লগইন করুন
পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - সওম পবিত্র করা
২০০০-[২] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সওমরত অবস্থায় (নিজের স্ত্রীদেরকে) চুমু খেতেন এবং (তাদেরকে) নিজের শরীরের সাথে মিশিয়ে ধরতেন। কেননা তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রয়োজনে নিজেকে তোমাদের চেয়ে অনেক বেশী নিয়ন্ত্রণে রাখতে সমর্থ ছিলেন। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ تَنْزِيْهِ الصَّوْمِ
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُقَبِّلُ وَيُبَاشِرُ وَهُوَ صَائِمٌ وَكَانَ أَمْلَكَكُمْ لأربه
ব্যাখ্যা: (يُقَبِّلُ وَيُبَاشِرُ وَهُوَ صَائِمٌ) ‘‘সিয়ামরত অবস্থায় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চুম্বন দিতেন ও মুবাশারা (আলিঙ্গন) করতেন।’’
ইবনু মালিক বলেনঃ অর্থাৎ তিনি তাঁর কোন স্ত্রীর গায়ে হাতের স্পর্শ বুলাতেন। যদিও মুবাশারাহ্ দ্বারা সহবাস অর্থ নেয়া হয় কিন্ত এখানে তা উদ্দেশ্য নয়। ইমাম শাওকানী বলেনঃ অত্র হাদীসে মুবাশারাহ্ দ্বারা সহবাস ব্যতীত সকল ধরনের মেলামেশা উদ্দেশ্য। মুসলিমের বর্ণনায় রয়েছে, ‘‘তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রমাযান (রমজান) মাসে সিয়ামরত অবস্থায় চুম্বন দিতেন’’ এর দ্বারা ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) এ কথার ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, এক্ষেত্রে নফল সিয়াম ও ফরয সিয়ামের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।
(وَكَانَ أَمْلَكَكُمْ لِأَرْبِه) ‘‘তিনি প্রয়োজনে নিজেকে তোমাদের চেয়ে অনেক বেশী নিয়ন্ত্রণে রাখতে সমর্থ ছিলেন।’’ ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর এ কথার মর্ম কি তা নিয়ে ‘উলামাগণের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে।
১. তিনি এর দ্বারা বুঝিয়েছেন যে, যদিও তিনি সিয়ামরত অবস্থায় তাঁর স্ত্রীদের সাথে মেলামেশা করতেন তথাপি তিনি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে অধিক সক্ষম ছিলেন তোমাদের চাইতে। তাই তাঁর জন্য তা বৈধ হলেও অন্যের জন্য তা বৈধ নয়। কেননা অন্যরা তাঁর মত সওম রক্ষায় নিরাপদ নয়। অতএব অন্যদের জন্য তা মাকরূহ।
২. তিনি চুম্বন দেয়া ও মেলামেশা করা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে তোমাদের চেয়ে অধিক ক্ষমতাশালী ছিলেন এ সত্ত্বেও তিনি চুম্বন দিয়েছেন ও মেলামেশা করেছেন। অন্য কেউ তা পরিত্যাগ করতে তাঁর মত ধৈর্যশীল নয়। কেননা অন্য কেউ স্বীয় প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণে তাঁর মত নয়। অতএব তা অন্যের জন্য বৈধ হবে না কেন? এ কথাতে এ ইঙ্গিত রয়েছে যে, অন্যরা এক্ষেত্রে তাঁর চেয়ে অধিক উপযোগী তথা তা তাদের জন্য বৈধ হওয়ার ক্ষেত্রে তারা আরো বেশী উপযোগী। বুখারীতে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত মু‘আল্লাক হাদীস এ অর্থকে সমর্থন করে। তিনি অর্থাৎ- ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেছেন, ‘‘তার জন্য লজ্জাস্থান হারাম’’।
ইমাম ত্বহাবী হাকীম ইবনু ‘ইকাল থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেনঃ আমি ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে প্রশ্ন করলাম, আমি সিয়ামরত অবস্থায় আমার জন্য আমার স্ত্রীর কতটুকু হারাম? তিনি বললেন, তার লজ্জাস্থান। ‘আবদুর রাজ্জাক সহীহ সূত্রে মাসরূক থেকে বর্ণনা করেছেন। আমি ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম সিয়ামরত একজন পুরুষের জন্য তার স্ত্রীর কতটুকু তার জন্য হালাল? তিনি বললেন, সহবাস ব্যতীত আর সবই হালাল।
সিয়ামরত অবস্থায় সহবাস ব্যতীত স্ত্রীর সাথে মেলামেশা করা সম্পর্কে ‘উলামাগণের মতানৈক্য রয়েছে। তা নিম্নে বর্ণিত হল।
১. তা মাকরূহ- এ অভিমত ইমাম মালিক এবং তার অনুসারীদের।
২. তা হারাম- কুফাবাসী ফকীহ ‘আবদুল্লাহ ইবনু শুবরুমাহ্ এ অভিমত পোষণ করতেন। এ মতের স্বপক্ষে সূরা বাকারার ১৮৭ নং আয়াতের অংশ فَالْآنَ بَاشِرُوهُنَّ পেশ করে বলেছেন, এ আয়াতে দিনের বেলায় সিয়াম পালনকারীর মুবাশারাহ্ হারাম করা হয়েছে। অতএব তা হারাম। এর জওয়াব এই যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর কালামের ব্যাখ্যাকারী। তিনি নিজ কর্ম দ্বারা দিনের বেলায় মুবাশারাহ্ বৈধ হওয়ার ব্যাখ্যা দিয়েছেন। অতএব অত্র আয়াতে মুবাশারাহ্ দ্বারা সহবাস উদ্দেশ্য।
৩. তা বৈধ- আবূ হুরায়রাহ্, সা‘ঈদ, ও সা‘দ ইবনু আবী ওয়াক্কাস প্রমুখ সাহাবীগণ এ মত পোষণ করতেন। এর প্রমাণ ‘উমার (রাঃ)-এর বর্ণিত হাদীস। তিনি বলেনঃ আমি একদিন উৎফুল্ল হয়ে সিয়ামরত অবস্থায় আমার স্ত্রীকে চুম্বন দেই, অতঃপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বলি আমি আজ এক বড় (অপরাধের) কাজ করেছি। সিয়ামরত অবস্থায় আমি আমার স্ত্রীকে চুম্বন দিয়েছি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সিয়ামরত অবস্থায় পানি দ্বারা কুলি করলে কি হত বলে তুমি মনে কর? আমি বললাম এতে কোন ক্ষতি নেই। তিনি বললেন, তা হলে চুম্বনে আর কি (ক্ষতি)? (মুসনাদ আহমাদ ১/২১-২৫)
৪. যুবকের জন্য তা মাকরূহ, আর বৃদ্ধের জন্য তা বৈধ। ইবনু ‘আব্বাস -এর প্রসিদ্ধ মত এটিই।
৫. যদি নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয় তবে তার জন্য তা বৈধ পক্ষান্তরে যদি নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারার আশংকা থাকে তবে তার জন্য তা বৈধ নয়। সুফ্ইয়ান সাওরী, ইমাম শাফি‘ঈ ও ইমাম আবূ হানীফার মত এটাই। ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বল-ও এ মত পোষণ করেন।
৬. নফল সিয়ামের ক্ষেত্রে তা বৈধ, ফরয সিয়ামের ক্ষেত্রে তা মাকরূহ। এটা ইমাম মালিক থেকে বর্ণিত একটি অভিমত। এক্ষেত্রে সঠিক অভিমত হচ্ছে ৫ম অভিমত।
যদি মেলামেশা ও চুম্বন দেয়ার ফলে মানী অথবা মাযী নির্গত হয় তাহলে করণীয় কি? এক্ষেত্রে ইমাম শাফি‘ঈ এবং কূফাবাসী ‘আলিমদের অভিমত হল, মানি নির্গত হলে কাযা করতে হবে আর মাযী নির্গত হলে কাযা করতে হবে না।
ইমাম মালিক ও ইসহাক বলেন, মানি নির্গত হলে কাযা ও কাফফারা উভয়টি জরুরী। আর মযী নির্গত হলে কাযা করতে হবে। ইবনু হাযম-এর মতে কাযা ও কাফফারা কিছুই করতে হবে না।