পরিচ্ছেদঃ ৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - স্বামীর সম্পদ থেকে স্ত্রীর সদাক্বাহ্ করা
১৯৪৭-[১] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন স্ত্রী তার ঘরের কোন খাবার সদাক্বাহ্ (সাদাকা) বা খরচ করে এবং তা যদি বাহুল্য না হয় এ সদাক্বাহ্ (সাদাকা) করার জন্য সে সাওয়াব পাবে। আর তা কামাই করে আনার জন্য তার স্বামীও সাওয়াব পাবে। রক্ষণাবেক্ষণকারীরও ঠিক সম পরিমাণ সাওয়াব পাবে, কারো সাওয়াব কারো সাওয়াবকে কিছুমাত্র কম করবে না। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ صَدَقَةِ الْمَرْأَةِ مِنْ مَالِ الزَّوْجِ
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «إِذْ أَنْفَقَتِ الْمَرْأَةُ مِنْ طَعَامِ بَيْتِهَا غَيْرَ مُفْسِدَةٍ كَانَ لَهَا أَجْرُهَا بِمَا أَنْفَقَتْ وَلِزَوْجِهَا أَجْرُهُ بِمَا كَسَبَ وَلِلْخَازِنِ مِثْلُ ذَلِكَ لَا يَنْقُصُ بَعْضُهُمْ أَجْرَ بعض شَيْئا»
ব্যাখ্যা: (غَيْرَ مُفْسِدَةٍ) অর্থাৎ সদাক্বাহ্ (সাদাকা) করতে গিয়ে অপচয় না করে। অর্থাৎ এমন বেশী পরিমাণ সদাক্বাহ্ (সাদাকা) করবে না যাতে বাহ্যিকভাবে সম্পদের স্বল্পতা পরিলক্ষিত হয়। এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, স্ত্রী যদি স্বামীর সম্পদ থেকে সদাক্বাহ্ (সাদাকা) করতে চান তাহলে তাকে স্বামীর নিকট থেকে অনুমতি নিতে হবে চাই অনুমতির বিষয়টি স্পষ্টভাবে হোক অথবা অস্পষ্টভাবে হোক। কোন কোন ‘উলামায়ে কিরাম বলেছেন, বিষয়টি সম্পূর্ণ আহলে হিজায তথা মক্কা-মদীনার অধিবাসীদের চিরাচরিত অভ্যাসের অন্তর্গত। কেননা তাদের অভ্যাস হলো তারা তাদের বিবিগণ এবং খাদিমদেরকে মেহমানদের আপ্যায়নের ব্যবস্থা করা, ভিক্ষুক, মিসকীন ও প্রতিবেশীদের খাদ্য খাওয়ানোর বিষয়গুলোতে অনুমতি দিয়ে রাখতেন। সুতরাং রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আরবদের এই সুন্দর স্বভাবকে ধারণ করতে গোটা বিশ্ববাসীকে উৎসাহিত করেছেন। স্বামীর বিনা অনুমতিতে তার সম্পদ থেকে স্ত্রী নিজ ইচ্ছামতো কাউকে সদাক্বাহ্ (সাদাকা) করবে এটা অত্র হাদীস দ্বারা স্পষ্টভাবে বুঝা যায় না।
আল্লামা বাগাবী (রহঃ) বলেন, অধিকাংশ ‘উলামায়ে কেরামের বক্তব্য হচ্ছে স্ত্রীর জন্য তার স্বামীর সম্পদ থেকে বিনা অনুমতিতে সদাক্বাহ্ (সাদাকা) করা জায়েয নেই। অনুরূপ খাদিমের ক্ষেত্রেও একই বিধান। আর যে হাদীসটি জায়িযের দলীল তা আহলে হিজাযের তথা মক্কা-মদীনার মানুষের সাধারণ অভ্যাসের বর্ণনা দিচ্ছে যে, তারা তাদের বিবি ও খাদিমদেরকে এ আদেশ দিয়ে রাখতেন বাড়ীতে কোন অভাবী বা মেহমান আসলে বাড়ীতে যা থাকবে তার মাধ্যমে সাধ্যমতো তার আপ্যায়নের ব্যবস্থা করতে। যেমনটিই বলেছেন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, ‘তুমি গুণে গুণে দান করিও না তাহলে আল্লাহও তোমাকে গুণে গুণে দান করবেন।’
