পরিচ্ছেদঃ ৪. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মুসাফিরের সওম
২০২৭-[৯] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মক্কা বিজয়ের বছর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমাযান (রমজান) মাসে (মদীনাহ্ হতে) মক্কা অভিমুখে রওনা হলেন। তিনি (মক্কা মদীনার মধ্যবর্তী স্থান ’উসফানের কাছে) ’’কুরা-’আল গমীম’’ পৌঁছা পর্যন্ত সওম রাখলেন। অন্যান্য লোকেরাও সওমে ছিলেন। (এখানে পৌঁছার পর) তিনি পেয়ালায় করে পানি চেয়ে আনলেন। পেয়ালাটিকে (হাতে উঠিয়ে এতো) উঁচুতে তুলে ধরলেন যে, মানুষেরা এর দিকে তাকাল। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পানি পান করলেন। এরপর কিছু লোক আরয করল যে, (এখনো) কিছু লোক সওম রেখেছে (অর্থাৎ- রসূলের অনুসরণে সওম ভাঙেনি)। (এ কথা শুনে) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ এসব লোক পাক্কা গুনাহগার, এসব লোক পাক্কা গুনাহগার। (মুসলিম)[1]
عَنْ جَابِرٍ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَرَجَ عَامَ الْفَتْحِ إِلَى مَكَّةَ فِي رَمَضَانَ فَصَامَ حَتَّى بَلَغَ كُرَاعَ الْغَمِيمِ فَصَامَ النَّاسُ ثُمَّ دَعَا بِقَدَحٍ مِنْ مَاءٍ فَرَفَعَهُ حَتَّى نَظَرَ النَّاسُ إِلَيْهِ ثُمَّ شَرِبَ فَقِيلَ لَهُ بَعْدَ ذَلِكَ إِنَّ بَعْضَ النَّاسِ قَدْ صَامَ. فَقَالَ: «أُولَئِكَ الْعُصَاةُ أُولَئِكَ الْعُصَاةُ» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: তিরমিযী, নাসায়ী, বায়হাক্বী ও ত্বহাবীও অনুরূপ বর্ণনা করেছেন এবং তারা (أُولٰئِكَ الْعُصَاةُ) বা তারাই অতিশয় গুনাহগার, এটি একবার উল্লেখ করেছেন। তিরমিযীতে রয়েছে যে, নিশ্চয়ই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের দিনে মক্কাহভিমুখে রওনা করলেন এবং কুরা-‘আল গমীম (‘উসফান-এর নিকটবর্তী একটি জায়গার নাম) নামক স্থানে পৌঁছালেন এবং সেখানে সিয়াম পালন আরম্ভ করলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলা হলো যে, আপনি কি করছেন তাই তারা লক্ষ্য করছে। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এক পাত্র পানি তলব করলেন এবং জনগণকে দেখিয়ে তা পান করলেন, এবং তা দেখে কতক লোক সিয়াম ভঙ্গ করল এবং কতক লোক সিয়াম পালন অব্যাহত রাখল। আর এ বিষয়টি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট পৌঁছে গেল যে, লোকজন এখনও সিয়াম পালন করছে। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, তারা গুনাহগার।
উল্লেখিত হাদীসে সিয়াম পালনকারীগণকে গুনাহগার হওয়ার দিকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে, তার কারণ হলো, তারা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কর্মের পরিপন্থী কাজ করেছে। আর তারা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানীয় পাত্র উপরে উঠিয়ে তা পান করার মাধ্যমে সিয়াম ভঙ্গ করে তাদের যে আনুগত্য আশা করেছিলেন, সিয়াম পালন কঠিন হওয়ার পরেও তা তারা বাস্তবায়ন করেনি।
‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেন, তারা পূর্ণ গুনাহগার কেননা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিয়াম ভাঙ্গার প্রস্ত্ততি নিলেন এমনকি পানির পাত্র উপরে উঠালেন, এরপর পান করলেন যাতে তারা তার অনুসরণ করে এবং আল্লাহর দেয়া অব্যাহতি গ্রহণ করে। সুতরাং যে তা গ্রহণ করতে অনিহা প্রকাশ করবে সে গুনাহগারেই পৌঁছে যাবে।
পরিচ্ছেদঃ ৪. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মুসাফিরের সওম
২০২৮-[১০] ’আবদুর রহমন ইবনু ’আওফ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ রমাযান (রমজান) মাসে সফরের সায়িম, নিজের বাসস্থানে সায়িম না থাকার মতো। (ইবনু মাজাহ)[1]
وَعَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَوْفٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «صَائِمُ رَمَضَانَ فِي السَّفَرِ كَالْمُفْطِرِ فِي الْحَضَرِ» . رَوَاهُ ابْن مَاجَه
ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীস থেকে বুঝা যায়, সফর অবস্থায় সিয়াম পালন নিষিদ্ধ যেমন মুকীম অবস্থায় সিয়াম বর্জন নিষিদ্ধ।
হাফেয আসকালানী (রহঃ) বলেন, সফর অবস্থায় সিয়াম পালন না করাই উত্তম। আর এটাই হাদীসের মূল উদ্দেশ্য। আর হাদীসটি যেহেতু য‘ঈফ সেহেতু এটি গ্রহণযোগ্য নয়।
পরিচ্ছেদঃ ৪. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মুসাফিরের সওম
২০২৯-[১১] হামযাহ্ ইবনু ’আমর আল আসলামী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হে আল্লাহর রসূল! সফর অবস্থায় আমি সওম পালনে সমর্থ। (না রাখলে) আমার কী কোন গুনাহ হবে? তিনি বললেন, এ ক্ষেত্রে আল্লাহ ’আযযা ওয়াজাল্লা তোমাকে অবকাশ দিয়েছেন। যে ব্যক্তি এ অবকাশ গ্রহণ করবে, সে উত্তম কাজ করবে। আর যে ব্যক্তি সওম রাখা পছন্দ করবে (সে রাখবে), তার কোন গুনাহ হবে না। (মুসলিম)[1]
وَعَن حَمْزَة بن عَمْرو السّلمِيّ أَنَّهُ قَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّي أَجِدُ بِي قُوَّةً عَلَى الصِّيَامِ فِي السَّفَرِ فَهَلْ عَلَيَّ جُنَاحٌ؟ قَالَ: «هِيَ رُخْصَةٌ مِنَ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ فَمَنْ أَخَذَ بِهَا فَحَسَنٌ وَمَنْ أَحَبَّ أَنْ يَصُومَ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِ» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: এ মর্মে ‘আল্লামা ‘উবায়দুল্লাহ আল মুবারকপূরী (রহঃ) বলেন, আলোচ্য হাদীসে সাধারণত সফর অবস্থায় সিয়াম পালন না করার উপরই প্রাধান্য দেয়া হয়েছে, যেমন ইমাম আহমাদের মাযহাব। তবে জমহূর ‘উলামাগণ তার বিপরীত মতামত ব্যক্ত করেছেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর (فَحَسَنٌ) শব্দের ভিত্তিতে।
‘আল্লামা শাওকানী (রহঃ) বলেন, হাদীসে জিজ্ঞাসাকালীন কথা, ‘আমি সিয়াম পালনে সক্ষম’ এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, নিশ্চয়ই সিয়াম পালন করাটা তার উপর কঠিন নয়। এমন সফরে সিয়াম পালন করলে তার দ্বারা অন্য কোন হকও নষ্ট হবে না।
আল মুনতাক্বী প্রণেতার মতে আলোচ্য হাদীসটি সফর অবস্থায় সিয়াম বর্জনের ফাযীলাতের উপর মজবুত দলীল, কারণ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথা (فَمَنْ أَخَذَ بِهَا فَحَسَنٌ وَمَنْ أَحَبَّ أَنْ يَصُومَ فَلَا جُنَاحَ)। সুতরাং প্রমাণিত হলো অব্যাহতি গ্রহণ করাটাই উত্তম। জমহূর ‘উলামাগণ তার জবাবে বলেন, এটা সে ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যার সফরে সিয়াম পালন করলে ক্ষতির আশংকা রয়েছে, অথবা সিয়াম পালন তার জন্য কষ্টকর। যেমন একাধিক হাদীসে তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে।