পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সওম পবিত্র করা
২০০৫-[৭] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সায়িম অবস্থায় চুমু খেতেন এবং তিনি তাঁর জিহ্বা লেহন করতেন। (আবূ দাঊদ)[1]
عَن عَائِشَة: أَن الني صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: كَانَ يُقَبِّلُهَا وَهُوَ صَائِم ويمص لسنانها. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: (يَمُصُّ لِسَانَهَا) ‘‘তিনি তার (‘আয়িশার) জিহবা লেহন করতেন।’’ মীরাক বলেনঃ সর্বসম্মত অভিমত এই যে, অন্যের থুথু গিলে ফেললে সিয়াম ভঙ্গ হয়ে যাবে। হাফেয ইবনু হাজার বলেনঃ অত্র হাদীসটি য‘ঈফ। যদি সহীহও হয় তবে এর অর্থ এই যে, তিনি তার থুথু গিলেননি। ফাতহুল ওয়াদূদ-এ বলা হয়েছে যে, এ জিহবা লেহন সিয়ামের অবস্থায় ছিল না। কেননা এতে উল্লেখ নেই যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা সিয়ামরত অবস্থায় করেছিলেন অথবা এর অর্থ এই যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার (‘আয়িশার) থুথু ফেলে দিয়েছেন।
পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সওম পবিত্র করা
২০০৬-[৮] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সায়িম অবস্থায় স্ত্রীকে জড়িয়ে ধরা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে তা করার অনুমতি দিলেন। এরপর আরো এক ব্যক্তি এসে তাঁকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। এ ব্যক্তিকে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তা করতে নিষেধ করলেন। যাকে তিনি অনুমতি দিয়েছিলেন সে ছিল বৃদ্ধ। আর যাকে নিষেধ করেছিলেন সে ছিল যুবক। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ إِنَّ رَجُلًا سَأَلَ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ الْمُبَاشَرَةِ لِلصَّائِمِ فَرخص لَهُ. وَأَتَاهُ آخَرُ فَسَأَلَهُ فَنَهَاهُ فَإِذَا الَّذِي رَخَّصَ لَهُ شَيْخٌ وَإِذَا الَّذِي نَهَاهُ شَابٌّ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: (الْمُبَاشَرَةِ) ‘‘মেলামেশা’’ দ্বারা উদ্দেশ্য স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে স্পর্শ করা তবে তা লজ্জাস্থান ব্যবহার ব্যতীত। (وَإِذَا الَّذِي نَهَاهُ شَابٌّ) তিনি যাকে মেলামেশা করতে নিষেধ করলেন সে ছিল যুবক।
মেলামেশা ও চুম্বন দেয়ার ক্ষেত্রে যারা যুবক ও বৃদ্ধের মাঝে পৃথক করেন এ হাদীসটি তাদের দলীল। এ বিষয়ে পূর্বে বিস্তারিতভাবে আলোচনা হয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সওম পবিত্র করা
২০০৭-[৯] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তির সায়িম অবস্থায় (অনিচ্ছায়) বমি হবে তার সওম কাযা করতে হবে না। আর যে ব্যক্তি গলার ভিতর আঙ্গুল বা অন্য কিছু ঢুকিয়ে দিয়ে ইচ্ছাকৃত বমি করবে তাকে কাযা আদায় করতে হবে। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ, দারিমী। ইমাম তিরমিযী বলেন, হাদীসটি গরীব। কারণ ’ঈসা ইবনু ইউনুস ছাড়া এ হাদীসটি আর কারো বর্ণনায় রয়েছে তা আমরা জানি না। ইমাম বুখারীও এ হাদীসটিকে মাহফূয [সংরক্ষিত] মনে করেন না, অর্থাৎ- হাদীসটি মুনকার।)[1]
