পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - সালাম

প্রশংসনীয় কাজ ও কথাকে আদাব (আদব) বলা হয়। ইমাম সুয়ূত্বী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ চারিত্রিক মহৎ গুণাবলী লাভ করাকে আদব বলা হয়। আবার কেউ কেউ বলেন, সৎকর্মের সাথে থাকা ও অসৎ কাজ থেকে বিরত থাকার নাম আদাব। কেউ কেউ বলেন, বড়দের সম্মান করা ও ছোটদের সাথে সদয় আচরণ করাকে আদব বলে।

এটাও বলা হয় যে, أدب শব্দটি مأدبة থেকে গৃহীত। আর তা হলো খাবারের প্রতি আহবান করা, এটা এজন্য নাম হয়েছে যে, সাধারণত খাদ্যের প্রতি ডাকাই হয়। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


৪৬২৮-[১] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা আদম (আ.)-কে তাঁর আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন। তাঁর উচ্চতা ছিল ষাট হাত। আল্লাহ তা’আলা তাঁকে সৃষ্টি করে বলেন, যাও এবং অবস্থানরত মালায়িকাহ্’র (ফেরেশতাদের) ঐ দলটিকে সালাম করো। আর তাঁরা তোমার সালামের উত্তরে কি বলে তা শ্রবণ করো। তাঁরা যে উত্তর দেবে তা তোমার এবং তোমার সন্তানদের সালামের উত্তর। অতঃপর আদম (আ.) গিয়ে তাঁদের উদ্দেশে বললেনঃ ’’আসসালা-মু ’আলায়কুম’’। অতঃপর মালায়িকাহ্ উত্তর দিলেন, ’’আসসালা-মু ’আলায়কা ওয়া রহমাতুল্ল-হ’’। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তাঁরা (ফেরেশতাগণ) ’’ওয়া রহমাতুল্ল-হ’’ অংশটি বৃদ্ধি করেছেন। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ যে ব্যক্তিই জান্নাতে প্রবেশ করবে সে আদম (আ.)-এর আকৃতিতেই জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং সে উচ্চতায় হবে ষাট হাত। তখন হতে আজ পর্যন্ত সৃষ্টিকুলের উচ্চতা ক্রমাগত হ্রাস পেয়ে আসছে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ السَّلَامِ

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: خَلَقَ اللَّهُ آدَمَ على صورته طوله ذِرَاعًا فَلَمَّا خَلَقَهُ قَالَ اذْهَبْ فَسَلِّمْ عَلَى أُولَئِكَ النَّفَرِ وَهُمْ نَفَرٌ مِنَ الْمَلَائِكَةِ جُلُوسٌ فَاسْتَمِعْ مَا يُحَيُّونَكَ فَإِنَّهَا تَحِيَّتُكَ وَتَحِيَّةُ ذُرِّيَّتِكَ فَذَهَبَ فَقَالَ: السَّلَامُ عَلَيْكُمْ فَقَالُوا: السَّلَامُ عَلَيْكَ وَرَحْمَةُ اللَّهِ قَالَ: «فَزَادُوهُ وَرَحْمَةُ اللَّهِ» . قَالَ: «فَكُلُّ مَنْ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ عَلَى صُورَةِ آدَمَ وَطُولُهُ سِتُّونَ ذِرَاعًا فَلَمْ يَزَلِ الْخَلْقُ يَنْقُصُ بعدَه حَتَّى الْآن»

عن ابي هريرة قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: خلق الله ادم على صورته طوله ذراعا فلما خلقه قال اذهب فسلم على اولىك النفر وهم نفر من الملاىكة جلوس فاستمع ما يحيونك فانها تحيتك وتحية ذريتك فذهب فقال: السلام عليكم فقالوا: السلام عليك ورحمة الله قال: «فزادوه ورحمة الله» . قال: «فكل من يدخل الجنة على صورة ادم وطوله ستون ذراعا فلم يزل الخلق ينقص بعده حتى الان»

ব্যাখ্যাঃ হাদীসে উল্লেখিত ‘তাঁর’ সর্বনাম এর প্রত্যাবর্তনস্থল কোন্ দিকে? এ নিয়ে মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেছেন, এর প্রত্যাবর্তনস্থল হলো ‘‘আদম’’ অর্থাৎ আল্লাহ আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করেছেন যে আকৃতিতে যা ছিল পৃথিবীতে অবতরণ অথবা মৃত্যু পর্যন্ত। এটা তাদের সংশয়কে দূর করার জন্য যারা মনে করে যে, আদম (আ.) জান্নাতে অন্যরূপে ছিলেন অথবা তিনি বরাবর প্রথম সৃষ্টির মতো ছিলেন। তার বেড়ে উঠায় কোন পরিবর্তন হয়নি যেটা তাঁর সন্তান এক অবস্থা থেকে আরেক অবস্থায় পরিবর্তিত হয়।

কেউ বলেন, দাহরিয়্যাহ্ (যুগবাদীদের) খন্ডন করার জন্য। আর তা হলো মানুষ শুক্র থেকে সৃষ্টি হয়, আর মানব শুক্র মানুষ থেকে উৎপন্ন হয় এর কোন প্রথম নেই। অতএব প্রমাণিত হয় যে, তিনি প্রথম থেকে এভাবে সৃষ্টি।

 কেউ বলেন, এটা প্রকৃতিবাদীদের খন্ডন করার জন্য যারা বিশ্বাস করে যে, অবশ্যই মানুষ প্রকৃতির প্রভাবে জন্মে থাকে।

কেউ বলেন, এটা কদারিয়্যাহদেরকে প্রত্যাখ্যান করার জন্য যারা ‘আক্বীদাহ্ পোষণ করে যে, মানুষ নিজেই সৃষ্টি হয়েছে।

কেউ বলেছেন, হাদীসটির পটভূমির আলোকে এর প্রত্যাবর্তনস্থল হবে আদম । কারণ এর পূর্বে এক ঘটনা উহ্য আছে যা হলো জনৈক লোক তার গোলামকে মুখমন্ডলের উপর প্রহার করলে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে নিষেধ করলেন এবং এ হাদীসটি বললেন।

কেউ কেউ বলেছেন, এর সর্বনাম প্রত্যাবর্তন করবে আল্লাহর দিকে। তারা দলীল হিসেবে অন্য একটি হাদীস عَلٰى صُورَةِ الرَّحْمٰنِ উল্লেখ করেন যা মুনকার ও য‘ঈফ। আর এখানে صُورَةِ এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো الصِّفَةُ তথা গুণাবলী। তখন তার অর্থ হবে, নিশ্চয় আল্লাহ আদমকে তাঁর জ্ঞান, জীবন, শ্রবণ, দর্শন ও অন্যান্য গুণাবলী দিয়ে সৃষ্টি করেছেন।

ইবনু ‘আবদুল বার ইজমার দাবী করে বলেন, সালামের সূচনা করা সুন্নাত ও সালামের জবাব দেয়া ওয়াজিব। এটা আমাদের প্রসিদ্ধ মত। কাযী ‘ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) তাঁর থেকে বর্ণনা করে বলেন, সালাম দেয়া সুন্নাত অথবা ফরযে কিফায়াহ্। যদি দলের পক্ষে কেউ একজন সালাম প্রদান করেন তাহলে যথেষ্ট হবে। তিনি ইজমার উদ্ধৃতি দিয়ে আরো বলেনঃ তাঁর ফরযে কিফায়াহ্ বলার অর্থ হলো এটা সুন্নাত। আর সুন্নাত প্রতিষ্ঠা করা বা পুনর্জীবিত করা হচ্ছে ফরযে কিফায়াহ্।

‘আলিমগণ ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে, সালামের জবাব দেয়া ফরযে কিফায়াহ্।

নিঃসন্দেহে বলা যায়, সালামের মাধ্যমে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করা আমাদের উম্মাতে মুহাম্মাদীর স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। যা অন্যান্য উম্মাতের সময় ছিল না। যার ইঙ্গিত আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অমীয় বাণী থেকে প্রাপ্ত হই। যেমন প্রখ্যাত হাদীসবিশারদ ইমাম বুখারী (রহিমাহুল্লাহ) তাঁর রচিত প্রসিদ্ধ গ্রন্থ ‘আদাবুল মুফরাদে’ ও ইবনু মাজাহতে রয়েছে। যাকে ইমাম ইবনু খুযায়মাহ্ সহীহ বলেছেন, আমাদের মা ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে মারফূ‘ সূত্রে বর্ণিত, ইয়াহূদীরা তোমাদের ‘সালাম’ ও ‘আমীন’-এর ব্যাপারে যত হিংসা করে আর কোন কিছুতেই এরূপ তোমাদের ওপর হিংসা করে না।

আবূ যার (রাঃ) তাঁর ইসলাম গ্রহণের ঘটনায় বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে বললেনঃ আমি হলাম প্রথম ব্যক্তি যাকে ইসলামী শুভেচ্ছায় অভিবাদন জানানো হয়েছে। এরপর বললেন, وَعَلَيْكَ وَرَحْمَةُ اللّٰهِ অর্থাৎ তোমার ওপরেও আল্লাহর শান্তি ও রহমত বর্ষিত হোক। (মুসলিম)

ইমাম ত্ববারানী ও বায়হাক্বী আবূ উমামাহ্ কর্তৃক মারফূ‘ হাদীস উল্লেখ করে বলেনঃ আল্লাহ সালামকে আমাদের শুভেচ্ছা জ্ঞাপনের মাধ্যম ও আমাদের যিম্মীদের নিরাপত্তা প্রদান স্বরূপ নির্ধারণ করেছেন।

আবূ দাঊদে ‘ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, আমরা জাহিলী যুগে অভিবাদন জানানোর সময় বলতাম أَنْعِمْ بِكَ عَيْنًا তোমার চক্ষু শীতল হোক। أَنْعِمْ صَبَاحًا সকাল শুভ হোক। অতঃপর যখন ইসলামের আবির্ভাব ঘটল তখন আমরা এসব বলাতে নিষিদ্ধ হলাম।

ইবনু আবূ হাতিম বলেনঃ তারা জাহিলী যুগে حُيِّيتَ مَسَاءً আমি সন্ধ্যায় তোমার দীর্ঘজীবন কামনা করলাম। حُيِّيتَ صَبَاحًا সকালে দীর্ঘজীবন কামনা করলাম। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা এটাকে পরিবর্তন করে সালামের প্রবর্তন করলেন।

এ হাদীসে সালামের জবাবে প্রদানকারীর চাইতে কিছু বৃদ্ধিসহ বলার ইঙ্গিত রয়েছে। এটা সর্বসম্মতিক্রমে মুস্তাহাব। কারণ এ ব্যাপারে এর সাক্ষ্য কুরআনে পাওয়া যায়। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, فَحَيُّوا بِأَحْسَنَ مِنْهَا أَوْ رَدُّوْهَا ‘‘তখন তোমরা এর চাইতে উত্তমভাবে অভিবাদন বা সালাম জানাও অথবা তার মতো ফিরিয়ে দাও’’- (সূরাহ্ আন্ নিসা ৪ : ৮৬)। অতএব সালাম প্রদানকারী যদি وَرَحْمَةُ اللهِ পর্যন্ত বলে তবে জবাব দানকারীর وَبَرَكَاتُهٗ বৃদ্ধি করা মুস্তাহাব। আবার কেউ যদি وَبَرَكَاتُهٗ পর্যন্ত বলে তাহলে তার জবাবে কিছু বৃদ্ধি করা যাবে কিনা? অথবা প্রদানকারীর وَبَرَكَاتُهٗ-এর চাইতে কিছু বেশি বলতে পারে কিনা? এর উত্তরে ইমাম মালিক তাঁর মুওয়াত্ত্বা গ্রন্থে ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর সূত্রে বলেন, وَبَرَكَاتُهٗ পর্যন্তই সালামের শেষ। ইমাম বায়হাক্বী তাঁর ‘‘শু‘আবুল ঈমান’’ গ্রন্থে বলেনঃ জনৈক ব্যক্তি ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর কাছে বলল, السَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهٗ وَمَغْفِرَتُهٗ। তখন তিনি বললেন, وَبَرَكَاتُهٗ পর্যন্ত বললে তোমার জন্য যথেষ্ট হতো, এর শেষ وَبَرَكَاتُهٗ পর্যন্ত। ‘উমার (রাঃ) বলেন, সালাম হলো وَبَرَكَاتُهٗ পর্যন্ত। এর বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযোগ্য। তবে ইবনু ‘উমার-এর মতে বৃদ্ধি করা জায়িয। যেমন ইমাম মালিক তাঁর মুওয়াত্ত্বা গ্রন্থে বলেন, ইবনু ‘উমার (রাঃ) সালামের জবাবে বৃদ্ধি করে وَالْغَادِيَاتُ وَالرَّائِحَاتُ বলেন।

ইমাম বুখারী আদাবুল মুফরাদে বলেন, সালিম বলেনঃ ইবনু ‘উমার (রাঃ) জবাবে বৃদ্ধি করতেন। আমি একদিন এসে বললাম السَّلَامُ عَلَيْكُمْ , এর উত্তরে তিনি বললেন السَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللهِ। পরে আরেকদিন এসে وَبَرَكَاتُهٗ পর্যন্ত বললাম, তখন এর উত্তরে তিনি বৃদ্ধি করে وَطِيبُ صَلَوَاتِه বলেন। যায়দ ইবনু সাবিত  এক বর্ণনায় বলেন, ইবনু ‘উমার (রাঃ) মু‘আবিয়াহ্ (রাঃ)-এর নিকট চিঠি লিখতে গিয়ে বললেন, السَّلَامُ عَلَيْكُمْ يَا أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهٗ وَمَغْفِرَتُهٗ وَطِيبُ صلواته

ইবনু দাক্বীক্বিল ‘ঈদ বলেনঃ এ রীতি আল্লাহর বাণী فَحَيُّوا بِأَحْسَنَ مِنْهَا থেকে গৃহীত। অতএব যখন প্রথমে সালাম দানকারী ব্যক্তি وَبَرَكَاتُهٗ পর্যন্ত বলবে তখন এর উত্তরে বৃদ্ধি করা জায়িয।

وَبَرَكَاتُهٗ এরপর বর্ধিত শব্দাবলীর ফাযীলাত সংক্রান্ত যে সব হাদীস আছে এবং যেসব হাদীস রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে পাওয়া যায় তার প্রায় সবই য‘ঈফ। এসব য‘ঈফ হাদীসের ক্ষেত্রে হাফিয ইবনু হাজার বলেনঃ যখন এ দুর্বল হাদীসগুলো একত্রিত হয় তখন তা শক্তিশালী হয়। যার ফলে وَبَرَكَاتُهٗ এর পরে বর্ধিত শব্দগুলো ব্যবহারের বৈধতা পাওয়া যায়। (ফাতহুল বারী ১১শ খন্ড, হাঃ ৬২২৭)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - সালাম

৪৬২৯-[২] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে জিজ্ঞেস করল, ইসলামে কোন্ ’আমলটি উত্তম? রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ অপরকে খাবার খাওয়াবে এবং পরিচিত-অপরিচিত সবাইকে সালাম দেবে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ السَّلَامِ

وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو: أَنَّ رَجُلًا سَأَلَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَيُّ الْإِسْلَامِ خَيْرٌ؟ قَالَ: «تُطْعِمُ الطَّعَامَ وَتَقْرَأُ السَّلَامَ عَلَى مَنْ عَرَفْتَ وَمَنْ لم تعرف»

وعن عبد الله بن عمرو: ان رجلا سال رسول الله صلى الله عليه وسلم: اي الاسلام خير؟ قال: «تطعم الطعام وتقرا السلام على من عرفت ومن لم تعرف»

ব্যাখ্যাঃ ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ পরিচিত অপরিচিত সবাইকে সালাম দেয়াতে আল্লাহর জন্য ‘আমলকে খালেস করা হয় এবং বিনয় ব্যবহার করা হয়। তিনি আরো বলেন, সালামের বিস্তার সাধন এ উম্মাতের একটি বৈশিষ্ট্য।

ইবনু হাজার (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এর উপকারিতা হলো যদি কেউ অপরিচিত ব্যক্তিকে সালাম না দেয় তাহলে তার ধারণা হবে যে, সে তার অপরিচিত ব্যক্তি। এতে সে একাকীত্ব অনুভব করবে। তিনি বলেন, কাউকে কাফির বলে চিনতে না পারা পর্যন্ত সতর্কতার স্বার্থে সালাম দেয়া বৈধ।

