পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ

৪৬২৫-[২০] সামুরাহ্ ইবনু জুনদুব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, (ফজরের সালাতের পরে) অধিকাংশ সময় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীদেরকে জিজ্ঞেস করতেন, তোমাদের কেউ কোন স্বপ্ন দেখেছ কি? যে ব্যক্তি কোন স্বপ্ন দেখত আল্লাহ তা’আলা তাওফীক দিলে তা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে বর্ণনা করত। একদিন সকালে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদেরকে বললেনঃ আজ রাতে দু’জন আগন্তুক (স্বপ্নের মধ্যে) আমার কাছে এসেছিল। তারা আমাকে উঠাল এবং বলল, আমাদের সঙ্গে চলুন। আমি তাদের সঙ্গে চললাম। অতঃপর প্রথম অধ্যায়ে যে একটি দীর্ঘ হাদীস বর্ণিত হয়েছে তার অনুরূপ বিস্তারিত ঘটনাটি তিনি বর্ণনা করেছেন।

অবশ্য হাদীসে এমন কিছু কথা বর্ধিত আছে, যা পূর্বে বর্ণিত হাদীসে উল্লেখ করা হয়নি। আর তা হলো, সম্মুখে আমরা একটি ঘন সন্নিবিষ্ট বাগানে এসে উপনীত হলাম। বাগানটি বসন্তের হরেক রকম ফুলে সুশোভিত ছিল। হঠাৎ বাগানের মধ্যস্থলে আমার দৃষ্টি এমন এক ব্যক্তির উপরে পড়ল, যিনি এত দীর্ঘকায় ছিলেন যে, উপরের দিকে তাঁর মাথা দেখা আমার জন্য কষ্টকর ছিল। তার চতুষ্পার্শ্বে এত বিপুল সংখ্যক শিশু ছিল, যাদেরকে আমি কখনো দেখিনি। আমি সঙ্গীদ্বয়কে জিজ্ঞেস করলামঃ এ লোকটি কে? আর এরাই বা কারা? কিন্তু তারা আমাকে বললেনঃ সামনে চলুন।

সুতরাং আমরা সম্মুখের দিকে অগ্রসর হয়ে বিরাট একটি বাগানে এসে উপনীত হলাম। এরূপ বড় ও সুন্দর বাগান এর পূর্বে আর আমি কখনো দেখিনি। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তারা আমাকে বললেনঃ বাগানের বৃক্ষে আরোহণ করুন। আমরা তাতে আরোহণ করলে এমন একটি শহর আমাদের নজরে পড়ল যা সোনা ও রূপার ইট দ্বারা নির্মিত ছিল। আমরা ঐ শহরের দরজায় পৌঁছলাম, দরজা খুলতে বললে আমাদের জন্য দরজা খোলা হলো। তার ভিতরে প্রবেশ করে আমরা কতিপয় লোকের সাক্ষাৎ পেলাম। তাদের শরীরের অর্ধেক ছিল যেসব রূপ তুমি দেখেছ তার চেয়ে সৌন্দর্যপূর্ণ। আর অর্ধেক ছিল তোমার দেখা রূপের মধ্যে অত্যধিক বিশ্রী।

রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমার সঙ্গী দু’জন ঐ সমস্ত লোকেদের উদ্দেশে বলল : যাও, তোমরা এ ঝরণায় নেমে পড়ো। তথায় প্রস্থের দিকে প্রবহমান একটি ঝরণা ছিল। তার পানি ছিল একেবারে সাদা। তারা গিয়ে তাতে নামলো। অতঃপর নহরের পানিতে ডুব দিয়ে তারা আমাদের কাছে ফিরে এলো। দেখা গেল, তাদের কদাকৃতি দূর হয়ে গিয়েছে। এক্ষণে তারা খুব সুন্দর আকৃতিবিশিষ্ট হয়ে গেছে।

হাদীসটির বর্ধিত এ কথাগুলোর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে, বাগানে যে দীর্ঘাকৃতির লোকটিকে দেখেছিলেন, তিনি ছিলেন ইব্রাহীম (আ.)।আর তাঁর চারপাশের যে বালকগুলো ছিল তারা এ সমস্ত শিশু যারা দীনে ফিতরাতের (ইসলামের) উপর মৃত্যুবরণ করেছে। বর্ণনাকারী বলেন, তখন মুসলিমদের কেউ কেউ জিজ্ঞেস করলেনঃ হে আল্লাহর রসূল! আর মুশরিকদের সন্তান? জবাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তারাও সেখানে। আর ঐ সমস্ত লোক যাদের শরীরের অর্ধেক অংশ সুন্দর ছিল আর বাকি অংশ ছিল কদাকার, তারা সে সমস্ত লোক, যারা ভালোর সাথে মন্দ কাজও মিশিয়েছিল। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা তাদের ত্রুটিসমূহ ক্ষমা করে দেন। (বুখারী)[1]

الْفَصْلُ الثَّالِثُ

عَن سَمُرَةَ بْنِ جُنْدَبٍ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِمَّا يَكْثُرُ أَنْ يَقُولَ لِأَصْحَابِهِ: «هَلْ رَأَى أَحَدٌ مِنْكُمْ مِنْ رُؤْيَا؟» فَيَقُصُّ عَلَيْهِ مَنْ شَاءَ اللَّهُ أَنْ يَقُصَّ وَإِنَّهُ قَالَ لَنَا ذَاتَ غَدَاةٍ: إِنَّهُ أَتَانِي اللَّيْلَةَ آتِيَانِ وَإِنَّهُمَا ابْتَعَثَانِي وَإِنَّهُمَا قَالَا لِي: انْطَلِقْ وَإِنِّي انْطَلَقْتُ مَعَهُمَا . وَذَكَرَ مِثْلَ الْحَدِيثِ الْمَذْكُورِ فِي الْفَصْلِ الْأَوَّلِ بِطُولِهِ وَفِيهِ زِيَادَةٌ لَيْسَتْ فِي الْحَدِيثِ الْمَذْكُورِ وَهِيَ قَوْلُهُ: فَأَتَيْنَا عَلَى رَوْضَةٍ مُعْتِمَةٍ فِيهَا مِنْ كُلِّ نَوْرِ الرَّبِيعِ وَإِذَا بَيْنَ ظَهْرَيِ الرَّوْضَةِ رَجُلٌ طَوِيلٌ لَا أَكَادُ أَرَى رَأْسَهُ طُولًا فِي السَّمَاءِ وَإِذَا حَوْلَ الرَّجُلِ مِنْ أَكْثَرِ وِلْدَانٍ رَأَيْتُهُمْ قَطُّ قُلْتُ لَهُمَا: مَا هَذَا مَا هَؤُلَاءِ؟ قَالَ: قَالَا لِيَ: انْطَلِقْ فَانْطَلَقْنَا فَانْتَهَيْنَا إِلَى رَوْضَةٍ عَظِيمَةٍ لَمْ أَرَ رَوْضَةً قَطُّ أَعْظَمَ مِنْهَا وَلَا أَحْسَنَ . قَالَ: قَالَا لِيَ: ارْقَ فِيهَا . قَالَ: «فَارْتَقَيْنَا فِيهَا فَانْتَهَيْنَا إِلَى مَدِينَةٍ مَبْنِيَّةٍ بِلَبِنِ ذَهَبٍ وَلَبِنِ فِضَّةٍ فَأَتَيْنَا بَابَ الْمَدِينَةِ فَاسْتَفْتَحْنَا فَفُتِحَ لَنَا فَدَخَلْنَاهَا فَتَلَقَّانَا فِيهَا رِجَالٌ شَطْرٌ مِنْ خَلْقِهِمْ كَأَحْسَنِ مَا أَنْتَ رَاءٍ وَشَطْرٌ مِنْهُمْ كَأَقْبَحِ مَا أَنْتَ رَاءٍ» . قَالَ: قَالَا لَهُمُ: اذْهَبُوا فَقَعُوا فِي ذَلِكَ النَّهَرِ قَالَ: «وَإِذَا نَهَرٌ مُعْتَرِضٌ يَجْرِي كَأَنَّ مَاءَهُ الْمَحْضُ فِي الْبَيَاضِ فَذَهَبُوا فَوَقَعُوا فِيهِ ثُمَّ رَجَعُوا إِلَيْنَا قَدْ ذَهَبَ ذَلِكَ السُّوءُ عَنْهُمْ فَصَارُوا فِي أَحْسَنِ صُورَةٍ» وَذَكَرَ فِي تَفْسِير هَذِه الزِّيَادَة: «وَأما الرجلُ الطويلُ الَّذِي فِي الرَّوْضَةِ فَإِنَّهُ إِبْرَاهِيمُ وَأَمَّا الْوِلْدَانُ الَّذِينَ حَوْلَهُ فَكُلُّ مَوْلُودٍ مَاتَ عَلَى الْفِطْرَةِ» قَالَ: فَقَالَ بَعْضُ الْمُسْلِمِينَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ وَأَوْلَادُ الْمُشْرِكِينَ؟ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «وَأَوْلَادُ الْمُشْرِكِينَ وَأَمَّا الْقَوْمُ الَّذِينَ كَانُوا شطرٌ مِنْهُم حسن وَشطر مِنْهُمْ حَسَنٌ وَشَطْرٌ مِنْهُمْ قَبِيحٌ فَإِنَّهُمْ قَوْمٌ قَدْ خَلَطُوا عَمَلًا صَالِحًا وَآخَرَ سَيِّئًا تَجَاوَزَ الله عَنْهُم» . رَوَاهُ البُخَارِيّ

عن سمرة بن جندب قال: كان رسول الله صلى الله عليه وسلم مما يكثر ان يقول لاصحابه: «هل راى احد منكم من رويا؟» فيقص عليه من شاء الله ان يقص وانه قال لنا ذات غداة: انه اتاني الليلة اتيان وانهما ابتعثاني وانهما قالا لي: انطلق واني انطلقت معهما . وذكر مثل الحديث المذكور في الفصل الاول بطوله وفيه زيادة ليست في الحديث المذكور وهي قوله: فاتينا على روضة معتمة فيها من كل نور الربيع واذا بين ظهري الروضة رجل طويل لا اكاد ارى راسه طولا في السماء واذا حول الرجل من اكثر ولدان رايتهم قط قلت لهما: ما هذا ما هولاء؟ قال: قالا لي: انطلق فانطلقنا فانتهينا الى روضة عظيمة لم ار روضة قط اعظم منها ولا احسن . قال: قالا لي: ارق فيها . قال: «فارتقينا فيها فانتهينا الى مدينة مبنية بلبن ذهب ولبن فضة فاتينا باب المدينة فاستفتحنا ففتح لنا فدخلناها فتلقانا فيها رجال شطر من خلقهم كاحسن ما انت راء وشطر منهم كاقبح ما انت راء» . قال: قالا لهم: اذهبوا فقعوا في ذلك النهر قال: «واذا نهر معترض يجري كان ماءه المحض في البياض فذهبوا فوقعوا فيه ثم رجعوا الينا قد ذهب ذلك السوء عنهم فصاروا في احسن صورة» وذكر في تفسير هذه الزيادة: «واما الرجل الطويل الذي في الروضة فانه ابراهيم واما الولدان الذين حوله فكل مولود مات على الفطرة» قال: فقال بعض المسلمين: يا رسول الله واولاد المشركين؟ فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «واولاد المشركين واما القوم الذين كانوا شطر منهم حسن وشطر منهم حسن وشطر منهم قبيح فانهم قوم قد خلطوا عملا صالحا واخر سيىا تجاوز الله عنهم» . رواه البخاري

হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৪: স্বপ্ন (كتاب الرؤيا) 24. Visions

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ

৪৬২৬-[২১] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সবচেয়ে নিকৃষ্টতম অপবাদ হলো, কারো নিজ চক্ষুদ্বয়কে এমন জিনিস দেখানো, যা তারা দেখেনি। (বুখারী)[1]

الْفَصْلُ الثَّالِثُ

وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مِنْ أَفْرَى الْفِرَى أَنْ يُرِيَ الرَّجُلُ عَيْنَيْهِ مَا لم تريا» . رَوَاهُ البُخَارِيّ

وعن ابن عمر ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: «من افرى الفرى ان يري الرجل عينيه ما لم تريا» . رواه البخاري

ব্যাখ্যাঃ ইমাম সুয়ূত্বী (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেনঃ নিকৃষ্টতম অপবাদ হলো কারো নিকট এমন স্বপ্নের কথা বলা যা সে স্বপ্নে দেখেনি। কেননা স্বপ্ন হলো নুবুওয়াতের একাংশ। সুতরাং জাগ্রত অবস্থায় মিথ্যা বলা অপেক্ষা ঘুমন্ত সময়ের মিথ্যা জঘন্যতম অপরাধ। কেননা মানুষ ঘুমন্ত অবস্থার স্বপ্নের কথা বিশ্বাস করবে। তাতে যাচাই-বাছাই করার কোন উপায় নেই।

‘আল্লামা ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেনঃ ‘‘নিকৃষ্ট অপবাদ’’ হলো কোন লোক তার দু’ চোখ দ্বারা দেখেনি তা বর্ণনা করা। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; ফাতহুল বারী ১২শ খন্ড, হাঃ ৭০৪৩)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৪: স্বপ্ন (كتاب الرؤيا) 24. Visions

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ

৪৬২৭-[২২] আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ভোর রাত্রের স্বপ্ন সবচেয়ে সত্য। (তিরমিযী ও দারিমী)[1]

الْفَصْلُ الثَّالِثُ

وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «أَصْدَقُ الرُّؤْيَا بِالْأَسْحَارِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ والدارمي
نِهَايَة الْجُزْء الثَّانِي

وعن ابي سعيد عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: «اصدق الرويا بالاسحار» . رواه الترمذي والدارمي نهاية الجزء الثاني

ব্যাখ্যাঃ অত্র হাদীসের মাধ্যমের জানা যায় ভোর রাতের স্বপ্ন অধিক সত্য হয়। কেননা এ সময়ে আল্লাহ তা‘আলা সর্বনিম্নের আকাশে নেমে আসেন। বান্দার ওপর আল্লাহর রহমত ক্ষমা অবতীর্ণ হয়। আর এ সময়ে বিশেষভাবে ফজরের সালাতে মালায়িকাহ্ (ফেরেশতামণ্ডলী) নাযিল হয়। শয়তান মানুষকে কুমন্ত্রণা দিতে পারে না। তাই এ সময়ের স্বপ্ন অধিক সত্য হয়। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৪: স্বপ্ন (كتاب الرؤيا) 24. Visions
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৩ পর্যন্ত, সর্বমোট ৩ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে