পরিচ্ছেদঃ ৪. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সকাল সন্ধ্যা ও শয্যা গ্রহণকালে যা বলবে
২৪১২-[৩২] আবূ মালিক আল আশ্’আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউ যখন ভোরে ঘুম থেকে উঠে তখন যেন বলে,
"আস্বাহনা- ওয়া আস্বাহাল মুল্কু লিল্লা-হি রব্বিল ’আ-লামীন। আল্ল-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকা খয়রা হা-যাল ইয়াওমি ফাত্হাহূ ওয়া নাসরাহূ, ওয়া নূরাহূ, ওয়া বারাকাতাহূ, ওয়া হুদা-হু। ওয়া আ’ঊযুবিকা মিন্ শার্রি মা- ফীহি, ওয়া মিন্ শার্রি মা- বা’দাহূ। সুম্মা ইযা- আমসা-, ফাল্ইয়াকুল মিসলা যা-লিকা"
(অর্থাৎ- আমরা ভোরে এসে উপনীত হলাম আর আল্লাহ রব্বুল ’আলামীনের উদ্দেশে রাজ্যও ভোরে এসে উপনীত হলো। হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে এ দিনের কল্যাণ চাই, এর সফলতা ও সাহায্য, এর জ্যোতি, এর বারাকাত ও এর হিদায়াত এবং এতে যা অকল্যাণ রয়েছে তা হতে তোমার কাছে আশ্রয় চাই এবং এর পরে যে অকল্যাণ রয়েছে তা হতে আশ্রয় চাই।)। অতঃপর সে সন্ধ্যায় উপনীত হলেও যেন অনুরূপ দু’আ করে। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَن أَبِي مَالِكٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: إِذَا أَصْبَحَ أَحَدُكُمْ فَلْيَقُلْ: أَصْبَحْنَا وَأَصْبَحَ الْمُلْكُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَ هَذَا الْيَوْمِ فَتْحَهُ وَنَصْرَهُ وَنُورَهُ وَبِرْكَتَهُ وَهُدَاهُ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا فِيهِ وَمِنْ شَرِّ مَا بَعْدَهُ ثُمَّ إِذَا أَمْسَى فَلْيَقُلْ مِثْلَ ذَلِكَ . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: ‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ এখানে (فَتْحَه) বা তার বিজয় এবং তারপরের অংশ তার কথা خير هذا اليوم এর বর্ণনা।
এখানে فتح শব্দের অর্থ হলো বিজয় অর্জন করা, তা সন্ধির মাধ্যমে অথবা সম্মুখ যুদ্ধের মাধ্যমে হতে পারে। আর النصر-এর অর্থ হলো শত্রুর বিরুদ্ধে বিজয় এবং সাহায্য, আর এটাই শব্দ দু’টির মৌলিক অর্থ।
(وَمِنْ شَرِّ مَا بَعْدَه) মিশকাতের অধিকাংশ অনুলিপিতে অনুরূপ শব্দ রয়েছে। তবে কতিপয় অনুলিপিতে (وَمِنْ شَرِّ مَا بَعْدَه) উল্লেখ রয়েছে। অর্থাৎ- (مِنْ) এর উল্লেখ ছাড়া, আবূ দাঊদেও অনুরূপ রয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ ৪. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সকাল সন্ধ্যা ও শয্যা গ্রহণকালে যা বলবে
২৪১৩-[৩৩] ’আবদুর রহমন ইবনু আবূ বকরা (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার পিতাকে বললাম, হে আমার পিতা! আপনাকে প্রতিদিন ভোরে বলতে শুনি,
’’আল্ল-হুম্মা ’আ-ফিনী ফী বাদানী, আল্ল-হুম্মা ’আ-ফিনী ফী সাম্’ঈ, আল্ল-হুম্মা ’আ-ফিনী ফী বাসারী লা- ইলা-হা ইল্লা- আন্তা’’
(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমাকে শারীরিকভাবে নিরাপত্তায় রাখো, আমাকে শ্রবণশক্তিতে নিরাপত্তায় রাখো। হে আল্লাহ! আমাকে দৃষ্টিশক্তিতে নিরাপদে রাখো। তুমি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মা’বূদ নেই।)
এ দু’আ ভোরে তিনবার ও বিকালে তিনবার বলেন। তখন তার পিতা বললেন, হে বৎস! আমি এ বাক্যগুলো দিয়ে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দু’আ করতে শুনেছি। অতএব আমি তাঁর সুন্নাত পালন করাকে পছন্দ করি। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ أَبِي بَكْرَةَ قَالَ: قُلْتُ لِأَبِي: يَا أَبَتِ أَسْمَعُكَ تَقُولُ كُلَّ غَدَاةٍ: «اللَّهُمَّ عَافِنِي فِي بَدَنِي اللَّهُمَّ عَافِنِي فِي سَمْعِي اللَّهُمَّ عَافِنِي فِي بَصَرِي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ» تُكَرِّرُهَا ثَلَاثًا حِينَ تُصْبِحُ وَثَلَاثًا حِين تمسي فَقَالَ: يَا بُنَيَّ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَدْعُو بِهِنَّ فَأَنَا أُحِبُّ أَنْ أستن بسننه. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসে উল্লেখিত জিকিরে শরীর উল্লেখ করার পর আলাদাভাবে শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তির উল্লেখ করা হয়েছে, অথচ এ দু’টি তো শরীরের সাথে সম্পৃক্ত, (অতএব আলাদাভাবে তা উল্লেখ করার কারণ কি?)
এর কারণ হলোঃ শ্রবণশক্তিটি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওপর নাযিলকৃত আয়াতে কারীমা দ্বারা পাওয়া যায়। আর চক্ষু এটিও আল্লাহর আয়াতে পাওয়া যায়, যা দিগন্তের ন্যায় প্রমাণিত। অতএব এ দু’টি কুরআনুল কারীমে পাওয়ার কারণেই একত্র করে উল্লেখ করা হয়েছে (وتكررها); আবূ দাঊদ, মুসনাদে আহমাদ, আল আদাবুল মুফরাদে (تعيدها) উল্লেখ রয়েছে। ‘আল্লামা নাবাবী (রহঃ) তাঁর ‘‘আযকার’’ ও ‘আল্লামা শাওকানী (রহঃ) তাঁর ‘‘তুহফাতু আয্ যাকিরীন’’-এ অনুরূপ উল্লেখ করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ৪. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সকাল সন্ধ্যা ও শয্যা গ্রহণকালে যা বলবে
২৪১৪-[৩৪] ’আবদুল্লাহ ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভোরে ঘুম হতে উঠে বলতেন,
"আস্বাহনা- ওয়া আস্বাহাল মুলকু লিল্লা-হি ওয়াল হাম্দুলিল্লা-হি ওয়াল কিব্রিয়া-উ ওয়াল ’আযামাতু লিল্লা-হি ওয়াল খলক্বু ওয়াল আমরু ওয়াল্ লায়লু ওয়ান্ নাহা-রু ওয়ামা- সাকানা ফীহিমা- লিল্লা-হি আল্ল-হুম্মাজ্’আল আও্ওয়ালা হা-যান্ নাহা-রি সলা-হান ওয়া আওসাত্বাহূ নাজা-হান ওয়া আ-খিরাহূ ফালা-হান ইয়া- আর্হামার্ র-হিমীন"
(অর্থাৎ- আমরা ভোরে এসে উপনীত হলাম, আর ভোরে এসে উপনীত হলো আল্লাহরই উদ্দেশে আল্লাহর রাজ্য। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই। আল্লাহরই জন্য সব অহংকার ও সম্মান। সমগ্র সৃষ্টি ও কর্তৃত্ব, রাত ও দিন এবং এতে যা বসবাস করে সবই আল্লাহর। হে আল্লাহ! তুমি এ দিনের প্রথমাংশকে কল্যাণকর করো, মধ্যাংশকে সাফল্যের ওয়াসীলাহ্ করো, আর শেষাংশকে সাফল্যময় করো। হে সর্বাধিক রহমকারী।’’ (নাবাবী কিতাবুল আযকার- ইবনুস্ সুন্নী’র বর্ণনার দ্বারা)[1]
وَعَنْ عَبْدُ اللَّهِ بْنِ أَبِي أَوْفَى قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا أَصْبَحَ قَالَ: «أَصْبَحْنَا وَأَصْبَحَ الْمُلْكُ لِلَّهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ وَالْكِبْرِيَاءُ وَالْعَظَمَةُ لِلَّهِ وَالْخَلْقُ وَالْأَمْرُ وَاللَّيْلُ وَالنَّهَارُ وَمَا سَكَنَ فِيهِمَا لِلَّهِ اللَّهُمَّ اجْعَلْ أَوَّلَ هَذَا النَّهَارِ صَلَاحًا وَأَوْسَطَهُ نَجَاحًا وَآخِرَهُ فَلَاحًا يَا أَرْحَمَ الرَّاحِمِينَ» . ذَكَرَهُ النَّوَوِيُّ فِي كِتَابِ الْأَذْكَارِ بِرِوَايَةِ ابْنِ السّني
ব্যাখ্যা: ‘আল্লামা কারী (রহঃ) বলেন, আর এজন্যই আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ
(قَدْ أَفْلَحَ الْمُؤْمِنُوْنَ) (أُوْلٰئِكَ هُمُ الْوَارِثُوْنَ * الَّذِيْنَ يَرِثُوْنَ الْفِرْدَوْسَ)
অর্থাৎ- ‘‘ঈমানদারগণ সফল হয়েছেন। অতঃপর তিনি বলেনঃ তারাই উত্তরাধিকার লাভ করবে। তারা শীতল ছায়াময় জান্নাতের উত্তরাধিকার লাভ করবে।’’ (সূরা আল মু’মিনূন ২৩ : ১, ১০, ১১)
আর উল্লেখিত দু‘আর শেষে (يَا أَرْحَمَ الرَّاحِمِيْنَ) ‘‘ইয়া- আরহামার্ র-হিমীন’’ উল্লেখ প্রসঙ্গে ‘আল্লামা আল কারী (রহঃ) বলেনঃ উল্লেখিত দু‘আ এ বাক্য দ্বারা এজন্যই শেষ করা হয়েছে, কারণ এটি দ্রুত দু‘আ কবূলের কারণ। যেমনটি হাদীসে এসেছে এবং ইমাম হাকিম (রহঃ) তাঁর মুসতাদরাকে আবী ‘উমামাহ্ থেকে মারফূ‘ভাবে বর্ণনা করেছেন এবং তিনি সহীহ বলেছেন। নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলার জন্যই রাজত্ব। যে ব্যক্তি বলবেঃ ‘‘ইয়া- আরহামার্ র-হিমীন’’। অতঃপর এটা তিনবার বলবে, আল্লাহ তা‘আলা তাকে বলবেন- নিশ্চয় দয়াবানদের দয়াবান তোমার সামনে আগমন করেছে, অতএব তুমি চাও।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলোঃ এখানে তিন সংখ্যাটি নির্ধারণ করা হয়েছে এ কারণে যে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে যে ব্যক্তি এটা তিনবার বলে সে তার অন্তর ও কামনা রবের নিকট উপস্থিত করে।
পরিচ্ছেদঃ ৪. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সকাল সন্ধ্যা ও শয্যা গ্রহণকালে যা বলবে
২৪১৫-[৩৫] ’আবদুর রহমন ইবনু আবযা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভোরে উঠে বলতেন,
’’আস্বাহনা- ’আলা- ফিত্বরাতিল ইস্লা-মি ওয়া কালিমাতিল ইখলা-সি ওয়া ’আলা- দীনি নাবিয়্যিনা- মুহাম্মাদিন ওয়া ’আলা- মিল্লাতি আবীনা- ইব্রা-হীমা হানীফাওঁ ওয়ামা- কা-না মিনাল মুশরিকীন’’
(অর্থাৎ- আমরা ইসলামের ফিত্বরাতের উপর ও কালিমায়ে তাওহীদের সাথে ভোরে ঘুম থেকে উঠলাম এবং আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দীনের উপর ও ইব্রাহীম (আঃ)-এর মিল্লাতের উপর, আর তিনি মুশরিক ছিলেন না।)। (আহমদ ও দারিমী)[1]
وَعَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ أَبْزَى قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ إِذَا أَصْبَحَ: «أَصْبَحْنَا عَلَى فِطْرَةِ الْإِسْلَامِ وَكَلِمَةِ الْإِخْلَاصِ وَعَلَى دِينِ نَبِيِّنَا مُحَمَّدٍ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَعَلَى مِلَّةِ أَبِينَا إِبْرَاهِيمَ حَنِيفًا وَمَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِينَ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالدَّارِمِيُّ
ব্যাখ্যা: এ ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ ‘‘আপনি একনিষ্ঠভাবে নিজকে ধর্মের উপর প্রতিষ্ঠা রাখুন। এটাই আল্লাহ তা‘আলার প্রকৃতি যার উপর তিনি মানব সৃষ্টি করেছেন’’- (সূরা আর্ রূম ৩০ : ৩০) এবং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদীস প্রতিটি সন্তান জন্মগ্রহণ করে প্রকৃতির উপর (كَلِمَةِ الْإِخْلَاصِ)। আল মুসনাদে রয়েছে- (على كلمة الإخلاص) অর্থাৎ- একনিষ্ঠ তাওহীদ, আর তা হলো ‘‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ’’ এবং (عَلٰى دِينِ نَبِيِّنَا مُحَمَّدٍ ﷺ) এটি তাঁর পূর্ববর্তীদের থেকে খাস। কারণ সকল নাবী-রসূলগণের মিল্লাতের নামকরণটি ইসলামই করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলার কথাঃ ‘‘নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলার নিকট একনিষ্ঠ ধর্ম হলো ইসলাম’’- (সূরা আ-লি ‘ইমরান ৩ : ১৯) এবং ইব্রাহীম (আঃ)-এর কথা, ‘‘বিশ্ব প্রতিপালকের জন্যই ইসলাম কবূল করলাম (মুসলিম হলাম)’’- (সূরা আল বাকারাহ্ ২ : ১৩১) এবং সন্তানদের প্রতি ইয়া‘কূব (আঃ)-এর ওয়াসিয়্যাত, ‘‘তোমরা মুসলিম না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না’’- (সূরা আল বাকারাহ্ ২ : ১৩২)। উল্লেখ্য যে, এটি তিনি (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অন্যদের শিক্ষা দেয়ার জন্য বলেছেন।