পরিচ্ছেদঃ ৩. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সওম পবিত্র করা
২০১৫-[১৭] আবূ সা’ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তিনটি জিনিস সায়িমের সওম ভঙ্গ করে না। শিঙ্গা, বমি ও স্বপ্নদোষ। (তিরমিযী; তিনি বলেন, এ হাদীসটি ত্রুটিমুক্ত নয়। এর একজন বর্ণনাকারী ’আবদুর রহমন ইবনু যায়দকে হাদীস সম্পর্কে দুর্বল হিসেবে গণ্য করা হয়।)[1]
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «ثَلَاثٌ لَا يُفْطِرْنَ الصَّائِمَ الْحِجَامَةُ وَالْقَيْءُ وَالِاحْتِلَامُ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ غَيْرُ مَحْفُوظٍ وَعَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ زيد الرَّاوِي يضعف فِي الحَدِيث
ব্যাখ্যা: রক্তমোক্ষণ এবং বমি সম্পর্কে পূর্বে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। (وَالِاحْتِلَامُ) স্বপ্নদোষ সিয়াম ভঙ্গের কারণ নয় যদিও জাগ্রত হওয়ার পরে স্বপ্নে সঙ্গমের কথা মনে পরে এবং কাপড়ে বীর্য দেখতে পায় তবুও সিয়াম ভঙ্গ হবে না। যদিও স্বপ্নদোষ জাগ্রত অবস্থায় স্ত্রী সহবাসের সমার্থক তবুও সিয়াম ভঙ্গ হবে না। এজন্য যে, এখানে তা নিজের ইচ্ছায় সংঘটিত হয়নি।
অতএব যে ব্যক্তি রমাযান (রমজান) মাসে দিনের বেলায় ঘুমের মধ্যে স্বপ্নদোষে আক্রান্ত হয় এবং বীর্যপাত ঘটে তবুও সিয়াম ভঙ্গ হবে না। ফলে তা কাযা করতে হবে না।
পরিচ্ছেদঃ ৩. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সওম পবিত্র করা
২০১৬-[১৮] সাবিত আল বুনানী (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, আপনারা কী রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সময়ে সায়িমকে শিঙ্গা দেয়া মাকরূহ মনে করতেন? তিনি বলেন, না; তবে দুর্বল আশংকা থাকলে। (বুখারী)[1]
وَعَنْ ثَابِتٍ الْبُنَانِيِّ قَالَ: سُئِلَ أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ: كُنْتُمْ تَكْرَهُونَ الْحِجَامَةَ لِلصَّائِمِ عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ قَالَ: لَا إِلَّا مِنْ أَجْلِ الضَّعْفِ. رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ
ব্যাখ্যা: (قَالَ: لَا إِلَّا مِنْ أَجْلِ الضَّعْفِ) ‘‘তিনি বললেন, না, তবে দুর্বলতার কারণে।’’ অর্থাৎ- সিয়ামরত অবস্থায় রক্তমোক্ষণ করাকে আমরা মাকরূহ মনে করতাম না। আর সিয়াম পালনকারী যদি এর ফলে স্বীয় শরীরে দুর্বলতা আসবে বলে মনে করে তবে তা মাকরূহ, এমতাবস্থায় রক্তমোক্ষণ না করাই ভাল যাতে শরীর দুর্বল না হয়ে যায়।
বায়হাক্বীতে (৪/২৬৪) আবূ সা‘ঈদ থেকে বর্ণিত আছে, ‘‘দুর্বলতার আশংকা থাকলে সিয়ামরত অবস্থায় রক্তমোক্ষণ করা মাকরূহ।’’
অনুরূপভাবে মুসনাদে ‘আবদুর রাজ্জাক এবং আবূ দাঊদে ‘আবদুর রহমান ইবনু আবী লায়লা সূত্রে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এক সাহাবী থেকে বর্ণিত আছে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিয়ামরত অবস্থায় রক্তমাক্ষণ করাতে ও ধারাবাহিকভাবে সিয়াম পালন করতে নিষেধ করেছেনও, কিন্তু তা হারাম করেননি। তবে এ নিষেধাজ্ঞা ছিল তার সহচরদের শক্তি অটুট রাখার নিমিত্তে। এর সানাদ সহীহ। আল কারী বলেনঃ হাদীসটি মাওকূফ, তবে তা মারফূ‘ হাদীসের হুকুম রাখে যেমনটি উসূলের কিতাবে বর্ণিত হয়েছে। অতএব তা দলীলযোগ্য।
পরিচ্ছেদঃ ৩. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সওম পবিত্র করা
২০১৭-[১৯] ইমাম বুখারী হাদীসের তা’লীক পদ্ধতিতে বর্ণনা করেছেন যে, ইবনু ’উমার (প্রথম প্রথম) সায়িম অবস্থায় (শরীরে) শিঙ্গা লাগাতেন। কিন্তু পরে তিনি তা ত্যাগ করেন। তবে রাতের বেলা তিনি শিঙ্গা লাগাতেন।[1]
وَعَنِ الْبُخَارِيِّ تَعْلِيقًا قَالَ: كَانَ ابْنُ عُمَرَ يَحْتَجِمُ وَهُوَ صَائِمٌ ثُمَّ تَرَكَهُ فَكَانَ يَحْتَجِمُ بِاللَّيْلِ
ব্যাখ্যা: (فَكَانَ يَحْتَجِمُ بِاللَّيْلِ) ‘‘(ইবনু ‘উমার রমাযান (রমজান) মাসে) রাত্রে রক্তমোক্ষণ করাতেন।’’ ‘আল্লামা আল বাজী বলেনঃ ইবনু ‘উমার যখন বৃদ্ধ হয়ে পরেন এবং দুর্বল হয়ে যান তখন দিনের বেলায় রক্তমোক্ষণ করালে দুর্বলতার কারণে সিয়াম ভেঙ্গে ফেলতে হতে পারে এই আশংকায় রাতে রক্তমোক্ষণ করাতেন। এজন্য যারা দিনে রক্তমোক্ষণ করালে দুর্বলতার কারণে সিয়াম ভেঙ্গে ফেলতে হতে পারে এই আশংকা করেন তাদের জন্য দিনের বেলায় রক্তমোক্ষণ করা মাকরূহ। এ মু‘আল্লাক হাদীসটি ইমাম মালিক স্বীয় মুয়াত্ত্বাতে নাফি' সূত্রে ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি সিয়ামরত অবস্থায় রক্তমোক্ষণ করাতেন। পরবর্তীতে তিনি তা পরিত্যাগ করেন এবং রমাযান (রমজান) মাসে ইফতার না করে রক্তমোক্ষণ করাতেন না।
পরিচ্ছেদঃ ৩. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সওম পবিত্র করা
২০১৮-[২০] ’আত্বা (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সায়িম (রোযাদার) ব্যক্তি কুলি করে মুখ থেকে পানি ফেলে দেয় আর তার মুখের থুথু বা পানির অবশিষ্টাংশ যা থেকে যায় তাতে সওমের কোন ক্ষতি হবে না। আর কোন ব্যক্তি যেন চুইংগাম না চিবায়। যদি চিবানোর কারণে তার রস গিলে ফেলে, তাহলে তার ক্ষেত্রে আমি বলিনি যে, সে সওম ভঙ্গ করল, বরং তা থেকে নিষেধ করা হয়েছে। (বুখারী- তরজমাতুল বাব)[1]
وَعَن عَطاء قَالَ: إِن مضمض ثُمَّ أَفْرَغَ مَا فِي فِيهِ مِنَ الْمَاءِ لَا يضيره أَنْ يَزْدَرِدَ رِيقَهُ وَمَا بَقِيَ فِي فِيهِ وَلَا يَمْضُغُ الْعِلْكَ فَإِنِ ازْدَرَدَ رِيقَ الْعِلْكَ لَا أَقُولُ: إِنَّهُ يُفْطِرُ وَلَكِنْ يُنْهَى عَنْهُ. رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ فِي تَرْجَمَةِ بَابٍ
ব্যাখ্যা: (ثُمَّ أَفْرَغَ مَا فِىْ فِيهِ مِنَ الْمَاءِ) ‘‘কুলি করার পর মুখের পানি যখন ফেলে দিবে।’’ (لَا يَضِيْرُه أَنْ يَزْدَرِدَ رِيقَه) ‘‘তখন মুখের থুথু গিলে ফেললে তার সিয়ামের কোন ক্ষতি করবে না।’’ (وَمَا بَقِيَ فِىْ فِيْهِ) ‘‘আর তার মুখে যা বাকী থাকে তা গিলে ফেললেও কোন ক্ষতি হবে না।
ইবনু বাত্ত্বাল বলেনঃ এর প্রকাশমান অর্থ এই যে, কুলি করার পর মুখের অভ্যন্তরের অবশিষ্ট পানি থুথুর সাথে গিলে ফেললে সিয়ামের কোন ক্ষতি হবে না। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এ অর্থ উদ্দেশ্য নয়। কেননা ‘আবদুর রাজ্জাক-এর বর্ণনায় আছে, وماذا بقي في فيه অর্থাৎ- কুলি করে মুখের পানি ফেলে দিয়ে তাতে আর কিই বা অবশিষ্ট থাকে। কুসতুলানী বলেনঃ কুলি করে মুখের পানি ফেলে দিলে মুখের অভ্যন্তরে ভিজা ছাড়া আ কী থাকে? অতএব এমতাবস্থায় থুথু গিলে ফেললে তার সিয়ামের কোন ক্ষতি হবে না।
হাফেয ইবনু হাজার বলেনঃ এই মু‘আল্লাক হাদীসটি সা‘ঈদ ইবনু মানসূর, ইবনুল মুবারক সূত্রে ইবনু জুরায়জ থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, আমি ‘আত্বাকে প্রশ্ন করলাম, সিয়াম পালনকারী কুলি করার পর থুথু গিলে ফেললে কি হবে? উত্তরে তিনি বললেন, তার সিয়ামের কোন ক্ষতি হবে না। কুলি করার পর তার মুখে কিই বা আর অবশিষ্ট থাকে?
ইবনু কুদামাহ্ বলেনঃ যা থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব নয় তা গিলে ফেললে সিয়ামের কোন ক্ষতি হবে না যেমন- মুখের থুথু, ধূলাবালি ইত্যাদি। কেননা তা থেকে বেঁচে থাকা কষ্টসাধ্য ব্যাপার। ইবনুল হুমাম ও অন্যান্য হানাফী বিদ্বানগণ বলেনঃ ধূলাবালি, ধোয়া অথবা মাছি যদি সায়িমের মুখে প্রবেশ করে এতে সিয়ামের কোন ক্ষতি হবে না। কেননা তা থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। যেমন নাকি কুলি করার পর মুখের অভ্যন্তরের ভিজা থেকে বেঁচে থাকা অসম্ভব।
(فَإِنِ ازْدَرَدَ رِيقَ الْعِلْكَ لَا أَقُولُ: إِنَّه يُفْطِرُ) ‘‘কেউ যদি চুইংগাম চিবানোর পর থুথু গিলে ফেলে তাহলে আমি বলি না যে, তার সিয়াম ভেঙ্গে গেছে।’’
ইবনুল মুনযির বলেনঃ অধিকাংশ ‘আলিমগণ সিয়ামরত অবস্থায় চুইংগাম চিবানোর অনুমতি দিয়েছেন এই শর্তে যে, তা যেন গলে গিয়ে অভ্যন্তরে প্রবেশ না করে। তা যদি গলে যায়, অতঃপর এর ঢুক গিলে ফেলে তাহলে সিয়াম ভঙ্গ হয়ে যাবে।
ইসহাক ইবনু মানসূর বলেনঃ আমি ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বল-কে জিজ্ঞেস করলাম, সিয়াম পালনকারী কি চুইংগাম চিবাতে পারবে? তিনি বললেন, না। অতঃপর বললেন, আমাদের সহচরগণ বলেন, চুইংগাম দুই প্রকার। এক প্রকার এমন যে, তা গলে যায়, এ জাতীয় চুইংগাম চিবানো যাবে না। যদি তা চিবায় এবং তার কোন অংশ পেটে প্রবেশ করে তাহলে সিয়াম নষ্ট হয়ে যাবে।
এক প্রকার চুইংগাম এমন যে, তা যত চিবাবে তত শক্ত হবে। এ প্রকার চুইংগাম চিবানো মাকরূহ, হারাম নয়। ইমাম শা‘বী, ইব্রাহীম নাখ্‘ঈ, মুহাম্মাদ ইবনু ‘আলী, কাতাদাহ্, শাফি‘ঈ এবং হানাফীগণের মতে তা মাকরূহ।
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তা চিবানোর অনুমতি দিয়েছেন। কেননা এ জাতীয় চুইংগাম চিবালেও তার কোন অংশ পেটের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে না, যেমন- ছোট পাথর মুখে দিয়ে চিবালে তার কিছুই পেটে প্রবেশ করে না।