পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - (সিয়াম) কাযা করা
২০৩০-[১] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রমাযান (রমজান) মাসের সওমের কাযা আমি শুধু শা’বান মাসেই করতে পারি। ইয়াহ্ইয়া ইবনু সা’ঈদ বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমাতে ব্যস্ত থাকায় অথবা বলেছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমাতের ব্যস্ততা ’আয়িশাহকে (শা’বান মাস ছাড়া অন্য কোন মাসে) কাযা সওম আদায়ের সুযোগ দিত না। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ الْقَضَاءِ
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: كَانَ يَكُونُ عَلَيَّ الصَّوْمُ مِنْ رَمَضَانَ فَمَا أَسْتَطِيعُ أَنْ أَقْضِيَ إِلَّا فِي شَعْبَانَ. قَالَ يَحْيَى بْنُ سَعِيدٍ: تَعْنِي الشّغل من النَّبِي أَو بِالنَّبِيِّ صلى الله عَلَيْهِ وَسلم
ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীস থেকে জমহূর ‘উলামাগণ দলীল গ্রহণ করেছেন যে, নিশ্চয়ই রমাযানের কাযা সিয়াম তাৎক্ষণিক আদায় করা ওয়াজিব নয়, যদি বিলম্বে নিষিদ্ধ হত তবে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে পরবর্তী শা‘বান পর্যন্ত বিলম্বের স্বীকৃতি দিতেন না। তবে হ্যাঁ! তা দ্রুত আদায় করা মুস্তাহাব। কেননা আনুগত্যের প্রতিযোগিতা করা ও কল্যাণমূলক কাজে দ্রুততা অবলম্বন করা উত্তম। ‘আল্লামা শাওকানী (রহঃ) বলেন, আলোচ্য হাদীসে দলীল রয়েছে যে, রমাযানে কাযা হয়ে যাওয়া সিয়াম মুত্বলাকভাবেই বিলম্বে আদায় করা জায়িয। তাতে কোন ওযর বা কারণ থাকুক বা না থাকুক। আর জমহূর ‘উলামাগণ আল্লাহ তা‘আলার বাণী (সূরা আল বাকারাহ্ ২ : ১৮৫) فَعِدَّةٌ مِنْ أَيَّامٍ أُخَرَ দ্বারাও দলীল গ্রহণ করেছেন, আল্লাহ তা‘আলা মুত্বলাকভাবে কাযা আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। সুতরাং দলীল ছাড়া তা কোন সময়ের সাথে নির্দিষ্ট করা বৈধ নয়। সুতরাং তা বিলম্বের সাথে আদা করা ওয়াজিব, তাৎক্ষণিক আবশ্যক নয়।
পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - (সিয়াম) কাযা করা
২০৩১-[২] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন নারীর উচিত নয় স্বামীর উপস্থিতিতে তার অনুমতি ছাড়া নফল সওম পালন করা। ঠিক তেমনই কোন নারীর জন্য স্বামীর অনুমতি ছাড়া কাউকে ঘরে প্রবেশ করার অনুমতি দেয়াও অনুচিত। (মুসলিম)[1]
بَابُ الْقَضَاءِ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا يَحِلُّ لِلْمَرْأَةِ أَنْ تَصُومَ وَزَوْجُهَا شَاهِدٌ إِلَّا بِإِذْنِهِ وَلَا تَأْذَنَ فِي بَيْتِهِ إِلَّا بِإِذْنِهِ» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: ‘আল্লামা মুল্লা ‘আলী কারী (রহঃ) বলেন, স্ত্রীর জন্য তার নিকট কিংবা দূরবর্তী আত্মীয় এমনকি কোন নারীকেও স্বামীর অনুমতি ব্যতীত প্রবেশের অনুমতি দেয়া বৈধ নয়।
‘আল্লামা নাবাবী (রহঃ) স্বামীর অনুমতি ব্যতীত স্ত্রীর কাউকে তার বাড়িতে প্রবেশের অনুমতি দিতে পারবে না। এটা যে ব্যাপারে স্বামীর অনুমোদন সম্পর্কে অবহিত হওয়া না যাবে সে ক্ষেত্রে, অর্থাৎ- পূর্ব হতে এ মর্মে স্বামীর অনুমোদন যদি না থাকে। তবে কারো প্রবেশে যদি স্বামীর সন্তুষ্টি সম্পর্কে অবহিত হওয়া যায় তখন তার প্রবেশে কোন সমস্যা নেই। যেমন স্বভাবগতভাবেই যে সকল মেহমানদের প্রবেশের অনুমতি আছে, চাই স্বামী উপস্থিত থাকুক বা না থাকুক।
আর স্বামীর অনুমতি ব্যতীত স্ত্রীর সিয়াম পালনের ক্ষেত্রে তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ্’র বর্ণনায় রয়েছে যে, স্ত্রী তার স্বামীর উপস্থিতিতে তার অনুমতি ছাড়া রমাযান (রমজান) ব্যতীত কোন সিয়াম পালন করতে পারবে না। তবে ঐ সকল মেহমান স্ত্রীর জন্য মাহরাম হওয়া জরুরী।
পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - (সিয়াম) কাযা করা
২০৩২-[৩] মু’আযাহ্ আল ’আদাবিয়্যাহ্ (রহঃ) (কুনিয়াত উম্মুস্ সুহবা) থেকে বর্ণিত। তিনি উম্মুল মু’মিনীনাহ্ ’আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন, ঋতুবতী মহিলাদের সওম কাযা করতে হয়, অথচ সালাত কাযা করতে হয় না, কারণ কী? ’আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবদ্দশায় আমাদের যখন মাসিক হত, তখন সওম কাযা করার হুকুম দেয়া হত। কিন্তু সালাত কাযা করার হুকুম দেয়া হত না। (মুসলিম)[1]
بَابُ الْقَضَاءِ
وَعَنْ مُعَاذَةَ الْعَدَوِيَّةِ أَنَّهَا قَالَتْ لِعَائِشَةَ: مَا بَالُ الْحَائِضِ تَقْضِي الصَّوْمَ وَلَا تَقْضِي الصَّلَاةَ؟ قَالَتْ عَائِشَةُ: كَانَ يُصِيبُنَا ذَلِكَ فَنُؤْمَرُ بِقَضَاءِ الصَّوْمِ وَلَا نُؤْمَرُ بِقَضَاءِ الصَّلَاةِ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
ব্যাখ্যা: ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে এটা জিজ্ঞেস করার কারণ হলো, ‘সালাত এবং সিয়াম’ উভয়টি হুকুমগতভাবে সমান হবে, এটাই বিবেকের দাবি। কারণ উভয়টি তো ‘ইবাদাত, এবং বিশেষ কারণে তা পরিত্যাগ করতে হয়। সুতরাং সিয়াম কাযা ওয়াজিব। আর সালাত কাযা ওয়াজিব নয়, এটা জিজ্ঞাসাকারীর বোধগম্য ছিল না। এ মর্মে ইমাম বুখারী (রহঃ) তার বিশুদ্ধ গ্রন্থে সিয়াম অধ্যায়ে আবূয্ যিনাদ (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই সুন্নাতসমূহ ও হুকুমের বিভিন্ন দিক অধিকাংশ ক্ষেত্রে যুক্তির বিপরীতে আসে কাজেই মুসলিমগণ শারী‘আতে যা পাবে তার অনুসরণ করবে। সুতরাং ঋতুমতী নারী সিয়াম কাযা করবে এবং সালাত কাযা করবে না।
তবে ফিকহবিদগণ সালাত ও সিয়ামের পার্থক্য নির্ধারণে বলেছেন, সালাত কাযা করার বিধান না থাকার মাঝে হিকমাত হলোঃ সালাত বার বার আদায় করতে হয় বিধায় তা কাযা করা অত্যন্ত কঠিন। (অর্থাৎ- ঋতুস্রাব সাধারণত ৩, ৫, ৭, ১০ দিন পর্যন্ত হয়, যে নারীর মাসিক ১০ দিন হয় তার ১০x৫= ৫০ ওয়াক্ত সালাত কাযা করতে হবে যা খুবই কঠিন) পক্ষান্তরে সিয়াম বছরে মাত্র একবার যা কাযা করা মোটেই কঠিন নয়। তবে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) শুধু রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নির্দেশের কথা বলেছেন। সুতরাং ফকীহদের এ রহস্য জানার প্রয়োজন নেই।
পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - (সিয়াম) কাযা করা
২০৩৩-[৪] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করেছে অথচ তার সওম অনাদায়ী ছিল, এ ক্ষেত্রে তার ওয়ারিসগণ সওমের কাযা আদায় করে দেবে। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ الْقَضَاءِ
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ مَاتَ وَعَلَيْهِ صَوْمٌ صَامَ عَنْهُ وليه»
ব্যাখ্যা: ‘আল্লামা ইবনু দাক্বীক (রহঃ) বলেন, আলোচ্য হাদীসটি জোরালোভাবে প্রমাণ করে যে, মৃত ব্যক্তির পক্ষ হতে তার ওয়ারিসগণ সিয়াম পালন করতে পারবে এবং সিয়ামে প্রতিনিধিত্ব বৈধ। ‘উলামাগণ এ মতেরই পক্ষ অবলম্বন করেছেন। এর স্বপক্ষে অন্য আর একটি হাদীস রয়েছে। ‘আবদুল্লাহ বিন ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। এক মহিলা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে বলল, ইয়া রসূলাল্লাহ! আমার মা মৃত্যুবরণ করেছেন কিন্তু তার ওপর মানৎ-এর সিয়াম ছিল আমি কি তার পক্ষ হতে তা আদায় করতে পারি?
জবাবে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার মায়ের ওপর যদি কোন ঋণ থাকে তবে তা কি পূর্ণ করবে? মহিলাটি বলল, হ্যাঁ; নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার মায়ের পক্ষ হতে তুমি সিয়াম পালন কর। (মুসলিম, আহমাদ)