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদীসে (طَعَامِ) তথা খাদ্যের কথা বলেছেন এজন্য যে, খাদ্যবস্ত্ত অন্য মানুষের প্রতি অনুগ্রহ করার অন্যতম শ্রেষ্ঠ মাধ্যম। তথাপি খাদ্যবস্ত্ত ছাড়া অন্যকিছুর মাধ্যমেও অনুগ্রহ করা যায়। আর এখানে মুখ্য বিষয় হচ্ছে সম্পদের মালিক-এর অনুমতি।
(كَانَ لَهَا أَجْرُهَا بِمَا أَنْفَقَتْ) অর্থাৎ ঐ সম্পদ থেকে খরচ করার কারণে স্ত্রীর সাওয়াব হবে।
(وَلِزَوْجِهَا أَجْرُه بِمَا كَسَبَ) অর্থাৎ সম্পদ উপার্জনের কারণে স্বামীর সাওয়াব হবে।
(لَا يَنْقُصُ بَعْضُهُمْ أَجْرَ بعض) আল্লামা কুস্তুলানী (রহঃ) অর্থাৎ (كزادهم الله مَرَضًا) এর ন্যায় তাকীদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ সাওয়াব তো হবে এবং একজনের সাওয়াব অন্যজনের সাওয়াবে কোন ঘাটতি করবে না।
আল্লামা মুল্লা ‘আলী ক্বারী (রহঃ) বলেন, (شَيْئا) এটি (من النقص) তথা অপরির্পূণতা থেকে অথবা (من الأجر) তথা নেকী হতে কোন কিছুই কমতি করা হবে না এ অর্থে নেয়া যেতে পারে।
এখানে উদ্দেশ্য হচ্ছে এ কথা পরিষ্কারভাবে বলা যে, সাওয়াবের হকদার হওয়ার দৃষ্টিকোণ থেকে তারা সবাই সমান যদিও সাওয়াবের পরিমাণে একটু কম বেশিও হয়।
হাফিয ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন, ইবনুল আরাবী বলেন, স্ত্রী স্বামীর বাড়ী থেকে সদাক্বাহ্ (সাদাকা) দিতে পারবে কি পারবে না এ বিষয়ে ‘উলামাদের মধ্যে যথেষ্ট মতভেদ রয়েছে। কোন কোন বিদ্বান তা বৈধ বলে মত পোষণ করেছেন। তবে যদি তা নিতান্তই সামান্য হয় যাতে সম্পদের মধ্যে স্পষ্ট কোন ঘাটতি পরিলক্ষিত হয় না এমন হলে সদাক্বাহ্ (সাদাকা) দিতে অসুবিধা নেই বিনা অনুমতিতে।
ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন, আকার ইঙ্গিতে হলেও সদাক্বাহ্ (সাদাকা) দেয়ার ক্ষেত্রে স্বামীর অনুমতি থাকা চাই। এটা ‘আরবদের মতো অভ্যাসগত বিষয় হওয়ারও সম্ভাবনা রাখে। তবে হাদীসটিত যে বলা হয়েছে (من غير مفسدة) তথা স্বামীর সম্পদ থেকে স্ত্রী সদাক্বাহ্ (সাদাকা) দিতে পারবে সম্পদের মধ্যে কোন প্রকার বিপর্যয় সৃষ্টি ব্যতীত এ ব্যাপারে সকল ‘উলামায়ে কিরাম একমত। কোন কোন ‘উলামায়ে কিরাম সদাক্বাহ্ (সাদাকা) দেয়ার হকদারের ক্ষেত্রে স্ত্রী এবং খাদিমের মধ্যে পার্থক্য করেছেন। সুতরাং তারা বলেন, স্ত্রীর জন্য তার স্বামীর সম্পদে হক আছে সেজন্য সে স্বামীর সম্পদ থেকে সদাক্বাহ্ (সাদাকা) দিতে পারে কিন্তু খাদিমের জন্য তার মনিবের সম্পত্তিতে কোন প্রকার হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই, সুতরাং সে মনিবের সম্পদ থেকে বিনা অনুমতিতে সদাক্বাহ্ (সাদাকা) দিতে পারবে না।
পরিচ্ছেদঃ ৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - স্বামীর সম্পদ থেকে স্ত্রীর সদাক্বাহ্ করা
১৯৪৮-[২] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, স্ত্রী তার স্বামীর অর্জিত ধন-সম্পদ হতে তার অনুমতি ছাড়া দান-খয়রাত করলে এর সাওয়াব (স্ত্রী) অর্ধেক পাবে। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ صَدَقَةِ الْمَرْأَةِ مِنْ مَالِ الزَّوْجِ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا أَنْفَقَتِ الْمَرْأَةُ مِنْ كَسْبِ زَوْجِهَا مِنْ غَيْرِ أَمْرِهِ فَلَهَا نِصْفُ أَجْرِهِ»
ব্যাখ্যা: (مِنْ غَيْرِ أَمْرِه) সুনির্দিষ্ট কোন অংশের ব্যাপারে স্বামীর আদেশ ছাড়া।
(فَلَهَا نِصْفُ أَجْرِه) বিষয়টি ব্যাখ্যার দাবিদার এভাবে যে, যখন সে স্বামীর সম্পদ থেকে তার প্রয়োজনের অতিরিক্ত খরচ করবে এবং সদাক্বাহ্ (সাদাকা) করবে তাহলে এই অতিরিক্ত খরচের জন্য তাকে জরিমানা দিতে হবে। সুতরাং স্বামী বিষয়টি অবগত হয়ে যদি সন্তুষ্ট হোন তাহলে স্ত্রীর খরচা থেকে সদাক্বাহ্ (সাদাকা) প্রদানের জন্য অর্ধেক নেকী এবং অতিরিক্ত সদাক্বাহ্ (সাদাকা) দেয়ার জন্য অপর অর্ধেক নেকী স্বামী পাবেন। কেননা অতিরিক্ত সম্পদ হলো স্বামীর হক্ব। ‘আল্লামা মুল্লা ‘আলী ক্বারী (রহঃ) এমন মতামত ব্যক্ত করেছেন। হাফিয ইবনু হাজার আসক্বালানী বলেন, উত্তম হলো অর্থটি এভাবে গ্রহণ করা যে, স্ত্রী ঐ সম্পদ থেকে খরচ করেছে যা স্বামী কর্তৃক স্ত্রীর জন্য নির্দিষ্ট ছিল। সুতরাং সেখান থেকে যদি স্বামীর বিনা অনুমতিতে খরচ করে তাহলে তার অর্ধেক নেকী হবে। এক্ষেত্রে উপার্জনের কারণে অপর অর্ধেক নেকী স্বামীর হবে।
ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেন, (قوله من غير أمره) হাদীসে উল্লেখিত (من غير أمره) তথা স্বামীর বিনা অনুমতিতে এ কথার অর্থ হলো স্বামী কর্তৃক স্ত্রীর জন্য নির্দিষ্ট সম্পদটুকুর মধ্যে থেকে খরচ করতে হলেও স্বামীর সুস্পষ্ট অনুমতি থাকা চাই। অন্যথায় সাধারণভাবেও যদি কোন অনুমতিই না থাকে সেক্ষেত্রে তো কোন সাওয়াব তো হবেই না বরং পাপ হবে।
পরিচ্ছেদঃ ৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - স্বামীর সম্পদ থেকে স্ত্রীর সদাক্বাহ্ করা
১৯৪৯-[৩] আবূ মূসা আল আশ্’আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে মুসলিম খাদিম বা পাহারাদার, মালিক-এর নির্দেশ অনুসারে কোন পূর্ণ হৃষ্টচিত্তে আমানাতদারীর সাথে ওই ব্যক্তিকে সদাক্বাহ্ (সাদাকা) দেয়, যাকে সদাক্বাহ্ (সাদাকা) দেবার জন্য মালিক বলে দিয়েছে, সে সদাক্বাকারীদের একজন। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ صَدَقَةِ الْمَرْأَةِ مِنْ مَالِ الزَّوْجِ
وَعَنْ أَبِي مُوسَى الْأَشْعَرِيِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْخَازِنُ الْمُسْلِمُ الْأَمِينُ الَّذِي يُعْطِي مَا أُمِرَ بِهِ كَامِلًا مُوَفَّرًا طَيِّبَةً بِهِ نَفْسُهُ فَيَدْفَعُهُ إِلَى الَّذِي أَمر لَهُ بِهِ أحد المتصدقين»
ব্যাখ্যা: মালিকের ধন ভান্ডার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিত মুসলিম ও আমানাতদার খাদিম (খাজাঞ্চী) যাকে মালিকের পক্ষ থেকে যা দান করতে আদেশ দেয়া হয় তা তার প্রবৃত্তি অনুযায়ী কম-বেশি করে দান করে না বরং কৃপণতামুক্ত হয়ে সন্তুষ্টচিত্তে, খুশিমনে পূর্ণভাবে দান করে। হাফিয ইবনু হাজার আল্ আসক্বালানী বলেন, অত্র হাদীসে খাজাঞ্চীকে মুসলিম হওয়ার শর্তারোপ করায় কাফির খাজাঞ্চী এ হাদীসে বর্ণিত সাওয়াব পাবে না। কারণ, কাফিরের সাওয়াবের নিয়্যাত থাকে না। অপরদিকে আমানাতদার হওয়ার শর্তারোপ দ্বারা খিয়ানাতকারী খাজাঞ্চী বাদ পড়ে যায়।
অত্র হাদীসে খাজাঞ্চী যে সাওয়াব পাবে তার জন্য চারটি শর্ত রয়েছে। এ চারটি শর্তের কোন একটি বাদ গেলে সে বর্ণিত সাওয়াব থেকে বঞ্চিত হবে। শর্ত চারটি হলোঃ (১) মালিক-এর অনুমতি থাকতে হবে; (২) মালিক যা দান করতে আদেশ দিবেন তা থেকে কোন কমতি না করে দান করতে হবে; (৩) দান করার ক্ষেত্রে খুশিমনে দান করতে হবে; কেননা অনেক খাজাঞ্চী/কোষাধ্যক্ষ বা খাদিম আছে যারা মালিক-এর দানের আদেশের প্রতি সন্তুষ্ট হয় না। (৪) মালিক যাকে/যেখানে দান করতে কোষাধ্যক্ষকে আদেশ দিবেন তাকে সেখানেই দান করতে হবে; অন্য কোন গরীব/মিসকীনকে দান করলে হবে না।
উপরোক্ত শর্তসমূহ মেনে কোন খাজাঞ্চী যদি দান করে তাহলে সেও দানকারীদের একজন হবে।
শাইখ যাকারিয়্যা আল্ আনসারী বলেন, খাদিম ও মালের মালিক সাওয়াব পাওয়ার দিকে দিয়ে সমান যদিও তাদের সাওয়াবের পরিমাণে কিছু কম বেশি হতে পারে। সুতরাং মালিক যদি তার খাদিমকে ১০০ দীনার (মুদ্রা) প্রদান করে তার দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা কোন ফকীরকে দেয়ার জন্য সে ক্ষেত্রে মালিক-এর সাওয়াব বেশি হবে। অপরদিকে মালিক যদি খাদিমকে একটি আটার ঢিলা বা রুটি দিয়ে বলে এটি দূরবর্তী কোন স্থানের কোন ফকীরকে দিয়ে আসো আর সেখানে পৌঁছতে খাদিমের যাতায়াত ভাড়া এবং যাওয়ার পারিশ্রমিক যদি রুটির মূল্যের চেয়ে বেশি হয় তাহলে এক্ষেত্রে খাদিমের সাওয়াব বেশি হবে। আর যদি রুটির মূল্য তার যাতায়াত ভাড়া বা পারিশ্রমিকের সম পরিমাণ হয় তাহলে তাদের সাওয়াবও সমান হবে।
পরিচ্ছেদঃ ৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - স্বামীর সম্পদ থেকে স্ত্রীর সদাক্বাহ্ করা
