পরিচ্ছেদঃ ৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - যে নারীদেরকে বিয়ে করা হারাম
৩১৬০-[১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোনো নারী ও তার স্বীয় ফুফু এবং কোনো নারী ও তার স্বীয় খালাকে একত্রে বিয়ে করা যাবে না। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ الْمُحَرَّمَاتِ
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا يُجْمَعُ بَيْنَ الْمَرْأَة وعمتها وَلَا بَين الْمَرْأَة وخالتها»
ব্যাখ্যা: অপর বর্ণনায় রয়েছে, ভাতিজির উপর ফুফীকে এবং ভাগ্নির উপর খালাকে বিবাহ করা যাবে না। উল্লেখিত হাদীস ‘উলামাগণের জন্য এ মর্মে যথেষ্ট দলীল, স্ত্রী এবং তার ফুফীকে বিবাহ করা, স্ত্রী এবং তার খালাকে একত্র বিবাহ করা হারাম, চাই সেটা নিজ খালা, অর্থাৎ- বাবার বোন এবং মায়ের বোন হোক, অথবা হুকুমগত খালা ও ফুফী (অর্থাৎ- তা হলো দাদার বোন এবং দাদার বাবার বোন এবং ঊর্ধ্বতন যারা রয়েছেন, অথবা নানার বোন, নানীর মায়ের বোনসহ বাবা এবং মায়ের দিক থেকে ঊর্ধ্বতন যারা রয়েছেন তারা সকলেই হুকুমগত খালা ও ফুফীর অন্তর্ভুক্ত) হোক না কেন, এ সকলকে বিবাহের মাধ্যমে একত্র করা সর্বসম্মতিক্রমে হারাম। তবে খারিজী ও শী‘আদের একদল, যারা মনে করে এটি বৈধ। (শারহে মুসলিম ৯/১০ খন্ড, হাঃ ১৪০৮)
পরিচ্ছেদঃ ৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - যে নারীদেরকে বিয়ে করা হারাম
৩১৬১-[২] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বংশগত (রক্ত সম্পর্কের) কারণে ও দুধপান সম্পর্কের ভিত্তিতে সকল ক্ষেত্রে বিবাহ হারাম। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ الْمُحَرَّمَاتِ
وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَحْرُمُ مِنَ الرَّضَاعَةِ مَا يحرم من الْولادَة» . رَوَاهُ البُخَارِيّ
পরিচ্ছেদঃ ৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - যে নারীদেরকে বিয়ে করা হারাম
৩১৬২-[৩] উক্ত রাবী [’আয়িশাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমার দুধ-চাচা এসে আমার সাথে সাক্ষাতের অনুমতি চাইলে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস না করা পর্যন্ত অনুমতি দিতে অস্বীকার করলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসলে আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম। উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, সে তো তোমার চাচা, তাকে অনুমতি দাও। ’আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! (আমি তো জানি) আমাকে নারী দুধপান করিয়েছে, পুরুষে তো পান করায়নি। প্রত্যুত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন যে, তোমার চাচা (আপন চাচার মতো) সে তোমার কাছে আসতেই পারে। (’আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন) এ ঘটনা আমাদের ওপর পর্দার বিধান অবতীর্ণ হওয়ার পরে সংঘটিত হয়েছে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ الْمُحَرَّمَاتِ
وَعَنْهَا قَالَتْ: جَاءَ عَمِّي مِنَ الرَّضَاعَةِ فَاسْتَأْذَنَ عَلَيَّ فَأَبَيْتُ أَنْ آذَنَ لَهُ حَتَّى أَسْأَلَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَجَاءَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَسَأَلْتُهُ فَقَالَ: «أَنَّهُ عَمُّكِ فَأْذَنِي لَهُ» قَالَت: فَقلت: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّمَا أَرْضَعَتْنِي الْمَرْأَةُ وَلَمْ يرضعني الرَّجُلُ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّه عمك فليلج عَلَيْك» وَذَلِكَ بَعْدَمَا ضرب علينا الْحجاب
ব্যাখ্যা: বংশীয় সূত্রে মহিলাদের সাথে পুরুষের সাক্ষাতের কিংবা অন্যান্য ক্ষেত্রে যে হুকুম প্রযোজ্য, দুধপান সূত্রেও সকল ক্ষেত্রে সে হুকুমই প্রযোজ্য। (ফাতহুল বারী ৯ম খন্ড, হাঃ ৫২৩৯)
পরিচ্ছেদঃ ৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - যে নারীদেরকে বিয়ে করা হারাম
৩১৬৩-[৪] ’আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, (আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললাম) হে আল্লাহর রসূল! আপনি কি আপনার চাচা হামযাহ্’র মেয়েকে বিয়ে করতে আগ্রহী হন না? কেননা, সে তো কুরায়শ যুবতীদের মধ্যে সুন্দরী রমণী। তদুত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি কি জান না যে, হামযাহ্ আমার দুধ-ভাই? আল্লাহ তা’আলা বংশগত (রক্ত সম্পর্কের) কারণে যা হারাম করেছেন, দুগ্ধপান করার কারণেও তা হারাম করেছেন। (মুসলিম)[1]
بَابُ الْمُحَرَّمَاتِ
وَعَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ هَلْ لَكَ فِي بِنْتِ عَمِّكَ حَمْزَةَ؟ فَإِنَّهَا أَجْمَلُ فَتَاةٍ فِي قُرَيْشٍ فَقَالَ لَهُ: «أَمَا عَلِمْتَ أَنَّ حَمْزَةَ أَخِي مَنِ الرَّضَاعَةِ؟ وَأَنَّ اللَّهَ حَرَّمَ مِنَ الرَّضَاعَةِ مَا حرم من النّسَب؟» . رَوَاهُ مُسلم
পরিচ্ছেদঃ ৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - যে নারীদেরকে বিয়ে করা হারাম
৩১৬৪-[৫] উম্মুল ফাযল (রাঃ) (’আব্বাস (রাঃ)-এর স্ত্রী) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ একবার বা দু’বারের দুধপানে হারাম হয় না।[1]
بَابُ الْمُحَرَّمَاتِ
وَعَنْ أُمِّ الْفَضْلِ قَالَتْ: أَنَّ نَبِيَّ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَا تُحَرِّمُ الرضعة أَو الرضعتان»
পরিচ্ছেদঃ ৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - যে নারীদেরকে বিয়ে করা হারাম
৩১৬৫-[৬] আর ’আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর বর্ণনায় রয়েছে, (তিনি বলেন) একবার বা দু’বার চোষণে হারাম হয় না।[1]
بَابُ الْمُحَرَّمَاتِ
وَفِي رِوَايَةِ عَائِشَةَ قَالَ: «لَا تُحَرِّمُ الْمَصَّةُ والمصتان»
পরিচ্ছেদঃ ৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - যে নারীদেরকে বিয়ে করা হারাম
৩১৬৬-[৭] উম্মুল ফাযল (রাঃ)-এর অপর বর্ণনায় আছে, (তিনি বলেন) একবার বা দু’বার (দুধপানের জন্য) মুখে (স্তনে) প্রবেশ করানোর ফলে হারাম হয় না। (উপরোক্ত তিনটি হাদীস ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেছেন)[1]
بَابُ الْمُحَرَّمَاتِ
وَفِي أُخْرَى لِأُمِّ الْفَضْلِ قَالَ: «لَا تُحَرِّمُ الإملاجة والإملاجتان» . هَذِه رِوَايَات لمُسلم
ব্যাখ্যা: এক বর্ণনায় রয়েছে, লোকটি বলল, ইয়া রসূল্লাল্লাহ! এক ঢোক দুধ পান করলেই কি হারাম হয়ে যাবে? তিনি বললেন, না। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর অপর বর্ণনায় রয়েছে, এ ব্যাপারে কুরআন নাযিল হয়েছে তাতে ১০ ঢোক পান করলে দুধ মা সাব্যস্ত হবে, এর পরবর্তীতে ৫ ঢোক মানসূখ করা হয়। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইনতিকাল করলেন, এ ব্যাপারে এমনই ছিল। (শারহে মুসলিম ৯/১০ খন্ড, হাঃ ১৪৫১)
পরিচ্ছেদঃ ৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - যে নারীদেরকে বিয়ে করা হারাম