ইবনু বাত্ত্বল (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ অপরিচিত ব্যক্তিকে সম্বোধন পূর্বক সালাম প্রদান করার মাধ্যমে কোমল আচরণ করা হয়। যাতে সকল মুসলিম ভাই ভাই হয়ে যায়। কেউ কারো নিকট থেকে একাকীত্ববোধ না করে। তিনি বলেন, সালামকে শুধুমাত্র পরিচিত মুসলিমের সাথে খাস করে অপরিচিত ব্যক্তিকে সালাম না দেয়াটা পরস্পরের বিচ্ছিন্নতার মতো। (ফাতহুল বারী ১১শ খন্ড, হাঃ ৬২৩৬)

‘আওনুল মা‘বূদ-এর রচয়িতা আবূ দাঊদ-এর ভাষ্যকার বলেনঃ সালামকে পরিচিত ব্যক্তির সাথে খাস করা কিয়ামতের আলামাতসমূহের একটি। যেমন ত্বহাবীসহ অন্যরা ইবনু মাস্‘ঊদ  থেকে হাদীস বর্ণনা করেন। ত্বহাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, إِنَّ مِنْ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ السَّلَامَ لِلْمَعْرِفَةِ ‘‘শুধুমাত্র পরিচিত ব্যক্তিকে সালাম দেয়া কিয়ামতের নিদর্শনাবলীর অন্যতম’’। (‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৫১৮৫)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - সালাম

৪৬৩০-[৩] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ একজন মু’মিনের ওপর অপর মু’মিনের ছয়টি অধিকার রয়েছে। যথা- ১. যখন কোন মু’মিনের রোগ-ব্যাধি হয়, তখন তার সেবা-শুশ্রূষা করা, ২. কেউ মৃত্যুবরণ করলে, তার জানাযাহ্ ও দাফন-কাফনে উপস্থিত হওয়া, ৩. কেউ দা’ওয়াত করলে তা গ্রহণ করা অথবা কারো ডাকে সাড়া দেয়া, ৪. সাক্ষাতে সালাম প্রদান করা, ৫. হাঁচি দিলে জবাব দেয়া এবং ৬. উপস্থিত-অনুপস্থিত সকল অবস্থায় মু’মিনের কল্যাণ কামনা করা।

মাসাবীহ গ্রন্থকার বলেনঃ আমি এ হাদীসটি সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিমে পাইনি এবং হুমায়দীর কিতাবেও পাইনি। তবে জামি’উল উসূলের গ্রন্থকার নাসায়ী’র বর্ণনা সূত্রে এটা বর্ণনা করেছেন।[1]

بَابُ السَّلَامِ

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لِلْمُؤْمِنِ عَلَى الْمُؤْمِنِ سِتُّ خِصَالٍ: يَعُودُهُ إِذَا مَرِضَ وَيَشْهَدُهُ إِذَا مَاتَ وَيُجِيبُهُ إِذَا دَعَاهُ وَيُسَلِّمُ عَلَيْهِ إِذَا لَقِيَهُ وَيُشَمِّتُهُ إِذَا عَطَسَ وَيَنْصَحُ لَهُ إِذَا غَابَ أَوْ شَهِدَ «لَمْ أَجِدْهُ» فِي الصَّحِيحَيْنِ «وَلَا فِي كِتَابِ الْحُمَيْدِيِّ وَلَكِنْ
ذَكَرَهُ صَاحِبُ» الْجَامِع بِرِوَايَة النَّسَائِيّ

عن ابي هريرة قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: للمومن على المومن ست خصال: يعوده اذا مرض ويشهده اذا مات ويجيبه اذا دعاه ويسلم عليه اذا لقيه ويشمته اذا عطس وينصح له اذا غاب او شهد «لم اجده» في الصحيحين «ولا في كتاب الحميدي ولكن ذكره صاحب» الجامع برواية النساىي

ব্যাখ্যাঃ (يَنْصَحُ لَهٗ) এর অর্থ সে মু’মিনের কল্যাণ কামনা করবে বা তাকে সুপথ প্রদর্শন করবে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)

সহীহ মুসলিম-এর ভাষ্যকার বলেনঃ তাকে সদুপদেশ দান করবে, সৎ পরামর্শ দিবে। তাকে প্রতারিত করবে না। তাকে অবিরত সদুপদেশ দান করবে। (শারহুন নাবাবী হাঃ ২১৬২)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - সালাম

৪৬৩১-[৪] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রা (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমরা ঈমান গ্রহণ করবে। আর ততক্ষণ পর্যন্ত প্রকৃত মু’মিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমরা পরস্পরকে ভালোবাসবে। আমি কি তোমাদেরকে এমন কথা বলে দেব, যার উপর ’আমল করলে তোমাদের পারস্পরিক ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে। (তা হলো) তোমরা পরস্পরের মধ্যে সালামের প্রচলন করবে। (মুসলিম)[1]

بَابُ السَّلَامِ

وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا تَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ حَتَّى تُؤْمِنُوا وَلَا تُؤْمِنُوا حَتَّى تَحَابُّوا أَو لَا أدلكم على شَيْء إِذا فعلمتموه تحاببتم؟ أفشوا السَّلَام بَيْنكُم» رَوَاهُ مُسلم

وعنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «لا تدخلون الجنة حتى تومنوا ولا تومنوا حتى تحابوا او لا ادلكم على شيء اذا فعلمتموه تحاببتم؟ افشوا السلام بينكم» رواه مسلم

ব্যাখ্যাঃ (وَلَا تُؤْمِنُوا حَتّٰى تَحَابُّوا) এর মর্মার্থ, পারস্পরিক ভালোবাসা ছাড়া তোমাদের ঈমান পরিপূর্ণতা লাভ করবে না এবং মু’মিন হিসেবে তোমাদের অবস্থান সঠিক হবে না।

হাদীসের বাহ্যিক অর্থ হলো, ঈমান থাকা অবস্থায় কেউ মারা গেলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। যদিও তার ঈমান পরিপূর্ণ না হয়। তবে শায়খ আবূ ‘আমর (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, পারস্পরিক ভালোবাসা ছাড়া ঈমান পূর্ণ হয় না। পরিপূর্ণ মু’মিন ব্যতীত জান্নাতে প্রবেশ করবে না। ইমাম বুখারী তাঁর সহীহ গ্রন্থে ‘আম্মার ইবনু ইয়াসির (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, যে ব্যক্তি তিনটি বস্তু সঞ্চয় করে, সে যেন ঈমান সঞ্চয় করল। ১. নিজে ন্যায় বিচার করা, ২. পৃথিবীবাসীকে সালাম প্রদান করা। ৩. মাল খরচ করা।

সালাম প্রদান ঐক্য সংহতির প্রধান উপায় ও ভালোবাসা অর্জনের মূল। সালামের বিস্তারের মাধ্যমে মুসলিমদের একে অপরের সাথে হৃদ্যতা গড়ে উঠে। আর অন্য ধর্মাবলম্বী থেকে তাদেরকে পার্থক্যকারী চিহ্নের প্রকাশ সাধন হয়। এর দ্বারা আত্মচর্চা, ইসলামের বাণীকে উন্নীতকরণ, মুসলিমদের ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়। আবার এর মাধ্যমে মুসলিমদেরকে সম্মান প্রদান ও তাদের প্রতি বিনয়ী হওয়া নিশ্চিত হয়। উপরন্তু মুসলিমগণ রসূলের সুন্নাত জীবিত রাখে। আবার এর আরেকটি সূক্ষ্ম রহস্য হলো সালাম বিস্তারের ফলে মুসলিমদের মাঝে পারস্পরিক বিচ্ছিন্নতা, হিংসা-বিদ্বেষ বিদ্যমান ঝগড়া-ফাসাদ বিদূরিত হয়। কেননা তার সালাম একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে হয়ে থাকে। এখানে সে প্রবৃত্তির অনুসরণ করে না। ফলে সে তার সাথী ও বন্ধু-বান্ধবদের খাস করে না।

মুওয়াত্ত্বায় সহীহ সনদে বর্ণিত হয়েছে, একদিন তুফায়ল ইবনু উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ) সকালে ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর সাথে বাজারে গেলেন। তিনি বলেন, ‘আবদুল্লাহ বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতা, মিসকীন, এমনকি প্রত্যেককে সালাম দিচ্ছেন। আমি বললাম, আপনি বাজারে কি করছেন? আপনি তো বাজারে কিছু কেনা-বেচার জন্য আগত হচ্ছেন না, কোন পণ্য সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছেন না? আসুন আমাদের সাথে বসুন আমরা কথা বলি। তখন তিনি আমাকে বললেন, আমরা সালাম দেয়ার জন্য সকালে এসেছি। আমাদের সাথে যাদের সাক্ষাত হচ্ছে তাদেরকে সালাম দিচ্ছি। (‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৫১৮৪; শারহুন নাবাবী ২য় খন্ড, হাঃ ৯৩)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - সালাম