১৯৫০-[৪] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এসে বলল, আমার মা আকস্মিকভাবে মৃত্যুবরণ করেছেন। আমার মনে হয় তিনি কথা বলতে পারলে সদাক্বাহ্ (সাদাকা) করতেন। এখন আমি যদি তার পক্ষ থেকে সদাক্বাহ্ (সাদাকা) করি তার সাওয়াব কি তিনি পাবেন? রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হ্যাঁ পাবে। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ صَدَقَةِ الْمَرْأَةِ مِنْ مَالِ الزَّوْجِ
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: أَنَّ رَجُلًا قَالَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ أُمِّي افْتُلِتَتْ نَفْسَهَا وَأَظُنُّهَا لَوْ تَكَلَّمَتْ تَصَدَّقَتْ فَهَلْ لَهَا أَجْرٌ إِنْ تَصَدَّقت عَنْهَا؟ قَالَ: نعم
ব্যাখ্যা: (رَجُلًا) বলা হয়েছে, এই ব্যক্তি হলেন সা‘দ বিন ‘উবায়দাহ্ (রাঃ)। আল্লামা মুরক্বানী (রহঃ) বলেন, অনেকে দৃঢ়তার সাথেই বলেছেন এ ব্যক্তির নাম সা‘দ বিন ‘উবায়দাহ্ (রাঃ)। তবে আল্লামা বাদরুদ্দীন আয়নী (রহঃ) অন্য মতকে প্রাধান্য দিয়েছেন।
(أُمِّي) তার মায়ের নাম ছিল উমায়রা বিনতু মাস্‘ঊদ। (لَوْ تَكَلَّمَتْ) যদি কথা বলতে সক্ষম হতেন। (تَصَدَّقت) তার সম্পদ থেকে কিছু সদাক্বাহ্ (সাদাকা) করতেন অথবা তার মাল থেকে কাউকে সদাক্বাহ্ (সাদাকা) করার ওয়াসীয়াত করতেন।
হাফিয ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন, অত্র হাদীসের বাহ্যিক অর্থ থেকে বুঝা যায়, তিনি কথা বলতে সক্ষম হননি তাই সদাক্বাহ্ (সাদাকা)ও দেননি। তবে ইমাম মালিক (রহঃ)-এর মুয়াত্ত্বা, সুনানে নাসায়ী এবং মুসতাদারাক হাকিমে সা‘ঈদ বিন ‘আমর বিন শুরাহবিল বিন সা‘ঈদ বিন সা‘দ বিন ‘উবায়দাহ্ তার পিতা তার দাদা থেকে সূত্রে বর্ণিত হাদীসে পাওয়া যায়। তিনি বলেন, একদা সা‘দ বিন ‘উবায়দাহ্ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে কোন যুদ্ধে বের হলেন অপর দিকে তার মাতা মদীনায় মৃত্যুশয্যায় শায়িত হলেন তাকে বলা হল আপনি কিছু ওয়াসিয়াত করুন। অতঃপর তিনি বলছেন, কিসের মাধ্যমে ওয়াসিয়াত করবো মাল তো সব সা‘দ-এর মাল। অতঃপর সা‘দ যখন আগমন করলেন তাকে বিষয়টি জানানো হলো অতঃপর সা‘দ বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমি যদি তার পক্ষ থেকে সদাক্বাহ্ (সাদাকা) করি তাহলে এর সাওয়াব কি তিনি পাবেন? অতঃপর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ পাবেন। তখন সা‘দ (রাঃ) বললেন, তাহলে আমি অমুক অমুক বাগান তার নামে সদাক্বাহ্ (সাদাকা) দিলাম। তাহলে এ হাদীসে সা‘দ-এর মায়ের কথা বলার দলীল স্পষ্ট আর কিতাবের হাদীস থেকে বুঝা যায় তিনি কথা বলেননি, অতএব এ দু’টি হাদীসের সমন্বয় নিম্নোক্তভাবে করা সম্ভবঃ
১। কিতাব (মিশকাত) এর হাদীসখানাকে এভাবে ব্যাখ্যা করতে হবে যে, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে তিনি সদাক্বাহ্ (সাদাকা) দেয়ার ব্যাপারে কথা বলেননি যদি বলতেন তাহলে সদাক্বাহ্ (সাদাকা) করতেন তাহলে আমি এখন কি করবো?
২। সা‘দ বিষয়টি সম্পর্কে তথা মহিলাটির কাছ থেকে কি ঘটেছিল তা তিনি আদৌ জানতেন না আর অপরদিকে মুয়াত্ত্বা মালিক-এর কথা বলায় যে হাদীস পাওয়া যাচ্ছে তা বর্ণনা করেছেন সা‘ঈদ বিন ‘উবাদাহ্ অথবা মুরসাল সূত্রে তার ছেলে শুরাহবিল মোটকথা হাদীসের রাবী সা‘ঈদ হোক আর শুরাহবিল হোক কথা বলার ক্ষেত্রে হ্যাঁ সূচক বর্ণনার বর্ণনাকারী আর না সূচক বর্ণনার বর্ণনাকারী এক নয়।
হাদীসটি থেকে বুঝা যায়ঃ
* মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে সদাক্বাহ্ (সাদাকা) জায়িয এবং এতে তার সাওয়াব হবে, বিশেষ করে সদাকাটি যখন মৃত ব্যক্তির সন্তান করবেন তখন আরো বেশি পৌঁছবে। অনুরূপভাবে দু‘আও পৌঁছবে। আর অন্য কিছুই মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে করলে তার সাওয়াব সে পায় না শুধুই এ দু’টি ব্যতীত যেমনঃ আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَأَنْ لَيْسَ لِلْإِنْسَانِ إِلَّا مَا سَعى ‘‘মানুষের জন্য কিছুই নেই তবে যা সে চেষ্টা করে’’- (সূরা আন্ নাজম ৫৩ : ৩৯)। আর সন্তান তার চেষ্টার ফসল। সুতরাং সন্তান এগুলোর কাজ মৃত মা-বাবার পক্ষ থেকে আঞ্জাম দেয়া, তাহলে এর বাবা-মা পাবেন। অবশ্য দু‘আ এবং সদাক্বাহ্ (সাদাকা) ব্যতীত অন্য কিছু পৌঁছায় কিনা সে ব্যাপারে ‘উলামায়ে কিরামের মধ্যে যথেষ্ট মতবিরোধ রয়েছে। হানাফীগণ দু‘আর উপর কিয়াস করে বলেন, হ্যাঁ সদাক্বাহ্ (সাদাকা) এবং দু‘আর মতো অন্যান্য সৎ ‘আমল ও মৃত ব্যক্তির নিকট পৌঁছায়। ‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী (রহঃ) বলেন, আমি বলবো এ ব্যাপারে গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।
* হাদীসটি থেকে আরো বুঝা যায় যিনি বা যারা হঠাৎ মারা গেলেন তাদের পক্ষ থেকে সদাক্বাহ্ (সাদাকা) করা মুস্তাহাব। এ মর্মে ইমাম বুখারী তার সহীহুল বুখারীতে একটি অধ্যায়ও বেঁধেছেন।