাসূলুল্লাহ (সা.) মানুষ তার হায়াত এবং তার আকাঙ্ক্ষার একটি বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছেন। চিত্রটির নমুনা নীচে তুলে ধরা হলো :
১ নং রেখা আদম সন্তান (মানুষ)। ২ নং রেখা তার মৃত্যু। ৩ নং রেখা আদাম সন্তানের আশা-আকাঙ্ক্ষা, যা ২ নং মৃত্যুরেখা ছেড়ে অনেক দূর চলে গেছে, অথচ তার আকাঙ্ক্ষা শেষ হওয়ার আগেই ২ নং মৃত্যু রেখা তাকে পেয়ে বসে।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - আশা আকাঙ্ক্ষা ও উদ্বেগ প্রসঙ্গ
৫২৭৯-[১২] আবু হুরায়রাহ্ (রাঃ) নাবী (সা.) হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি (সা.) বলেছেন : আমার উম্মাতের বয়সের সীমা ষাট হতে সত্তর বছর পর্যন্ত (তাদের মাঝে খুবকমই আছে যে এ সীমা অতিক্রম করবে)। [ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং তিনি বলেছেন : হাদীসটি গরীব]
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ ( بَاب الأمل والحرص)
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «عُمُرُ أُمَّتِي مِنْ سِتِّينَ سَنَةً إِلَى سَبْعِينَ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ
اسنادہ حسن ، رواہ الترمذی (2331) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা : উম্মতে মুহাম্মাদীর ষাট থেকে সত্তর বছরের হায়াতের বিষয়টি অধিকাংশের ভিত্তিতে বলা হয়েছে, অন্যথায় অনেকেই নব্বই এমনকি একশত বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকেন। এগুলো ব্যতিক্রম ঘটনা। এ হাদীস থেকে উদ্দেশ্য এটাও হতে পারে যে, উম্মাতের ষাট থেকে সত্তর বছরের হায়াত হলো ‘ইবাদাত বন্দেগীর ক্ষেত্রে সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। এটা মধ্যম এবং ভারসাম্যপূর্ণ সময় যাতে উম্মাতের অধিকাংশ মানুষ পৌছতে পারে। আমাদের নবী সায়্যিদুল মুরসালিন মুহাম্মাদ (সা.) এবং খুলাফায়ে রাশিদীনের প্রথম ও দ্বিতীয় খলীফাহ্ যথাক্রমে আবূ বাকর সিদ্দীক এবং ‘উমার ফারূক (রাঃ) সহ অনেক বড় বড় ইসলামের মহান মনীষী যেমন ইমাম বুখারী, ইমাম মুসলিম, ইমাম তিরমিযী প্রমুখ এই বয়সেই মৃত্যুবরণ করেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; আল লু'আহ্ ৮ম খণ্ড, ৪৯১ পৃ.)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - আশা আকাঙ্ক্ষা ও উদ্বেগ প্রসঙ্গ
৫২৮০-[১৩] উক্ত রাবী (আবু হুরায়রাহ্ রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : আমার উম্মতের বয়স ষাট হতে সত্তর বছরের মাঝামাঝি এবং এমন লোকের সংখ্যা কম হবে যারা তা পাড়ি দিবে। (তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ)
এ প্রসঙ্গে ’আবদুল্লাহ ইবনু শিখীর-এর বর্ণিত হাদীস “রোগীর সেবাযত্ন” অধ্যায়ে বর্ণিত হয়েছে।
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ ( بَاب الأمل والحرص)
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَعْمَارُ أُمَّتِي مَا بَيْنَ السِتِّينَ إِلَى السَبْعِينَ وَأَقَلُّهُمْ مَنْ يَجُوزُ ذَلِكَ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ وَذُكِرَ حَدِيثُ عَبْدِ اللَّهِ بنِ الشِّخيرِ فِي «بَاب عِيَادَة الْمَرِيض»
حسن ، رواہ الترمذی (3550 وقال : غریب حسن) و ابن ماجہ (4236) 0 حدیث عبداللہ بن الشخیر تقدم (1469) ۔
(حسن)
ব্যাখ্যা : অত্র হাদীসের ব্যাখ্যা পূর্বের হাদীসের অনুরূপ। ষাট থেকে সত্তর বছর বয়স হলো এ উম্মাতের ভারসম্পন্ন বা জীবনের উৎকর্ষের নির্দিষ্ট স্তর (STANDARD TIME)। খুব অল্প সংখ্যক মানুষ এটা অতিক্রম করে একশত বা তার ঊর্ধ্বে পৌঁছতে পারে। সাহাবীদের মধ্যে আনাস ইবনু মালিক, আসমা বিনতু আবু বাকর প্রমুখ একশত বছর বা তার চেয়ে সামান্য বেশি বছর বেঁচে ছিলেন।
এছাড়াও ব্যতিক্রম দুই একজন সাহাবী শতবর্ষের ঊর্ধ্বে বেঁচে ছিলেন, যেমন কবি হাসসান ইবনু সাবিত, সালমান ফারসী প্রমুখ সাহাবী (রাঃ)। সালমান ফারসী সম্পর্কে কথিত আছে, তিনি আড়াইশত বছর জীবিত ছিলেন। এমনকি সাড়ে তিনশত বছরের কথাও উল্লেখ আছে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; লুম'আহ্ ৮ম খণ্ড, ৪৯১ পৃ.)