পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - আংটির বর্ণনা
৪৩৯১-[৯] ’আবদুল্লাহ ইবনু জা’ফার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ডান হাতে আংটি পরতেন। (ইবনু মাজাহ)[1]
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ جَعْفَرٍ قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَتَخَتَّمُ فِي يَمِينه. رَوَاهُ ابْن مَاجَه
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - আংটির বর্ণনা
৪৩৯২-[১০] আর এ হাদীস আবূ দাঊদ ও নাসায়ী ’আলী (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন।
وَرَوَاهُ أَبُو دَاوُد وَالنَّسَائِيّ عَن عَليّ
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - আংটির বর্ণনা
৪৩৯৩-[১১] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাম হাতে আংটি পরতেন। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يتختم فِي يسَاره. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যাঃ কেউ কেউ বাম হাতে আংটি পরিধানের বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়েছেন। আংটি যখন বাম হাতে পরিধানের বৈধতা থাকবে, তখন ডান হাতে পরিধান করা আরো অগ্রগণ্য হবে। উসামাহ্ ইবনু যায়দ (রাঃ)-এর সূত্র নাফি‘ (রহিমাহুল্লাহ)-এর বর্ণনায় ডান হাতে পরিধানের কথা রয়েছে। আর নাফি‘-এর সূত্রে ‘আবদুল ‘আযীয ইবনু উবাই রওয়াদ-এর বর্ণনায় বাম হাতে পরিধানের কথা রয়েছে। হাফিয ‘আসকালানী (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেনঃ নাফি‘ কর্তৃক বর্ণিত বাম হাতে আংটি পরিধানের বর্ণনাটি শায ও উক্ত হাদীসের বর্ণনাকারীর সংখ্যাও কম এবং তাদের মুখস্থশক্তিও ডান হাতে আংটি পরিধানের বর্ণিত হাদীসের রাবীদের মুখস্থশক্তির তুলনায় অনেকটাই দুর্বল। (‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৪২২৩)
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - আংটির বর্ণনা
৪৩৯৪-[১২] ’আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ডান হাতে রেশম এবং বাম হাতে স্বর্ণ নিয়ে বললেনঃ এ বস্তু দু’টি (দুনিয়াতে) আমার উম্মাতের পুরুষদের জন্য হারাম। (আহমাদ, আবূ দাঊদ ও নাসায়ী)[1]
وَعَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَخَذَ حَرِيرًا فَجَعَلَهُ فِي يَمِينِهِ وَأَخَذَ ذَهَبًا فَجَعَلَهُ فِي شِمَالِهِ ثُمَّ قَالَ: «إِنَّ هَذَيْنِ حَرَامٌ عَلَى ذُكُورِ أُمتي» . رَوَاهُ أَحْمد وَأَبُو دَاوُد وَالنَّسَائِيّ
ব্যাখ্যাঃ আলোচ্য হাদীসটি জামহূর ‘উলামার সমর্থনে দলীল : রেশমী কাপড় ও স্বর্ণ পুরুষদের জন্য হারাম এবং মহিলাদের জন্য তা বৈধ। আর এ মতের সমর্থনে তিরমিযীতে আবূ মূসা আল আশ্‘আরী (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ রেশমের পোশাক পরিধান করা এবং স্বর্ণ ব্যবহার করা আমার উম্মাতের পুরুষদের জন্য হারাম করা হয়েছে এবং মহিলাদের জন্য হালাল করা হয়েছে । (‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৪০৫৩)
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - আংটির বর্ণনা
৪৩৯৫-[১৩] মু’আবিয়াহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চিতা বাঘের চামড়ার তৈরি গদিতে সওয়ার হতে এবং পুরুষদেরকে স্বর্ণ ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন। তবে কর্তিত মিহিন অংশবিশেষ ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছেন। (আবূ দাঊদ ও নাসায়ী)[1]
وَعَن مُعَاوِيَةُ إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَى عَنْ رُكُوبِ النُّمُورِ وَعَنْ لُبْسِ الذَّهَبِ إِلَّا مُقَطَّعًا. رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالنَّسَائِيُّ
ব্যাখ্যাঃ উল্লেখিত হাদীসটি স্বর্ণের আংটি পরিধান করা ঘৃণিত হওয়ার উপর প্রমাণ করে। আর এটা হারাম হওয়ার ব্যাপারে বুখারী ও মুসলিমসহ অন্যান্য হাদীস গ্রন্থে অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে। ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ স্বর্ণের আংটি মহিলাদের জন্য বৈধ এবং পুরুষদের জন্য হারাম- এ ব্যাপারে সকল বিদ্বানদের ঐকমত্য রয়েছে। (‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৪২১৮)
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - আংটির বর্ণনা
৪৩৯৬-[১৪] বুরয়দাহ্ হতে বর্ণিত। একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাঁসার তৈরি আংটি পরিহিত এক ব্যক্তিকে বললেনঃ কি ব্যাপার! আমি যে তোমার নিকট হতে মূর্তির গন্ধ পাচ্ছি? তখন সে আংটিটি খুলে ফেলে দিলো। অতঃপর সে লোহার তৈরি একটি আংটি পরে এলো। এবার তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ কি ব্যাপার! আমি যে তোমাকে জাহান্নামীদের অলঙ্কার পরিহিত অবস্থায় দেখছি। এবারও সে আংটিটি খুলে ফেলে দিলো। অতঃপর সে বলল : হে আল্লাহর রসূল! তবে আমি কিসের আংটি পরব? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, রূপার দ্বারা। কিন্তু তার পরিমাণ যেন এক মিসকাল হতে কম হয়। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ ও নাসায়ী)[1]
ইমাম মুহয়িইউস্ সুন্নাহ্ বলেনঃ সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) হতে নারীদের মোহর সংক্রান্ত অধ্যায়ে একটি সহীহ হাদীস বর্ণিত আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে বলেছেনঃ বিবির মোহর আদায়ের জন্য কোন জিনিস খোঁজ করে দেখো। যদি কিছুই না পাও, অন্তত লোহার একটি আংটি হলেও নিয়ে আসো।
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ, এর সনদে আছে ‘‘আবদুল্লাহ ইবনু মুসলিম’’ য‘ঈফ রাবী। ‘আওনুল মা‘বূদ ১১/১৯১, হাঃ ৪২২৩, তুহফাতুল আহওয়াযী ৫/৩৯৫, হাঃ ১৭৮৫।
وَعَنْ بُرَيْدَةَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لِرَجُلٍ عَلَيْهِ خَاتَمٌ مِنْ شَبَهٍ: «مَا لِي أَجِدُ مِنْكَ رِيحَ الْأَصْنَامِ؟» فَطَرَحَهُ ثُمَّ جَاءَ وَعَلَيْهِ خَاتَمٌ مِنْ حَدِيدٍ فَقَالَ: «مَا لِي أَرَى عَلَيْكَ حِلْيَةَ أَهْلِ النَّارِ؟» فَطَرَحَهُ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ مِنْ أَيِّ شَيْءٍ أَتَّخِذُهُ؟ قَالَ: «مِنْ وَرِقٍ وَلَا تُتِمَّهُ مِثْقَالا» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَأَبُو دَاوُد وَالنَّسَائِيّ
ব্যাখ্যাঃ বিশুদ্ধ সনদে আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বরং তোমরা রৌপ্য দ্বারা আংটি বানিয়ে তা ব্যবহার কর। হাদীসটি আবূ দাঊদ বর্ণনা করেছেন এবং এর সানাদ সহীহ। উল্লেখিত হাদীসটি পুরুষের জন্য রৌপ্য ব্যবহার করা বৈধতার উপর প্রমাণ করে। রৌপ্য ব্যবহার করা পুরুষের জন্য হারাম- এ বিষয়টি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত নয়। পুরুষের জন্য স্বর্ণ ও রেশমের কাপড় ব্যবহার করা হারাম- এ মর্মে একাধিক মুতাওয়াতির হাদীস বর্ণিত রয়েছে। সুতরাং রৌপ্যের ব্যবহার দলীল ছাড়া হারাম করা যাবে না। আর এটার ব্যবহার হারাম হওয়ার বিষয়টি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত নয়। (‘আওনূল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ১৭৮৩)
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - আংটির বর্ণনা
৪৩৯৭-[১৫] ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দশটি অভ্যাসকে (কাজকে) পছন্দ করতেন না- ১. সুগন্ধি (যা’ফরান ইত্যাদি দ্বারা প্রস্তুতকৃত) হলুদ রং, ২. (কালো খিযাব লাগিয়ে) বার্ধক্যের ছাপ লুকানোর, ৩. ইযার (লুঙ্গি) ঝুলিয়ে পরা, ৪. স্বর্ণের আংটি ব্যবহার করা, ৫. পরপুরুষের সম্মুখে স্বীয় সাজ-সৌন্দর্য প্রকাশ করা, ৬. গুটি খেলা করা, ৭. সূরাহ্ আল ফালাক ও সূরাহ্ আন্ নাস ব্যতীত অন্য কিছু দ্বারা ঝাড়ফুঁক করা, ৮. তা’বীয গলায় বাঁধা, ৯. অপাত্রে বীর্য প্রবাহিত করা (যিনা-ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া) এবং ১০. শিশু সন্তানের অনিষ্ট করা (অর্থাৎ- পুনরায় গর্ভধারণের জন্য, যার দরুন দুপোষ্য শিশুর খাদ্য দুধের অপ্রতুলতা দেখা যায়) অবশ্য রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে হারাম বলেননি। (আবূ দাঊদ ও নাসায়ী)[1]
হাদীসটি মুনকার য‘ঈফ হওয়ার কারণ, এর সনদে আছে ‘‘কাসিম ইবনু হাস্সান’’। ইমাম বুখারী বলেনঃ এই রাবী মুনকারুল হাদীস। তাকে চেনা যায় না। অন্য একজন বর্ণনাকারী হলেন, ‘আবদুর রহমান ইবনু হারমালাহ্’। এই রাবীর সম্পর্কে ইমাম বুখারী বলেনঃ তার হাদীস সহীহ নয়। যাহাবী ইবনু মাস্‘ঊদ-এর ছাত্রদের মধ্যে ‘‘আবদুর রহমান ইবনু হারমালাহ্’’ নামে কেউ আছে মর্মে আমি অবগত নই। আল জারহু ওয়াত্ তা‘দীল। (জাওয়ামিউল কালিম সফ্টওয়্যার)
وَعَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَكْرَهُ عَشْرَ خِلَالٍ: الصُّفْرَةَ يَعْنِي الخلوق وتغييرَ الشيب وجر الأزرار وَالتَّخَتُّمَ بِالذَّهَبِ وَالتَّبَرُّجَ بِالزِّينَةِ لِغَيْرِ مَحِلِّهَا وَالضَّرْبَ بِالْكِعَابِ وَالرُّقَى إِلَّا بِالْمُعَوِّذَاتِ وَعَقْدَ التَّمَائِمِ وَعَزْلَ الْمَاءِ لِغَيْرِ مَحِلِّهِ وَفَسَادَ الصَّبِيِّ غَيْرَ مُحَرِّمِهِ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وَالنَّسَائِيّ
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - আংটির বর্ণনা
৪৩৯৮-[১৬] ইবনুয্ যুবায়র(রাঃ) হতে বর্ণিত। একদিন তাদের আযাদকৃত এক দাসী যুবায়রের একটি কন্যাকে নিয়ে ’উমার ইবনুল খত্ত্বাব-এর নিকট গেল। সে সময় মেয়েটির পায়ে ঝুমঝুমি বাঁধা ছিল। তখন ’উমার (রাঃ) ঝুমঝুমটি কেটে ফেললেন এবং বললেনঃ আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, প্রত্যেক বাজনার সাথে শয়তান থাকে। (আবূ দাঊদ)[1]
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ, এর সনদে আছে ‘‘মাওলাতুন লাহুম’’, যার পরিচয় জানা যায় না আর আমির ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু খুবায়র ‘উমার -এর যুগ পাননি। বিস্তারিত দেখুন- ‘আওনুল মা‘বুদ ১১/১৯৭ পৃঃ, হাঃ ৪২৩০।
وَعَن ابنِ الزبيرِ: أَنَّ مَوْلَاةً لَهُمْ ذَهَبَتْ بِابْنَةِ الزُّبَيْرِ إِلَى عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ وَفِي رِجْلِهَا أَجْرَاسٌ فَقَطَعَهَا عمر وَقَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «مَعَ كُلِّ جَرَسٍ شَيْطَانٌ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যাঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শত্রুর মাঝে শত্রুর অজান্তেই ঢুকে পড়া পছন্দ করেন যাতে হঠাৎ করে শত্রুর অঞ্চলে প্রবেশ করতে পারেন। এর ফলে তিনি চতুষ্পদ প্রাণীর গলায় ঝুমঝুমি ঝুলানো অপছন্দ করতেন। এখানে جَرَسٌ বা ঝুমঝুমি শব্দটি ব্যাপকতার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে, অতএব ছোট বড় সব ধরনের ঝুমঝুমি চতুষ্পদ প্রাণীর কানে, গর্দানে কিংবা যেখানেই হোক না কেন, আর ঝুমঝুমি পিতল, লোহা, স্বর্ণ কিংবা রৌপ্য যে বস্তু থেকে তৈরি হোক না কেন সর্বক্ষেত্রেই তা নিষিদ্ধ। (‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৪২২৬)
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - আংটির বর্ণনা
৪৩৯৯-[১৭] ’আবদুর রহমান ইবনু হাইয়্যান আল আনসারীর আযাদকৃত দাসী বুনানাহ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন তিনি (দাসী) ’আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর নিকট উপস্থিত ছিলেন। এমন সময় ’আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর নিকট একটি ছোট মেয়ে আনা হলো, তার পরনে ছিল ঝুমঝুমি এবং তা বাজছিল। (ঐ মেয়েটিকে যে মহিলা এনেছিল, তাকে লক্ষ্য করে) ’আয়িশাহ্ (রাঃ) বললেনঃ তার ঝুমঝুমি কেটে না ফেলা পর্যন্ত তুমি তাকে নিয়ে ঢুকো না। আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, যে ঘরে বাদ্য থাকে সে ঘরে মালাক (ফেরেশতা) প্রবেশ করেন না। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ بُنَانَةَ مَوْلَاةِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ حَيَّانَ الْأنْصَارِيّ كانتْ عندَ عائشةَ إِذْ دُخِلَتْ عَلَيْهَا بِجَارِيَةٍ وَعَلَيْهَا جَلَاجِلُ يُصَوِّتْنَ فَقَالَتْ: لَا تُدْخِلُنَّهَا عَلَيَّ إِلَّا أَنْ تُقَطِّعُنَّ جَلَاجِلَهَا سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «لَا تَدْخُلُ الْمَلَائِكَةُ بَيْتًا فِيهِ أَجْرَاس» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যাঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে সহীহ মুসলিমে বর্ণিত রয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা‘আলার মালাক (ফেরেশতা) কখনো সে দলের সঙ্গি হয় না যে দলে কুকুর ও ঝুমঝুমি জাতীয় কিছু থাকে। আলোচ্য হাদীসে উল্লেখিত ঝুমঝুমি বলতে আওয়াজ সম্পন্ন সে সকল বস্তু বুঝানো হয় যা চতুষ্পদ প্রাণীর গলায় ও শিশুদের পায়ে ঝুলানো হয়। (‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৪২২৭)
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - আংটির বর্ণনা
৪৪০০-[১৮] ’আবদুর রহমান ইবনু ত্বরাফাহ্ (রহঃ) হতে বর্ণিত। কুলাবের যুদ্ধে তার দাদা ’আরফাজাহ্ ইবনু আস’আদ-এর নাক কাটা গিয়েছিল। তিনি রূপার দ্বারা একটি নাক তৈরি করেছিলেন। ফলে তাতে দুর্গন্ধ দেখা দিলো। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে স্বর্ণের নাক তৈরি করতে নির্দেশ করলেন। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ ও নাসায়ী)[1]
وَعَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ طَرَفَةَ أَنَّ جَدَّهُ عَرفجةَ بن أسعد قُطِعَ أَنْفُهُ يَوْمَ الْكُلَابِ فَاتَّخَذَ أَنْفًا مِنْ وَرِقٍ فَأَنْتَنَ عَلَيْهِ فَأَمَرَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يَتَّخِذَ أَنْفًا مِنْ ذَهَبٍ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَأَبُو دَاوُد وَالنَّسَائِيّ
ব্যাখ্যাঃ উল্লেখিত হাদীসের উপর ভিত্তি করেই ‘উলামাগণ প্রয়োজনে স্বর্ণ দিয়ে নাক বানিয়ে নেয়া ও স্বর্ণ দ্বারা দাঁত বাঁধাই করা বৈধ করেছেন। তাহযীবুত্ তাহযীবে একাধিক বিদ্বান থেকে বর্ণিত রয়েছে, নিশ্চয় তারা তাদের নড়ে যাওয়া বা ভেঙ্গে যাওয়া দাঁতগুলোকে স্বর্ণ দ্বারা বাঁধাই করেছিলেন এবং আলোচ্য হাদীসটিই তারই প্রমাণ। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৭৭০)
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - আংটির বর্ণনা
৪৪০১-[১৯] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তার কোন প্রিয়জনকে আগুনের কড়া পরানো পছন্দ করে, সে যেন তাকে স্বর্ণের কড়া পরায় এবং যে ব্যক্তি তার কোন প্রিয়জনকে আগুনের হার পরানো পছন্দ করে, সেও যেন তাকে স্বর্ণের হার পরায়। আর যে ব্যক্তি তার কোন প্রিয়জনকে আগুনের বালা পরানো পছন্দ করে, সে যেন তাকে সোনার বালা পরায়। তবে তোমরা রূপা ব্যবহার করতে পারো, এতে নিষেধাজ্ঞা নেই। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ أَحَبَّ أَنْ يُحَلِّقَ حَبِيبَهُ حَلَقَةً مِنْ نَارٍ فَلْيُحَلِّقْهُ حَلَقَةً مِنْ ذَهَبٍ وَمَنْ أَحَبَّ أَنْ يُطَوِّقَ حَبِيبَهُ طَوْقًا مِنْ نَارٍ فَلْيُطَوِّقْهُ طَوْقًا مِنْ ذَهَبٍ وَمَنْ أَحَبَّ أَنْ يُسَوِّرَ حَبِيبَهُ سِوَارًا مِنْ نَار فليسوره مِنْ ذَهَبٍ وَلَكِنْ عَلَيْكُمْ بِالْفِضَّةِ فَالْعَبُوا بِهَا» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যাঃ ইবনুল মালিক (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এখানে কোন বস্তু নিয়ে খেলা করা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, কোন বস্তু যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে ব্যবহার করা। অর্থাৎ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী (فَالْعَبُوا بِهَا) বা তা দ্বারা তোমরা খেলা কর। এর উদ্দেশ্য হলো রৌপ্যকে তোমরা যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে ব্যবহার করতে পার। আর পুরুষদের জন্য শুধু আংটি এবং বিভিন্ন যুদ্ধাস্ত্র এটা দ্বারা তৈরি করা যাবে। ‘আল্লামা শাওকানী (রহিমাহুল্লাহ) এ হাদীস থেকে দলীল গ্রহণ করেছেন যে, পুরুষের জন্যও রৌপ্য ব্যবহার করা বৈধ। (‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৪২৩১)
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - আংটির বর্ণনা
৪৪০২-[২০] আসমা বিনতু ইয়াযীদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে নারী গলায় সোনার হার পরিধান করল, কিয়ামতের দিন তার গলায় অনুরূপ আগুনের হার পরিধান করানো হবে। আর যে নারী স্বীয় কানের মধ্যে সোনার বালি পরিধান করবে, কিয়ামতের দিন তার কানে তার অনুরূপ আগুনের বালি পরানো হবে। (আবূ দাঊদ ও নাসায়ী)[1]
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ, এর সনদে আছে ‘‘মাহমূদ ইবনু ‘আমর’’ নামক ব্যক্তি, যিনি য‘ঈফ। তাহক্বীক মুসনাদে আহমাদ- শু‘আয়ব আরনাউত্বব : ২৭৬১৮।
وَعَن أَسْمَاءَ بِنْتِ يَزِيدَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «أَيُّمَا امْرَأَةٍ تَقَلَّدَتْ قِلَادَةً مِنْ ذَهَبٍ قُلِّدَتْ فِي عُنُقِهَا مِثْلُهَا مِنَ النَّارِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَأَيُّمَا امْرَأَةٍ جَعَلَتْ فِي أُذُنِهَا خُرْصًا مِنْ ذَهَبٍ جَعَلَ اللَّهُ فِي أُذُنِهَا مِثْلَهُ مِنَ النَّارِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالنَّسَائِيّ
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - আংটির বর্ণনা
৪৪০৩-[২১] হুযায়ফাহ্ (রাঃ)-এর ভগ্নি হতে বর্ণিত। একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ হে মহিলা সম্প্রদায়! তোমাদের জন্য এটা কি যথেষ্ট নয় যে, তোমরা কেবলমাত্র রূপার দ্বারা অলঙ্কার তৈরি করবে? সাবধান! তোমাদের যে মহিলা সোনার অলঙ্কার প্রস্তুত করবে এবং তা বেগানা পুরুষদের মধ্যে প্রকাশ করে বেড়াবে, তজ্জন্য তাকে কঠোর শাস্তি দেয়া হবে। (আবূ দাঊদ ও নাসায়ী)[1]
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ, এর সনদে ‘‘রিব্‘ঈ ইবনু হিরাশ’’-এর স্ত্রীর পরিচয় পাওয়া যায় না। দেখুন- তাহক্বীক মুসনাদে আহমাদ ২৩৪২৮, তাহক্বীক দারিমী- হুসায়ন সুলায়ম আসাদ : ২৬৪৫।
وَعَن أُخْت لِحُذَيْفَة أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «يَا مَعْشَرَ النِّسَاءِ أَمَا لَكُنَّ فِي الْفِضَّةِ مَا تُحَلَّيْنَ بِهِ؟ أَمَا إِنَّهُ لَيْسَ مِنْكُنَّ امْرَأَةٌ تُحَلَّى ذَهَبًا تُظْهِرُهُ إِلَّا عُذِّبَتْ بِهِ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وَالنَّسَائِيّ
ব্যাখ্যাঃ নারীদের জন্য স্বর্ণ ব্যবহার তখনই নিন্দনীয় যখন তা বেগানা মানুষের সামনে প্রকাশ করবে ও তা’ পরিধানের মাধ্যমে আত্ম-অহংকার প্রকাশ করবে। আর এক্ষেত্রে রৌপ্য স্বর্ণের মতই। মূল কথা হলো, নারীদের অলংকার লোকচক্ষুর সামনে প্রকাশ না করার প্রতি এটা একটি ধমক। নারীদের স্বর্ণের অলংকার পড়ে তা মানুষের সামনে প্রকাশ করলে এটা পরিধান করাই হারাম। এ কারণে সূয়ূত্বী (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী, ‘‘নিশ্চয় স্বর্ণ এবং রৌপ্য এ দু’টি আমার উম্মাতের পুরুষদের জন্য হারাম করা হয়েছে এবং নারীদের জন্য হালাল করা হয়েছে।’’ (শারহুন নাসায়ী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ৫১৫২)