পরিচ্ছেদঃ ৭. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - উত্তম সদাক্বার বর্ণনা

১৯৪৫-[১৭] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ ত্বলহাহ্ (রাঃ) মদীনার আনসারদের মধ্যে খেজুর বাগানের মালিক হিসেবে সর্বাধিক সম্পদশালী ছিলেন। আর তার কাছে সবচেয়ে বেশী প্রিয় ছিল মসজিদে নাবাবী সামনের ’বায়রাহা-’ (নামক বাগানটি)। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বাগানটিতে প্রায়ই প্রবেশ করতেন ও এর পবিত্র পানি পান করতেন। আনাস (রাঃ) বলেন, যখন অর্থাৎ ’’তোমরা ততক্ষণ জান্নাতে অবশ্যই পৌঁছতে পারবে না, যে পর্যন্ত তোমাদের প্রিয়তর জিনিস আল্লাহর পথে খরচ না করবে’’- (সূরাহ্ আ-লি ’ইমরান ৩: ৯২) এ আয়াত নাযিল হলো; তখন ত্বলহাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বললেন, হে আল্লাহর রসূল! যেহেতু আল্লাহ তা’আলা বলেন, অর্থাৎ আমার সবচেয়ে প্রিয় সম্পদ ’বায়রাহা-’ আল্লাহর নামে সদাক্বাহ্ (সাদাকা) করলাম। আমি আশা করব আমি এর জন্য আল্লাহর কাছে সাওয়াব পাব। হে আল্লাহর রসূল! আপনি তা কবূল করুন। যে কাজে আল্লাহ চান তাতে আপনি তা লাগান। (এ ঘোষণা শুনে) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাবাশ! সাবাশ!! বলে উঠলেন। (তিনি বললেন) এ সম্পদ খুবই কল্যাণকর হবে। তোমার ঘোষণা আমি শুনেছি। এ বাগানটি তুমি তোমার গরীব নিকটাত্মীয়দের মধ্যে বণ্টন করে দাও। আবূ ত্বলহাহ্ (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমি তাই করব। অতঃপর আবূ ত্বলহাহ্ (রাঃ) খেজুর বাগানটিকে তাঁর নিকটাত্মীয় ও চাচাতো ভাইদের মধ্যে বণ্টন করে দিলেন। (বুখারী, মুসলিম)[1]

عَن أنس بن مَالك قَالَ: كَانَ أَبُو طَلْحَة أَكثر أَنْصَارِي بِالْمَدِينَةِ مَالًا مِنْ نَخْلٍ وَكَانَ أَحَبُّ أَمْوَالِهِ إِلَيْهِ بيرحاء وَكَانَت مُسْتَقْبل الْمَسْجِدَ وَكَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَدْخُلُهَا وَيَشْرَبُ مِنْ مَاءٍ فِيهَا طَيِّبٍ قَالَ أنس فَلَمَّا نزلت (لَنْ تَنَالُوا الْبِرَّ حَتَّى تُنْفِقُوا مِمَّا تُحِبُّونَ)
قَامَ أَبُو طَلْحَة فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ تَعَالَى يَقُول: (لَنْ تَنَالُوا الْبِرَّ حَتَّى تُنْفِقُوا مِمَّا تُحِبُّونَ)
وَإِنَّ أَحَبَّ مَالِي إِلَيَّ بَيْرَحَاءُ وَإِنَّهَا صَدَقَةٌ لله أَرْجُو بِرَّهَا وَذُخْرَهَا عِنْدَ اللَّهِ فَضَعْهَا يَا رَسُولَ اللَّهِ حَيْثُ أَرَاكَ اللَّهِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «بَخٍ بَخٍ ذَلِكَ مَالٌ رَابِحٌ وَقَدْ سَمِعْتُ مَا قُلْتَ وَإِنَّى أَرَى أَنْ تَجْعَلَهَا فِي الْأَقْرَبِينَ» . فَقَالَ أَبُو طَلْحَةَ أَفْعَلُ يَا رَسُولَ اللَّهِ فَقَسَّمَهَا أَبُو طَلْحَة فِي أَقَاربه وَفِي بني عَمه

عن انس بن مالك قال: كان ابو طلحة اكثر انصاري بالمدينة مالا من نخل وكان احب امواله اليه بيرحاء وكانت مستقبل المسجد وكان رسول الله صلى الله عليه وسلم يدخلها ويشرب من ماء فيها طيب قال انس فلما نزلت (لن تنالوا البر حتى تنفقوا مما تحبون) قام ابو طلحة فقال يا رسول الله ان الله تعالى يقول: (لن تنالوا البر حتى تنفقوا مما تحبون) وان احب مالي الي بيرحاء وانها صدقة لله ارجو برها وذخرها عند الله فضعها يا رسول الله حيث اراك الله فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «بخ بخ ذلك مال رابح وقد سمعت ما قلت وانى ارى ان تجعلها في الاقربين» . فقال ابو طلحة افعل يا رسول الله فقسمها ابو طلحة في اقاربه وفي بني عمه

ব্যাখ্যা: এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সৎ ব্যক্তির জন্য বৈধ পন্থায় বৈধ সম্পদের বৃদ্ধি কামনা করা বৈধ। অর্থাৎ বৈধ পন্থার কোন মুসলিম সৎ ব্যক্তি যত ইচ্ছা বৈধ সম্পদের মালিক হতে পারে। ইসলাম এ ক্ষেত্রে বাধা দেয় না।

এ হাদীস দ্বারা আরো প্রমাণ হয় যে, কোন মর্যাদাবান ‘আলিম ব্যক্তির দিকে সম্পদের ভালবাসাকে সমন্বিত করা বৈধ। এর জন্য তার মর্যাদা কমবে না। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘‘অবশ্যই সে (মানুষ) ধন-সম্পদের আসক্তিতে প্রবল’’- (সূরাহ্ আল ‘আ-দিয়া-ত ১০০ : ৮)। আল বাজী বলেন, কোন সৎ (মুসলিম) ব্যক্তির জন্য সম্পদকে ভালবাসা বৈধ। এ ব্যাপারে সূরাহ্ আ-লি ‘ইমরান-এর ১৪ নং আয়াতে বর্ণনা এসেছে।

অত্র হাদীসে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ ত্বলহাহ্ (রাঃ)-কে বায়রাহা- কূপটি তার আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে দান করে বণ্টন করে দিতে বলেন এজন্য যে, আত্মীয়দের দান করলে দানের সাওয়াবের সাথে সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক অটুট রাখার সাওয়াবও পাওয়া যায়।

এ হাদীস দ্বারা বেশ কিছু বিষয় সাব্যস্ত হয়। যেমন- (এক) যাকাতের নিসাবের উপর অতিরিক্ত নফল দান করা উচিত; তবে তা যেন মোট সম্পদের এক-তৃতীয়াংশের বেশি না হয়; (দুই) দানের ধরণ, পদ্ধতি এবং আল্লাহর অনুসরণের ক্ষেত্রে সম্মানিত ব্যক্তিদের সাথে পরামর্শ করা উচিত; (তিন) কোন বিশেষ ও প্রসিদ্ধ স্থান/জমি দান করলে তার সীমানা নির্ধারণ না করলেও সমস্যা নেই; (চার) দানকৃত জিনিস কোন খাতে দান করা হবে তা নির্দিষ্ট না করে দান সম্পন্ন করে তা নির্দিষ্ট করা বৈধ।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৬: যাকাত (كتاب الزكاة) 6. Zakat

পরিচ্ছেদঃ ৭. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - উত্তম সদাক্বার বর্ণনা

১৯৪৬-[১৮] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন ক্ষুধার্ত জীবকে পেট পুরে খাওয়ানো উত্তম সদাক্বার অন্তর্ভুক্ত। (বায়হাক্বী’র শু’আবুল ঈমান)[1]

وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَفْضَلُ الصَّدَقَةِ أَنْ تُشْبِعَ كَبِدًا جَائِعًا» . رَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ فِي شُعَبِ الْإِيمَانِ

وعن انس قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «افضل الصدقة ان تشبع كبدا جاىعا» . رواه البيهقي في شعب الايمان

ব্যাখ্যা: আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেন, অত্র হাদীসে (كَبِدًا) কলিজাকে তার সাথী তথা মানুষের গুণের মাধ্যমে রূপকভাবে গুণান্বিত করা হয়েছে। আর এটা হলো, সামঞ্জস্যপূর্ণ গুণ যা কোন হুকুমের যুক্তিসঙ্গত কারণ হতে পারে। এভাবে ব্যবহারের ফায়দা হলো বিষয়টিকে ব্যাপক অর্থে নিতে পারা যাতে করে তা সকল প্রকার প্রাণীকে অন্তর্ভুক্ত করতে সক্ষম হয় চাই সে প্রাণীটি মানুষ হোক বা অন্য কিছু হোক মু’মিন হোক বা কাফির হোক তার বাকশক্তি থাকুক বা না থাকুক। অর্থাৎ এগুলোর যে কাউকে খাওয়ালেই সাওয়াব অর্জন হতে পারে। আল্লাহই ভাল জনেন।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৬: যাকাত (كتاب الزكاة) 6. Zakat
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ২ পর্যন্ত, সর্বমোট ২ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে