৫০২৮

পরিচ্ছেদঃ ১৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - সাক্ষাৎ ত্যাগ, সম্পর্কচ্ছেদ ও দোষান্বেষণে নিষেধাজ্ঞা

৫০২৮-[২] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা কোন বস্তু বা ব্যক্তি সম্পর্কে কুচিন্তা থেকে বেঁচে থাকো। কেননা কুচিন্তা সবচেয়ে মিথ্যা। কারো খারাপ বা দোষের খবর জানার চেষ্টা করো না, গোয়েন্দাগিরি করো না, আর একজনের দরের উপর দিয়ে মাল দর করো না। পরস্পরের মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষ ও শত্রুতা রেখ না, আর পরোক্ষ নিন্দাবাদে একে অপরের পিছনে লেগো না; বরং তোমরা সকলেই আল্লাহর বান্দা, ভাই ভাই হয়ে থাকবে। অপর এক রিওয়ায়াতে আছে, পরস্পরে লোভ-লালসা করো না। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ مَا يُنْهٰى عَنْهُ مِنَ التَّهَاجِرُ وَالتَّقَاطُعِ وَاتِّبَاعِ الْعَوْرَاتِ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِيَّاكُمْ وَالظَّنَّ فَإِنَّ الظَّنَّ أَكْذَبُ الْحَدِيثِ وَلَا تَحَسَّسُوا وَلَا تَجَسَّسُوا وَلَا تَنَاجَشُوا وَلَا تَحَاسَدُوا وَلَا تَبَاغَضُوا وَلَا تَدَابَرُوا وَكُونُوا عِبَادَ اللَّهِ إِخْوَانًا» . وَفِي رِوَايَة: «وَلَا تنافسوا» . مُتَّفق عَلَيْهِ

وعن ابي هريرة قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «اياكم والظن فان الظن اكذب الحديث ولا تحسسوا ولا تجسسوا ولا تناجشوا ولا تحاسدوا ولا تباغضوا ولا تدابروا وكونوا عباد الله اخوانا» . وفي رواية: «ولا تنافسوا» . متفق عليه

ব্যাখ্যাঃ (إِيَّاكُمْ وَالظَّنَّ فَإِنَّ الظَّنَّ) অর্থাৎ তোমরা ধারণার অনুসরণ করা থেকে সাবধান থাক অথবা তোমরা কুচিন্তা থেকে সাবধান থাক। আর কুচিন্তা হলো একটি অপবাদ যা অন্তরে পতিত হয়, যার কোন দলীল থাকে না। এর দ্বারা উদ্দেশ্য এটা নয় যে, ধারণা করে সেই ‘আমল ছেড়ে দিবে যার দ্বারা বেশির ভাগেই হুকুম-আহকাম সাব্যস্ত হয়। বরং উদ্দেশ্য হলো সেই অবাস্তব কুচিন্তাকে ত্যাগ করবে, যা কুচিন্তাকারীর ক্ষতি করে।

(أَكْذَبُ الْحَدِيثِ) অর্থাৎ- এ মিথ্যা কথা হলো অন্তরের মিথ্যা কথা, কারণ এটা মানুষের অন্তরে শয়তানের জাগ্রত করার মাধ্যমে হয়ে থাকে। এখানে কুধারণাকে কথার সাথে সাদৃশ্য করা হয়েছে মাজায বা রূপকথা অর্থে, কারণ কুধারণা থেকেই তা উৎপত্তি হয়।

(وَلَا تَحَسَّسُوا) ইমাম মানবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ অর্থাৎ কারো দোষ-ত্রুটি অনুসন্ধান করো না। যেমন : কান পেতে কারো গোপন কথা শোনা, গোপনে কোন জিনিস দেখা। (‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৪৯০৯)

(وَلَا تَنَاجَشُوا) বলা হয়ে থাকে : কোন পণ্য ক্রয় করার আগ্রহ ছাড়াই তার দাম বৃদ্ধি করার উদ্দেশ্য থাকে, যাতে ক্রেতা ধোকায় পড়ে যায়। দালালী করার কারণে ক্রেতা চড়া দামে পণ্য কেনায় আগ্রহী হয়। এ অর্থটিই জামহূর ফুকাহাদের নিকট প্রসিদ্ধ। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)

(وَلَا تَحَاسَدُوا) অর্থাৎ তোমাদের কেউ যেন কারো নি‘আমাত বা অনুগ্রহ দূর হয়ে যাওয়ার আকাঙক্ষা না করে। যেন মনে মনেও তা না করে আবার প্রকাশ্যভাবেও না করে। মহান আল্লাহ বলেন,

وَلَا تَتَمَنَّوْا مَا فَضَّلَ اللهُ بِه بَعْضَكُمْ عَلٰى بَعْضٍ لِلرِّجَالِ نَصِيبٌ مِمَّا اكْتَسَبُوا وَلِلنِّسَاءِ نَصِيبٌ مِمَّا اكْتَسَبْنَ وَاسْأَلُوا اللهَ مِنْ فَضْلِه

‘‘তোমরা তা কামনা করো না যদ্দ্বারা আল্লাহ তোমাদের কাউকে কারো ওপর মর্যাদা প্রদান করেছেন। পুরুষেরা তাদের কৃতকার্যের অংশ পাবে, নারীরাও তাদের কৃতকর্মের অংশ পাবে...’’- (সূরাহ্ আন্ নিসা ৪ : ৩২)। অর্থাৎ আল্লাহ যে নি‘আমাত দিয়েছেন তা বা তার অনুরূপ নি‘আমাত যেন কামনা করে। আর এ প্রকার হিংসাকে বলা হয় গিবত্বাহ্। অর্থাৎ অন্যের নি‘আমাত দূর না হওয়ার আকাঙক্ষা করে তার অনুরূপ নি‘আমাত কামনা করা যেমন অন্য একটি হাদীস বলা হয়েছে - لَا حَسَدَ إِلَّا فِي اثْنَتَيْنِ ‘‘দু’টি জিনিস ব্যতীত কোন বিষয়ে হিংসা নেই।’’

(وَلَا تَبَاغَضُوا) অর্থাৎ প্রবৃত্তির ও বিভিন্ন মাযহাবের কারণে তোমরা দলে দলে ভাগ হবে না। কারণ দীনের মধ্যে বিদ্‘আত ও সরল সঠিক পথ থেকে ভ্রষ্টতা শত্রুতাকে ওয়াজিব বা আবশ্যক করে। অনুরূপ বলা হয়েছে, বাহ্যিক দিকল হলো পরস্পর শত্রুতা করতে নিষেধ করা হয়েছে। কেবল দীনের মধ্যে ভালোবাসার সম্পর্ককে ঠিক রাখার জন্য। যদি দীনের সম্পর্ক ঠিক না থাকে তবে তার সাথে শত্রুতা রাখা জায়িয। কারণ আল্লাহর উদ্দেশ্য হলো জাতিকে এক করে রাখা। যেমন আল্লাহ বলেন, وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللهِ جَمِيعًا وَّلَا تَفَرَّقُوا ‘‘আল্লাহর রজ্জুকে সমবেতভাবে দৃঢ়ভাবে ধারণ কর, পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না’’- (সূরাহ্ আ-লি ‘ইমরা-ন ৩ : ১০৩)। এতে কোন সন্দেহ নেই যে, পরস্পরকে ভালোবাসা একতার কারণ, আর পরস্পরকে শত্রু মনে করা বিচ্ছিন্নতাকে আবশ্যক করে। এর অর্থ হলো তোমরা একে অন্যের সাথে শত্রুতা রাখবে না।

(وَلَا تَدَابَرُوا) অর্থাৎ একে অপরের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করো না। কেউ কেউ বলেন, এর অর্থ- তোমরা একে অপরের গীবত বা পরোক্ষ নিন্দাবাদ করো না।

(وَكُونُوا عِبَادَ اللهِ إِخْوَانًا) এর অর্থ হলো : তোমরা আল্লাহর বান্দা হওয়ার দিক দিয়ে সবাই সমান। আর তোমাদের ধর্মও এক। পরস্পর পরস্পরের প্রতি হিংসা, শত্রুতা ও সম্পর্কছেদ করতে তোমাদেরকে নিষেধ করা হয়েছে। অতএব তোমাদের কর্তব্য হলো ভ্রাতৃত্বসুলভ আচরণ করা। ভালোবাসার সম্পর্ক স্থাপন করা, সৎ কাজে পরস্পরকে সহযোগিতা করা এবং প্রত্যেক ভালো কাজে কল্যাণ কামনা করা। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)