পরিচ্ছেদঃ ২১. প্রথম অনুচ্ছেদ - অত্যাচার

৫১২৩-[১] ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জুলুম বা অত্যাচার কিয়ামতের দিন অন্ধকারের কারণ হবে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ الظُّلْمِ

عَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «الظُّلْمُ ظُلْمَاتٌ يَوْمَ الْقِيَامَةِ» . مُتَّفق عَلَيْهِ

عن ابن عمر ان النبي صلى الله عليه وسلم قال: «الظلم ظلمات يوم القيامة» . متفق عليه

ব্যাখ্যাঃ (الظُّلْمُ ظُلْمَاتٌ يَوْمَ الْقِيَامَةِ) ইবনুল জাওযী (রহিমাহুল্লাহ) উল্লেখিত হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেনঃ জুলুম বা অত্যাচার প্রধানতঃ দু’টো পাপের সাথে সম্পৃক্ত থাকে। একটি হলো অন্যায়ভাবে কারো সম্পদ আত্মসাৎ করা। আর অপরটি হলো আল্লাহ সুবহানাহূ ওয়াতা‘লার সাথে বিরুদ্ধাচরণ করা শারী‘আত বহির্ভূত কোন বিষয় নিয়ে। জুলুমের এ পাপটি অন্যান্য পাপের চাইতে মারাত্মক। কারণ অধিকাংশ সময় জুলুম নামক অন্যায় দুর্বল ব্যক্তিদের সাথেই সংগঠিত হয়ে থাকে। যারা এতে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে না অক্ষম হওয়ার কারণে তারা পরাজিত হয়। জুলুম অন্তরের অন্ধকার তথা বক্রতা থেকে তৈরি হয়। তবে যদি সেই অন্তর হিদায়াতের আলো দ্বারা আলোকিত হয় তখন তার মর্যাদা অনেক গুণে বেড়ে যায়। সুতরাং আখিরাতে যেদিন মুত্তাক্বীরা তাকওয়ার প্রতিদান হিসেবে আল্লাহর নূর লাভে ধন্য হবে সেদিন যালিমকে তার জুলুমের অন্ধকার আচ্ছন্ন করবে কিন্তু কোনই সাহায্যকারী থাকবে না। (ফাতহুল বারী ৫ম খন্ড, হাঃ ২৪৪৭; তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ২০৩০)

কাযী ‘ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে, কিয়ামতের দিন যালিমের জন্য বাস্তবিকই অন্ধকার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ অন্ধকারগুলো বিভিন্ন বিপদাপদ, দুঃখ-দুর্দশার আকৃতিরূপে প্রকাশ পাবে। মানুষ যখন বিপদে পতিত হয় তখন সে এক রকম অন্ধকারেই পতিত হয়, এদিক থেকে ظُلْمَاتٌ বলা হয়েছে। যেমন আল্লাহ বলেন-

قُلْ مَنْ يُنْجِيكُمْ مِنْ ظُلُمَاتِ الْبَرِّ والبحر ‘‘হে নবী! বলুন, কে তোমাদেরকে জলের এবং স্থলের বিপদাপদ থেকে রক্ষা করে।’’ আবার ظُلْمَاتٌ শব্দ দ্বারা বিভিন্ন প্রকার শাস্তিও উদ্দেশ্য হতে পারে। (শারহুন নাবাবী ১৬শ খন্ড, হাঃ ২৫৭৯/৫৭)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ২১. প্রথম অনুচ্ছেদ - অত্যাচার

৫১২৪-[২] আবূ মূসা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা অত্যাচারীকে অবকাশ দিয়ে থাকেন। অতঃপর তাকে এমনভাবে পাকড়াও করেন যে, সে আর ছুটে যেতে পারে না। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ আয়াত পাঠ করলেন- وَكَذٰلِكَ أَخْذُ رَبِّكَ إِذَا أَخَذَ الْقُرَىْ وَهِىَ ظَالِمَةٌ। অর্থাৎ- এরূপ তোমার প্রভুর পাকড়াও যে, যখন তিনি অত্যাচারী গ্রামবাসীদের পাকড়াও করেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ الظُّلْمِ