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عَلَيْهِ وَسلم: «من ذرعه الْقَيْء وَهُوَ صَائِمٌ فَلَيْسَ عَلَيْهِ قَضَاءٌ وَمَنِ اسْتَقَاءَ عَمْدًا فَلْيَقْضِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَابْنُ مَاجَهْ وَالدَّارِمِيُّ. وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ: هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ لَا نَعْرِفُهُ إِلَّا مِنْ حَدِيثِ عِيسَى بْنِ يُونُس. وَقَالَ مُحَمَّد يَعْنِي البُخَارِيّ لَا أرَاهُ مَحْفُوظًا
ব্যাখ্যা: (وَمَنِ اسْتَقَاءَ عَمْدًا فَلْيَقْضِ) ‘‘যে ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করে সে যেন সিয়াম কাযা করে।’’
হাদীসের শিক্ষাঃ অনিচ্ছাকৃত বমি দ্বারা সিয়াম ভঙ্গ হয় না। পক্ষান্তেরে ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করলে তার সিয়াম ভঙ্গ হয়ে যায়। কেননা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে উক্ত সিয়াম কাযা করতে বলেছেন। ইমাম শাফি‘ঈ আহমাদ, মালিক ও ইসহাকসহ জমহূর ‘আলিমদের অভিমত এটাই। একদল ‘আলিমদের মতে বমি যেভাবেই হোক তা সিয়াম ভঙ্গ করে, তাদের দলীল আবূ দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত পরবর্তী হাদীস।
পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সওম পবিত্র করা
২০০৮-[১০] মা’দান ইবনু তালহা (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি আবূ দারদা (রাঃ) থেকে এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সওম অবস্থায়) বমি করেছেন। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সওম ভেঙ্গে ফেলেছেন। মা’দান বলেন, এরপর আমি (দামেশকের মসজিদে) সাওবান-এর সাথে মিলিত হই। তাকে আমি বলি যে, আবূ দারদা আমাকে এ হাদীসটি শুনিয়েছেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (একবার) বমি করেছেন। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সওম ভেঙ্গে ফেলেছেন। সাওবান (এ কথা শুনে) বললেন, আবূ দারদা (রাঃ) পুরোপুরি সত্য বলেছেন। আর সে সময় আমিই তাঁর জন্য উযূর পানির ব্যবস্থা করেছিলাম। (আবূ দাঊদ, তিরমিযী, দারিমী)[1]
وَعَنْ مَعْدَانَ بْنِ طَلْحَةَ أَنَّ أَبَا الدَّرْدَاءِ حَدَّثَهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَاءَ فَأَفْطَرَ. قَالَ: فَلَقِيتُ ثَوْبَانَ فِي مَسْجِدِ دِمَشْقَ فَقُلْتُ: إِنَّ أَبَا الدَّرْدَاءِ حَدَّثَنِي أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَاءَ فَأَفْطَرَ. قَالَ: صَدَقَ وَأَنَا صَبَبْتُ لَهُ وضوءه. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وَالتِّرْمِذِيّ والدارمي
ব্যাখ্যা: (أَنَّ رَسُوْلَ اللّٰهِ ﷺ قَاءَ فَأَفْطَرَ) ‘‘রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বমি করলেন, অতঃপর সিয়াম ভেঙ্গে ফেললেন।’’ এ হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করা হয় যে, বমি সিয়াম ভঙ্গের কারণ তা যেভাবেই ঘুটুক। কেননা হাদীসে বর্ণিত فَأَفْطَرَ শব্দের মধ্যে الفاء বর্ণটি প্রমাণ করে যে, ইফতারের কারণ ছিল বমি করা। অতএব বুঝা গেল যে, বমি সিয়াম ভঙ্গের কারণ। এর জবাব বিভিন্নভাবে দেয়া হয়ে থাকে।
১. অত্র হাদীসের সানাদে ইযতিরাব (অস্থিরতা) রয়েছে। অতএব অত্র হাদীসটি দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়।
২. বর্ণনাকারীর বক্তব্য (قَاءَ فَأَفْطَرَ) ‘‘বমি করলেন, অতঃপর ইফতার করলেন।’’ এতে এ কথা স্পষ্টভাবে বলা হয়নি যে, বমিই সিয়াম ভেঙ্গে দিয়েছে। কেননা فاء বর্ণটি কারণ না বুঝিয়ে তা তা‘কীবের জন্যও হতে পারে। অর্থাৎ- নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বমি করলেন। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দুর্বল হয়ে পড়ার কারণে সওম ভেঙে ফেলেছেন। ইমাম তিরমিযী বলেনঃ এ হাদীসের অর্থ হল নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নফল সিয়ামরত ছিলেন। অতঃপর বমি করার ফলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দুর্বল হয়ে যান এবং সওম ভেঙে ফেলেন। কোন কোন হাদীসে এভাবে ব্যাখ্যাসহ বর্ণিত হয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সওম পবিত্র করা
২০০৯-[১১] ’আমির ইবনু রবী’আহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সওম অবস্থায় এতবার মিসওয়াক করতে দেখেছি যে, তা আমি হিসাব করতে পারি না। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ عَامِرِ بْنِ رَبِيعَةَ قَالَ: رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا لَا أُحْصِي يَتَسَوَّكُ وَهُوَ صَائِمٌ . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ
ব্যাখ্যা: (يَتَسَوَّكُ وَهُوَ صَائِمٌ) ‘‘তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সিয়াম পালন অবস্থায় মিসওয়াক করতেন’’ হাদীসের এ অংশ প্রমাণ করে যে, সিয়ামরত অবস্থায় মিসওয়াক করা বৈধ। মিসওয়াক শুকনা ডাল দ্বারা হোক অথবা তাজা ডাল দ্বারা হোক। সিয়াম ফরয হোক অথবা নফল হোক। তা দিনের প্রথম ভাগে হোক অথবা শেষ ভাগে হোক, সর্বাবস্থায় মিসওয়াক করা বৈধ।
এ অভিমত পোষণ করেন ইমাম সাওরী, আওযা‘ঈ, ইবনু ‘উলাইয়্যাহ্, আবূ হানীফাহ্ ও তাঁর সহচরবৃন্দ, সা‘ঈদ ইবনু জুবায়র, মুজাহিদ, ‘আত্বা এবং ইব্রাহীম নাখ্‘ঈ প্রমুখ। ইমাম বুখারীও এ অভিমতের প্রবক্তা।
ইমাম আবূ সাওর এবং ইমাম শাফি‘ঈ-এর মতে সূর্য ঢলে যাওয়ার পর সিয়ামরত অবস্থায় মিসওয়াক করা মাকরূহ। এর পূর্বে মিসওয়াক করা মুস্তাহাব, মিসওয়াক তাজা বা শুকনা যাই হোক।
ইমাম আহমাদ ও ইসহাক ইবনু রহ্ওয়াইহি-এর মতে সূর্য ঢলে যাওয়ার পর মিসওয়াক করা মাকরূহ। তবে মিসওয়াকটি যদি তাজা ডালের হয় তা হলে তা দিনের প্রথম ভাগেও মাকরূহ।
ইমাম মালিক এবং তাঁর সহচরদের মতে দিনের প্রথম ভাগেই হোক অথবা শেষ ভাগে তাজা ডাল দ্বারা মিসওয়াক করা মাকরূহ শুকনা ডাল দ্বারা মিসওয়াক করা মাকরূহ নয়।
পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সওম পবিত্র করা
২০১০-[১২] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বললেন, আমার চোখে অসুখ। এ কারণে আমি কি সায়িম অবস্থায় চোখে সুরমা লাগাতে পারি? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হ্যাঁ। (তিরমিযী; তিনি বলেন, এ হাদীসের সানাদ মজবুত নয়। আর এক বর্ণনাকারী আবূ ’আতিকাহ্-কে দুর্বল মনে করা হয়।)[1]
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: اشتكيت عَيْني أَفَأَكْتَحِلُ وَأَنَا صَائِمٌ؟ قَالَ: «نَعَمْ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: لَيْسَ إِسْنَادُهُ بِالْقَوِيِّ وَأَبُو عَاتِكَةَ الرَّاوِي يضعف
ব্যাখ্যা: أَفَأَكْتَحِلُ وَأَنَا صَائِمٌ؟ قَالَ: نَعَمْ ‘‘আমি কি সায়িমরত অবস্থায় (চোখে) সুরমা লাগাবো? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ।’’ এতে প্রমাণিত হয় যে, সায়িমরত অবস্থায় চোখে সুরমা লাগানো বৈধ।
অধিকাংশ ‘আলিমদের অভিমতও তাই। ইমাম মালিক মনে করেন চোখে সুরমা লাগালে তা যদি কণ্ঠনালী পোঁছে যায় তবে সায়িম ভঙ্গ হয়ে যাবে। আবূ মুস্‘আব মনে করেন, সিয়াম ভঙ্গ হবে না। ইমাম সাওরী, ‘আবদুল্লাহ ইবনুল মুবারক, আহমাদ এবং ইসহাক মনে করেন, সিয়ামরত অবস্থায় সুরমা লাগানো মাকরূহ। ইমাম আহমাদ থেকে এক বর্ণনায় পাওয়া যায় যে, সুরমার স্বাদ কণ্ঠনালী পৌঁছে গেলে সিয়াম ভঙ্গ হয়ে যাবে।
‘আত্বা, হাসান বাসরী, ইব্রাহীম নাখ্‘ঈ, আওযা‘ঈ, আবূ হানীফাহ্, আবূ সাওর এবং শাফি‘ঈর মতে সিয়ামরত অবস্থায় সুরমা লাগাতে কোন ক্ষতি নেই। অতএব তা বৈধ এবং তা সিয়াম ভঙ্গের কোন কারণ নয় চাই হলকুমে তার স্বাদ অনুভব করুক বা না করুক। অত্র হাদীস তাদের স্বপক্ষে দলীল। যদিও হাদীসটি দুর্বল কিন্তু তার শাহিদ রয়েছে যা সমষ্টিগতভাবে দলীল গ্রহণযোগ্য। পক্ষান্তরে সিয়ামরত অবস্থায় সুরমা লাগানো মাকরূহ হওয়ার বিষয়ে কোন সহীহ অথবা হাসান হাদীস নেই। তাই সঠিক কথা এই যে, সিয়ামরত অবস্থায় সুরমা লাগানো বৈধ তা মাকরূহ নয়।
পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সওম পবিত্র করা
২০১১-[১৩] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কিছু সাহাবী হতে বর্ণিত। একজন সাহাবী বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ’আরজ’-এ (মক্কা মদীনার মাঝখানে একটি জায়গার নাম) সায়িম অবস্থায় পিপাসা দমনের জন্য অথবা গরম কমানোর জন্য মাথায় পানি ঢালতে দেখেছি। (মালিক ও আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ بَعْضِ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: لَقَدْ رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالْعَرْجِ يَصُبُّ عَلَى رَأْسِهِ الْمَاءَ وَهُوَ صَائِمٌ مِنَ الْعَطَشِ أَوْ مِنَ الْحَرِّ. رَوَاهُ مَالك
ব্যাখ্যা: (يَصُبُّ عَلٰى رَأْسِهِ الْمَاءَ وَهُوَ صَائِمٌ) ‘‘সিয়ামরত অবস্থায় তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) স্বীয় মাথায় পানি ঢালতেন।’’
‘আল্লামা আল-বাজী বলেনঃ এটি একটি মূলনীতি যে, যা ব্যবহার করলে সিয়াম ভঙ্গ হয় না অথচ তা দ্বারা সিয়াম পালনকারী সিয়াম পালনে শক্তি অর্জন করতে পারে তার জন্য তা ব্যবহার করা বৈধ যেমন পানি ঢেলে শরীর ঠাণ্ডা করা অথবা কুলি করা। কেননা তা সিয়াম পালনকারীকে সিয়াম পালনে সহযোগিতা করে অথচ তা দ্বারা তার সিয়াম ভঙ্গ হয় না।
ইবনু মালিক বলেনঃ অত্র হাদীস প্রমাণ করে যে, সিয়ামরত অবস্থায় মাথায় পানি ঢালা অথবা পানিতে ডুব দেয়া মাকরূহ নয় যদিও ঠাণ্ডার তীব্রতা তার ভিতরে প্রকাশ পায়।
ইমাম শাওকানী বলেন, এ হাদীস দ্বারা জানা গেল সিয়াম পালনকারী তার শরীরের কোন অংশে অথবা সমস্ত শরীরে পানি ঢেলে গরমের তীব্রতা কমাতে পারে, জমহূর ‘আলিমদের অভিমত এটাই। তারা ওয়াজিব গোসল বা সুন্নাত ও বৈধ গোসলের মধ্যে কোন পার্থক্য করেন না। হানাফীগণ বলেনঃ সিয়ামরত অবস্থায় গোসল করা মাকরূহ। তারা দলীল হিসেবে ‘আলী (রাঃ) থেকে ‘আবদুর রাযযাক বর্ণিত সেই হাদীস উপস্থাপন করেছেন যাতে সিয়ামরত অবস্থায় গোসলখানায় প্রবেশ করা নিষেধ করা হয়েছে। তবে এ হাদীসের সানাদ দুর্বল।
‘আল্লামা আল কারী বলেনঃ ইমাম আবূ হানীফার বক্তব্যের উদ্দেশ্য হল সিয়ামরত অবস্থায় গোসল করা উত্তমের বিপরীত কাজ। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মাথায় পানি ঢালার উদ্দেশ্য হল তিনি তা বৈধতা প্রমাণের জন্য করেছেন।
আমি (মুবারকপূরী) বলছিঃ মাকরূহ হওয়া তথা উত্তমের বিপরীত হওয়া ইসলামী শারী‘আতের একটি বিধান। কুরআন অথবা হাদীসের কোন প্রমাণ ছাড়া তা সাব্যস্ত হয় না। সিয়ামরত অবস্থায় গোসল করা মাকরূহ হওয়ার কোন দলীল কুরআনে অথবা হাদীসে নেই। বরং এর বিপরীত দলীল রয়েছে। অতএব যিনি তা দলীল ছাড়াই মাকরূহ বলেছেন তার কথা প্রত্যাখ্যাত ও পরিত্যাজ্য।
পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সওম পবিত্র করা
২০১২-[১৪] শাদ্দাদ ইবনু আওস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রমাযান (রমজান) মাসের আঠার তারিখে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাক্বী’তে (মদীনার কবরস্থানে) এমন এক লোকের কাছে আসলেন, যে শিঙ্গা লাগাচ্ছিল। এ সময় তিনি আমার হাত ধরেছিলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, যে শিঙ্গা লাগায় ও যে শিঙ্গা দেয় উভয়েই নিজেদের সওম ভেঙ্গে ফেলেছে। (আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ ও দারিমী)[1]
ইমাম মুহয়্যিইউস্ সুন্নাহ্ (রহঃ) এ প্রসঙ্গে বলেছেন যে, কতিপয় এ হাদীসের বিকল্প অর্থ গ্রহণ করেছেন, শিঙ্গা লাগানোর অনুমতি দিয়েছেন ইফতার করতে বাধা দেয়ার জন্য, যাকে শিঙ্গা লাগানো তার দুর্বলতার জন্য। আর(حَاجِمُ) অর্থাৎ- যে শিঙ্গা লাগায় তার পেটে কোন কিছু পৌঁছে যাওয়া থেকে নিরাপদ নয়, অত্যাবশ্যক বস্তু চোষার কারণে।
وَعَنْ شَدَّادِ بْنِ أَوْسٍ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَتَى رَجُلًا بِالْبَقِيعِ وَهُوَ يَحْتَجِمُ وَهُوَ آخِذٌ بِيَدِي لِثَمَانِيَ عَشْرَةَ خَلَتْ مِنْ رَمَضَانَ فَقَالَ: «أَفْطَرَ الْحَاجِمُ وَالْمَحْجُومُ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَابْنُ مَاجَهْ وَالدَّارِمِيُّ. قَالَ الشَّيْخُ الْإِمَامُ مُحْيِي السُّنَّةِ رَحِمَهُ اللَّهُ عَلَيْهِ: وَتَأَوَّلَهُ بَعْضُ مَنْ رَخَّصَ فِي الْحِجَامَةِ: أَيْ تَعَرُّضًا لِلْإِفْطَارِ: الْمَحْجُومُ لِلضَّعْفِ وَالْحَاجِمُ لِأَنَّهُ لَا يَأْمَنُ مِنْ أَنْ يَصِلَ شَيْءٌ إِلَى جَوْفِهِ بمص الملازم
ব্যাখ্যা: (أَفْطَرَ الْحَاجِمُ وَالْمَحْجُومُ) ‘‘রক্তমোক্ষণকারী এবং যার জন্য রক্তমোক্ষণ করা হয় উভয়ের সিয়াম ভেঙ্গে গেছে।’’ অত্র হাদীস প্রমাণ করে যে, সিয়ামরত অবস্থায় রক্তমোক্ষণ করা বৈধ নয়। [এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা পূর্বের হাদীসের ব্যাখ্যায় করা হয়েছে]
পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সওম পবিত্র করা
২০১৩-[১৫] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন শার’ঈ কারণ কিংবা কোন রোগ ছাড়া রমাযানের কোনদিন ইচ্ছা করে সওম পালন না করে, তাহলে সারা জীবন সওম রেখেও তার কাযা আদায় হবে না। (আহমদ, তিরমিযী, আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ, দারিমী, তারজামাতুল বাব, বুখারী। ইমাম তিরমিযী বলেন, আমি মুহাম্মাদ অর্থাৎ- ইমাম বুখারীকে বলতে শুনেছি, আবূল মুত্বও্য়িস নামক রাবী এ হাদীস ছাড়া অন্য কোন হাদীস বর্ণনা করেছেন বলে জানি না।)[1]
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ أَفْطَرَ يَوْمًا مِنْ رَمَضَانَ مِنْ غَيْرِ رُخْصَةٍ وَلَا مَرَضٍ لَمْ يَقْضِ عَنْهُ صَوْمُ الدَّهْرِ كُلِّهِ وَإِنْ صَامَهُ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَابْنُ مَاجَهْ وَالدَّارِمِيُّ وَالْبُخَارِيُّ فِي تَرْجَمَةِ بَابٍ وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ: سَمِعْتُ مُحَمَّدًا يَعْنِي البُخَارِيّ يَقُول. أَبُو الطوس الرَّاوِي لَا أَعْرِفُ لَهُ غَيْرَ هَذَا الْحَدِيثِ
ব্যাখ্যা: (لَمْ يَقْضِ عَنْهُ صَوْمُ الدَّهْرِ كُلِّه وَإِنْ صَامَه) ‘‘যদিও সারা জীবন সিয়াম পালন করে তথাপি (বিনা কারণে) রমাযানের একটি সিয়াম ভেঙ্গে ফেললে তা পূর্ণ হবে না।’’ অর্থাৎ- সারা জীবন নফল সিয়াম করলেও রমাযান (রমজান) মাসের ভেঙ্গে ফেলা সিয়ামের ফাযীলাত ও বারাকাত পাবে না, যদিও ঐ ভাঙ্গা সিয়ামের কাযা করার নিয়্যাতে সিয়াম পালন করার ফলে তার ওপর অর্পিত ফরযের দায় থেকে মুক্তি পাবে তথা সিয়াম ভঙ্গের গুনাহ থেকে রেহাই পাবে।
ইবনু মাস্‘ঊদ, ‘আলী ও আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, বিনা ‘উযরে ইচ্ছাকৃতভাবে রমাযানের একটি সিয়াম ভেঙ্গে সারা জীবন সিয়াম পালন করলেও ঐ সিয়াম ভঙ্গের গুনাহ থেকে রেহাই পাবে না। ইবনু হাযম-এর অভিমতও তাই। পক্ষান্তরে সা‘ঈদ ইবনুল মুসাইয়্যিব, শা‘বী, ইবনু জুবায়র, ইব্রাহীম, কাতাদাহ্, হাম্মাদ ও অধিকাংশ ‘আলিমগণ মনে করেন রমাযানের ভেঙ্গে ফেলা এক সিয়ামের পরিবর্তে একদিন কাযা সিয়াম পালন করলেই যথেষ্ট হবে।
পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সওম পবিত্র করা
২০১৪-[১৬] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অনেক সায়িম এমন আছে যারা তাদের সওম দ্বারা ’ক্ষুধার্ত থাকা ছাড়া’ আর কোন ফল লাভ করতে পারে না। এমন অনেক কিয়ামরত (দন্ডায়মান) ব্যক্তি আছে যাদের রাতের ’ইবাদাত নিশি জাগরণ ছাড়া আর কোন ফল আনতে পারে না। (দারিমী)[1]
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «كَمْ مِنْ صَائِمٍ لَيْسَ لَهُ مِنْ صِيَامِهِ إِلَّا الظَّمَأُ وَكَمْ مِنْ قَائِمٍ لَيْسَ لَهُ من قِيَامه إِلَّا السهر» . رَوَاهُ الدَّارمِيّ
ব্যাখ্যা: (لَيْسَ لَهُ مِنْ صِيَامِهِ إِلَّا الظَّمَأُ) ‘‘তার সিয়াম দ্বারা ক্ষুধা ও পিপাসার কষ্ট ব্যতীত কিছুই অর্জিত হয় না।’’ অর্থাৎ- আল্লাহ তা‘আলার নিকট তার সিয়াম কবূল হয় না, ফলে এ সিয়াম দ্বারা তার কোন সাওয়াব অর্জিত হয় না। যদিও ‘আলিমদের মতে তাঁর ওপর ফরযের দায়িত্ব থেকে সে মু্ক্ত হবে।
ইমাম ত্বীবী বলেনঃ সিয়াম পালনকারী যদি সাওয়াবের আশায় সিয়াম পালন না করে, অথবা অশ্লীল কাজ, মিথ্যা কথা, অপবাদ ও গীবত থেকে বিরত না থাকে, তাহলে ঐ সিয়াম পালনকারীর জন্য ক্ষুধা ও পিপাসা ছাড়া আর কিছুই অর্জিত হয় না। এটা শুধুমাত্র সিয়ামের ক্ষেত্রে নয় বরং সকল ‘ইবাদাতের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। অর্থাৎ- যদি ‘ইবাদাতকারী নিষ্ঠার সাথে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য ‘ইবাদাত না করে তবে তা রিয়ায় পরিণত হয়। যদিও এ রকম ‘ইবাদাত দ্বারা কাযা করা থেকে রেহাই পাওয়া যায় কিন্তু তা দ্বারা কোন পুরস্কার বা সাওয়াব অর্জিত হয় না।