পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - সওম পবিত্র করা
১৯৯৯-[১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি (সিয়ামরত অবস্থায়) মিথ্যা কথা বলা ও এর উপর ’আমল করা ছেড়ে না দেয়, তার পানাহার ত্যাগ করায় আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই। (বুখারী)[1]
بَابُ تَنْزِيْهِ الصَّوْمِ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ لَمْ يَدَعْ قَوْلَ الزُّورِ وَالْعَمَلَ بِهِ فَلَيْسَ لِلَّهِ حَاجَةٌ فِي أَنْ يَدَعَ طَعَامَهُ وَشَرَابه» . رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যা: (قَوْلُ الزُّورِ) ‘‘ত্বীবী বলেনঃ زور হল মিথ্যা ও অপবাদ। অর্থাৎ- কুফরী কথাবার্তা, মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া, বানোয়াট কথাবার্তা, পরনিন্দা করা, অপবাদ দেয়া, যিনার মিথ্যা অপবাদ দেয়া, গালিগালাজ করা, অভিশাপ দেয়া এসবই (قَوْلُ الزُّورِ) এর অন্তর্ভুক্ত।
(وَالْعَمَلَ بِه) ‘‘বাতিল কাজ করা।’’ অর্থাৎ- অশ্লীল কাজ করা, কেননা অশ্লীল কাজের গুনাহ বাতিল কথার গুনাহের মতই গুনাহ।
ইমাম ত্বীবী বলেনঃ এ দ্বারা উদ্দেশ্য অশ্লীল এবং আল্লাহর নিষিদ্ধ করেছেন এমন সকল কাজ পরিত্যাগ করা।
(فَلَيْسَ لِلّٰهِ حَاجَةٌ) ‘‘আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই।’’ এখানে রূপক অর্থ উদ্দেশ্য। অর্থ তার ‘আমল তথা সিয়াম কবূল হবে না। কেননা প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তা‘আলার কোন বান্দার ‘ইবাদাতেরই প্রয়োজন নেই।
কাযী বায়যাবী বলেনঃ সওমের বিধান দ্বারা বান্দাকে ক্ষুধার্ত পিপাসার্ত করা উদ্দেশ্য নয়। বরং উদ্দেশ্য হলো এর দ্বারা বান্দার অবৈধ শাহওয়াত দমন করা এবং নাফসে আম্মারাহকে নাফসে মুতমা‘ইন্নার অনুগত বানানো। যখন তা অর্জিত না হবে তখন আল্লাহর নিকট ঐ ‘আমল তথা সিয়াম গ্রহণযোগ্য হবে না।
ইবনু বাত্ত্বাল বলেনঃ এর অর্থ এ রকম নয় যে, যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও অনুরূপ কাজ পরিত্যাগ না করবে তাকে সিয়াম পালন থেকে বিরত থাকতে আদেশ করা হবে। বরং উদ্দেশ্য হলো সায়িমকে মিথ্যা বলা হতে সতর্ক করা যাতে সে সিয়ামের পূর্ণ সাওয়াব অর্জনে সক্ষম হয়। জেনে রাখা ভাল যে, জমহূর ‘উলামাগণের মতে মিথ্যা ও পরনিন্দা সওম বিনষ্ট করে না।
ইমাম সওরী ও ইমাম আওযা‘ঈ-এর মতে গীবত তথা পরনিন্দা সওম বিনষ্ট করে। সঠিক কথা হলো তা সওম বিনষ্ট করে না তবে ঐ সমস্ত কাজ সওমের ক্ষতি করে তথা পূর্ণ সাওয়াব অর্জনে বাধার সৃষ্টি করে।
পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - সওম পবিত্র করা
২০০০-[২] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সওমরত অবস্থায় (নিজের স্ত্রীদেরকে) চুমু খেতেন এবং (তাদেরকে) নিজের শরীরের সাথে মিশিয়ে ধরতেন। কেননা তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রয়োজনে নিজেকে তোমাদের চেয়ে অনেক বেশী নিয়ন্ত্রণে রাখতে সমর্থ ছিলেন। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ تَنْزِيْهِ الصَّوْمِ
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُقَبِّلُ وَيُبَاشِرُ وَهُوَ صَائِمٌ وَكَانَ أَمْلَكَكُمْ لأربه
ব্যাখ্যা: (يُقَبِّلُ وَيُبَاشِرُ وَهُوَ صَائِمٌ) ‘‘সিয়ামরত অবস্থায় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চুম্বন দিতেন ও মুবাশারা (আলিঙ্গন) করতেন।’’
ইবনু মালিক বলেনঃ অর্থাৎ তিনি তাঁর কোন স্ত্রীর গায়ে হাতের স্পর্শ বুলাতেন। যদিও মুবাশারাহ্ দ্বারা সহবাস অর্থ নেয়া হয় কিন্ত এখানে তা উদ্দেশ্য নয়। ইমাম শাওকানী বলেনঃ অত্র হাদীসে মুবাশারাহ্ দ্বারা সহবাস ব্যতীত সকল ধরনের মেলামেশা উদ্দেশ্য। মুসলিমের বর্ণনায় রয়েছে, ‘‘তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রমাযান (রমজান) মাসে সিয়ামরত অবস্থায় চুম্বন দিতেন’’ এর দ্বারা ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) এ কথার ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, এক্ষেত্রে নফল সিয়াম ও ফরয সিয়ামের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।
(وَكَانَ أَمْلَكَكُمْ لِأَرْبِه) ‘‘তিনি প্রয়োজনে নিজেকে তোমাদের চেয়ে অনেক বেশী নিয়ন্ত্রণে রাখতে সমর্থ ছিলেন।’’ ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর এ কথার মর্ম কি তা নিয়ে ‘উলামাগণের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে।
১. তিনি এর দ্বারা বুঝিয়েছেন যে, যদিও তিনি সিয়ামরত অবস্থায় তাঁর স্ত্রীদের সাথে মেলামেশা করতেন তথাপি তিনি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে অধিক সক্ষম ছিলেন তোমাদের চাইতে। তাই তাঁর জন্য তা বৈধ হলেও অন্যের জন্য তা বৈধ নয়। কেননা অন্যরা তাঁর মত সওম রক্ষায় নিরাপদ নয়। অতএব অন্যদের জন্য তা মাকরূহ।
২. তিনি চুম্বন দেয়া ও মেলামেশা করা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে তোমাদের চেয়ে অধিক ক্ষমতাশালী ছিলেন এ সত্ত্বেও তিনি চুম্বন দিয়েছেন ও মেলামেশা করেছেন। অন্য কেউ তা পরিত্যাগ করতে তাঁর মত ধৈর্যশীল নয়। কেননা অন্য কেউ স্বীয় প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণে তাঁর মত নয়। অতএব তা অন্যের জন্য বৈধ হবে না কেন? এ কথাতে এ ইঙ্গিত রয়েছে যে, অন্যরা এক্ষেত্রে তাঁর চেয়ে অধিক উপযোগী তথা তা তাদের জন্য বৈধ হওয়ার ক্ষেত্রে তারা আরো বেশী উপযোগী। বুখারীতে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত মু‘আল্লাক হাদীস এ অর্থকে সমর্থন করে। তিনি অর্থাৎ- ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেছেন, ‘‘তার জন্য লজ্জাস্থান হারাম’’।
ইমাম ত্বহাবী হাকীম ইবনু ‘ইকাল থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেনঃ আমি ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে প্রশ্ন করলাম, আমি সিয়ামরত অবস্থায় আমার জন্য আমার স্ত্রীর কতটুকু হারাম? তিনি বললেন, তার লজ্জাস্থান। ‘আবদুর রাজ্জাক সহীহ সূত্রে মাসরূক থেকে বর্ণনা করেছেন। আমি ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম সিয়ামরত একজন পুরুষের জন্য তার স্ত্রীর কতটুকু তার জন্য হালাল? তিনি বললেন, সহবাস ব্যতীত আর সবই হালাল।
সিয়ামরত অবস্থায় সহবাস ব্যতীত স্ত্রীর সাথে মেলামেশা করা সম্পর্কে ‘উলামাগণের মতানৈক্য রয়েছে। তা নিম্নে বর্ণিত হল।
১. তা মাকরূহ- এ অভিমত ইমাম মালিক এবং তার অনুসারীদের।
২. তা হারাম- কুফাবাসী ফকীহ ‘আবদুল্লাহ ইবনু শুবরুমাহ্ এ অভিমত পোষণ করতেন। এ মতের স্বপক্ষে সূরা বাকারার ১৮৭ নং আয়াতের অংশ فَالْآنَ بَاشِرُوهُنَّ পেশ করে বলেছেন, এ আয়াতে দিনের বেলায় সিয়াম পালনকারীর মুবাশারাহ্ হারাম করা হয়েছে। অতএব তা হারাম। এর জওয়াব এই যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর কালামের ব্যাখ্যাকারী। তিনি নিজ কর্ম দ্বারা দিনের বেলায় মুবাশারাহ্ বৈধ হওয়ার ব্যাখ্যা দিয়েছেন। অতএব অত্র আয়াতে মুবাশারাহ্ দ্বারা সহবাস উদ্দেশ্য।
৩. তা বৈধ- আবূ হুরায়রাহ্, সা‘ঈদ, ও সা‘দ ইবনু আবী ওয়াক্কাস প্রমুখ সাহাবীগণ এ মত পোষণ করতেন। এর প্রমাণ ‘উমার (রাঃ)-এর বর্ণিত হাদীস। তিনি বলেনঃ আমি একদিন উৎফুল্ল হয়ে সিয়ামরত অবস্থায় আমার স্ত্রীকে চুম্বন দেই, অতঃপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বলি আমি আজ এক বড় (অপরাধের) কাজ করেছি। সিয়ামরত অবস্থায় আমি আমার স্ত্রীকে চুম্বন দিয়েছি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সিয়ামরত অবস্থায় পানি দ্বারা কুলি করলে কি হত বলে তুমি মনে কর? আমি বললাম এতে কোন ক্ষতি নেই। তিনি বললেন, তা হলে চুম্বনে আর কি (ক্ষতি)? (মুসনাদ আহমাদ ১/২১-২৫)
৪. যুবকের জন্য তা মাকরূহ, আর বৃদ্ধের জন্য তা বৈধ। ইবনু ‘আব্বাস -এর প্রসিদ্ধ মত এটিই।
৫. যদি নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয় তবে তার জন্য তা বৈধ পক্ষান্তরে যদি নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারার আশংকা থাকে তবে তার জন্য তা বৈধ নয়। সুফ্ইয়ান সাওরী, ইমাম শাফি‘ঈ ও ইমাম আবূ হানীফার মত এটাই। ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বল-ও এ মত পোষণ করেন।
৬. নফল সিয়ামের ক্ষেত্রে তা বৈধ, ফরয সিয়ামের ক্ষেত্রে তা মাকরূহ। এটা ইমাম মালিক থেকে বর্ণিত একটি অভিমত। এক্ষেত্রে সঠিক অভিমত হচ্ছে ৫ম অভিমত।
যদি মেলামেশা ও চুম্বন দেয়ার ফলে মানী অথবা মাযী নির্গত হয় তাহলে করণীয় কি? এক্ষেত্রে ইমাম শাফি‘ঈ এবং কূফাবাসী ‘আলিমদের অভিমত হল, মানি নির্গত হলে কাযা করতে হবে আর মাযী নির্গত হলে কাযা করতে হবে না।
ইমাম মালিক ও ইসহাক বলেন, মানি নির্গত হলে কাযা ও কাফফারা উভয়টি জরুরী। আর মযী নির্গত হলে কাযা করতে হবে। ইবনু হাযম-এর মতে কাযা ও কাফফারা কিছুই করতে হবে না।
পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - সওম পবিত্র করা
২০০১-[৩] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমাযান (রমজান) মাসে ভোর পর্যন্ত অপবিত্র অবস্থায় থাকতেন। এ অপবিত্রতা স্বপ্নদোষের কারণে নয়। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) গোসল করতেন ও সওম পালন করতেন। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ تَنْزِيْهِ الصَّوْمِ
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُدْرِكُهُ الْفَجْرُ فِي رَمَضَانَ وَهُوَ جُنُبٌ مِنْ غَيْرِ حُلْمٍ فَيَغْتَسِلُ وَيَصُومُ
ব্যাখ্যা: (فَيَغْتَسِلُ وَيَصُوْمُ) ‘‘অতঃপর তিনি গোসল করতেন ও সিয়াম পালন করতেন।’’ এ হাদীসে প্রমাণ করে যে, কোন ব্যক্তি জুনুবী অবস্থায় ফজর ওয়াক্তে উপনীত হলে তার সিয়াম বিশুদ্ধ। এ নাপাকী স্বপ্নদোষের কারণেই হোক অথবা সহবাসের কারণেই হোক জমহূরে ‘আলিমদের অভিমত এটিই।
হাসান ও মালিক ইবনু ‘আবদুল্লাহ থেকে বর্ণিত আছে যে, তার সিয়াম বিশুদ্ধ হবে না এবং তা কাযা করতে হবে।
হায়িয ও নিফাস হতে যে নারী রাতের বেলা পবিত্র হয় এবং গোসলের পূর্বেই ফজর ওয়াক্ত তার বিধানও জুনুবীর মতই। অবশ্য উপরে বর্ণিত সকলের ক্ষেত্রেই ফজরের পূর্বেই সিয়ামের নিয়্যাত করতে হবে।
পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - সওম পবিত্র করা
২০০২-[৪] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরাম অবস্থায় শিঙ্গা লাগিয়েছেন। ঠিক এভাবে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সায়িম অবস্থায় শিঙ্গা লাগিয়েছেন। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ تَنْزِيْهِ الصَّوْمِ
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: إِنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ احْتَجَمَ وَهُوَ مُحْرِمٌ وَاحْتَجَمَ وَهُوَ صَائِمٌ
ব্যাখ্যা: (وَاحْتَجَمَ وَهُوَ صَائِمٌ) ‘‘আর সিয়ামরত অবস্থায় তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রক্তমোক্ষণ করিয়েছেন।’’ আমীর ইয়ামানী বলেনঃ হাদীসের প্রকাশ্য অর্থ এই যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিয়াম অবস্থায় রক্তমোক্ষণ করিয়েছেন। অনুরূপভাবে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইহরাম অবস্থায়ও রক্তমোক্ষণ করিয়েছেন কিন্তু এ দু’টি বিষয় তিনি একত্রে করেননি। কেননা বিদায় হাজ্জের ইহরামে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সিয়াম পালন করেননি। অনুরূপভাবে মক্কা বিজয়ের বৎসর তিনি সিয়াম পালন করলেও ইহরাম অবস্থায় ছিলেন না। অনুরূপভাবে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কোন ‘উমরাতেও ইহরাম অবস্থায় নফল সিয়াম পালন করেছেন বলে কোন প্রমাণ নেই। অতএব তার এ দু’টি কাজ একত্রে হয়নি। বরং তা পৃথকভাবে ভিন্ন সময়ে সংঘটিত হয়েছে। সিয়াম অবস্থায় রক্তমোক্ষণ করার বিধান কি? এ বিষয়ে ‘উলামাগণের মাঝে মতানৈক্য রয়েছে।
১. তা সিয়াম ভঙ্গ করে না। এ অভিমত পোষণ করেন ইমাম মালিক, ইমাম শাফি‘ঈ, ইমাম আবূ হানীফাহ সহ জমহূর ‘আলিমগণ। ইবনু ‘আব্বাস থেকে বর্ণিত অত্র হাদীসটি তাদের মতের স্বপক্ষে দলীল।
২. যে রক্তমোক্ষণ করায় এবং যিনি তা করেন, উভয়ের সিয়াম ভঙ্গ হয়ে যাবে। এ অভিমত পোষণ করেন ‘আত্বা, আওযা‘ঈ, আহমাদ, ইসহাক, আবূ সাওর, ইবনু খুযায়মাহ্, ইবনুল মুনযির, আবূল ওয়ালীদ নীসাপূরী ও ইবনু হিববান প্রমুখ ‘আলিমগণ। তাদের দলীল (أفطر الحاجم) রক্তমোক্ষণকারী এবং যে তা করালো উভয়ের সিয়াম ভঙ্গ হয়ে গেছে, অত্র হাদীস।
৩. সায়িমের জন্য তা মাকরূহ। এ অভিমত পোষণ করেন মাসরূক, হাসান বাসরী এবং ইবনু সিরীন। যারা বলেন রক্তমোক্ষণ সিয়াম ভঙ্গ করেন তারা বলেন, (أفطر الحاجم والمحجوم) হাদীসটি মানসূখ।
ইবনু হাযম বলেনঃ আবূ সা‘ঈদ থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সায়িমকে রক্তমোক্ষণ করার অনুমতি দিয়েছেন, এর সানাদ সহীহ। এতে জানা গেল যে, অনুমতি দেয়ার পূর্বে তা নিষেধ ছিল। এ অনুমতির ফলে পূর্বের নিষেধাজ্ঞা বাতিল হয়ে গেল।
পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - সওম পবিত্র করা
২০০৩-[৫] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সওম অবস্থায় ভুলে কিছু খেয়ে বা পান করে ফেলে, সে যেন সওম পূর্ণ করে। কেননা এ খাওয়ানো ও পান করানো আল্লাহর তরফ থেকেই হয়ে থাকে। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ تَنْزِيْهِ الصَّوْمِ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «من نسي وَهُوَ صَائِم فأل أَوْ شَرِبَ فَلْيُتِمَّ صَوْمَهُ فَإِنَّمَا أَطْعَمَهُ اللَّهُ وسقاه»
ব্যাখ্যা: (فَأَكَلَ أَوْ شَرِبَ) ‘‘অতঃপর সে খেল অথবা পান করল’’ এ বাক্য থেকে বুঝা যায় যে, খাওয়া বা পান পরিমাণ কম বা বেশী যাই হোক না কেন তাতে সিয়াম ভঙ্গ হবে না।
(فَإِنَّمَا أَطْعَمَهُ اللّٰهُ وَسَقَاهُ) ‘‘আল্লাহ তাকে খাইয়েছে ও পান করিয়েছে।’’ অর্থাৎ- বান্দার এখানে কোন কর্তৃত্ব নেই। সিন্দী বলেনঃ এ বাক্য দ্বারা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কাজকে বান্দার সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করেছেন ভুলে যাওয়ার কারণে। ফলে তার এ কাজ সিয়াম ভঙ্গের অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে না।
হাদীসের শিক্ষাঃ যে ব্যক্তি সিয়ামের কথা ভুলে গিয়ে কিছু খায় বা পান করে এতে তার সিয়াম ভঙ্গ হয় না। ফলে তার এ সিয়াম কাযা করতে হবে না। ইমাম শাফি‘ঈ, আহমাদ, আবূ হানীফাহ্, ইসহাক, আওযা‘ঈ, সাওরী, ‘আত্বা ও তাউস সহ জমহূর ‘উলামাগণের এ অভিমত। পক্ষান্তরে ইমাম মালিক ও তার শায়খ রবী‘আহ্-এর মত এই যে, তার সওম ভঙ্গ হয়ে যাবে এবং তাকে তা কাযা করতে হবে। এতে ফরয ও নফল সিয়ামের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। এদের দলীল এই যে, পানাহার থেকে বিরত থাকা সিয়ামের একটি রুকন। যখন এ রুকন হাতছাড়া হয়ে যাবে তখন সিয়ামও ভঙ্গ হয়ে যাবে তা যেভাবেই হোক না কেন।
কেউ যদি সিয়ামের কথা ভুলে গিয়ে রমাযানের দিনের বেলায় সহবাস করে তাহলে সিয়াম ভঙ্গ হবে কিনা এ বিষয়ে ‘উলামাগণের মাঝে মতানৈক্য রয়েছে।
১. সিয়াম ভঙ্গ হবে না- এ অভিমত পোষণ করেন ইমাম সাওরী, আবূ হানীফাহ্, শাফি‘ঈ, ইসহাক, হাসান বাসরী এবং মুজাহিদ। এদের দলীল আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত অত্র হাদীস। যদিও হাদীসটি ভুলে গিয়ে পানাহার সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রেও কারণ এই একটিই তা হল ভুলে যাওয়া। পানাহারের ক্ষেত্রে ভুলে যাওয়ার কারণে যেমন তা বান্দার কর্তৃত্বের বহির্ভূত তেমনিভাবে সহবাসের ক্ষেত্রেও তা বান্দার কর্তৃত্বের বহির্ভূত। অতএব উভয় ক্ষেত্রেই বিধান একই আর তা হল সিয়াম ভঙ্গ না হওয়া।
২. ইমাম ‘আত্বা, আওযা‘ঈ, মালিক ও লায়স ইবনু সা‘দ বলেনঃ তার সিয়াম ভঙ্গ হয়ে যাবে। ফলে তা কাযা করতে হবে। তবে কোন কাফফারা দিতে হবে না।
৩. ইমাম আহমাদ বলেনঃ তার সিয়াম ভঙ্গ হয়ে যাবে। ফলে তাকে তা কাযা করতে হবে এবং কাফফারাও দিতে হবে। এ মতের স্বপক্ষে তিনি দলীল হিসেবে বলেন যে, যে ব্যক্তি দিনের বেলায় স্ত্রী সহবাস করেছিলেন এবং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে এ বিষয়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তা অবহিত করলে তিনি এ কথা জিজ্ঞেস করেননি যে, সে কি ভুলে গিয়ে এ কাজ করেছে না ইচ্ছাকৃতভাবে করেছে। যদি এ দুই অবস্থার মধ্যে কোন পার্থক্য থাকত তাহলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা বিস্তারিতভাবে জানতে চাইতেন।
জমহূরের পক্ষ থেকে এর জওয়াব দেয়া হয়েছে যে, ইমাম আহমাদের অভিমত অনুযায়ী ভুলে পানাহারকারীর সিয়াম ভঙ্গ হয় না, কেননা এটি তার কোন অপরাধ নয়। অনুরূপ ভুলে সহবাসকারীও অপরাধী নয়। অতএব তার সিয়াম ভঙ্গ হবে না। ফলে তা কাযাও করতে হবে না এবং কাফফারাও দিতে হবে না। আর এ অভিমতটিই সঠিক। আল্লাহই ভাল জানেন।
পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - সওম পবিত্র করা
২০০৪-[৬] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা এক সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে বসেছিলাম। হঠাৎ করে এক ব্যক্তি (সালামাহ্ ইবনু সাখর আল বায়াযী) তাঁর কাছে হাযির হলো ও বলতে লাগল, হে আল্লাহর রসূল! আমি ধ্বংস হয়ে গেছি! তিনি বললেন, তোমার কি হয়েছে? সে বলল, আমি সওমরত অবস্থায় স্ত্রীর সাথে সঙ্গম করে বসেছি। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমার কি কোন গোলাম আছে যাকে তুমি মুক্ত করে দিতে পার? লোকটি বলল, না। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি কি একাধারে দু’ মাস সিয়াম পালন করতে পারবে? সে বলল, না। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি কি ষাটজন মিসকীনকে খাওয়াতে পারবে? সে বলল, না। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তুমি বসো। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ও এখানে কিছুক্ষণ বসে রইলেন। ঠিক এ সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট একটি ’আরাক’ নিয়ে আসা হলো। এতে ছিল খেজুর।
’আরাক’ একটি বড় ভাণ্ড বা গাঁইটকে বলা হয় (যা খেজুরের পাতা দিয়ে তৈরি; এতে ষাট থেকে আশি সের পর্যন্ত খেজুর ধরে)। এটা দেখে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ প্রশ্নকারী কোথায়? লোকটি বলল, এই তো আমি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এটি নিয়ে নাও। এগুলো সাদাকা্ করে দাও। লোকটি বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমি কি এগুলো আমার চেয়েও গরীবকে দান করব? আল্লাহর কসম, মদীনার উভয় প্রান্তে এমন কোন পরিবার নেই, যারা আমার পরিবারের চেয়ে বেশী অভাবী। মদীনার উভয় প্রান্ত বলতে সে দু’টি কঙ্করময় এলাকা বুঝিয়েছে। (তার কথা শুনে) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেসে ফেললেন। এমনকি তাঁর সামনের পাটির দাঁতগুলো দেখা গেল। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আচ্ছা এ খেজুরগুলো তোমার পরিবার-পরিজনকে খাওয়াও। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ تَنْزِيْهِ الصَّوْمِ
وَعَن أبي هُرَيْرَة قَالَ: بَيْنَمَا نَحْنُ جُلُوسٌ عِنْدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذْ جَاءَهُ رَجُلٌ فَقَالَ: يَا رَسُول الله هَلَكت. قَالَ: «مَالك؟» قَالَ: وَقَعْتُ عَلَى امْرَأَتِي وَأَنَا صَائِمٌ. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «هَلْ تَجِدُ رَقَبَةً تُعْتِقُهَا؟» . قَالَ: لَا قَالَ: «فَهَلْ تَسْتَطِيعُ أَنْ تَصُومَ شَهْرَيْنِ مُتَتَابِعَيْنِ؟» قَالَ: لَا. قَالَ: «هَلْ تَجِدُ إِطْعَامَ سِتِّينَ مِسْكِينًا؟» قَالَ: لَا. قَالَ: «اجْلِسْ» وَمَكَثَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم فَبينا نَحْنُ عَلَى ذَلِكَ أُتِيَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِعَرَقٍ فِيهِ تَمْرٌ وَالْعَرَقُ الْمِكْتَلُ الضَّخْمُ قَالَ: «أَيْنَ السَّائِلُ؟» قَالَ: أَنَا. قَالَ: «خُذْ هَذَا فَتَصَدَّقْ بِهِ» . فَقَالَ الرَّجُلُ: أَعَلَى أَفْقَرَ مِنِّي يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ فَوَاللَّهِ مَا بَيْنَ لَابَتَيْهَا يُرِيدُ الْحَرَّتَيْنِ أَهْلُ بَيْتِ أَفْقَرُ م أَهْلِ بَيْتِي. فَضَحِكَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى بَدَتْ أَنْيَابُهُ ثُمَّ قَالَ: «أَطْعِمْهُ أهلك»
ব্যাখ্যা: (يَا رَسُوْلَ اللهِ هَلَكْتُ) ‘‘হে আল্লাহর রসূল! আমি ধ্বংস হয়ে গিয়েছি’’ হাদীসের এ অংশ দ্বারা প্রমাণ করা হয় যে, লোকটি স্বেচ্ছায় এ কাজ করে ছিল। কেননা هلك শব্দটি অবাধ্যতার রূপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। আর ইচ্ছাকৃত অন্যায়কে অবাধ্যতা বলা যায়। ভুলে কোন অন্যায় করলে তা অবাধ্যতা নয়। এ থেকে বুঝা গেল যে, ভুলে গিয়ে কেউ এ কাজ করলে তার জন্য কাফফারা নেই। এ বিষয়ে মতভেদ পূর্বের হাদীস উল্লেখ করা হয়েছে।
(هَلْ تَجِدُ رَقَبَةً تُعْتِقُهَا؟) ‘‘তুমি কি দাস আযাদ করতে সক্ষম?’’ যারা বলেন কাফফারার ক্ষেত্রে কাফির দাস আযাদ করা বৈধ তারা হাদীসটিকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করেছেন। যেমন হানাফীগণ এবং ইবনু হাযম। পক্ষান্তরে ইমাম মালিক, শাফি‘ঈ এবং আহমাদ ইবনু হাম্বল-এর মতে অবশ্যই মুসলিম দাস হতে হবে। কেননা হত্যার কাফফারাতে মুসলিম হওয়া শর্ত। এর ভিত্তি এই যে, বিধান যখন একই হয় তখন কারণ ভিন্ন হলেও শর্তমুক্ত বিধানকে শর্তযুক্ত বিধানের আওতাভুক্ত করা হবে কি? যদি শর্তযুক্ত করা হয় তা কি কিয়াম কিয়াসের ভিত্তিতে, না অন্য কিছু দ্বারা? যার বিস্তারিত বর্ণনা উসূলের কিতাবসমূহের মধ্যে বিদ্যমান।
(إِطْعَامَ سِتِّينَ مِسْكِينًا؟) ‘‘ষাটজন মিসকীনকে খাওয়াতে সক্ষম কি?’’ ইবনু দাক্বীক আল ‘ঈদ বলেনঃ হাদীসের এ অংশ প্রমাণ করে উল্লেখিত সংখ্যক মিসকীনকে খাওয়াতে হবে। দশজন মিসকীনকে ছয়দিন খাওয়ালে চলবে না। হানাফীদের প্রসিদ্ধ অভিমত এই যে, একজন মিসকীনকে ষাটদিন খাওয়ালেও চলবে। হাফেয ইবনু হাজার বলেনঃ إِطْعَامَ থেকে উদ্দেশ্য খাদ্য দান করা, খাওয়ানো শর্ত নয়।
হাদীস প্রমাণ করে যে, সিয়াম ভঙ্গের কাফফারা হাদীসে বর্ণিত তিনটি বিষয়ের যে কোন একটি কাফফারা হিসেবে যথেষ্ট জমহূর ‘উলামাগণের অভিমত এটিই।
ইমাম মালিক-এর প্রসিদ্ধ মত এই যে, সহবাসের মাধ্যমে সিয়াম ভঙ্গ হলে তার কাফফারা হবে খাদ্য খাওয়ানো অন্য কিছু নয়। আর পানাহারের মাধ্যমে সিয়াম ভঙ্গ হলে হাদীসে বর্ণিত তিনটির কোন একটি বিষয় কাফফারা হিসেবে যথেষ্ট।
হাদীসে বর্ণিত কাফফারার বিষয়সমূহ হতে যে কোন একটি ইচ্ছামত দেয়া যাবে। নাকি প্রথমে বর্ণিত বিষয় আদায়ে অপারগ হলে ২য়টি আর ২য়টিতে অপারগ হলে ৩য়টি করতে হবে? এ বিষয়ে মতভেদ রয়েছে।
১. ইমাম শাফি‘ঈ, আহমাদ ও আবূ হানীফার মতে গোলাম আযাদ করতে অসমর্থ হলে দুই মাস সিয়াম পালন করবে। তা করতে অপারগ হলে ষাটজন মিসকীন খাওয়াবে। অত্র হাদীসটি তাদের দলীল।
২. কাযী ‘ইয়ায-এর মতে ধারাবাহিকতা উদ্দেশ্য নয়। অতএব যে কোন একটি করলেই চলবে।
(خُذْ هٰذَا فَتَصَدَّقْ بِه) ‘‘এটা নিয়ে যাও এবং তা দ্বারা সদাকাহ্ কর’’ প্রমাণিত হয় যে, অসমর্থ হলেই কাফফারা রহিত হয়ে যায় না।
(أَطْعِمْهُ أَهْلَكَ) ‘‘তোমার আহালকে খাওয়াবে’’ অর্থাৎ- যাদের ভরণ-পোষণ তোমার দায়িত্বে তাদের খাওয়াবে।
হাদীসের এ অংশ প্রমাণ করে যে, অসমর্থ ব্যক্তির কাফফারা রহিত হয়ে যায়। ইমাম আওযা‘ঈ এ মতের প্রবক্তা। কেননা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত গ্রাম্য ব্যক্তিতে বললেন, ‘‘তোমার আহালকে খাওয়াবে’’ তিনি তাকে আর অন্য কোন কাফফারা দিতে বলেননি। ইমাম শাফি‘ঈ ও ইমাম আহমাদ হতেও এমন একটি বর্ণনা রয়েছে। ইমাম যুহরী বলেনঃ অবশ্যই কাফফারা দিতে হবে। কেননা ঐ ব্যক্তি যখন তার অক্ষমতার কথা প্রকাশ করলেন তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কাফফারা রহিত করেননি। ইমাম আহমাদ হতেও এমন একটি বর্ণনা রয়েছে অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে আবূ হানীফাহ্, সাওরী ও আবূ সাওর থেকে।
ইমাম শাফি‘ঈ থেকে উপরে বর্ণিত দু’ ধরনের মন্তব্যই বর্ণিত আছে। প্রথম অভিমতটিই সঠিক। কেননা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বশেষ ঐ গ্রাম্য ব্যক্তিকে কাফফারা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী (أَطْعِمْهُ أَهْلَكَ) এটিই তার প্রমাণ। আল্লাহ অধিক ভাল জানেন। জমহূর ‘উলামাগণের মতে কাফফারা আদায়ের সাথে সাথে উক্ত সিয়ামটিও কাযা করতে হবে। ইমাম চতুষ্টয়ের অভিমতও তাই।