وَعَنْ أَبِي مُوسَى قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «إِن اللَّهَ لَيُمْلِي لِلظَّالِمِ حَتَّى إِذَا أَخَذَهُ لَمْ يفلته» ثمَّ يقْرَأ (وَكَذَلِكَ أَخْذُ رَبِّكَ إِذَا أَخَذَ الْقُرَى وَهِيَ ظالمة)
الْآيَة. مُتَّفق عَلَيْهِ

وعن ابي موسى قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «ان الله ليملي للظالم حتى اذا اخذه لم يفلته» ثم يقرا (وكذلك اخذ ربك اذا اخذ القرى وهي ظالمة) الاية. متفق عليه

ব্যাখ্যাঃ (إِن اللهَ لَيُمْلِي لِلظَّالِمِ) অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা অত্যাচারীকে ভালো হওয়ার জন্য বারবার সুযোগ দেন। প্রথমবারেই তাকে পাকড়াও করেন না।

(حَتّٰى إِذَا أَخَذَهٗ لَمْ يفلته) কিন্তু যখন তাকে পাকড়াও করার ইচ্ছা করেন তখন আর তাকে সুযোগ দেন না। তাকে ধ্বংস করে দেন। (ফাতহুল বারী ৮ম খন্ড, হাঃ ৪৬৮৬; মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ২১. প্রথম অনুচ্ছেদ - অত্যাচার

৫১২৫-[৩] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ’’হিজর’’ নামক স্থানের উপর দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন লোকেদেরকে বললেনঃ সেসব বাড়ি-ঘরে যাবে না, যারা নিজেদের আত্মার প্রতি অত্যাচার করেছে। তোমরা যখন অতিক্রম করবে ক্রন্দনরত অবস্থায় অতিক্রম করবে, যাতে তোমাদের ওপরও ঐ বিপদ না পৌঁছে, যা তাদের উপর পৌঁছেছে। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজ মাথা চাদর দ্বারা ঢেকে ফেললেন এবং চলার গতি দ্রুত করলেন, যতক্ষণ না উপত্যকাটি অতিক্রম করে গেলেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ الظُّلْمِ

وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمَّا مَرَّ بِالْحِجْرِ قَالَ: «لَا تَدْخُلُوا مَسَاكِنَ الَّذِينَ ظَلَمُوا أَنْفُسَهُمْ إِلَّا أَنْ تَكُونُوا بَاكِينَ أَنْ يُصِيبَكُمْ مَا أَصَابَهُمْ» ثُمَّ قَنَّعَ رَأْسَهُ وَأَسْرَعَ السَّيْرَ حَتَّى اجتاز الْوَادي. مُتَّفق عَلَيْهِ

وعن ابن عمر ان النبي صلى الله عليه وسلم لما مر بالحجر قال: «لا تدخلوا مساكن الذين ظلموا انفسهم الا ان تكونوا باكين ان يصيبكم ما اصابهم» ثم قنع راسه واسرع السير حتى اجتاز الوادي. متفق عليه

ব্যাখ্যাঃ (لَمَّا مَرَّ بِالْحِجْرِ) উক্ত হাদীসে الْحِجْرِ শব্দটি একটি স্থানের নাম। এখানে ‘আদ এবং সামূদ সম্প্রদায়ের বসতি ছিল। এ প্রসঙ্গে তূরিবিশতী (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেনঃ الْحِجْرِ হলো সামূদ সম্প্রদায়ের আবাসিক এলাকা। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; ফাতহুল বারী ৫ম খন্ড, হাঃ ৪৪১৯)

(الَّذِينَ ظَلَمُوا أَنْفُسَهُمْ) অর্থাৎ-‘‘যারা নিজেদের ওপর জুলুম করেছিল’’ এরা শির্ক ও কুফরীর মাধ্যমে নিজেদের ওপর জুলুম করেছিল। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)

(قَنَّعَ رَأْسَهٗ وَأَسْرَعَ السَّيْرَ) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত পথ দিয়ে তাবুক যাওয়ার পথে এ স্থানে মাথা নিচু করে ডানে বামে কোন দিকে না তাকিয়ে খুব দ্রুত সামনে আগালেন। তিনি এমনটি করেছিলেন তাঁর উম্মাতকে শিখানোর জন্য যেন তারা পরবর্তীতে এখান দিয়ে যাওয়ার সময় খুব দ্রুত চলে যায়। যেহেতু আল্লাহ তা‘আলা এ সকল জায়গা থেকে সতর্ক সাবধান থাকার আদেশ প্রদান করেছেন, তাই রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুব দ্রুত এখান থেকে চলে যান যেন কোন বিপদ গ্রাস করতে না পারে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)

(لَا تَدْخُلُوا مَسَاكِنَ) এ প্রসঙ্গে ইমাম ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এখানে উদ্দেশ্য হলো কোন অবস্থাতেই যেন তাদের বসতিতে কেউ প্রবেশ না করে। শুধু কান্নার অবস্থায় প্রবেশ করতে পারবে এমনটি নয়। বরং সর্বাবস্থায় সেখানে প্রবেশ করা থেকে সাবধান থাকতে হবে।

ইমাম খত্ত্বাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ ঐ বসতিতে প্রবেশ করতে নিষেধের কারণ হলো যদি কেউ আল্লাহর ‘আযাবকে স্মরণ করে কান্না বা ভয়ের অবস্থায় সেখানে প্রবেশ না করে তবে ভূমিকম্প বা আসমানী বালা-মুসীবাত চলে আসতে পারে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ২১. প্রথম অনুচ্ছেদ - অত্যাচার

৫১২৬-[৪] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তির কোন মুসলিম ভাইয়ের প্রতি অত্যাচারঘটিত; যেমন- মানহানি বা অন্য কোন বিষয়ের কোন হক থাকে, তবে সে যেন সেদিনের পূর্বেই তার কাছ থেকে ক্ষমা করিয়ে নেয়, যেদিন তার কাছে কোন দীনার বা দিরহাম থাকবে না। যদি তার নেক ’আমল থাকে, তাহলে অত্যাচারিতের হক অনুসারে তার কাছ থেকে নেক ’আমল নিয়ে নেয়া হবে। আর যদি তার নেক না থাকে, তবে অত্যাচারিত ব্যক্তির পাপকে তার ওপর চাপানো হবে। (বুখারী)[1]

بَابُ الظُّلْمِ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ كَانَتْ لَهُ مَظْلِمَةٌ لِأَخِيهِ مِنْ عِرْضِهِ أَوْ شَيْءٍ مِنْهُ الْيَوْمَ قَبْلَ أَنْ لَا يَكُونَ دِينَارٌ وَلَا دِرْهَمٌ إِنْ كَانَ لَهُ عَمَلٌ صَالِحٌ أُخِذَ مِنْهُ بِقَدْرِ مَظْلِمَتِهِ وَإِنْ لَمْ يَكُنْ لَهُ حَسَنَاتٌ أُخِذَ مِنْ سَيِّئَاتِ صَاحِبِهِ فَحُمِلَ عَلَيْهِ» . رَوَاهُ البُخَارِيّ

وعن ابي هريرة قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «من كانت له مظلمة لاخيه من عرضه او شيء منه اليوم قبل ان لا يكون دينار ولا درهم ان كان له عمل صالح اخذ منه بقدر مظلمته وان لم يكن له حسنات اخذ من سيىات صاحبه فحمل عليه» . رواه البخاري

ব্যাখ্যাঃ (إِنْ كَانَ لَهُ عَمَلٌ صَالِحٌ أُخِذَ مِنْهُ) হাদীসের এ অংশে ইবনুল মালিক (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ কিয়ামতের দিন যালিমের সৎ ‘আমল থেকে পরিমাণ মতো সাওয়াব কেটে নেয়ার ধরণটা হতে পারে এ রকম যে, সে ‘আমলগুলোকে কোন কিছুর আকৃতি দেয়া, যেমন- স্বর্ণ-রূপা বা মণি-মুক্তা ইত্যাদি। অতঃপর সেটা মাযলূমকে দেয়া অথবা এমনও হতে পারে যে, যালিমের সুখ মাযলূমকে দিয়ে বা মাযলূমের শাস্তি যালিমকে দিয়ে ফায়সালা করা। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ২১. প্রথম অনুচ্ছেদ - অত্যাচার

৫১২৭-[৫] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রা (রাঃ)] হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা কি জানো, (প্রকৃত) গরীব কে? সাহাবায়ে কিরাম বললেনঃ আমরা তো মনে করি, আমাদের মধ্যে যার টাকা-পয়সা, ধনদৌলত নেই, সে-ই গরীব। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ কিয়ামতের দিন আমার উম্মাতের মধ্যে ঐ ব্যক্তি সবচেয়ে বেশি গরীব হবে, যে ব্যক্তি দুনিয়া থেকে সালাত, সিয়াম ও যাকাত আদায় করে আসবে; কিন্তু সাথে সাথে সেসব লোকেদেরকেও নিয়ে আসবে যে, সে কাউকে গালি দিয়েছে, কারো অপবাদ রটিয়েছে, কারো সম্পদ খেয়েছে, কাউকে হত্যা করেছে এবং কাউকে প্রহার করেছে; এমন ব্যক্তিদেরকে তার নেকীগুলো দিয়ে দেয়া হবে। অতঃপর যখন তার পুণ্য শেষ হয়ে যাবে অথচ পাওনাদারদের পাওনা তখনো বাকি, তখন পাওনাদারদের গুনাহ তথা পাপ তার ওপর ঢেলে দেয়া হবে, আর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (মুসলিম)[1]

بَابُ الظُّلْمِ

وَعَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «أَتَدْرُونَ مَا الْمُفْلِسُ؟» . قَالُوا: الْمُفْلِسُ فِينَا مَنْ لَا دِرْهَمَ لَهُ وَلَا مَتَاعَ. فَقَالَ: «إِنَّ الْمُفْلِسَ مِنْ أُمَّتِي مَنْ يَأْتِي يَوْم الْقِيَامَة بِصَلَاة وَصِيَام وَزَكَاة وَيَأْتِي وَقَدْ شَتَمَ هَذَا وَقَذَفَ هَذَا. وَأَكَلَ مَالَ هَذَا. وَسَفَكَ دَمَ هَذَا وَضَرَبَ هَذَا فَيُعْطَى هَذَا مِنْ حَسَنَاتِهِ وَهَذَا مِنْ حَسَنَاتِهِ فَإِنْ فَنِيَتْ حَسَنَاتُهُ قَبْلَ أَنْ يَقْضِيَ مَا عَلَيْهِ أُخِذَ مِنْ خَطَايَاهُمْ فَطُرِحَتْ عَلَيْهِ ثُمَّ طُرح فِي النَّار» . رَوَاهُ مُسلم

وعنه ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: «اتدرون ما المفلس؟» . قالوا: المفلس فينا من لا درهم له ولا متاع. فقال: «ان المفلس من امتي من ياتي يوم القيامة بصلاة وصيام وزكاة وياتي وقد شتم هذا وقذف هذا. واكل مال هذا. وسفك دم هذا وضرب هذا فيعطى هذا من حسناته وهذا من حسناته فان فنيت حسناته قبل ان يقضي ما عليه اخذ من خطاياهم فطرحت عليه ثم طرح في النار» . رواه مسلم

ব্যাখ্যাঃ (إِنَّ الْمُفْلِسَ مِنْ أُمَّتِي) উল্লেখিত হাদীসে যে নিঃস্ব বা দেউলিয়া ব্যক্তির কথা বলা হয়েছে সে হলো প্রকৃত নিঃস্ব বা দেউলিয়া। পক্ষান্তরে যার সম্পদ নেই বা থাকলেও খুব কম লোকেরা তাকে নিঃস্ব বলে কিন্তু প্রকৃত পক্ষ সে নিঃস্ব নয়। কারণ তার এ অবস্থা ক্ষণস্থায়ী। সে কোন সময় ধনবানও হতে পারে যদি তা নাও হতে পারে তবে মৃত্যুর মাধ্যমে তার এ অবস্থা দূর হয়ে যাবে। কিন্তু স্থায়িত্বের দিক থেকে হাদীসে উল্লেখিত ব্যক্তিই হলো প্রকৃত নিঃস্ব। এ প্রসঙ্গে ইমাম মাযিয়ী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ কোন কোন বিদ্‘আতী মনে করে যে, উক্ত হাদীসটি কুরআনের এ আয়াতের সাথে সাংঘর্ষিক। আল্লাহ বলেন,

وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرٰى

অর্থাৎ- ‘‘একজনের পাপ অন্যজন বহন করবে না।’’ (সূরাহ্ আল ফা-ত্বির ৩৫ : ১৮)

কিন্তু এ ধরনের আপত্তি তার অজ্ঞতাপূর্ণ এবং তা প্রত্যাখ্যাত। কারণ হাদীসে উল্লেখিত ব্যবস্থাই হলো যালিমের একমাত্র শাস্তি যা তার জন্য ন্যায্য পাওনা।

(শারহুন নাবাবী ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ২৫৮১/৫৯; তুহফাতুল আহওয়াযী ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ২৪১৮)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ২১. প্রথম অনুচ্ছেদ - অত্যাচার

৫১২৮-[৬] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রা (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন হকদারদের হক আদায় করা হবে, এমনকি যে বকরীর শিং নেই, তার জন্য শিংওয়ালা বকরী থেকে বিনিময় আদায় করে দেয়া হবে। (মুসলিম)[1]

এ প্রসঙ্গে জাবির -এর হাদীস اِتَّقَوُا الظُّلْمَ ’’বাবুল ইনফাক’’-এর (দানের অধ্যায়ে) বর্ণনা করা হয়েছে।

بَابُ الظُّلْمِ

وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَتُؤَدَّنَّ الْحُقُوقُ إِلَى أَهْلِهَا يَوْمَ الْقِيَامَةِ حَتَّى يُقَادَ لِلشَّاةِ الْجَلْحَاءِ مِنَ الشَّاةِ الْقَرْنَاءِ» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ
وَذَكَرَ حَدِيثَ جَابِرٍ: «اتَّقَوُا الظُّلم» . فِي «بَاب الإِنفاق»

وعنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «لتودن الحقوق الى اهلها يوم القيامة حتى يقاد للشاة الجلحاء من الشاة القرناء» . رواه مسلم وذكر حديث جابر: «اتقوا الظلم» . في «باب الانفاق»

ব্যাখ্যাঃ (لَتُؤَدَّنَّ الْحُقُوقُ إِلٰى أَهْلِهَا) এ হাদীস থেকে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, কিয়ামতের দিন চতুষ্পদ জন্তুকেও হাশরের ময়দানে উপস্থিত করা হবে। এ মর্মে কুরআন ও সহীহ হাদীসের আরো দলীল রয়েছে। যেমন- وَإِذَا الْوُحُوشُ حشرت তবে তাদেরকে মানুষ এবং জীন জাতির মতো হিসাবের জন্য বা জবাবদিহিতার জন্য উপস্থিত করা হবে না, বরং বদলা নেয়ার জন্য উপস্থিত করা হবে। তাদের কেউ কাউকে দুনিয়ার জীবনে শিং দ্বারা একটি আঘাত করে থাকলেও সেই আঘাত ফিরিয়ে দেয়ার জন্যই তাদের উঠানো হবে। প্রত্যেকটি প্রাণীর হক সঠিকভাবে আদায় হয়ে যাবে। (শারহুন নাবাবী ১৬শ খন্ড, হাঃ ২৫৮২/৬০; তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ২৪২০)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৬ পর্যন্ত, সর্বমোট ৬ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে