পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - অতিথি আপ্যায়ন প্রসঙ্গে
৪২৪৭-[৫] মিকদাম ইবনু মা’দীকারিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন যে, কোন মুসলিম কোন কওমের মেহমান হয়, আর সেই মেহমানের ভোর বঞ্চিত অবস্থায় হয়, তখন প্রত্যেক মুসলিমের কর্তব্য হয়ে যায় তার সাহায্য করা। যাতে সে মেজবান ব্যক্তির মাল-সম্পদ হতে আতিথ্য পরিমাণ উসুল করে নিতে পারে। (দারিমী ও আবূ দাঊদ)[1]আবূ দাঊদ-এর অপর এক রিওয়ায়াতে আছে, সে আতিথ্য পরিমাণ তাদের সম্পদ হতে নিতে পারবে।
عَن المقدامِ بن معدي كرب سَمِعَ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «أَيُّمَا مُسْلِمٍ ضَافَ قَوْمًا فَأَصْبَحَ الضَّيْفُ مَحْرُومًا كَانَ حَقًّا عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ نَصْرُهُ حَتَّى يَأْخُذَ لَهُ بِقِرَاهُ مِنْ مَالِهِ وَزَرْعِهِ» . رَوَاهُ الدَّارمِيّ وَأَبُو دَاوُد
وَفِي رِوَايَة: «وَأَيُّمَا رَجُلٍ ضَافَ قَوْمًا فَلَمْ يُقْرُوهُ كَانَ لَهُ أَن يعقبهم بِمثل قراه»
ব্যাখ্যাঃ (مِنْ زَرْعِه وَمَالِه) ইমাম হাফিয খত্ত্বাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এটা হতে পারে ঐ নিরুপায় ব্যক্তির ক্ষেত্রে যে খাওয়ার জন্য কোন কিছু পায় না। আর ক্ষুধার কারণে নিজের জীবন ধ্বংসের ভয় করে, সে ক্ষেত্রে সে নিয়ে নিবে। সে আতিথ্য পরিমাণ নিয়ে নিলে তার কারণীয় কী সে বিষয়ে লোকেদের মাঝে মতভেদ রয়েছে। কেউ কেউ বলেন যে, সে (মেজবানকে) তার মূল্য পরিশোধ করে দিবে। এটি শাফি‘ঈ মতাবলম্বীদের মত।
অন্যরা বলেন, মূল্য পরিশোধ করা তার জন্য জরুরী নয়। হাদীস বিশারদগণের একদল এ কথার দিকে গিয়েছেন। তাদের দলীল হল- আবূ বকর (রাঃ) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য এক রাখালকে দিয়ে দুধ দোহন করে নিয়ে আসেন, সে সময় ছাগলের আসল মালিক সেখানে উপস্থিত ছিল না। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে দুধ পান করেছিলেন। আর এ ঘটনা ঘটেছিল মক্কা থেকে মদীনায় হিজরতের সময়। তারা আরো একটি হাদীসকে দলীল হিসেবে পেশ করেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি বাগানে প্রবেশ করে, সে যেন সেখান থেকে খায় তবে পোটলা করে না নিয়ে যায়। (‘আওনুল মা‘বূদ ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৩৭৪৭)
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - অতিথি আপ্যায়ন প্রসঙ্গে
৪২৪৮-[৬] আবুল আহওয়াস আল জুশামী তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলামঃ হে আল্লাহর রসূল! এ সম্পর্কে আপনার অভিমত কি? আমি যদি কোন ব্যক্তির কাছে গিয়ে উঠি এবং সে আমার আতিথ্য করল না ও মেহমানদারী করল না। অতঃপর সে কোন সময় আমার কাছে উঠল, তখন কি আমি তার মেহমানদারী করব, নাকি প্রতিশোধ গ্রহণ করব? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ স্বয়ং তুমি তার মেহমানদারি করো। (তিরমিযী)[1]
وَعَنْ أَبِي الْأَحْوَصِ الْجُشَمِيِّ عَنْ أَبِيهِ قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَرَأَيْتَ إِنْ مَرَرْتُ بِرَجُلٍ فَلَمْ يُقِرْنِي وَلَمْ يُضِفْنِي ثُمَّ مَرَّ بِي بَعْدَ ذَلِكَ أَأَقْرِيهِ أَمْ أَجْزِيهِ؟ قَالَ: «بل اقره» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যাঃ (أَقْرِه) ‘‘তুমি তার মেহমানদারী কর’’ এখানে এমন মেহমানদারীর প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে যা, উত্তম চরিত্রের অন্তর্ভুক্ত। আর এখানে আরেকটি শিক্ষণীয় বিষয় হলো খারাপের বিনিময় ভালো দিয়ে দেয়া যেটা মহান আল্লাহর বাণী ادْفَعْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ ‘‘মন্দ প্রতিহত কর উৎকৃষ্ট দ্বারা’’। (সূরাহ্ ফুস্সিলাত ৪১ : ৩৪)
فَلْيُرَ عَلَيْكَ তোমার ওপর যেন তা দেখা যায়, অর্থাৎ- তুমি ভালো কাপড় পরবে যাতে মানুষ বুঝতে পারে যে, তুমি একজন অভাবমুক্ত লোক, আল্লাহ তা‘আলা তোমাকে বিভিন্ন নি‘আমাত দ্বারা অনুগ্রহ করেছেন। ‘‘শারহুস্ সুন্নাহ্’’-এর লেখক বলেন, তবে এক্ষেত্রে সীমালঙ্ঘন করবে না। (তুফফাতুল আহওয়াবী ৫ম খন্ড, হাঃ ২০০৬; মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - অতিথি আপ্যায়ন প্রসঙ্গে
৪২৪৯-[৭] আনাস (রাঃ) অথবা অন্য কেউ বর্ণনা করেন। একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সা’দ ইবনু ’উবাদাহ্ -এর নিকট (গৃহে প্রবেশের) অনুমতি চেয়ে ’’আসসালা-মু ’আলায়কুম ওয়া রহমাতুল্ল-হ’’ বললেন। উত্তরে সা’দ (রাঃ) ’’ওয়া ’আলাইকুমুস্ সালা-মু ওয়া রহমাতুল্ল-হ’’ বললেন। কিন্তু (আস্তে জবাব দিয়ে) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে শুনালেন না। এমনকি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনবার সালাম করলেন এবং সা’দ (রাঃ)-ও তিনবার জবাব দিলেন। কিন্তু (একবারও) তাঁকে সালামের জবাব শুনালেন না, ফলে (সালামের জবাব না পাওয়ায়) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যাবর্তন করলেন।
তখন সা’দ (রাঃ) তাঁর পশ্চাতে ছুটে এসে বললেনঃ হে আল্লাহর রসূল! আমার পিতা-মাতা আপনার প্রতি কুরবান হোক, আপনি যতবারই সালাম করেছেন, আমার উভয় কান তা শুনেছে, আর আমি তার জবাবও সাথে সাথে দিয়েছি; কিন্তু আমি (স্বেচ্ছায়) তা আপনাকে শুনাইনি আমার ইচ্ছা ছিল। আপনার সালাম ও বারাকাত (-এর দু’আ) বেশি বেশি লাভ করার। অতঃপর সকলেই গৃহে প্রবেশ করলেন এবং সা’দ (রাঃ) তাঁর সম্মুখে কিশমিশ পেশ করলেন। আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা খেলেন। খাওয়া শেষ করে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তোমাদের খাদ্য হতে নেক্কার লোকেরা আহার করুক, মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) তোমাদের জন্য ইস্তিগফার করুক এবং সায়িম (রোযাদারগণ) তোমাদের কাছে ইফতার করুক। (শারহুস্ সুন্নাহ্)[1]
وَعَنْ أَنَسٍ أَوْ غَيْرِهِ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اسْتَأْذَنَ عَلَى سَعْدِ بْنِ عُبَادَةَ فَقَالَ: «السَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللَّهِ» فَقَالَ سَعْدٌ: وَعَلَيْكُمُ السَّلَامُ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَلَمْ يُسْمِعِ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى سَلَّمَ ثَلَاثًا وَرَدَّ عَلَيْهِ سَعْدٌ ثَلَاثًا وَلَمْ يُسْمِعْهُ فَرَجَعَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَاتَّبَعَهُ سَعْدٌ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ بِأَبِي أَنْتَ وَأُمِّي مَا سَلَّمْتَ تَسْلِيمَةً إِلَّا هِيَ بِأُذُنِي: وَلَقَدْ رَدَدْتُ عَلَيْكَ وَلَمْ أُسْمِعْكَ أَحْبَبْتُ أَنْ أَسْتَكْثِرَ مِنْ سَلَامِكَ وَمِنَ الْبَرَكَةِ ثُمَّ دَخَلُوا الْبَيْتَ فَقَرَّبَ لَهُ زَبِيبًا فَأَكَلَ نَبِيُّ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَمَّا فَرَغَ قَالَ: «أَكَلَ طَعَامَكُمُ الْأَبْرَارُ وَصَلَّتْ عَلَيْكُمُ الْمَلَائِكَةُ وَأَفْطَرَ عِنْدَكُمُ الصَّائِمُونَ» . رَوَاهُ فِي «شَرْحِ السُّنَّةِ»
ব্যাখ্যাঃ (أَنْ أَسْتَكْثِرَ مِنْ سَلَامِكَ وَمِنَ الْبَرَكَةِ) ‘‘আপনার সালাম ও বারাকাত বেশি বেশি লাভ করার ইচ্ছা করেছি’’ অর্থাৎ আপনার সালাম ও আপনার কথা। বলা হয়ে থাকে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাম দেয়ার পর ‘‘ওয়া বারাকা-তুহ’’-ও মিলাতেন। এখান থেকে তাই স্পষ্ট হয়।
‘আল্লামা ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ)বলেনঃ এখানে শিক্ষণীয় দিক হলো, এ রকম (বারাকাতের) উদ্দেশ্য থাকলে সালামের উত্তর না শুনিয়ে বলাও মুস্তাহাব। তবে এ কথায়ও প্রশ্ন থেকে যায়। তা হলো, সালামের জবাব না শুনিয়ে দেয়ার মাধ্যমে ওয়াজিব আদায় হয় না। এর জওয়াব এই যে, হয়ত বা সা‘দ (রাঃ) যখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিছু নিয়েছিলেন তখন তার সালামের জওয়াব দিয়েছিলেন শুনিয়ে।
(أَكَلَ طَعَامَكُمُ الْأَبْرَارُ) ‘‘তোমাদের খাদ্য হতে নেককার লোকেরা আহার করেছে’’।
মুযহির (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এটি হতে পারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দু‘আ। আবার হতে পারে সংবাদ। আর আবরার এই গুণাবলীটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সম্পৃক্ত হতে পারে। কারণ তিনিই তো সর্বোত্তম নেককার।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছাড়া অন্য কেউ এটা বললে সেটি হবে দু‘আ। কারণ, কেউ নিজেকে সৎলোক বলে পরিচয় করালে তা জায়িয হবে না। ‘আল্লামা ত্বীবী বলেনঃ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মুখনিঃসৃত বাণী- আবরার (নেকলোকগণ) দ্বারা সম্ভবত সম্মান-মর্যাদার প্রতি লক্ষ্য রেখে নিজের শানে ব্যবহার করেছেন। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ إِنَّ إِبْرَاهِيمَ كَانَ أُمَّةً
‘‘নিশ্চয় ইব্রাহীম একাই এক উম্মাত ছিল’’- (সূরাহ্ আন্ নাহল ১৬ : ১২০)।
এখানে ইব্রাহীম (আ.)-এর শানে যেমন বহুবচন ব্যবহার করা হয়েছে তেমনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের শানে আবরার বহুবচন ব্যবহার করেছেন। ‘আল্লামা মুল্লা ‘আলী কারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এরূপ সম্ভাবনা আছে।
(وَأَفْطَرَ عِنْدَكُمُ الصَّائِمُونَ) ‘‘সিয়াম পালনকারীগণ তোমাদের নিকট ইফতার করুক’’।
এখান থেকে বুঝা যায়, এটি শুধুই দু‘আ, কারণ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোন সম্প্রদায়ের নিকট ইফতার করতেন তখন তাদের জন্য দু‘আ করতেন। এটাও সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কারো বাড়ীতে ইফতার করে তাদের জন্য এ দু‘আটি করতেন। মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - অতিথি আপ্যায়ন প্রসঙ্গে
৪২৫০-[৮] আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ঈমানদার ব্যক্তি ও ঈমানের দৃষ্টান্ত হলো খুঁটিতে বাঁধা ঘোড়ার ন্যায়। তা চক্কর কাটতে থাকে। অবশেষে খুঁটির দিকে ফিরে আসে। অনুরূপভাবে কোন মু’মিন (কখনো কখনো) ভুল-ভ্রান্তিতে লিপ্ত হয়, আবার ঈমানের দিকে প্রত্যাবর্তন করে। অতএব তোমাদের খানা-খাদ্য (খাদ্যবস্তু) পরহেজগার লোকেদেরকে খাওয়াও এবং তোমাদের দান-খয়রাত ঈমানদারদেরকে প্রদান করো। (বায়হাকবী- শু’আবুল ঈমান এবং আবূ নু’আয়ম হিলয়াহ্ গ্রন্থে)[1]
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ, এর সনদে আছে ‘‘আবূ সুলায়মান’’। ইনি একজন অপরিচিত বর্ণনাকারী (মাজহূল)। আরো একজন বর্ণনাকারী হলেন, ‘‘আবদুল্লাহ ইবনুল ওয়ালীদ’’ ইনি একজন য‘ঈফ রাবী। বিস্তারিত দেখুন- সিলসিলাতুয্ য‘ঈফাহ্ ৬৬৩৭।
وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَثَلُ الْمُؤْمِنِ وَمَثَلُ الْإِيمَانِ كَمَثَلِ الْفَرَسِ فِي آخِيَّتِهِ يَجُولُ ثُمَّ يَرْجِعُ إِلَى آخِيَّتِهِ وَإِنَّ الْمُؤْمِنَ يَسْهُو ثُمَّ يَرْجِعُ إِلَى الْإِيمَانِ فَأَطْعِمُوا طَعَامَكُمُ الْأَتْقِيَاءَ وَأَوْلُوا مَعْرُوفَكُمُ الْمُؤْمِنِينَ» . رَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ فِي «شُعَبِ الْإِيمَانِ» وَأَبُو نُعَيْمٍ فِي «الْحِلْية»
ব্যাখ্যাঃ (ثُمَّ يَرْجِعُ إِلَى آخِيَّتِه) ‘‘অবশেষে উক্ত খুঁটির দিকে ফিরে আসে’’ অর্থাৎ খুঁটিতে বাঁধা জানোয়ার যেমন দড়ির পরিধির মধ্যে ঘুরতে থাকে, অবশেষে খুঁটির গোড়ায় ফিওে আসে, তেমনি কোন ঈমানদার ব্যক্তি যদিও গুনাহে লিপ্ত হয়, পরে অনুশোচনা জাগ্রত হলে তাওবাহ্ করে ইমানের দিকে ফিরে আসে এবং ‘ইবাদাতের যা কিছু হারিয়েছে তা পূরণ কর নেয়।
(أَطْعِمُوا طَعَامَكُمُ الْأَتْقِيَاءَ) ‘‘তোমাদের খাদ্য পরহেজগার লোকেদের খাওয়াও’’ এখানে পরহেজগার লোকেদেরকে খাস বা নির্দিষ্ট করার কারণ হলো খাদ্য শরীরের অংশ হয়ে শরীরকে শক্তিশালী করে ফলে ‘ইবাদাতে মনোযোগী হয়ে সে (পরহেজগার ব্যক্তি) তোমার জন্য দু‘আ করবে। আর তোমার ব্যাপারে তার দু‘আ কবুল করা হবে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - অতিথি আপ্যায়ন প্রসঙ্গে
৪২৫১-[৯] ’আবদুল্লাহ ইবনু বুসর (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর একটি পাত্র ছিল, যা চারজন লোক উঠাত। ওটা গর্রা নামে অভিহিত ছিল। যখন চাশতের সময় হলো এবং (সাহাবায়ে কিরাম) চাশতের সালাত আদায় করলেন, তখন পাত্রটি আনা হলো এবং তাতে সারীদ প্রস্তুত করা হল। সাহাবীগণ সমবেতভাবে তার চতুষ্পার্শ্বে খেতে বসেন। লোকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পা গুটিয়ে বসলেন। এক বেদুঈন বলে উঠল, এটা কেমন ধরনের বসা? জবাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আল্লাহ তা’আলা আমাকে বিনয়ী দাস বানিয়েছেন, তিনি আমাকে অহংকারী, নাফরমান বানাননি। অতঃপর লোকেদেরকে বললেনঃ তোমরা প্রত্যেকে ওর পার্শ্ব হতে খাও, মধ্যস্থল ছেড়ে রাখ। কেননা সেখানে বারাকাত প্রদত্ত হয়। (আবূ দাঊদ)[1]
عَن عبد الله بنِ بُسر قَالَ: كَانَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَصْعَةٌ يَحْمِلُهَا أَرْبَعَةُ رِجَالٍ يُقَالُ لَهَا: الْغَرَّاءُ فَلَمَّا أَضْحَوْا وَسَجَدُوا الضُّحَى أُتِيَ بِتِلْكَ الْقَصْعَةِ وَقَدْ ثُرِدَ فِيهَا فَالْتَفُّوا عَلَيْهَا فَلَمَّا كَثُرُوا جَثَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ أَعْرَابِيٌّ: مَا هَذِهِ الْجِلْسَةُ؟ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ اللَّهَ جَعَلَنِي عَبْدًا كَرِيمًا وَلَمْ يَجْعَلْنِي جَبَّارًا عَنِيدًا» ثُمَّ قَالَ: «كُلُوا مِنْ جَوَانِبِهَا وَدَعُوا ذِرْوَتَهَا يُبَارَكْ فِيهَا» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যাঃ (جَثَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ) অর্থাৎ জায়গা সংকীর্ণ হওয়ার কারণে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাহাবীদের জন্য জায়গা প্রশস্ত করার মানসে তাঁর পা গুটিয়ে নিলেন। কুমূস অভিধানে বলা হয়েছে, جَثَا ‘জাসা-’ অর্থ তিনি তার দু’ হাঁটুর উপর ভর করে বসলেন।
(جَعَلَنِي عَبْدًا كَرِيمًا) ‘‘আল্লাহ আমাকে বিনয়ী দাস বানিয়েছেন’’ অর্থাৎ, এ রকম বসা বিনয়ের বসচেয়ে নিকটতম। আর আমি একজন দাস। দাসের জন্য বিনয়ী হওয়াটাই শোভনীয়। ‘আল্লামা ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এটা বিনয়ী বসা এতে কোন নীচুতা নেই। এ কারণেই তিনি দাসের গুণ বর্ণনা করতে যেয়ে বলেন, কারীম তথা বিনয়ী। (‘আওনুল মা‘বূদ ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৩৭৬৯; মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - অতিথি আপ্যায়ন প্রসঙ্গে
৪২৫২-[১০] ওয়াহশী ইবনু হারব (রহঃ) তাঁর পিতা হতে, তিনি তাঁর দাদা হতে বর্ণনা করেন, একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেনঃ হে আল্লাহর রসূল! আমরা খানা-পিনা করি বটে, কিন্তু আমরা পরিতৃপ্ত হই না। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ সম্ভবতঃ তোমরা পৃথক পৃথকভাবে খাবার খাও। তাঁরা বললেনঃ জ্বী হ্যাঁ! অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তোমরা সমবেতভাবে খাবার খাবে এবং আল্লাহর নাম নেবে। এতে তোমাদের খাবারের মধ্যে বারাকাত আসবে। (তিরমিযী)[1]
وَعَنْ وَحْشِيِّ بْنِ حَرْبٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ: إِنَّ أَصْحَابَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّا نَأْكُلُ وَلَا نَشْبَعُ قَالَ: «فَلَعَلَّكُمْ تَفْتَرِقُونَ؟» قَالُوا: نَعَمْ قَالَ: «فَاجْتَمِعُوا عَلَى طَعَامِكُمْ وَاذْكُرُوا اسْمَ اللَّهِ يُباركْ لكم فِيهِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যাঃ (وَلَا نَشْبَعُ) ‘‘আমরা পরিতৃপ্ত হই না’’ অর্থাৎ আমরা চাই অল্পে তুষ্ট হতে এবং আনুগত্যের জন্য শক্তি লাভ করতে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
(تَفْتَرِقُونَ) ‘‘তোমরা পৃথক পৃথক খাবার খাও’’ অর্থাৎ তোমাদের পরিবারের প্রতি সদস্য পৃথক পৃথক হয়ে খাবার খাও। একত্রে বসে খাবার খাও না। (‘আওনুল মা‘বূদ ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৩৭৬০; মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
অত্র হাদীস এবং আরো কিছু হাদীস আছে যেগুলো থেকে একত্রে বসে এক পেস্নটে খাওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়। তবে আলাদা হয়ে বসে খাওয়ারও প্রমাণ আছে।
মহান আল্লাহ বলেন,
لَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ أَنْ تَأْكُلُوا جَمِيعًا أَوْ أَشْتَاتًا ‘‘...তোমরা এক সাথে খাও বা পৃথক পৃথক খাও তাতে কোন সমস্যা নেই...।’’ (সূরাহ্ আন্ নূর ২৪ : ৬১)
এক সাথে খাওয়া উত্তম তবে আলাদা হয়ে খেলেও তাতে গুনাহ হবে না। আমাদের দেশে কতিপয় মাদ্রাসার পরিচালক আছেন যারা সকলকে একত্রে, এক থালায় কয়েকজনকে খেতে বাধ্য করেন। জানি না তারা বাসায়ও নিজের পরিবারের সাথে এক থালায় খাবার খান কিনা। আল্লাহ সবাইকে সঠিক বোঝার তাওফীক দান করুন। আমীন। [সম্পাদক]