পরিচ্ছেদঃ ১৬. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - আল্লাহ তা‘আলার প্রতি ভালোবাসা এবং আল্লাহ তা‘আলার জন্য বান্দার প্রতি ভালোবাসা
৫০২১-[১৯] আবূ যার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে এসে বললেনঃ তোমরা কি জানো, আল্লাহ তা’আলার কাছে কোন্ কাজ সবচেয়ে বেশি প্রিয়? কেউ কেউ বলল: সালাত ও যাকাত, আর কেউ কেউ বলল: জিহাদ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলার কাছে সবচেয়ে বেশি প্রিয় কাজ হলো, একমাত্র আল্লাহরই উদ্দেশে কাউকে ভালোবাসা এবং একমাত্র আল্লাহ তা’আলার উদ্দেশে কাউকে ঘৃণা করা। [আহমাদ ও আবূ দাঊদ;[1] আর ইমাম আবূ দাঊদ (রহিমাহুল্লাহ) শুধু শেষ বাক্যটি বর্ণনা করেন।]
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ, এর সনদে এক ব্যক্তি আছে যার নাম জানা যায় না, ‘‘ইয়াযীদ ইবনু আবূ যিয়াদ’’ ইনি হাশিমী য‘ঈফ। দেখুন- য‘ঈফাহ্ ১৮৩৩।
عَنْ أَبِي
ذَرٍّ قَالَ: خَرَجَ عَلَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «أَتَدْرُونَ أَيُّ الْأَعْمَالِ أَحَبُّ إِلَى اللَّهِ تَعَالَى؟» قَالَ قَائِلٌ: الصَّلَاةُ وَالزَّكَاةُ. وَقَالَ قَائِلٌ: الْجِهَادُ. قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ أَحَبَّ الْأَعْمَالِ إِلَى اللَّهِ تَعَالَى الْحُبُّ فِي اللَّهِ وَالْبُغْضُ فِي اللَّهِ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَرَوَى أَبُو دَاوُد الْفَصْل الْأَخير
ব্যাখ্যাঃ أَتَدْرُونَ أَيُّ الْأَعْمَالِ أَحَبُّ إِلَى اللهِ تَعَالٰى؟ অর্থাৎ কোন প্রকারের ‘ইবাদাত আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় তা কি তোমরা জান। এও বলা হয়েছে যে, প্রিয় বস্তু বা ভালোবাসার বস্তু আফযাল বা সর্বোত্তম হওয়াকে আবশ্যক করে না। যেমনটি বলা যায়, মানুষের নিকট তাদের সন্তানাদি অধিক প্রিয় তবে তা সর্বোত্তম জিনিস নয়। আবার অনেকের নিকট ‘ইলম মুত্বালা‘আহ্ বা অধ্যয়ন অধিক প্রিয় কিন্তু তা আফজাল বা সর্বোত্তম জিনিস নয়।
(الْحُبُّ فِي اللهِ وَالْبُغْضُ فِي اللهِ) অত্র হাদীসটিকে শক্তিশালী করে নবী ও রসূলদের ঈর্ষান্বিত হওয়ার হাদীসটি। এ হাদীসটি ফরয কার্যাবলী সম্পাদন করার পর অতিরিক্ত ‘আমলের মধ্যে সর্বোত্তম কাজ। ইসলামী শারী‘আতে যে সকল কাজ সম্পাদন করতে বলা হয়েছে তা পালন করা ও যে সকল কাজ থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে তা থেকে বিরত থাকার পরে নফল ‘আমলের মধ্যে সর্বোত্তম ‘আমল হলো একমাত্র আল্লাহরই উদ্দেশে কাউকে ভালোবাসা এবং একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার উদ্দেশে কাউকে ঘৃণা করা। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
হাদীসের শিক্ষা ও বাস্তব প্রয়োগ : অত্র হাদীসটি হতে আমরা জানতে পারলাম যে, কাউকে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ভালোবাসা ও কাউকে মহান আল্লাহকে খুশী করার জন্য ঘৃণা করা উত্তম কাজ। এ হাদীসের শিক্ষা যদি সমাজে প্রয়োগ করা হয়, বিশেষ করে নেতৃত্ব স্থানীয় ব্যক্তিগণ যদি এ হাদীসের প্রয়োগ সমাজে চালু রাখেন তবে আমাদের সমাজটা সুখে-শান্তিতে ভরে যেত। মহান আল্লাহ আমাদেরকে সুমতি দান করুন। আমীন। [সম্পাদক]
পরিচ্ছেদঃ ১৬. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - আল্লাহ তা‘আলার প্রতি ভালোবাসা এবং আল্লাহ তা‘আলার জন্য বান্দার প্রতি ভালোবাসা
৫০২২-[২০] আবূ উমামাহ্ আল বাহিলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে বান্দা কোন বান্দাকে একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশেই ভালোবাসল, সে যেন প্রতিপালক মহীয়ান-গরীয়ানকেই সম্মান করল। (আহমাদ)[1]
وَعَنْ أَبِي
أُمَامَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا أَحَبَّ عَبْدٌ عَبْدًا لِلَّهِ إِلَّا أَكْرَمَ رَبَّهُ عَزَّ وَجَلَّ» . رَوَاهُ أَحْمد
ব্যাখ্যাঃ হাদীসটিতে বলা হয়েছে, যে বান্দা কোন বান্দাকে একমাত্র আল্লাহরই উদ্দেশেই ভালোবাসল, সে যেন প্রতিপালক মহীয়ান গরীয়ানকেই ভালোবাসল। সুতরাং মুসলিমদের পরস্পরের মাঝে ভালোবাসা সৃষ্টি করাই এ হাদীসটির দাবী। বিশেষ করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবীদেরকে ভালোবাসা ঈমানের দাবী। যে নেককার বান্দা আল্লাহকৃত ফরয কাজগুলোকে ফরয জানল আর হারাম কাজগুলোকে হারাম জানল তাকে ভালোবাসাও একজন মুসলিমের ঈমানের দাবী। আমাদের সকলের উচিত অত্র হাদীসের শিক্ষাকে জীবনে বাস্তবায়িত করার আপ্রাণ চেষ্টা করা। [সম্পাদক]
পরিচ্ছেদঃ ১৬. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - আল্লাহ তা‘আলার প্রতি ভালোবাসা এবং আল্লাহ তা‘আলার জন্য বান্দার প্রতি ভালোবাসা
৫০২৩-[২১] আসমা বিনতু ইয়াযীদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন যে, আমি কি তোমাদেরকে বলে দেব না যে, তোমাদের মধ্যে ভালো লোক কে? সাহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞেস করলেনঃ জ্বী হ্যাঁ, হে আল্লাহর রসূল! তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তোমাদের মধ্যে ভালো লোক সে ব্যক্তি, যাকে দেখলে আল্লাহ তা’আলার কথা স্মরণে আসে। (ইবনু মাজাহ)[1]
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ, এর সনদে আছে বর্ণনাকারী ‘‘শাহ্র ইবনু হাওশাব’’, সে খুব বেশি ভুল করত। দেখুন- হিদায়াতুর্ রুওয়াত ৪/৪৪৪ পৃঃ।
وَعَن أَسمَاء
بنت يزِيد أَنَّهَا سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «أَلَا أُنَبِّئُكُمْ بِخِيَارِكُمْ؟» قَالُوا: بَلَى يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ: «خِيَارُكُمُ الَّذِينَ إِذَا رُؤوا ذُكِر الله» رَوَاهُ ابْن مَاجَه
ব্যাখ্যাঃ কোন লোক যখন পরিপূর্ণ সুন্নতী তরীকায় তার জীবন পরিচালনা করে তখন তাকে দেখলে পরকালের কথা, আল্লাহর সামনে একদিন দাঁড়াতে হবে, আল্লাহ সবকিছু দেখছেন- এসব কথা স্মরণ হয়। কেননা, কোন লোক যখন আল্লাহর ভয়ে ভীত তথা মুত্তাক্বী হয় তখন সে আল্লাহকে ভয় করে হারাম কাজ থেকে বিরত থাকে আর হালাল বা নির্দেশিত কাজগুলো পালন করার আপ্রাণ চেষ্টা করে। ফলে আল্লাহর ভয়ে ভীত হয়, আল্লাহর কথা তাদেরও স্মরণ হয়ে যায়। [সম্পাদক]
পরিচ্ছেদঃ ১৬. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - আল্লাহ তা‘আলার প্রতি ভালোবাসা এবং আল্লাহ তা‘আলার জন্য বান্দার প্রতি ভালোবাসা
৫০২৪-[২২] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যদি দু’জন ব্যক্তি একমাত্র আল্লাহ মহীয়ান-গরীয়ানের উদ্দেশে একে অপরকে ভালোবাসে, তন্মধ্যে একজন পূর্বদেশীয় বাস করে এবং অপরজন পাশ্চাত্যে বাস করে, আল্লাহ তা’আলা উভয়কে কিয়ামতের দিন একত্র করে বলবেন, এ সেই ব্যক্তি, যাকে তুমি আমার জন্য ভালোবাসতে।[1]
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ, এর সনদে আছে ‘‘হাকীম ইবনু নাফি‘’’। যাহাবী বলেছেনঃ আযদী বলেন, হাকীম ইবনু নাফি‘ মাতরূক বা পরিত্যক্ত। দেখুন- হিদায়াতুর্ রুওয়াত ৪/৪৪৪ পৃঃ।
وَعَنْ أَبِي
هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَوْ أَنَّ عَبْدَيْنِ تَحَابَّا فِي اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ وَاحِدٌ فِي الْمَشْرِقِ وَآخَرُ فِي الْمَغْرِبِ لَجَمَعَ اللَّهُ بَيْنَهُمَا يَوْمَ الْقِيَامَةِ. يَقُولُ: هَذَا الَّذِي كُنْتَ تُحِبُّهُ فِي
ব্যাখ্যাঃ অত্র হাদীসটিতে বলা হলো কেউ যদি কাউকে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ভালোবাসে, যদিও তারা অনেক দূরে অবস্থান করে আল্লাহ তাদেরকে কিয়ামতের দিনে পরিচয় করিয়ে দিবেন। আল্লাহ নিজে পরিচয় করিয়ে দেয়ার ঘোষণা দিলেন, যদি তারা পরস্পরে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য একে অন্যকে ভালোবাসে। হাদীসটি হতে বুঝা গেল- ভালোবাসা হতে হবে আল্লাহকে রাজি-খুশি করার জন্য। এও বুঝা যাচ্ছে যে, না দেখেও দূর থেকে ভালোবাসা হয়। [সম্পাদক]
পরিচ্ছেদঃ ১৬. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - আল্লাহ তা‘আলার প্রতি ভালোবাসা এবং আল্লাহ তা‘আলার জন্য বান্দার প্রতি ভালোবাসা
৫০২৫-[২৩] আবূ রযীন (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ হে আবূ রযীন! আমি কি তোমাকে ঐ দীনী কাজের শেকড় সম্পর্কে বলে দেব, যা দ্বারা তুমি দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ লাভ করতে পারবে? তুমি আল্লাহকে জিকরকারীদের বৈঠকে অবশ্যই বসবে। আর যখন একা থাক, তখন যতটা সম্ভব আল্লাহর যিকরে নিজের রসনাকে নাড়াতে থাক। একমাত্র আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টির জন্যই কাউকে ভালোবাসবে এবং আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টির জন্যই কাউকে ঘৃণা করবে। হে আবূ রযীন! তুমি কি জানো, যখন কোন ব্যক্তি তার কোন মুসলিম ভাইয়ের সাথে দেখা-সাক্ষাতের উদ্দেশে ঘর থেকে বের হয়, তখন সত্তর হাজার মালাক (ফেরেশতা) তার জন্য দু’আ ও ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং বলে, হে রব্! এ ব্যক্তি একমাত্র তোমারই সন্তুষ্টির জন্য সাক্ষাৎ করল, তুমি তাকে তোমার রহমত ও কল্যাণ দ্বারা পরিপূর্ণ করে দাও। সুতরাং তোমার পক্ষ যদি সম্ভব হয় তোমার কোন মুসলিম ভাইয়ের সাক্ষাতে যাওয়া, তবে এরূপ করবে। অর্থাৎ- মুসলিম ভাইয়ের সাথে সাক্ষাৎ করবে।[1]
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ, এর সনদে ‘‘আমর ইবনু হাসান’’ নামের একজন বর্ণনাকারী আছেন যিনি মাতরূক। দেখুন- হিদায়াতুর্ রুওয়াত ৪/৪৪৫ পৃঃ।
وَعَن أبي
رَزِينٍ أَنَّهُ قَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَلَا أَدُلُّكَ عَلَى مِلَاكِ هَذَا الْأَمْرِ الَّذِي تُصِيبُ بِهِ خَيْرَ الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ؟ عَلَيْكَ بِمَجَالِسِ أَهْلِ الذِّكْرِ وَإِذَا خَلَوْتَ فَحَرِّكْ لِسَانَكَ مَا اسْتَطَعْتَ بِذِكْرِ اللَّهِ وَأَحِبَّ فِي اللَّهِ وَأَبْغِضْ فِي اللَّهِ يَا أَبَا رَزِينٍ هَلْ شَعَرْتَ أَنَّ الرَّجُلَ إِذَا خَرَجَ مَنْ بَيْتِهِ زَائِرًا أَخَاهُ شَيَّعَهُ سَبْعُونَ أَلْفَ مَلَكٍ كُلُّهُمْ يُصَلُّونَ عَلَيْهِ وَيَقُولُونَ: رَبَّنَا إِنَّهُ وَصَلَ فِيكَ فَصِلْهُ؟ فَإِنِ اسْتَطَعْتَ أَنْ تُعْمِلَ جَسَدَكَ فِي ذَلِك فافعل
ব্যাখ্যাঃ (عَلَيْكَ بِمَجَالِسِ أَهْلِ الذِّكْرِ) অর্থাৎ যে সকল লোক আল্লাহকে স্মরণকারী তাদেরকে আঁকড়ে থাক। কেননা তারা জান্নাতের বাগান। যেমনি ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) আনাস (রাঃ) হতে মারফূ‘ সূত্রে বর্ণনা করেছেন, إِذَا مَرَرْتُمْ بِرِيَاضِ الْجَنَّةِ فَارْتَعُوا قَالُوا: يَا رَسُولَ اللهِ! وَمَا رِيَاضُ الْجَنَّةِ؟ قَالَ: الذِّكْرُ
হাদীসটির অর্থ হলো, ‘‘যখন তোমরা দেখবে কোন জামা‘আত আল্লাহর জিকর-আযকার করছে তখন তোমরাও জিকর-আযকারে লিপ্ত হবে। যাতে তোমরা তাদের মতো হতে পার। কারণ তারা জান্নাতের বাগানে রয়েছে।’’ আবূ হুরায়রা হতে মারফূ‘ভাবে অন্য আরেকটি হাদীসে এসেছে-
ِإِذَا مَرَرْتُمْ بِرِيَاضِ الْجَنَّةِ فَارْتَعُوا قُلْتُ: وَمَا رِيَاضُ الْجَنَّةِ؟ قَالَ: "الْمَسَاجِدُ" قُلْتُ: وَمَا الرَّتْعُ يَا رَسُولَ اللهِ: سُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلّٰهِ وَلَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ وَاللهُ أَكْبَرُ
অর্থ : যখন তোমরা কোন জান্নাতের বাগান দিয়ে অতিক্রম করবে তখন তোমরা তাতে অংশগ্রহণ করবে। আমি বললাম, জান্নাতের বাগান কি? তিনি বললেন, মসজিদসমূহ। আমি বললামঃ তাহলে الرْتَعُوا (রত্‘উ) কি? তিনি বললেনঃ সুবহা-নাল্ল-হ, আল হামদুলিল্লা-হ, লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ আল্ল-হু আকবার। (তিরমিযী ৩৫০৯)
হাদীসের ভাষ্যকার বলেনঃ হাদীসটি স্থান ও যিকরের জন্য মুতলাক বা অনির্দিষ্ট। তবে অনির্দিষ্টকে নির্দিষ্টের উপর প্রয়োগ করেছেন। এটা মীরাক উল্লেখ করেছেন।
সঠিক কথা হলো উল্লেখিত, ‘মসজিদ’ ও ‘জিকর’ শব্দটা তিনি উল্লেখ করেছেন দৃষ্টান্ত দেয়ার জন্য। উত্তম মসজিদ হলো যাতে উত্তম মাজলিস হয়। সম্ভাবনা আছে যে, তিনি মসজিদকে নির্দিষ্ট করেছেন তা উত্তম হওয়ার কারণে। হাদীসে আযকার বলতে যাবতীয় সৎকাজ উদ্দেশ্য। তা কুরআনে বর্ণিত যাবতীয় সৎকাজ উদ্দেশ্য। তা কুরআনে বর্ণিত যাবতীয় ভালো কাজকে শামিল করে। বিশেষ করে যেসব মসজিদ উত্তম যাতে ‘আলিম-‘উলামা সহীহ ‘আক্বীদাহ্, সঠিক শারী‘আত, আর্থিক ও দৈহিক ‘ইবাদাত শিক্ষা দেয় এবং যা হালাল হারাম ও সৎকাজে উৎসাহিত করে এবং অসৎ কাজে নিরুৎসাহিত করে সেই মাজলিস উত্তম। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
(وَإِذَا خَلَوْتَ فَحَرِّكْ لِسَانَكَ مَا اسْتَطَعْتَ بِذِكْرِ اللهِ) এর সারকথা হলো : তুমি আল্লাহর জিকর থেকে গাফিল থাকবে না, চাই তুমি জনতার মাঝে থাক বা একাকী থাক।
বাযযার সহীহ সনদে ইবনু ‘আব্বাস থেকে মারফূ‘ সূত্রে একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন, তা হলো-
قَالَ: قَالَ اللهُ تَبَارَكَ وَتَعَالٰى: يَا ابْنَ آدَمَ إِذَا ذَكَرْتَنِي خَالِيًا ذَكَرْتُكَ خَالِيًا، وَإِذَا ذَكَرْتَنِي فِي مَلَأٍ ذَكَرْتُكَ فِي مَلَأٍ خَيْرٍ مِنَ الَّذِىْ ذَكَرْتَنِي فِيهِمْ
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মহান আল্লাহ বলেনঃ হে আদম সন্তান! যখন তুমি আমাকে নির্জনে স্মরণ করবে তখন আমিও তোমাকে নির্জনে স্মরণ করব। আর যখন তুমি আমাকে স্মরণ করবে কোন মাজলিসে তখন আমি তোমাকে তোমার চেয়ে উত্তম মাজলিসে স্মরণ করব। (কাশফুল আসতার ৪/৬, হাদ/৩০৬৫)
অন্য একটি হাদীসে কুদসীতে মহান আল্লাহ বলেনঃ
أَنَا عِنْدَ ظَنِّ عَبْدِي بِي وَأَنَا مَعَهٗ إِذَا ذَكَرَنِي فَإِنْ ذَكَرَنِي فِي نَفْسِه ذَكَرْتُهٗ فِي نَفْسِي وَإِنْ ذَكَرَنِي فِي مَلَإٍ ذَكَرْتُهٗ فِي مَلَإٍ خَيْرٍ
‘‘আমার বান্দা আমার সম্পর্কে যেরূপ ধারণা করে আমি তেমন আর আমি তার সাথে থাকি যখন সে আমাকে স্মরণ করে, যদি সে আমাকে মনে মনে স্মরণ করে তবে আমিও মনে মনে তাকে স্মরণ করি, যদি সে আমাদের কোন মাজলিসে আমাকে স্মরণ করে তবে আমি তাকে তার চেয়ে উত্তম মাজলিসে স্মরণ করি’’- (বুখারী ৭৪০৫, মুসলিম ৪/২০৬৭)। মনে মনে জিকর করাই হলো উত্তম। এটাকে গোপন জিকর বলা হয়। হাদীসটিতে জিহ্বা নাড়ানোর কথা দ্বারা মন ও ঠোট এক সাথে নাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১৬. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - আল্লাহ তা‘আলার প্রতি ভালোবাসা এবং আল্লাহ তা‘আলার জন্য বান্দার প্রতি ভালোবাসা
