পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - বিভিন্ন সময়ের পঠিতব্য দু‘আ
বিভিন্ন সময়ে পাঠ করার জন্য আলাদাভাবে ভিন্ন ভিন্ন দু’আ রয়েছে, শারী’আত কর্তৃক যা নির্ধারিত। আর এখানে সময় হলো কাজের জন্য নির্ধারিত কাল বা সময়। যেমন- সালাত, যাকাত ও হাজ্জের সময়। এছাড়াও অবস্থাভেদে বিভিন্ন দু’আ শারী’আত কর্তৃক নির্ধারিত। অর্থাৎ- বিভিন্ন অবস্থার জন্য নির্ধারিত বিভিন্ন দু’আগুলো শারী’আত কর্তৃক বর্ণিত রয়েছে। যেমন- রাগের অবস্থা ও যুদ্ধের জন্য শত্রুর মুখোমুখি সারিবদ্ধ অবস্থা এবং আরো অনুরূপ অনেক অবস্থা রয়েছে। এছাড়াও নির্দিষ্ট সময়গুলোতে পঠিতব্য দু’আগুলো বর্ণিত রয়েছে, শারী’আত যা সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছে।
২৪১৬-[১] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউ তার স্ত্রীর সাথে সহবাসের ইচ্ছা পোষণ করলে সে যেন বলে, ’’বিস্মিল্লা-হি আল্ল-হুম্মা জান্নিবনাশ্ শায়ত্ব-না ওয়া জান্নিবিশ্ শায়ত্ব-না মা- রযাকতানা-’’ (অর্থাৎ- মহান আল্লাহর নামে, হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে শয়তান হতে দূরে রাখো এবং আমাদের জন্য তুমি যা নির্ধারিত করে রেখেছ শয়তানকেও তা হতে দূরে রাখো।)।
এ মিলনের ফলে তাদের জন্য যদি কোন সন্তান দেয়া হয় তাহলে কক্ষনো শয়তান তার কোন ক্ষতিসাধন করতে পারবে না। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ الدَّعْوَاتِ فِى الْأَوْقَاتِ
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَوْ أَنَّ أَحَدَكُمْ إِذَا أَرَادَ أَنْ يَأْتِيَ أَهْلَهُ قَالَ: بِسْمِ اللَّهِ اللَّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ وَجَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا فَإِنَّهُ إِنْ يُقَدَّرْ بَيْنَهُمَا وَلَدٌ فِي ذَلِكَ لَمْ يَضُرَّهُ شَيْطَانٌ أَبَدًا
ব্যাখ্যা: মুসনাদে আহমাদ-এর বর্ণনায় (১ম খণ্ড, ২১৭ পৃঃ) রয়েছে যে, শয়তান উক্ত সন্তানের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। তাঁর অপর বর্ণনায় (১ম খণ্ড, ২৮৭ পৃঃ), মুসলিম ও ইবনু মাজাহ্’র বর্ণনায় রয়েছে যে, শয়তান তার (সন্তানের) ওপর কোন প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না অথবা তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। আর অনুরূপ বুখারীর বর্ণনায় রয়েছে।
আলোচ্য হাদীসে কয়েকটি উপকারিতাও রয়েছে যে, গুরুত্বপূর্ণ অবস্থাতে যেমন সহবাসেও আল্লাহর নাম নেয়া, দু‘আ করা মুস্তাহাব এবং এতে এটাও রয়েছে যে, আল্লাহর জিকির, শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে প্রার্থনা করা, তাঁর (আল্লাহ তা‘আলার) নামের সাথে বারাকাত কামনা করা এবং যাবতীয় অনিষ্টতা থেকে আশ্রয় কামনা করা জরুরী। আর এখানে এ ইঙ্গিতও রয়েছে যে, এ দু‘আ পাঠ উক্ত কাজ সহজ করবে এবং তার ওপর সাহায্য করবে। এছাড়া এ হাদীসে এ ইঙ্গিতও রয়েছে যে, শয়তান মানুষের সাথে সবসময় লেগে থাকে। একমাত্র আল্লাহর স্মরণই তার থেকে মুক্ত করতে পারে।
পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - বিভিন্ন সময়ের পঠিতব্য দু‘আ
২৪১৭-[২] উক্ত রাবী [’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ)] হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত। তিনি বলেন, বিপদের সময় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন,
’’লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ’আযীমুল হালীম, লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু রব্বুল ’আর্শিল ’আযীম; লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু রব্বুস্ সামা-ওয়া-তি, ওয়া রব্বুল আরযি রব্বুল ’আর্শিল কারীম’’
(অর্থাৎ- মহান ধৈর্যশীল আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মা’বূদ নেই। মহান ’আরশের মালিক আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মা’বূদ নেই। আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মা’বূদ নেই, যিনি সমগ্র আকাশম-লীর রব, মহান ’আরশের রব।)। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ الدَّعْوَاتِ فِى الْأَوْقَاتِ
وَعَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَقُولُ عِنْدَ الْكَرْبِ: «لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ الْعَظِيمُ الْحَلِيمُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ رَبُّ السَّمَاوَاتِ وَرَبُّ الْأَرْضِ رَبُّ الْعَرْشِ الْكَرِيم»
ব্যাখ্যা: সহীহুল বুখারীর অপর বর্ণনায় রয়েছে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুঃশ্চিন্তার সময় দু‘আ করতেন। সহীহ মুসলিমের অপর বর্ণনায় রয়েছে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ শব্দগুলোর দ্বারা দু‘আ করতেন এবং এগুলো চিন্তার সময় বলতেন। অপর বর্ণনায় রয়েছে, যখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) গুরুত্বপূর্ণ কাজের ইচ্ছা করতেন, তখন এ দু‘আ পড়তেন। ‘আল্লামা ত্ববারানী (রহঃ) বলেনঃ (কতিপয় বর্ণনায়) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর কথা, (يدعوا) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দু‘আ করতেন। এর অর্থ হলোঃ লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ, সুবহা-নাল্ল-হ বলতেন, যাতে পূর্ণাঙ্গ কোন দু‘আ নয়।
এতে দু’টি বিষয় হতে পারেঃ
১. দু‘আ করার পূর্বে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ সকল জিকিরগুলো করতেন, এরপর ইচ্ছামত দু‘আ করতেন। যেরূপ মুসনাদ আবী ‘আওয়ানাহ্ হতে বর্ণিত রয়েছে এবং হাদীসের শেষে রয়েছে যে, এরপর তিনি দু‘আ করতেন। ‘আবদ ইবনু হুমায়দীর বর্ণনায় রয়েছে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গুরুত্বপূর্ণ কোন কাজের ইচ্ছা করলে প্রাধান্যযোগ্য জিকিরগুলো করতেন। এরপর দু‘আ করতেন।
২. যে বিষয়ের উত্তর ইবনু ‘উআয়নাহ্ দিয়েছেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আরাফায় অধিক যে দু‘আ পড়তেন তা হলোঃ ‘‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহদাহূ লা- শারীকা লাহূ’’। ‘আল্লামা সুফ্ইয়ান (রহঃ) বলেনঃ এটা জিকির, এতে কোন দু‘আ নেই। কিন্তু নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার প্রার্থনার ব্যস্ততা থেকে আমার যিকিরের জন্য যা দেয়া হয় তা প্রার্থনাকারীদের যা দেয়া হয় তার চেয়ে উত্তম।
হাফেয আসকালানী (রহঃ) বলেনঃ ছয়টি অগ্রগণ্য। কেননা সা‘দ ইবনু আবী ওয়াককাস (রাঃ)-এর বর্ণিত হাদীসে মাছওয়ালার (ইউনুস (আঃ)-এর) দু‘আর ব্যাপারে বর্ণনা রয়েছে। তিনি যখন মাছের পেটে ছিলেন তখন দু‘আ করেছিলেন- ‘‘লা- ইলা-হা ইল্লা -আন্তা সুবহা-নাকা ইন্নী কুন্তু মিনায্ যোয়ালিমীন’’।
পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - বিভিন্ন সময়ের পঠিতব্য দু‘আ
২৪১৮-[৩] সুলায়মান ইবনু সুরাদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে দু’ ব্যক্তি পরস্পরকে গাল-মন্দ বলতে লাগল, আমরা তখন তাঁর পাশে বসা ছিলাম। তন্মধ্যে একজন তার সাথীকে খুব রাগতস্বরে গাল-মন্দ করছিল। এতে তার মুখমণ্ডল বিবর্ণ হয়ে গিয়েছিল। এটা দেখে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি এমন একটি কালাম (বাক্য) জানি, যদি সে তা পড়ে তাহলে তার রাগ চলে যাবে। সেটা হলো ’’আ’ঊযুবিল্লা-হি মিনাশ্ শায়ত্ব-নির রজীম’’ (অর্থাৎ- আমি আল্লাহর কাছে বিতাড়িত শয়তান হতে আশ্রয় চাই)। তখন সাহাবীগণ লোকটিকে বললেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি বলছেন, তুমি কী শুনছ না? লোকটি বলল, নিশ্চয়ই আমি ভূতগ্রস্ত (পাগল) নই। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ الدَّعْوَاتِ فِى الْأَوْقَاتِ
وَعَنْ سُلَيْمَانَ بْنِ صُرَدَ قَالَ: اسْتَبَّ رَجُلَانِ عِنْدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَنَحْنُ عِنْدَهُ جُلُوسٌ وَأَحَدُهُمَا يَسُبُّ صَاحِبَهُ مُغْضَبًا قَدِ احْمَرَّ وَجْهُهُ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنِّي لَأَعْلَمُ كَلِمَةً لَوْ قَالَهَا لَذَهَبَ عَنْهُ مَا يَجِدُ أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ» . فَقَالُوا لِلرَّجُلِ: لَا تَسْمَعُ مَا يَقُولُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ قَالَ: إِنِّي لستُ بمجنون
ব্যাখ্যা: বুখারী’র বর্ণনা রয়েছে, যদি কেউ ‘‘আ‘ঊযুবিল্লা-হি মিনাশ্ শায়ত্ব-নির রজীম’’ বলে তাহলে যে রাগ তাকে পেয়ে বসেছে তা দূরীভূত হবে। যেমন- সহীহুল বুখারী’র অপর বর্ণনাতেও রয়েছে।
মু‘আয কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে রয়েছে, নিশ্চয় আমি (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এমন কতগুলো কালিমাহ্ শিক্ষা দিব যদি কেউ তা রাগের সময় বলে, তবে তার রাগ দূরীভূত হয়ে যাবে। আর সে শব্দগুলো হলোঃ (اَللّٰهُمَّ إِنِّىْ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْم) অর্থাৎ- ‘‘আল্ল-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাশ্ শায়ত্ব-নির রজীম’’।
এ হাদীসটি আল্লাহ তা‘আলার কথারই উৎসঃ ‘‘আর যদি শয়তানের প্ররোচনা তোমাকে প্ররোচিত করে, তবে আল্লাহ তা‘আলার শরণাপন্ন হও। তিনি শ্রবণকারী মহাজ্ঞানী।’’ (সূরা আল আ‘রাফ ৭ : ২০০)
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এক ব্যক্তি এসে বললঃ ইয়া রসূলাল্লাহ! আমাকে নাসীহাত করুন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ ‘‘রাগ করো না।’’ কথাটি তিনবার ফিরিয়ে বললেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্য কোন নাসীহাত না করে শুধু রাগ বারণ করতে বললেন বার বার। আর এটাই এ মর্মে দলীল যে, রাগ একটি বড় বিপর্যয় যা তার থেকে প্রকাশ পায়।
‘আল্লামা শাওকানী (রহঃ) বলেনঃ এ হাদীসে এই বিষয়ে দলীল রয়েছে যে, রাগ, গালি এগুলো শয়তানের কাজ। আর এ কারণে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়া রাগ বিদূরিত করে। আর যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে বিনা কারণে রাগ করে তার জানা উচিত যে, নিশ্চয় শয়তান তার সাথে খেলায় মেতেছে।
পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - বিভিন্ন সময়ের পঠিতব্য দু‘আ
২৪১৯-[৪] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা যখন মোরগের আওয়াজ শুনবে, আল্লাহর কাছে তার অনুগ্রহ প্রত্যাশা করবে। কারণ মোরগ মালাক (ফেরেশতা) দেখেছে। আর তোমরা যখন গাধার চিৎকার শুনবে, তখন বিতাড়িত শয়তান হতে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইবে, কারণ সে শয়তান দেখেছে। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ الدَّعْوَاتِ فِى الْأَوْقَاتِ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا سَمِعْتُمْ صِيَاحَ الدِّيَكَةِ فَسَلُوا اللَّهَ مِنْ فَضْلِهِ فَإِنَّهَا رَأَتْ مَلَكًا وَإِذَا سَمِعْتُمْ نَهِيقَ الْحِمَارِ فَتَعَوَّذُوا بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ فَإِنَّهُ رَأَى شَيْطَانا»
ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীস থেকে এটি গ্রহণ করা যায় যে, সৎকর্মশীল বান্দাদের নিকট তাদের বারাকাতের মাধ্যমে দু‘আ করা মুস্তাহাব। সহীহ ইবনু হিব্বান, আবূ দাঊদ এবং আহমাদ-এর বর্ণনায় যায়দ ইবনু খালিদ কর্তৃক বর্ণিত রয়েছে যে, তোমরা মোরগকে গালি দিও না। কেননা সে সালাতের দিকে ডাকে।
অপর বর্ণনায় রয়েছে, সালাতের জন্য (মানুষদের) জাগ্রত করে। এ হাদীসে এই মর্মে প্রমাণ রয়েছে যে, আল্লাহ তা‘আলা মোরগ-এর জন্য সৃষ্টি করেছেন উপলব্ধি। এর মাধ্যমে সে পবিত্র আত্মার অস্তিত্ব পায়। অনুরূপ গাধা বা কুকুরের জন্য সৃষ্টি করেছেন উপলব্ধি, যার দ্বারা সে অনিষ্ট আত্মার অস্তিত্ব পায়। আর সৎকর্মশীলদের উপস্থিতিতে রহমাত নাযিল হয় এবং নাফরমানদের উপস্থিতিতে গযব নাযিল হয়।
পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - বিভিন্ন সময়ের পঠিতব্য দু‘আ
২৪২০-[৫] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফরে বের হবার সময় উটের উপর ধীর-স্থিরতার সাথে বসার পর তিনবার ’’আল্ল-হু আকবার’’ বলতেন। তারপর বলতেন,
’’সুবহা-নাল্লাযী সাখখারা লানা- হা-যা- ওয়ামা- কুন্না লাহূ মুকরিনীন। ওয়া ইন্না- ইলা- রব্বিনা লামুন্ ক-লিবূন। আল্ল-হুম্মা ইন্না- নাস্আলুকা ফী সাফারিনা- হা-যাল বির্রা ওয়াত্তাকওয়া-, ওয়া মিনাল ’আমলি মা- তার্যা-। আল্ল-হুম্মা হাওবিন ’আলায়না- সাফারানা- হা-যা- ওয়াত্বি লানা- বু’দাহু। আল্ল-হুম্মা আন্তাস্ স-হিবু ফিস্সাফারি ওয়াল খলীফাতু ফিল আহ্লি। আল্ল-হুম্মা ইন্নী আ’ঊযুবিকা মিন ওয়া’সা-য়িস্ সাফারি ওয়া কা-বাতিল মান্যরি ওয়াসূয়িল মুনক্বলাবি ফিল মা-লি ওয়াল আহ্লি।’’
(অর্থাৎ- ওই সত্তার পবিত্রতা বর্ণনা করছি যিনি একে আমাদের অধীন করেছেন, অথচ আমরা তাকে অধীন করতে পারতাম না এবং আমরা আমাদের প্রভুর দিকে ফিরে আসি। হে আল্লাহ! আমরা আমাদের এ ভ্রমণে তোমার কাছে পুণ্য ও সংযম চাই এবং এমন কাজ যা তুমি পছন্দ করো। হে আল্লাহ! তুমি আমাদের জন্য এ ভ্রমণকে সহজ করো এবং এর দূরত্ব কমিয়ে দাও। হে আল্লাহ! তুমিই ভ্রমণে আমাদের সঙ্গী এবং পরিবার-পরিজন ও ধন-সম্পদে আমাদের প্রতিনিধি। হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে ভ্রমণের কষ্ট, খারাপ দৃশ্য ও ধন-সম্পদে অশুভ পরিবর্তন থেকে আশ্রয় চাই।)।
তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সফর থেকে ফিরে এসেও এ দু’আগুলো পড়তেন এবং এর মধ্যে বেশি বেশি বলতেন, ’’আ-য়িবূনা তা-য়িবূনা ’আ-বিদূনা লিরব্বিনা- হা-মিদূন’’ (অর্থাৎ- আমরা প্রত্যাবর্তন করলাম তওবাকারী, ’ইবাদাতকারী এবং আমাদের মহান রবের প্রশংসাকারীরূপে)। (মুসলিম)[1]
بَابُ الدَّعْوَاتِ فِى الْأَوْقَاتِ
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ إِذَا اسْتَوَى عَلَى بَعِيرِهِ خَارِجًا إِلَى السَّفَرِ كَبَّرَ ثَلَاثًا ثُمَّ قَالَ: (سُبْحَانَ الَّذِي سَخَّرَ لَنَا هَذَا وَمَا كُنَّا لَهُ مُقْرِنِينَ وَإِنَّا إِلَى رَبِّنَا لَمُنْقَلِبُونَ)
اللَّهُمَّ إِنَّا نَسْأَلُكَ فِي سَفَرِنَا هَذَا الْبِرَّ وَالتَّقْوَى وَمِنَ الْعَمَلِ مَا تَرْضَى اللَّهُمَّ هَوِّنْ عَلَيْنَا سَفَرَنَا هَذَا وَاطْوِ لَنَا بُعْدَهُ اللَّهُمَّ أَنْتَ الصَّاحِبُ فِي السَّفَرِ وَالْخَلِيفَةُ فِي الْأَهْلِ وَالْمَالِ اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ وَعْثَاءِ السَّفَرِ وَكَآبَةِ الْمَنْظَرِ وَسُوءِ الْمُنْقَلَبِ فِي الْمَالِ والأهلِ . وإِذا رجعَ قالَهنَّ وزادَ فيهِنَّ: «آيِبُونَ تائِبُونَ عابِدُونَ لربِّنا حامدون» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: তিরমিযী এবং দারিমীতে রয়েছে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোন সফরে বের হতেন তখন তিনি সওয়ারীতে আরোহণ করতেন এবং তিনবার ‘‘আল্ল-হু আকবার’’ বলতেন। সম্ভবত এতে হিকমাহ্ রয়েছে যে, উঁচু স্থানে এক ধরনের সম্মান রয়েছে যা তার সৃষ্টিকর্তার মাহাত্ম্যকে উপস্থিত করতে চায়। আর এর সমর্থনে হাদীসও রয়েছে যে, মুসাফির ব্যক্তি যখন উঁচু স্থানে উঠবে তখন তাকবীর দিবে এবং যখন নিচে অবতরণ করবে তখন ‘‘সুব্হা-নাল্ল-হ’’ বলবে। আর সওয়ার হওয়ার সময় এ দু‘আটি পড়া সুন্নাত। আর তা সফর কিংবা অন্য কোন ক্ষেত্রে যে কোন সওয়ারীতে আরোহণের ব্যাপারে হতে পারে। আলোচ্য হাদীস থেকে এ মর্মে দলীল পাওয়া যায় যে, প্রত্যেক সফরের শুরুতে উল্লেখিত জিকির করা মুস্তাহাব এবং এ মর্মে অনেক জিকির-আযকার বর্ণিত হয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - বিভিন্ন সময়ের পঠিতব্য দু‘আ
২৪২১-[৬] ’আবদুল্লাহ ইবনু সারজিস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সফরে রওনা হতেন, তখন সফরের কষ্ট, প্রত্যাবর্তনের অনিষ্ট, কল্যাণের পর অকল্যাণ, মাযলূমের দু’আ ও পরিবার-পরিজন ও ধন-সম্পদের ব্যাপারে খারাপ দৃশ্য দেখা হতে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতেন। (মুসলিম)[1]
بَابُ الدَّعْوَاتِ فِى الْأَوْقَاتِ
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ سَرْجِسَ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا سَافَرَ يَتَعَوَّذُ مِنْ وَعْثَاءِ السَّفَرِ وَكَآبَةِ الْمُنْقَلَبِ وَالْحَوْرِ بَعْدَ الْكَوْرِ وَدَعْوَةِ الْمَظْلُومِ وَسُوءِ الْمَنْظَرِ فِي الْأَهْل وَالْمَال. رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: (وَدَعْوَةِ الْمَظْلُوْمِ) অর্থাৎ- আমি তোমার নিকট যুলম করা থেকে আশ্রয় চাচ্ছি। কেননা মাযলূমের দু‘আ আল্লাহর নিকট সরাসরি পৌঁছে যায় এবং মাযলূমের দু‘আ ও আল্লাহ তা‘আলার মাঝে কোন আবরণ থাকে না।
‘আল্লামা বাজী (রহঃ) বলেনঃ আল্লাহ তা‘আলার কাছে কু-দৃষ্টি থেকে আশ্রয় চাওয়া দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, পরিবার-পরিজন ও সম্পত্তির প্রতি যে কুদৃষ্টি দেয়া হয় (পরিবারে ক্ষতি সাধন, সম্পদ হরণ, চুরি ইত্যাদি) তা।
পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - বিভিন্ন সময়ের পঠিতব্য দু‘আ
২৪২২-[৭] খাওলাহ্ বিনতু হাকীম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি কোন জায়গায় অবতরণ করে বলে, ’’আ’ঊযু বিকালিমা-তিল্লা-হিত্ তা-ম্মা-তি মিন্ শাররি মা- খলাক’’ (অর্থাৎ- আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কালামসমূহের মাধ্যমে আল্লাহর সৃষ্ট সকল কিছুর অনিষ্টতা হতে আশ্রয় চাই)। তাহলে তাকে কোন জিনিস অনিষ্ট করতে পারবে না তার ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত। (মুসলিম)[1]
بَابُ الدَّعْوَاتِ فِى الْأَوْقَاتِ
وَعَن خَوْلَةَ بِنْتِ حَكِيمٍ قَالَتْ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: مَنْ نَزَلَ مَنْزِلًا فَقَالَ: أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ لَمْ يَضُرَّهُ شَيْءٌ حَتَّى يرحل من منزله ذَلِك . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: ‘আল্লামা আল কারী (রহঃ) বলেনঃ আলোচ্য হাদীস জাহিলী জামানার লোকদের মাঝে যে রেওয়াজ ছিল তা প্রত্যাখ্যান বা বাতিল করছে। যখন তারা কোন স্থানে অবতরণ করত তখন বলতঃ আমরা এ উপত্যকার নেতার আশ্রয় চাই এবং তারা বড় বড় জীনদের আশ্রয় নিত। আর এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ ‘‘অনেক মানুষ অনেক জিনের নিকট আশ্রয় নিত। ফলে তারা জীনদের আত্মম্ভরিতা বাড়িয়ে দিত’’- (সূরা আল জিন্ ৭২ : ৬)।
পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - বিভিন্ন সময়ের পঠিতব্য দু‘আ
২৪২৩-[৮] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রসূল! গত রাতে আমি বিচ্ছুর দংশনে আক্রান্ত হয়েছি। এটা শুনে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি যদি সন্ধ্যার পর বলতে, ’’আ’ঊযু বিকালিমা-তিল্লা-হিত্ তা-ম্মা-তি মিন্ শাররি মা- খলাক’’ (অর্থাৎ- আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কালামসমূহের মাধ্যমে আল্লাহর সৃষ্ট সকল কিছুর অনিষ্টতা হতে আশ্রয় চাই)- তাহলে তোমাকে তা ক্ষতিসাধন করতে পারত না। (মুসলিম)[1]
بَابُ الدَّعْوَاتِ فِى الْأَوْقَاتِ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: جَاءَ رَجُلٌ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا لَقِيتُ مِنْ عَقْرَبٍ لَدَغَتْنِي الْبَارِحَةَ قَالَ: أَمَا لَوْ قُلْتَ حِينَ أَمْسَيْتَ: أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خلق لم تَضُرك . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: ‘আল্লামা ইবনুস্ সুন্নী (রহঃ) (তিনবার) বৃদ্ধি করেছেন, অর্থাৎ- যে এ দু‘আটি তিনবার বলবে সাপ-বিচ্ছু তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না।
পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - বিভিন্ন সময়ের পঠিতব্য দু‘আ
২৪২৪-[৯] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফরে থাকতেন ভোর হলে বলতেন,
’’সামি’আ সা-মি’উন বিহাম্দিল্লা-হি ওয়া হুসনি বিলা-য়িহী ’আলায়না- ওয়া রব্বানা- স-হিবনা- ওয়া আফযিল ’আলায়না- ’আ-য়িযান বিল্লা-হি মিনান্ না-র’’
(অর্থাৎ- সর্বশ্রোতা শ্রবণ করুক, আমরা আল্লাহর প্রশংসা করছি, আমাদের প্রতি তাঁর মহা অবদানের স্বীকৃতি ঘোষণা করছি। হে আমাদের রব! তুমি আমাদের সাথী হও ও আমাদের প্রতি দয়া করো। আমরা আল্লাহর কাছে জাহান্নামের আগুন থেকে আশ্রয় চাই।)। (মুসলিম)[1]
بَابُ الدَّعْوَاتِ فِى الْأَوْقَاتِ
وَعَنْهُ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ إِذَا كَانَ فِي سَفَرٍ وَأَسْحَرَ يَقُولُ: «سمع سامع يحمد الله وَحسن بلائه علينا وربنا صَاحِبْنَا وَأَفْضِلْ عَلَيْنَا عَائِذًا بِاللَّهِ مِنَ النَّارِ» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: ‘আল্লামা তুরবিশতী (রহঃ) বলেনঃ এখানে بلاء (পরীক্ষা) দ্বারা উদ্দেশ্য হলো নিয়ামত। আল্লাহ তা‘আলা তার বান্দাদের পরীক্ষা করেন কোন ক্ষতি দিয়ে যাতে তারা ধৈর্য ধারণ করে। আত্মমর্যাদা বা সম্মান দিয়ে পরীক্ষা করেন যাতে তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ ‘‘আমি তোমাদেরকে মন্দ ও ভাল দ্বারা পরীক্ষা করে থাকি এবং আমারই কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে’’- (সূরা আল আম্বিয়া- ২১ : ৩৫)।
পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - বিভিন্ন সময়ের পঠিতব্য দু‘আ
২৪২৫-[১০] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোন যুদ্ধ, হজ্জ বা ’উমরাহ্ হতে ফিরে আসতেন, তখন প্রতিটি উঁচু স্থানে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তিনবার করে তাকবীর দিতেন। আর বলতেন,
’’লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহদাহূ লা- শারীকা লাহূ লাহুল মুল্কু ওয়ালাহুল হাম্দু ওয়াহুওয়া ’আলা- কুল্লি শাইয়িন কদীর। আ-য়িবূনা, তা-য়িবূনা ’আ-বিদূনা ’সা-জিদূনা লিরব্বিনা- হা-মিদূনা। সদাকল্ল-হু ওয়া’দাহূ, ওয়া নাসারা ’আবদাহূ ওয়া হাযামাল আহযা-বা ওয়াহদাহূ।’’
(অর্থাৎ- আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মা’বূদ নেই। তিনি একক, তাঁর কোন শারীক নেই। সাম্রাজ্য তাঁরই, তাঁরই প্রশংসা। তিনি সব জিনিসের উপরই ক্ষমতাবান। আমরা প্রত্যাবর্তন করছি তওবাকারী, ’ইবাদাতকারী, সিজদাকারী এবং আমাদের রবের প্রশংসাকারী হিসেবে। আল্লাহ তার ওয়া’দাকে সত্যে রূপান্তরিত করেছেন। তিনি তার বান্দাকে সাহায্য করেছেন এবং শত্রুর সমন্বিত শক্তিকে একাই পরাজিত করেছেন।)। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ الدَّعْوَاتِ فِى الْأَوْقَاتِ
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا قَفَلَ مِنْ غَزْوٍ أَوْ حَجٍّ أَوْ عُمْرَةٍ يُكَبِّرُ عَلَى كُلِّ شَرَفٍ مِنَ الْأَرْضِ ثَلَاثَ تَكْبِيرَاتٍ ثُمَّ يَقُولُ: «لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كلِّ شيءٍ قديرٌ آيِبونَ تَائِبُونَ عَابِدُونَ سَاجِدُونَ لِرَبِّنَا حَامِدُونَ صَدَقَ اللَّهُ وَعْدَهُ وَنَصَرَ عَبْدَهُ وَهَزَمَ الْأَحْزَابَ وَحْدَهُ»
ব্যাখ্যা: এখানে الْأَحْزَابَ ‘আহযাব’-এর শব্দের বিষয়ে উলামাগণের মাঝে ইখতিলাফ রয়েছে। কারো মতে কুরায়শ কাফিররা ও ‘আরবদের মধ্য যারা তাদের সহযোগী এবং ইয়াহূদীরা, যারা খন্দক যুদ্ধে একত্রিত হয়েছিল তারাই আহযাব বা বহুজাতিক বাহিনী। আর তাদের ব্যাপারেই সূরা আল আহযাব নাযিল হয়েছে। কারো মতে এটি ‘আম্ বা ব্যাপক। অর্থাৎ- আহযাব যুদ্ধের সমস্ত দিনগুলো ও এ যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সকল রাষ্ট্র এবং এ যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সমস্ত কুফার সৈন্যরা সকলেই আহযাবের অন্তর্ভুক্ত।
‘আল্লামা নাবাবী (রহঃ) বলেনঃ প্রথম মতটি প্রসিদ্ধ। ‘আল্লামা কারী (রহঃ) বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী একত্রিত কাফিরেরা ছিল বারো হাজার (১২,০০০)। তারা মক্কা হতে মদীনায় আগমন করল এবং মদীনার চারপাশে তারা একত্রিত হলোঃ আর এ অবস্থায় প্রায় এক মাস অতিবাহিত হলো, কিন্তু শুধু তীর-ধনুক আর পাথর নিক্ষেপ ব্যতীত তাদের মাঝে কোন যুদ্ধ সংঘটিত হলো না।
তাদের এ ধারণা ছিল যে, মুসলিমগণ তাদের মুকাবিলা করতে পারবে না বিধায় তারা (মুসলিমগণ) পরাজিত হবে। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা শীতের রাতে তাদের ওপর তীব্র বাতাস পাঠালেন, ফলে তাদের চেহারায় ধূলা হানা দিলো, তাদের বাতিগুলো নিভে গেল, তাদের তাঁবুর খুঁটিগুলো উপড়ে গেল ও তাদের শক্তি নিঃশেষ হয়ে হয়ে গেল। অন্যদিকে আল্লাহ তা‘আলা এক হাজার মালাক (ফেরেশতা) পাঠালেন। অতঃপর তারা (ফেরেশতাগণ) তাদের বিপরীত প্রান্ত দিয়ে তাকবীর ধ্বনি তুলল এবং ঘোড়া হাকিয়ে দিলো এবং তাদের অন্তরে ভয় হানা দিলো। ফলশ্রুতিতে কাফিরেরা পরাজিত হলো ও পলায়ন করল। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলার বাণী নাযিল হলোঃ ‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা তোমাদের প্রতি আল্লাহর দেয়া নিয়ামতের কথা স্মরণ কর, যখন শত্রুবাহিনী তোমাদের নিকটবর্তী হয়েছিল। অতঃপর আমি তাদের বিরুদ্ধে ঝাঞ্চা বায়ু এবং এমন সৈন্যবাহিনী প্রেরণ করেছিলাম যাদেরকে তোমরা দেখতে না। তোমরা যা কর আল্লাহ তা দেখেন’’- (সূরা আল আহযাব ৩৩ : ৯)।
পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - বিভিন্ন সময়ের পঠিতব্য দু‘আ
২৪২৬-[১১] ’আবদুল্লাহ ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আহযাব যুদ্ধের সময় মুশরিকদের জন্য বদ্দু’আ করে বলেছিলেন, ’’আল্ল-হম্মা মুনযিলাল কিতা-বি, সারী’আল হিসা-বি, আল্ল-হুম্মা আহযিমিল আহযা-বা, আল্ল-হুম্মা আহযিমহুম, ওয়া যালজিলহুম’’ (অর্থাৎ- হে কিতাব নাযিলকারী ও তড়িৎ বিচার ফায়সালাকারী [হিসাব গ্রহণকারী] আল্লাহ! হে আল্লাহ! তুমি শত্রুর সম্মিলিত শক্তিকে পরাজিত করো। হে আল্লাহ! তাদেরকে তুমি পরাজিত করো এবং তাদেরকে পর্যদস্ত-বিচলিত করে দাও।)। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ الدَّعْوَاتِ فِى الْأَوْقَاتِ
وَعَنْ عَبْدُ اللَّهِ بْنِ أَبِي أَوْفَى قَالَ: دَعَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ الْأَحْزَابِ عَلَى الْمُشْرِكِينَ فَقَالَ: «اللَّهُمَّ مُنْزِلَ الْكِتَابِ سَرِيعَ الْحِسَابِ اللَّهُمَّ اهْزِمِ الأحزابَ اللهُمَّ اهزمهم وزلزلهم»
ব্যাখ্যা: ‘আল্লামা আসকালানী (রহঃ) বলেনঃ উল্লেখিত দু‘আয় তিনটি নিয়ামতের মাহাত্ম্যের উপর সতর্কবাণী রয়েছে।
১. আল্লাহর কিতাব নাযিল হওয়ার মাধ্যমে পরকালীন নিয়ামত অর্জন হয়েছে। ২. মেঘ চলমানের কারণে দুনিয়াবী নিয়ামত অর্জন হয়েছে। আর তা হলোঃ জীবিকা। ৩. বহুজাতিক বাহিনী পরাজিত হওয়ার মাধ্যমে দু’টি নিয়ামতের (মক্কা-মদীনাহ্) সুরক্ষা নিশ্চিত হয়েছে।
‘আল্লামা কুসতুলানী বলেনঃ উল্লেখিত দু‘আয় তাদের বিরুদ্ধে ধ্বংসের দু‘আ না করে তাদের ওপর লাঞ্ছনা ও কম্পন কামনা করা হয়েছে। এর কারণ হলোঃ মদীনাহ্ তাদের আত্মার জন্য ছিল নিরাপদ। এছাড়া রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এমন আকাঙ্খাও হতে পারে যে, তারা (কাফিররা) তাওবাহ্ করতে পারে এবং ইসলামে প্রবেশ করতে পারে। আর ধ্বংসের দু‘আ করলে তাদের মৃত্যু ছিল অবধারিত। আর এটাই ছিল মুখ্য ও সঠিক উদ্দেশ্য। আর ‘আল্লামা ইসমা‘ঈলী (রহঃ)-এর অপর বর্ণনায় অন্যভাবে রয়েছে। সেখানে দু‘আতে কিছু বর্ধিত রয়েছে। অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আপনি আমাদের প্রতিপালক এবং তাদেরও প্রতিপালক, আমরা আপনার দাস এবং তারাও আপনার দাস, আমাদেরকে ও তাদেরকে করুণা করেছেন আপনার স্বহস্তে। অতএব (আজ) তাদেরকে লাঞ্ছিত করুন এবং তাদের বিরুদ্ধে আমাদের সাহায্য করুন।
পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - বিভিন্ন সময়ের পঠিতব্য দু‘আ
২৪২৭-[১২] ’আবদুল্লাহ ইবনু বুসর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার পিতার কাছে আসলেন। আমরা তাঁর সামনে কিছু খাদ্য ও হায়স (খেজুর, পনির ও ঘি মিশ্রিত এক জাতীয় মিষ্টান্ন) দিলাম। এর থেকে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কিছু খেলেন, তারপর তাঁর কাছে আরও কিছু খেজুর আনা হলো। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তা খেতে লাগলেন। তর্জনী ও মধ্যমা আঙুল দিয়ে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) খেজুরের মধ্যখান দিয়ে বিচি বের করতে লাগলেন।
অন্য এক বর্ণনায় আছে, তর্জনী ও মধ্যমা আঙুলের পিঠের দিক দিয়ে বিচি ফেলতে থাকলেন। অতঃপর তাঁর কাছে কিছু পানীয় আনা হলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তা পান করলেন। [তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সেখান থেকে রওনা হলে] আমার পিতা তাঁর আরোহীর লাগাম ধরে বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমাদের জন্য আল্লাহর কাছে দু’আ করুন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তখন বললেন, ’’আল্ল-হুম্মা বা-রিক লাহুম ফীমা- রযাকতাহুম ওয়াগফির লাহুম, ওয়ারহামহুম’’ (অথাৎ- হে আল্লাহ! তুমি তাদেরকে যা দান করেছো তাতে বারাকাত দাও এবং তাদেরকে ক্ষমা করো ও তাদের ওপর অনুগ্রহ করো)। (মুসলিম)[1]
بَابُ الدَّعْوَاتِ فِى الْأَوْقَاتِ
وَعَن عبد الله بن يسر قَالَ: نَزَلَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى أَبِي فَقَرَّبْنَا إِلَيْهِ طَعَامًا وَوَطْبَةً فَأَكَلَ مِنْهَا ثُمَّ أُتِيَ بِتَمْرٍ فَكَانَ يَأْكُلُهُ وَيُلْقِي النَّوَى بَيْنَ أُصْبُعَيْهِ وَيَجْمَعُ السَّبَّابَةَ وَالْوُسْطَى وَفِي رِوَايَةٍ: فَجَعَلَ يُلْقِي النَّوَى عَلَى ظَهْرِ أُصْبُعَيْهِ السَّبَّابَةِ وَالْوُسْطَى ثُمَّ أُتِيَ بِشَرَابٍ فَشَرِبَهُ فَقَالَ أَبِي وَأَخَذَ بِلِجَامِ دَابَّتِهِ: ادْعُ اللَّهَ لَنَا فَقَالَ: «اللَّهُمَّ بَارِكْ لَهُمْ فِيمَا رَزَقْتَهُمْ واغفرْ لَهُم وارحمهم» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: কাযী ‘ইয়ায বলেনঃ হায়স এমন সব খেজুরগুলোকে বলা হয় যার বিচি বের করে দুধের সাথে মিশ্রিত করা হয়।
(اُدْعُ اللّٰهَ لَنَا) এখান থেকে এটা প্রতীয়মান হয় যে, মেযবানের জন্য মেহমানদের নিকট দু‘আ চাওয়া উচিত এবং সম্মানিত ব্যক্তির নিকট দু‘আ চাওয়া ও মেহমানদের কাছে জীবিকার প্রশস্ততা, মাগফিরাত ও রহমাতের দু‘আ চাওয়া মুস্তাহাব। আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দু‘আয় দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ সন্নিবেশিত করেছেন।