হাদিসটি ইমেইলে পাঠাতে অনুগ্রহ করে নিচের ফর্মটি পুরন করুন
security code
১৯৪৭

পরিচ্ছেদঃ ৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - স্বামীর সম্পদ থেকে স্ত্রীর সদাক্বাহ্ করা

১৯৪৭-[১] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন স্ত্রী তার ঘরের কোন খাবার সদাক্বাহ্ (সাদাকা) বা খরচ করে এবং তা যদি বাহুল্য না হয় এ সদাক্বাহ্ (সাদাকা) করার জন্য সে সাওয়াব পাবে। আর তা কামাই করে আনার জন্য তার স্বামীও সাওয়াব পাবে। রক্ষণাবেক্ষণকারীরও ঠিক সম পরিমাণ সাওয়াব পাবে, কারো সাওয়াব কারো সাওয়াবকে কিছুমাত্র কম করবে না। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ صَدَقَةِ الْمَرْأَةِ مِنْ مَالِ الزَّوْجِ

وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «إِذْ أَنْفَقَتِ الْمَرْأَةُ مِنْ طَعَامِ بَيْتِهَا غَيْرَ مُفْسِدَةٍ كَانَ لَهَا أَجْرُهَا بِمَا أَنْفَقَتْ وَلِزَوْجِهَا أَجْرُهُ بِمَا كَسَبَ وَلِلْخَازِنِ مِثْلُ ذَلِكَ لَا يَنْقُصُ بَعْضُهُمْ أَجْرَ بعض شَيْئا»

ব্যাখ্যা: (غَيْرَ مُفْسِدَةٍ) অর্থাৎ সদাক্বাহ্ (সাদাকা) করতে গিয়ে অপচয় না করে। অর্থাৎ এমন বেশী পরিমাণ সদাক্বাহ্ (সাদাকা) করবে না যাতে বাহ্যিকভাবে সম্পদের স্বল্পতা পরিলক্ষিত হয়। এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, স্ত্রী যদি স্বামীর সম্পদ থেকে সদাক্বাহ্ (সাদাকা) করতে চান তাহলে তাকে স্বামীর নিকট থেকে অনুমতি নিতে হবে চাই অনুমতির বিষয়টি স্পষ্টভাবে হোক অথবা অস্পষ্টভাবে হোক। কোন কোন ‘উলামায়ে কিরাম বলেছেন, বিষয়টি সম্পূর্ণ আহলে হিজায তথা মক্কা-মদীনার অধিবাসীদের চিরাচরিত অভ্যাসের অন্তর্গত। কেননা তাদের অভ্যাস হলো তারা তাদের বিবিগণ এবং খাদিমদেরকে মেহমানদের আপ্যায়নের ব্যবস্থা করা, ভিক্ষুক, মিসকীন ও প্রতিবেশীদের খাদ্য খাওয়ানোর বিষয়গুলোতে অনুমতি দিয়ে রাখতেন। সুতরাং রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আরবদের এই সুন্দর স্বভাবকে ধারণ করতে গোটা বিশ্ববাসীকে উৎসাহিত করেছেন। স্বামীর বিনা অনুমতিতে তার সম্পদ থেকে স্ত্রী নিজ ইচ্ছামতো কাউকে সদাক্বাহ্ (সাদাকা) করবে এটা অত্র হাদীস দ্বারা স্পষ্টভাবে বুঝা যায় না।

আল্লামা বাগাবী (রহঃ) বলেন, অধিকাংশ ‘উলামায়ে কেরামের বক্তব্য হচ্ছে স্ত্রীর জন্য তার স্বামীর সম্পদ থেকে বিনা অনুমতিতে সদাক্বাহ্ (সাদাকা) করা জায়েয নেই। অনুরূপ খাদিমের ক্ষেত্রেও একই বিধান। আর যে হাদীসটি জায়িযের দলীল তা আহলে হিজাযের তথা মক্কা-মদীনার মানুষের সাধারণ অভ্যাসের বর্ণনা দিচ্ছে যে, তারা তাদের বিবি ও খাদিমদেরকে এ আদেশ দিয়ে রাখতেন বাড়ীতে কোন অভাবী বা মেহমান আসলে বাড়ীতে যা থাকবে তার মাধ্যমে সাধ্যমতো তার আপ্যায়নের ব্যবস্থা করতে। যেমনটিই বলেছেন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, ‘তুমি গুণে গুণে দান করিও না তাহলে আল্লাহও তোমাকে গুণে গুণে দান করবেন।’

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদীসে (طَعَامِ) তথা খাদ্যের কথা বলেছেন এজন্য যে, খাদ্যবস্ত্ত অন্য মানুষের প্রতি অনুগ্রহ করার অন্যতম শ্রেষ্ঠ মাধ্যম। তথাপি খাদ্যবস্ত্ত ছাড়া অন্যকিছুর মাধ্যমেও অনুগ্রহ করা যায়। আর এখানে মুখ্য বিষয় হচ্ছে সম্পদের মালিক-এর অনুমতি।

(كَانَ لَهَا أَجْرُهَا بِمَا أَنْفَقَتْ) অর্থাৎ ঐ সম্পদ থেকে খরচ করার কারণে স্ত্রীর সাওয়াব হবে।

(وَلِزَوْجِهَا أَجْرُه بِمَا كَسَبَ) অর্থাৎ সম্পদ উপার্জনের কারণে স্বামীর সাওয়াব হবে।

(لَا يَنْقُصُ بَعْضُهُمْ أَجْرَ بعض) আল্লামা কুস্তুলানী (রহঃ) অর্থাৎ (كزادهم الله مَرَضًا) এর ন্যায় তাকীদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ সাওয়াব তো হবে এবং একজনের সাওয়াব অন্যজনের সাওয়াবে কোন ঘাটতি করবে না।

আল্লামা মুল্লা ‘আলী ক্বারী (রহঃ) বলেন, (شَيْئا) এটি (من النقص) তথা অপরির্পূণতা থেকে অথবা (من الأجر) তথা নেকী হতে কোন কিছুই কমতি করা হবে না এ অর্থে নেয়া যেতে পারে।

এখানে উদ্দেশ্য হচ্ছে এ কথা পরিষ্কারভাবে বলা যে, সাওয়াবের হকদার হওয়ার দৃষ্টিকোণ থেকে তারা সবাই সমান যদিও সাওয়াবের পরিমাণে একটু কম বেশিও হয়।

হাফিয ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন, ইবনুল আরাবী বলেন, স্ত্রী স্বামীর বাড়ী থেকে সদাক্বাহ্ (সাদাকা) দিতে পারবে কি পারবে না এ বিষয়ে ‘উলামাদের মধ্যে যথেষ্ট মতভেদ রয়েছে। কোন কোন বিদ্বান তা বৈধ বলে মত পোষণ করেছেন। তবে যদি তা নিতান্তই সামান্য হয় যাতে সম্পদের মধ্যে স্পষ্ট কোন ঘাটতি পরিলক্ষিত হয় না এমন হলে সদাক্বাহ্ (সাদাকা) দিতে অসুবিধা নেই বিনা অনুমতিতে।

ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন, আকার ইঙ্গিতে হলেও সদাক্বাহ্ (সাদাকা) দেয়ার ক্ষেত্রে স্বামীর অনুমতি থাকা চাই। এটা ‘আরবদের মতো অভ্যাসগত বিষয় হওয়ারও সম্ভাবনা রাখে। তবে হাদীসটিত যে বলা হয়েছে (من غير مفسدة) তথা স্বামীর সম্পদ থেকে স্ত্রী সদাক্বাহ্ (সাদাকা) দিতে পারবে সম্পদের মধ্যে কোন প্রকার বিপর্যয় সৃষ্টি ব্যতীত এ ব্যাপারে সকল ‘উলামায়ে কিরাম একমত। কোন কোন ‘উলামায়ে কিরাম সদাক্বাহ্ (সাদাকা) দেয়ার হকদারের ক্ষেত্রে স্ত্রী এবং খাদিমের মধ্যে পার্থক্য করেছেন। সুতরাং তারা বলেন, স্ত্রীর জন্য তার স্বামীর সম্পদে হক আছে সেজন্য সে স্বামীর সম্পদ থেকে সদাক্বাহ্ (সাদাকা) দিতে পারে কিন্তু খাদিমের জন্য তার মনিবের সম্পত্তিতে কোন প্রকার হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই, সুতরাং সে মনিবের সম্পদ থেকে বিনা অনুমতিতে সদাক্বাহ্ (সাদাকা) দিতে পারবে না।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