পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - শুভ ও অশুভ লক্ষণ
"بَاب الفأل والطيرة" ’’শুভ ও অশুভ লক্ষণ’’ الفأل ’হামযা’র সাথে ব্যবহৃত হয়েছে। শব্দটি অধিকাংশ সময় ’হামযা’ ব্যতীত ব্যবহৃত হয়। নিহায়াহ্ গ্রন্থে এসেছে যে, الفأل শব্দটি মাহমূয তথা মাঝে ’হামযা’ দিয়ে ব্যবহৃত হয়েছে। যা ভালো ও মন্দ উভয় প্রকার অর্থ বুঝাতে ব্যবহৃত হয়। আর الطيرة শব্দটির ’ত্বোয়া’ বর্ণে যের আর ’ইয়া’ বর্ণে যবর আবার কখনও ’ইয়া’ বর্ণে সাকিন যোগেও আসে। এ শব্দটি শুধু মন্দের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। আবার কদাচিৎ আনন্দের ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হয়। কমূস প্রণেতা বলেনঃ الفأل হলো الطيرة-এর বিপরীত। অসুস্থ ব্যক্তি শুনে হে সালিম, হে ত্বালিব, হে ওয়াজিদ! সে এ ডাক শুনে এটাকে ভালো ও মন্দ উভয় ক্ষেত্রেই ব্যবহৃর করতে পারে। আর الطيرة-এর সময় মন্দের ক্ষেত্রে। আমি বলি, ’কমূস’ থেকে যে বিষয়টি শিক্ষণীয় তা হলো, الفأل ভালোর সাথে খাস বা নির্দিষ্ট। আবার কখনও তা মন্দের ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হয়। আর الطيرة শব্দটি কেবলমাত্র মন্দের ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয়। অতএব নির্গত হওয়ার মূলেই শব্দ দু’টি ভিন্নার্থে ব্যবহৃত হয়।
নিহায়াহ্ গ্রন্থ থেকে আরো বুঝা যায় যে, নির্গত হওয়ার মূলেই الفأل শব্দটি ’আম আর الطيرة শব্দটি খাস। কতক ব্যবহারের একটি অপরটির সমার্থবোধক। হাদীসসমূহ থেকে বুঝা যায় যে, الفأل থেকে الطيرة শব্দটি ’আম। যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথায় বাহ্যিকভাবে বুঝা যায় যে, لَا طِيَرَةَ وَخَيْرُهَا الْفَأْلُ কোন কুলক্ষণ বা অশুভ লক্ষণ নেই আর তার উত্তম হলো الفأل বা শুভ লক্ষণ।
’আরবের অধিবাসীদের এ অভ্যাস ছিল যে, তারা যখন কোন কাজের জন্য ভ্রমণের ইচ্ছা করত তখন গাছের উপর থেকে কোন পাখিকে উড়াত, যদি পাখিটি ডানদিকে যেত তখন যাত্রা শুভ বলে মনে করত এবং ভ্রমণের জন্য বের হয়ে যেত। আর যদি পাখিটি বাম দিকে উড়ে যেত তাহলে এ ভ্রমণ বা যাত্রাকে অকল্যাণ বা অশুভ বলে মনে করত এবং যাত্রা থেকে বিরত থাকত।
’আল্লামা ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ الفأل এবং الطيرة-এর মাঝে পার্থক্য বুঝা যায়, আনাস থেকে বর্ণিত একটি মারফূ’ হাদীসে لَا عَدْوَى وَلَا طِيَرَةَ وَيُعْجِبُنِي الْفَأْلُ "قَالُوا: وَمَا الْفَأْلُ؟ قَالَ:" كَلِمَةٌ طَيِّبَةٌ রোগে সংক্রামিত হওয়া বলতে কিছুই নেই, কোন কিছুতে অশুভ নেই। তবে الْفَأْلُ আমার ভালো লাগে। সাহাবীগণ বললেন, الفأل কি জিনিস? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ’’ভালো কথা’’। আমি বলি, এটি কতই না চমৎকার কথা যে, ’আমভাবে الطيرة-কে নিষেধ করা হয় তবে তার দুই প্রকারের এক প্রকারকে নির্দিষ্ট করে দেয়া হল। (আর এক প্রকার বৈধ) তা হল- ভালো কথা বলা। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
৪৫৭৬-[১] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ কোন কিছুকে অশুভ গণ্য করো না। অবশ্য কিছু শুভ লক্ষণ গ্রহণ করা উত্তম। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেনঃ শুভ লক্ষণ কী? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তোমাদের কারো পক্ষ কোন ভালো কথা, যা সে শুনতে পায়। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ الْفَأْلِ وَالطِّيَرَةِ
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «لَا طِيَرَةَ وَخَيْرُهَا الْفَأْلُ» قَالُوا: وَمَا الْفَأْلُ؟ قَالَ: «الْكَلِمَةُ الصَّالِحَة يسْمعهَا أحدكُم»
ব্যাখ্যাঃ (لَا طِيَرَةَ) জাহিলী যুগের লোকেরা কোন সফরে বা প্রয়োজনে বের হওয়ার পূর্বে পাখি উড়াত। পাখি যদি উড়ে ডান দিক দিয়ে যেত তবে তারা এটাকে বারাকাত মনে করত। তখন তারা তাদের সফরে বা প্রয়োজনে বের হত। আর পাখি যদি উড়ে বাম দিকে যেত সেটাকে তারা অশুভ লক্ষণ মনে করত এবং তাদের সফর বা প্রয়োজন থেকে না বের হয়ে ফিরে আসত। আর এ কাজ তাদেরকে কল্যাণ থেকে অনেক সময় ধরে বিরত রাখত। এ কারণে শারী‘আত এটা নিষেধ করেছে এবং তা বাতিল বলে ঘোষণা করেছে। আর সংবাদ দিয়েছে যে, উপকার বা অপকার করার মতো কোন ক্ষমতাই তার নেই। আর এটাই হলো রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী (لَا طِيَرَةَ)-এর অর্থ। (শারহুন নাবাবী ১৪শ খন্ড, হাঃ ২২২৩)
(خَيْرُهَا الْفَأْلُ) অর্থাৎ ভালো কথা দ্বারা সুন্দর আচরণ বুঝানো হয়েছে। طَيْرٌ ‘ত্বয়র’ তথা পাখি থেকে এটা গ্রহণ করা হয়নি। সম্ভবত ব্যাখ্যাকার এ প্রশ্নটি দূর করার ইচ্ছা করে বলেছেন অর্থাৎ الْفَأْلُ خَيْرٌ مِنَ الطِّيَرَةِ শুভ লক্ষণ (ফাল) অশুভ লক্ষণ থেকে বহু উত্তম। এর অর্থ হলো الْفَأْلُ কল্যাণের সাথে সীমাবদ্ধ। যেমন الطِّيَرَةِ অকল্যাণের সাথে সীমাবদ্ধ। অতএব ধারাবাহিকতা এদিক থেকে যে, মধু সিরকা থেকে অধিক মিষ্টি। শীত গ্রীষ্ম থেকে অধিক ঠাণ্ডা।
‘আল্লামা ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ (خَيْرُهَا) মুয়ান্নাস যমীরটা الطِّيَرَةِ-এর দিকে ফিরে। আর এখান থেকে জানা যায় যে, তাতে কোন কল্যাণ নেই। এটা মহান আল্লাহর বাণীর মতই- أَصْحَابُ الْجَنَّةِ يَوْمَئِذٍ خَيْرٌ مُسْتَقَرًّا ‘‘সেদিন জান্নাতবাসীগণ থাকবেন উত্তম আবাসস্থলে’’- (সূরাহ্ আল ফুরকান ২৫ : ২৪)। অথবা এটা তাদের কথার মতই الصَّيْفُ أَحَرُّ مِنَ الشِّتَاءِ তথা গ্রীষ্ম শীত থেকে বেশি গরম। এখানে যেমন শীতের মধ্যে কোন গরম নেই ঠিক তেমনি হাদীসের শব্দ لَا طِيَرَةَ وَخَيْرُهَا الْفَأْلُ এখানেও طِيَرَةَ -এর মধ্যে কোন কল্যাণ নেই, বরং কল্যাণ সবটুকুই রয়েছে الْفَأْلُ-এর মধ্যে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
(يسْمعهَا أحدكُم) সেই কথাটি কেউ ভালো মনে করে শুনে। যেমন হারানো জিনিসের মালিক বলল, হে প্রাপ্ত ব্যক্তি। যেমন- ব্যবসায়ী বলর, হে খাবার বিক্রেতা। মুসাফির বলল, হে নিরাপদ ব্যক্তি..... ইত্যাদি।
‘আল্লামা ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ الْفَأْلُ-কে অনুমোদন দেয়া ও طِيَرَةَ -কে নিষেধ করার কারণ হলো যখন কোন ব্যক্তি কোন জিনিস দেখে সেটাকে ভালো মনে করল আর তার প্রয়োজন পূরণের জন্য তাকে উৎসাহিত করল। অতএব তার উচিত হলো ঐ কাজটা করে ফেলা। আর এর পরে যদি সে কোন ক্ষতিকর জিনিস দেখল, আর তার প্রয়োজন পূরণে তাকে বিরত রাখল, তাহলে তা গ্রহণ করা তার জন্য বৈধ হবে না। বরং সে তার পথে বেরিয়ে পড়বে। যদি ওটাকে অশুভ মনে করে যাত্রা বন্ধ করে দেয় তাহলে সেই ক্ষেত্রে সেটা الطِّيَرَةِ বলে গণ্য হবে। কারণ সে অশুভ লক্ষণ হিসেবে সেটাকে গণ্য করেছে।
মহান আল্লাহ বলেন, إِنَّا تَطَيَّرْنَا بِكُمْ ‘‘তোমাদেরকে অশুভ লক্ষণ মনে করি’’ - (সূরাহ্ ইয়াসীন ৩৬ : ১৮)। তিনি আরো বলেন, طَائِرُكُمْ مَعَكُم অর্থাৎ ‘‘তোমাদের অশুভ লক্ষণ গ্রহণের কারণে’’- (সূরাহ্ ইয়াসীন ৩৬ : ১৯)। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)