পরিচ্ছেদঃ ৪৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - পবিত্রতা অর্জন ও সকাল সকাল মসজিদে গমন
এ অধ্যায়ে পোশাক ও শরীর ময়লা থেকে পরিষ্কার করা এবং তার পূর্ণতা হলো তৈল ও সুগন্ধি লাগানো- এ বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে।
’আন্ নিহায়া’ গ্রন্থে التبكير শব্দটি বাবে তাফ্’ইল থেকে এসেছে, অর্থাৎ প্রথম ওয়াক্তে সালাত আদায় করা। প্রত্যেক বিষয় যা দ্রুত করা হয় তাই التبكير।
১৩৮১-[১] সালমান (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জুমু’আর দিন গোসল করবে, যতটুকু সম্ভব পবিত্রতা অর্জন করবে, তারপর নিজের তেল হতে তার শরীরে কিছু তেল মাখাবে, অথবা ঘরে সুগন্ধি থাকলে কিছু সুগন্ধি লাগাবে। তারপর মসজিদের দিকে রওনা হবে। দু’ব্যক্তির মধ্যে ফাঁক করবে না। যতটুকু সম্ভব সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) (নফল) আদায় করবে। চুপচাপ বসে ইমামের খুতবাহ্ শুনবে। নিশ্চয় তার জুমু’আহ্ ও আগের জুমু’আর মাঝখানের সব (সগীরাহ্) গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। (বুখারী)[1]
بَابُ التَّنْظِيْفِ وَالتَّبْكِيْرِ
عَنْ سَلْمَانَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا يَغْتَسِلُ رَجُلٌ يَوْمَ الْجُمُعَةِ وَيَتَطَهَّرُ مَا اسْتَطَاعَ مِنْ طُهْرٍ وَيَدَّهِنُ مِنْ دُهْنِهِ أَوْ يَمَسُّ مِنْ طِيبِ بَيْتِهِ ثُمَّ يَخْرُجُ فَلَا يُفَرِّقُ بَيْنَ اثْنَيْنِ ثُمَّ يُصَلِّي مَا كُتِبَ لَهُ ثُمَّ يُنْصِتُ إِذَا تَكَلَّمَ الْإِمَامُ إِلَّا غُفِرَ لَهُ مَا بَيْنَهُ وَبَين الْجُمُعَة الْأُخْرَى» . رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যা: এক জুমু‘আহ্ ও অপর জুমু‘আর মাঝের গুনাহ ক্ষমা করা হবে।
অন্য বর্ণনায় রয়েছে, তার মাঝে ও অপর জুমু‘আর মাঝের পাপ মিটিয়ে দেয়া হবে। এখানে সেটা দ্বারা অতীত জুমু‘আহ্ উদ্দেশ্য, আবূ যার (রাঃ)-এর বর্ণনায় ইবনু খুযায়মাতে রয়েছে যে, غفر له ما بينه وبين الجمعة التي قبلها অর্থাৎ তার মাঝে ও পূর্ববর্তী জুমু‘আর মাঝের গুনাহ ক্ষমা করা হবে। তবে এখানে ক্ষমা দ্বারা صغيرة বা ছোট গুনাহ উদ্দেশ্য যেমন ইবনু মাজায় আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে রয়েছে, ‘যতক্ষণ সে কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহ থেকে বেঁচে থাকবে।’ যেমন- কুরআনুল কারীমে রয়েছে যে,
إِنْ تَجْتَنِبُوْا كَبَائِرَ مَا تُنْهَوْنَ عَنْهُ نُكَفِّرْ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ
অর্থাৎ ‘‘আমি তোমাদের সগীরাহ্ গুনাহ ক্ষমা করব.....।’’ (সূরাহ্ আন্ নিসা ৪ : ৩১)
পরিচ্ছেদঃ ৪৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - পবিত্রতা অর্জন ও সকাল সকাল মসজিদে গমন
১৩৮২-[২] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি গোসল করে জুমু’আর সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতে এসেছে ও যতটুকু সম্ভব হয়েছে সালাত আদায় করেছে, ইমামের খুত্ববাহ্ (খুতবা) শেষ হওয়া পর্যন্ত চুপচাপ রয়েছে। এরপর ইমামের সাথে সালাত (ফরয) আদায় করেছে। তাহলে তার এ জুমু’আহ্ থেকে বিগত জুমু’আর মাঝখানে, বরং এর চেয়েও তিন দিন আগের গুনাহসমূহ মাফ করে দেয়া হবে। (মুসলিম)[1]
بَابُ التَّنْظِيْفِ وَالتَّبْكِيْرِ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ. عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنِ اغْتَسَلَ ثُمَّ أَتَى الْجُمُعَةَ فَصَلَّى مَا قُدِّرَ لَهُ ثُمَّ أَنْصَتَ حَتَّى يَفْرُغَ مِنْ خُطْبَتِهِ ثُمَّ يُصَلِّيَ مَعَهُ غُفِرَ لَهُ مَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْجُمُعَةِ الْأُخْرَى وَفَضْلُ ثَلَاثَةِ أَيَّام» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা : এখানে দলীল হলো যে, জুমু‘আর পূর্বে সুন্নাত আদায় করাটা শারী‘আত সম্মত এবং নিশ্চয়ই তার কোন সীমারেখা নেই। হাফিয আসক্বালানী (রহঃ) তা উল্লেখ করেছেন ফাতহুল বারীতে (৪র্থ খন্ড, ৫০৯ পৃঃ) এবং যায়লা‘ঈ উল্লেখ করেছেন আন্ নাসবুর রায়াহ (২য় খন্ড, ২০৬, ২০৭ পৃষ্ঠায়)।
এমনকি তার জন্য এক সপ্তাহের সাথে অতিরিক্ত তিন দিনের গুনাহ ক্ষমা করা হবে। যাতে নেকী ১০ গুণ হয়। আল্লামা নাবাবী (রহঃ) বলেন, এখানে দু’ জুমু‘আর মধ্যবর্তী দিন ও অতিরিক্ত তিন দিনের মাগফিরাতের অর্থ হলো, নিশ্চয় নেকী ১০ গুণ প্রদান করা হবে।
পরিচ্ছেদঃ ৪৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - পবিত্রতা অর্জন ও সকাল সকাল মসজিদে গমন
১৩৮৩-[৩] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করবে এবং উত্তমভাবে উযূ করবে, তারপর জুমু’আর সালাতে যাবে। চুপচাপ খুত্ববাহ্ (খুতবা) শুনবে। তাহলে তার এ জুমু’আহ্ হতে ওই জুমু’আহ্ পর্যন্ত সব গুনাহ ক্ষমা করা হবে, অধিকন্তু আরো তিন দিনের। আর যে ব্যক্তি খুত্ববার সময় ধূলা বালি নাড়ল সে অর্থহীন কাজ করল। (মুসলিম)[1]
بَابُ التَّنْظِيْفِ وَالتَّبْكِيْرِ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ تَوَضَّأَ فَأَحْسَنَ الْوُضُوءَ ثُمَّ أَتَى الْجُمُعَةَ فَاسْتَمَعَ وَأَنْصَتَ غُفِرَ لَهُ مَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْجُمُعَةِ وَزِيَادَةُ ثَلَاثَةِ أَيَّامٍ وَمَنْ مَسَّ الْحَصَى فقد لَغَا» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: সুন্দরভাবে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করার অর্থ হল পরিপূর্ণভাবে তার সুন্নাত ও মুস্তাহাবগুলো আদায় করা। আল্লামা নাবাবী (রহঃ) বলেনঃ উযূর সৌন্দর্য বলতে তিন তিনবার ধৌত করা এবং ঐ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের উজ্জ্বলতা দীর্ঘায়িত করা, পূর্ণভাবে পানি পৌঁছানো ও প্রসিদ্ধ সুন্নাতগুলো পূর্ণরূপে আদায় করা এবং নিরবতার সাথে খুত্বাহ্ (খুতবা) শ্রবণ করা।