৪৬৩২-[৫] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রা (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আরোহী ব্যক্তি পায়ে হেঁটে চলা ব্যক্তিকে সালাম দেবে এবং পদব্রজে গমনকারী উপবিষ্টমান ব্যক্তিকে সালাম দেবে এবং অল্পসংখ্যক লোক বেশি সংখ্যক লোককে সালাম দেবে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ السَّلَامِ

وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يُسَلِّمُ الرَّاكِبُ عَلَى الْمَاشِي وَالْمَاشِي عَلَى الْقَاعِدِ وَالْقَلِيلُ عَلَى الْكَثِيرِ»

وعنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «يسلم الراكب على الماشي والماشي على القاعد والقليل على الكثير»

ব্যাখ্যাঃ ন্যূনতম সালাম হলো ‘‘আসসালা-মু ‘আলায়কুম’’। যদি মুসলিম ব্যক্তি একজন হয় তাহলে এর স্বল্পতর সালাম হলো ‘‘আসসালা-মু ‘আলায়কা’’। তবে ‘‘আসসালা-মু ‘আলায়কুম’’ বলা উত্তম। কারণ সালাম যেন তাকে ও দু’ মালাক (ফেরেশতা)-কে শামিল করে। এর চাইতে অধিকপূর্ণ সালাম হলো এর সাথে ‘‘ওয়া রহমাতুল্ল-হি ওয়া বারাকা-তুহ’’ বৃদ্ধি করা।

ছোটরা বড়দেরকে, গমনকারী উপবিষ্টদেরকে, আরোহী হেঁটে চলা ব্যক্তিকে, কম সংখ্যক লোক বেশি সংখ্যক লোককে সালাম দেয়া মুস্তাহাব। তবে এর বিপরীত করলেও জায়িয আছে। রবং যে আগে সালাম দিবে সে অহঙ্কারমুক্ত বলে গণ্য হবে।

হাফিয ইবনু হাজার ‘আসকালানী (রহিমাহুল্লাহ) ফাতহুল বারীতে বলেনঃ ‘আলিমগণ শারী‘আতে সালাম প্রদানকারীদের ব্যাপারে হিকমাত নিয়ে আলোচনা করেন। যেমন- ইবনু বাত্ত্বল মুহাল্লাব থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেনঃ বড়দের হক থাকার দরুন ছোটরা তাদেরকে সালাম প্রদান করবে। কারণ সে বড়কে সম্মান করবে ও নমনীয় হবে। কম সংখ্যক লোক বেশি সংখ্যক লোকেকেদেকে সালাম প্রদান করবে। কারণ তাদের হক অধিক বড়। বাড়িওয়ালাদের নিকট প্রবেশকারী অনুমতি চাওয়ার জন্য সালাম প্রদান করবে। আরোহী সালাম প্রদান করবে যাতে সে আরোহণ করার কারণে গর্ববোধ না করে। ফলে সে বিনয়তা প্রদর্শন করতে পারে। ইবনুল ‘আরাবী বলেনঃ হাদীসের মর্মার্থ হলো, অবশ্যই যার ওপরে শ্রেষ্ঠত্ব দান করা হয়েছে, সে এমন শ্রেণীর যে, সে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তির ওপরে প্রাধান্য পায়।

মাযূরী বলেনঃ আরোহী ব্যক্তি সালাম প্রদান করবে। কারণ পায়ে হেঁটে চলা ব্যক্তির ওপরে তার শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে। সেজন্য পদাচারী ব্যক্তির পরিবর্তে আরোহী ব্যক্তি গর্ব থেকে সতর্ক থাকার উদ্দেশে সালাম প্রদান করবে। যাতে সে দু’টি ফাযীলাতের অধিকারী হতে পারে। আর পদব্রজে গমনকারী সালাম প্রদান করবে। এতে উপবিষ্ট ব্যক্তি তার অনিষ্টতার আশংকা করে না। বিশেষতঃ আরোহী ব্যক্তি সালাম দিলে সে নিরাপদ হয়ে যায় এবং সে তাকে ভালোবাসে। উপরন্তু গমনকারীদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় তাদেরকে সালাম দেয়া বসে থাকা ব্যক্তিদের নিকট কঠিন। সেহেতু তাদের ওপর থেকে সালাম প্রদানের হুকুম রহিত হয়ে যায়। কিন্তু গমনকারীদের নিকট তা কঠিন নয়। (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৭ম খন্ড, হাঃ ২৭০৩)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - সালাম

৪৬৩৩-[৬] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রা (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ছোট বা কম বয়সী বয়োজ্যেষ্ঠকে, পদব্রজে অতিক্রমকারী বসা ব্যক্তিকে ও কম সংখ্যক লোক বেশি সংখ্যক লোককে সালাম দেবে। (বুখারী)[1]

بَابُ السَّلَامِ

وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يُسَلِّمُ الصَّغِيرُ عَلَى الْكَبِيرِ وَالْمَارُّ عَلَى الْقَاعِدِ وَالْقَلِيلُ عَلَى الْكَثِيرِ»

وعنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «يسلم الصغير على الكبير والمار على القاعد والقليل على الكثير»

ব্যাখ্যাঃ মাওয়ারদী বলেনঃ যদি কোন ব্যক্তি কোন মাজলিসে প্রবেশ করে। আর যদি দলটি ছোট হয় যা এক সালামে শামিল করে তাহলে তাই যথেষ্ট হবে। আর যদি সালাম বৃদ্ধি করে কাউকে বিশেষভাবে সালাম দেয়, তাহলে কোন দোষ নেই। আর তাদের পক্ষ থেকে একজন উত্তর দিলে যথেষ্ট হবে। আর যদি বেশি লোকে উত্তর দেয় তবে এতেও কোন দোষ নেই।

আর যখন মাজলিস বড় হবে ও লোক সংখ্যা বেশি হয় ফলে সবার নিকটে সালাম পৌঁছবে না, এক্ষেত্রে তাদের সাথে সাক্ষাৎ হলে প্রবেশের পূর্বে প্রথমে সালাম দিলে যারা শুনেছে তাদের নিকটে সালামের সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে। শ্রবণকারীরা সালামের জবাব দিলে সবার পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যাবে। তবে যারা সালাম শুনতে পায়নি তাদেরকে পুনরায় সালাম দেয়ায় কোন ক্ষতি নেই। (ফাতহুল বারী ১১শ খন্ড, হাঃ ৬২৩১)

ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এ ভদ্রতা বজায় থাকবে রাস্তায় পরস্পরে দু’জনের সাক্ষাৎকালে। অতএব যখন সে কোন বসা ব্যক্তির নিকটে আগমন করবে তখন সে সালাম প্রদান করবে। চাই সেই আগমনকারী ছোট হোক বা বড়, কম সংখ্যক হোক বা বেশি সংখ্যক। (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৭ম খন্ড, হাঃ ২৭০৪)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - সালাম

৪৬৩৪-[৭] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদল বালকের নিকট দিয়ে অতিক্রম করলেন এবং তাদের সালাম দিলেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ السَّلَامِ

وَعَن أَنَسٍ قَالَ: إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مر على غلْمَان فَسلم عَلَيْهِم

وعن انس قال: ان رسول الله صلى الله عليه وسلم مر على غلمان فسلم عليهم

ব্যাখ্যাঃ ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এ হাদীসে বালেগ তরুণদেরকে সালাম দেয়া যে মুস্তাহাব তা সাব্যস্ত হয়েছে। পরস্পরের নমনীয়তা জাগ্রত, সব মানুষকে সালাম প্রদান এবং বিশ্ববাসীর প্রতি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মহানুভবতা ও স্নেহপরায়ণতার ইঙ্গিত এতে বিদ্যমান। (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৭ম খন্ড, হাঃ ২৬৯৬)

হুসায়মী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ পাপমুক্ত হতে হলে ফিৎনামুক্ত হতে হবে। অতএব যে নিরাপদ থাকার ব্যাপারে আস্থাবান হয় সে সালাম প্রদান করবে। নতুবা চুপ থাকায় অধিক নিরাপদ।

ইবনু বাত্ত্বল (রহিমাহুল্লাহ) মুহাল্লাব থেকে বর্ণনা করে বলেনঃ পুরুষ কর্তৃক মহিলাদের সালাম দেয়া ও মহিলা কর্তৃক পুরুষদের সালাম দেয়া জায়িয, যখন ফিৎনা থেকে মুক্ত হয়।

মালিকী মাযহাবীরা অজুহাতের পথ বন্ধ করার স্বার্থে যুবতী ও বৃদ্ধাদের মাঝে পার্থক্য করেছেন। তবে রবী‘আহ্ একেবারে নিষেধ করেছেন।

কুফাবাসীগণ বলেনঃ মহিলা কর্তৃক পুরুষদের সালাম দেয়া শারী‘আতে ঠিক নয়। কারণ তাদেরকে আযান, ইকামাত, উচ্চৈঃস্বরে কুরআন তিলাওয়াত করা থেকে নিষেধ করা হয়েছে। তবে তারা মাহরামদের মাঝে সালাম লেন-দেনকে জায়িয বলেছেন। ফাতহুল বারীতে এমনিভাবে এসেছে। (‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৫১৯৫)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - সালাম

৪৬৩৫-[৮] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইয়াহূদী ও খ্রিষ্টানকে প্রথমে সালাম দেবে না। তোমাদের কেউ যদি পথে কোন ইয়াহূদী বা খ্রিষ্টানের সাক্ষাৎ পাও, তবে রাস্তাকে এতটা সংকীর্ণ করে রাখবে, যাতে সে রাস্তার একপাশ দিয়ে অতিক্রম করতে বাধ্য হয়। (মুসলিম)[1]

بَابُ السَّلَامِ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عَلَيْهِ وَسلم: «لَا تبدؤوا الْيَهُودَ وَلَا النَّصَارَى بِالسَّلَامِ وَإِذَا لَقِيتُمْ أَحَدَهُمْ فِي طريقٍ فَاضْطَرُّوهُ إِلَى أضيَقِه»

وعن ابي هريرة قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «لا تبدووا اليهود ولا النصارى بالسلام واذا لقيتم احدهم في طريق فاضطروه الى اضيقه»

ব্যাখ্যাঃ মুসলিম কর্তৃক ইয়াহূদী ও নাসারাদের সালাম প্রদান করা তাদেরকে সম্মান করার শামিল। অথচ এটা মুসলিমদের জন্য জায়িয নয়।

ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ তাদেরকে সালাম দেয়া হারাম।

ইমাম ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ পছন্দনীয় মত হলো বিদ্‘আতীরা সালাম পাওয়ার হকদার নয়। যদি অপরিচিত কোন ব্যক্তিকে সালাম দেয়ার পর জানা যায় যে, সে যিম্মী অথবা বিদ্‘আতী, তাহলে তার প্রতি অবজ্ঞাবশতঃ বলবে, আমি সালাম ফিরিয়ে নিলাম। (‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৫১৯৬)

ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ আমার সাথীরা বলেন, যিম্মীদেরকে রাস্তার মধ্যভাগ ছাড়া যাবে না। বরং যখন মুসলিমনগণ পথ চলবে তখন তারা যিম্মীদেরকে সংকীর্ণের দিকে যেতে বাধ্য করবে। তবে রাস্তা যানজটমুক্ত হলে এতে কোন দোষ নেই। তারা এ কথাও বলেন যে, সংকোচন এমন হওয়া উচিত যাতে সে গর্তে পড়ে না যায় এবং কোন দেয়ালে বাধাপ্রাপ্ত না হয়। (শারহুন নাবাবী ১৪শ খন্ড, হাঃ ৫১৬৭)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - সালাম

৪৬৩৬-[৯] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন ইয়াহূদীরা তোমাদেরকে সালাম দেয়, তখন তারা ’’আসসামু ’আলায়কা’’ (অর্থাৎ- শীঘ্রই তোমার মৃত্যু ঘটুক) বলে, তখন তোমরাও জবাবে বলবে ’’ওয়া ’আলায়কা’’ (অর্থাৎ- তোমারও মৃত্যু হোক)। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ السَّلَامِ

وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِذَا سَلَّمَ عَلَيْكُمُ الْيَهُودُ فَإِنَّمَا يَقُولُ أَحَدُهُمْ: السَّامُ عَلَيْك. فَقل: وَعَلَيْك

وعن ابن عمر قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: اذا سلم عليكم اليهود فانما يقول احدهم: السام عليك. فقل: وعليك

ব্যাখ্যাঃ আহলে কিতাবের সালামের জবাবে কি বলা যায়, এ নিয়ে ‘আলিমদের মাঝে মতভেদ রয়েছে। এ নানা মতের কারণ হলো বিভিন্ন রকম রিওয়ায়াত। এসব রিওয়ায়াতের কোনটি অগ্রাধিকারযোগ্য?

ইবনু ‘আবদুল বার واو বিহীন বলেছেন। কেননা এটা অংশীদার করার ফায়েদা দেয়।

ইমাম খত্ত্বাবী (রহিমাহুল্লাহ) রচিত معالم السنن গ্রন্থে বলা হয়েছে, যে রিওয়ায়াতে عليكم রয়েছে অর্থাৎ واو নেই সেটা উত্তম যাতে واو আছে সেই রিওয়ায়াত থেকে। ইবনু ‘উয়াইনাহ্ বলেনঃ وعليكم বর্ণনাটি عليكم বর্ণনার চাইতে অধিক সঠিক। আর এভাবে তাদের কথাকে হুবহু তাদের নিকটে ফিরিয়ে দেয়া হয়। তখন এর অর্থ হবে তোমরা যা বলেছ সেটাই তোমাদের ওপর ফিরিয়ে দিলাম।

আবার ইমাম খত্ত্বাবী (রহিমাহুল্লাহ) তাঁর গ্রন্থে সাধারণ ‘আলিমদের এমন বর্ণনা উল্লেখ করেন যাতে واو যোগে عليكم রয়েছে। তিনি এ ব্যাপারে বলেন, অবশ্য واو হরফটি حرف عطف যা দু’টি বস্তুকে একত্রিত করে। এরূপ বাক্যে واو টি পূর্বের বাক্যকে আরো সুদৃঢ়ভাবে সাব্যস্ত করে ও অন্য আরো কিছু যুক্ত হয়ে থাকে। যেমন তুমি যখন বলবে زيد كاتب যায়দ লেখক। তখন সম্বোধিত ব্যক্তি বলবে وشاعر وفقيه। এ ধরনের বাক্যের অর্থের চাহিদা হলো যায়দ তো লেখক আবার কবি ও ফকীহও বটে।

ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ عليكم এর সাথে واو যুক্ত করা বা না করা উভয়ই সঠিক ও জায়িয। واو যোগে وعليكم অধিক উৎকৃষ্ট। এতে কোন সমস্যা নেই। অসংখ্য বর্ণনা এ ব্যাপারে অধিকাংশ ‘আলিম থেকে পাওয়া যায়। এর অর্থে দু’টি তাৎপর্য রয়েছে।

১. তারা বলে, عليكم الموت তোমাদের মৃত্যু হোক। এর উত্তরে বলবে وعليكم ايضا অর্থাৎ তোমরা ও আমরা সবাই সমান। আমরা সবাই মরব।

২. واو টি استئناف পুনরারম্ভ এর অর্থে ব্যবহার হবে। এটা عطف সংযুক্ত বা تشريك অংশীদার করা এর অর্থে নয়। এটা মূলত এ রকম ছিল وعليكم ما تسحقون من الذم তোমরা যেই তিরস্কারের হকদার তা তোমাদের ওপর আপতিত হোক। (ফাতহুল বারী ১১শ খন্ড, হাঃ ৬২৫৭)

‘আওনুল মা‘বূদ গ্রন্থকার বলেনঃ এর অর্থ হলো أَنَّا لَسْنَا نَمُوت دُونكُمْ بَلْ نَحْنُ نَمُوت وَأَنْتُمْ أَيْضًا تَمُوتُونَ আমরা তোমরা ব্যতীত মরব না বরং আমরাও মরব তোমরাও মরবে, এতে শরীক করার অর্থ স্পষ্ট। সুতরাং واو যুক্ত করাতে কোন অসিদ্ধতা নেই। যেমন পূর্বে বলা হয়েছে যে, অনেক ইমাম واو সহ বর্ণনা করেছেন। (‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৫১৯৭)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - সালাম

৪৬৩৭-[১০] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমাদেরকে আহলে কিতাব (অর্থাৎ- ইয়াহূদী ও নাসারাগণ) সালাম দেয়, তখন তোমরাও বলবে ’’ওয়া আলায়কুম’’ (অর্থাৎ- তোমাদের ওপরও)। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ السَّلَامِ

وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِذَا سَلَّمَ عَلَيْكُمْ أَهْلُ الكتابِ فَقولُوا: وَعَلَيْكُم

وعن انس قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: اذا سلم عليكم اهل الكتاب فقولوا: وعليكم

ব্যাখ্যাঃ ইয়াহূদী নাসারাদের প্রথমে সালাম দেয়া হারাম।

কাযী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ ‘আলকামাহ্ ও নাখ‘ঈ (রহিমাহুমাল্লাহ) জায়িয বলেছেন। আওযা‘ঈ (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এটা এজন্য যে, যদি তুমি তাদেরকে সালাম দাও তবে সৎ ব্যক্তিরা সালাম দিবে। আর যদি তাদেরকে পরিহার কর তবে ভালো ব্যক্তিরা পরিহার করবে।

মুসলিম ও অমুসলিম কাফির মিশ্রিত মাজলিসে সালাম দেয়া জায়িয। তবে এক্ষেত্রে শুধু মুসলিমদের উদ্দেশে সালাম প্রদান করবে। যেমন পরবর্তী হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলিম ও মুশরিক মিশ্রিত মাজলিসে সালাম দিয়েছেন। (শারহুন নাবাবী ১৪শ খন্ড, হাঃ ২১৬৪)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - সালাম

৪৬৩৮-[১১] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইয়াহূদীদের একটি দল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমাতে উপস্থিত হওয়ার জন্য অনুমতি চাইল এবং বলল : ’’আসসামু ’আলায়কুম’’ অর্থাৎ- ’’তোমাদের মৃত্যু হোক’’। আমি তাদের উত্তরে বললামঃ ’’বরং তোমাদের মৃত্যু হোক’’ এবং ’’অভিসম্পাতও হোক’’। (এ কথা শুনে) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ হে ’আয়িশাহ্! আল্লাহ তা’আলা স্বয়ং কোমল, তিনি সকল কাজে কোমলতাকে পছন্দ করেন।

তখন আমি (’আয়িশাহ্) বললামঃ আপনি কি শুনেননি, তারা কি বলেছে? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ আমি তো তাদের জবাবে ’’ওয়া ’আলায়কুম’’ বলে দিয়েছি। অপর এক রিওয়ায়াতে শুধু عَلَيْكُمْ রয়েছে, وَاوْ অক্ষরটি উল্লেখ করা হয়নি। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

বুখারী’র আরেক বর্ণনায় আছে, ’আয়িশাহ্ সিদ্দিকা (রাঃ) বলেনঃ একদল ইয়াহূদী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে উপস্থিত হয়ে বলল : ’’আসসামু ’আলায়কা’’ (তোমার মৃত্যু হোক)। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ ’’ওয়া ’আলায়কুম’’ (তোমাদেরও মৃত্যু হোক)। ’আয়িশাহ্ (রাঃ) বললেনঃ ’’তোমাদের মৃত্যু হোক, আল্লাহর অভিসম্পাত হোক, আল্লাহর গযব তোমাদের ওপর পতিত হোক।’’ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে ’আয়িশাহ্! থামো, তোমার কোমল হওয়া উচিত, কঠোরতা পরিহার করো, অশ্লীল ভাষা হতে বেঁচে থাকো। ’আয়িশাহ্ (রাঃ) বললেনঃ আপনি কি শুনেননি, তারা কি বলল? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তুমি কি শুননি, আমি কি জবাব দিয়েছি? আমি তাদের কথাকে তাদের দিকেই ফিরিয়ে দিয়েছি। তাদের ব্যাপারে আমার দু’আ কবুল হবে, আমার জন্য তাদের দু’আ কবুল হবে না। মুসলিম-এর অপর বর্ণনায় রয়েছে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ হে ’আয়িশাহ্! তুমি অযথা অশ্লীল কথা বলো না। কেননা আল্লাহ তা’আলা অশালীনতা ও অশ্লীলতা পছন্দ করেন না।

بَابُ السَّلَامِ

وَعَن عائشةَ قَالَتْ: اسْتَأْذَنَ رَهْطٌ مِنَ الْيَهُودِ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالُوا السَّامُ عَلَيْكُمْ. فَقُلْتُ: بَلْ عَلَيْكُمُ السَّامُ وَاللَّعْنَةُ. فَقَالَ: «يَا عَائِشَةُ إِنَّ اللَّهَ رَفِيقٌ يُحِبُّ الرِّفْقَ فِي الْأَمْرِ كُلِّهِ» قُلْتُ: أَوَلَمْ تَسْمَعْ مَا قَالُوا؟ قَالَ: «قَدْ قُلْتُ وَعَلَيْكُمْ» . وَفِي رِوَايَةٍ: «عَلَيْكُمْ» وَلم يذكر الْوَاو
وَفِي رِوَايَةٍ لِلْبُخَارِيِّ. قَالَتْ: إِنَّ الْيَهُودَ أَتَوُا النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم فَقَالُوا: السَّام عَلَيْكَ. قَالَ: «وَعَلَيْكُمْ» فَقَالَتْ عَائِشَةُ: السَّامُ عَلَيْكُمْ وَلَعَنَكُمُ اللَّهُ وَغَضِبَ عَلَيْكُمْ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَهْلًا يَا عَائِشَةُ عليكِ بالرِّفق وإِياك والعنفَ والفُحْشَ» . قَالَت: أَو لم تسمع مَا قَالُوا؟ قَالَ: «أَو لم تَسْمَعِي مَا قُلْتُ رَدَدْتُ عَلَيْهِمْ فَيُسْتَجَابُ لِي فِيهِمْ وَلَا يُسْتَجَابُ لَهُمْ فِيَّ»
وَفِي رِوَايَةٍ لِمُسْلِمٍ. قَالَ: «لَا تَكُونِي فَاحِشَةً فَإِنَّ اللَّهَ لَا يُحبُّ الفُحْشَ والتفحُّش»

وعن عاىشة قالت: استاذن رهط من اليهود على النبي صلى الله عليه وسلم فقالوا السام عليكم. فقلت: بل عليكم السام واللعنة. فقال: «يا عاىشة ان الله رفيق يحب الرفق في الامر كله» قلت: اولم تسمع ما قالوا؟ قال: «قد قلت وعليكم» . وفي رواية: «عليكم» ولم يذكر الواو وفي رواية للبخاري. قالت: ان اليهود اتوا النبي صلى الله عليه وسلم فقالوا: السام عليك. قال: «وعليكم» فقالت عاىشة: السام عليكم ولعنكم الله وغضب عليكم فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «مهلا يا عاىشة عليك بالرفق واياك والعنف والفحش» . قالت: او لم تسمع ما قالوا؟ قال: «او لم تسمعي ما قلت رددت عليهم فيستجاب لي فيهم ولا يستجاب لهم في» وفي رواية لمسلم. قال: «لا تكوني فاحشة فان الله لا يحب الفحش والتفحش»

ব্যাখ্যাঃ (الرِّفْقَ) শব্দের অর্থ لين الجانب তথা কোমল বা সদয় আচরণ করা। এটা العنف তথা কঠোর আচরণ এর বিপরীত। الفحش এর অর্থ মন্দ কথা বা কাজ। কেউ সীমালঙ্ঘনকে الفحش বলেছেন।

এ হাদীসটি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মহৎ চরিত্র ও পূর্ণ ধৈর্যশীলতার এক উজ্জ্বল প্রমাণ। এতে মহানুভবতা, সদয় আচরণ, সহিষ্ণুতা, কঠোরতা অবলম্বনের প্রয়োজন ব্যতিরেকে মানুষের সাথে কোমল আচরণের প্রতি উৎসাহ প্রদানের ইঙ্গিত সুস্পষ্ট বিদ্যমান। (শারহুন নাবাবী ১৪শ খন্ড, হাঃ ২১৬৫)

এ হাদীস থেকে আরো বুঝা যায় যে, যখন কোন যালিম কারো প্রতি বদ্দু‘আ করে, তখন তার প্রার্থনা কবুল করা হয় না। যেহেতু আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَمَا دُعَاءُ الْكَافِرِينَ إِلَّا فِي ضَلَالٍ ‘‘কাফিরদের আহবান ভ্রষ্টতা ছাড়া কিছুই নয়’’- (সূরাহ্ আর্ রা‘দ ১৩ : ১৪)। (ফাতহুল বারী ১১শ খন্ড, হাঃ ৬৪০১)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - সালাম

৪৬৩৯-[১২] উসামাহ্ ইবনু যায়দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক সমবেত জনতার নিকট দিয়ে গমন করলেন, যাদের মধ্যে রয়েছে মুসলিম, মুশরিক তথা পৌত্তলিক ও ইয়াহূদী। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদেরকে সালাম দিলেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ السَّلَامِ

وَعَن أُسامة بن زيد: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَرَّ بِمَجْلِسٍ فِيهِ أَخْلَاطٌ مِنَ الْمُسْلِمِينَ وَالْمُشْرِكِينَ عَبَدَةِ الْأَوْثَانِ وَالْيَهُودِ فَسَلَّمَ عَلَيْهِمْ

وعن اسامة بن زيد: ان رسول الله صلى الله عليه وسلم مر بمجلس فيه اخلاط من المسلمين والمشركين عبدة الاوثان واليهود فسلم عليهم

ব্যাখ্যাঃ ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ মুসলিম ও কাফির মিশ্রিত মাজলিসের পাশ দিয়ে গমন করার সুন্নাত হলো ব্যাপকার্থক শব্দের দ্বারা সালাম প্রদান করে মুসলিমদেরকে উদ্দেশ্য করা।

ইবনুল ‘আরাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ অনুরূপভাবে সুন্নাতের অনুসারী ও বিদ্‘আতী, ন্যায়পরায়ণ ও পাপী এবং বন্ধু ও শত্রু মিশ্রিত মাজলিসে সালাম দেয়া বৈধ।

কতিপয় লোক ইয়াহূদী নাসারাদের সালাম প্রদান করা যাবে বলে মত পেশ করেন। তারা এর দলীল হিসেবে কুরআনে বর্ণিত ইব্রাহীম (আ.)-এর পিতা সম্পর্কে উক্তিটি এবং ইমাম ত্বীবী কর্তৃক ইবনু ‘উয়াইনাহ্-এর হাদীসটি উল্লেখ করেন। যেহেতু ইব্রাহীম (আ.) তার পিতাকে বলেন, ‘‘সালা-মুন ‘আলায়কা’’। অন্য জায়গায় আল্লাহ বলেন, لَا يَنْهَاكُمُ اللهُ عَنِ الَّذِينَ لَمْ يُقَاتِلُوكُمْ فِي الدِّينِ ‘‘দীনের ব্যাপারে যারা তোমাদের সাথে যুদ্ধ করেনি, আর তোমাদেরকে তোমাদের ঘর-বাড়ী থেকে বের ক’রে দেয়নি...’’- (সূরাহ্ আল মুমতাহিনাহ্ ৬০ : ৮)।

কাযী ‘ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) এ ধরনের আয়াতের এবং ইবরাহীম (আ.)-এর উক্তির জবাব দিয়ে বলেন, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো তার সাথে সন্ধি করা বা তার থেকে দূরে থাকতে চাওয়া। আসলে এটা সম্ভাষণের জন্য ছিল না। কোন সালাফে সলিহীন এক্ষেত্রে স্পষ্টরূপে বলেছেন যে, وقل سلام فسوف تعلمون আয়াতটি যুদ্ধের আয়াত দ্বারা মানসূখ হয়ে গেছে।

ইমাম ত্ববারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ) ও উসামাহ্ ইবনু যায়দ (রাঃ)-এর হাদীসের মাঝে বৈপরীত্য নেই। কারণ, আবূ হুরায়রা (রাঃ)-এর হাদীসটি ‘আম এবং উসামার হাদীসটি খাস। এটি বন্ধুত্ব, প্রতিবেশী ও প্রতিদান দেয়ার মতো প্রয়োজন ছাড়া সালাম দেয়ার বিষয়টির কারণে আবূ হুরায়রা (রাঃ)-এর হাদীস থেকে খাস হয়েছে। এখানে সালাম দেয়া নিষেধ বলতে শারী‘আতসম্মত সালাম দেয়া নিষেধ উদ্দেশ্য। অতএব যদি কেউ এমন শব্দ প্রয়োগ করে সালাম দেয় যাতে অমুসলিমরা বের হয়ে যায়, তাহলে সেটা জায়িয। যেমন কেউ বলল, اَلسَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلٰى عِبَادِ اللهِ الصَّالِحِينَ ‘‘আমাদের ও আল্লাহর সকল পুণ্যবান বান্দার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক’’ এ ধরনের বাক্য ব্যবহার করা জায়িয। যেমনিভাবে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিরাক্বিল ও তার মতো অন্যদেরকে যখন চিঠি লিখতেন তখন বলতেন, السَّلَامُ عَلٰى مَنِ اتَّبَعَ الْهُدٰى অর্থাৎ- যে হিদায়াতের (ইসলামের) অনুসারী তার ওপরে সালাম।

‘আবদুর রাযযাক থেকে কতাদাহ্ বলেনঃ যখন তুমি আহলে কিতাবদের বাড়ীতে প্রবেশ করবে তখন السَّلَامُ عَلٰى مَنِ اتَّبَعَ الْهُدٰى বলে সালাম দিবে।

আবূ মালিক-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, যখন তুমি মুশরিকদের সালাম দিবে তখন বলবে, اَلسَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلٰى عِبَادِ اللهِ الصَّالِحِينَ তাহলে তারা ভাববে তুমি তাদেরকে সালাম দিয়েছ অথচ তুমি তাদের নিকট থেকে সালাম ফিরিয়ে নিয়েছ। (ফাতহুল বারী ১১শ খন্ড, হাঃ ৬২৫৪)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - সালাম

৪৬৪০-[১৩] আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা রাস্তার উপর বসা হতে বিরত থাকো। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমাদের রাস্তায় বসা ছাড়া গত্যন্তর নেই। কারণ, আমরা তথায় বসে প্রয়োজনীয় কথাবার্তা সমাধা করি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ যদি তোমরা তথায় বসতে বাধ্যই হও, তবে রাস্তার হক আদায় করবে। সাহাবীগণ (পুনঃ) জিজ্ঞেস করলেনঃ হে আল্লাহর রসূল! রাস্তার হক কি? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ চক্ষু বন্ধ রাখা, কাউকে কষ্ট না দেয়া, সালামের জবাব দেয়া, ভালো কাজের আদেশ করা এবং মন্দ কাজের নিষেধ করা। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ السَّلَامِ

وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِيَّاكُمْ وَالْجُلُوسَ بِالطُّرُقَاتِ» . فَقَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا لَنَا مِنْ مَجَالِسِنَا بُدٌّ نَتَحَدَّثُ فِيهَا. قَالَ: «فَإِذَا أَبَيْتُمْ إِلَّا الْمَجْلِسَ فَأَعْطُوا الطَّرِيقَ حَقَّهُ» . قَالُوا: وَمَا حَقُّ الطَّرِيقِ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ: «غَضُّ الْبَصَرِ وَكَفُّ الْأَذَى وَرَدُّ السَّلَام والأمرُ بِالْمَعْرُوفِ وَالنَّهْي عَن الْمُنكر»

وعن ابي سعيد الخدري عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: «اياكم والجلوس بالطرقات» . فقالوا: يا رسول الله ما لنا من مجالسنا بد نتحدث فيها. قال: «فاذا ابيتم الا المجلس فاعطوا الطريق حقه» . قالوا: وما حق الطريق يا رسول الله قال: «غض البصر وكف الاذى ورد السلام والامر بالمعروف والنهي عن المنكر»

ব্যাখ্যাঃ কাযী ‘ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এ হাদীসে সাহাবীদের প্রতি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নির্দেশ ওয়াজিব ছিল না। মূলতঃ এটা ছিল উৎসাহ প্রদানমূলক বা উত্তমতার নিরিখে। যদি সাহাবীগণ এটাকে ওয়াজিব মনে করতেন তাহলে তারা পুনর্বার এটাকে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে পেশ করতেন না।

যারা মনে করেন এটা ওয়াজিব নির্দেশ ছিল না তারা এ হাদীসকে কখনো দলীল হিসেবে পেশ করে থাকেন।

রাস্তার হক সম্পর্কে একাধিক রিওয়ায়াত বর্ণিত হয়েছে, এসব হাদীস থেকে হাফিয ইবনু হাজার ‘আসকালানী (রহিমাহুল্লাহ) চিন্তা ভাবনা করে ১৪টি আদবের ইঙ্গিত প্রদান করেন। সম্মানিত ভাষ্যকার এ চৌদ্দটি আদবকে একত্রিত করে তিনটি চরণে উল্লেখ করেন যা নিম্নে প্রদত্ত হলো,

আমি রাস্তায় বসতে চাওয়া ব্যক্তির জন্য সৃষ্টির সেরা মানুষের (মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর) নিকট থেকে আদাবসমূহ একত্রিত করেছি :

১. সালাম বিস্তার কর, সুন্দর কথা বল, হাঁচিদাতা ও সালাম প্রদানকারীর উপযুক্ত জবাব দাও,

২. বোঝা বহনকারী ও মাযলূমকে সাহায্য কর, দুঃখির সাহায্যে পাশে দাঁড়াও, পথিক ও দিশেহারাকে পথের দিশা দাও,

৩. সৎকাজের আদেশ কর, মন্দ কাজ থেকে বাধা দান কর, কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে দাও, দৃষ্টি অবনমিত রাখ, আমাদের প্রভু (আল্লাহর) বেশি বেশি জিকর কর।

রাস্তায় বসা নিষেধ হওয়ার কতগুলো তাৎপর্য রয়েছে। যেমন যুবতী মহিলার ফিৎনার আশংকা, তাদের প্রতি নযর পড়ার ভয়। কারণ প্রয়োজনে রাস্তায় মহিলার গমন করা নিষেধ নয়। আল্লাহ ও মুসলিমদের অধিকার সম্পর্কিত বিষয়াদি এসে পড়া যা বাড়ীতে থাকা অবস্থায় আবশ্যক নয়। যা একাই করা দরকার তা রাস্তায় একাই সম্পাদন করার সুযোগ পায় না। মন্দ কোন কিছু চোখে পড়া ও সৎকর্ম বাধাগ্রস্ত হওয়া। এসব ক্ষেত্রে আদেশ করা ও নিষেধ করা মুসলিমের ওয়াজিব দায়িত্ব। যদি সে এগুলো পরিহার করে তাহলে সে অপরাধী হবে। অনুরূপভাবে সে তার নিকটে গমনকারী ও সালাম প্রদানকারীর মুখোমুখি হয়। কখনো এদের সংখ্যা এত বেশি হয় যে, তাদের জবাব দিতে অক্ষম হয়ে পড়ে। অথচ তার জবাব দেয়া ওয়াজিব। ফলে সে পাপী হয়ে যায়। আর মানুষকে ফিৎনা ও সাধ্যাতিরিক্ত কোন কিছুর সম্মুখীন না হতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সে কারণ ঐসব বিষয়ের নিষ্পত্তিকল্পে শারী‘আত প্রণেতা মানুষদেরকে রাস্তায় না বসতে সচেতন করেছেন। এর পরেও সাহাবীরা যখন তাদের প্রয়োজন, যেমন- তাদের পারস্পারিক খোঁজ-খবর নেয়া, দীন সম্পর্কে আলোচনা, বৈষয়িক কল্যাণকর কর্মকাণ্ড, ভালো জিনিসের ব্যাপারে পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আত্মিক প্রশান্তির কথা রসূলের সামনে তুলে ধরলেন তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে উপরোক্ত সমস্যা দূরীকরণে সুনির্দেশনা দান করলেন।

কাযী ‘ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ হাদীসে মুসলিমদের পারস্পরিক সদাচরণের জাগরণ ফুটে উঠেছে। অবশ্য রাস্তায় উপবিষ্ট ব্যক্তির পাশ দিয়ে অসংখ্য মানুষ গমনাগমন করে। আবার কখনো তারা তাদের প্রয়োজনীয় বিষয়সমূহ ও পথঘাট সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে থাকে। এ সময় তাদের সাথে হাসিমুখে কথা বলা আবশ্যক। সে যেন তাদের সাথে রূঢ় আচরণ না করে, সামগ্রিকভাবে এটাই হচ্ছে রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক জিনিস সরানো।

ইবনু হাজার ‘আসকালানী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ গমনকারী থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরানোর অর্থ হলো এমনভাবে না বসা যাতে রাস্তা সংকুচিত হয়ে যায়। অথবা বাড়ীর দরজায় না বসা যাতে লোক কষ্ট পায় অথবা তার পরিবার-পরিজন বা যেটা গোপনীয় কিছু যা এর দ্বারা উন্মোচিত হয়ে যায়।

(ফাতহুল বারী ১১শ খন্ড, হাঃ ৬২২৯)

ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরানোর মধ্যে গীবত, কুধারণা, গমনকারীরদের হেয় মনে করা থেকে বিরত থাকা এর অন্তর্ভুক্ত। তেমনিভাবে যখন রাস্তায় এমন লোক বসে থাকে যাদেরকে পথিক ভয় পায় এবং বিকল্প পথ না পেয়ে নিজেদের প্রয়োজনীয় কাজে যেতে বাধাপ্রাপ্ত হয়। (শারহুন নাবাবী ১৪শ খন্ড, হাঃ ২১২১)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - সালাম

৪৬৪১-[১৪] আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে উপরিউক্ত ঘটনায় আরো বর্ণনা করেন যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ (পথহারাকে) পথপ্রদর্শন করা। [ইমাম আবূ দাঊদ (রহিমাহুল্লাহ) আবূ সা’ঈদ আল খুদরী(রাঃ) বর্ণিত হাদীসের শেষাংশে এ অংশটুকু উল্লেখ করেছেন।][1]

بَابُ السَّلَامِ

وَعَنْ أَبِي
هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي هَذِهِ الْقِصَّةِ قَالَ: «وَإِرْشَادُ السَّبِيلِ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ عَقِيبَ حَدِيثِ الْخُدْرِيِّ هَكَذَا

وعن ابي هريرة عن النبي صلى الله عليه وسلم في هذه القصة قال: «وارشاد السبيل» . رواه ابو داود عقيب حديث الخدري هكذا

ব্যাখ্যাঃ (وَإِرْشَادُ السَّبِيلِ) ‘‘আর পথিককে পথ দেখানো’’। এটা هداية الضال ‘‘বিভ্রান্ত বা বিপথগামীকে পথের দিশা দেয়া’’ থেকে অধিকতর ব্যাপক অর্থসম্পন্ন। (‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৪৮০৮)


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - সালাম

৪৬৪২-[১৫] ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি উপরিউক্ত ঘটনায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি এটাও বলেছেন- ’’এবং মাযলূমের ফরিয়াদে সাড়া দান করবে এবং পথহারাকে পথপ্রদর্শন করবে’’।

ইমাম আবূ দাঊদ (রহিমাহুল্লাহ) এ হাদীসটি আবূ হুরায়রা (রাঃ)-এর হাদীসের পর এভাবেই বর্ণনা করেন। গ্রন্থকার বলেনঃ আমি এ দু’টি হাদীস বুখারী ও মুসলিমে পাইনি।[1]

بَابُ السَّلَامِ

وَعَنْ عُمَرَ
عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي هَذِهِ الْقِصَّةِ قَالَ: «وَتُغِيثُوا الْمَلْهُوفَ وَتَهْدُوا الضالَّ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد عقيب حَدِيث أبي هُرَيْرَة هَكَذَا وَلم أجدهما فِي «الصَّحِيحَيْنِ»

وعن عمر عن النبي صلى الله عليه وسلم في هذه القصة قال: «وتغيثوا الملهوف وتهدوا الضال» . رواه ابو داود عقيب حديث ابي هريرة هكذا ولم اجدهما في «الصحيحين»

ব্যাখ্যাঃ تُغِيثُوا শব্দটি الاغاثة মাসদার থেকে গৃহীত। এর অর্থ الاغاثة সাহায্য বা সহায়তা দান করা। ملهوف অর্থ নিরুপায় মাযলূম, যে দুঃখ করে ফরিয়াদ করে।
(تَهْدُوا الضالَّ) এর অর্থ ترشدوه الى الطريق ‘তোমরা তাকে পথ নির্দেশ করবে’। (‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৪৮০৯)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১৫ পর্যন্ত, সর্বমোট ১৫ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে