পরিচ্ছেদঃ ৪৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - পবিত্রতা অর্জন ও সকাল সকাল মসজিদে গমন
১৩৮৭-[৭] আবূ সা’ঈদ ও আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তাঁরা বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জুমু’আর দিন গোসল করবে। উত্তম পোশাক পরবে। তার কাছে থাকলে সুগন্ধি লাগাবে। তারপর মসজিদে গমন করবে। কিন্তু মানুষের কাঁধ ডিঙ্গিয়ে সামনে আসার চেষ্টা করবে না। এরপর যথাসাধ্য সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করবে। ইমাম খুতবার জন্য হুজরা হতে বের হবার পর থেকে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) শেষ হওয়া পর্যন্ত চুপচাপ থাকবে। তাহলে এ জুমু’আহ্ হতে পূর্বের জুমু’আহ্ পর্যন্ত তার যত গুনাহ হয়েছে তা তার কাফফারাহ্ হয়ে যাবে। (আবূ দাঊদ)[1]
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ وَأَبِي هُرَيْرَةَ قَالَا: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «من اغْتَسَلَ يَوْمَ الْجُمُعَةِ وَلَبِسَ مِنْ أَحْسَنِ ثِيَابِهِ وَمَسَّ مِنْ طِيبٍ إِنْ كَانَ عِنْدَهُ ثُمَّ أَتَى الْجُمُعَةَ فَلَمْ يَتَخَطَّ أَعْنَاقَ النَّاسِ ثُمَّ صَلَّى مَا كَتَبَ اللَّهُ لَهُ ثُمَّ أَنْصَتَ إِذا خرج إِمَام حَتَّى يَفْرُغَ مِنْ صَلَاتِهِ كَانَتْ كَفَّارَةً لِمَا بَيْنَهَا وَبَيْنَ جُمُعَتِهِ الَّتِي قَبْلَهَا» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ উত্তম পোশাক পরিধানের দ্বারা সাদা পোশাক উদ্দেশ্য, অর্থাৎ রঙের দিক থেকে উত্তম পোশাক হলো সাদা পোশাক। কেননা সহীহ হাদীসে রয়েছে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা সাদা পোশাক পরিধান করো, কেননা তা তোমাদের উত্তম পোশাক এবং তাতেই তোমাদের মৃত ব্যক্তিদের কাফন দাও।
অপর সহীহ বর্ণনায় রয়েছেঃ নিশ্চয়ই তা অধিক পূত ও পবিত্র। এখানে দলীল হলোঃ সুন্দর পোশাক পরা শারী‘আত সম্মত এবং জুমু‘আর দিনে সৌন্দর্য অবলম্বন করা মুস্তাহাব, যা মুসলিমদের (সাপ্তাহিক) ঈদ এ ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই।
(وَمَسَّ مِنْ طِيْبٍ إِنْ كَانَ عِنْدَه) অর্থাৎ বাড়িতে কিংবা স্ত্রীর নিকট সুগন্ধি থাকায় তার জন্য তা অর্জনে সহজ হয় তবে অবশ্যই সুগন্ধি লাগাবে এবং জুমু‘আর দিনে সুগন্ধি লাগানো মুস্তাহাব এতে কারো দ্বিমত নেই। আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে সহীহ সানাদে বর্ণিত রয়েছে, যেমন- হাফিয আসক্বালানী (রহঃ) ফাতহুল বারীতে বলেছেন, নিশ্চয় জুমু‘আর দিনে সুগন্ধি লাগানো ওয়াজিব এবং আহলুয্ যাহিরগণ এ মত ব্যক্ত করেছেন। (ثُمَّ أَنْصَتَ إِذَا خَرَجَ إِمَامٌ) মিম্বারের উপর আরোহণের জন্য বের হওয়া। এখান থেকে ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ) দলীল গ্রহণ করেছেন যে, জুমু‘আর দিনের চুপ থাকার সময় হলো ইমামের বের হওয়া থেকে (খুতবার জন্য দাঁড়ানো)। তবে আবুদ্ দারদা (রাঃ) বর্ণিত হাদীসে রয়েছে, যখন তুমি ইমামের কথা শুনবে তখন চুপ থাকবে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) শেষ হওয়া পর্যন্ত। (সুতরাং চুপ থাকার সময় হলে ইমামের খুতবার শুরু থেকে)। (আহমাদ, ত্ববারানী)
আর খতীব খুতবাহ্ শেষ করার পর। কেউ বলেছেন সালাতের শুরুতে কথা বলার ব্যাপারে মত পার্থক্য রয়েছে। আবূ হানীফাহ্ (রহঃ)-এর মতে তা মাকরূহ। মালিক, শাফি‘ঈ, আহমাদ, আবূ ইউসুফ ও মুহাম্মাদ (রহঃ)-এর মতে খুতবাহ্ শেষে বা সালাতের শুরুতে কথা বলাতে কোন দোষ নেই। ইবনু ‘আরাবী (রহঃ) চুপ থাকাই প্রাধান্য দিয়েছেন। (আল্লাহ তা‘আলাই ভাল জানেন)
এমনকি তিনি বলেন, জুমু‘আর দিনে মিম্বার থেকে নামা ও সালাত আরম্ভ করার মাঝে কথা বলা প্রসঙ্গে দু’টি রিওয়ায়াত এসেছে, তার নিকট অধিক বিশুদ্ধ রিওয়ায়াত হলো খুতবার পর জুমু‘আর সালাতের আগে কথা না বলা ইমাম শাওকানী (রহঃ) এ মতই গ্রহণ করেছেন। তবে সালাত শেষ হওয়া পর্যন্ত চুপ থাকার ব্যাপারে একাধিক হাদীস বর্ণিত রয়েছে, যেমন নাসায়ীতে জাইয়্যিদ সানাদে সালমান (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীসঃ
(يُنْصِتْ حَتّى يَفْرُغَ مِنْ صَلَاتِه) সালাত শেষ না হওয়া পর্যন্ত চুপ থাকবে। অপরদিকে মুসনাদে আহমাদে সহীহ সানাদে নুবায়শাহ্ (রাঃ) বর্ণিত হাদীস রয়েছে যে,
فاستمع وأنصت حتى يقضي الإمام جمعته وكلامه.
শুনো ও চুপ থাকো যতক্ষণ না ইমাম তার জুমু‘আহ্ ও খুতবাহ্ শেষ না করেন।
এ উভয় হাদীসের সমন্বয় হলো যে, খুতবার পর কথা বলা জায়িয। আর তা হলো ইমামের প্রয়োজনীয় কথা বলা।
পরিচ্ছেদঃ ৪৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - পবিত্রতা অর্জন ও সকাল সকাল মসজিদে গমন
১৩৮৮-[৮] আওস ইবনু আওস (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জুমু’আর দিনে পোশাক-পরিচ্ছদ ধুইবে ও নিজে গোসল করবে। এরপর সকাল সকাল প্রস্তুত হবে। সওয়ার না হয়ে পায়ে হেঁটে আগে মসজিদে যাবে। ইমামের নিকট গিয়ে বসবে। চুপচাপ ইমামের খুতবাহ্ শুনবে। বেহুদা কাজ করবে না। তার প্রতি কদমে এক বছরের ’আমলের সাওয়াব হবে। অর্থাৎ এক বছরের দিনের সিয়াম ও রাতের সালাতের ’আমলের পরিমাণ সাওয়াব হবে। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ)[1]
وَعَنْ أَوْسِ بْنِ أَوْسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ غَسَّلَ يَوْمَ الْجُمُعَةِ وَاغْتَسَلَ وَبَكَّرَ وَابْتَكَرَ وَمَشَى وَلَمْ يَرْكَبْ وَدَنَا مِنَ الْإِمَامِ وَاسْتَمَعَ وَلَمْ يَلْغُ كَانَ لَهُ بِكُلِّ خُطْوَةٍ عَمَلُ سَنَةٍ: أَجْرُ صِيَامِهَا وَقِيَامِهَا . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَالنَّسَائِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ
ব্যাখ্যা: (مَنْ غَسَّلَ يَوْمَ الْجُمُعَةِ وَاغْتَسَلَ) এখানে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথা (غَسْلَ) শব্দটি তাশদীদ যোগে (غَسَّلَ) ও তাশদীদ ছাড়াও (غَسَلَ) পড়া যায়।
আর তাশদীদ যোগে পড়লে তার অর্থ হবে সালাতে গমন করার পূর্বে স্ত্রী কিংবা দাসীর সাথে সঙ্গম করা যাতে নিজ আত্মাকে আয়ত্ব ও চলার পথে দৃষ্টিশক্তিকে কুপ্রভাব থেকে মুক্ত রাখতে পারে। (من غَسَّل امرأته إذا جامعها) অর্থাৎ যে ব্যক্তি তার স্ত্রীকে গোসল করালো যখন তার সাথে সঙ্গম করল এবং এ কথার সমর্থনে হাদীস রয়েছে যে, তোমাদের কেউ কি জুমু‘আর দিনে তার স্ত্রীর সাথে সঙ্গম করতে সক্ষম? কারণ তার জন্য দু’টি প্রতিদান। ১টি গোসলের ও ২য়টি তার স্ত্রীর। বায়হাক্বী শু‘আবুল ঈমানে আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। আবার কেউ বলেছেনঃ (غسل) এর অর্থ হলো মাথা ধৌত করা এবং (اغْتَسَلَ) এর অর্থ পূর্ণ শরীর ধৌত করা এবং এর সমর্থনে আহমাদ ও আবূ দাঊদের বর্ণনায় রয়েছেঃ যে জুমু‘আর দিনে তার মাথা ধৌত করবে এবং নিজে গোসল করবে..... এবং বুখারীর বর্ণনায় রয়েছে, আহমাদ ও ইবনু খুযায়মায় বিশুদ্ধ সানাদে রয়েছে যে, তাউস (রহঃ) বলেনঃ আমি ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-কে বললামঃ
زعموا أن رسول الله - ﷺ - قال: اغتسلوا يوم الجمعة واغسلوا رؤسكم وإن لم تكونوا جنباً.
তারা ধারণা করে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা জুমু‘আর দিনে গোসল করো ও মাথা ধৌত করো যদিও তোমরা নাপাকী না হয়ে থাকো। (وبكر) প্রসিদ্ধ বর্ণনায় শব্দটি তাশদীদ যুক্ত তবে তাশদীদ ছাড়াও পড়া জায়িয রয়েছে। অর্থ হলো প্রথম সময়ে গমন করা। (وابتكر) কেউ বলেছেন, উভয় শব্দের অর্থ এক ও অভিন্ন। তবে এটি বারবার উল্লেখ করা হয়েছে দৃঢ়তা ও আধিক্য অর্থ বুঝানোর জন্য, কাজে শব্দদ্বয়ের মধ্য কোন বৈপরীত্য নেই। তবে অগ্রগণ্য কথা হলো আল্লামা ‘ইরাক্বী (রহঃ) যা বলেছেন। অর্থাৎ (بكر) অর্থ হলো প্রথম সময়ে গমন করা, আর (ابتكر) অর্থ হলো খুতবার শুরু পাওয়া।
পরিচ্ছেদঃ ৪৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - পবিত্রতা অর্জন ও সকাল সকাল মসজিদে গমন
১৩৮৯-[৯] ’আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কারো সামর্থ্য থাকলে, সে যেন তার কাজ-কর্মের পোশাক ছাড়া জুমু’আর দিনের জন্য এক জোড়া পোশাক রাখে। (ইবনু মাজাহ)[1]
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ سَلَامٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «مَا عَلَى أَحَدِكُمْ إِنْ وَجَدَ أَنْ يَتَّخِذَ ثَوْبَيْنِ لِيَوْمِ الْجُمُعَةِ سِوَى ثَوْبَيْ مَهْنَتِهِ» . رَوَاهُ ابْنُ مَاجَه
ব্যাখ্যা: (مَا عَلى اَحَدِكُمْ) এখানে (مَا) না বোধক অর্থে ব্যবহৃত। অর্থাৎ দুনিয়াবী বিষয়ে তোমাদের ওপর কোন দোষ নেই, তিনি ইচ্ছা করেছেন তাতে উৎসাহ প্রদান করতে, এটি এমন বিষয় যে তাতে দোষের কিছু নেই। এটি কর্তার ওপর দায়িত্ব, এবং এটাই উত্তম যাতে মানুষ তা পরিত্যাগ না করে।
আলোচ্য হাদীস প্রমাণ করে যে, জুমু‘আর দিনে সুন্দর পোশাক পরিধান করাটা মুস্তাহাব এবং অন্যান্য দিনে পরিধেয় বস্ত্র ছাড়া নতুন পোশাক পরিধান করাটা সুন্দর পোশাকের বিশেষত্ব। ইবনু ‘আবদুল বার (রহঃ) বলেন যে, এখানে বৈধতা রয়েছে যে, সামর্থ্যবান ব্যক্তি জুমু‘আর দিন বা ঈদের দিনে সুন্দর পোশাক পরিধান করবে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা করতেন এবং সুগন্ধি লাগাতেন ও সাধ্যানুযায়ী সুন্দর পোশাক পড়তেন জুমু‘আহ্ এবং ঈদের দিনে এবং তার মাঝেই রয়েছে উত্তম আদর্শ এবং তিনি সুগন্ধি ব্যবহার, মিসওয়াক করা ও তৈল লাগাতে নির্দেশ দিতেন।
পরিচ্ছেদঃ ৪৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - পবিত্রতা অর্জন ও সকাল সকাল মসজিদে গমন
১৩৯০-[১০] ইমাম মালিক ইয়াহ্ইয়া ইবনু সা’ঈদ আল আনসারী (রাঃ)হতে।[1]
وَرَوَاهُ مَالك عَن يحيى بن سعيد
ব্যাখ্যা: (وَرَوَاهُ مَالِك) মুয়াত্তায় এবং অনুরূপ আবূ দাঊদ ও বায়হাক্বী এবং অন্যান্যগণ বর্ণনা করেছেন, ইয়াহইয়া ইবনু সা‘ঈদ (রাঃ) থেকে, নিশ্চয় তার [মালিক (রহঃ)-এর] নিকট পৌঁছেছে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘‘তোমাদের ওপর কোন দোষ নেই.....।’’
হাফিয আসক্বালানী (রহঃ) ফাতহুল বারীর ৪র্থ খন্ডের ৪৮৩ পৃষ্ঠায় বলেছেনঃ ইবনু ‘আবদুল বার (রহঃ) আত্ তামহীদে ইয়াহ্ইয়া ইবনু সা‘ঈদ আল আনসারী (রহঃ) থেকে, তিনি বর্ণনা করেছেন ‘উমার (রাঃ) থেকে, তিনি বর্ণনা করেছেনঃ ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে।
পরিচ্ছেদঃ ৪৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - পবিত্রতা অর্জন ও সকাল সকাল মসজিদে গমন
১৩৯১-[১১] সামুরাহ্ ইবনু জুনদুব (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা জুমু’আর দিন খুতবার সময় উপস্থিত থাকবে এবং ইমামের কাছাকাছি বসবে। কারণ কোন ব্যক্তি পেছনে থাকতে থাকতে (অর্থাৎ প্রথম সারিতে না গিয়ে পেছনের সারিতে থাকে) অবশেষে জান্নাতে প্রবেশেও পেছনে পড়ে যাবে। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَن سَمُرَةَ بْنِ جُنْدُبٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «احْضُرُوا الذِّكْرَ وَادْنُوا مِنَ الْإِمَامِ فَإِنَّ الرَّجُلَ لَا يَزَالُ يَتَبَاعَدُ حَتَّى يُؤَخَّرَ فِي الْجنَّة وَإِن دَخلهَا» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: শাওকানী (রহঃ) বলেন, জুমু‘আর দিনে ইমাম থেকে দূরে থাকাই জান্নাতে প্রবেশে বিলম্বের কারণ, আল্লাহ সুবহানাহূ ওয়া তা‘আলা জান্নাতে প্রবেশের ক্ষেত্রে আমাদেরকে অগ্রগামী করেছেন হাদীসটি মুনযির (রহঃ) আত্ তারগিবের প্রথম খন্ডের ২২১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন, তিনি বলেনঃ সামুরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত রয়েছে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা জুমু‘আয় উপস্থিত হও ও ইমামের নিকটবর্তী হও। কেননা নিশ্চয় ব্যক্তি জান্নাতী হবে, জুমু‘আতে পিছে পড়ায় সে জান্নাতেও পিছে পড়বে (অর্থাৎ পরে প্রবেশ করবে।) যদিও সে জান্নাতের অধিবাসী হয়।
পরিচ্ছেদঃ ৪৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - পবিত্রতা অর্জন ও সকাল সকাল মসজিদে গমন
১৩৯২-[১২] সাহল ইবনু মু’আয ইবনু আনাস আল জুহানী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জুমু’আর দিনের জামা’আতে যে ব্যক্তি মানুষের ঘাড় ডিঙ্গিয়ে সামনে যাবার চেষ্টা করবে, কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন তাকে জাহান্নামের ’পুল’ বানানো হবে। (তিরমিযী; তিনি বলেন হাদীসটি গরীব)[1]
وَعَنْ سَهْلِ بْنِ مُعَاذِ بْنِ أَنَسٍ الْجُهَنِيِّ عَنْ أَبِيهِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ تَخَطَّى رِقَابَ النَّاسِ يَوْمَ الْجُمُعَةِ اتَّخَذَ جِسْرًا إِلَى جَهَنَّمَ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ
ব্যাখ্যা: (يوم الجمعة) মানুষের ঘাঁড় ফেঁড়ে সামনে অতিক্রম করাটা জুমু‘আর দিনের সাথে নির্দিষ্ট হওয়ায় প্রমাণিত হয় যে, নিশ্চয় কারাহিয়্যাত বা ঘৃণ্যতাঁ সেটার (জুমু‘আর) সাথে নির্দিষ্ট। আর বিষয়টা এমনও হতে পারে যে, জুমু‘আর দিনের সাথে মুকাইয়্যাদ বা নির্দিষ্ট করার প্রধান কারণ মানুষের সংখ্যাধিক্য। যা অন্য সকল সালাতের বিপরীত (অন্য সালাতে মানুষের সংখ্যার আধিক্য থাকে না)। সুতরাং তা জুমু‘আর সাথে নির্দিষ্ট নয়। (অর্থাৎ জুমু‘আহ্ ছাড়া অন্য সালাতে লোকসংখ্যা বেশী থাকলে এ কারাহিয়্যাতটা সেক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।) বরং হুকুমটা সকল সালাতের বেলায় প্রযোজ্য।
আল্লামা ‘আয়নী (রহঃ) বলেন, কাতারবদ্ধ মানুষের গর্দান ফেরে সামনে যাওয়া। এটি জুমু‘আর দিনের সাথে নির্দিষ্ট করার ব্যাপারে একাধিক হাদীস উল্লেখ রয়েছে, যেমন অনুরূপ মুকাইয়্যাদ করেছেন ইমাম আত্ তিরমিযী, শাফি‘ঈ মাযহাবীগণ সেটা জুমু‘আর সাথে নির্দিষ্ট করেছেন তাদের ফিকহের কিতাবের জুমু‘আহ্ অধ্যায়ে, অনুরূপ আল উম্মু কিতাবেও তার বক্তব্য রয়েছে এবং তিনি বলেনঃ আমি জুমু‘আর দিনে মানুষের গর্দান চিরে সামনে যাওয়া ঘৃণা করি তাতে বিরক্তিকর ও অভদ্রতা থাকার কারণে। কিন্তু এ কারণটা জুমু‘আহ্ এবং জুমু‘আহ্ ছাড়া অন্য সকল সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) মসজিদে কিংবা মাসজিদ ছাড়াও সকল বৈঠকখানা, দীন শিক্ষার বৈঠক, হাদীস শ্রবণের বৈঠক এবং ওয়াজ-নাসীহাতের বৈঠকগুলোকেও সম্পৃক্ত করে।
অতঃপর তিনি বলেনঃ ইমাম যখন মিম্বার ও মিহরাবের দিকে যাওয়ার জন্য মানুষের গর্দান ফেরে যাওয়া ছাড়া বিকল্প কোন পন্থা না পাবে, তখন তা মাকরূহ হবে না। কেননা তা একান্ত প্রয়োজন এবং ইমাম শাফি‘ঈ থেকেও অনুরূপ বর্ণনা রয়েছে এবং ‘উক্ববাহ্ ইবনু হারিস (রাঃ) বর্ণিত হাদীস সহীহুল বুখারী ও নাসায়ীতে রয়েছে। তিনি বলেনঃ আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে মদীনায় ‘আসর সালাত আদায় করছিলাম। অতঃপর তিনি দ্রুত দাঁড়ালেন এবং কাতারে উপবিষ্ট মানুষের গর্দান ফেঁড়ে তার কোন এক স্ত্রীর কামড়ায় গেলেন। এতেই প্রমাণিত হয় যে, জুমু‘আহ্ ছাড়াও অন্য কোন প্রয়োজনে কাতার ভেঙ্গে গমন করা জায়িয।
পরিচ্ছেদঃ ৪৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - পবিত্রতা অর্জন ও সকাল সকাল মসজিদে গমন
১৩৯৩-[১৩] মু’আয ইবনু আনাস আল জুহানী (রাঃ)বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমু’আর দিন ইমামের খুতবার সময় হাঁটু উচিয়ে দু’হাত দিয়ে তা জড়িয়ে ধরে বসতে নিষেধ করেছেন। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ مُعَاذِ بْنِ أَنَسٍ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَى عَنِ الْحُبْوَةِ يَوْمَ الْجُمُعَةِ وَالْإِمَامُ يَخْطُبُ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ
ব্যাখ্যা: নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথা (نَهى عَنِ الْحُبْوَةِ) এখানে (الْحُبْوَةِ) শব্দটি (الاحتباء) ‘আল ইহতিবা’ থেকে ইসম, কাজী আয়ায আল মাশারিক গ্রন্থের ১ম খন্ডের ১৭৬-১৭৭ পৃষ্ঠায় বলেছেনঃ ‘আল ইহতিবা’ হলো পায়ের গোড়ালিদ্বয় খাড়া করে এবং উভয় গোড়ালির উপর কাপড় জড়িয়ে বসা, কিংবা দু’ হাতে হাঁটুদ্বয় শক্তভাবে ধারণ করা।
আল্লামা শাওকানী (রহঃ) বলেনঃ ইহতিবা সম্পর্কে (نَهى) বা নিষেধাজ্ঞাটা মুত্বলাক্ব, জুমু‘আর খুতবাহ্ (খুতবা) চলা অবস্থা বা জুমু‘আর দিনের সাথে নির্দিষ্ট নয়। কেননা তাতে এক কাপড় পরিহিত ব্যক্তি সতর উন্মুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। তবে ইহতিবা করে বসার ব্যাপারে বিদ্বানদের মাঝে মতপার্থক্য রয়েছে। একদল বিদ্বানগণ বলেন যে, জুমু‘আর দিনে ইহতিবা করা মাকরূহ। যেমন আত্ তিরমিযী (রহঃ) বলেন, তাদের মধ্য ‘উবাদাহ্ ইবনু নাসিয়ী আত্ তাবি‘ঈ। আল্লামা ‘ইরাক্বী (রহঃ) বলেনঃ মাকহূল, ‘আত্বা ও হাসান থেকে বর্ণিত রয়েছে। তারা জুমু‘আর দিনে খুতবাহ্ চলা অবস্থায় ইহতিবা করা মাকরূহ বলতেন এবং তারা মু‘আয ইবনু আনাস (রাঃ) ও ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) ইবনুল ‘আস (রাঃ) বর্ণিত হাদীস দ্বারা দলীল গ্রহণ করেছেন। তবে বর্ণিত হাদীসের সানাদে বাক্বিয়্যাহ্ ইবনু ওয়ালীদ, তিনি মুদাল্লিস এবং অধিকাংশ বিদ্বানগণ মতামত দিয়েছেন যে, তা (ইহতিবা) মাকরূহ নয়। যেমন আল্লামা ‘ইরাক্বী (রহঃ) এ মতের সমর্থক।
আবূ দাঊদ ও ত্বাহাবী (রহঃ) বর্ণনা করেছেন এবং বায়হাক্বীর ৩য় খন্ডের ২৩৫ পৃষ্ঠায় ইয়া‘লা ইবনু শাদ্দাদ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি বায়তুল মাকদাস বিজয়ে মু‘আবিয়াহ্ (রাঃ)-এর সাথে ছিলাম, তিনি আমাদের সাথে জুমু‘আহ্ আদায় করলেন, অতঃপর মসজিদের মধ্যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে সকল সাহাবীগণ বসে ছিলেন। আমি তাদেরকে ইহতিবা অবস্থায় দেখলাম এবং সে সময় খুতবাহ্ চলছিল এবং তাহাবী (রহঃ) বর্ণনা করেন এবং ইবনু আবী শায়বাহ্ বর্ণনা করেছেন, ইবনু ‘উমার (রাঃ) জুমু‘আর দিনে খুতবাহ্ চলা অবস্থায় ইহতিবা করে বসতেন।
তবে চার ইমামগণ তা মাকরূহ না হওয়ার দিকেই মত দিয়েছেন এবং মাকরূহ হওয়ার হাদীসগুলোর কারণও উল্লেখ করেছেন তার মধ্যে প্রথমটি হলো মাকরূহাতের সকল হাদীস য‘ঈফ। ‘ইরাক্বী (রহঃ) বলেনঃ এ সম্পর্কে সকল হাদীস যদিও য‘ঈফ তথাপিও তা একে অপরকে শক্তিশালী করে এবং এতে কোন সন্দেহ নেই যে, ইহতিবা ঘুম আনয়নকারী। (অর্থাৎ ইহতিবা করে বসলে ঘুম বেশী ধরে)
সুতরাং জুমু‘আর দিনে খুতবাহ্ চলা অবস্থায় ইহতিবা না করাই উত্তম। (আল্লাহ তা‘আলাই ভাল জানেন)
পরিচ্ছেদঃ ৪৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - পবিত্রতা অর্জন ও সকাল সকাল মসজিদে গমন
১৩৯৪-[১৪] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ জুমু’আর সালাতের সময় কারো যদি তন্দ্রা পেয়ে বসে তাহলে সে যেন স্থান পরিবর্তন করে বসে। (তিরমিযী)[1]
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا نَعَسَ أَحَدُكُمْ يَوْمَ الْجُمُعَةِ فَلْيَتَحَوَّلْ مِنْ مَجْلِسِهِ ذَلِكَ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথা (إِذَا نَعَسَ) আইন কালিমায় যাবার যোগে বাব نصر থেকে, অর্থ হলোঃ তন্দ্রা ও ঘুমের প্রাথমিক পর্যায় এবং সেটা অতি কোমল হাওয়া, যা মস্তিষ্কে দিক থেকে বয়ে চোখের উপর আবরণ সৃষ্টি করে বা চক্ষু ঢেকে ফেলে এবং এটি অন্তরে পৌঁছে না, যদি অন্তরে পৌঁছে যায় তবে তা ঘুম হয়ে যাবে। যেমন আবূ দাঊদ-এর বর্ণনায় ও আহমাদের (২য় খন্ডের ৩২ পৃষ্ঠায়) বর্ণনায় রয়েছে।
আল্লামা শাওকানী (রহঃ) বলেনঃ এখানে জুমু‘আর দিনের উল্লেখ দ্বারা পূর্ণ দিন উদ্দেশ্য নয় বরং সেটা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো যখন মসজিদে জুমু‘আর জন্য অপেক্ষা করবে। যেমন- মুসনাদে আহমাদে (২য় খন্ড, ৩২ পৃষ্ঠা) এ শব্দে রয়েছে-
(إِذَا نَعَسَ أَحَدُكُمْ يَوْمَ الْجُمُعَةِ)
অর্থাৎ যখন তোমাদের কেউ জুমু‘আর দিন মসজিদে তন্দ্রাগ্রস্ত হবে। চাই তাতে খুতবাহ্ অবস্থায় হোক বা তার পূর্বে হোক, তবে খুতবাহ্ অবস্থায় হওয়াটা অধিক যুক্তিযুক্ত।