আল্লামা সানাদী (রহঃ) বলেন যে, আল্লামা রাজী (রহঃ) তার তাফসীরে বলেনঃ (الإنصات) হলো খুতবাহ্ শ্রবণসহ চুপ থাকা।
(وَمَنْ مَسَّ الْحَصى) অর্থাৎ খুতবাহ্ অবস্থায় খেলনাবশতঃ সালাতে কিংবা তার পূর্বে কঙ্কর বা পাথর নাড়াচারা করা। فَقَدْ لَغَا অর্থাৎ সে প্রত্যাখ্যাত হবে, তার জুমু‘আর সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) হবে না। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো নিশ্চয় সে অতিরিক্ত সাওয়াব হতে বঞ্চিত হবে।
পরিচ্ছেদঃ ৪৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - পবিত্রতা অর্জন ও সকাল সকাল মসজিদে গমন
১৩৮৪-[৪] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ জুমু’আর দিন মালায়িকাহ্ (ফেরেশতারা) মসজিদের দরজায় এসে দাঁড়িয়ে যান। যে ব্যক্তি মসজিদে প্রথমে আসে তার নাম লিখেন। এরপর তার পরের ব্যক্তির নাম লিখেন। (অতঃপর তিনি বলেন,) যে ব্যক্তি মসজিদে প্রথমে যান তার দৃষ্টান্ত হলো, যে মক্কায় কুরবানী দেবার জন্য একটি উট পাঠায়। তারপর যে ব্যক্তি জুমু’আর সালাতে আসে তার দৃষ্টান্ত হলো, যে একটি গরু পাঠায়। তারপর যে লোক জুমু’আর জন্য মসজিদে আসে তার উপমা হলো, যে ব্যক্তি কুরবানীর জন্য মক্কায় একটি দুম্বা পাঠায়। তারপর যে ব্যক্তি জুমু’আর সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করার জন্য মসজিদে আসে তার উদাহরণ হলো, যে কুরবানী করার জন্য মক্কায় একটি মুরগী পাঠায়। তারপর যে ব্যক্তি জুমু’আর জন্য মসজিদে আসে তার উপমা হলো, যে একটি ডিম পাঠায়। আর ইমাম খুতবাহ্ দেবার জন্য বের হলে তারা তাদের দপ্তর গুটিয়ে খুতবাহ্ শোনেন। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ التَّنْظِيْفِ وَالتَّبْكِيْرِ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا كَانَ يَوْمُ الْجُمُعَةِ وَقَفَتِ الْمَلَائِكَةُ عَلَى بَابِ الْمَسْجِدِ يَكْتُبُونَ الْأَوَّلَ فَالْأَوَّلَ وَمَثَلُ الْمُهَجِّرِ كَمَثَلِ الَّذِي يُهْدِي بَدَنَةً ثُمَّ كَالَّذِي يُهْدِي بَقَرَةً ثُمَّ كَبْشًا ثُمَّ دَجَاجَةً ثُمَّ بَيْضَةً فَإِذَا خَرَجَ الْإِمَامُ طَوَوْا صُحُفَهُمْ ويستمعون الذّكر»
ব্যাখ্যা: (إِذَا كَانَ يَوْمُ الْجُمُعَةِ وَقَفَتِ الْمَلَائِكَةُ) তারা ক্রোধান্বিত বা বিদ্বেষী নয়, যেমন এটার উপর فضل التبكير বা জুমু‘আর দিনে মসজিদে সকাল সকাল আগমনের ফাযীলাতের ব্যাপারে বর্ণিত হাদীসগুলো প্রমাণ করে এবং এর অর্থ হলো নিশ্চয় তারা (ফেরেশতাগণ) ফাজ্র (ফজর) উদিত হওয়া থেকে অবস্থান করে এবং তা শার‘ঈভাবে দিনের প্রথম, অথবা সূর্য উদিত হওয়া থেকে অবস্থান করে এবং সেটা বাস্তবিকভাবে দিনের প্রথম, অথবা দিনের আলো উজ্জ্বল হওয়া (সালাতুয্ যুহার সময়) থেকে অবস্থান করে। মুল্লা ক্বারী (রহঃ) বলেন যে, এটাই অধিক নিকটবর্তী এবং এ মতকেই শাহ ওয়ালীউল্লাহ দেহলভী (রহঃ) প্রাধান্য দিয়েছেন এবং প্রথমটি (ফেরেশতাগণ ফাজ্র (ফজর) উদিত হওয়া থেকে জুমু‘আর দিনে অবস্থান করে) ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ)-এর বক্তব্য।
ইমাম নাবাবী ও রাফি‘ঈ (রহঃ) এবং অন্যান্য জন এ মতকে সঠিক বলেছেন এবং দ্বিতীয়টিতেও (সূর্য উদিত হওয়া থেকে অবস্থান করে) শাফি‘ঈ মাযহাবীদের মত রয়েছে। মির‘আত প্রণেতার মতে তৃতীয়টিই উত্তম। সহীহ ইবনু খুযায়মায় রয়েছে যে, মসজিদের প্রতিটি দরজায় দু’জন করে মালাক (ফেরেশতা) থাকে তারা প্রথম ব্যক্তি সম্পর্কে লিখে, অতঃপর প্রথম। বুখারী মুসলিমের বর্ণনায় রয়েছে, ‘‘জুমু‘আর দিনে মসজিদের প্রতিটি দরজায় মালায়িকাহ্ অবস্থান করে।’’
মুসলিমের বর্ণনায় রয়েছে যে, মসজিদের প্রতিটি দরজা মালাক (ফেরেশতা) অবস্থান করে এবং লিখে।
যখন ইমাম খুতবাহ্ দানের উদ্দেশে মিম্বারে উঠেন তখন মালায়িকাহ সেই সহীফাহসমূহ বন্ধ করে দেন যাতে তারা অগ্রগামীদের মর্যাদা লিপিবদ্ধ করেছে। হাফিয আসক্বালানী (রহঃ) বলেনঃ ইবনু ‘উমার (রাঃ) বর্ণিত হাদীসে সহীফাহ্ সম্পর্কে উল্লেখ রয়েছে। আবূ নু‘আয়ম তার ‘হিল্ইয়াহ্’ নামক গ্রন্থে মারফূ' সানাদে বর্ণনা করেছেন, জুমু‘আর দিনে আল্লাহ তা‘আলা মালায়িকাহ্-কে নূরের সহীফাহ্ ও নূরের কলম দিয়ে পাঠান। এখানে সহীফাহ্ বন্ধ করার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো জুমু‘আর দিনে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে তাদের সহীফাহগুলো বন্ধ করা হওয়া খুতবাহ্ শ্রবণের নিমিত্তে, অন্যদের নয়।
সুতরাং জুমু‘আর সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) পাওয়া, যিকর, দু‘আ ও সালাতে বিনয়-নম্রতা আরও অনুরূপ ‘আমলগুলো দু’জন সংরক্ষক তা লিপিবদ্ধ করবে।
(يَسْتَمِعُوْنَ الذِّكْرَ) এ বাক্যে যিকর বলতে খুতবাহ্ উদ্দেশ্য। আল্লামা ‘আয়নী ও হাফিয (রহঃ) বলেন যে, যিকর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো খুতবায় যে নাসীহাত করা হয় তাই।
আল্লামা নাবাবী (রহঃ) বলেনঃ নিশ্চয় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবহিত করেছেন যে, নিশ্চয় মালায়িকাহ্ যে, প্রথম সময়ে আসে তাকে লিপিবদ্ধ করে এবং সে উট কুরবানীর সাওয়াব পাবে। তারপরে দ্বিতীয়জনকে লিপিবদ্ধ করে। তারপর তৃতীয়, তারপর চতুর্থ, তারপর পঞ্চমে যে আসে তাকে লিপিবদ্ধ করেন এবং যখন ইমাম খুতবার জন্য বের হন তখন সহীফাহ্ বন্ধ করে। এরপর আর কাউকেই লিপিবদ্ধ করেন না।
উল্লেখ্য যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমু‘আয় বের হতেন সূর্য ঢলে যাওয়ার পর। সুতরাং প্রমাণিত হয়, যে ব্যক্তি সূর্য ঢলার পর জুমু‘আয় আসতে পারবে তার জন্য কোন কুরবানী ও শ্রেষ্ঠত্বের ফাযীলাত নেই।
পরিচ্ছেদঃ ৪৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - পবিত্রতা অর্জন ও সকাল সকাল মসজিদে গমন
১৩৮৫-[৫] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইমাম খুতবাহ্ পাঠ করার সময় যদি তুমি তোমার কাছে বসা লোকটিকে বলো যে, ’চুপ থাকো’ তাহলে তোমার এ কথাটিও অর্থহীন। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ التَّنْظِيْفِ وَالتَّبْكِيْرِ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِذَا قُلْتَ لِصَاحِبِكَ يَوْمَ الْجُمُعَةِ أنصت وَالْإِمَام يخْطب فقد لغوت)
ব্যাখ্যা: অত্র হাদীসের দলীল হলো জুমু‘আহ্ ছাড়া অন্য খুতবাটি জুমু‘আর মতো নয় যে, তাতে কথা বলা নিষিদ্ধ। হাফিয (রহঃ) বলেনঃ তার কথায় (يَوْمُ الْجُمُعَةِ) সেটার মুখ্য উদ্দেশ্য হলো জুমু‘আহ্ ছাড়া অন্যদিনের খুতবাটা সেটার বিপরীত। অন্যদিনের খুতবায় কথা বলা নিষিদ্ধ নয়। (أَنْصِتْ) অর্থাৎ খুতবাহ্ শ্রবণের জন্য সাধারণ কথা বলা থেকে নীরব থাকো।
ইবনু খুযায়মাহ্ (রহঃ) বলেন যে, (الإنْصَاتْ) দ্বারা উদ্দেশ্য হলোঃ আল্লাহর যিকর ছাড়া মানুষের সঙ্গে কথা বলা থেকে নিশ্চুপ থাকা। আলোচ্য হাদীস থেকে দলীল গ্রহণ করা যায় যে, খুতবাহ্ চলা অবস্থায় সকল প্রকার কথা বলা নিষিদ্ধ। কেননা তার কথা (أَنْصِتْ)-এর মাধ্যমে সৎকাজের আদেশও যখন অনর্থক পাপের কাজ ও প্রতিদান নষ্টকারী হয়।
তখন অন্য কথা বলা তো অনর্থক হওয়ার ক্ষেত্রে অধিক অগ্রগামী। খুতবাহ্ চলা অবস্থায়, সালামের জবাব, হাঁচির জবাবে আলহাম্দুলিল্লা-হ বলা যাবে কিনা এ ব্যাপারে ‘উলামাগণের মাঝে ইখতিলাফ রয়েছে। ইমাম আহমাদ, শাফি‘ঈ ও ইসহাক্ব (রহঃ) এ ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছেন। ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ) বলেনঃ যদি কোন ব্যক্তি কোন ব্যক্তিকে জুমু‘আর দিন (খুতবাহ্ চলা অবস্থায়) সালাম দেয় তবে আমি তা অপছন্দ করি এবং এটাও মনে করি যে, কারো তার জবাব দেয়া উচিত কেননা সালামের জবাব দেয়া ফরয। অনুরূপভাবে হাঁচির জবাব দেয়াও বৈধ কারণ হাঁচির জবাব দেয়া সুন্নাত।
মির্‘আত প্রণেতা বলেনঃ আমার নিকট এ মাসআলাগুলোর ব্যাপারে প্রাধান্য ও প্রসিদ্ধ মত হলোঃ খুতবাহ্ চলা অবস্থায় নীরব থাকা ওয়াজিব এবং কথা বলা হারাম এটি যে ইমামের কাছাকাছি থাকবে এবং খুতবাহ্ শুনবে তার জন্য। আর যে দূরে থাকবে এবং খুতবাহ্ শুনতে পাবে না তার ক্ষেত্রে নীরব থাকা উত্তম। আর খুতবাহ্ চলা অবস্থায় হাঁচির জবাব দেয়া, সালামের উত্তর প্রদান মনে মনে দেয়া জায়িয। অনুরূপ হাঁচির জবাবে আলহামদুলিল্লাহ বলা, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওপর দরূদ পড়া বৈধ। তবে মাথা, হাত, চক্ষু দ্বারা ইশারা করার মাঝে অপছন্দতার কিছু নেই। কোন খারাপী দূর করা কিংবা প্রশ্নকারীর জবাবে ইশারা করাতে কোন দোষ নেই। আর চুপ থাকার সময় হলো খুতবার শুরু থেকে, ইমাম খুতবার জন্য বের হওয়া থেকে নয়। (আল্লাহ তা‘আলাই ভাল জানেন)
পরিচ্ছেদঃ ৪৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - পবিত্রতা অর্জন ও সকাল সকাল মসজিদে গমন
১৩৮৬[৬] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ জুমু’আর দিনে মসজিদে গমন করে কোন মুসলিম ভাইকে যেন তার জায়গা হতে উঠিয়ে দিয়ে সেখানে নিজে না বসে। বরং সে বলতে পারে ভাই! একটু জায়গা করে দিন। (মুসলিম)[1]
بَابُ التَّنْظِيْفِ وَالتَّبْكِيْرِ
وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَا يُقِيمَنَّ أَحَدُكُمْ أَخَاهُ يَوْمَ الْجُمُعَةِ ثُمَّ يُخَالِفُ إِلَى مَقْعَدِهِ فَيَقْعُدَ فِيهِ وَلَكِن يَقُول: افسحوا . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: অত্র হাদীসে উল্লেখিত নিষেধাজ্ঞাটা জুমু‘আর দিনের জন্য নির্ধারিত এবং এ ব্যাপারে ‘আম বা ব্যাপক অর্থবোধক শব্দে বর্ণিত রয়েছে, যেমন ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর বর্ণিত হাদীস যা তৃতীয় অনুচ্ছেদে আসবে। আল্লামা শাওকানী (রহঃ) বলেনঃ জাবির (রাঃ) বর্ণিত হাদীসে (يَوْمُ الْجُمُعَةِ) উল্লেখ করা হয়েছে ‘আম বা মূল বর্ণনার কতকগুলো অংশ বিশেষের উপর নস বা হুকুম থেকে, মুত্বলাক্ব হাদীসগুলোর জন্য মুকাইয়াদ থেকে নয় এবং ‘আমগুলোর জন্য খাস থেকে নয়। সুতরাং মাসজিদ কিংবা অন্যস্থান, জুমু‘আর দিন বা অন্যদিনে যে তার নিজ অবস্থান থেকে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) কিংবা অন্য কোন বাধ্যবাধকতায় উঠে যাবে, সে উক্ত স্থানের প্রতি বেশি হকদার এবং অন্যের জন্য উক্ত স্থানে দাঁড়ানো ও বসা বৈধ হবে না। তবে সে যদি উক্ত স্থান হতে আলাদা কোন স্থানে বসে তবে অন্য ব্যক্তি সেখানে বসতে পারে।
এ বিষয়ে আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বর্ণিত হাদীস হল, ‘যখন কেউ তার বৈঠক থেকে উঠে যাবে, অতঃপর ফিরে আসবে সে উক্ত স্থানের জন্য বেশী হকদার।’
তবে সে বলতে পারে ভাই! একটু জায়গা করে দিন। ইবনু ‘উমার (রাঃ) বর্ণিত হাদীসে রয়েছে, বসার স্থান সম্প্রসারণ করো ও প্রসার করো। (চেপে বসার মাধ্যমে অন্যকে বসার, জায়গা করে দেয়া)..... যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ امَنُوا إِذَا قِيلَ لَكُمْ تَفَسَّحُوا فِي الْمَجَالِسِ فَافْسَحُوا يَفْسَحِ اللّهُ لَكُمْ
অর্থাৎ ‘‘যখন তোমাদের বৈঠকগুলো সম্প্রসারণ করতে বলা হয় তখন তোমরা সম্প্রসারণ করো। আল্লাহ তা‘আলাও তোমাদের জন্য সম্প্রসারণ করবেন।’’ (সূরাহ্ আল মুজা-দালাহ্ ৫৮ : ১১)
কিন্তু সামনের স্থান যখন প্রশস্ত হবে তখন এটি প্রযোজ্য, নয়ত কারো স্থান সংকোচন করা যাবে না। বরং মসজিদের দরজার উপর হলে সেখানেই সালাত আদায় করতে হবে।