পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - অতিথি আপ্যায়ন প্রসঙ্গে

৪২৪৩-[১] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন অবশ্যই মেহমানের সম্মান করে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন অবশ্যই ভালো কথা বলে, নতুবা যেন চুপ থাকে। অপর এক বর্ণনায় ’’প্রতিবেশী’’র স্থলে রয়েছে, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন অবশ্যই আত্মীয়ের হক আদায় করে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ الضِّيَافَةِ

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلْيُكْرِمْ ضَيْفَهُ وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلَا يُؤْذِ جَارَهُ وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلْيَقُلْ خَيْرًا أَوْ لِيَصْمُتْ» . وَفِي رِوَايَةٍ: بَدَلَ «الْجَارِ» وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلْيَصِلْ رحِمَه

عن ابي هريرة قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «من كان يومن بالله واليوم الاخر فليكرم ضيفه ومن كان يومن بالله واليوم الاخر فلا يوذ جاره ومن كان يومن بالله واليوم الاخر فليقل خيرا او ليصمت» . وفي رواية: بدل «الجار» ومن كان يومن بالله واليوم الاخر فليصل رحمه

ব্যাখ্যাঃ (مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ) ‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহর ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে’’ এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো পূর্ণ ঈমান রাখবে। এখানে আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান আনার কথা খাস বা নির্দিষ্টভাবে বলার কারণ হল- পরকালের প্রতি ইঙ্গিত। অর্থাৎ যে ব্যক্তি ঐ আল্লাহর প্রতি ঈমান আনল যিনি সৃষ্টি করেছেন। আর ঈমান নিয়ে আসলো যে, তাকে তার ‘আমলের প্রতিদান দেয়া হবে। সুতরাং সে অবশ্যই যেন উল্লেখিত বৈশিষ্ট্যগুলোর প্রতি ‘আমল করে। (ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৬০১৮)

(فَلْيُكْرِمْ ضَيْفَهٗ) ‘‘সে যেন অবশ্যই তার মেহমানকে সম্মান করে’’ সফর থেকে আগমনকারী ব্যক্তি যিনি মুক্বীম (বাড়ীতে অবস্থানকারী) ব্যক্তির নিকট আগমন করেন তাকে মেহমান (الضيف) বলা হয়। (‘আওনুল মা‘বূদ ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৩৭৪৪)

 মেহমানকে সম্মান করা হলো হাসি মুখে ও সুন্দর ভাষায় তার সাথে কথা বলা এবং প্রথম তিনদিন তাকে ভালো খাবার খেতে দেয়া, আর বাকী দিনগুলো স্বাভাবিক খাবার খেতে দেয়া। তিন দিনের পর সাদাকা বলে গণ্য করা হবে। সে ইচ্ছা হলে ভালো খাওয়াতে পারে আর ভালো নাও খাওয়াতে পারে। (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৯৬৭)

মেহমানকে সম্মান করার হুকুম ব্যক্তি ও অবস্থাভেদে ভিন্ন হতে পারে। কখনও ফরযে কিফায়াহ্ কখনও ফরযে ‘আইন, কখনও মুস্তাহাব। (ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৬০১৮)

(فَلَا يُؤْذِ جَارَهٗ) ‘‘তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়’’ এর অর্থ প্রতিবেশীকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করা। যেমন, সে ধার চাইলে ধার দেয়া, সহযোগিতা চাইলে সহযোগিতা করা, অসুস্থ হলে সেবা করা, তার ভালো কিছু হলে তাকে অভিনন্দন জানানো, তার খারাপ কিছু হলে তাকে সান্তবনা দেয়া, সে মৃত্যুবরণ করলে তার জানাযায় অংশগ্রহণ করা। কোন কিছু কিনলে তাকে হাদিয়া স্বরূপ দেয়া ইত্যাদি। (ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৬০১৮)

(فَلْيَقُلْ خَيْرًا أَوْ لِيَصْمُتْ) ‘‘যে যেন অবশ্যই ভালো কথা বলে, নতুবা যেন চুপ থাকে’’ এখানে প্রথম অংশ তথা ‘‘যে যেন অবশ্যই ভালো কথা বলে’’ এর দ্বারা খারাপ থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর দ্বিতীয় অংশ তথা ‘‘যেন চুপ থাকে’’ এর দ্বারা ফাযীলাত অর্থাৎ মর্যাদার দ্বারা অলংকৃত হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মোটকথা, যে ব্যক্তি ঈমান রাখে সে আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি কল্যাণকর কথা বলার মাধ্যমে ও অকল্যাণকর কথা থেকে চুপ থাকার মাধ্যমে সহনুভূতি দেখাবে। (ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৬০১৮)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব ২১: খাদ্য (كتاب الأطعمة) 21. Foods

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - অতিথি আপ্যায়ন প্রসঙ্গে

৪২৪৪-[২] আবূ শুরয়হ আল কা’বী (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন তার মেহমানের সম্মান করে। অতিথির জন্য উত্তম খানা-পিনার ব্যবস্থা করা চাই এক দিন ও এক রাত। আর মেহমানদারী হলো তিন দিন। এটার পর যা করবে তা হবে সাদাকা। মেহমানের জন্য জায়িয নয় এত সময় মেজবানের গৃহে অবস্থান করা যাতে তার কষ্ট হয়। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ الضِّيَافَةِ

وَعَنْ أَبِي شُرَيْحٍ الْكَعْبِيِّ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلْيُكْرِمْ ضَيْفَهُ جَائِزَتُهُ يَوْمٌ وَلَيْلَةٌ وَالضِّيَافَةُ ثَلَاثَةُ أَيَّامٍ فَمَا بَعْدَ ذَلِكَ فَهُوَ صَدَقَةٌ وَلَا يَحِلُّ لَهُ أَنْ يَثْوِيَ عِنْدَهُ حَتَّى يُحَرِّجَهُ»

وعن ابي شريح الكعبي ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: «من كان يومن بالله واليوم الاخر فليكرم ضيفه جاىزته يوم وليلة والضيافة ثلاثة ايام فما بعد ذلك فهو صدقة ولا يحل له ان يثوي عنده حتى يحرجه»

ব্যাখ্যাঃ (جَائِزَتُهٗ يَوْمٌ وَلَيْلَةٌ) এর ব্যাখ্যায় সুহায়লী বলেনঃ অর্থাৎ সে তার মেহমানকে এক দিন ও এক রাত ভালো খাবার খাওয়াবে। (ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৬১৩৫)

(وَالضِّيَافَةُ ثَلَاثَةُ أَيَّامٍ فَمَا بَعْدَ ذٰلِكَ فَهُوَ صَدَقَةٌ) ইবনু বাত্ত্বল (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এ প্রসঙ্গে মালিক (রহিমাহুল্লাহ)-কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, একদিন একরাত তাকে সম্মান করবে ও উপহার দিবে। আর তিনদিন মেহমানদারী করবে।

ইবনু হাজার (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ তিনদিন কী প্রথমদিন বাদে না প্রথমদিন সহ? এ নিয়ে মতভেদ আছে। আবূ ‘উবায়দ (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, প্রথমদিন তার প্রতি সদ্ব্যবহার করা জরুরী। আর দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিন তাদের স্বাভাবিক খাবার তাকেও খেতে দিবে, বেশি কিছু জোগার করবে না। অতঃপর তাকে একদিন ও রাতের দূরত্বের খাবার দিয়ে দিবে একে বলে "الجيزة" (আল জীযাহ্)।

খত্ত্বাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এর অর্থ হলো যখন কোন মেহমান আসে তখন তাকে একদিন একরাত ভালো খেতে দিবে ও উত্তম আচরণ করবে, আর বাকী দু’দিন তাকে স্বাভাবিক খাবার খেতে দিবে। যখন তিন দিন অতিবাহিত হয়ে গেল তখন তাকে যাই খাওয়াবে তা সাদাকা হবে। (ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৬১৩৫)

(حَتّٰى يُحَرِّجَهٗ) ‘‘যাতে তার কষ্ট হয়’’ যাতে সে সংকীর্ণতায় পড়ে যায়।

ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ মুসলিম-এর এক বর্ণনায় حَتّٰى يؤثمه ‘‘যাতে সে পাপে লিপ্ত হয়’’, কারণ সে অনেক দিন থাকার কারণে তাঁর গীবত করে বসবে, অথবা সে এমন আচরণ করবে যাতে মেহমান কষ্ট পাবে। অথবা মেহমান সম্পর্কে তার খারাপ ধারণা হবে। তবে যদি মেহমান তার মেজবানের (বাড়ীর মালিকের) অনুমতি নিয়ে থাকে অথবা তার ইচ্ছা সে বুঝতে পারে তবে কোন সমস্যা নেই। (ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৬১৩৫)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ শুরায়হ্ (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব ২১: খাদ্য (كتاب الأطعمة) 21. Foods

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - অতিথি আপ্যায়ন প্রসঙ্গে

৪২৪৫-[৩] ’উকবাহ্ ইবনু ’আমির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলামঃ আপনি আমাদেরকে কোথাও পাঠালে আমরা যদি এমন এক জনপদে গিয়ে পৌঁছি, যারা আমাদের মেহমানদারী করছে না। এমতাবস্থায় (আমাদের করণীয় সম্পর্কে) আপনার অভিমত কী? তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদেরকে বললেনঃ যদি তোমরা কোন জনপদে অবতরণ করো, আর যদি তারা তা না করে, তবে তাদের নিকট হতে তাদের কর্তব্য পরিমাণ মেহমানের হক আদায় করে নেবে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ الضِّيَافَةِ

وَعَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ قَالَ: قَلْتُ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّك تبعثنا فتنزل بِقَوْمٍ لَا يُقْرُونَنَا فَمَا تَرَى؟ فَقَالَ لَنَا: «إِنْ نَزَلْتُمْ بِقَوْمٍ فَأَمَرُوا لَكُمْ بِمَا يَنْبَغِي لِلضَّيْفِ فَاقْبَلُوا فَانْ لَمْ يَفْعَلُوا فَخُذُوا مِنْهُمْ حق الضَّيْف الَّذِي يَنْبَغِي لَهُم»

وعن عقبة بن عامر قال: قلت للنبي صلى الله عليه وسلم: انك تبعثنا فتنزل بقوم لا يقروننا فما ترى؟ فقال لنا: «ان نزلتم بقوم فامروا لكم بما ينبغي للضيف فاقبلوا فان لم يفعلوا فخذوا منهم حق الضيف الذي ينبغي لهم»

ব্যাখ্যাঃ জামহূর বিদ্বানগণ বিভিন্নভাবে হাদীসটির ব্যাখ্যা করেছেন। প্রথমতঃ এখানে নিরুপায়দেরকে বুঝানো হয়েছে। কেননা তাদেরকে মেহমানদারী করা ওয়াজিব। যখন তারা মেহমনদারী না করবে তখন তারা তাদের প্রয়োজনমত বাধাদানকারীদের সম্পদ থেকে গ্রহণ করবে।

দ্বিতীয়তঃ এখানে উদ্দেশ্য হলো তারা জিহবা দিয়ে, তাদের (মেজবানের) সম্মান-মর্যাদা নিয়ে নিবে। মানুষের কাছে তাদের দোষ-ত্রুটি, তাদের কৃপণতার কথা বলে দিবে, তাদেরকে তিরস্কার করবে এবং তাদেরকে (মেজবানকে) নিন্দা করবে।

তৃতীয়তঃ এ বিধান ইসলামের প্রথম যুগে ছিল। তখন মেহমানদারী ওয়াজিব ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে ইসলামের সম্প্রসারণের পর তা রহিত হয়ে গেছে। কাযী (রহিমাহুল্লাহ) এ রকম বর্ণনা করেছেন। এ মতটি দুর্বল অথবা বাতিল। কেননা এ মতের দাবীদার কে তা জানা যায় না।

চতুর্থতঃ আলোচ্য হাদীসের বিধান ঐ সকল জিম্মিদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে, যারা মুসলিমদের মেহমানদারী করার চুক্তিতে আবদ্ধ। আর মুসলিমরাও সেই জনপদে যাওয়ার পর ক্ষুধার তাড়নায় অস্থির হয়ে পড়েছে। এ মতটিও দুর্বল। এ রকম ঘটনা ‘উমার -এর সময়েই ঘটেছিল। (শারহুন নাবাবী ১২ম খন্ড, হাঃ ১৭২৭)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব ২১: খাদ্য (كتاب الأطعمة) 21. Foods

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - অতিথি আপ্যায়ন প্রসঙ্গে

৪২৪৬-[৪] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, কোন একদিন বা রাতের বেলায় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হয়েই আবূ বকর ও ’উমার -কে দেখতে পেলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন : কোন জিনিস তোমাদের উভয়কে এ মুহূর্তে ঘর হতে বের হতে বাধ্য করেছে? তারা উভয়ে বললেনঃ ক্ষুধার তাড়না। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ সে মহান সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! যে জিনিস তোমাদের দু’জনকে বের করেছে, আমাকেও সে জিনিস বের করেছে। আচ্ছা! চলো। অতঃপর তাঁরা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে চললেন এবং জনৈক আনসারীর বাড়িতে আসলেন। তখন তিনি ঘরে ছিলেন না। যখনই আনসারীর স্ত্রী রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখতে পেলেন, তখন তিনি তাঁকে খোশ আমদেদ জানালেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, অমুক (অর্থাৎ- তোমার স্বামী) কোথায়? তিনি বললেনঃ তিনি আমাদের জন্য মিষ্টি পানি আনতে গিয়েছেন। ঠিক এমন সময় আনসারী এসে উপস্থিত হলেন। তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সঙ্গীদ্বয়কে দেখে বললেনঃ আলহাম্দুলিল্লাহ! আজকের দিন আমার মতো সম্মানিত মেহমানের সৌভাগ্য লাভকারী আর কেউই নেই।

বর্ণনাকারী (রাবী) বলেন, এ কথা বলেই তিনি বাগানে চলে গেলেন এবং মেহমানদের জন্য এমন একটি খেজুরের ছড়া নিয়ে আসলেন, যার মধ্যে পাকা, শুকনা ও কাঁচা হরেক রকমের খেজুর ছিল। অতঃপর জিজ্ঞেস করলেন : অনুগ্রহ করে আপনারা এটা হতে খেতে থাকুন এবং তিনি একখানা ছুরি হাতে নিলেন। তাঁর উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে লক্ষ্য করে বললেনঃ সাবধান! দুধওয়ালা বকরী যাবাহ করবে না। অবশেষে তিনি তাদের জন্য একটি বকরী যাবাহ করলেন। তাঁরা বকরীর মাংস ও খেজুরের ছড়া হতে খেলেন এবং পানি পান করলেন। যখন তাঁরা খাদ্য ও পানীয় দ্বারা পরিতৃপ্ত হলেন, তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বকর ও ’উমার -কে লক্ষ্য করে বললেনঃ সে মহান সত্তার কসম! যাঁর হাতে আমার প্রাণ, কিয়ামতের দিন নিশ্চয় তোমরা এ সমস্ত নি’আমাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। ক্ষুধা তোমাদেরকে নিজ নিজ ঘর হতে বের করেছিল, অতঃপর গৃহে ফিরে যাওয়ার পূর্বেই তোমরা এ সমস্ত নি’আমাত লাভ করলে। (মুসলিম;[1] আবূ মাস্’ঊদ -এর হাদীস كَانَ رَجُلٌ مِنَ الْاَنْصَارِ ওয়ালীমাহ্’র অধ্যায়ে উল্লেখ করা হয়েছে।)

بَابُ الضِّيَافَةِ

وَعَن أبي هريرةَ قَالَ: خَرَجَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَاتَ يَوْم وَلَيْلَة فَإِذَا هُوَ بِأَبِي بَكْرٍ وَعُمَرَ فَقَالَ: «مَا أَخْرَجَكُمَا مِنْ بُيُوتِكُمَا هَذِهِ السَّاعَةَ؟» قَالَا: الْجُوعُ قَالَ: «وَأَنَا وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَأَخْرَجَنِي الَّذِي أَخْرَجَكُمَا قُومُوا» فَقَامُوا مَعَهُ فَأَتَى رَجُلًا مِنَ الْأَنْصَارِ فَإِذَا هُوَ لَيْسَ فِي بَيْتِهِ فَلَمَّا رَأَتْهُ المرأةُ قَالَت: مرْحَبًا وَأهلا فَقَالَ لَهَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَيْنَ فُلَانٌ؟» قَالَتْ: ذَهَبَ يَسْتَعْذِبُ لَنَا مِنَ الْمَاءِ إِذْ جَاءَ الْأَنْصَارِيُّ فَنَظَرَ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَصَاحِبَيْهِ ثُمَّ قَالَ: الْحَمْدُ لِلَّهِ مَا أَحَدٌ الْيَوْمَ أكرمَ أضيافاً مني قَالَ: فانطَلَق فَجَاءَهُمْ بِعِذْقٍ فِيهِ بُسْرٌ وَتَمْرٌ وَرُطَبٌ فَقَالَ: كُلُوا مِنْ هَذِهِ وَأَخَذَ الْمُدْيَةَ فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِيَّاكَ وَالْحَلُوبَ» فَذَبَحَ لَهُمْ فَأَكَلُوا مِنَ الشَّاةِ وَمِنْ ذَلِكَ الْعِذْقِ وَشَرِبُوا فَلَمَّا أَنْ شَبِعُوا وَرَوُوا قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِأَبِي بَكْرٍ وَعُمَرَ: «وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَتُسْأَلُنَّ عَنْ هَذَا النَّعِيمِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَخْرَجَكُمْ مِنْ بُيُوتِكُمُ الْجُوعُ ثُمَّ لَمْ تَرْجِعُوا حَتَّى أَصَابَكُمْ هَذَا النعيمُ» . رَوَاهُ مُسلم. وَذَكَرَ حَدِيثَ أَبِي مَسْعُودٍ: كَانَ رَجُلٌ مِنَ الْأَنْصَار فِي «بَاب الْوَلِيمَة»

وعن ابي هريرة قال: خرج رسول الله صلى الله عليه وسلم ذات يوم وليلة فاذا هو بابي بكر وعمر فقال: «ما اخرجكما من بيوتكما هذه الساعة؟» قالا: الجوع قال: «وانا والذي نفسي بيده لاخرجني الذي اخرجكما قوموا» فقاموا معه فاتى رجلا من الانصار فاذا هو ليس في بيته فلما راته المراة قالت: مرحبا واهلا فقال لها رسول الله صلى الله عليه وسلم: «اين فلان؟» قالت: ذهب يستعذب لنا من الماء اذ جاء الانصاري فنظر الى رسول الله صلى الله عليه وسلم وصاحبيه ثم قال: الحمد لله ما احد اليوم اكرم اضيافا مني قال: فانطلق فجاءهم بعذق فيه بسر وتمر ورطب فقال: كلوا من هذه واخذ المدية فقال له رسول الله صلى الله عليه وسلم: «اياك والحلوب» فذبح لهم فاكلوا من الشاة ومن ذلك العذق وشربوا فلما ان شبعوا ورووا قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لابي بكر وعمر: «والذي نفسي بيده لتسالن عن هذا النعيم يوم القيامة اخرجكم من بيوتكم الجوع ثم لم ترجعوا حتى اصابكم هذا النعيم» . رواه مسلم. وذكر حديث ابي مسعود: كان رجل من الانصار في «باب الوليمة»

ব্যাখ্যাঃ (الْحَمْدُ لِلّٰهِ مَا أَحَدٌ الْيَوْمَ أكرمَ أضيافًا مني) এখানে অনেক শিক্ষা রয়েছে। তন্মধ্যে একটি শিক্ষা : প্রকাশ্য কোন নি‘আমাত অর্জিত হলে মহান আল্লাহর প্রশংসা করা মুস্তাহাব।

আরেকটি শিক্ষা হলো সুসংবাদ প্রকাশ করা মুস্তাহাব, মেহমান আসার ফলে তার সামনে খুশি হওয়া ও মহান আল্লাহর প্রশংসা করাও মুস্তাহাব। মেহমানের ফিতনার ব্যাপারে ভয় না থাকলে তার সামনেই প্রশংসা করা যায়। আর ভয় থাকলে সামনে প্রশংসা করা যাবে না।

আরো একটি শিক্ষা হলো হাদীসে আনসারী সাহাবী (রাঃ)-এর মর্যাদা, তার ভাষার প্রতি দক্ষতা ও তার বিরাট পরিচিতি পাওয়া যায়, কারণ সে অল্প কথায় অনেক কিছু সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছে। (শারহুন নাবাবী ১৩শ খন্ড, হাঃ ২০৩৮)

(فانطَلَق فَجَاءَهُمْ بِعِذْقٍ فِيهِ بُسْرٌ وَتَمْرٌ وَرُطَبٌ فَقَالَ: كُلُوا مِنْ هٰذِه) এখানে عِذْقٍ শব্দের অর্থ খেজুরের কাঁদি (থোকা)। খেজুরের কাঁদি আনার কারণ হলো মেহমানরা যেন ইচ্ছামত খেতে পারে।

এখানে শিক্ষণীয় বিষয় হলো : মেহমানকে রুটি, গোশত ইত্যাদি খাবারের পূর্বে ফল খেতে দেয়া মুস্তাহাব। মেহমানের জন্য সহজ জিনিস দিয়ে শুরু করা মুস্তাহাব। এরপর তার জন্য যে খাবার তৈরি করা হয়েছে তা দিয়ে তাকে সম্মান করা। বিশেষ করে যখন বুঝবে এখন তার খাওয়ার দরকার তখন খাবার উপস্থাপন করবে। প্রয়োজনের কারণে সে কখনও খুব তাড়াহুড়া করে, আবার কখনও দ্রুত ফিরে যওয়ার কারণে তার জন্য যা তৈরি করা হচ্ছে তার জন্য অপেক্ষা করা কঠিন হয়। সালাফদের একটি দল মেহমানকে কষ্ট দেয়াকে অপছন্দ করেছেন। আর তা হলো এভাবে যে, বাহ্যিকভাবে বাড়ীর মালিকের যে কষ্ট হয়, কারণ সেটা মেহমানের প্রতি পূর্ণ আনন্দ ও ইখলাস থেকে বাধা দেয়। আবার কখনও সে এমন কিছু প্রকাশ করে যা মেহমানকে কষ্ট দেয়। সে এমন কিছু উপস্থিত করে যাতে মেহমান তার অবস্থা বুঝতে পারে যে, সে তার জন্য কষ্টে পড়ছে। সে তাকে ব্যস্ততায় ফেলেছে সে জন্য তার সাথে সে সহানুভূতি দেখাতে পারছে না। আর এ সকল কাজই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ কথার বিরোধী তা হলো :

مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلْيُكْرِمْ ضَيْفَه কেননা তার সাথে পূর্ণ সম্মান দেখানো হচ্ছে না, তার আগমনে আনন্দ প্রকাশ করা হচ্ছে না। পক্ষান্তরে আনসার সাহাবী সে তার ছাগল যাবাহ করে দিল। এতে তার কোন কষ্ট হয়নি। বরং সে সব ছাগল যাবাহ করতে পারলে এমনকি তার সব মাল রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ও তাঁর দুই সঙ্গীর -এর জন্য খরচ করতে পারলে নিজেকে ধন্য মনে করত। (শারহুন নাবাবী ১৩শ খন্ড, হাঃ ২০৩৮)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব ২১: খাদ্য (كتاب الأطعمة) 21. Foods
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৪ পর্যন্ত, সর্বমোট ৪ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে