হাদিসটি ইমেইলে পাঠাতে অনুগ্রহ করে নিচের ফর্মটি পুরন করুন
security code
৩৯৫৮

পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যুদ্ধাভিযানে হত্যার বর্ণনা

৩৯৫৮-[২২] ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে একটি সৈন্যবাহিনীতে পাঠালেন। কিন্তু আমাদের সাথীরা পালিয়ে গেল, ফলে আমরা মদীনায় ফিরে এসে আত্মগোপন করলাম। আর আমরা (মনে মনে) বলতে লাগলাম, আমরা ধ্বংস হয়ে গেছি। অতঃপর আমরা বললাম, হে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমরা তো যুদ্ধ হতে পলায়নকারী। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, না, এরূপ নয়, বরং তোমরা তো পুনঃআক্রমণকারী। আমি তোমাদের দলে (পেছনে) রয়েছি। (তিরমিযী)[1]

আবূ দাঊদ-এর বর্ণনাও অনুরূপ। অবশ্য সেখানে হাদীসের শেষ বাক্য হলো, ’’না তোমরা পলায়নকারী নও; বরং পুনঃআক্রমণকারী।’’ বর্ণনাকারী বলেন, আমরা তাঁর নিকটে গেলাম এবং তাঁর হাত চুমু দিলাম। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আমিই মুসলিমদের পশ্চাতের দল। গ্রন্থকার বলেন, শীঘ্রই আমরা উমাইয়্যাহ্ ইবনু ’আব্দুল্লাহ-এর বর্ণিত হাদীস যার শুরু হলো, ’’তারা বিজয় প্রত্যাশা করছিল’’। আর আবুদ্ দারদা-এর বর্ণিত হাদীস যার শুরু ’’তোমরা আমাকে তোমাদের দুর্বলদের মধ্যে সন্ধান কর’’ ইনশা-আল্লা-হ ’’ফাকীর-গরীবদের মর্যাদা’’ অধ্যায়ে বর্ণনা করব।

وَعَن ابنِ عُمر قَالَ: بَعَثَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي سَرِيَّةٍ فَحَاصَ النَّاسُ حَيْصَةً فَأَتَيْنَا الْمَدِينَةَ فَاخْتَفَيْنَا بِهَا وَقُلْنَا: هَلَكْنَا ثُمَّ أَتَيْنَا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقُلْنَا: يَا رَسُول الله نَحن الفارون. قَالَ: «بَلْ أَنْتُمُ الْعَكَّارُونَ وَأَنَا فِئَتُكُمْ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ. وَفِي رِوَايَةِ أَبِي دَاوُدَ نَحْوَهُ وَقَالَ: «لَا بَلْ أَنْتُمُ الْعَكَّارُونَ» قَالَ: فَدَنَوْنَا فَقَبَّلْنَا يَده فَقَالَ: «أَنا فِئَة من الْمُسْلِمِينَ» وَسَنَذْكُرُ حَدِيثَ أُمَيَّةَ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ: كَانَ يَسْتَفْتِحُ وَحَدِيثُ أَبِي الدَّرْدَاءِ «ابْغُونِي فِي ضُعَفَائِكُمْ» فِي بَابِ «فَضْلِ الْفُقَرَاءِ» إِنْ شَاءَ اللَّهُ تَعَالَى

ব্যাখ্যা: (فَحَاصَ النَّاسُ حَيْصَةً) কাযী বলেনঃ অর্থাৎ ‘‘তারা এড়িয়ে গেল’’। তবে ইবনু ‘উমার যদি النَّاسُ দ্বারা মুসলিম বাহিনীর শত্রুদের উদ্দেশ্য করে থাকেন, তাহলে এখানে حَيْصَةً দ্বারা উদ্দেশ্য হবে আক্রমণ করা, অর্থাৎ তারা একযোগে আমাদের ওপর আক্রমণ করল, চক্কর দিল। অতঃপর আমরা তাদের সাথে পরাজিত হলোম। আর যদি السرية উদ্দেশ্য করেন তাহলে حَيْصَةً দ্বারা উদ্দেশ্য হবে প্রত্যাবর্তন করা, অর্থাৎ- তারা মদীনাতে আশ্রয় গ্রহণের উদ্দেশে শত্রুদের থেকে ফিরে গেল, তথা পলায়ন করল। আর এ অর্থেই মহান আল্লাহর বাণী, ‘‘আর তা থেকে তারা কোনো পলায়নস্থল পাবে না।’’ (সূরা আন্ নিসা ৪ : ১২১)

জাওহারী-এর উক্তি «حَاصَ عَنْهُ» অর্থাৎ- সে তা থেকে সরে গেল। বন্ধুদেরকে বলা হয় «حَاصُوا عَنِ الْأَعْدَاءِ» অর্থাৎ- শত্রুদের থেকে সরে যাও। আর শত্রুদেরকে বলা হয়, তোমরা পরাজয় বরণ কর।

আর ফায়িক গ্রন্থে আছে, «فَحَاصَ حَيْصَةً» অর্থাৎ- অতঃপর সে পরাজয় বরণ করল। এক বর্ণনাতে আছে, «فَحَاضَ» আর তা হলো সরে যাওয়া, ঢালুতে অবতরণ করা। নিহায়াহ্ গ্রন্থকার বলেনঃ«فَحَاصَ الْمُسْلِمُونَ حَيْصَةً» অর্থাৎ- তারা পলায়নের উদ্দেশে প্রদক্ষক্ষণ করল।

(هَلَكْنَا) অর্থাৎ- আমরা পলায়নের মাধ্যমে অবাধ্যতা প্রকাশ করেছি, অতএব আমরা ধ্বংস হয়ে গিয়েছি। এটা তাদের থেকে এ ধারণাবশত যে, সাধারণত যুদ্ধ থেকে পালায়ন করা কবীরা গুনাহের আওতাভুক্ত। (الْعَكَّارُوْنَ) অর্থাৎ- যুদ্ধের দিকে বারংবার প্রত্যাবর্তনকারী, তার আশে-পাশে চলাফেরাকারী। অনুরূপভাবে নিহায়াতে আছে, এর অর্থ হলো- যুদ্ধের দিকে প্রত্যাবর্তনকারী।

(وَأَنَا فِئَتُكُمْ) নিহায়াহ্ গ্রন্থে আছে, الْفِئَةُ বলতে মূলত মানুষের দল, যে দল সৈন্যবাহিনীর পেছনে থাকে। অতঃপর তাদের ওপর যদি কোনো ভয় থাকে অথবা পরাজয়ের আশঙ্কা থাকে তাহলে তারা তার কাছে আশ্রয় নেয়।

ফায়িক গ্রন্থে আছে- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী (أَنَا فِئَتُكُمْ) এক্ষেত্রে মহান আল্লাহর বাণীর (أَوْ مُتَحَيِّزًا إِلَى فِئَةٍ) অর্থাৎ- ‘‘অথবা নিজ দলে আশ্রয় গ্রহণ করার লক্ষ্যক্ষ্য’’- (সূরা আল আনফাল ৮ : ১৬) এ দিকে গিয়েছে। এর মাধ্যমে পলায়নের ক্ষেত্রে তিনি তাদের আপত্তিকে সহজ করেন, অর্থাৎ- তোমরা আমার কাছে আশ্রয় নিয়েছ, সুতরাং তোমাদের কোনো ত্রুটি নেই।

শারহুস্ সুন্নাহ্তে আছে, ‘আবদুল্লাহ বিন মাস্‘ঊদ বলেনঃ যে ব্যক্তি তিনজনের মোকাবেলা করা থেকে পলায়ন করবে তাহলে সে পলায়ন করেনি। আর যে ব্যক্তি দু’জনের বিরুদ্ধে লড়াই করা থেকে পলায়ন করবে, তাহলে সুনিশ্চিত সে পলায়ন করেছে। আর যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন করা কবীরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং যে ব্যক্তি দু’জনের মোকাবেলা করা থেকে পলায়ন করবে তার জন্য পলায়নের সময় ইঙ্গিতের মাধ্যমে সালাত আদায় করা বৈধ নয়, কেননা সে অবাধ্য, যেমন চোর অবাধ্য। (মিরকাতুল মাফাতীহ)

(الْعَكَّارُوْنَ) অর্থাৎ- তোমরা যুদ্ধের দিকে প্রত্যাবর্তনকারী, তার পাশে প্রদক্ষক্ষণকারী, যখন আপনি কোনো কিছুর আশে-পাশে প্রদক্ষক্ষণ করবেন, সেখান থেকে চলে যাওয়ার পর পুনরায় সেখানে ফিরে আসবেন তখন ‘আরবীতে বলা হবে «عكرت على الشيئ»। আসমা‘ঈ বলেন, আমি এক বেদুঈনকে দেখলাম সে তার কাপড় থেকে উকুন বের করছে, অতঃপর বুরগূছ হত্যা করে উকুনটিকে ছেড়ে দিচ্ছে। সুতরাং আমি বললাম, আপনি এমন করছেন কেন? তখন বেদুঈন বলল, আমি অশ্বারোহীকে হত্যা করছি, অতঃপর পদাতিক বাহিনীর পর ঘুরে আক্রমণ করব। (‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৬৪৪)

(بَعَثَنَا رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ فِىْ سَرِيَّةٍ) নিহায়াহ্ গ্রন্থকার বলেন, السَّرِيَّةُ বলতে সৈন্যবাহিনীর একটি অংশকে বুঝায় যা সংখ্যায় সর্বোচ্চ চারশত। যে অংশটিকে শত্রুর কাছে পাঠানো হয়। এর বহুবচন হলো السَّرَايَا একে এ নামে নামকরণ করা হয়েছে, কেননা এরা সৈন্যবাহীর সারাংশ, তাদের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিবর্গের অন্তর্ভুক্ত, উৎকৃষ্ট নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের অন্তর্ভুক্ত।

(هَلَكْنَا) অর্থাৎ যুদ্ধ হতে পলায়ন করে আমরা কবীরা গুনাহ করার ফলে ধ্বংস হয়ে গেছি। আবূ দাঊদ-এর বর্ণনাতে আছে- অতঃপর লোকেরা পালিয়ে গেল, আর যারা পালিয়েছিল তাদের মাঝে আমি একজন। এরপর আমরা যখন মদীনায় প্রবেশ করলাম তখন বললাম, আমরা কি করব? আমরা তো যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন করেছি, আমরা গজবে পতিত হয়েছি। অতঃপর আমরা বললাম, আমরা মদীনাতে আত্মগোপন করে থাকব, ফলে কেউ আমাদেরকে দেখবে না। তিনি বলেন, এরপর আমরা মদীনায় প্রবেশ করে বললাম, যদি আমরা আমাদের নিজেদেরকে আল্লাহর রসূলের সামনে উপস্থাপন করি, আর যদি আমাদের তাওবাহ্ করার সুযোগ থাকে তাহলে আমরা সেখানে অবস্থান করব আর এছাড়া অন্য কিছু হয় তাহলে আমরা চলে যাব। তিনি বলেন, অতঃপর আমরা আল্লাহর রসূলের অপেক্ষায় ফজরের সালাতের পূর্বে বসলাম, অতঃপর তিনি বেরিয়ে এলে আমরা তাঁর কাছে গিয়ে বললাম, আমরা পলায়নকারী..... শেষ পর্যন্ত। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৭১৬)


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