পরিচ্ছেদঃ ১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - উপার্জন করা এবং হালাল রুযী অবলম্বনের উপায় সন্ধান করা
২৭৮১-[২৩] ’আব্দুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অন্যান্য ফরয কাজ আদায়ের সাথে হালাল রুযী-রোজগারের ব্যবস্থা গ্রহণ করাও একটি ফরয। (বায়হাক্বী- শু’আবুল ঈমান)[1]
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «طَلَبُ كَسْبِ الْحَلَالِ فَرِيضَةٌ بَعْدَ الْفَرِيضَةِ» . رَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ فِي شعب الْإِيمَان
ব্যাখ্যা: (طَلَبُ كَسْبِ الْحَلَالِ فَرِيضَةٌ) ‘‘হালাল উপায়ে উপার্জনের রাস্তা তালাশ করা ফরয।’’ অর্থাৎ নিজের প্রয়োজন মিটানো অথবা অন্যের প্রয়োজন মিটানোর দায়িত্ব যার ওপর অর্পিত তার কর্তব্য হলো হালাল উপায়ে উপার্জন করা। রাস্তা খোঁজে বের করা। অর্থাৎ সুনিশ্চিত হালাল এমন পন্থায় উপার্জন করা যা হালাল হতে পারে, আবার হারাম হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। এমন সন্দেহজনক পন্থা পরিহার করে নিশ্চিত হালাল পন্থায় উপার্জন করা ফরয।
(بَعْدَ الْفَرِيضَةِ) ‘‘ফরযের পর ফরয’’। অর্থাৎ সালাত, সওম ও হজ্জ/হজ ইত্যাদি ফরয কার্য সম্পাদনের মতো হালাল উপায়ে উপার্জন করাও একটি ফরয কাজ, আর তা অব্যাহতভাবে চলতে থাকবে। হজ্জ/হজ জীবনে মাত্র একবার ফরয, সওম বৎসরে মাত্র এক মাস, কিন্তু হালাল উপার্জন সর্বদাই ফরয। তা কোনো সময়ের সাথে সীমাবদ্ধ নয়। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - উপার্জন করা এবং হালাল রুযী অবলম্বনের উপায় সন্ধান করা
২৭৮২-[২৪] ’আব্দুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তাঁকে একবার কুরআন মাজীদ লেখার মজুরি বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে, জবাবে তিনি বললেন, তাতে কোনো দোষ নেই। কারণ তারা তো (কুরআনের) হরফসমূহের নক্সা অঙ্কন করে নিজ হাতের উপার্জন খেয়ে থাকে। (রযীন)[1]
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا أَنَّهُ سُئِلَ عَنْ أُجْرَةِ كِتَابَةِ الْمُصْحَفِ فَقَالَ: لَا بَأْسَ إِنَّمَا هُمْ مُصَوِّرُونَ وَإِنَّهُمْ إِنَّمَا يَأْكُلُونَ من عمل أَيْديهم. رَوَاهُ رزين
ব্যাখ্যা: (إِنَّمَا هُمْ مُصَوِّرُونَ) ‘‘তারা তো শুধুমাত্র অঙ্কনকারী’’। অর্থাৎ মুসহাফ লেখকগণ শুধুমাত্র কুরআনের অক্ষর অঙ্কন করে আর তা দূষণীয় নয়।
(وَإِنَّهُمْ إِنَّمَا يَأْكُلُونَ مِنْ عَمَلِ أَيْدِيْهِمْ) ‘‘তারা তো শুধুমাত্র তাদের স্বীয় হস্তের উপার্জনই ভক্ষণ করে।’’ আর স্বীয় হস্তের উপার্জন সর্বাধিক উত্তম উপার্জন। ‘আল্লামা ত্বীবী বলেনঃ পাঠ করা এবং পঠিত, লেখা এবং লিখিত এর সবগুলোর সমন্বয়ে হলো কুরআন তথা মুসহাফ। এক্ষেত্রে লেখা ও পাঠ করা এটি হলো মানুষের কর্ম। তাই মুসহাফ লেখা যেহেতু মানুষের কর্ম সেহেতু মুসহাফ লিখে তার পারিশ্রমিক নেয়া বৈধ। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - উপার্জন করা এবং হালাল রুযী অবলম্বনের উপায় সন্ধান করা
২৭৮৩-[২৫] রাফি’ ইবনু খাদীজ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রসূল! কোন্ ধরনের উপার্জন সর্বোত্তম? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, নিজের হাতের কাজ (কায়িক পরিশ্রমের কাজ) এবং প্রত্যেক সঠিক ক্রয়-বিক্রয়। (আহমাদ)[1]
وَعَنْ رَافِعِ بْنِ خَدِيجٍ قَالَ: قِيلَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَيُّ الْكَسْبِ أَطْيَبُ؟ قَالَ: «عَمَلُ الرَّجُلِ بِيَدِهِ وَكُلُّ بَيْعٍ مَبْرُورٍ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ
ব্যাখ্যা: (عَمَلُ الرَّجُلِ بِيَدِه) ‘‘স্বীয় হস্তের কর্ম’’। যেমন কৃষিকাজ, ব্যবসা, লেখা ও হস্তশিল্প- এ সবগুলোই স্বীয় হস্তের কর্ম। আর এ ধরনের কর্মের উপার্জিত অর্থ সর্বাধিক উত্তম।
(بَيْعٍ مَبْرُورٍ) ‘‘সঠিক ক্রয়-বিক্রয়’’ এর দ্বারা উদ্দেশ্য এমন ক্রয়-বিক্রয়, যার মধ্যে ধোঁকা-বিশ্বাস ভঙ্গ নেই। অথবা যে ক্রয়-বিক্রয় শারী‘আতসম্মত, শারী‘আত সমর্থন করে না এমন ক্রয়-বিক্রয় নয়। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - উপার্জন করা এবং হালাল রুযী অবলম্বনের উপায় সন্ধান করা
২৭৮৪-[২৬] আবূ বকর ইবনু আবূ মারইয়াম হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মিকদাম ইবনু মা’দীকারিব (রাঃ)-এর একটি ক্রীতদাসী ছিল। সে দুধ বিক্রি করতো আর মিকদাম এর মূল্য গ্রহণ করতেন। তাঁকে বলা হলো, সুবহানাল্লাহ! দাসীটি দুধ বিক্রয় করছে আর তুমি তার মূল্য গ্রহণ করছ? জবাবে মিকদাম বললেন, জি হ্যাঁ, গ্রহণ করি; এতে কোনো দোষ নেই। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, লোকেদের সামনে এমন যুগ আসবে (হারাম হতে বাঁচার জন্য) অর্থ-কড়ি (দিরহাম ও দীনারের মূল্য) ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না। (আহমাদ)[1]
وَعَن أبي بكرِ بنِ أبي مريمَ قَالَ: كَانَتْ لِمِقْدَامِ بْنِ مَعْدِي كَرِبَ جَارِيَةٌ تَبِيعُ اللَّبَنَ وَيَقْبِضُ الْمِقْدَامُ ثَمَنَهُ فَقِيلَ لَهُ: سُبْحَانَ اللَّهِ أَتَبِيعُ اللَّبَنَ؟ وَتَقْبِضُ الثَّمَنَ؟ فَقَالَ نَعَمْ وَمَا بَأْسٌ بِذَلِكَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «لَيَأْتِيَنَّ عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ لَا يَنْفَعُ فِيهِ إِلَّا الدِّينَارُ وَالدِّرْهَم» . رَوَاهُ أَحْمد
ব্যাখ্যা: (أَتَبِيعُ اللَّبَنَ؟ وَتَقْبِضُ الثَّمَنَ؟) ‘‘দাসীটি দুধ বিক্রিয় করছে আর আর তুমি তার মূল্য গ্রহণ করছ?’’ অর্থাৎ তোমার উপস্থিতিতে দাসী মাল বিক্রয় করছে, তুমি পাহারাদারের মতো তার নিকট দাঁড়িয়ে আছ এবং তুমি এ বিক্রয়লব্ধ মূল্য গ্রহণ করছ- মর্যাদানুযায়ী এ কাজ তোমার জন্য শোভা পায় না।
(وَمَا بَأْسٌ بِذٰلِكَ) ‘‘এতে তো কোনো দোষ নেই’’। কেননা তা হারাম নয় এবং এতে শারী‘আতের কোনো বিধান লঙ্ঘিত হচ্ছে না।
(لَيَأْتِيَنَّ عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ لَا يَنْفَعُ فِيهِ إِلَّا الدِّينَارُ وَالدِّرْهَم) ‘‘মানুষের নিকট এমন এক সময় আসবে যখন দীনার ও দিরহাম ছাড়া কোনো উপকার হবে না’’। এখানে দীনার ও দিরহাম দ্বারা উদ্দেশ্য সম্পদ। অর্থাৎ এমন এক সময় আসবে যখন মানুষ কারো চরিত্র দ্বারা মূল্যায়ন করবে না, বরং সম্পদের দ্বারা মূল্যায়ন করবে। যার সম্পদ আছে মানুষ তাকে সমীহ করবে ও সম্মান দেখাবে যদিও চরিত্রের দিক থেকে সে নিম্নমানের হয়।
ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ মানুষের পক্ষে স্বহস্তে উপার্জন না করে কোনো উপায় থাকবে না, কারণ কেউ যদি স্বয়ং উপার্জন না করে তাহলে সে হারামের মধ্যে নিপতিত হবে। বর্ণিত আছে যে, কেউ মিকদামকে বলেছিল, স্বহস্তে উপার্জন তো আপনার সম্মানহানি হবে। উত্তরে তিনি বলেছিলেন যে, এতে আমার মর্যাদাহানি হবে না, বরং এর দ্বারা আমার মর্যাদা রক্ষা পাবে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - উপার্জন করা এবং হালাল রুযী অবলম্বনের উপায় সন্ধান করা
২৭৮৫-[২৭] নাফি’ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি সিরিয়া ও মিসরে ব্যবসায়ী পণ্য রপ্তানি করতাম। একবার আমি ইরাকেও পণ্য পাঠালাম। অতঃপর উম্মুল মু’মিনীন ’আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করলাম, আমি তো সিরিয়ায় পণ্য সরবরাহ করে থাকি, অতঃপর এবার ইরাকেও মাল রপ্তানি করেছি। আমার কথা শুনে তিনি [’আয়িশাহ্ (রাঃ)] বললেন, এরূপ করবে না; তোমার আগের ব্যবসাস্থলে (শহরে) কি হয়েছে? আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তোমাদের কারো রিযক আল্লাহ তা’আলা এক উপায় হতে দিতে থাকলে, তাতে কোনো বাধা বা অসুবিধা সৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত তা পরিবর্তন করবে না। (আহমাদ, ইবনু মাজাহ)[1]
وَعَنْ نَافِعٍ قَالَ: كُنْتُ أُجَهِّزُ إِلَى الشَّامِ وَإِلَى مِصْرَ فَجَهَّزْتُ إِلَى الْعِرَاقِ فَأَتَيْتُ إِلَى أُمِّ الْمُؤْمِنِينَ عَائِشَةَ فَقُلْتُ لَهَا: يَا أُمَّ الْمُؤْمِنِينَ كُنْتُ أُجَهِّزُ إِلَى الشَّامِ فَجَهَّزْتُ إِلَى العراقِ فقالتْ: لَا تفعلْ مالكَ وَلِمَتْجَرِكَ؟ فَإِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «إِذَا سَبَّبَ اللَّهُ لِأَحَدِكُمْ رِزْقًا مِنْ وَجْهٍ فَلَا يَدَعْهُ حَتَّى يَتَغَيَّرَ لَهُ أَوْ يَتَنَكَّرَ لَهُ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَابْنُ مَاجَه
ব্যাখ্যা: (فَقَالَتْ : لَا تَفْعَلْ) ‘‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বললেনঃ তুমি এরূপ করবে না।’’ অর্থাৎ তোমার ব্যবসার স্থান পরিত্যাগ করবে না।
(مَالَكَ وَلِمَتْجَرِكَ؟) ‘‘তোমার এবং তোমার ব্যবসাস্থলের কি হয়েছে?’’ অর্থাৎ তোমারই বা কি ঘটেছে এবং তোমার ব্যবসাস্থলের মধ্যে কি ঘটেছে, যার জন্য তুমি ব্যবসাস্থল পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছ। তোমার কি কোনো কিছু হয়েছে যার জন্য তোমার ব্যবসাস্থল পরিবর্তন করতে হবে? অথচ এখানে তুমি ব্যবসা করে অভ্যস্ত, স্থান তোমার পরিচিত। তোমার ব্যবসায় যদি কোনো ক্ষতি না হয়ে থাকে তাহলে এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে তোমার পূর্বের জায়গায় স্থির থাক।
(فَلَا يَدَعْهُ حَتّٰى يَتَغَيَّرَ لَه) ‘‘তার মধ্যে যদি কোনো পরিবর্তন না আসে তাহলে তা ত্যাগ করবে না।’’ অর্থাৎ যে স্থানে সে ব্যবসাতে লিপ্ত আছে সেখানে তার ব্যবসার মধ্যে যদি ক্ষতির কারণ না ঘটে তাহলে সে ব্যক্তি ঐ স্থান ছেড়ে চলে যাবে না। ‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ অত্র হাদীসের শিক্ষা এই যে, কোনো ব্যক্তি যদি কোনো বৈধ বিষয়ের মধ্যে কল্যাণ লাভ করে তাহলে সে এ বিষয়টি আঁকড়িয়ে ধরে থাকবে। ঐ বৈধ বিষয় ছেড়ে দিয়ে অন্য কোনো বৈধ বিষয়ের প্রতি মনোযোগী হবে না। হ্যাঁ যদি তা পরিত্যাগ করার মতো কোনো কারণ দেখা দেয় তবে তা ভিন্ন কথা। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - উপার্জন করা এবং হালাল রুযী অবলম্বনের উপায় সন্ধান করা
২৭৮৬-[২৮] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার পিতা আবূ বকর (রাঃ)-এর একটি ক্রীতদাস ছিল। দাসটি তাঁর জন্য রুযী-রোজগার করতো এবং তিনি তা খেতেন। একবার সেই ক্রীতদাসটি কোনো খাবার নিয়ে এলে আবূ বকর(রাঃ) তা খেলেন। ক্রীতদাসটি তাঁকে বললেন, আপনি কি জানেন- এটা কিভাবে উপার্জিত হয়েছে? আবূ বকর(রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, এ মাল কিভাবে উপার্জিত? তখন ক্রীতদাসটি বললো, জাহিলী যুগে একবার আমি এক ব্যক্তির কাছে গণকের কাজ করেছিলাম, অথচ আমি গণনার কাজও ভালো করে জানতাম না। আমি গণনার ভান করে তাকে ধোঁকা দিয়েছিলাম। ঐ ব্যক্তির সাথে আজ আমার দেখা হলে সে আমাকে আগের ঐ গণনার বিনিময়ে বস্তুটি দান করেছে, আপনি তাই খেয়েছেন। তিনি বলেন, (এ কথা শুনামাত্র) আবূ বকর(রাঃ) গলার ভিতরে আঙুল ঢুকিয়ে দিয়ে পেটের সব জিনিস বমি করে ফেলে দিলেন। (বুখারী)[1]
وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: كَانَ لِأَبِي بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ غُلَامٌ يُخْرِّجُ لَهُ الْخَرَاجَ فَكَانَ أَبُو بَكْرٍ يَأْكُلُ مِنْ خَرَاجِهِ فَجَاءَ يَوْمًا بشيءٍ فأكلَ مِنْهُ أَبُو بَكْرٍ فَقَالَ لَهُ الْغُلَامُ: تَدْرِي مَا هَذَا؟ فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ: وَمَا هُوَ؟ قَالَ: كُنْتُ تَكَهَّنْتُ لِإِنْسَانٍ فِي الْجَاهِلِيَّةِ وَمَا أُحسِنُ الكهَانةَ إِلاَّ أَنِّي خدَعتُه فلَقيَني فَأَعْطَانِي بِذَلِكَ فَهَذَا الَّذِي أَكَلْتَ مِنْهُ قَالَتْ: فَأَدْخَلَ أَبُو بَكْرٍ يَدَهُ فَقَاءَ كُلَّ شَيْءٍ فِي بَطْنه. رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যা: (كُنْتُ تَكَهَّنْتُ لِإِنْسَانٍ فِى الْجَاهِلِيَّةِ) ‘‘জাহিলী যুগে আমি একব্যক্তির ভাগ্য গণনা করেছিলাম।’’ ইসলামী শারী‘আতে ভাগ্য গণনা করা হারাম আর এ দ্বারা উপার্জন করাও হারাম। ইতোপূর্বে ২৭৬৪ নং হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, গণকের উপার্জন হারাম।
(وَمَا أُحسِنُ الْكَهَانةَ إِلاَّ أَنِّىْ خَدَعْتُه) ‘‘আমি ভালোভাবে ভাগ্য গণনা করতে পারতাম না তবে আমি তাকে ধোঁকা দিয়েছিলাম।’’ মূলত ভাগ্য গণনার বিষয়টিই ধোঁকা। কেননা কার ভাগ্যে কি আছে তা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাই জানেন। অন্য কারো পক্ষে তা জানা সম্ভব নয়। কাজেই কেউ কারো ভাগ্য গণনা করতে পারে, এটি একটি মিথ্যা ও ধোঁকা। আর এ গোলাম নিজেই বলেছে যে, আসলে আমি ভাগ্য গণনা করতে জানতাম না, বরং আমি তাকে ধোঁকা দিয়েছিলাম। অর্থাৎ আমি মিথ্যা বলেছিলাম।
(فَقَاءَ كُلَّ شَىْءٍ فِىْ بَطْنِه) ‘‘অতঃপর তিনি পেটে যা ছিল সব কিছু বমি করে ফেলে দিলেন’’। কারণ আবূ বাকর জানতেন যে, গণকের উপার্জন হারাম। আর হারাম উপার্জন খাওয়া অবৈধ। তাই তিনি যা খেয়েছিলেন তা বমি করে ফেলে দিলেন যাতে পেটের মধ্যে কোনো হারাম খাদ্য না থাকে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - উপার্জন করা এবং হালাল রুযী অবলম্বনের উপায় সন্ধান করা
২৭৮৭-[২৯] আবূ বকর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে দেহ হারাম খাদ্য দিয়ে প্রতিপালিত হয়েছে, সে দেহ জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (বায়হাক্বী- শু’আবুল ঈমান)[1]
وَعَنْ أَبِي بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ جَسَدٌ غُذِّيَ بالحرَامِ» . رَوَاهُ الْبَيْهَقِيّ فِي شعب الْإِيمَان
ব্যাখ্যা: (جَسَدٌ غُذِّىَ بِالْحَرَامِ) ‘‘যে শরীর হারাম খাদ্য দ্বারা পালিত হয়েছে’’। অর্থাৎ হারাম খাদ্য গ্রহণ করে যে শরীর বেড়ে উঠেছে ঐ শরীর বা দেহ জান্নাতে প্রবেশ করবে না। কেননা যে শরীর হারাম খাদ্য গ্রহণ করে বেড়ে উঠে ঐ শরীরের রক্ত ও মাংস হারাম। তাই ঐ শরীরও জান্নাতের জন্য হারাম, এজন্য ঐ শরীর জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - উপার্জন করা এবং হালাল রুযী অবলম্বনের উপায় সন্ধান করা
২৭৮৮-[৩০] যায়দ ইবনু আসলাম (রহঃ) হতে বর্ণিত। নিশ্চয় তিনি বলেন, ’উমার ইবনুল খত্ত্বাব(রাঃ) দুধ পান করেন এবং তিনি তা খুব পছন্দ করেন। আর তিনি ঐ ব্যক্তিকে বললেন, যিনি তাকে পান করিয়েছেন। এ দুধ তুমি কোথায় পেলে? অতঃপর তিনি তাকে জানালেন যে, তিনি এক কূপের নিকট গিয়েছিলেন যার নাম তিনি তাতে উল্লেখ করলেন, অতঃপর হঠাৎ তিনি সেখানে সাদাকার উট দেখেন। যা তারা দুধ দোহন করাচ্ছিল। তাই তারা আমার জন্য এর দুধ দোহন করে। অতঃপর আমি তা আমার মশকে রেখে দেই। আর এটা সেই দুধ। তারপর ’উমার(রাঃ) স্বীয় হাত প্রবেশ করালেন (গলার মধ্যে)। অতঃপর একে বমি করে বের করলেন। (বায়হাক্বী- শু’আবুল ঈমান)[1]
وَعَنْ زَيْدِ بْنِ أَسْلَمَ أَنَّهُ قَالَ: شَرِبَ عمر بن الْخطاب لَبَنًا وَأَعْجَبَهُ وَقَالَ لِلَّذِي سَقَاهُ: مَنْ أَيْنَ لَكَ هَذَا اللَّبَنُ؟ فَأَخْبَرَهُ أَنَّهُ وَرَدَ عَلَى مَاءٍ قَدْ سَمَّاهُ فَإِذَا نَعَمٌ مِنْ نَعَمِ الصَّدَقَةِ وَهُمْ يَسْقُونَ فَحَلَبُوا لِي مِنْ أَلْبَانِهَا فَجَعَلْتُهُ فِي سِقَائِيَ وَهُو هَذَا فَأَدْخَلَ عُمَرُ يَدَهُ فاسْتقاءَه. رَوَاهُ الْبَيْهَقِيّ فِي شعب الْإِيمَان
ব্যাখ্যা: (مِنْ أَيْنَ لَكَ هٰذَا اللَّبَنُ؟) ‘‘এ দুধ তুমি কোথায় পেলে?’’ অর্থাৎ যে দুধ তুমি আমাকে পান করিয়েছ যা অনেক সুস্বাদু, এ দুধ তুমি কোথা থেকে এনেছ?
(فَإِذَا نَعَمٌ مِنْ نَعَمِ الصَّدَقَةِ وَهُمْ يَسْقُونَ) পানির ঘাটে যাকাতের উট ছিল এবং উটে রাখালেরা সে উট দোহন করে তার দুধ দরিদ্রদেরকে পান করাচ্ছিল, অথবা তারা ঐ উটগুলোকে পানির ঘাট থেকে পানি পান করাচ্ছিল।
(فَحَلَبُوا لِىْ مِنْ أَلْبَانِهَا فَجَعَلْتُه فِىْ سِقَائِىَ) ‘‘তারা ঐ উট দোহন করে আমাকেও কিছু দিলে তা আমি আমার পানপাত্রে রেখে দিয়েছিলাম।’’ অর্থাৎ রাখালেরা যখন ঐ উটগুলো দোহন করে তার দুধ দরিদ্রদের দিচ্ছিল সে দুধ থেকে কিছু দুধ আমাকে দেয়ার পর সে দুধ আমি আমার পানি পানপাত্রে সংরক্ষণ করে রেখেছিলাম।
(وَهُوَ هٰذَا) ‘‘আর এ দুধ সেই দুধ’’। অর্থাৎ যে দুধ পান করে আপনার নিকট খুব সুস্বাদু লেগেছে, ঐ দুধ যাকাতের উট থেকে রাখালদের দেয়া সেই দুধ।
(فَأَدْخَلَ عُمَرُ يَدَه فاسْتقاءَه) ‘‘উমার তাঁর হাত মুখে প্রবেশ করিয়ে বমি করলেন।’’ অর্থাৎ ‘উমার যখন জানতে পারলেন, ঐ দুধ ছিল যাকাতের উটের দুধ তখন তিনি তা বমি কর ফেলে দিলেন। কেননা যাকাত তাঁর জন্য হালাল ছিল না। আর যে পশু হালাল নয় তার দুধও হালাল নয়। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - উপার্জন করা এবং হালাল রুযী অবলম্বনের উপায় সন্ধান করা
২৭৮৯-[৩১] ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি দশটি মুদ্রার বিনিময়ে একটি কাপড় কিনেছে, যার মধ্যে একটি মুদ্রা হারাম ছিল। যতদিন ওই ব্যক্তির পরনে কাপড়টি থাকবে তার সালাত গৃহীত হবে না। ইবনু ’উমার(রাঃ) এ কথা শুনার পর তাঁর দু’ কানে আঙ্গুল ঢুকিয়ে দিয়ে বললেন, আমার কান দু’টি বধির হয়ে যাবে যদি আমি এ বর্ণনা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে না শুনে থাকি। (আহমাদ, বায়হাক্বী- শু’আবুল ঈমান; তিনি বলেন, সানাদ দুর্বল)[1]
وَعَن ابنِ عُمَرَ قَالَ: مَنِ اشْتَرَى ثَوْبًا بِعَشَرَةِ دَرَاهِمَ وَفِيهِ دِرْهَمٌ حَرَامٌ لَمْ يَقْبَلِ اللَّهُ لَهَ صَلَاةً مَا دَامَ عَلَيْهِ ثُمَّ أَدْخَلَ أُصْبَعَيْهِ فِي أُذُنَيْهِ وَقَالَ صُمَّتَا إِنْ لَمْ يَكُنِ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَمِعْتُهُ يَقُولُهُ. رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالْبَيْهَقِيُّ فِي شُعَبِ الْإِيمَانِ. وَقَالَ: إِسْنَادُهُ ضَعِيف
ব্যাখ্যা: (لَمْ يَقْبَلِ اللّٰهُ لَه صَلَاةً) ‘‘আল্লাহ তা‘আলা তার সালাত কবুল করবেন না।’’ ‘আল্লামা ত্বীবী বলেনঃ যদিও হারাম উপার্জন দ্বারা পোশাক কিনে তা পরিধান করে সালাত আদায় করলে ঐ সালাত তাকে কাযা করতে হবে না, কিন্তু সালাত দ্বারা তার কোনো সাওয়াব অর্জিত হবে না। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
হাদীসের শিক্ষাঃ হারাম উপায়ে অর্জিত সম্পদ ব্যবহার করে ‘ইবাদাত করলে আল্লাহর নিকট ঐ ‘ইবাদাত গ্রহণযোগ্য নয়। অর্থাৎ ঐ ‘ইবাদাতের মাধ্যমে সাওয়াব অর্জিত হয় না।