পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
৩৪০৬-[১] ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিকাংশ সময় ’মুকল্লিবিল কুলূব’ (অন্তর পরিবর্তনকারী) বলে কসম করতেন। (বুখারী)[1]
اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ
عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا أَكْثَرُ مَا كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يحلف: «لَا ومقلب الْقُلُوب» . رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যা: হাদীসে সুস্পষ্ট প্রমাণিত হয়, যে হৃদয়ের ‘আমল যা ইচ্ছাশক্তি হতে আসে এবং সকল ‘আমল সবই আল্লাহরই সৃষ্টি। হাদীসে আরও বৈধতা প্রমাণিত হয় যে, এমন সিফাত যা আল্লাহর শানে প্রযোজ্য তা দিয়ে শুরু করা বৈধ।
হাদীসে আরও প্রমাণিত হয়, যে ব্যক্তি আল্লাহর সিফাত দ্বারা কসম করে পরে আবার তা ভঙ্গ করে তার জন্য কাফফারা বা জরিমানা অপরিহার্য- এ ব্যাপারে মূলত কোনো মতানৈক্য নেই। মতানৈক্য হলো কোনো সিফাত তথা গুণ দ্বারা কসম সংঘটিত হবে আর এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট সে কসমে তার সাথে অন্য কাউকে না বাড়ায়। যেমন- (مُقَلِّبِ الْقُلُوبِ) অন্তর নিয়ন্ত্রণ পরিবর্তনকারী প্রভু।
কাযী আবূ বাকর ইবনু ‘আরাবী বলেনঃ হাদীসে বৈধতা প্রমাণ করে আল্লাহর কার্যাবলী দ্বারা কসম করা বৈধ যখন গুণে পরিণত হয় আর যদিও তার নাম উল্লেখ না করে। আর হানাফীরা পার্থক্য করেন ক্ষমতা এবং জ্ঞানের মাঝে। তারা বলেন, আল্লাহর ক্ষমতা দ্বারা কসম করা বৈধ। আর জ্ঞান দ্বারা কসম করলে তা সংঘঠিত হবে না।
আর রাগিব বলেনঃ ‘‘আল্লাহর পরিবর্তন করা অন্তর ও চোখকে’’ এর অর্থ হলো এক সিদ্ধান্ত হতে আর এক সিদ্ধান্তে পরিবর্তন করা। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বাণী (সূরা আন্ নাহল ১৬ : ৪৬) : أَوْ يَأْخُذَهُمْ فِي تَقَلُّبِهِمْ আর বহুল পরিমাণে পরিবর্তনের কারণে কলবকে কলব বলা হয়।
কখনও কখনও এ অর্থ হতে বের হয়ে অন্যান্য নির্ধারিত কিছু অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন রূহ, জ্ঞান, সাহসিকতা।
রূহের অর্থে الْقُلُوب الْحَنَاجِر আর জানা বা জ্ঞান অর্থে لِمَنْ كَانَ لَه قَلْبٌ সাহস অর্থে وَلِتَطْمَئِنَّ بِه قُلُوبُكُمْ।
কাযী আবূ বাকর বলেন, কলব হলো শরীরেরই অংশ যা আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন আর তা মানুষের জন্য জ্ঞান ও কথাবার্তা এবং অন্যান্য কিছুর বাতেনী তথা লুকায়িত সিফাতের স্থান আর শরীরের দৃশ্যমানকে কার্যক্রম ও বলার স্থান বানিয়েছেন।
আর অন্তরে মালাক (ফেরেশতা) নিয়োগ করে যে কল্যাণের পথে পরিচালিত করে আর শায়ত্বনকেও নিয়োগ করেছেন যে অকল্যাণের পথে পরিচালিত করে। আর আক্ল তার আলো দিয়ে তাকে হিদায়াতে পরিচালিত করে এবং প্রবৃত্তি তার অন্ধকার দিয়ে পথভ্রষ্টতার দিকে পরিচালিত করে। আর তাকদীর প্রত্যেকের ব্যাপৃত এবং কলব ভালো মন্দ ও দু’টোর মধ্যে পরিবর্তন হয়। কখনও বন্ধুত্ব মালায়িকার পক্ষ হতে কখনও শায়ত্বনের পক্ষ হতে আর তার হিফাযাত আল্লাহর পক্ষ হতেই। (ফাতহুল বারী ১১শ খন্ড, হাঃ ৬৬২৮)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
৩৪০৭-[২] উক্ত রাবী [ইবনু ’উমার (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা তোমাদের বাপ-দাদার নামে কসম করতে নিষেধ করেছেন। অতএব যদি কারো কসম করতেই হয়, সে যেন আল্লাহ তা’আলার নামেই কসম করে অথবা নিশ্চুপ থাকে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ
وَعَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِنَّ اللَّهَ يَنْهَاكُمْ أَنْ تَحْلِفُوا بِآبَائِكُمْ مَنْ كَانَ حَالِفًا فَلْيَحْلِفْ بِاللَّهِ أَوْ ليصمت»
ব্যাখ্যা: ইমাম নববী বলেনঃ আল্লাহ ব্যতীত অন্য কিছুর কসম খাওয়ার নিষেধের হিকমাহ্ হলো, যেই জিনিসের দ্বারা কসম করা হয় প্রকৃতপক্ষে তার মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ হয়ে থাকে অথচ সত্যিকার মর্যাদার একচ্ছত্র অধিকারী একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা।
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন,
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ : لَأَنْ أَحْلِفَ بِاللّٰهِ مِائَةَ مَرَّةٍ فَآثَمُ خَيْرٌ مِنْ أَنْ أَحْلِفَ بِغَيْرِه فَأَبَرَّ
আমি একশতবার আল্লাহর কসম খাব, অতঃপর আমি গুনাহগার হব, এটা উত্তম আল্লাহ ব্যতিরেকে অন্য কিছুর কসম খাব, নেককাজ করব। আর তিনি ঘৃণা করতেন আল্লাহর নাম ও গুণ ব্যতিরেকে অন্যকিছুর নামে শপথ করাকে চাই তা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নামে বা কা‘বাহ্ ঘর, মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ), জীবন, রূহ বা অন্য যে নামে হোক না কেন আর সবচেয়ে খারাপ হলো আমানাতের নামে কম্ম খাওয়া। তবে আল্লাহ তা‘আলা তার সৃষ্ট মাখলূকের যে কোনো জিনিসের কসম করতে পারবে।
কাযী বলেনঃ যদি এই প্রশ্ন করা হয় যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে এক লোক সম্পর্কে মন্তব্য করার পর أَفْلَحَ وَأَبِيهِ বলে, পিতার নামে শপথ করছিলেন। এটার উত্তর এই যে, উক্ত কসম দ্বারা বস্তুর বা যেই জিনিসের দ্বারা কসম করা হয়েছে তার মর্যাদা বিকাশ উদ্দেশ্য ছিল না বরং কথাটাকে সুদৃঢ়ভাবে প্রকাশ করার উদ্দেশ্য ছিল অথবা এটাও বলা যায় যে, তা বিধি-নিষেধ প্রয়োগ হওয়ার পূর্বের ঘটনা এবং এটাই সঠিক মত। আবার কেউ কেউ বলেছেন, নিষেধ অর্থ হারাম নয়। সুতরাং প্রয়োজনে কথাটি সুদৃঢ় করার জন্য এ কসম করা বৈধ।
(মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
৩৪০৮-[৩] ’আব্দুর রহমান ইবনু সামুরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা আল্লাহদ্রোহীর (প্রতীমার) নামে ও তোমাদের বাপ-দাদার নামে কসম করো না। (মুসলিম)[1]
اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ
وَعَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ سَمُرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا تَحْلِفُوا بِالطَّوَاغِي وَلَا بِآبَائِكُمْ» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: الطَّوَاغِي অর্থ মূর্তিসমূহ طاغية একবচন। طاغية মূলত সম্মান বা অন্য কিছুর ক্ষেত্রে যখনই সীমানা অতিক্রম করে তাই طغى। যেমন আল্লাহর বাণী: إِنَّا لَمَّا طَغَى الْمَاءُ حَمَلْنَاكُمْ فِي الْجَارِيَةِ ‘‘যখন জ্বলোচ্ছাস হয়েছিল’’- (সূরা আল হা-ককাহ্ ৬৯ : ১১) তথা পানি যখন সীমা অতিক্রম করেছিল। কারও মতে যারা কুফরীর সীমা অতিক্রম করেছে, আবার এটা দ্বারা শায়ত্বনও উদ্দেশ্য। (শারহে মুসলিম ১১শ খন্ড, হাঃ ১৬৪৮)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
৩৪০৯-[৪] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তির কসমের মধ্যে ’লাত’ ও ’উযযা’ (প্রতীমা)-এর নাম বলে ফেলে, সে যেন তাৎক্ষণিকভাবে ’লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ (অর্থাৎ- আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোনো ইলাহ নেই) বলে। আর কেউ যদি তার সঙ্গী-সাথীকে এ বলে আহবান করে যে, ’আসো, আমরা জুয়া খেলি’, সে যেন অবশ্যই সাদাকা করে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: مَنْ حَلَفَ فَقَالَ فِي حَلِفِهِ: بِاللَّاتِ وَالْعُزَّى فَلْيَقُلْ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ. وَمَنْ قَالَ لِصَاحِبِهِ: تَعَالَ أقامرك فليتصدق
ব্যাখ্যা: অন্য সানাদে এসছে,
مِنْ طَرِيقِ مُصْعَبِ بْنِ سَعْدٍ عَنْ أَبِيهِ قَالَ كُنَّا حَدِيثَ عَهْدٍ بِجَاهِلِيَّةٍ فَحَلَفْتُ بِاللَّاتِ وَالْعُزّٰى فَقَالَ لِي أَصْحَابِي بِئْسَ مَا قُلْتَ فَذَكَرْتُ ذٰلِكَ لِلنَّبِيِّ ﷺ فَقَالَ قُلْ لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ وَحْدَه لَا شَرِيكَ لَه
মুস্‘আব বিন সা‘ঈদ, তিনি তার পিতা হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেনঃ আমরা নতুন মুসলিম ছিলাম আমি কসম খেতাম ‘লাত’ ও ‘উয্যা’-এর নামে তখন আমার সাথী বললেন কতই না খারাপ তুমি যা বললে। অতঃপর বিষয়টি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে তুলে ধরলাম, তিনি বললেনঃ তুমি বল, আল্লাহর ছাড়া সত্য কোনো মা‘বূদ নেই, তিনি একক এবং তার কোনো শরীক নেই।
খত্ত্বাবী বলেনঃ কসম শুধুমাত্র মহান মা‘বূদের নামেই হবে আর যে লাতের নামে কসম খেল সে কাফির সদৃশ হলো আর যে অজ্ঞতা ও ভুলবশতঃ করল সে যেন বলে لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ। তাহলে আল্লাহ তা হতে মিটিয়ে দিবেন এবং তার হৃদয়কে প্রবৃত্তি হতে আল্লাহর স্মরণে নিয়ে প্রত্যাবর্তন করবেন এবং তার জিহ্বা ব্যবহৃত হবে সত্যের পক্ষে আর তার হতে অনর্থক বিষয়াদি সরিয়ে দিবেন।
সাদাকা করা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, জিহবা দিয়ে যা বলা হয়েছিল (আমি জুয়া খেলব) সাদাকা তার জরিমানা স্বরূপ। মুসলিম-এর বর্ণনায় এসেছে, (فَلْيَتَصَدَّقْ بِشَيْءٍ) সে যেন কিছু দান করে। কিছু হানাফী বলে তার ওপর ওয়াজিব হবে শপথের জরিমানা।
জুমহূরের নিকট হাদীসটি সুস্পষ্ট দলীল যে পাপের দৃঢ়সংকল্প যখন অন্তরে স্থায়ী হয় তখন তা পাপ হিসেবে লেখা হবে, তবে যে অন্তরে স্থায়ী হয় না তা পাপ হিসেবে ধর্তব্য হবে না। তবে আমি ভাষ্যকার (ইবনু হাজার) বলি, আমি জানি না এ বক্তব্য কোথা হতে নেয়া হলো।
হাদীসের সুস্পষ্ট ভাষ্য হলো, (تَعَالَ أُقَامِرُكَ) আসো আমি তোমার সাথে জুয়া খেলব সে তাকে ডেকেছে পাপের দিকে আর সর্বসম্মত জুয়া হারাম। সুতরাং সে কার্যের দিকে আহবান করা হারাম। এখানে শুধুমাত্র দৃঢ়সংকল্প নয়। সামনে এ বিষয়ে আলোচনা আসবে। (ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৬১০৭)
শারহুস্ সুন্নাহ্ কিতাবে বর্ণিত হয়েছে, যে গায়রুল্লাহর নামে বা ইসলামের পরিপন্থী কিছুর নামে শপথ করলে তাকে কোনো প্রকারের কাফফারা আদায় করতে হবে না। অবশ্য শক্ত গুনাহগার হবে, কাজেই তার জন্য তাওবাহ্ করাটা অপরিহার্য। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন ধরনের ব্যক্তিকে তার দীন ও ঈমান সংশোধনের নির্দেশ দিয়েছেন তার মালের উপর কিছুই ওয়াজিব করেননি। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
৩৪১০-[৫] সাবিত ইবনুয্ যহহাক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ইসলাম ব্যতীত অন্য কোনো ধর্মের নামে শপথ করে, তাহলে সে যেন তদ্রূপ হয়ে যায় যা সে বলেছে। কোনো আদম সন্তানের পক্ষে ঐরূপ মানৎ পূর্ণ করা ওয়াজিব নয়, যার সে সত্তা নয়। যে ব্যক্তি কোনো জিনিস দ্বারা দুনিয়াতে আত্মহত্যা করল, কিয়ামত দিবসে তাকে ঐ জিনিসের মাধ্যমেই শাস্তি দেয়া হবে। আর যে ব্যক্তি কোনো মু’মিনকে লা’নাত (অভিসম্পাত) করল, সে যেন তাকে হত্যাই করল। আর যে কোনো মু’মিনকে কাফির বলে অপবাদ দিল, সে যেন তার হত্যাযজ্ঞের শামিল। যে ব্যক্তি ধন-সম্পদ বৃদ্ধির উদ্দেশে মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণ করে, আল্লাহ তা’আলা তার ধন-সম্পদ বৃদ্ধির পরিবর্তে বরং কমিয়ে দেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ
وَعَنْ ثَابِتِ بْنِ الضَّحَّاكِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ حَلَفَ عَلَى مِلَّةٍ غَيْرِ الْإِسْلَامِ كَاذِبًا فَهُوَ كَمَا قَالَ وَلَيْسَ عَلَى ابْنِ آدَمَ فِيمَا لَا يَمْلِكُ وَمَنْ قَتَلَ نَفْسَهُ بِشَيْءٍ فِي الدُّنْيَا عُذِّبَ بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَمَنْ لَعَنَ مُؤْمِنًا فَهُوَ كَقَتْلِهِ وَمَنْ قَذَفَ مُؤْمِنًا بِكُفْرٍ فَهُوَ كَقَتْلِهِ وَمَنِ ادَّعَى دَعْوَى كَاذِبَةً لِيَتَكَثَّرَ بِهَا لَمْ يَزِدْهُ اللَّهُ إِلَّا قِلَّةً»
ব্যাখ্যা: কাযী বলেনঃ ইসলাম ব্যতীত অন্য ধর্মের নামে শপথ করার অর্থ হলো সে তার ইসলামকে নষ্ট করল, এ ধরনের শপথের মাধ্যমে সে যেরূপ বলল তদ্রূপই হলো আর সম্ভাবনা রয়েছে এটাকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে শপথ ভঙ্গের মাধ্যমে। যেমন বর্ণিত হয়েছে,
مَنْ قَالَ إِنِّي بَرِيءٌ مِنَ الْإِسْلَامِ فَإِنْ كَانَ كَاذِبًا فَهُوَ كَمَا قَالَ، وَإِنْ كَانَ صَادِقًا فَلَنْ يَرْجِعَ إِلَى الْإِسْلَامِ سَالِمًا
বুরায়দাহ্ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে বলে আমি ইসলাম হতে মুক্ত যদি সে মিথ্যাবাদী হয় তাহলে সে যেরূপ বলেছে সে তদ্রূপই হবে আর যদি সত্যবাদী হয় তাহলে সে ইসলামে অবশ্যই সহীহভাবে ফিরবে না।
কারও মতে, মূলত উদ্দেশ্য তা নয় বরং ভীতিপ্রদর্শনেই উদ্দেশ্য। সে প্রকৃত ইয়াহূদী হুকুমের মধ্যে পড়েনি এবং ইসলাম হতে মুক্তও হয়নি, মনে হয় সে ইয়াহূদীদের মতো শাস্তির হকদার হয়েছে। আর এর সাদৃশ্য হলো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণীঃ مَنْ تَرَكَ صَلَاةً فَقَدْ كَفَرَ ‘‘যে সালাত ছেড়ে দিল সে কাফির হলো।’’ এখানে ধমকি স্বরূপ বলা হয়েছে।
ইমাম আবূ হানীফাহ্সহ অধিকাংশ যেমন ইমাম নাখ‘ঈ, আওযা‘ঈ, সাওরী এবং আহমাদ-এর মতে এরূপ কথা বললে তা কসমে পরিণত হবে এবং ভাঙ্গলে কাফফারা ওয়াজিব হবে। কিন্তু ইমাম মালিক, শাফি‘ঈসহ মদীনার ‘উলামাগণ বলেন, তা শপথ নয়। সুতরাং কাফফারা ওয়াজিব হবে না, তবে এমন উক্তিকারী গুনাহগার হবে তাতে সত্য বলুক আর মিথ্যা বলুক।
(وَلَيْسَ عَلَى ابْنِ اٰدَمَ فِيمَا لَا يَمْلِكُ) কোনো আদাম সন্তান যে জিনিসের মালিক নয় এমন জিনিসের মানৎ করলে তাতে কিছুই হয় না। ইবনু মালিক বলেনঃ যদি কেউ বলে যদি আল্লাহ আমাকে সুস্থ করেন তাহলে অমুক গোলাম স্বাধীন অথচ সে তার মালিকাধীন না।
ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ এর ভাবার্থ হলো কেউ যদি মানৎ করে দাস আযাদ করে দিবে অথচ সে দাস তার মালিকাধীনে নেই অথবা ছাগল বা অন্য কিছু কুরবানী করবে আর তা তার অধীনে নেই তা পুরা করা ওয়াজিব হবে না যদি তা পারে তা মালিকাধীনে আসে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
৩৪১১-[৬] আবূ মূসা আল আশ্’আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর কসম! আমি যদি কোনো বস্তুর উপর কসম করি, তখন ঐ কসমের বিপরীত করা উত্তম বলে মনে করি। অতঃপর ইনশা-আল্লা-হ আমি আমার কসমের কাফফারা আদায় করে দেই এবং যে কাজটি উত্তম, তাই করি। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ
وَعَنْ أَبِي مُوسَى قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَنِّي وَاللَّهِ إِنْ شَاءَ اللَّهُ لَا أَحْلِفُ عَلَى يَمِينٍ فَأَرَى غَيْرَهَا خَيْرًا مِنْهَا إِلَّا كَفَّرْتُ عَنْ يَمِينِي وَأَتَيْتُ الَّذِي هُوَ خَيْرٌ»
ব্যাখ্যা: হাদীসের ভাষ্যমতে, কসম ভাঙ্গাই উত্তম যদি তার বিপরীত জিনিস উত্তম হয় যেমন কেউ কসম করল সে তার পিতা বা সন্তানের সাথে কথা বলবে না, কারণ সেখানে রয়েছে আত্মীয়তার সম্পর্কেচ্ছ। শারহেস্ সুন্নাতে এসেছে, কসম ভাঙ্গার পূর্বে কাফফারা হবে না পরে।
অধিকাংশ সাহাবী, শাফি‘ঈ, আহমাদ, মালিক-এর নিকট কসম ভাঙ্গার পূর্বে কাফফারা আদায় করবে তবে শাফি‘ঈ-এর মতে কসম ভাঙ্গার পূর্বে সওম দিয়ে কাফফারা আদায় করা বৈধ নয় আর আযাদ করা মিসকীনকে খাওয়ানো ও বস্ত্র দেয়ার মাধ্যমে কাফফারা আদায় বৈধ, কেননা যাকাত আদায় করা বৈধ বছর পূর্ণ হওয়ার পূর্বে কিন্তু রমাযানের সওম সময় হওয়ার পূর্বে বৈধ নয়। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
৩৪১২-[৭] ’আব্দুর রহমান ইবনু সামুরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে ’আব্দুর রহমান ইবনু সামুরাহ্! নেতৃত্ব প্রত্যাশা করো না। কেননা, আকাঙ্ক্ষার কারণে যদি তুমি নেতৃত্ব পাও, তাহলে তোমাকে তার ওপর ন্যস্ত করা হবে। আর যদি বিনা আকাঙ্ক্ষায় তোমাকে নেতৃত্ব দেয়া হয়, তাহলে সেই নেতৃত্ব পালনকালে তোমাকে সাহায্য করা হবে। আর যখন কোনো কসম কর, অতঃপর তার ব্যতিক্রম করা ভালো বলে মনে কর; তখন তোমার কসমের কাফফারা আদায় করতে হবে এবং সেই উত্তম কাজটি করবে। অন্য এক বর্ণনায় আছে, প্রথমে সেই উত্তম কাজটি কর, অতঃপর তোমার কসমের কাফফারা আদায় কর। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ
وَعَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ سَمُرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَا عَبْدَ الرَّحْمَنِ بْنَ سَمُرَةَ لَا تَسْأَلِ الْإِمَارَةَ فَإِنَّكَ إِنْ أُوتِيتَهَا عَنْ مَسْأَلَةٍ وُكِلْتَ إِلَيْهَا وَإِنْ أُوتِيتَهَا عَنْ غَيْرِ مَسْأَلَةٍ أُعِنْتَ عَلَيْهَا وَإِذَا حَلَفْتَ عَلَى يَمِينٍ فَرَأَيْتَ غَيْرَهَا خَيْرًا مِنْهَا فَكَفِّرْ عَنْ يَمِينِكَ وَأْتِ الَّذِي هُوَ خَيْرٌ» . وَفِي رِوَايَةٍ: «فَأْتِ الَّذِي هُوَ خير وَكفر عَن يَمِينك»
ব্যাখ্যা: কোনো পদ বা ক্ষমতা যদি আপনা-আপনি এসে যায় সেকালে প্রবৃত্তির লালসা থাকে না। সুতরাং সেক্ষেত্রে আল্লাহর রহমাতের আশা করা যায় কিন্তু তা অর্জন করার চেষ্টা করলে কখনও নিঃস্বার্থ হতে পারে না। কাজেই তাতে আল্লাহর সাহায্য পাবে না।
(وَأْتِ الَّذِىْ هُوَ خَيْرٌ) হিদায়াহ্ প্রণেতা বলেনঃ যে পাপ কাজের কসম খায় যেমন সালাত আদায় করবে না তার পিতার সাথে কথা বলবে না, অবশ্যই সে উমুককে হত্যা করবে তার উচিত হবে কসম ভাঙ্গানো। ইবনু হুমাম বলেনঃ তার ওপর ওয়াজিব হলো কসম ভেঙ্গে কাফফারা আদায় করবে। আর যার ওপর কসম খাওয়া হয় তা কয়েক প্রকার যেমন পাপ কাজ করার জন্য অথবা ফরয কাজ ছেড়ে দেয়া তখন ওয়াজিব হলো কসম ভাঙ্গা। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
হাদীসের উপকারিতা বা শিক্ষা নেতৃত্ব চাওয়া ঘৃণিত কাজ, চাই তা ক্ষমতার নেতৃত্ব হোক বা বিচারক হিসেবে হোক। এটি বর্ণনা যে বা যারা নেতৃত্বের লোভ লালসা করে বা চেয়ে নেয় তাতে আল্লাহর সাহায্য থাকে না। (শারহে মুসলিম ১১শ খন্ড, হাঃ ১৬৫২)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
৩৪১৩-[৮] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোনো ব্যক্তি যদি কোনো কসম করে এবং পরে তার ব্যতিক্রম করা উত্তম বলে মনে করে, তখন তার কসমের কাফফারা আদায় করা উচিত এবং সেই (উত্তম) কাজটি করা। (মুসলিম)[1]
اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ حَلَفَ عَلَى يَمِينٍ فَرَأَى خَيْرًا مِنْهَا فَلْيُكَفِّرْ عَنْ يَمِينِهِ وليفعل» . رَوَاهُ مُسلم
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
৩৪১৪-[৯] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর কসম! তোমাদের মধ্যে কেউ যদি পরিবার-পরিজনের ব্যাপারে কসম করে এবং সে কসমের কাফফারা আদায় করার পরিবর্তে আল্লাহ তা’আলা তার ওপর যা ফরয করেছেন- তার (কসমের) উপর দৃঢ় থাকে। তখন সে আল্লাহ তা’আলার নিকট অধিক গুনাহগার হবে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «وَاللَّهِ لَأَنْ يَلَجَّ أَحَدُكُمْ بِيَمِينِهِ فِي أَهْلِهِ آثَمُ لَهُ عِنْدَ الله نم أَنْ يُعْطِيَ كَفَّارَتَهُ الَّتِي افْتَرَضَ اللَّهُ عَلَيْهِ»
ব্যাখ্যা: যে ব্যক্তি তার পরিবারের সাথে সম্পৃক্ত এমন বিষয়ের কসম খায় আর কসম না ভাঙ্গলে পরিবারের ওপর ক্ষতির আশংকা রয়েছে তখন তার উচিত হবে কসম ভেঙ্গে কাফফারা আদায় করে ঐ কাজ করা যাতে তার পরিবার ক্ষতির আশংকা হতে মুক্ত হয়। আর যদি সে মনে করে আমি শপথ ভাঙ্গব না, বরং আমি অটুট থাকব শপথ ভাঙ্গার গুনাহের ভয়ে। এমনটি করলেই যে অন্যায়কারী হবে। শপথ না ভাঙ্গার উপর। অথচ শপথ না ভাঙ্গার উপর থেকে পরিবারকে কষ্ট দেয়া আরও বেশী গুনাহের কাজ। কাযী ‘ইয়ায আর ত্বীবী বলেনঃ হাদীসে সাব্যস্ত হয় শপথ ভঙ্গের কাফফারা আদায় করা ফরয। (ফাতহুল বারী ১১শ খন্ড, হাঃ ৬৬২৫)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
৩৪১৫-[১০] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমার কসম তখন অর্থবহ হবে, যখন তোমার সঙ্গী-সাথী তোমাকে (কসমের) সত্যায়িত করবে। (মুসলিম)[1]
اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَمِينُكَ عَلَى مَا يُصَدِّقُكَ عَلَيْهِ صَاحبك» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: হাদীসটি প্রমাণ বহন করে, কসমের উপর কাযীর বিচারকের কসম তলব করা। যখন কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তির বিরুদ্ধে সত্য কিছু দাবী করে বিচারক তাকে কসম খাওয়াবে, আর সে কসম খেল ও গোপন করল। এক্ষেত্রে বিচারক যা চেয়েছেন বিচারকের চাহিদানুযায়ী কসম সাব্যস্ত হবে আর কসমকারীর তাওরিয়্যাহ্ (গোপনীয় উদ্দেশ্য) সাব্যস্ত হবে না, অর্থাৎ সে শপথ ভঙ্গকারী হিসেবে গণ্য হবে। এর উপর সবই ঐকমত্য আর হাদীসটি তাই প্রমাণ করে।
তবে বিচারকের শপথের চাহিদার নির্দেশ ব্যতিরেকে যদি কোনো ব্যক্তি শপথ করে এবং শপথের মূল বিষয় গোপন করে তবে তার গোপনকৃত ধারণা কাজে আসবে এবং সে শপথ ভঙ্গকারী হিসেবে গণ্য হবে না। চাই কারও কর্তৃক প্রথমেই শপথের প্রতি আদিষ্ট হোক বা বিচারক ব্যতিরেকে কেউ অথবা তার স্থলাভিষিক্ত ভিন্ন অন্য কেউ শপথের আদেশ দিলে উভয়ই একই বিষয় হিসেবে গণ্য হবে। বিচারক ব্যতিরেকে অন্য কারও দ্বারা শপথের আদিষ্ট হলে শপথ কাঙিক্ষত ব্যক্তি শপথ হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়। মোটকথা সর্বক্ষেত্রে শপথকারীর শপথ তার নিয়্যাতানুযায়ী প্রযোজ্য হবে। তবে বিচারক কিংবা তার স্থলাভিষিক্ত যদি দাবীর ক্ষেত্রে শপথ কামনা করে তবে শপথ কামনাকারীর নিয়্যাতই প্রযোজ্য হবে, এটাই হাদীসের উদ্দেশ্য। (শারহে মুসলিম ১১শ খন্ড, হাঃ ১৬৫৩)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
৩৪১৬-[১১] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কসমকারীর গ্রহণযোগ্যতা কসম প্রদানকারীর নিয়্যাতের উপর নির্ভর করে। (মুসলিম)[1]
اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْيَمِينُ عَلَى نِيَّةِ الْمُسْتَحْلِفِ» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: শপথে শপথকারীর নিয়্যাত বা উদ্দেশের ভিত্তিতেই শপথ প্রযোজ্য হবে তবে শপথকারী যদি রূপক বা বিকৃত অর্থের শপথ তলবকারীর উদ্দেশের ভিন্ন শপথ করে থাকে তখন শপথ ভঙ্গ হিসেবে কার্যকর হবে না। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
৩৪১৭-[১২] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, অত্র আয়াত ’’তোমাদেরকে নিরর্থক কসমের জন্য আল্লাহ তা’আলা তোমাদেরকে দায়ী করবেন না’’- (সূরা আল বাকারা ২ : ২২৫) ঐ ব্যক্তির ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে, যেلَا وَاللهِ (না, আল্লাহর কসম) এবংبَلٰى وَاللهِ (হ্যাঁ, আল্লাহর কসম) বলে। (বুখারী)[1]
আর শারহুস্ সুন্নাহ্-এর মধ্যে এ বর্ণনা মাসাবীহ গ্রন্থকারের উদ্ধৃতি দিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। শারহুস্ সুন্নাহ্’তে আরও বলা হয়েছে যে, কোনো কোনো রাবী এ হাদীস ’আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে মারফূ’ হিসেবে (তথা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণীরূপে) বর্ণনা করেছেন।
اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ
عَن عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: أُنْزِلَتْ هَذِهِ الْآيَةُ: (لَا يُؤَاخِذُكُمُ اللَّهُ بِاللَّغْوِ فِي أَيْمَانِكُمْ)
فِي قَوْلِ الرَّجُلِ: لَا وَاللَّهِ وَبَلَى وَاللَّهِ. رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ وَفِي شَرْحِ السُّنَّةِ لَفْظُ الْمَصَابِيحِ وَقَالَ: رَفَعَهُ بَعْضُهُمْ عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنهُ
ব্যাখ্যা: لَا يُؤَاخِذُكُمُ اللّٰهُ بِاللَّغْوِ فِى ايْمَانِكُمْ ‘‘তোমাদেরকে আল্লাহর শক্তি দিবেন না তোমাদের অনর্থক কসমের জন্য।’’ اللَّغْوِ (লাগ্ব) দ্বারা এর অর্থ হলো পরিত্যক্ত কথাবার্তায় যা ধর্তব্য না।
আর অনর্থক কসম বলতে যা মজবুত হয় না বা সংঘঠিত হয় না। যেমন কুরআনের দলীল وَلٰكِنْ يُؤَاخِذُكُمْ بِمَا عَقَّدْتُمُ الْأَيْمَانَ ‘‘তবে আল্লাহ পাকড়াও করেন ঐ শপথের জন্য যা তোমরা মজবুত করে থাক।’’ (সূরা আল মায়িদাহ্ ৫ : ৮৯)
আয়াটি অবতীর্ণ হয়েছে ব্যক্তির কথার প্রেক্ষিতে আর তা হলো لَا وَاللّٰهِ না-বোধক শপথে। وَبَلٰى وَاللّٰهِ হ্যাঁ-বোধক শপথে। শপথের উদ্দেশ্য ছাড়াই বরং শুধুমাত্র হুকুমটি দৃঢ়তার উদ্দেশ্য যা মানুষের মুখে সচরাচর ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
ইবনু হুমাম হিদায়ার ব্যাখ্যা গ্রন্থে বলেনঃ اللَّغْوِ (লাগ্ব) কসম হলো ব্যক্তি কোনো বিষয়ের কসম খায় এবং যেমনটি করেছে তার সে ধারণা করে, কিন্তু বাস্তবতা হলো এর বিপরীত। যেমন বলে, আল্লাহর কসম! আমি বাড়ীতে প্রবেশ করেছি, আল্লাহর কসম! যায়দ-এর সাথে কথা বলেছি বাস্তবে যে তা করেনি এমন সংজ্ঞা ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত।
অতীতের অথবা ভবিষ্যতের কোনো কাজে অনিচ্ছাকৃতভাবে সাধারণত মানুষ নিজের কথাটিকে সুদৃঢ় করার উদ্দেশে যে কসম করে থাকে অথচ তা দ্বারা তার কসম করা উদ্দেশ্য এমন কসমকে লাগ্ব বলে এটা শাফি‘ঈ-এর মতে। আর শা‘বী ও মাসরূক বলেছেন, লাগ্ব কসম করা নিজের জন্য হারাম যে সব বিষয়ে আল্লাহ হালাল করেছেন কথা কাজে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)