পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যে নারীদেরকে বিয়ে করা হারাম
৩১৭১-[১২] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো পুরুষের পক্ষে বিবাহ করতে নিষেধ করেছেন- কোনো রমণীকে তার ফুফুর সাথে, ফুফুকে তার ভাইয়ের মেয়ের সাথে, ভাইয়ের মেয়েকে তার ফুফুর সাথে, খালাকে তার বোনের মেয়ের সাথে অথবা বোনের মেয়েকে তার খালার সাথে; এমনিভাবে ছোট বোনকে বড় বোনের সাথে, বড় বোনকে ছোট বোনের সাথে। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ, দারিমী; নাসায়ী শেষ বাক্যটি বর্ণনা করেছেন ’’বোনের মেয়ে’’ পর্যন্ত)[1]
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَى أَنْ تُنْكَحَ الْمَرْأَةُ عَلَى عَمَّتِهَا أَوِ الْعَمَّةُ عَلَى بِنْتِ أَخِيهَا وَالْمَرْأَةُ عَلَى خَالَتِهَا أَوِ الْخَالَةُ عَلَى بِنْتِ أُخْتِهَا لَا تُنْكَحُ الصُّغْرَى عَلَى الْكُبْرَى وَلَا الْكُبْرَى عَلَى الصُّغْرَى. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ والدارمي وَالنَّسَائِيّ وَرِوَايَته إِلَى قَوْله: بنت أُخْتهَا
ব্যাখ্যা: ‘আল্লামা খত্ত্বাবী (রহঃ) বলেনঃ এমনটা হলে (অর্থাৎ- ভাতিজি বা ভাগ্নির স্ত্রীত্বের উপর তার খালা কিংবা ফুফীকে বিবাহ করা) উভয়ের মাঝে কতটুকু শত্রুতা সৃষ্টি হওয়ার আশংকা আছে এটা আল্লাহ তা‘আলাই ভালো জানেন। কেননা উভয়েই স্বামীর সমান অংশীদার। এর ফলে উভয়ের মাঝে ঝগড়া-বিবাদ লেগে যাবে। আর এর ফলশ্রুতিতে আত্মীয়তার সম্পর্কও ছিন্ন হয়ে যাবে। এ অর্থেই দুই সহোদর দাসীকেও সহবাসের ক্ষেত্রে একত্র করা হারাম। অর্থাৎ কোনো মহিলার সাথে তার মুনীব সহবাস করলে তার দাসত্ব থাকা উক্ত মহিলার বোনের সঙ্গে একই মুনীবের সহবাস করা হারাম। এটাই অধিকাংশ ‘উলামাগণের কথা। এর উপর ক্বিয়াস করে বলা যায় যে, দাসীর সাথে তার ফুফী কিংবা খালাকে সহবাসের ক্ষেত্রে একত্র করা যাবে না। অন্যদিকে খারিজীরা দু’বোনকে একত্র বিবাহ করা, স্ত্রী খালা কিংবা ফুফুকে বিবাহ করা ঐচ্ছিক মনে করে। তবে তাদের এ ভিন্নমত গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা তারা তো দীন থেকেই বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। (‘আওনুল মা‘বূদ ৪র্থ খন্ড, হাঃ ২০৬৫; তুহফাতুল আহওয়াযী ৩য় খন্ড, হাঃ ১১২৬)
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যে নারীদেরকে বিয়ে করা হারাম
৩১৭২-[১৩] বারা ইবনু ’আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমার মামা আবূ বুরদাহ্ ইবনু নায়ার -কে পতাকা হাতে নিয়ে কোথাও যাচ্ছিলেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কোথায় যাচ্ছেন? উত্তরে বললেন, এক লোক তার পিতার (কোন) স্ত্রীকে বিয়ে করেছে, তার মাথা কাটার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে পাঠিয়েছেন। (তিরমিযী ও আবূ দাঊদ)[1]
আবূ দাঊদ, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ ও দারিমীর অপর বর্ণনায় আছে যে, আমাকে তার গর্দান কাটতে (হত্যা করার) এবং ধন-সম্পদ ছিনিয়ে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এ বর্ণনায় ’মামার’ শব্দের স্থলে ’চাচার’ উল্লেখ আছে।
وَعَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ قَالَ: مَرَّ بِي خَالِي أَبُو بردة بن دِينَار وَمَعَهُ لِوَاءٌ فَقُلْتُ: أَيْنَ تَذْهَبُ؟ قَالَ: بَعَثَنِي النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى رَجُلٍ تَزَوَّجَ امْرَأَةَ أَبِيهِ آتِيهِ بِرَأْسِهِ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: ‘আল্লামা সিনদী (রহঃ) বলেনঃ জাহিলী জামানায় ছেলে তার বাবার স্ত্রীকে (সৎমা) বিবাহ করত। তারা তাদের বাবাদের স্ত্রী (সৎ মাদের) বিবাহ করত পৈত্রিক সম্পদ পাবার জন্য। এজন্য আল্লাহ তা‘আলা সুনির্দিষ্টভাবে তা হারাম করলেন। তোমরা তাদেরকে বিবাহ করো না, যাদেরকে তোমাদের পিতাগণ বিবাহ করেছিল। এ হাদীস থেকে এ মর্মে দলীল পাওয়া যায় যে, কোনো ব্যক্তি যদি শারী‘আতের অকাট্য কোনো বিধানের বিপরীত কাজ করে তবে ইমাম বা নেতা তাকে হত্যার নির্দেশ দিতে পারবেন। (‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৪৪৪৭)
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যে নারীদেরকে বিয়ে করা হারাম
৩১৭৩-[১৪] উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দুগ্ধপান ততক্ষণ পর্যন্ত হারাম হয় যখন দুগ্ধপান পাকস্থলীতে প্রবেশ করে এবং যে দুধ ছাড়ানোর পূর্বে পান করা হয়। (তিরমিযী)[1]
وَعَنْ أُمِّ سَلَمَةَ قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا يُحَرِّمُ مِنَ الرِّضَاعِ إِلَّا مَا فَتَقَ الْأَمْعَاءَ فِي الثَّدْيِ وَكَانَ قبل الْفِطَام» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: ‘আবদুল্লাহ বিন মাস্‘ঊদ (রাঃ)-এর বর্ণনায় রয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ দুধ পান করার কারণে গোশত ও হাড়ের বৃদ্ধি না ঘটলে দুধ মা সাব্যস্ত হবে না। ইমাম তিরমিযী (রহঃ)-এর বক্তব্যঃ অধিকাংশ ‘উলামাগণের এ কথার উপরই ‘আমল রয়েছে যে, দুই বছরের কম বয়সী ছাড়া দুধ পান করলে উক্ত মহিলা তার দুধ মা সাব্যস্ত হবে না। এটাই ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ)-এর কথা। ইমাম মুহাম্মাদ (রহঃ) তার মুয়াত্ত্বায় বলেছেনঃ দু’ বছরের কম বয়সী ছাড়া দুধ সন্তান সাব্যস্ত হবে না। আর দু’ বছরের কম বয়সে যদি কোনো শিশু এক ঢোক পরিমাণও পান করে তবে উক্ত মহিলা তার জন্য দুধ মা সাব্যস্ত হবে। যেমন ‘আবদুল্লাহ বিন ‘আব্বাস, সা‘ঈদ বিন মুসাইয়্যাব ও ‘উরওয়াহ্ ইবনুয্ যুবায়র (রহঃ) বলেনঃ দু’ বছর অতিক্রম হওয়ার পর দুধ পান করলে কোনো কিছুই হারাম হবে না। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেছেনঃ ‘‘মাতাগণ তাদের সন্তানদেরকে পূর্ণ দু’ বছর দুধ পান করাবেন। এটা তাঁর জন্য যিনি স্তন্য পান কাল পূর্ণ করতে চান’’- (সূরা আল বাকারা ২ : ২৩৩)। সুতরাং দুধ পানের পূর্ণ সময় হলো দুই বছর, আর এ সময়সীমা পার হলে কোনো কিছু হারাম হবে না। অর্থাৎ- দুধ দানকারী দুধ পানকারীর দুধ মা সাব্যস্ত হবে না। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১১৫২)
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যে নারীদেরকে বিয়ে করা হারাম
৩১৭৪-[১৫] হাজ্জাজ ইবনু হাজ্জাজ আল আসলামী তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলেন) হে আল্লাহর রসূল! কিভাবে আমি দুধপানের হক আদায় করতে পারি? উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, একটি (উত্তম) দাস বা দাসী মুক্ত করলে। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ, নাসায়ী, দারিমী)[1]
وَعَنْ حَجَّاجِ بْنِ حَجَّاجٍ الْأَسْلَمِيِّ عَنْ أَبِيهِ أَنَّهُ قَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا يُذْهِبُ عَنِّي مَذَمَّةَ الرِّضَاعِ؟ فَقَالَ: غُرَّةٌ: عَبْدٌ أَوْ أَمَةٌ . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَالنَّسَائِيُّ وَالدَّارِمِيُّ
ব্যাখ্যা: এখানে (مَذَمَّةَ الرِّضَاعِ) দ্বারা উদ্দেশ্য হলো ধাত্রীর আবশ্যকীয় হক বা অধিকার। মনে হয় জিজ্ঞাসাকারীর জিজ্ঞেস ছিল যে, এমনকি কোনো হক আছে যা আদায় করলে ধাত্রীর হক আদায় হয়ে যাবে। আর তারা এটা ভালোবাসত যে, ধাত্রীকে শিশুর দুধ পান শেষ হলে তার সমপরিমাণ পারিশ্রমিক দিতে। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১১৫৩)
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যে নারীদেরকে বিয়ে করা হারাম
৩১৭৫-[১৬] আবূ তুফায়ল আল গানবী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট বসেছিলাম এমন সময় এক মহিলা আসলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় (শরীরের) চাদর বিছিয়ে দিলেন, উক্ত মহিলা তার উপর বসলেন। যখন সে চলে গেলেন, তখন (সাহাবীগণের) কেউ বলল, এ মহিলা তো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দুধপান করিয়েছেন। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ أَبِي الطُّفَيْلِ الْغَنَوِيِّ قَالَ: كُنْتُ جَالِسًا مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذْ أَقْبَلَتِ امْرَأَةٌ فَبَسَطَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رِدَاءَهُ حَتَّى قَعَدَتْ عَلَيْهِ فَلَمَّا ذَهَبَتْ قِيلَ هَذِهِ أَرْضَعَتِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ
ব্যাখ্যাঃ জি’রানী হলো, মক্কার নিকটবর্তী একটি পরিচিত জায়গার নাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে হুনায়ন যুদ্ধের গনীমাত বণ্টনের জন্য ১০ দিনের বেশী সময় অবস্থান করছিলেন।
আল হাফিয (রহঃ) বলেনঃ হালিমাতুস্ সা‘দিয়্যাহ্ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দুধ মা ছিলেন। তিনি আবূ যুআয়ব-এর কন্যা ছিলেন। তার নাম ‘আব্দুল্লাহ বিন হারিস বিন সা‘দ বিন বাকর বিন হাওযান। (‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৫১৩৫; মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যে নারীদেরকে বিয়ে করা হারাম
৩১৭৬-[১৭] ’আব্দুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, গয়লান ইবনু সালামাহ্ আস্ সাকাফী (রাঃ) ইসলাম গ্রহণ করেন এবং তাঁর সাথে জাহিলিয়্যাত যুগে বিবাহিতা ১০ জন স্ত্রীও মুসলিম হলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেন, তুমি চারজন স্ত্রীকে রেখে বাকি সবাইকে ছেড়ে (পৃথক করে) দাও। (আহমাদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ)[1]
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ غيلَان بن سَلمَة الثَّقَفِيَّ أَسْلَمَ وَلَهُ عَشْرُ نِسْوَةٍ فِي الْجَاهِلِيَّةِ فَأَسْلَمْنَ مَعَهُ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَمْسِكْ أَرْبَعًا وَفَارِقْ سَائِرَهُنَّ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيّ وَابْن مَاجَه
ব্যাখ্যা: ইমাম মুহাম্মাদ (রহঃ) তার মুয়াত্ত্বাতে উল্লেখ করেছেন, এ হাদীস থেকে এটাই গ্রহণ করতে পারি যে, তাদের মধ্যে যে কোনো চারজন স্ত্রী গ্রহণ করে অবশিষ্ট একজনকে আলাদা করে দেয়া যাবে। অন্যদিকে ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ) বলেছেনঃ প্রথম চারজন স্ত্রীকে গ্রহণ করতে হবে আর অবশিষ্ট সকল স্ত্রীর সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যাবে। ইব্রাহীম নাখ‘ঈ (রহঃ) অনুরূপ কথা বলেছেন। ইবনুল হুমাম (রহঃ)-এর মতে ইমাম মুহাম্মাদের কথাই অগ্রগণ্য। আর হিদায়াহ্ গ্রন্থে রয়েছে এর বেশী (চারটির বেশী) বিবাহ করা বৈধ নয়। ইবনুল হুমাম (রহঃ) বলেনঃ এর উপর চার ইমাম সহ সকল মুসলিমের ঐকমত্য রয়েছে। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৩য় খন্ড, হাঃ ১১২৮; মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যে নারীদেরকে বিয়ে করা হারাম
৩১৭৭-[১৮] নাওফাল ইবনু মু’আবিয়াহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি যখন ইসলাম গ্রহণ করি, তখন আমার ৫ জন স্ত্রী ছিল- এ ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, একজনকে পৃথক করে দাও এবং ৪ জনকে রাখ (বা রাখতে পার)। অতঃপর আমি অধিককাল (সর্বপ্রথমা) আমার সাহযর্যে ৬০ বছর যাবৎ বন্ধ্যা অবস্থায় কাটিয়েছে, তাকেই বিদায় করার ইচ্ছা করে বিদায় করলাম। (শারহুস্ সুন্নাহ্)[1]
وَعَنْ نَوْفَلِ بْنِ مُعَاوِيَةَ قَالَ: أَسْلَمْتُ وَتَحْتِي خَمْسُ نِسْوَةٍ فَسَأَلْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «فَارِقْ وَاحِدَةً وَأَمْسِكْ أَرْبَعًا» فَعَمَدْتُ إِلَى أَقْدَمِهِنَّ صُحْبَةً عِنْدِي: عَاقِرٍ مُنْذُ سِتِّينَ سنة ففارقتها. رَوَاهُ فِي شرح السّنة
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যে নারীদেরকে বিয়ে করা হারাম
৩১৭৮-[১৯] যহহাক ইবনু ফায়রূয্ আদ্ দায়লামী (রহঃ) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমি মুসলিম হয়েছি, কিন্তু আমার অধীনে দু’ স্ত্রী পরস্পর দু’ বোন। উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তাদের মধ্যে কোনো একজনকে পছন্দ কর (রাখতে পার)। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ)[1]
وَعَنِ الضَّحَّاكِ بْنِ فَيْرُوزٍ الدَّيْلَمِيِّ عَنْ أَبِيهِ قَالَ: قَلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّي أَسْلَمْتُ وتحتي أختَان قَالَ: «اختر أيتها شِئْتَ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَابْنُ مَاجَهْ
ব্যাখ্যা: ইমাম শাফি‘ঈ, মালিক ও আহমাদ (রহঃ)-এর মতে কোনো পুরুষ যদি ইসলাম কবুল করে এবং তার অধীনে যদি দু’বোন স্ত্রী হিসেবে থাকে আর উভয় যদি তার সাথে ইসলাম কবুল করে। তবে দুই স্ত্রীর যে কোনো একজনকে রেখে অপরজনকে বিচ্ছেদ করে দিতে হবে। মিরকাতুল মাফাতীহে অনুরূপ বর্ণনা রয়েছে। ‘আল্লামা খত্ত্বাবী (রহঃ) বলেনঃ এ হাদীসে দলীল রয়েছে যে, দু’জন স্ত্রীর একজনকে পছন্দ করলেই অন্যটির সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ হবে না, তালাক না দেয়া পর্যন্ত। (‘আওনুল মা‘বূদ ৪র্থ খন্ড, হাঃ ২২৪০)
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যে নারীদেরকে বিয়ে করা হারাম
৩১৭৯-[২০] ’আব্দুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈকা নারী মুসলিম হয়ে (নতুন) বিবাহ করে। অতঃপর তার (পূর্ব) স্বামী এসে বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমিও মুসলিম হয়েছি এবং সে (স্ত্রী) আমার ইসলাম গ্রহণের সংবাদ জানে। এটা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত নারীকে তার নবাগত স্বামী হতে বিচ্ছিন্ন করে পূর্ববর্তী স্বামীর কাছে অর্পিত করলেন।
অপর বর্ণনায় আছে, সে (স্বামী) বলল, আমরা একসাথেই মুসলিম হয়েছি, এতে স্ত্রীকে তার (পূর্বের স্বামীর) নিকট ফিরিয়ে দিলেন। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: أَسْلَمَتِ امْرَأَةٌ فَتَزَوَّجَتْ فَجَاءَ زَوْجُهَا إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّي قَدْ أَسْلَمْتُ وَعَلِمَتْ بِإِسْلَامِي فَانْتَزَعَهَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ زَوْجِهَا الْآخَرِ وَرَدَّهَا إِلَى زَوْجِهَا الْأَوَّلِ وَفِي رِوَايَةٍ: أَنَّهُ قَالَ: إِنَّهَا أَسْلَمَتْ مَعِي فَرَدَّهَا عَلَيْهِ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসটি এ মর্মে দলীল, যখন স্বামী ইসলাম কবুল করবে আর স্ত্রী যদি তার স্বামীর ইসলাম কবুল সম্পর্কে অবগত হয় তবু বিবাহ অটুট থাকবে। যদি স্ত্রী অন্য কারো সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় তবে তা বাতিল হয়ে যাবে এবং বাধ্যতামূলকভাবে তাকে পূর্ব স্বামীর কাছেই যেতে হবে। (‘আওনুল মা‘বূদ ৪র্থ খন্ড, হাঃ ২২৩৬)
পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যে নারীদেরকে বিয়ে করা হারাম
৩১৮০-[২১] শারহুস্ সুন্নাহ্-তে বর্ণিত আছে, স্বামী-স্ত্রীর একসাথে মুসলিম হওয়ায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছু সংখ্যক স্ত্রীলোকের তাদের পূর্ব স্বামীগণের নিকট ফিরিয়ে দিলেন, যদিও ধর্ম ও অবস্থানগত দিক দিয়ে পার্থক্য দেখা দিল। তন্মধ্যে একজন হলো ওয়ালীদ ইবনু মুগীরাহ্-এর কন্যা ও সফ্ওয়ান ইবনু উমাইয়্যাহ্’র স্ত্রী যারা মক্কা বিজয়ের দিন ইসলাম গ্রহণ করে এবং তাদের স্বামী ইসলাম কবূলের ভয়ে পালিয়ে যায়। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফ্ওয়ান-কে নিরাপত্তাদানের উদ্দেশে স্বীয় চাদর দিয়ে তার চাচাতো ভাই ওয়াহ্ব ইবনু ’উমায়র-কে তার নিকট পাঠালেন। যখন সফ্ওয়ান ফিরে আসলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে চারমাস অবাধে ঘুরে বেড়াবার অবকাশ দিলেন (এজন্য যে, মুসলিমদের সাথে চলাফেরায় তাদের ’আমল-আখলাকের সৌন্দর্য দেখে ইসলাম গ্রহণে উদ্বুদ্ধ হয়)। অবশেষে সে মুসলিম হয় এবং তার স্ত্রী তার নিকটেই থেকে যায়। অপর একজন হলো ’ইকরিমাহ্ ইবনু আবূ জাহাল-এর স্ত্রী হারিস বিনতু হাকীম মক্কা বিজয়ের দিনে ইসলাম গ্রহণের ভয়ে পালিয়ে ইয়ামানে চলে যায়। তার স্ত্রী উম্মু হাকীম স্বামীর উদ্দেশে ইয়ামানে যায় এবং স্বামীকে ইসলামের প্রতি আহবান জানালে সে মুসলিম হয় এবং উভয়ের পূর্ব বিবাহ অটুট থাকে।
(ইমাম মালিক হাদীসটি মুহাম্মাদ ইবনু শিহাব যুহরী হতে মুরসালরূপে বর্ণনা করেন)[1]
وَرُوِيَ فِي «شَرْحِ السُّنَّةِ» : أَنَّ جَمَاعَةً مِنَ النِّسَاءِ رَدَّهُنَّ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالنِّكَاحِ الأول على أَزوَاجهنَّ عِنْد اجْتِمَاع الإسلاميين بَعْدَ اخْتِلَافِ الدِّينِ وَالدَّارِ مِنْهُنَّ بِنْتُ الْوَلِيدِ بْنِ مُغِيرَةَ كَانَتْ تَحْتَ صَفْوَانَ بْنِ أُمَيَّةَ فَأَسْلَمَتْ يَوْمَ الْفَتْحِ وَهَرَبَ زَوْجُهَا مِنَ الْإِسْلَامِ فَبعث النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَيْهِ ابْنَ عَمِّهِ وَهْبَ بْنَ عُمَيْرٍ بِرِدَاءِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَمَانًا لِصَفْوَانَ فَلَمَّا قَدِمَ جَعَلَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَسْيِيرَ أَرْبَعَةِ أَشْهُرٍ حَتَّى أَسْلَمَ فَاسْتَقَرَّتْ عِنْدَهُ وَأَسْلَمَتْ أَمُّ حَكِيمٍ بِنْتُ الْحَارِثِ بْنِ هِشَامٍ امْرَأَةُ عِكْرِمَةَ بْنِ أَبِي جَهْلٍ يَوْمَ الْفَتْحِ بِمَكَّةَ وَهَرَبَ زَوْجُهَا مِنَ الْإِسْلَامِ حَتَّى قَدِمَ الْيَمَنَ فَارْتَحَلَتْ أَمُّ حَكِيمٍ حَتَّى قَدِمَتْ عَلَيْهِ الْيَمَنَ فَدَعَتْهُ إِلَى الْإِسْلَامِ فَأَسْلَمَ فَثَبَتَا عَلَى نِكَاحِهِمَا. رَوَاهُ مَالِكٌ عَنِ ابْنِ شهَاب مُرْسلا