পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - (স্বামী-স্ত্রীর) সহবাস
৩১৮৩-[১] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইয়াহূদীগণ বলত, কেউ যদি পিছন দিক হতে স্ত্রীর যৌনাঙ্গে সঙ্গম করে তাহলে সন্তান ট্যারা বা টেগ্রা হয়। এমতাবস্থায় কুরআন মাজীদের এ আয়াত নাযিল হয়, অর্থাৎ- ’’তোমাদের স্ত্রীগণ তোমাদের শস্যক্ষেত্র, তোমরা তোমাদের শস্যক্ষেত্রে যেভাবে ইচ্ছা যেতে পার’’- (সূরা আল বাকারা ২ : ২২৩)। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ الْمُبَاشَرَةِ
عَنْ جَابِرٍ قَالَ: كَانَتِ الْيَهُودُ تَقُولُ: إِذَا أَتَى الرَّجُلُ امْرَأَتَهُ مِنْ دُبُرِهَا فِي قُبُلِهَا كَانَ الْوَلَد أَحول فَنزلت: (نساوكم حرث لكم فَأتوا حَرْثكُمْ أَنى شِئْتُم)
ব্যাখ্যা: ইবনুল মালিক বলেন, স্ত্রীর পশ্চাৎদ্বারে সঙ্গম সকল ধর্মেই নিষিদ্ধ। কিন্তু পশ্চাৎদিক থেকে সম্মুখের দ্বারে সঙ্গত হওয়া মোটেও নিষিদ্ধ নয়। ইয়াহূদীদের বিশ্বাস ছিল যে, পশ্চাদ্বিক থেকে সঙ্গত হলে তাতে কোনো সন্তান জন্মগ্রহণ করলে সে হবে ট্যারা, এটি একটি কুসংস্কার ও ভ্রান্তধারণা। এই ভ্রান্তধারণা অপনোদনের জন্য আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াত নাযিল করেন, ‘‘তোমাদের স্ত্রীগণ হলো তোমাদের শষ্যক্ষেত্র স্বরূপ; অতএব তোমরা যেভাবে ইচ্ছা স্বীয় ক্ষেত্রে গমন কর।’’
স্ত্রীগণ দ্বারা বিবাহিত ও মালিকানা স্বত্বের দাসীই কেবল উদ্দেশ্য। তাদেরকে ক্ষেতের সাথে তুলনা করা হয়েছে; ক্ষেত যেমন বীজ থেকে ফসল উৎপন্ন করে তদ্রূপ স্ত্রীগণও মানব সন্তানের উৎপাদন ক্ষেত্র। আর এর উপযোগী পন্থা হলো সম্মুখ পথে সঙ্গম হওয়া। পশ্চাৎদ্বার হলো মলের পথ তা (সন্তান) উৎপাদনের ক্ষেত্রও নয়, উপরন্তু এটি ঘৃণিত ও কদর্য কর্ম। ‘‘তোমরা যেভাবে ইচ্ছা স্বীয় ক্ষেত্রে গমন কর’’ এর অর্থ হলো দাঁড়িয়ে, বসে, শুয়ে অথবা সম্মুখভাগ হতে অথবা পিছন দিক হতে যেভাবেই ইচ্ছা স্ত্রী গমন তোমাদের জন্য বৈধ, তবে কর্ম সম্পাদন করতে হবে কেবল সম্মুখ দ্বার দিয়ে। আর এতে তোমাদের এবং এর মাধ্যমে জন্মগ্রহণকৃত সন্তানের কোনই ক্ষতির আশংকা নেই।
শারহেস্ সুন্নাহ্ গ্রন্থাকার বলেনঃ সমস্ত ইমাম ও মুহাদ্দিস একমত যে, পুরুষ যে পন্থা ও প্রক্রিয়াই হোক না কেন সম্মুখদ্বারে সঙ্গত হলেই তা বৈধ। অত্র আয়াত তার দলীল ‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ)-বলেন, স্ত্রীকে ক্ষেতের সাথে তুলনা করার দ্বারা ইশারা করা হয়েছে এই দিকে যে, উৎপাদন ক্ষেত্র হলো সম্মুখদ্বার, আর তা যেন লঙ্ঘিত না হয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সে ব্যক্তি অভিশপ্ত যে তার স্ত্রীর পশ্চাতদ্বার দিয়ে সঙ্গত হয়। সুতরাং তা সর্বসম্মত হারাম। (ফাতহুল বারী ৮ম খন্ড, হাঃ ৪৫২৮; শারহে মুসলিম ৯/১০ম খন্ড, হাঃ ১৪৩৫; মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - (স্বামী-স্ত্রীর) সহবাস
৩১৮৪-[২] উক্ত রাবী [জাবির (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন কুরআন মাজীদ নাযিল হচ্ছিল তখন আমরা ’আযল করতাম। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
মুসলিম-এর অপর বর্ণনায় আছে, আমাদের এ সংবাদ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট পৌঁছলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদেরকে নিষেধ করেননি।
بَابُ الْمُبَاشَرَةِ
وَعنهُ كُنَّا نَعْزِلُ وَالْقُرْآنُ يَنْزِلُ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ. وَزَادَ مُسْلِمٌ: فَبَلَغَ ذَلِكَ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلم ينهنا
ব্যাখ্যা: ‘আযল হলো রতিক্রিয়ার সময় রেতপাতের পূর্বে পুরুষ তার যৌনাঙ্গকে স্ত্রীঅঙ্গ থেকে বের করা।
জাবির (রাঃ)-এর কথা ‘‘আমরা কুরআন অবতরণকালে ‘আযল করতাম’’ এর অর্থ হলো আমাদের ‘আযল করার এই অবস্থাদি আল্লাহ তা‘আলা সম্পূর্ণরূপে অবহিত ছিলেন আর কুরআন তখনও নাযিল হচ্ছিল কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা কুরআন মাজীদে কোথাও তা নিষেধ করেননি। সুফ্ইয়ান সাওরী (রহঃ)-বলেছেন, এ বিষয়ে যদি কোনো নিষেধাজ্ঞা থাকত তাহলে কুরআনে অবশ্যই নিষেধাজ্ঞা জারী হতো।
সহীহ মুসলিম-এর বর্ণনায় অতিরিক্ত এ কথাও এসেছে যে, ‘‘আমাদের ‘আযল করার খবর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটও পৌঁছল, কিন্তু তিনিও নিষেধ করলেন না।’’ ‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ)-বলেন, এর অর্থ হলোঃ ওয়াহী আমাদের এ কাজে নিষেধাজ্ঞা জারী করেনি এবং সুন্নাহ্-ও কোনো নিষেধাজ্ঞা দেয়নি। ইবনুল হুমাম (রহঃ) বলেনঃ অধিকাংশ ‘আলিমের নিকট ‘আযল জায়িয। পক্ষান্তরে সাহাবীদের একদল এবং তৎপরবর্তী এটাকে অপছন্দ করেছেন। তবে বিশুদ্ধ কথা হলো এটা জায়িয। (ফাতহুল কাদীর ৩য় খন্ড, ২৭২ পৃঃ)
‘আল্লামা নববী (রহঃ) বলেনঃ আমাদের নিকট ‘আযল করা মাকরূহ বা অপছন্দনীয় কাজ। কেননা এটা জন্ম নিরোধের একটি পদ্ধতি এজন্য হাদীসে বর্ণিত হয়েছে ‘‘আযল হলো গোপন সমাহিত’’।
মিশকাতের ভাষ্যকার মুল্লা ‘আলী আল কারী (রহঃ) বলেনঃ ‘‘আমাদের সাথীগণ বিবাহিতা বাদী ও দাসীর অনুমতি ছাড়াই তাদের সাথে ‘আযল করা বৈধ বলে মনে করেন।’’ তাদের ক্ষেত্রে এটা হারাম নয়, চাই তারা অনুমতি দিক অথবা না দিক। কারণ মালিকানা সত্বের দাসীর গর্ভে সন্তান হলে ঐ দাসী হয় ‘উম্মু ওয়ালাদ’ বা নিজ সন্তানের মা, ফলে তাকে আর বিক্রয় করা বৈধ নয়। আর যদি বিবাহিতা দাসীর ঘরে সন্তান জন্মগ্রহণ করে তাহলে সন্তান মায়ের অনুসরণে দাসত্বের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়; এ উভয় অবস্থাই পুরুষের জন্য ক্ষতির কারণ, সুতরাং এদের সাথে সর্বোতভাবেই ‘আযল বৈধ। পক্ষান্তরে স্বাধীনা স্ত্রী যদি অনুমতি দেয় তবে তার সাথে ‘আযল (সহীহ মতানুযায়ী ) হারাম নয়। (ফাতহুল বারী ৯ম খন্ড, হাঃ ৫২০৯; শারহে মুসলিম ৯/১০ম খন্ড, হাঃ ১৪৪০; মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - (স্বামী-স্ত্রীর) সহবাস
৩১৮৫-[৩] উক্ত রাবী [জাবির (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটে এসে বলল, আমার এক দাসী আছে, সে আমাদের কাজকর্ম করে। আমি তার সাথে সহবাস করি; কিন্তু সে গর্ভবতী হোক, এটা আমি চাই না? উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি ইচ্ছা করলে ’আযল করতে পার। তবে জেনে রেখ তার জন্য যা তাকদীরে নির্ধারিত হয়েছে তা অবশ্যই ঘটবে। কিছু দিন পরে উক্ত ব্যক্তি এসে বলল, সে দাসী (’আযল করা সত্ত্বেও) গর্ভবতী হয়েছে। তাই তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আমি তো পূর্বেই বলেছি, তার জন্য যা অবধারিত আছে তা অবশ্যই হবে। (মুসলিম)[1]
بَابُ الْمُبَاشَرَةِ
وَعَنْهُ قَالَ: إِنَّ رَجُلًا أَتَى رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: إِن لي جَارِيَةً هِيَ خَادِمَتُنَا وَأَنَا أَطُوفُ عَلَيْهَا وَأَكْرَهُ أَنْ تَحْمِلَ فَقَالَ: «اعْزِلْ عَنْهَا إِنْ شِئْتَ فَإِنَّهُ سَيَأْتِيهَا مَا قُدِّرَ لَهَا» . فَلَبِثَ الرَّجُلُ ثمَّ أَتَاهُ فَقَالَ: إِن الْجَارِيَة قد حبلت فَقَالَ: «قَدْ أَخْبَرْتُكَ أَنَّهُ سَيَأْتِيهَا مَا قُدِّرَ لَهَا» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা : হাদীসে উল্লেখিত ‘আর্বী শব্দ جَارِيَةً মূলত বাদী বা দাসী অর্থেই ব্যবহার হয়, তবে কখনো কন্যা অর্থেও ব্যবহার হয়ে থাকে। এখানে দাসী অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছে। বর্ণনাকারীর বর্ণনা ‘‘আমি তার নিকট যাতায়াত করি’’ এর অর্থ হলো তার সাথে সঙ্গম করি। কিন্তু তার গর্ভধারণ হোক এটা আমি পছন্দ করি না, সুতরাং আমি কি করতে পারি? এরূপ প্রশ্নের জবাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তুমি ইচ্ছা করলে তার সাথে ‘আযল করতে পার।
ইবনুল মালিক বলেনঃ এ হাদীসের মাধ্যমে সঙ্গমকারীর ইচ্ছার ভিত্তিতে দাসীর সাথে ‘আযল করা বৈধ প্রমাণিত হয়, কিন্তু তা সাধারণ অর্থে সকল নারীর বেলায় প্রযোজ্য নয়।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকটিকে ‘আযলের অনুমতিদানের ভাষায় যে অর্থ প্রমাণিত হয়েছে তা হলো : তুমি ‘আযল করলে করতে পার, কিন্তু তাতে লাভই বা কি? ঐ মহিলার গর্ভে যা হবার তা হবেই। বাস্তবে ঘটলোও তাই। লোকটি তার দাসীর গর্ভে সন্তান ধারণের ভয়ে তার সাথে ‘আযল করে চলছিল, কিন্তু কিছু দিন পর সে আল্লাহর নাবীর কাছে এসে আরয করল, হে আল্লাহর রসূল! আমার ঐ দাসী তো গর্ভবতী হয়েছে! নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বললেন, আমিতো তোমাকে আগেই জানিয়েছি তার গর্ভে আল্লাহ যা নির্ধারণ করে রেখেছিল তা অবশ্যই তার গর্ভে আসবে। জেনে রেখ, নিশ্চয় আমি আল্লাহর বান্দা ও রসূল ‘‘আমি কখনও মিথ্যা বলি না এবং নিজের পক্ষ থেকে বানিয়ে কোনো কথা বলি না’’। ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, এর দ্বারা প্রমাণিত যে, ‘আযল করা সত্ত্বেও গর্ভ সঞ্চার সম্ভব। তবে তা কিভাবে? এ প্রশ্নের উত্তরে ‘আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, পূর্বের অবশিষ্ট শুক্রানু যা তার পুরুষাঙ্গে রক্ষেত ছিল তাই গর্ভে নির্গত হয়েছে এবং তার মাধ্যমেই ভ্রূণ সৃষ্টি হয়েছে। ফতোয়ায় কাযীখান-এ এরূপ একটি যুক্তিও উপস্থাপন করা হয়েছে যে, পুরুষ ‘আযল করে হয়তো নারীর যৌনাঙ্গের বাহিরে তার রেতপাত করেছে, তা হতে কিছু শুক্রানু তার গর্ভাশয়ে প্রবেশ করে ভ্রূণ সঞ্চারিত হয়েছে। (শারহে মুসলিম ৯/১০ম খন্ড, হাঃ ১৪৩৯; মিরকাতুল মাফাতীহ)
[এছাড়াও মাযী বা কামরস যা পূর্বেই নির্গত হয় তাতেও শুক্রানু থাকতে পারে বলে বৈজ্ঞানিক মতামত রয়েছে, সুতরাং ‘আযল করা সত্ত্বেও গর্ভধারণ সম্পূর্ণ বিজ্ঞানসম্মত তাতে কোনই সন্দেহ নেই]
পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - (স্বামী-স্ত্রীর) সহবাস
৩১৮৬-[৪] আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, বানী মুসত্বালিক যুদ্ধে আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে বের হলাম এবং এ যুদ্ধে আমরা অনেক ’আরাবীয় নারী বন্দীনীরূপে করায়ত্ত করি। যেহেতু আমরা দীর্ঘদিন নারীবিহীন থাকায় অস্বস্থিবোধ করছিলাম, ফলে আমরা নারী সঙ্গমের জন্য উদগ্রীব হয়ে পড়লাম। কিন্তু আমরা ’আযল করা পছন্দ করলাম এবং আমরা পরস্পরের মধ্যে ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ করে বললাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মাঝে সমুপস্থিত থাকতে তাঁকে জিজ্ঞেস না করে এরূপ করা কি ঠিক হবে? অতঃপর আমরা তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমরা ’আযল করবে না এমনটি নয়, তবে কিয়ামত পর্যন্ত (সৃষ্টিজীব পৃথিবীতে) যা হওয়ার আছে, তা অবশ্যই সৃষ্টি হবে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ الْمُبَاشَرَةِ
وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ: خَرَجْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ غَزْوَةِ بَنِي الْمُصْطَلِقِ فَأَصَبْنَا سَبْيًا مِنْ سَبْيِ الْعَرَب فاشتهينا النِّسَاء واشتدت عَلَيْنَا الْعُزْبَةُ وَأَحْبَبْنَا الْعَزْلَ فَأَرَدْنَا أَنْ نَعْزِلَ وَقُلْنَا: نَعْزِلُ وَرَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَيْنَ أَظْهُرِنَا قَبْلَ أَنْ نَسْأَلَهُ؟ فَسَأَلْنَاهُ عَن ذَلِك فَقَالَ: «مَا عَلَيْكُمْ أَلَّا تَفْعَلُوا مَا مِنْ نَسَمَةٍ كَائِنَةٍ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ إِلَّا وَهِيَ كَائِنَةٌ»
ব্যাখ্যা: বানী মুসত্বালিক ‘আরবের খুযা‘আহ্ গোত্রের একটি কবীলার নাম। এ হাদীসের আলোকে ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, প্রাচীন মুশরিকদের দাসত্বের অপনামটি ছিল। এটা ইমাম শাফি‘ঈ এবং মালিক প্রমুখের অভিমত। পক্ষান্তরে ইমাম আবূ হানীফাহ্, ইমাম শাফি‘ঈ-এর পুরাতন অন্য একটি মত হলো ‘আরবদের মধ্যে কখনো দাসত্বের অপনাম জারী হয়নি। তাদের শরাফত ও উচ্চ মর্যাদা সর্বকালেই অক্ষুণ্ণ ছিল। আর ‘আযল বৈধ হওয়া সংক্রান্ত বিস্তারিত ব্যাখ্যা পূর্বাপর হাদীস দ্রষ্টব্য। (ফাতহুল বারী ৭ম খন্ড, হাঃ ৪১৩৮; শারহে মুসলিম ৯/১০ম খন্ড, হাঃ ১৪৩৮; মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - (স্বামী-স্ত্রীর) সহবাস
৩১৮৭-[৫] উক্ত রাবী [আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ’আযলের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, প্রত্যেক পানিতে সন্তান জন্ম হয় না। আর আল্লাহ তা’আলা যখন কোনো কিছু সৃষ্টি করতে চান, তখন কোনো কিছুই তা প্রতিরাধ করার ক্ষমতা রাখে না। (মুসলিম)[1]
بَابُ الْمُبَاشَرَةِ
وَعَنْهُ قَالَ: سُئِلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ الْعَزْلِ فَقَالَ: «مَا مِنْ كُلِّ الْمَاءِ يَكُونُ الْوَلَدُ وَإِذَا أَرَادَ اللَّهُ خَلْقَ شَيْءٍ لَمْ يَمْنَعْهُ شَيْءٌ» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ
ব্যাখ্যা: ‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ সন্তানের ভয়ে লোকেরা ‘আযল করার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট অনুমতি প্রার্থনা করেছিল। তারা মনে করত নারীগর্ভে শুক্রপাত ঘটালেই তা সন্তান জন্মের কারণ হয়। সুতরাং ‘আযল হলো তার প্রতিবন্ধক। এ প্রশ্নের উত্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানিয়েছেন সকল পানির দ্বারা অর্থাৎ শুক্রের দ্বারাই সন্তান হয় না, আবার আল্লাহ যখন কোনো সৃষ্টিকে সৃষ্টির ইচ্ছা করেন কোনো কিছুই তাকে বাধা দিয়েও রাখতে পারে না। সুতরাং সন্তান জন্ম আল্লাহর ইচ্ছা বা হুকুমের উপর নির্ভরশীল। ‘আযল করা না করায় কোনো আসে যায় না। (শারহে মুসলিম ৯/১০ম খন্ড, হাঃ ১৪৩৮; মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - (স্বামী-স্ত্রীর) সহবাস
৩১৮৮-[৬] সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বলল, আমি স্ত্রীসহবাসের সময় ’আযল করি। এতে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কেন এটা কর? উত্তরে সে বলল, আমি তার সন্তানের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়ায় এটা করি। এতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এতে যদি কোনো প্রকার ক্ষতি হতো তাহলে পারস্যবাসী (ইরান) ও রোমকগণও ক্ষতিগ্রস্ত হতো। (মুসলিম)[1]
بَابُ الْمُبَاشَرَةِ
وَعَنْ سَعْدِ بْنِ أَبِي وَقَّاصٍ: أَنَّ رَجُلًا جَاءَ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: إِنِّي أعزل عَن امْرَأَتي. فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «لم تفعل ذَلِك؟» فَقَالَ الرَّجُلُ: أَشْفِقُ عَلَى وَلَدِهَا. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَوْ كَانَ ذَلِكَ ضاراً ضرّ فَارس وَالروم» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: প্রাচীন ‘আরব সমাজের মানুষের ধারণা ছিল, গর্ভবতী স্ত্রীর সাথে সহবাস করলে যমজ সন্তান জন্মগ্রহণ করে, এতে উভয় সন্তানই দুর্বল হয়। অথবা গর্ভাবস্থায় কোনো দুগ্ধপোষ্য শিশু থাকলে এবং সেটি দুগ্ধ পান করলে শিশুর ভীষণ ক্ষতি হয়। গর্ভস্থিত সন্তান হোক দুগ্ধপোষ্য সন্তান হোক অথবা উভয় সন্তানই হোক তার ক্ষতির আশংকা করে জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমি আমার সন্তানের ওপর অত্যন্ত স্নেহপরায়ণ, আমি তাদের ক্ষতি চাই না। সুতরাং আমি কি আমার স্ত্রীর সাথে ‘আযল করব, না একেবারে সহবাস বন্ধ করে দিব? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, তুমি এ কাজ কেন করবে? তখন লোকটি বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমি আমার স্ত্রীর গর্ভস্থিত সন্তানের প্রতি স্নেহপরায়ণ। সুতরাং সে যেন যমজ হয়ে দুর্বল হয়ে না যায়। অথবা আমি আমার স্ত্রীর দুগ্ধপোষ্য সন্তানের প্রতি আশংকা করি যে, স্ত্রীর সাথে সহবাস করলে তার ক্ষতি হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন তাকে বললেন, তোমার এই ধারণাই যদি সত্য হতো অর্থাৎ গর্ভাবস্থায় অথবা দুগ্ধদানকালীন সময়ে স্ত্রীর সাথে সহবাস যদি ঐ সন্তানদের ক্ষতিই হতো তাহলে রোম এবং পারস্যের নারীদের সন্তানগণ অধিক ক্ষতিগ্রস্ত হতো, কেননা তারা গর্ভাবস্থায় তাদের সন্তানদের দুগ্ধ পান করে থাকে এবং তাদের সাথে সহবাসও করিয়ে থাকে। (শারহে মুসলিম ৯/১০ম খন্ড, হাঃ ১৪৪৩; মিরকাতুল মাফাতীহ)
এছাড়া গর্ভাবস্থায় সহবাস করলে যমজ সন্তান হওয়া সম্পূর্ণ অবৈজ্ঞানিক কথা ও চরম কুসংস্কার। তবে গর্ভস্থিত সন্তানের অন্য ক্ষতির বিষয়টি বিবেচিত। (সম্পাদক)
পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - (স্বামী-স্ত্রীর) সহবাস
৩১৮৯-[৭] জুযামাহ্ বিনতু ওয়াহ্ব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি কিছু সংখ্যক লোকের সাথে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উপস্থিত হলাম। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলছিলেন যে, আমি ’গীলাহ্’[1] হতে নিষেধ করতে ইচ্ছা পোষণ করেছিলাম; কিন্তু যখন পারস্য (ইরান) এবং রোমবাসীদের ব্যাপারে জানতে পারলাম যে, তারা (সন্তানের আশঙ্কায়) গীলাহ্ করে অথচ এটা তাদের কোনো প্রকার ক্ষতির কারণ নেই। অতঃপর লোকেরা তাঁকে ’আযল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এটা পরোক্ষভাবে জীবন্ত কন্যা পুঁতে দেয়া (সমাধিস্থ করা), যে সম্পর্কে কুরআন মাজীদের আয়াত আছে- ’’যখন জীবন্ত পুঁতে দেয়া কন্যাকে জিজ্ঞেস করা হবে, কি অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছিল?’’ (সূরা আত্ তাকভীর ৮১ : ৮-৯)। (মুসলিম)[2]
[2] সহীহ : মুসলিম ১৪৪২, আবূ দাঊদ ৩৮৮২, নাসায়ী ৩৩২৬, তিরমিযী ২০৭৭, আহমাদ ২৭০৩৪, দারিমী ২৬৬৩, সহীহ ইবনু হিব্বান ৪১৯৬, সহীহ আল জামি‘ ৫১৪৫।
بَابُ الْمُبَاشَرَةِ
وَعَن جذامة بِنْتِ وَهْبٍ قَالَتْ: حَضَرْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي أُنَاسٍ وَهُوَ يَقُولُ: «لقد هَمَمْت أَن أَنْهَى عَنِ الْغِيلَةِ فَنَظَرْتُ فِي الرُّومِ وَفَارِسَ فَإِذَا هُمْ يُغِيلُونَ أَوْلَادَهُمْ فَلَا يَضُرُّ أَوْلَادَهُمْ ذَلِكَ شَيْئًا» . ثُمَّ سَأَلُوهُ عَنِ الْعَزْلِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ذَلِكَ الوأد الْخَفي وَهِي (وَإِذا الموؤودة سُئِلت)
رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা : জুযামাহ্ বিনতু ওয়াহ্ব হলেন ‘উক্কাশাহ্ (রাঃ)-এর বোন। جُذَامَةَ ‘জুযামাহ্’ শব্দটি দাল যোগে ‘জুদামাহ্’ পাঠ অতি বিশুদ্ধ। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো জনসমাবেশে উপস্থিত হয়ে বললেন, আমার মন যা চায় আমি غِيلَةِ ‘গীলাহ্’ করেত নিষেধ করি। غِ (গাইন) অক্ষর যের যোগে অর্থ হলো গর্ভকালে দুগ্ধপান করানো। আর যদি غَ (গাইন) অক্ষরটি যবর যোগে পাঠ করা হয় তাহলে অর্থ হয় দুগ্ধ। নিহায়াহ্ গ্রন্থে আছে غِ (গাইন) বর্ণ যের যোগে বিশেষ্য অর্থে ব্যবহার হয়, আর غَ বর্ণে যবর যোগে অর্থ হলো দুগ্ধদায়িনী স্ত্রীর সাথে সহবাস করা, অনুরূপ গর্ভাবস্থায় দুগ্ধপান করা। কেউ কেউ বলেন, غ বর্ণে যের ও যবর পাঠ করলেও অর্থ একই।
ইমাম মালিক বলেনঃ غِيلَةِ ‘গীলাহ’ হলো দুগ্ধ দানকারী স্ত্রীকে স্পর্শ করা অর্থাৎ সহবাস করা। ইমাম আস্মা‘ঈ এবং অন্যান্য ভাষাবিদগণও এ মত গ্রহণ করেছেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি রোম ও পারস্যবাসীদের প্রতি লক্ষ্য করলাম, তারা তাদের স্ত্রীদের সাথে ‘গীলাহ্’ করে থাকে, কিন্তু তাদের সন্তানদের কোনো ক্ষতি হয় না।
‘উলামাগণ বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিষেধ করতে চাওয়ার কারণ হলো দুগ্ধপোষ্য সন্তানের ক্ষতির আশংকা; কেননা চিকিৎসা বিজ্ঞানীগণ বলেন, গর্ভবতী মায়ের দুধ হয় রোগাক্রান্ত। সুতরাং ‘আরবেরা এটাকে কারাহাত মনে করেন। কাযী ‘ইয়ায বলেনঃ ‘আরবেরা ‘গীলাহ্’ থেকে পরহেয করত, অর্থাৎ গর্ভকালে দুগ্ধপোষ্য সন্তানকে দুগ্ধপান থেকে বিরত রাখত। তারা মনে করত গর্ভবতী নারীর দুগ্ধ পান করলে সন্তানের ক্ষতি হয়, এটা তাদের বহুল প্রচলিত ধারণা। এজন্য নাবী তা থেকে নিষেধ করতে চেয়েছিলেন, পরে তিনি যখন দেখলেন রোম-পারস্যবাসীগণ এটা করা সত্ত্বেও তাদের সন্তানদের কোনো ক্ষতি হয় না, পরে তিনি নিষেধাজ্ঞা জারী থেকে বিরত হন।
এরপর লোকেরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ‘আযল সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন, অর্থাৎ ‘আযল বৈধ কিনা? এ প্রশ্ন সাধারণ সময়ের ব্যাপারেও হতে পারে। উত্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সেটা গোপন হত্যা বা জীবন্ত কবর দেয়া।
ইমাম নববী (রহঃ) বলেনঃ الْوَأدُ বলা হয় কন্যা শিশুকে জীবন্ত কবর দেয়া। জাহিলী যুগে ‘আরবেরা কন্যা সন্তানকে সম্মানহানীকর মনে করে অথবা খাদ্যদানের ভয়ে জীবন্ত কবর দিয়ে ফেলত।
আল্লাহ তা‘আলা শুক্রবৃন্দকে সৃষ্টি করেছেন মানব সৃষ্টির জন্য, ‘আযলের মাধ্যমে সেই শুক্রানু বিনষ্ট করাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীবন্ত কবর দেয়ার সাথে তুলনা করেছেন। অতঃপর আল্লাহর নাবী এ আয়াতটি পাঠ করেন : ‘‘আর যখন জীবন্ত প্রোথিত শিশু কন্যাদের জিজ্ঞেস করা হবে কোন্ অপরাধে তোমাদেরকে হত্যা করা হয়েছে?’’ (সূরা আত্ তাকভীর ৮১ : ৮-৯) অর্থাৎ কিয়ামতের দিন জীবন্ত প্রোথিত কন্যা সন্তানদের জীবিত করে জিজ্ঞেস করা হবে তোমাদের পিতাগণ তোমাদের কোন্ অপরাধের কারণে জীবন্ত কবর দিয়ে হত্যা করেছিল?
ইতিপূর্বের আলোচনায় বলা হয়েছে ‘আযল মূলত বৈধ। অত্র হাদীসের ভিত্তিতেও বলা যায় না যে, ‘আযল হারাম, বরং এটা অপছন্দনীয় কাজ। এটা জীবন্ত হত্যা নয়, রূহ ধ্বংস হলো জীবন্ত হত্যা। যেখানে বীর্য নারী গর্ভে তিন চল্লিশ অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত তাতে রূহ প্রবিষ্ট হয় না সেখানে তা নারী গর্ভে না দিয়ে বাহিরে নিক্ষেপ করা কিভাবে জীবন্ত হত্যা হতে পারে? ‘আযল বৈধ হওয়া সত্ত্বেও সাহাবীগণ অনেকেই এটাকে অপছন্দ করতেন। ‘উমার তার সন্তানদের ‘আযলের জন্য প্রহার করতেন। ‘উসমান -ও এটা নিষেধ করতেন। মুল্লা ‘আলী কারী (রহঃ) বলেন, ‘আযল হারাম হওয়ার মতটি বিশ্লেষণে দুর্বল কেননা এটা মূলতঃ রূহের ধ্বংস বা হত্যা নয়। তবে নিঃসন্দেহে এটা অপছন্দনীয় কাজ।
‘আল্লামা ইবনুল হুমাম উল্লেখ করেছন, ‘উমার ‘আলী (রাঃ) সাহাবীদ্বয় একমত হয়েছেন যে, ‘আযল জীবন্ত কবরদেয়া নয়। আবূ ইয়া‘লা প্রমুখ ‘উবায়দ ইবনু রিফা‘আহ্-এর সূত্রে তিনি তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি ‘উমার, ‘আলী, যুবায়র, সা‘দ সহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আরো কতিপয় সাহাবীর এক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, তারা ‘আযল সম্পর্কে আলোচনা করলেন এবং বললেন, ‘আযল দোষণীয় নয়। তাদের মধ্যে এক ব্যক্তি বলে উঠলেন অনেকেই তো মনে করে এটাতো ছোটখাটো জীবন্ত কবর দেয়া! এ কথা শুনে ‘আলী বললেন, কখনো সাতটি স্তরকাল অতিক্রান্ত না হওয়া পর্যন্ত জীবন্ত কবর বলে বিবেচিত হবে না।
মানব সন্তানের ঐ সাতটি স্তর হলো : (১) মাটির নির্যাস (২) নুতফা বা বীর্য (৩) রক্তপি- (৪) [থলথলে বা চর্বিত] গোশত সদৃশ (৫) হাড় হাড্ডি ধারণ (৬) হাড়ে গোশতের আবরণ (৭) মানব আকৃতি বা রূপ অবয়ব ধারণ করা। এ কথা শুনে ‘উমার ‘আলী -কে বললেন, আল্লাহ আপনাকে দীর্ঘজীবি করুন, আপনি সত্য কথাই বলেছেন।
লোকটি পুনরায় প্রশ্ন করলেন, গর্ভ সঞ্চারের পর গর্ভপাত করা কি বৈধ হবে? উত্তরে বলেন, মানব আকৃতি ধারণের পূর্বে বৈধ। ‘উলামায়ে কিরাম বলেছে একশত বিশ দিনে ভ্রূণে রূহ প্রবিষ্ট হয়, এরপর গর্ভপাত বৈধ নয়। (শারহূ মুসলিম ৯/১০ম খন্ড, হাঃ ১৪৪২; মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - (স্বামী-স্ত্রীর) সহবাস
৩১৯০-[৮] আবূ সা’ঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলার নিকট সর্বাধিক আমানত হলো ঐ বিষয়। অন্য বর্ণনায় কিয়ামত দিবসে আল্লাহ তা’আলার নিকটে সবচেয়ে নিকৃষ্টতম ঐ ব্যক্তি- যে তার স্ত্রীর সাথে সহবাস করে, অতঃপর পরস্পরের মধ্যস্থ গোপনীয়তা (মানুষের মাঝে) প্রকাশ করে দেয়। (মুসলিম)[1]
بَابُ الْمُبَاشَرَةِ
وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:
إِنَّ أَعْظَمَ الْأَمَانَةِ عِنْدَ اللَّهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَفِي رِوَايَةٍ: إِنَّ مِنْ أَشَرِّ النَّاسِ عِنْدَ اللَّهِ مَنْزِلَةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ الرَّجُلُ يُفْضِي إِلَى امْرَأَتِهِ وَتُفْضِي إِلَيْهِ ثمَّ ينشر سرها . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: দাম্পত্য জীবনের একান্তবাস আল্লাহ সুবাহানাহূ ওয়াতা‘আলার দেয়া এক বিশেষ উপহার এবং আমানত। এতে রয়েছে জীবনের প্রশান্তি এবং স্থিতি। এটা অতীব গোপনীয় বিষয় যা রক্ষা করা প্রতিটি মানুষের অবশ্য কর্তব্য। মানুষ তার জৈবিক চাহিদা পূরণের জন্য তার স্ত্রীর নিকট উদ্গত হয় এটা আল্লাহ তা‘আলার অভিপ্রেত চিরাচরিত বিধান। এর কথা এবং কর্ম সম্পূর্ণভাবে গোপন রাখতে হবে, কোনো কিছুই কারো কাছে প্রকাশ করা যাবে না। স্ত্রীর সৌন্দর্য কিংবা ত্রুটি সবকিছুই গোপন রাখতে হবে। কেউ যদি স্ত্রীর নিকট উদ্গত হয়ে তার সৌন্দর্যের কথা অথবা ত্রুটির কথা অপরের নিকট প্রকাশ করে দেয় তাহলে সে কিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট মহা খিয়ানাতকারী হিসেবে এবং সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তি হিসেবে উঠবে। স্ত্রীও স্বামীর গোপন কোনো বিষয় প্রকাশ করবে না।
বিজ্ঞজনেরা একটা দৃষ্টান্ত দিয়েছেন : এক ব্যক্তি তার স্ত্রীকে তালাক দেয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছে তখন তাকে কেউ জিজ্ঞেস করল, তুমি তোমার স্ত্রীকে কেন তালাক দিবে? সে উত্তর করল, সে আমার স্ত্রী কিভাবে আমি তার দোষ তুলে ধরতে পারি? অতঃপর সে যখন তাকে ‘‘তার কোনো এক গোপন ত্রুটি বা দোষের কারণে’’ তালাক দিয়েই ফেলল তখন তাকে জিজ্ঞেস করা হলো কি দোষে তুমি তাকে তালাক দিলে? উত্তরে সে বলল, কিভাবে আমি একজন বেগানা নারীর দোষ-ত্রুটি উল্লেখ করতে পারি?
কেউ কেউ বলেছেন, দাম্পত্য সম্পর্ক পালনে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হলে তা প্রকাশ করা দোষণীয় নয়। (শারহে মুসলিম ৯/১০ম খন্ড, হাঃ ১৪৩৭; মিরকাতুল মাফাতীহ)