৫০২৬-[২৪] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ছিলাম। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জান্নাতে ইয়াকূতের স্তম্ভ রয়েছে, এর উপর পান্নার নির্মিত অট্টালিকা রয়েছে। ঐ অট্টালিকার দরজাসমূহ সদা উন্মুক্ত। এমন উজ্জ্বল ও চকচক করছে যেন উজ্জ্বল তারকা। সাহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! এতে কারা বাস করবে? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ সেসব লোক, যারা একমাত্র আল্লাহ তা’আলার উদ্দেশে পরস্পরকে ভালোবাসে, একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশে পরস্পর বসে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টির জন্য পরস্পর দেখা-সাক্ষাৎ করে। [উপরিউক্ত হাদীস তিনটি ইমাম বায়হাক্বী (রহিমাহুল্লাহ) ’’শু’আবুল ঈমানে’’ বর্ণনা করেছে।][1]
য‘ঈফ হওয়ার কারণ, এর সনদে আছে ‘‘মুহাম্মাদ ইবনু আবূ হুমায়দ’’ নামের একজন বর্ণনাকারী য‘ঈফ। দেখুন- য‘ঈফাহ্ ১৮৯৭, হিদায়াতুর্ রুওয়াত ৪/৪৪৫ পৃঃ।
وَعَنْ أَبِي
هُرَيْرَةَ قَالَ: كُنْتُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ فِي الْجَنَّةِ لَعُمُدًا مِنْ يَاقُوتٍ عَلَيْهَا غُرَفٌ مِنْ زَبَرْجَدٍ لَهَا أَبْوَابٌ مُفَتَّحَةٌ تُضِيءُ كَمَا يُضِيءُ الْكَوْكَبُ الدُّرِّيُّ» . فَقَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ مَنْ يَسْكُنُهَا؟ قَالَ: «الْمُتَحَابُّونَ فِي اللَّهِ وَالْمُتَجَالِسُونَ فِي اللَّهِ وَالْمُتَلَاقُونَ فِي اللَّهِ» . رَوَى الْبَيْهَقِيُّ الْأَحَادِيثَ الثَّلَاثَةَ فِي «شُعَبِ الْإِيمَانِ»
ব্যাখ্যাঃ (أَبْوَابٌ مُفَتَّحَةٌ) এর দু’টি অর্থ : তা হলো জান্নাত সম্পূর্ণভাবে ক্ষতি সাধন থেকে নিরাপদ, এটা সম্পূর্ণমুক্ত বিধায় এর দ্বার সর্বদা উন্মুক্ত। অথবা (أَبْوَابٌ مُفَتَّحَةٌ) এর দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে, জান্নাত স্বীয় দ্বার খোলা রেখে তার অধিবাসীর আগমন অপেক্ষায় আকুল হয়ে রয়েছে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
(كَمَا يُضِيءُ الْكَوْكَبُ الدُّرِّيُّ) তাফসীরকারক ইমাম বায়যাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, মহান আল্লাহ বলেছেনঃ كَأَنَّهَا كَوْكَبٌ دُرِّيٌّ ‘‘...কাঁচটি যেন একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র...’’- (সূরাহ্ আন্ নূর ২৪ : ৩৫)। অর্থাৎ উজ্জ্বল আলোকরশ্মি দ্বারা সজ্জিত যেন মতিতুল্য। এটাকে পরিস্ফূটিত হওয়ার কারণে মতির সাথে সাদৃশ্য দেয়া হয়েছে। কারণ আলোর কারণে সে অন্ধকারকে দূরীভূত করে দেয়। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)