৩১৬৭-[৮] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, কুরআন মাজীদে (প্রথমে) নাযিল হয়েছিল, (وَأُمَّهَاتُكُمُ اللَّاتِىْ أَرْضَعْنَكُمْ) অর্থাৎ- ’’এবং তোমাদের মাতাগণ যারা তোমাদেরকে দুগ্ধপান করিয়েছেন’’- (সূরা আন্ নিসা ৪ : ২৩) এ আয়াতের শেষাংশে] عَشْرُ رَضَعَاتٍ مَعْلُومَاتٍ ’’নিশ্চিত জানা যায় দশবার’’ দুগ্ধপানে হারাম করে, পরে خَمْسٍ مَعْلُومَاتٍ ’’নিশ্চিত জানা যায় পাঁচবার’’-এর দ্বারা তা মানসূখ (রহিত) হয়ে যায়। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তেকাল করেন। অথচ (সাহাবীরা) এটা কুরআনে পড়ত। (মুসলিম)[1]
بَابُ الْمُحَرَّمَاتِ
وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: كَانَ فِيمَا أُنْزِلَ مِنَ الْقُرْآنِ: «عَشْرُ رَضَعَاتٍ مَعْلُومَاتٍ يُحَرِّمْنَ» . ثُمَّ نُسِخْنَ بِخَمْسٍ مَعْلُومَاتٍ فَتُوُفِّيَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهِيَ فِيمَا يُقْرَأُ مِنَ الْقُرْآنِ. رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: মানসূখ তিন প্রকার- (১) হুকুম ও তিলাওয়াত উভয় মানসূখ, যেমন ১০ ঢোক দুধ পান করার আয়াত। (২) তিলাওয়াত মানসূখ, তবে হুকুম বলবৎ রয়েছে। যেমন পাঁচ ঢোক দুধ পান করানোর আয়াত। (৩) হুকুম মানসূখ তিলাওয়াত বলবৎ রয়েছে, যেমন- ‘‘তোমাদের মধ্যে যারা মারা যাবে এবং স্ত্রী রেখে যাবে, তারা যেন তাদের স্ত্রীদের ঘর থেকে বের না করে, তাদের এক বছরের ভরণ-পোষণের ওয়াসিয়্যাত করে।’’ (সূরা আল বাকারা ২ : ২৪৩)
কতটুকু পরিমাণ দুধ পান করলে দুধ মা সাব্যস্ত হবে, এ ব্যাপারে ‘উলামাগণের মাঝে ইখতিলাফ রয়েছে। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) এবং ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ) ও তার অনুসারীদের মতে পাঁচ ঢোকের কমে দুধমা সাব্যস্ত হবে না। জুমহূর ‘উলামাগণের মতে ১ ঢোক পান করলেই দুধ মা সাব্যস্ত হবে। এ বর্ণনায় রয়েছে ইবনুল মুনযির, ‘আলী, ইবনু মাস্‘ঊদ, ইবনু ‘উমার, ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ), ‘আত্বা, তাঊস ইবনুল মুসাইয়্যাব, হাসান, মাকহূল, যুহরী, কাতাদাহ (রহঃ) প্রমুখগণ থেকে।
আবূ সূর, আবূ ‘উবায়দ, ইবনুল মুনযির ও দাঊদ (রহঃ)-এর মতে তিন ঢোকের কম দুধ পান করলে দুধ মা সাব্যস্ত হবে না। ইমাম শাফি‘ঈ ও তার অনুসারীগণ দলীল গ্রহণ করেছেন ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) পাঁচ ঢোক দুধ পান করানো হাদীস দ্বারা। ইমাম মালিক (রহঃ) কুরআনুল মাজীদে এ আয়াত, ‘‘তোমাদের মা যারা তোমাদের দুধ পান করিয়েছেন’’- (সূরা আন্ নিসা ৪ : ২৩)। তার মতে নির্ধারিত কোনো সংখ্যা (ঢোকের সংখ্যা) নেই। দাঊদ ও তার সহযোগীরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদীস এক ঢোক বা দু’ঢোকে দুধ মা সাব্যস্ত হবে না, এ হাদীস থেকে দলীল গ্রহণ করেছেন। (শারহে মুসলিম ৯/১০ খন্ড, হাঃ ১৪৫২)
পরিচ্ছেদঃ ৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - যে নারীদেরকে বিয়ে করা হারাম
৩১৬৮-[৯] উক্ত রাবী [’আয়িশাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার ঘরে প্রবেশ করে (অপরিচিত) একজন পুরুষকে দেখতে পেয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করলেন। আমি বললাম, সে তো আমার (দুধ) ভাই। প্রত্যুত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, (শারী’আতের বিধানে দেখ) কারা তোমার দুধ ভাই? কেননা, দুধের বিধান দুধপানের ক্ষুধার তাড়নায় দুধ পান করলে (অর্থাৎ- দুধপানের বয়সের মধ্যে দুধপান করলে বিয়ে হারাম হয় ও পর্দার শিথিলতা থাকে, কিন্তু ঐ বয়সের পরে পান করলে তা নাজায়িয)। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ الْمُحَرَّمَاتِ
وَعَنْهَا: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَخَلَ عَلَيْهَا وَعِنْدَهَا رَجُلٌ فَكَأَنَّهُ كَرِهَ ذَلِكَ فَقَالَت: إِنَّه أخي فَقَالَ: «انظرن من إخوانكن؟ فَإِنَّمَا الرضَاعَة من المجاعة»
ব্যাখ্যা: শারী‘আতে দুধ মা সাব্যস্ত হওয়াটা নির্ভর করে, শিশুর ক্ষুধা নিবারণের উপর। আর এটা শিশুকাল ছাড়া হওয়া সম্ভব নয়। সুতরাং প্রমাণিত হয় বড়দের ক্ষেত্রে দুধ পান করলেও এর কোনো প্রভাব পড়বে না, অর্থাৎ- দুধ মা সাব্যস্ত হবে না। কারণ দুধ পানে তার ক্ষুধা নিবারণ হবে না এবং রুটি বা অন্য কোনো উঠানো খাবার ছাড়া সে পরিতৃপ্তও হবে না। সুতরাং বড় কোনো ছেলেকে কোনো মহিলা দুধ পান করালেও সে দুধ মা হিসেবে পরিগণিত হবে না। শারহেস্ সুন্নাহতেও অনুরূপ বর্ণনা রয়েছে। অন্যদিকে একজন ধাত্রী কত দিন দুধ পান করাবেন- এ মর্মে ইখতিলাফ রয়েছে। একদল ‘উলামাগণের মত হলো, পূর্ণ দুই বছর।
দলীলঃ ‘‘ধাত্রীগণ তাদের সন্তানদেরকে পূর্ণ দুই বছর দুধ পান করাবেন’’- (সূরা আল বাকারা ২ : ২৩৩)। সুতরাং দু’ বছর পূর্ণ হলে দুধ পান করানোর হুকুম আর থাকবে না। ইবনু মাস্‘ঊদ, আবূ হুরায়রাহ্, উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) অনুরূপ বলেছেন, ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ) অনুরূপ বলেছেন। ইমাম মালিক (রহঃ) দুই বছরের বেশী পান করানোর কথা বলেছেন। ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ)-এর মতে দুধপানের সময়সীমা ৩০ মাস। তার দলীল তাকে গর্ভধারণ করতে ও স্তন্য ছাড়াতে সময় লাগে ৩০ মাস। (ফাতহুল বারী ৫ম খন্ড, হাঃ ২৬৪৭; শারহে মুসলিম ৯/১০ খন্ড, হাঃ ১৪৫৫; মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - যে নারীদেরকে বিয়ে করা হারাম
৩১৬৯-[১০] ’উকবা ইবনুল হারিস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি আবূ ইহাব ইবনু ’আযীয -এর কন্যাকে বিয়ে করেন। অতঃপর জনৈকা মহিলা এসে বলল, আমি ’উকবা এবং তার স্ত্রীকে দুধপান করিয়েছি (তাদের বিবাহ কি বৈধ?)। ’উকবা উক্ত মহিলাটিকে বললেন, আপনি যে আমাকে দুধ পান করিয়েছেন (আমি জানি না) এবং তা কক্ষনো আমাকে বলেননি। অতঃপর তিনি (’উকবা ইবনুল হারিস) তার স্ত্রীর পরিবারের নিকট লোক পাঠিয়ে জানতে চাইলেন, উত্তরে তারা বলল যে, ঐ মহিলাটি যে আমাদের কন্যাকে দুধ পান করিয়েছে, তা আমরাও জানি না। অতঃপর ’উকবা মদীনায় এসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উপস্থিত হয়ে জানতে চাইলেন। উত্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা কিভাবে দাম্পত্য জীবন যাপন করবে, যেহেতু একটি কথা (দুধপানের ব্যাপারে) উঠেছে? এটা শুনে ’উকবা তার স্ত্রীকে ত্যাগ করলেন (তালাক দিলেন) এবং ঐ স্ত্রী অন্যত্র অন্য পুরুষের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলো। (বুখারী)[1]
بَابُ الْمُحَرَّمَاتِ
وَعَنْ عُقْبَةَ بْنِ الْحَارِثِ: أَنَّهُ تَزَوَّجَ ابْنَةً لِأَبِي إِهَابِ بْنِ عَزِيزٍ فَأَتَتِ امْرَأَةٌ فَقَالَتْ: قَدْ أَرْضَعْتُ عُقْبَةَ وَالَّتِي تَزَوَّجَ بِهَا فَقَالَ لَهَا عُقْبَةُ: مَا أَعْلَمُ أَنَّكِ قَدْ أَرْضَعْتِنِي وَلَا أَخْبَرْتِنِي فَأَرْسَلَ إِلَى آلِ أَبِي إِهَابٍ فَسَأَلَهُمْ فَقَالُوا: مَا عَلِمْنَا أَرْضَعْتَ صَاحِبَتُنَا فَرَكِبَ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالْمَدِينَةِ فَسَأَلَهُ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «كَيْفَ وَقَدْ قِيلَ؟» فَفَارَقَهَا عُقْبَةُ وَنَكَحَتْ زوجا غَيره. رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যা: এখানে উদ্দেশ্য হলো, আগন্তুক মহিলা দুধ পান করানোর বিষয়টি নিশ্চিত করছে আর ‘উকবা তা অস্বীকার করছেন, অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত মহিলার কথার উপর ভিত্তি করে তাকে (‘উকবা ) তার স্ত্রীকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার নির্দেশ দিলেন। তিনি যা বললেন তা আবশ্যকীয় হতে পারে অথবা তাকওয়ার ভিত্তিতে তা (এমন পরিস্থিতিতে স্ত্রী আলাদা করে দেয়া) বৈধ হতে পারে। সঠিক বিষয় আল্লাহই ভালো জানেন। (ফাতহুল বারী ৫ম খন্ড, হাঃ ২৬৪০)
পরিচ্ছেদঃ ৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - যে নারীদেরকে বিয়ে করা হারাম
৩১৭০-[১১] আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুনায়ন যুদ্ধের সময় আওত্বাস-এর (ত্বায়িফ-এর সন্নিকটবর্তী এলাকার) দিকে একটি সেনাবাহিনী পাঠালেন। তারা শত্রুর ওপর জয়লাভ করেন এবং কিছুসংখ্যক নারী তাদের হস্তগত হয় (যা গনীমাত হিসেবে পরবর্তীতে দাসীতে রূপান্তরিত হয়)। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কোনো কোনো সাহাবী অধিকৃত নারীদের মুশরিক স্বামীর থাকার কারণে তাদের সাথে সহবাস করতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন। (যেহেতু তাদের মুশরিক স্বামীগণ পরাজিত ও পলাতক শত্রুদের মধ্যে জীবিত রয়েছে)। অতঃপর এ সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা আয়াত নাযিল করলেন, অর্থাৎ- ’’এবং (নারীর মধ্যে) তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসী ব্যতীত সকল সধবা নিষিদ্ধ’’- (সূরা আন্ নিসা ৪ : ২৪)। (রাবী বলেন) অতঃপর ঐ সমস্ত দাসী তোমাদের জন্য হালাল যখন তাদের ’ইদ্দত (এক ঋতু) পূর্ণ হলো। (মুসলিম)[1]
بَابُ الْمُحَرَّمَاتِ
وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيُّ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ حُنَيْنٍ بَعَثَ جَيْشًا إِلَى أَوْطَاسٍ فَلَقُوا عَدُوًّا فَقَاتَلُوهُمْ فَظَهَرُوا عَلَيْهِمْ وَأَصَابُوا لَهُمْ سَبَايَا فَكَأَنَّ نَاسًا مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَحَرَّجُوا مِنْ غِشْيَانِهِنَّ مِنْ أَجْلِ أَزْوَاجِهِنَّ مِنَ الْمُشْرِكِينَ فَأَنْزَلَ اللَّهُ تَعَالَى فِي ذَلِكَ (وَالْمُحْصَنَاتُ مِنَ النِّسَاء إِلَّا مَا ملكت أَيْمَانكُم)
أَيْ فَهُنَّ لَهُمْ حَلَالٌ إِذَا انْقَضَتْ عِدَّتُهُنَّ. رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: এখানে উল্লেখিত এ আয়াতে مُحْصَنَاتُ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো বিবাহিতা নারীগণ। এর অর্থ হলো, বিবাহিতা স্ত্রীগণ তাদের স্বামী ছাড়া অন্যদের ওপর হারাম। কিন্তু যে সকল নারীরা যুদ্ধবন্দী হয়ে তোমাদের অধিনস্থ হবে, তাদের পরবর্তী মুশরিক স্বামীর সাথে বিবাহ বন্ধন বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। আর তারা পবিত্র হওয়ার পর তোমাদের জন্য তাদের ব্যবহার করা হালাল। এ হাদীসে উল্লেখিত তাদের ‘ইদ্দত শেষ হওয়া দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, তারা যদি গর্ভবর্তী হয় তাহলে সন্তানপ্রসব করা, নতুবা এক হায়িয অতিবাহিত করার মাধ্যমে পবিত্র হওয়া। যেমন একাধিক বিশুদ্ধ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। (শারহে মুসলিম ৯/১০ খন্ড, হাঃ ১৪৫৬)